Thursday, December 31, 2020

করোনাকালে সেলুনে

 ফট করে ঘড়ির কাঁটা সরে আবার আগেই লিখে ফেলি। শুরু করেছিলাম বছরটা যখন কে জানতো এমন আক্ষরিক অর্থেই নড়িয়ে দেওয়া বছর হবে! সুতরাং পরের বছরে হয়তো দেখা গেলো আমি কমন্ডলুর জল কিবোর্ডে ঢেলে হিমালয় চলে গেছি আর এ বছরের লাস্ট আওয়াজ খাওয়াটা কাউকে জানানো বাকি হয়ে গেল। আমাদের জীবনের গতিপ্রকৃতি এতোই বদলে গেছে,  করোনা এখন আর ইন থিং না, মানে সাত মাস আগেও যার ভয়ে দোকান বাজার বন্ধ রেখে করোনা ডায়েরি লিখতো সবাই তাকে ডরালে উলটে লোকে আওয়াজ দিচ্ছে!  

বুড়ো বাপ মা বাড়িতে থাকায় আমি একটু বেশীই সাবধানী, তাছাড়া আমার অফিস বাড়ি থেকেই, সেই সুবিধেটুকু নিয়ে যতটা পারি করোনাকে ভক্তি শ্রদ্ধা করেই চলি৷ মুশকিল হল চুল নিয়ে। গোঁফ দাড়ি আমার তিন আনা, তা নিয়ে বিলাসের কোনো অপশনই নেই। মাথার চুলও কিছু বিজ্ঞাপন দেবার মতো না উলটে টাক ঢাকাই দায় তাও সেলুনে যাওয়া আমার একমাত্র বিলাস বলা যায়। তা কোভিড লকডাউনের কারনে বাড়িতে কাঁচি ট্রিমার দিয়ে যতদিন চলল চলল তারপর আর পারা গেলো না। আমাদের পাড়া মনে হয় পৃথিবীর দুঃসাহসীতম পাড়া। তারা বহুদিন আগে থেকেই মাস্কহীন জীবন যাপন করে। চায়ে চুমুক দিতে দিতে মুরগী কাটে, টাকা নেয় এই সময়েও। মাস্ক পরলেও, সরিয়ে দিয়ে রাস্তায় থুতু ফেলে নেয় সাবলীল ভাবে। সুতরাং পাড়ার সেলুনে যাওয়াটা সে সময় ভাবা যায়নি। অগত্যা, পার্লার নামক ভয়াবহ জায়গায় মাথা মুড়োতে গেলুম৷ ওরে বাবা সেকি সব ব্যবস্থা। আমার বিলাসের জায়গা সেলুন বলেছি, সে জায়গা আরামের। রতনদার সেলুনে গোবিন্দার কিংবা দেবের কিংবা জিতের সিনেমা চলে আর রতনদা আরাম করে কাঁচি চালায়। স্রেফ ছোট করে দাও বলেই আমার দায় শেষ। আরাম করে চোখ বুজে বসে থাকো, কাজ শেষে ঘাড় মাথা মালিশ করে দেবে। লোক থাকলে বসে বসে কাগজ পড়ো, দেশ গাঁয়ের খবর শোনো, সুমনের কিংবা অর্ণবের সার্কাসের থেকে সে ঢের ভালো। আর নতুন সেলুনটায় ছেলেটা অনন্ত বকে যায়, যতজন আসে সবার সাথে, না হলে ফোনে, না হলে নিজের মনেই৷ ওখানেও একই ব্যপার কাজ মিটলে ঘাড় মাথা মালিশ ফ্রি, বেশীক্ষন করাতে চাইলে ত্রিশ টাকা দিলেই আরো মিনিট পনেরো দেবে। 


পার্লার ব্যপারটা ওরে বাবারে টাইপ। তারা আমায় স্প্রে করে দিলো শুরুতেই, কেমন একটা দেবতা দেবতা ভাব আসছিলো যখন ধোঁয়ার মধ্যে থেকে বেরিয়েছিলাম। সে যাক ভালোই এদের ব্যবস্থা তাহলে। ওবাবা বলে কিনা আগে শ্যাম্পু করতে হবে! শ্যাম্পু তো চুল কেটে তারপর করি! তার আগে তো স্প্রে করে চুল ভিজিয়ে কাজ হয়। তাও মেনে নেওয়া গেলো, এক মহিলা ব্যপারটা করছিলেন আর তাকে তো আর না করতে পারিনা নাকি! তারপর তো একটা আবোদা ছেলে ভোঁভোঁ করে কানের গোড়ায় ট্রিমার ধরে,  ক্লিপ দিয়ে চুল এদিক থেকে সেদিক করে,  ইঞ্চি মেপে ভারী কসরত করলো। মোটেও আরাম নেই, চোদ্দবার, "সার ঠিক আছে, সার কিরকম স্টাইল করেন, সার অমুক সার তমুক" করে জ্বালিয়ে মারলে। অমন কেতাদুরস্ত জায়গায় তো আর বলতে পারিনা,  ভাই চুল কাটলেই ভালো লাগে আর কোনো স্টাইল নেই, কেটে দে যা পারিস। শেষমেশ নিষ্কৃতি পেয়ে দেখি এক গোছা চুল সাইড থেকে কেমন যেন উঁকি মারছে। বাড়ি এসে তাকে কাঁচি দিয়ে কেটে নিতে হল! এত সব কান্ডের শেষে আর মাথা মালিশের কথা বলতে ভরসাই হল না,  হয়তো ঝাঁটপাট দিয়ে পয়সা শোধ দিতে হবে!


তো বচ্ছরকার শেষ মাসে কোভিড যখন একটু কমছে বলে সবাই বলছে, মানে সরকারের মতে, টেস্ট করাচ্ছে কিনা আদৌ তা কে জানে! সে যাক সেই ভরসাতেই গুটি গুটি গেছি।  যেই না জিজ্ঞেস করেছি স্যানিটাইজার ব্যবহার করছো? ওবাবা কি হাসি। বলে, "আমরা তো মাস্কও ব্যবহার করিনা। অত ভয় পেলে হয় নাকি! তুমি বললে আমি স্যানিটাইজার ঘষে,  মাস্ক পরে, নতুন কাপড় দিয়ে কেটে দেবো,  কিন্তু বলছি শোনো ভয় নেই। " সে আশ্বাসবানীতে ভরসা হল না বিশেষ। আমার জন্য ওই নতুন কাপড়, স্যানিটাইজার ঘষাই রইল কিঞ্চিৎ মূল্য বেশী দিয়ে। তা কাটতে কাটতে জানালো, মাস্ক টাস্ক ওই বাসে উঠলে পড়ে, বাস থেকে নেমে যদি দেখে কেউ পরে নেই ওও পরে না,  ও তো আর গা* না। 


শালা এটাই বাকি ছিলো, আশা করি পরের বছর মাস্কহীন কাটাতে পারবো, গা* না হয়ে। 

Friday, December 4, 2020

পথ চলতি

 এই রাস্তাটায় আর কোনো গাড়ি দেখিনি অনেক্ষন। মাঝে মাঝেই ঘন শালের জঙ্গল, ফাঁকে ফাঁকে উঁচুনিচু অসমান ভূপ্রকৃতি,ইতিউতি খেজুর গাছ।  মুকুটমনিপুর থেকে বেরিয়েছি অনেক্ষন আগে, এখন ভরদুপুর তাই হয়তো দু চারটে যা পুকুর দেখছি  সেখান থেকে ভিজে কাপড় কোমরে গুঁজে বুড়ি দেখা যাচ্ছে। বাংলার রাস্তায় তিন কিসিমের মহিলা সমস্ত অঞ্চলেই দেখা যায়। এই কোমরে শাড়ির মুড়ো গোঁজা শীর্ণ বুড়ি, মাথায় কাঠকুটোর বোঝা নেওয়া গতযৌবনা,  আর ন্যাংটা (শীতকালে হাফ ন্যাংটা) ছেলে কাঁখে বৌ। হাওড়া, হুগলী,বর্ধমান, মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, দুই চব্বিশপরগনা,  মানে জোলো , শুকনো কিংবা শস্য শ্যামলা বাংলা সবেতেই এরা থাকেই থাকে। সেই একইরকম ভঙ্গী, একই রকম অবয়ব, পুরোনো বাড়ির বটগাছের মতো। 


শীতের দুপুর দেখতে ভারী ভালো লাগে, মাঝে মাঝে গুড়ের গন্ধ ভেসে আসলে চোখে পড়ে মস্ত জায়গায় গুড় জ্বাল দেওয়া হচ্ছে, হঠাৎ করে জঙ্গলের মধ্যে থেমে গিয়ে ইঞ্জিন বন্ধ করে দাঁড়ালে নিজের কানের মধ্যেকার রক্তচলাচলের আওয়াজ নিয়ে ঘিরে ধরে শালের জঙ্গল। তারপর নাম না জানা কোনো পাখির ডাক ভেসে আসে, তাতে খানিক প্রাণ পায় যেন চরাচর। চটকা ভেঙে যায়। চলা শুরু হয়। এই যে আজ দুম করে মুকুটমনিপুর গেলাম, ফের সোজা পথে না গিয়ে ঘুর পথে চলেছি ফিরে,  রাস্তা দেখবো বলে, পথের বাঁকে হঠাৎ করে আসা গরুর গাড়ি ক্রমে বদলে বাইক, টোটো হয়ে যায় সেই বদলটা মজা লাগে। হাইওয়ে দিয়ে চললে স্পীড মেলে বটে কিন্তু এই যে পথের বাঁকে অজানা গ্রাম, তাদের জীবনের এক ঝলক,  কিংবা এই নিস্তব্ধতা সেসব খুব মেলেনা। মুকুটমনিপুরের ড্যাম এর নীল জলের পাশে দাঁড়িয়ে সকালে চমৎকার লাগছিলো, নিঃসন্দেহে খুবই ভালো ভাবে মেইন্টেইন করা হয়েছে সমস্তটা। পাহাড় ঘেরা হ্রদের ধারে ছুটির দিন নয় বলেই হয়তো ভীড় তেমন ছিলো না। পরেশনাথের মন্দিরের কাছে কিছু জটলা ছিলো।  ওখান থেকে সমস্ত অঞ্চলটা দেখা যায় সেটাও কারন। ভীড় থেকে সরে নামতে গিয়ে দেখি একটা মহাবীরের পুরোনো মূর্তি এমনিই মাটিতে শুয়ে লম্বা হয়ে, বেদী নেই, তেল সিঁদুর, সিক্কা, ভীড় কিচ্ছু নেই। খালি জন্মপোশাকে আরাম করে মহাবীর শুয়ে, পায়ের কাছে ড্যাম আর পাহাড়। একটা গিরগিটি পায়ের কাছে বসে খবর নিচ্ছে, দু চারটে বুনো ফুল ঝরে পড়েছে। আহ এর চেয়ে আরামের শয়ান আর কিই বা হয়৷ আমি নিশ্চিত, মহাবীর সমাধি এটাই যদি হত এরকম ভাবে গাছ পালা পাহাড় গিরগিটি প্রজাপতিদের সাথে  উনি   তাইই চাইতেন। 


চলার পথে অবশ্য শুধু অবিরাম নির্জনতা কিংবা জঙ্গলের ছায়াই থাকে না, আচম্বিতে শুরু হওয়া পথ অবরোধ,  বাজারের মধ্যের রাস্তা সবই থাকে। ক্রমে ক্রমে আলো কমে আসে। বাঁকুড়া থেকে হুগলী ঢুকে গেছি গাছপালা আর জমির চেহারা বদলে গেছে। অনেকদিন পর এতোটা খোলা আকাশ জুড়ে গোলাপী সুর্যাস্ত দেখতে পেলাম। দাঁড়াতেই হয়। চায়ের দোকানও জুটে যায়। অল্পবয়সী এক বউ দোকানদার। হাসিমুখে বায়নাক্কা সয়ে চা সিঙারা দেয়। দূরের মাঠে আগুন জ্বালিয়ে ধানের গোড়া পোড়ানো হচ্ছে আর একটু একটু করে রাত নামছে তখন মস্ত একটা লাল পূর্ণিমার চাঁদ নিয়ে, সেই আলো মেখে ঘর ছাড়ার আমন্ত্রণ নিয়ে ঘরের অভিমুখে চলতে থাকি...



Monday, November 23, 2020

হাওয়া বদল

 রানীগঞ্জ এসেছি কদিন হলো। আমার ওয়ার্কস্টেশন সমেত। পুরো সপ্তাহটা এখান থেকেই কাজ করে ফিরবো। যাইহোক,তো কেমন মনে হচ্ছে শীতের শুরুতে পশ্চিমে হাওয়া বদল করতে এসেছি আমরা! শনিবার এসে বিকেলে বাজার থেকে টুকিটাকি সব জিনিস যেমন দড়ি, তালা, মগ, শুকনো লংকা এসব এনেছি।নরম রোদে সকাল হয় একটু দেরীতে,কিচিরমিচির পাখির ডাকে। বারান্দায় চেয়ার পেতে চা খাই, একটা লোক হরেক রকম মাছ এনে বিক্রী করে যায়,এক দুটো প্রজাপতি উড়ে বেড়ায় সকালে নরম রোদে ডানায় ঝিলিক তুলে। শুকনো পাতার রাশিতে মচমচ আওয়াজ করে কাজের মেয়েটি, শিবানী, আসে। ওরা তিন বোন এক ভাই, সবার নামই ঠাকুর দেবতার নামে। বোকাসোকা আছে খানিক, নিজের মনে ঘুরে ঘুরে কাজ করে,  চা নিয়ে আরাম করে বসে পাঁউরুটি ডুবিয়ে চা খায়। সকালে রোদের ওম নিয়ে তাজা হয়ে বেরিয়ে টুকটাক বাজার আনি,তারপর কাজে বসি। রান্নাঘর থেকে ছোঁকছাঁক আওয়াজ আসে। গতকাল বিকেলে দামোদরের চরে গেছিলাম। দ্বারকনাথ ঠাকুরের বানানো কার এন্ড টেগোর কোম্পানির জেটির ভগ্নাবশেষ আর মন্দির ডানদিকে, আমরা ভুল করে বাঁদিকে শ্মশানে পৌঁছে গেছিলাম। শেষ বিকেলের গোলাপী আলোয় চিতার ধোঁয়া মিশে যাচ্ছিল। ছায়াছায়া অন্ধকার নেমে আসছিলো চারদিক জুড়ে। বাড়ি ফিরতে ফিরতে দেখি অষ্টমীর চাঁদ উঠেছে চমৎকার। কোয়ার্টারটা একদম লাস্ট বাড়ি, তারপর ঝোপঝাড় গাছপালা। এই বাড়িটায় আমরা  ছাড়া আর কেউ থাকেওনা। মূলতঃ শিফটিং করতেই এসেছি আমরা। কারন বাড়িরটার ভগ্নদশা। দেওয়াল ফুঁড়ে গাছের শিকড়, বর্ষাকালে ড্যাম্প দিয়ে জল আসে।  অন্যবাড়িটার আশেপাশে লোক থাকে ভালোই হবার কথা।তাও আমাদের মন খারাপ করে বাড়িটার জন্য, সামনের আমগাছে শুয়ে থাকা কাঠবিড়ালিটার জন্য, পাশের ঝাউগাছটায় যেটায় হাওয়া দিলে শোঁ শোঁ আওয়াজ হয় সেটার জন্য, এই নির্জনতাটার জন্য।ওই বাড়িটাকে সাফসুতরো করে মুভ করাটায় নানান অছিলায় ডিলে হয়ে চলে। এখানে বাজার হাটে দেহাতি বা ব্যবসায়ী লোকেদের ভীড়। বাড়িগুলো অদ্ভুত শ্রীহীন। নীচে গুদাম উপরে বাস। পাকা দোতলা তিনতলা বাড়ি কিন্তু দেখতে কেমন যেন। ঘর দিয়ে বাড়িতে ঢোকার পর উঠোন। আর দেহাতি বস্তিটা আর পাঁচটা গরীব বস্তির মতোই, শুয়োর ঘোরাঘুরি করা।  

ফল দারুণ মেলে এখানে, স্টীলের জিনিসও খুব। রাস্তা দিয়ে সকালবেলা সেদিন যাচ্ছিলাম যখন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে ফুচকা, চাটের ঠেলা নিয়ে লোক বসে খোলা ড্রেনের সামনে। সকাল নটায় দিব্যি ফুচকা চাট খাচ্ছে লোকে। অবশ্য আমি ব্রেকফাস্টে চপ মুড়ি খাই আরাম করে গ্রামের বাড়ি গেলে। মাস্ক টাস্কের বালাই নেই কারো। আখ খাচ্ছে কটা ছোট ছেলে মেয়ে। এই রাস্তাটার নাম রাহুল সাংকৃত্যায়ন মার্গ! শূয়োত ঘোরা এ রাস্তাটায় এ নাম কে কী কেন কেউ জানেও না।  ভাবে হয়তো বড় কোনো পলিটিশয়ান ছিলো! দুপুরবেলা বাজার এলাকাটা তারে তারে জড়িয়ে যাওয়া জটের চেহারা নেয়। অজস্র টোটো, সাইকেল, বাইক, স্কুটি মানুষ ঠেলা আর মশলার গন্ধে একটা ঘূর্ণী তৈরী হয়। 


কোলকাতার আমার রাস্তার ধারের বাড়ির কোলাহল হঠাৎ যেন এক চুমুকে কেউ টেনে নিয়েছে এ বাড়িতে। সন্ধ্যে নামলেই ঝিঁঝিঁর ডাক ভেসে আসে। দূর থেকে মালগাড়ি কিংবা প্যাসেঞ্জার ট্রেনের হুইসেল। দুপুর গড়ালেই শীতের বেলা ফুরোনো টের পাওয়া যায়, যদিও শীত এখনো আরামদায়ক এখানে। একটা জিনিস খেয়াল করেছি, সরকারি কোয়ার্টারে আলো খানিক মিইয়ে থাকে। যত জোরালো আলোই লাগাও না কেন। সেই মিয়োনো আলোয় দূর থেকে দেহাতি গান ভেসে আসে। সে গান যেমন একঘেয়ে যেমন বেসুরো। যারা এ গান শুনে বড় হবে তারা গান মানে বন্দুকের নলই ভাববে!রাতে কখনো বারান্দায় গেলে ঠান্ডা বাতাস ঝকঝকে আধফালি চাঁদের আলো নিয়ে জড়িয়ে মড়িয়ে ধরে।  ঘুম নেমে আসে আমগাছের ডালে, কার্ণিশে,  ড্যাম্প ধরা দেওয়ালে, কম্বলের ওমে।





Saturday, November 7, 2020

কোজাগরী

 কোজাগরী, কে জাগরী...কেউ জেগে আছে কিনা দেখতে একটা মেয়ে সবার দোরে দোরে ফিরছে, এই ঘোর অমানিশায় জ্ঞান বিদ্যা শক্তি দৃঢ়তা নিয়ে কেউ জেগে আছে কিনা জানতে....এতো শক্ত শক্ত কথা অবশ্য বুঝতাম না কিছুই। লক্ষ্মীপুজো মানে হিম হিম রাতে ম্যাড়মেড়ে পুজো। ঢাক ঘন্টা কিচ্ছুর আওয়াজ হবে না,  হিম লেগে যাবার ভয়ে  জ্যোৎস্নায় ধোয়া পৃথিবী দেখা হয়নি আমার চৌহুদ্দির বাইরে। তারপর কবে থেকে কে জানে চাঁদ দেখতে পেলাম আর নেশা লেগে গেল। গোল্লামতো চাঁদটা উঠলে ঘরে থাকলেই আমার ভারী আপশোষ হয়, একটা চাঁদের আলো মাখা রাত নষ্ট হয়ে গেলো, জলের ধারে, ফাঁকা মাঠে, পাহাড়ে না হলে তো আলো মাখা যায় না। ছাদে উঠে দেখেছি হাজারটা আলোর মাঝে মন খারাপ করে চাঁদ সরে থাকে সে আলো মাখা যায়না। তাছাড়া ছাদ থেকে চাঁদের আলোয় বা বৃষ্টির জলে ভেজা আমার পোষায় না তেমন। লক্ষ্মীপুজো বলতে সবার খিচুড়ি আর নাড়ু মনে হয় কিংবা আলপনা, আমার কাছে আরেকটা চাঁদের দিন। অনেকদিন থেকে তাক করেছি কোজাগরী চাঁদের আলোয় ভিক্টোরিয়া কেমন দেখায়। সত্যিকারের পরীরা নেমে আসে কি?  কিংবা কে জেগে আছে খোঁজ নেওয়া মেয়েটা পেঁচা নিয়ে ঘুরে যায় বন্দী পরীর কাছে। পরীদের অমন দেখা যায়না সে কথা বুঝি ভুলে গেছিলাম।  তাই রেড রোড দিয়ে আর আর পার্ক সার্কাস ফ্লাইওভার দিয়ে খুব খানিক চক্কর কেটে গাছের ফাঁক দিয়ে ভিক্টোরিয়া দেখা গেলো,  কিন্তু চাঁদের আলো তেমন মাখা হলনা। সারা শহরের হাসপাতাল বাদে সব আলো বন্ধ করে রাখা উচিত মশাই পূর্নিমার রাতে। পাঁচবার পাক খাবার পর আশপাশের ভূতগুলো অব্দি সন্দেহজনক ভাবে তাকাচ্ছে দেখে পালিয়ে এক বন্ধুর বাড়ি খুব কড়া নেড়ে নেড়ে পালিয়ে এসেছি। পরে বলে দেবোখন আমার পোষা ভূতেরা করছিল।


লক্ষীপুজোর রাত পার হয়ে যায়, চাঁদ ক্ষইতে শুরু করে আর ফস করে হাওয়াটা কেমন বদলে যায়। শীতকাল অত ভালো না যে যাই বলুক। হ্যাঁ মটরশুঁটির কচুরি মেলে,  নলেন গুড়, পিঠে মোয়া কিন্তু তাও গরমকালের একটা আলাদা কেত আছে, অমন গুটিশুটি মেরে থাকে না। তাছাড়া এই হাওয়াটায় বাড়িতে বসে থাকা আরো খারাপ। এই সময়ের দুপুরবেলা হেঁটে কিংবা গাড়িতে কিংবা যাতে ইচ্ছে যেখানে সেখানে ঘুরে ঘুরে বেড়াতে হয়। নৌকায় করে অজানা কোনো গঞ্জ, ভটভটি চড়ে ধূলো খাওয়া বিকেল।


আমার যে আর এই হিসেব কিতাব করতে মন চায় না,  মনের মধ্যে কে জেগে আছো ডাক আসে বার বার...ফস করে চলে যাওয়া আর হয় না...



Wednesday, October 28, 2020

শুভ বিজয়া

 হুট করে দিনের আলোয় একটা শেয়াল দেখা সাংঘাতিক উত্তেজনার ব্যপার। ঝকঝকে রোদ, কার্তিক মাস পড়ে গেছে, অক্টোবরের শেষ, রোদের তেজ কম কিছু না। করোনার কোনো ভয়ের ছাপবে দিকে নেই তেমন। এক বুড়ি পাঁচিল বেয়ে বেড়ে ওঠা লাউশাক পাড়ছে, ক্লাবের পুজোর মাইক বাজছে,  চার পাঁচটা বাচ্ছা ছেলে মেয়ের দল সাঁই করে ছুটে গেলো। এমন সময় শেয়ালটাকে দেখা গেলো মাঠের ধারে, হিসি করতে বসেছে। ভারী ভদ্র সভ্য শিয়াল কিন্ত। কাজ মিটিয়ে আমার দিকে একবার আলগা তাকিয়ে পাশের জঙ্গুলে জায়গাটায় ঢুকে গেলো। আমি বালি মাঠের পাশ দিয়ে চড়কতলা হয়ে হাঁটা দিয়েছি। কোথায় যাচ্ছি জানিনা, এমন রোদে খুব বেশীদূর যেতে পারবোনা। এই রাস্তাটা আমার ভারী ভালো লাগে, ডাক্তারদের বাড়ির পাশ দিয়ে পুকুরটা পেরোনোর সময় দুটো কাদাখোঁচা কে ডাইনে রেখে খানিক এগোলে মন্দিরগুলো। কার পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে বানানো কে জানে। মাইকের আওয়াজটা পিছিয়ে পরে ক্রমে। আরো এগোই,  আমার এই গ্রামের রাস্তায় হাঁটলেই কেমন নেশা লাগে, মনে হয় আরো খকনিক এগোই, বাঁশঝোপ, হলুদ রঙের জারুল ফুল, এবড়োখেবড়ো আল, ধানজমি, কদম গাছের ছায়া পেরিয়ে এগিয়ে এগিয়ে যাই, ফেরার কথা না ভেবেই এগোই। তা তো আর হয় না। ফোন আসে মায়ের, "কই রে খেতে আয়"।


সুজাতা বৌদি জোর করে একবার এসো না, দুটো গরম মোচারর বড়া খেয়ে যাও না, সুজিতদাদা পটল ক্ষেতে দেখতে পেয়ে হাঁক দেয়, " পাইলট আয় আয়, পটল নিয়ে যা।" কেউ না কেউ ডাকে, কবে এলি, কেমন আছিস, দিদিরা কই, মা কই খোঁজ নেয়, বাড়িতে ডাকে, বাড়ির ছোট ছেলে এসেছে। পুরোনো বাড়ির উঠোনে কারা যেন বেগুন গাছ লাগিয়েছে,সারা বাড়িটা জঙ্গলাকীর্ণ, কোনো কোনো জানলার শিক ভেঙে গেছে, মাটির উনুন দুটো কবেই হাওয়া হয়ে গেছে। খড়ের গাদা করা সেখানে। রান্নাঘরের চালটা ভেঙে গেছে। দোতলায় যাওয়ার রাস্তাটা আগাছায় ভরা। বড় মায়া লাগছিলো বাড়িটার জন্যে, আহারে বেচারি।  পিছনের আতা গাছটা হয়তো হাত বুলিয়ে যায় দক্ষিনের ঘরের জানলাটায়, আশ্বাস দেয় পরস্পরকে তার ডালেও আতা হবে আবার, আর এই বাড়ির ঘরেও হাসি কান্নার রোল উঠবে। লোক ডাকিয়ে বাড়িটা সংস্কার করায় না কেন? 


কুবুক কুবুক করে একটা পাখি ডাকছে নতুনপুকুরের পাড়ের জামগাছটা থেকে। মিঠুদি দু ছড়া মিঠে কাঁঠালি কলা দিয়ে গেছে, মেজদাদা ডাব পাড়তে গেছে।দশমীর ঢাক বাজছে ঠাকুরদালান থেকে। দশমীর বোলটা বড় বেয়াড়া, খালি মনে করিয়ে দেয় ছায়ার পালা শেষ বাকি রাস্তা সটান হেঁটে যেতে হবে বাঁধানো রাস্তায়। যা দম নেওয়ার নিয়ে যাও হে বাকি পথটুকুর।  


শুভ বিজয়া। 



Thursday, October 15, 2020

ফ কে লেখা চিঠি

 কোথাও একটা থামা দরকার বলে মনে হয়। আবার ঠিক উল্টোদিকেই মনে হয়, থামা মানেই তো ফুরিয়ে গেল। নেই মামা কানা মামা আর দুষ্টু গরু শূন্য গোয়াল কেস। ফেসবুকে,ব্লগে এসে বকম্বাজি করা শুরু যখন তখন শীতের লম্বা রাত, বরফ ঢাকা বোরিং সকাল। পেরিস্তানের  গোপন আস্তানার দরকার তো পড়েই তাই না? সেই আস্তানা থেকেই তোমার সাথে লম্বা আলাপের দিন রাত। একটা চিঠিও আমরা লিখিনি কিন্তু সেসব জুড়লে চিঠি হয় তো বটেই।  ক্রমে পেরিস্তানের সারল্য চলে গেল যেন, ডেটা আর নাম্বারে তৈরী ছায়া মানুষ হয়ে গেলাম কখন। তাই দেখছি, যা দেখাচ্ছে বা আমি দেখতে চাইছি,তাইই শুনছি যা শুনতে চাই। সাউন্ডস ইন্টারেস্টিং তাই না? কিন্তু তা না আসলে, যা শুনতে চাইনা তাও শুনতে হয় কখনো কখনো। তুমি জানো ভালো না লাগা আমাদের জন্মগত। একটা শূন্যতার আবরণ ঠিক ঘিরে থাকেই, তোমায় আলাদা করে বোঝানোর দরকার নেই। কারন আমরা জানিনা কিন্তু সে ভালো না লাগাটা এই নাম্বার আর ডেটা তো কমাতে পারলো না কই। সেদিন ভাবছিলাম, পেয়েছি অনেক নিঃসন্দেহে কিন্তু যে অনন্ত সময়ের বিনিময়ে তাকে কি একেবারেই বিনামূল্যে বলা যায়? খানিক আমাদের  সভ্যতার মতো না? আধুনিক চিকিৎসা,  সকলের না হলেও মোটামুটি সাধরণ মানুষের কাছে পড়াশোনা করার সুযোগ, বৃষ্টিতে শুকনো রাস্তা, বোতাম টিপতেই জল কিংবা আলো...দেওয়ার তো সত্যিই শেষ নেই।কিন্তু পরিবর্তে আমাদের যা দিতে হচ্ছে তাও কি কম? ধরো এই যে আমাদের এতো অবিশ্বাস, এতো ক্রোধ এতো বৈষম্য এতো ঘৃনা এত অশান্তি এও কি এর দায় না? নাকি আমরাই? আমরা আধুনিক বহিঃরঙ্গে হই আসলে সেইই সভ্যতার প্রাক মুহূর্তের লড়াই কিংবা অবিশ্বাস আমাদের মজ্জায় ঢুকে গেছে। অকারণ পশুপাখিদের মারার অভিশাপ আমাদের শেষ দিন অব্দি বইতে হবে, নিজেদের মেরে। আমার আজকাল হতাশ লাগে খুব জানো, সব জায়গায় এতো খারাপ এর অভ্যুত্থান কেন?  নাকি খারাপটা এই আমার একদা পেরিস্তান প্রোমোট করছে? কিজানি! 


অনেকদিন কথা হয়না, দেখা হয়না,  আমরা বড় বেশী ভয়ে বাঁচছি আজকাল। অবশ্য সবাই না। মুশকিল হল আমাদের চারপাশের লোকজন এমন ডিনায়াল স্টেটে চলে গেছে আদৌ আর দেখা হবে কিনা কে জানে। তবে জানো তো  ডিনায়াল স্টেটে  আমরা বরাবরই থাকি কমবেশী এবং তা আজকে থেকে না বহুযুগ থেকেই। যতখুশী খারাপ হোক আমরা তাকাবোনা, সেফ থাকবো আর ভাববো কেউ না কেউ না কেউ আমায় ঠিক রক্ষা করবে। নিজের ক্রশ নিজে বইতে ভুলে গেছি কিংবা শিখিইনি।  এই যে রোজ আমরা নেতাদের দোষ দিই, হাহাকার করি,  ইনফ্যাক্ট করছিও, তাতে তো আমাদের নিজেদের দায় কম না। গনতন্ত্রের একটা সময় তো আসতোই যখন ক্ষমতা এই ধরনের লোকেদের কাছে যেত, সেটা আটকাতে আমাদের নিজেদের কি কিছুই করার ছিলো না? আমরা সেফ থেকেছি, সেফ খেলেছি, আমাদের বাড়ির ছেলে মেয়েরা ডাক্তার জয়েছে কর্পোরেটের কী-বোর্ড পিষেছে কিন্তু প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে নামা বা ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট হওয়া কিছু হয়ে উঠতে উৎসাহ দিইনি। মনের অন্ধকার না কাটা লোকজনকে আমরা প্রার্থী তালিকায় দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম। রাজনীতি ওদের জন্যই, আমাদের না! 


তবে সব হয়তো শেষ হয়নি, হয়না। সেদিন ওষুধ আনতে যাবার সময় দেখলাম এক বুড়ো দাদুর হাতটা শক্ত করে তার নাতনী রাস্তা পার করাচ্ছে। কিছু মূল্যবোধ, আর অনেক ভালোবাসা না থাকলে হয়তো সব থেমেই যেত এতোদিনে। থামেনি কখনই যখন এসময়টাও থামবেনা। তবে মূল্য দিতে হবে আমাদের সবাইকে, এক জীবনে না অনেক অনেক জীবন ধরে। 


পুজো আসলেই অন্যবার কেমন আনন্দ হয়,  এবারে ভয়। তাও একটা চোরা আনন্দ, উত্তেজনা অপেক্ষাও আছে জানো। গ্রামে যাবো কিনা। আমাদের শিকড়ের ব্যপারটা খুবই গন্ডগোলের,  খুবই৷ কোথায় কোন তার জুড়ে আছে কে জানে। আমি তো সেই কবে থেকে গাঁ ছাড়া, তবুও গ্রামের রাস্তায় রাস্তায় হাঁটবো, সবুজ ধানের শিশিরে পা ভেজাবো ভাবলেই মনের মধ্যে চনমনে ভাব আসছে। তুমি জানো পার্টিতে কোনের দিক খুঁজে বোসেথাকা লোকটা আমি, কারেন্ট এফেয়ার্স কিংবা ক্রিকেট  নিয়ে তর্ক করতে ক্লান্ত লাগা লোকটা আমি। হাঁটতে হাঁটতে অচেনা কোনো গ্রামে অচেনা কোনো রাস্তায় নাম না জানা গাছের ছায়ায় হাঁটতে আমি বরং বেশী স্বস্তি বোধ করি, ভাঙা ঘাটের পৈঠায় বসে থাকতে শান্তি লাগে। তাই জন্যই বাড়ি যাবার জন্য এতো উচাটন।


ফেরার কথা বলতেই ফিরতে হল, নিজের কাছে ফিরতে তো হয়ই। তুমিই বা আর কতদিন পালিয়ে পালিয়ে কাটাবে, ফিরবে না?


-

Thursday, September 10, 2020

কাছেপিঠে

 সকাল থেকে ঝড় জল, মেঘলা। সূর্য না দেখতে পেলে ভাল্লাগেনা। এই দুপুরে থম মারা আকাশে পাশের বাজারের মুরগীওয়ালার বাক্স থেকে মোরগের কঁকর কোঁ আওয়াজ আসছে। কেমন যেন পাহাড়ি জায়গায় আটকে গেছি মনে হচ্ছে। লকডাউনের জন্যই গাড়ি  বাইকের হর্ণ নেই, আওয়াজ নেই৷ কতদিনের পর সেদিন বেরিয়েছিলাম।  ফেসবুকে আর খবরের চ্যানেল এর বাইরে যে বিরাট দুনিয়া আছে, তারা দিব্যি আছে। মাস্ক এর বালাই নেই, করোনাতঙ্ক নেই। বাজার হাট করছে, বউকে সাইকেলের ক্যারিয়ারে বসিয়ে চলেছে। স্বাভাবিক দুনিয়া যেমন ছিল তেমন টাইপ। সত্যি বলব? দেখে রাগ হবার চেয়ে আনন্দই হল। ভুল ঠিক জানিনা বেঁচে তো আছে তারা। সুস্থ ভাবেই। আর আমরা হলাম ব্রয়লার মুরগী আমরা কিনা, তাই ফ্লাস্কে চা, কাগজের কাপ, স্যানিটাইজার এর বোতল, টিফিন ক্যারিয়ারে লুচি তরকারি, ব্রেকফাস্ট বক্সে স্যান্ডউইচ। খোরাক লাগছিল নিজেদের। চেনা রাস্তা ছেড়ে একটা অচেনা রাস্তায় গেছিলাম। দুপুরবেলায় খেয়ে আঁচাচ্ছে মেয়ে বউ, দুটো  জোয়ান লোক চিংড়ি মাছের খোসা শুকিয়ে গুঁড়ো করছে। লোকজন নেই কেউ ওখানে। মেছো গন্ধর ঝাপটা সরিয়ে মেঘের আড়াল ধরে হাঁটতে বেড়ে লাগছিল। ওই দূরে একদল লোক নৌকা নামালো জলে, আরো দূরে কাঁধে জাল নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে এক বুড়ো। আহ! কতদিন পর আলাদা কিসিমের মানুষ দেখা গেল। আমাদের বাড়ির টবের নিমগাছটার যেমন বৃষ্টি হলে খুব ফুত্তিতে মাথা নাড়িয়ে গান গায় অমনি বেতাল ফূর্তি হল।  ফিরতি পথে আবার রিটার্ন গিফট,ঝুম বৃষ্টি নেমেছে। সন্ধ্যে হয়ে গেছে তখন। গাড়ি সাইড করে চুপ করে বসে আছি কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না বৃষ্টির প্রাবল্যে, খালি গাড়ির আলোয় ড্যাশবোর্ডের উপর কারুকাজ হচ্ছে আলোয় ছায়ায়। আমি যদি আঁকতে জানতাম বৃষ্টিতে আলোতে ছায়ারে মাখামাখি আমার গাড়িটার ফূর্তির একটা ছবি আঁকতাম বেশ। আবোলতাবোল ভাবনার মাঝেই যেন ফিসফিসিয়ে জানান দিলো, দূর ছবি আঁকার কী, শিগগির আরেকদিন নিয়ে এসো বরং, গ্যারাজ বন্দী থেকে থেকে আর ভাল্লাগেনা। 

জড় জিনিস কথা বলবে কেমন করে ভাবছ বুঝি খুব। বলে, আমরা অমন আলাদা করেছি জড় জীব, আসলে ওদের ভাষা টের পাইনা বলেই। এইতো সেদিন, জায়গা অকুলান হচ্ছিল বলে নতুন ফ্রিজ আনাহল,পুরোনো ফ্রিজটার দুঃখ হচ্ছিল সেকথা বললেই ভাববে, আমার মনগড়া। কিন্তু সত্যিই পাচ্ছিল সে কষ্ট, একদিনের জন্যও খারাপ হয়নি সে, কোনো ট্রাবল দেয়নি, তবু তাকে বিদায় জানানো হচ্ছে তা সে ভাবছিল। ফিসফিস করে বললাম, সে অন্যজনের ঘরে যাবে। তারা তাকে আদরে রাখবে, নেহাত দরকার ছিল বলেইনা নতুন আনা। আমার কথায় কী বুঝল কে জানে, মনে হল যেন অভিমান কমলো তার। 

বড় মায়া হে, সমুদ্রের ঢেউ থেকে নির্জন বিচ,  সাহায্য করতে এগিয়ে আসা ফোগলা বুড়ো থেকে বুড়ো ফ্রিজ সবাই মিলে বড় আঁকড়ে থাকে। এক জীবন,বহুজীবন।



Tuesday, August 4, 2020

লকডাউন এফেক্ট

মানুষ দেখতে আমি ভালোবাসি। ঋকানন্দ খানিক অসামাজিক হলেও মাঝে মাঝে জমেও যায় কোথাও কোথাও। আজ বাজারে যেমন। ডাব অমিল হয়েছে খানিক এখন, এদিকে মায়ের পথ্যে ডাব চাই। খানিকদূর যাওয়ার পর এক বুড়ো মানুষের ভ্যান মিলল। খান দুই ডাব পড়ে আছে, নারকেলই বলা যায় তাদের। তা আমার উপায় নেই, নারকেলই সই। "নিয়ে যা নিয়ে যা, আমিও গুটিয়ে বাড়ি যাই। আমার হয়েছে জ্বালা। বিয়ে করে ফেঁসে গেছি একদম। ছেলেরা বসে আছে তাতে কিছু না, আমি বোস্থাকলেই যত রাগ।" 
এই রে,  গোলমেলে পরিস্থিতিতে পড়ে গেছি। সান্ত্বনা দিয়ে বললাম, "আহা চাচা রাগ করো কেন, রাগারাগি করে কী লাভ। "
তাতে রাগ মোটেই কমল না, "আমিও বলে দিয়েছি, বেশী দেখলে, ছেড়ে দিয়ে আরেকটা বিয়ে করে নেব। মেয়ে দেখা আছে। থাক পড়ে।"

ভক্তিয়ে কেঁপে গেলাম। সত্যি! এরকম তেজ, বীরত্বের কাহিনী স্রেফ শুনেছি আজ স্বচক্ষে দেখে মুচ্ছো যাবার মতই উপায়। তাছাড়া চাচার স্ট্যামিনাও তো বিস্তর! 

-  বলে দিয়েছ চাচা?

-নয়ত কি?

-আহা যাবে কোথায়, খাবে কি? 

- সে হেথা হোথা পড়ে থাকবো! 

তবে? অত ভাবনার বোঝা বইব নাকি? এই দুর্দমনীয় বীরকে নমো করে মানে মানে এগিয়ে গেলাম। একটা বাচ্ছা ছেলে মুসাম্বি বেচ্ছে সাইকেলে করে। বেচায় যে খুব মন আছে তা না।  হালকা গোঁফের রেখা দেখা গেলেও বাচ্ছাই, তাই খানিক দাঁড়িয়ে কেনা কাটা করা গেল। মুসাম্বির ভালোমন্দ আমি বুঝি না। তা দেবে দিক গা। 
জানা গেল সিক্সে পড়েন তিনি। যদিও সিক্সে গোঁফের রেখা দেখাটা আশ্চর্য বটে, সে যা হোক। বললাম, তা পড়াশোনা নেই, বেরিয়েছিস যে।

-ইস্কুল তো বন্ধ।

- তাতে কি বাড়িতেই পড় না হয়। কি আর করা যাবে।
খুব গম্ভীর গলায় বলল," এই বাজারে আর পড়াশোনা"।

আমিও ঘাড় নাড়লাম, সত্যিই তো।  ও বাবা, তারপরেই ব্যাটা ফিচেল হাসি হেসে বলে, "করোনার সুবিধেটাও নিয়ে নিই "। 

বুদ্ধিটা ক্লায়েন্ট ম্যানেজার এর উপর এপ্লাই করবো কিনা ভাবছি।

Friday, July 31, 2020

ছবি

বাংলা ক্যালেন্ডার আমাদের বাড়িতে থাকে একটা। থাকে মানে থাকতো। ঝড়ে খুব ওড়াউড়ি করলো, দেওয়ালে দাগ সে অপরাধে বেচারাকে নির্বাসন দেওয়া হল। বাংলা ক্যালেন্ডারেই নানান রকম জিনিস জানা যায় পূর্নিমা, অমাবস্যা, দশোহরা, আষাঢ়স্য প্রথম দিবস, শ্রাবণ এর শুরু। ক্যালেন্ডার নেই দিকদারিও নেই এসব জানার। দশোহরা মিস হয়ে গেল। দশোহরার দিন চিঁড়ে দই আম দিয়ে ফলার করতে বেজায় ভালোবাসি। পরের দিন জোর করে করলাম বটে ফলার তেমন সেইই ব্যপার হল না। ছোটবেলায় যে যেটা করে সেটা স্মৃতিতে থেকে যায় প্রবলভাবে তাই হয়ত টুকরো মন খারাপ। এসব আলগা মনখারাপ অবশ্য সরের মতো জমতে পায়না। নাড়া দিলেই চলে যায়, তাই যখন টের পেলাম না কোন অমাবস্যায় ঘটপুজো করে এবারের কালীপুজো হল তাতেও খুব কিছু হল না। 

রাস্তা দিয়ে সুর ভোলে বাবা শুনতে পেয়ে বোঝা গেলো শ্রাবন মাস চলে এসেছে আর এই করোনাকালেও দূর থেকে ছুটে যাওয়া পুন্যলোভীর অভাব নেই। আমাদের বাংলার মাস গুলো আমার কাছে ছবি আসে । মানে একটা নাম বললে সেই জায়গার বা সেই জিনিসের ছবি ভেসে ওঠে না? আমার কাছে অবশ্য প্রতিটা বর্ণ, প্রতিটা ডিজিট এর একটা করে ছবি আছে, জেন্ডার আছে। এটা খানিক হাস্যকর হয়ত, তবে আমার কেমন মনে হয় আমরা যাদের জড়বস্তু বলে তফাৎ করে দিচ্ছি আসলে তারাও কথা বলে নিজেদের মধ্যে। তাদের এক নিজস্ব জগত আছে,  সে জগতে ভাব আদানপ্রদান আছে। বর্ণ বা সংখ্যার জেন্ডারের কথা বলছিলাম, আমার কেন জানি মনে হয় "ক" হল পুরুষ, "খ" মহিলা, "গ", " ঘ" আবার পুরুষ। আবার "ক" হল ঝকঝকে যুবক টাইপ, "ঘ" হল এলেবেলে টাইপ; এইরকম সব। সেই ছোটবেলা থেকে ওদের সাথে আলাপ। ওদের কথা চাইলেই শোনা যায়, কিন্তু ধরা যায় না যেন। 

যাকগে, লোকে শুনলে পাগল ঠাউরাবে।  শ্রাবন মাস হল মহিলা আমার কাছে, আষাঢ় অবশ্য পুরুষ। তারকারন "শ" হল মহিলা তাই শ্রাবণ সামহাউ মহিলা। যাক এসব বোকাটে কথা, ছবি ভেসে ওঠে বলছিলাম না?  শ্রাবণ মাসের সাথে এই ঝুম ঝুম করে হেঁটে চলা বাঁকধারীরা জড়িয়ে আছে আমার ছবিতে। কোন আশায় এত কষ্ট করে ভিক্ষে চাইতে ছোটে কে জানে! স্মৃতিরা বড় তালগোল পাকানো হয়, কার সাথে যে কে কানেকটেড কে জানে! ঝুমঝুম আওয়াজে হঠাৎ করে বড় জানতে ইচ্ছে করলো বিশু, সোমনাথ, বিহারী মুড়িওয়ালা, ডালডায় বানানো লুচি ছোলার ডাল বিক্রেতা,  চাউমিনের দোকানদার, পেয়ারাওয়ালা এরা সব কী করছে? অজানা অচেনা শিক্ষানবিশ যে সব ডাবওয়ালা, আমওয়ালাদের দেখছি তারা হয়ত কোনো অফিস পাড়ার বিশু সোমনাথ। শ্রাবনমাসের বৃষ্টি ঝরা রাতের ছবিটার সাথে একটা হাসিমুখ ছেলের চা বানানোও হয়ত যুক্ত হয়ে গেল এরপরের দিনগুলোয়।

Monday, July 20, 2020

ব্যাকাপ

মুশকিল হল যতক্ষন আছে ততক্ষন খুব প্রয়োজন,  না থাকলে নেই। এই যেমন ধরো, মোবাইলে গাদা গাদা জিনিস রাখা আছে, বন্ধুদের সাথে বেড়ায়ে যাবার, ছোটবেলায় মায়ের কোলে চড়ে থাকার, উদ্ভুট্টে মজার কোনো মিম, কিংবা প্রচুর পিডিএফ। কাল যেই দুম করে ব্যাকাপ নেবার আগেই মোবাইল খারাপ হয়ে গেল, মনের মধ্যে উচাটন,  মন খারাপ,  তারপর? তারপর অন্য কিছু।আবার নতুন কিছু। 
আমাদের জীবনের সব কিছুই তাইই আগেও তাই ছিল, এখন অপশন বেশী বলে আরোই হয়েছে। আমার আগের অফিসের কম্পিউটারে গাদা গাদা ট্যাব খোলা থাকতো, সে ক্রোমেই হোক কি নোটপ্যাডে। বন্ধ করতে যাবার আগে ভাবতাম দরকার হবে যখন আবার খুঁজতে হবে, থাক। তারপর একদিন দুম করে খারাপ হয়ে গেল। ওগুলোর কিছুরই প্রয়োজন হল না। কিংবা হয়েছে ওইগুলোর অভাব বুঝিনি। 
যেটুকু সঞ্চয় তা ওই মগজে, তাও দিয়ে করে খাওয়া। তবু কী অদম্য আমাদের জমিয়ে রাখারা চেষ্টা, ধরে রাখার চেষ্টা, বিবর্ণ চিঠি কিংবা ভয়েস নোট কিংবা ফটোগ্রাফ। যেন ওইটুকুতেই সব ছেঁড়া সম্পর্ক, হারিয়ে ফেলা সময়, ভুলে যাওয়া দিন ধরে রাখা যাবে। আমার ঠাকুমার বড় মেয়ে, মানে আমার বড় পিসি, তিনি তাঁর সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। আমার ঠাকুমা সে শোক সইতে পারেননি, মাথার গোলমাল হয়ে যায়। তিনি পাশের গ্রামে তাঁর ভুলে যাওয়া বাপের বাড়ি পালিয়ে যেতেন কাউকে কিছু না বলে, চুপিচুপি। কী জানি, হয়ত নিজের মেয়ের চলে যাওয়া ভুলতে ডুব দিতেন নিজের ছোটবেলায়, যখন তিনি ছিলেন ছোট্ট খুকিটি, সেই অনুষঙ্গ দিয়ে প্রলেপ বোলাতে চাইতেন। আমি জানিনা, আমি তাঁকে কোনোদিন দেখিনি।মানুষের তো ব্যাকাপ নেওয়া যায়না, তবু কিছু কিছু জিনিস উত্তরাধিকারীর হাতে তুলে দিয়ে যায়, টাকাপয়সা, জমি জায়গা, পান্ডুলিপি, গান, বোধ, সংস্কার ইত্যাদি।  তা সকলের সেসব দেওয়ার থাকে না, সে অর্থে কিছুই বলার বোঝানোর থাকে না, যেমন মাথা গোলমাল হয়ে যাওয়া আমার ঠাকুমার কিছুই আর বলার ছিল না, দুম করেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল মেশিন,ব্যাকাপ নেবার আগেই। আটকায়নি কিছুই আটকায় না কিছুই। খালি কিছু জিনিস শব্দে শব্দে মগজে মগজে ট্রান্সফার হয়ে যায়...

সেসবের জন্য ব্যাকাপ লাগেনা, ব্যাকাপের অভাবও বোধ হয় না।

Friday, July 3, 2020

সংসার

- কী হল আবার? আমি তো কিছুই করিনি? 

আরে বলবে তো কী হয়েছে? 

- দেখো একবার দেখো,  এটা লালীদের ইন্সটা, কেমন চমৎকার করে চুমু খেয়ে প্রপোজ করছে দেখো, আর তুমি.. তোমার মতো মাছের সাথে প্রেম করাই অন্যায়।

- ইয়ে মানে আমি যে পাঁচটা নুড়ি দিয়ে এক গোছা শ্যাওলা আনলাম।  শ্যাওলাও তো খেতে চমৎকার। 

- ওই তো ওইই। খাওয়া ছাড়া কিছুই কি চোখে পড়ে না হ্যাঁ? সেদিন দেখি লাল্টু মৌরলা কি সুন্দর ব্যাকগ্রাউন্ডে গান টান দিয়ে কেতের একটা পাতা নৌকায় ওর বউকে নিয়ে যাচ্ছে তার ভিডিও দিল। তুমি তো কখনোই আমায় ভালোবেসে কিছু বলো না।

- আহা বউ কাঁদে না,  এই তো বলছি, তোমায় আমি এইইই এত্ত ভালোবাসি।

- বঁড়শি আর ছিপ বাসো। হুহ। আমি তো কত্ত ছবি দিই, তুমি কিচ্ছু করো না।

- ও এই কথা। আরে ছবিতে কী এসে যায়। ওসব ছেলে ছোকরাদের কারবার। আমার বয়সে কি আর ওসব মানায়।

- কথা ঘোরাবে না একদম। কেন আমি দেখিনি, সেদিন কেমন বোয়ালমশাই সে সুদূর নীলসাগর থেকে এক বাক্স বোঝাই চিঠি পাঠিয়েছে, এমনকি পমফ্রেটদের বাড়ির ঝন্টুদা বিয়ের আগে কত কত চিঠি পাঠাতো।

- ওহ এই কথা! চিঠি তো আমি এক্ষুনি লিখে দিতে পারি। কিন্তু চিঠি তো আবার যত্ন করে রাখার ব্যপার থাকবে, অত খাটনি তোমায় দিয়ে করাতে পারি বলো?

- থাক থাক খুব বুঝেছি। 

-আরে শোনোই না, বলছি ওই দিকে কারেন্ট দাদাদের বাড়ি পেরোলে একটা ডুবো পাহাড় দেখেছি জানো, তার ফাঁক দিয়ে একটা সরু পথ আছে, বেশী মাছ খোঁজ পায়নি। উপর থেকে সরু মতো আলো আসে, আর নীচে নরম শ্যাওলা আর বালি। যাবে নাকি?

- হ হ যাবো যাবো। নিয়ে চলো এক্ষুনি।

- আরে দাঁড়াও,দাঁড়াও , চাট্টি খেয়ে নিয়ে জলদি শুয়ে পড়ি, কাল ভোরে বেরোবো। সকালের জলটা ওখানে চমৎকার গরম হয়, তুমি একটা হট বাথ নিয়ে নিতে পারবে। 

- হ্যাঁ তাহলে আমি যাই খাবার গুলো জলে ভেজাই। 

- হ্যাঁ। আর বলছি গিন্নী, মানে কাল অতটা যাওয়ার আছে, একটু তাড়াতাড়ি রিল্যাক্স করে ঘুম দরকার। বলছি আঁশটা একটু চুলকে.....

- উহ।  জ্বালাতনে বুড়ো একটা। 

ছবিঃ ইন্টারনেট

Monday, June 29, 2020

বাজারে

আমি সাধারণত বারো-পনেরো দিনে একবার বেরোচ্ছি এখন, খুব দরকার কিছু না থাকলে। রবিবারে বেরিয়ে আজ বেরোনো তাই সিলেবাসের বাইরে, কিন্তু করোনাতঙ্কের আগে অব্দি যে কাজ গুলো বাবা করত তা আমায় করতে হলে সপ্তাহের মাঝের দিনেই বেরোতে হয়। নেট আসছে না, তাই অফিস বন্ধ। যদিও বলেই দিয়েছে পরে কাজ করে উসুল করতে হবে। সে যাকগে, পয়সা দেয় কাজ করার জন্যে, ক্যালামিটি হোক যা হোক ওদের কি! 

রাস্তায় বেশ ভালোই লোকজন কিন্তু। লকডাউন কি একেবারেই উঠে গেছে? একেকজন মাঝে মাঝে মুখ থেকে মাস্ক সরিয়ে গুটখার পিকও ফেলে আসছে, অবশ্য রাস্তার মাঝে ফেলেনি এই ভাগ্য! পোস্টাপিসে বিরাট লাইন। নেট নেই, তাই কান খাড়া রেখে নির্লিপ্ত মুখে লোকজনের কথা শুনছি (ভাবতে অয়ারো এ লেখা লিখছি কেমন করে, নেই মানে আসলে মোবাইল নেট যা খুবই অস্থায়ী। ও দিয়ে কানেকশন চালু রেখে কাজ করা যায় না)। এক বয়স্ক মহিলা আগের জন পরের জন হারিয়ে ফেলেছিলেন, এখন আর কেউ তাকে লাইনে ঢুকতে দিচ্ছেনা। কত মিটারের দূরত্ব যেন বজায় রাখা কথা? হাসি পায় মশাই৷ যাকগে পঙ্গপালও এসে পরেছে আর খাবার দাবারও পাবো না, এবার মারামারি শুরু হল বলে। লাইন আর এগোয়ইনা, আমার পিছনের দিক থেকে এক ভদ্রলোক এখন মোদীর কাজকর্মের নিন্দে করছে, লাইন দু পা এগোলো, এবার মমতার।  জানা গেল হিন্দু ঘরের বউদের নাকি রাস্তায় বেরোলে টেনে নিয়ে যাবার অবস্থা হয়ে যাচ্ছিল, বামুংাছির দিকে বিকেল মানেই এত আজান হবে বোঝাই যাবেনা ভারত না পাকিস্থান, বিজেপি ঝড়টা আসায় ভালোই হয়েছে।তর্ক করতে ক্লান্ত লাগে, লাইন আরো একধাপ এগোলো, ভদ্রলোক এখন মেয়েদের নিয়ে পড়েছে। "মেয়েছেলেরাই ঘরে বাইরে যত ঝামেলার কারন"  এই অব্দি পৌঁছে আমি কাজ মেটাতে পেলাম। 

বিস্তর বেলা হয়ে গেছে। রাস্তাঘাট আবার শুনশান। দোকান হাট খোলা কিছু কিছু এখনো। একজন ভ্যানে করে অনেক তালশাঁস এনেছিল যাবার সময় দেখেছিলাম। ফেরার সময় দেখি কটা পড়ে আছে। আমার আগে একজন দেখি পাঁচ টাকায় পাঁচটা চাইলো! 
-কাটার দাম পোষাবেনা। 

আমি গিয়ে বললাম, আমায় দাও। দাম করার প্রশ্নই নেই, আমি চিনিইনা ভালো, দাম জানিও না।তারপরেই খেয়াল হল, আরে আমি তো খালি কার্ড এনেছি, আমার কাছে তো টাকা নেই কিছু। থমকে গিয়ে বলি, "দাঁড়াও কাকা দাঁড়াও।টাকা তুলে আনি,আমার কাছে টাকা নেই"। 
লোকটা অসন্তুষ্ট হয়না, হাসে আমার ভাব দেখে। বলে, "যাও,তাড়াতাড়ি আসবে, আমি ফিরবো। এটিমে টাকা বেরোয়না। মলিন মুখে এসে বলি, " নাহ কাকা, হল না, আমার কপালে নেই,টাকা বেরোলোনা।" লুঙ্গী আর ছেঁড়া গেঞ্জি পরা লোকটা হাসতে হাসতে বলে, "নিয়ে যাও নিয়ে যাও, কাল দেবে টাকা"।কিন্তু আমি যে এখন রোজ বেরোচ্ছিনা? 
-বেশ তো পরশু দেবে, যবে দেখা হবে তবে দেবে। 
-তুমি রোজ আসো? কই আমি তো তোমায় দেখিনি আগে। আচ্ছা তুমি তোমার মোবাইল নাম্বারা দাও।
হাসে আবার লোকটা। বলে, "মোবাইল আমি ব্যবহার করিনা তেমন। তুমি যাও তো,  ওকি সরাচ্ছো কেন, সবকটাই ব্যাগে ভরো, আমি সব কটাই তোমার জন্য রেখে দিয়েছি।
-আচ্ছা আমি বাড়ি এই সামনেই, আমি গিয়ে নিয়ে আসছি। তুমি একটু দাঁড়াও?
- এখন আবার আসতে হবেনা। বলছি তো তুমি যাওনা। অত অবিশ্বাস করলে বাঁচা যায়? 

আহ তাই তো। বেসিক ভুলে যাই বলেই এত অশান্তি তাই না? এত অবিশ্বাস বলেই এত কষ্ট। তাই জন্যেই বুঝি এমন ভর দুপুরেও মুখে হাসিটি অমলিন। কিন্তু আমার যে ধার রয়ে যাবে। কত জনের কাছে এজন্মে ধার বাকি রয়ে গেছে, সেসব ধার তো মেটাবারও না এনার এই যে সাগর সমান বিশ্বাসের ধার এও তো মেটাতে পারবোনা। তাও কড়িকাঞ্চনের ধারটা অন্তত শোধ করে যাই...

-দাম কত?সেটা তো বলো? 
-দাও না যা হোক। 
-আমি যে জানিনা? কত দাম হয়? 
আবার হাসে লোকটা। আচ্ছা কুড়ি টাকা দাও।
-আচ্ছা দাঁড়াও তুমি। আমি এক্ষুনি আসছি হ্যাঁ? চলে যেওনা যেন। চেনা দোকান টোকান কিছু আছে কিনা দেখি। এক্ষুনি আসছি।

 রতনদার সেলুন থেকে কুড়িটাকা ধার করে দিয়ে আসি। মানুষটা তাকিয়েও দেখেনা,ঝোলায় পোরে৷ আটটাখানা তাল আর একবুক বিশ্বাসের আলো নিয়ে আমি পা চালাই....

Saturday, June 20, 2020

করোনা কড়চা(পাঁচ)

মে ১০, ২০২০

কদিন ধরে একটা টিকটিকি সারা ঘরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মানে আপিসের কাজ করছি বসে, সড়াৎ করে পাশ দিয়ে খাটের তলা থেকে বুকশেলফের নীচে চলে গেল।দুপুরবেলা পাড়া বেড়াতে সাধ হয়েছে! দেওয়ালে টাঙানো ছবিটার মাথা কাছ থেকে উঁকি মারছে, তাড়া দিলে ঢুকে যাচ্ছে। কোত্থেকে কী খাচ্ছে কে জানে,  সারা দেওয়াল হেগে ভরাচ্ছে! সন্ধ্যেবেলা প্রেমের তাড়নায় সিলিং বেয়ে প্রেয়সীর সাথে মিলিত হতে যাচ্ছে টিউবলাইটের পেছনে। ধমক টমক পাত্তা দিচ্ছে৷ না বলে মাথা খাটিয়ে মনে হল, এরা ঠান্ডা রক্তের প্রাণী,  শীত তেমন ভালো লাগবেনা। সুতরাং অস্ত্র বানানো হল, গোলা, ইয়ে বরফের। দিয়ে ঠাঁই ঠাঁই করে ছুঁড়েছি। একটা পড়ল ওর থেকে দু ইঞ্চি দূরে,অল্পের জন্যে মিস। নতুন উদ্যমে ফের ওয়েপন সংগ্রহে গেছি, হাত টাত অবশ প্রায়, বরফ বের করে গোলা বানাতে, তাও যায় যদি যাক প্রান শত্রুর নাম... ইয়ে টিকটিকি৷ ব্যাটা তোর বদামি বের করছি। 

এ ঘরে এসে দেখি মালটা স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বরফটার দিকে। তারপর যা করলো, দেখে জীবনে ঘেন্না ধরে গেলো মাইরি....

টুপটুপ করে ঝরে পরা জলটা একবার জিব বের করে চেটে দেখলো, দিব্যি ঠান্ডা জল,গরমের দিনে।  তারপর.... তারপর আরাম করে পুরো বরফজলটা চেটে চেটে খেলো মাইরি!!

মে ১৫, ২০২০

এখন মোটামুটি সবই খুলেছে অল্প আধটু করে৷ আজ দিন পনেরো পর বাজারে গেছিলাম। করোনায় আমাদের পরিবারে সব চেয়ে চাপ হয়েছে বাবাই এর। একটা লোক যার সারাদিনের রসদ বাজারে গিয়ে হতো তার দু মাসের উপর বাড়ির বাইরে যাওয়া নিষেধ হয়ে গেছে। সেদিন বারান্দা থেকে ব্যাগ ঝুলিয়ে আনাজপাতি কেনার সময় কাকে যেন বলছিলো, "ও চিনতে পারছো না যে"।  আমরা হাসাহাসি করি, যেন এ বাবাই এর গ্রামের মতো, দু মাস বাজারে না গেলেও কারোর মনে রাখার দায় থোড়াই আছে এই জনঅরণ্যে! সকাল থেকে বিকেল হাঁকাহাঁকি করে ঝিঙে পটল কেনে, আজ আমি দ্বিগুন দাম দিয়ে টমেটো কিনে এনেছিলাম সেটা দুপুরে আবিষ্কার করে উত্তেজিত হয়ে ছুটে এসেছিল। আমরা হাসছিলাম কিন্তু বাবাই এর জন্যে খারাপ বাজার করা আর পরীক্ষায় ফেল করা একইরকম খারাপ। বাবাইএর সমস্যাটা আমি বুঝবই না আসলে, ওই হাসাহাসি করাটাই পারি খালি!

 দরকার ব্যপারটা খুবই গোলমেলে সত্যিই। এই যে সেলুন বন্ধ কতদিন, আগামী দিনেও যাবো কি যাবোনার দোলাচলে, সেলুনে সেলুনে যে অ্যাসিস্ট্যান্ট গুলো কাজ করত তাদের কিভাবে চলছে কে জানে! সেলুন আমার জন্যেও দরকারি ছিল সত্যিই, হাবিজাবি গল্প শুনতাম মাথা পেতে দিয়ে। অফিসের কাজ বাড়ি থেকে হয়ে যায় কিন্তু সোমনাথ বা বিশুর সাথে টুকরো টাকরা হাসি,কথা এসবও আমার জরুরী ছিল৷ একটা বুড়ো আমওয়ালা হিমসাগর বিক্রী করছিলো, লকডাউনে আম খাওয়া হয়ত জরুরী না কিন্তু ওর কাছে আম বিক্রী করাটা বেশ জরুরী। আনন্দ আজকেও জোর করছিলো একগাদা মাছ নেবার জন্যে, নিইনি, ব্যাটা আগের দিন পাঁচশো মৌরলা মাছ দিয়ে দিয়েছিল আমি ভালো বুঝিনা বলে। লাল্টুও দিয়ে দিয়েছে একগাদা মাছ, বাড়ি গেলে সবাই ফের বকাবকি করবে। কতদিন পর বেরিয়ে সবার সাথে কথা বলতেও খানিক আরাম লাগে। কবে এই করোনা যাবে কে জানে, হয়ত একে নিয়েই চলতে হবে, আর মানুষের যা স্মৃতি সব ভুলেও যাবে একদিন, তাই লিখে রাখছি,  একদিন ভীড় নিয়ে অতিষ্ঠ হওয়া আমি কেমন অপেক্ষা করেছিলাম ভয়হীন ভীড় ফিরে আসার।মে ১০, ২০২০

কদিন ধরে একটা টিকটিকি সারা ঘরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মানে আপিসের কাজ করছি বসে, সড়াৎ করে পাশ দিয়ে খাটের তলা থেকে বুকশেলফের নীচে চলে গেল।দুপুরবেলা পাড়া বেড়াতে সাধ হয়েছে! দেওয়ালে টাঙানো ছবিটার মাথা কাছ থেকে উঁকি মারছে, তাড়া দিলে ঢুকে যাচ্ছে। কোত্থেকে কী খাচ্ছে কে জানে,  সারা দেওয়াল হেগে ভরাচ্ছে! সন্ধ্যেবেলা প্রেমের তাড়নায় সিলিং বেয়ে প্রেয়সীর সাথে মিলিত হতে যাচ্ছে টিউবলাইটের পেছনে। ধমক টমক পাত্তা দিচ্ছে৷ না বলে মাথা খাটিয়ে মনে হল, এরা ঠান্ডা রক্তের প্রাণী,  শীত তেমন ভালো লাগবেনা। সুতরাং অস্ত্র বানানো হল, গোলা, ইয়ে বরফের। দিয়ে ঠাঁই ঠাঁই করে ছুঁড়েছি। একটা পড়ল ওর থেকে দু ইঞ্চি দূরে,অল্পের জন্যে মিস। নতুন উদ্যমে ফের ওয়েপন সংগ্রহে গেছি, হাত টাত অবশ প্রায়, বরফ বের করে গোলা বানাতে, তাও যায় যদি যাক প্রান শত্রুর নাম... ইয়ে টিকটিকি৷ ব্যাটা তোর বদামি বের করছি। 

এ ঘরে এসে দেখি মালটা স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বরফটার দিকে। তারপর যা করলো, দেখে জীবনে ঘেন্না ধরে গেলো মাইরি....

টুপটুপ করে ঝরে পরা জলটা একবার জিব বের করে চেটে দেখলো, দিব্যি ঠান্ডা জল,গরমের দিনে।  তারপর.... তারপর আরাম করে পুরো বরফজলটা চেটে চেটে খেলো মাইরি!!

মে ১৫, ২০২০

এখন মোটামুটি সবই খুলেছে অল্প আধটু করে৷ আজ দিন পনেরো পর বাজারে গেছিলাম। করোনায় আমাদের পরিবারে সব চেয়ে চাপ হয়েছে বাবাই এর। একটা লোক যার সারাদিনের রসদ বাজারে গিয়ে হতো তার দু মাসের উপর বাড়ির বাইরে যাওয়া নিষেধ হয়ে গেছে। সেদিন বারান্দা থেকে ব্যাগ ঝুলিয়ে আনাজপাতি কেনার সময় কাকে যেন বলছিলো, "ও চিনতে পারছো না যে"।  আমরা হাসাহাসি করি, যেন এ বাবাই এর গ্রামের মতো, দু মাস বাজারে না গেলেও কারোর মনে রাখার দায় থোড়াই আছে এই জনঅরণ্যে! সকাল থেকে বিকেল হাঁকাহাঁকি করে ঝিঙে পটল কেনে, আজ আমি দ্বিগুন দাম দিয়ে টমেটো কিনে এনেছিলাম সেটা দুপুরে আবিষ্কার করে উত্তেজিত হয়ে ছুটে এসেছিল। আমরা হাসছিলাম কিন্তু বাবাই এর জন্যে খারাপ বাজার করা আর পরীক্ষায় ফেল করা একইরকম খারাপ। বাবাইএর সমস্যাটা আমি বুঝবই না আসলে, ওই হাসাহাসি করাটাই পারি খালি!

 দরকার ব্যপারটা খুবই গোলমেলে সত্যিই। এই যে সেলুন বন্ধ কতদিন, আগামী দিনেও যাবো কি যাবোনার দোলাচলে, সেলুনে সেলুনে যে অ্যাসিস্ট্যান্ট গুলো কাজ করত তাদের কিভাবে চলছে কে জানে! সেলুন আমার জন্যেও দরকারি ছিল সত্যিই, হাবিজাবি গল্প শুনতাম মাথা পেতে দিয়ে। অফিসের কাজ বাড়ি থেকে হয়ে যায় কিন্তু সোমনাথ বা বিশুর সাথে টুকরো টাকরা হাসি,কথা এসবও আমার জরুরী ছিল৷ একটা বুড়ো আমওয়ালা হিমসাগর বিক্রী করছিলো, লকডাউনে আম খাওয়া হয়ত জরুরী না কিন্তু ওর কাছে আম বিক্রী করাটা বেশ জরুরী। আনন্দ আজকেও জোর করছিলো একগাদা মাছ নেবার জন্যে, নিইনি, ব্যাটা আগের দিন পাঁচশো মৌরলা মাছ দিয়ে দিয়েছিল আমি ভালো বুঝিনা বলে। লাল্টুও দিয়ে দিয়েছে একগাদা মাছ, বাড়ি গেলে সবাই ফের বকাবকি করবে। কতদিন পর বেরিয়ে সবার সাথে কথা বলতেও খানিক আরাম লাগে। কবে এই করোনা যাবে কে জানে, হয়ত একে নিয়েই চলতে হবে, আর মানুষের যা স্মৃতি সব ভুলেও যাবে একদিন, তাই লিখে রাখছি,  একদিন ভীড় নিয়ে অতিষ্ঠ হওয়া আমি কেমন অপেক্ষা করেছিলাম ভয়হীন ভীড় ফিরে আসার।

Thursday, June 18, 2020

করোনা কড়চা (চার)

এপ্রিল ১৬,  ২০২০

 আমাদের টিমটা চমৎকার ছিল।অফিসের লাস্ট প্রজেক্টের। আড্ডা, তামাশা, দল বেঁধে খেতে যাওয়া,এ ওর ঘাড় ভাঙা, রাত জেগে কাজ দারুন ছন্দ। দুম করে করোনা এলো, লকডাউন শুরু হল।আমরা কম্পিউটার নিয়ে এসে বাড়ি থেকে কাজ শুরু করলাম,  করোনার কাউন্ট করলাম, ভয় পাওয়া শুরু করলাম, গৃহবন্দী জীবনের সুবিধে অসুবিধে ভাবলাম সব করলাম খালি রোজের জীবনের অংশ টীমটা ভেঙে গেলো। কাল এক জুনিয়র ফোন করেছিল, "দাদা তোমাদেরো কি রিলিজ করছে? তোমাদের টিমেই থাকার কোনো উপায় নেই? যদি কিছুদিন লিভ উইদাউট পে করেও থাকা যায়"।  সদ্য কলেজ থেকে বেরিয়েছে এরা, পাসিং ক্লাউড শব্দবন্ধ বোঝেনা ওরা, তাই এরকম আবেগের কথা বলে। আমার দশ বছর আগের প্রথম টিমটা মনে পড়ে যাচ্ছিলো, ওদের আর কারোর সাথে এই দশ বছরে আর একটাও প্রজেক্ট করা হয়নি, আমরা এক বয়সী পাঁচ ছ যারা শুরু করেছিলাম,তাদের একজন খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেছে, বাকিরা কেউ অফিস বদলেছে কেউ শহর কেউ বা বিল্ডিং৷ মন খারাপ করা একেবারেই উচিত না, কিন্তু আমার মন খারাপ হয়, আমি ওই ছানা গুলোর কষ্টটা টের পাই, যদিও জানি আমাদের নিজেদেরই কারোর কোনো ঠিক নেই....

সেদিন দেবাশিষদা বলছিলেন একদিন দেখা করব কিনা করোনা মিটলে, নাকি করোনার পর কাটিয়ে দেবো, সব্যর সাথে জঙ্গলের মধ্যে সেই হোটেলটায় যেখানে মাঝ রাতে জন্তু জানোয়ার এসে গাছে আওয়াজ করে যায়....কতজনের সাথে দেখা হবে বলে দেখা হয়নি, আমারই দোষে, আমিই করিনি,  এবার ভাবছি পেন্ডিং কিছু আর রাখবো না, অন্তত না রাখারই চেষ্টা করব, লাস্ট টিমটার একসাথে একটা না হওয়া পিকনিকের মতো যদি আর না হয় কখনো। জানি সব কিছু হয়ও না, যা ভাবি, তাও কিছু তো হাতে থাকেই....

এপ্রিল ১৮, ২০২০

বাংলা সিঅাইডি হিন্দিটার মতই অসাধারণ। 

অভিজিৎ- এই যে গলাকাটা লাশ এ যে দীপকের এটা বোঝা যাবে কি করে?

এসিপি প্রদ্যুমন - এটা দীপকের লাশ তা এখনো বোঝা যায়নি। ❤

এপ্রিল ২, ২০২০

কাল খানিক বেরোতে হয়েছিল। এক মাস স্টার্ট দিইনি গাড়িতে, বেচারি বিরহে শুকিয়ে যায় পাছে অদর্শনে, লং ডিস্ট্যান্সের ভরসা আমি করিনা, তাই খানিকক্ষন তাকে চার্জ আপ করা গেলো।  আহ সে  প্রেমিক প্রেমিকার গোপন কথা, ও কথা থাক,  বেরিয়েছিলাম দুপুরে,  যাতে বাজারের ভীড়টা তা সে যতটুকুই হোক, এড়ানো যায়। আমাদের বাড়ি থেকে গ্যারাজটা একটু দূরে, রাস্তায় আধভাঙা বাড়ি, একটাও জনপ্রানী নেই। সেই ছোটবেলায় রূপকথার গল্পে পড়ার মতো, দুম করে যে যেখানে যেভাবে ছিল পাথর হয়ে গেল,  সেইরকম। কতদিন পর দোকানে যাওয়া বাদে চেনা কোনো গলিতে ঢুকে ভারী আরাম লাগছিল, বুড়ির বাড়ির আমগাছটায় খুব আম এসেছে, হলুদ বাড়িটার বারান্দা থেকে গোলাপী ফুলের থোকা ঝুলছে। কবে সব ঠিক হবে আবার বেড়াতে যাব কে জানে! 

সন্ধ্যেবেলা ঝড় এলো আগে লম্বা লম্বা পায়ে, দুটো প্ল্যাকার্ড ওড়ালো, ডাস্টবিনটা ফেললো, জানলা দরজা ধাক্কা দিলো অস্থির বালকের মতো, ধমকে চমকে দিলো বিদ্যুৎ এএ ঝলক। তারপর  ফোঁটা ফোঁটায় এলো বৃষ্টি, সাড়া পাড়া অন্ধকার, একটা দুটো এমার্জেন্সি গাড়ির সামনে দিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা গুলো তুরতুর করে নেচে নিচ্ছে, ওই ঘর থেকে মা হাঁক দিচ্ছে যাতে না ভিজি....

এরকম কোনো বৈশাখী ঝড়জলের রাতে কোলকাতার রাস্তায় চুপচুপে ভিজেছি, কিংবা তুমুল গাড়ি চালিয়েছি কালকে রাতেরটা বেশ অন্যরকম বুঝলে,কেমন অন্ধকার পাড়া, যেন বেশ কিছু বছরের পুরোনো সময়।আচ্ছা বৃষ্টি ঝড়ের  অতি বৃদ্ধ দাদু ঠাকুর্দার কোনো লিখিত ইতিহাস আছে কি? ওদের ভাষায়, যে ভাষা আমরা বুঝি না। মানুষের মত বোকা না নিশ্চয়ই ওরা, খালি রাজা বাদশাহ দের কথাই লিখবে। কেমন করে প্রথম ভাতের গন্ধের সাথে ঘি এর গন্ধ মিশেছিল, কেমন করে  গরু ছাগলের সাথে মানুষের ভাব হয়েছিল, আকাশে সাথে ভালোবাসার কথা, নদীর জলের সাথে নুড়ির বিরহের কথা... এদের ইতিহাসে ঠিক থাকবেই।  খালি হিটলার, চেঙ্গিজ খাঁ, লড়াই বিদ্রোহর কথা না খুঁজে কিছু এমনি ফুল ফোটার গল্প শোনা যাবে বেশ সেই ভাষা বুঝতে পারলেই....ব্যাস তখনই সৃষ্টি রহস্যও জেনে যাব গাছেদের থেকে।

কবে যে হবে এসব....

এপ্রিল ২৬,  ২০২০

ধরুন একটা পুচকে দ্বীপ, হাতে গোনা কটা থাকার জায়গা। উত্তর দিক থেকে পশ্চিমে হেঁটে যাচ্ছেন, যেতে যেতে একটা গাছ দেখে তার ছায়ায় বসলেন। একটু দূরে একটা নৌকা বাঁধা আছে, আর কেউ কোথাও নেই, একটাও ময়লা পড়ে নেই, ধপধপে বালিতে বসে থাকতে থাকতে ঘুমিয়েও পড়লেন। তারপর ঘুম ভাঙলো, স্থানীয় ফলওয়ালির ডাকে। সে মাথার ঝাঁকা থেকে নাম না জানা অচেনা ফল এগিয়ে দেয়, ইশারায় ভেঙে খেতে বলে। হাসি বিনিময়ে ভালোমন্দ বোঝা হয়ে যায়। বাকি ভাষা বাহুল্য বোধ হয়। তারপর ফের খানিক এগিয়ে যান, যেতে যেতে সমুদ্রের তীরে ছোট্ট একটা দোকানের পেতে রাখা আসনে, জমিয়ে বসে পানীয় নেন কোনো পছন্দের, সামনে তখন সেদিনকার মতো শাট ডাউন করে সমুদ্রের সাথে ডেটে চলেছে সূর্য।

এসবই যেন একশো বছর আগে হয়েছিল....কবে যে আবার এরকম একটা সুর্যাস্তের ছবি ধরে হেঁটে যাব কে জানে! ততদিন পুরোনো ছবিই সঙ্গী হোক....

Sunday, June 7, 2020

করনা কড়চা (তিন)

এপ্রিল ৭,  ২০২০

 আসলে মানুষ যা তা হল আশ্বাস। তা হয়ত বেসলেস তাও কেউ একজন আছে এই বোধটাই ভয়ানক সাপোর্ট হিসেবে কাজ করে। আমাদের দেশে বুড়োদের বানপ্রস্থে এবং তারপর সন্ন্যাস নেবার কথা চালু ছিল, আজকাল মনে হয় সে প্রথা ফের ফিরিয়ে আনার তোড়জোড় চলছে। ফস করে  পোস্টঅফিসের সব সঞ্চয়ের সুদের হার কমে গেল, মাস গেলে আরো  হাজার টাকা কম পাবে হাতে। দেশের উন্নতির সময় তাদের বলেছিল, এটা দরকার, সংকটের সময়েও বলছে এটা দরকার।বাংলা কথা হল বুড়ো হয়েছ অতয়েব ফোটো, তুমি যা দিয়েছ তোমার যৌবনে  তার জন্য আমার অত কৃতজ্ঞতা নেই যে বাকি জীবন তোমার কথা আমি ভাববো। যদিও অবাক ব্যপার দেশের নেতারা সবাই বুড়ো। আমি অর্থনীতির ছাত্র না, বুদ্ধিসুদ্ধিও কম, তাই আমি ভালো বুঝিনা এ দরকার। তবে ওই যে বলছিলাম না, খুব দরকার মানুষের একটা আশ্বাস,  কেউ না কেউ আছে, মসীহা হয়ে বা ভগবান হয়ে বা ভরসা হয়ে? ওই জন্যেই মনে হয় আমাদের দেশের গরীব বুড়ো গুলো বেঁচে যায় কোনোমতে, ভাবে দেশের সরকার হয়ত দেখবে বা তার ছেলে মেয়ে আত্মীয় পরিজন হয়ত দেখবে।  এই দেখো না, বাড়ির নীচে একটা সাইকেলের হ্যান্ডেলে এক গাদা মাস্ক ঝুলিয়ে বিক্রী করতে এসেছে, করোনা নিবারক মাস্ক। লোকে সে মাস্ক হাত দিয়ে দেখছে, রঙ পছন্দ করছে, নাকে বেঁধে দেখে নিচ্ছে ঠিক মতো না লাগলে রেখে দিয়ে আরেকটা তুলছে। 
 ৬.৬% ইন্টারেস্ট রেট কিংবা অদেখা ভাইরাস এদের এই ভরসার দেখে অবাক হয় কিনা জানিনা।

এপ্রিল ১১,  ২০২০

 দুপুরবেলাটা নিঝুম হয়ে যায় একদম। একদম মানে একদমই, একটাও কাক অব্দি নেই চৈত্রের দুপুরে। বিকেল বেলা হলেই মোড়ের মাথায় সিমেন্টের স্ল্যাবে দুজন লোক এসে বসবে, রাত নটা সাড়ে নটা অব্দি থাকে৷ আমি বারান্দা থেকে দেখি,  বিকেল হলেই কিছু লোক এমনিই দাঁড়িয়ে থাকে দুধের দোকানের সামনে, গলির মুখে, চুপিচুপি একটা পুচকে চায়ের দোকান খোলে....প্রথম প্রথম রাগ হত ভারী, এত করে সবাই বলছে শুনতে পারে না একটু, বেরোনোর কি দরকার টা কি৷ তারপর দেখলাম, আমার না হয় চিলতে বারান্দা আছে, সেখানে দাঁড়াতে পারি হাঁফ ধরে গেলে, আমি না হয় ভার্চুয়াল জগতে আড্ডা মেরে বেড়াতে পারি ওয়ার্ক ফ্রম হোমের ফাঁকে কিন্তু যে লোকটা একটা ঘরে চার পাঁচজনে থাকে তাকে সারাদিন অদৃশ্য কিছুর ভয় দেখিয়ে আটকে রাখা সোজা না। 
কাল অনেক রাতে "পঞ্চায়েত" দেখে বারান্দায় গেছিলাম। পঞ্চায়েতটা দেখলে বেশ তৃপ্তি হয়,  লড়াই টড়াই নেই,শহুরে স্মার্টনেস নেই হয়ত ডিকোড করে শত্রু মারা নেই হয়ত কিন্তু বেশ একটা মাটির গন্ধ আছে। রাতেও পাড়াটা একদম নিঝুম হয়ে যায়। কাল অবাক ব্যপার দেখছিলাম। আমাদের পাড়ায় দশটা পনেরোটা তাগড়া তাগড়া কুকুর আছে। মাংসওলা ওদের ছাঁট দেয় রোজ, সাড়ে এগারোটা বারোটার সময় তারস্বরে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করে। ঝাঁট ফাট জ্বলে যাবার মতো, ইচ্ছে করে মাংসওয়ালার বাড়িতে ছেড়ে দিয়ে আসতে। কাল তারা ফর আ চেঞ্জ ঘুমোচ্ছিলো, একটাও ভোঁ গ্রুম গ্রুম করে চলে যাওয়া বাইকও নেই, ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘে চাঁদের আলো পড়েছে, সমস্ত পাড়ায় একটা বা দুটো বাড়িতে আলো জ্বলছে তখন। হুট করে দেখি একটা ফিঙে দোল খাচ্ছে তারেতে। এই মাঝরাতে কি করিস রে ব্যাটা! এটা তো তোর সময় না। নাকি তুইও ওয়েব সিরিজ দেখে ফুরফুরে হাওয়ায় দোল খেতে বেরিয়েছিস? 

এ বড় সাংঘাতিক দোলাচল,  বেশীদিন এই অবস্থা চললে রিসেশনের কবলে মরে যাব যদি বা করোনায় বাঁচি। অথচ এটাও তো ঠিক আমরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত সব চেয়েছি বলেই এই অবস্থা, প্রকৃতি এখন ভালো আছে অনেক, আর । এই দিনকাল তো আমাদের দেখতেই হতনা যদি প্রথম থেকেই কেউ রোগ না লুকিয়ে ঘুরতো, নামাজে না গিয়ে ঘরে, মলে বা পার্টিতে না গিয়ে বাড়িতে কিংবা শুরুতেই এয়ারপোর্ট বা বন্দরে ফোর্স কোয়ারেন্টাইন করত যদি....যদি আমরা আরেকটু সহমর্মিতা দেখাতাম...

তপতীদি,  ভারতীতিদি প্রায়ই ফোন করে, ওদের উৎকন্ঠাটা বুঝি, যতই অভয় দিই, বসে বসে মাইনে পাবে এটা বুঝি ওদের হজম করতে ভরসা হয়না, ওদিকে ফিঙেটা রোজ রাত হলেই আরাম করে দোল খেতে আসছে। ল্যাম্বরগিনি, যুদ্ধবিমান আর লোডশেডিং এ ভাত রান্নার মাঝে কোনো একটা মঝঝিম পন্থা থাকার দরকার ছিলো খুব.....

এপ্রিল ১৪,  ২০২০

আমার পয়লা বৈশাখ মানে মিষ্টির বাক্স,বন্ধুদের সাথে আড্ডা, প্যারামাউন্টে সরবত খেয়ে বই বাজারে ঢুঁ.....। কোনোবার নেহাতই অফিস যেতে হলেও উৎসবের সুরটা থাকেই। এবারে এই মহামারী  আমাদের নতুন বছরের শুরুর রুটিন্টা ঘেঁটে দিয়েছে। এমনিতেই বেচারি পয়লা বৈশাখ ছাড়া বাকি দিনগুলো ন্যালাক্ষেপার মতো পড়ে থাকে তাতে এটাও গেল। কাল এক বন্ধুকে বলছিলাম কাক গুলো কমে গেছে কেমন দেখেছিস। সে জীবনানন্দ পড়তে দিচ্ছিলো, কবিতা আমি খুবই ভয় পাইবতায় সিলেবাসে থাকা, তাই আঁতকে উঠে বললাম, ক এ ক এ মিল আছে বলে কবিদের কাক বলতে চাস? সে আবার বিদুষী রমনী, কবিদের নিয়ে এসব বাজে কথা বলার পরেও বেঁচে আছি নেহাত লকডাউন চলছে বলেই। যাই হোক সে বলল, মহামারীতে কাকেরা মানুষদের ছেড়ে যায়। 

নতুন বছরে কাকেরা ফিরে আসুক, বন্ধুদের সাথে মেসেঞ্জারে না সামনে বসে আড্ডা হোক, সবার জীবন থেকে এই আতঙ্ক মুছুক, ভালো হোক সবার।

Sunday, May 31, 2020

করোনা কড়চা (দুই)

২ এপ্রিল ২০২০
সারাক্ষন খিদে পায়। খুটখাট করি, এটা টানি ওটা খুলি, ভাঁড়ার অফুরান নয় তাই ইচ্ছে মত খাওয়া চলে না, তাই জন্যেই বুঝি বেশী খিদে পায়। যা পাওয়া যায়না তার জন্যেই অস্থিরতা বেশী হয়। আমার মনে আছে,  তোমাকে চাই গানটা যখন এফেমে শুনতাম,  তখন হাঁ করে বসে থাকতাম, খাতায় লিখে নিয়েছিলাম অনেকবার শুনে শুনে, তারপর মোবাইলে স্টোর করলাম যেই আর শোনার জন্যে আকুলতাটা রইল না। রাজারহাটের রাস্তাটায় হলুদ, গোলাপি ফুল ফুটে গেছে এতদিনে, বাড়ির আমগাছগুলোয় ছোট ছোট আম ধরেছে নির্ঘাত, সুজিতদাদা এবারে পটল করতে পেরেছে? কালীপুজো পিছিয়ে গেছে করোনার জন্যে, যবেই হোক তখন তো আর এই খাঁ খাঁ রোদ্দুরের দুপুরটা থাকবে না। এই রোদ্দুরেই ছায়া ছায়া রাস্তা ধরে নিঝুম প্রহর পার হতে হয়,শুকনো ফুটিফাটা মাটির ধারে বিকেলে বসলে প্রাণ জুড়োনো হাওয়া দেয়।আমার দেখা হল না সেসব। আমি তো মরব না, পরের গরমে দেখতে পাবো ঠিক, কিন্তু যদি না পাই অন্য কোনো কারনে? এ সময়টা আমাদের পরীক্ষা শেষের ছুটি থাকতো, অনেকদিন পর এরকম দুপুরে বাড়ি থাকছি বলেই সেইসব দিনের দুপুর বয়ে যাচ্ছে মাঝে মাঝেই।আচ্ছা মাঠাংবুরুর কী হল? কোন দেশে চলে গেছে? আমার সাথে দেখা হয়েছিল সেও প্রায় মাস ছয়েক আগে, ছোট্ট নেংটি ইঁদুর টুং তার নাম,  এনেছিল আমার গাড়ির উইন্ডস্ক্রীনে চড়িয়ে হাওয়া খাওয়াবে বলে। হুট করে একদিন গাড়ি চলতে চলত উইন্ডস্ক্রীনে ইঁদুর দেখলে যে কেউ চমকাবে, তবে নেহাত মাঠাংবুরুর কাজকর্ম জানা ছিল তাই ঘাবড়াইনি। আচ্ছা গাড়িটাই বা একা একা কেমন আছে? এই মাত্র মনে পড়লো কভার দিয়ে আসিনি, একা একা খুবই মন খারাপ করছে নির্ঘাত ধুলোমেখে।

আজ অফিসের একটা জুনিয়র কল করেছিল, অন্য টিমে কাজ করলে আমাদের টিম থেকে একেবারে সরে যাবে কিনা জানতে। আমি ওই মিটিংটায় ছিলাম যেখানে ওকে আমাদের টিম থেকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, জানি কিছুই হবে না বদল তাও বললাম আরে দেখই না কি হয়, লকডাউন শেষে দেখলি হয়ত ফের এই টিমেই কাজ করতে হবে। এ কথাটা স্তোক হিসেবেই বলেছি, কিন্তু তা সাথে আরে আছি তো বলে আশ্বাসটা স্তোক না, দুম করে হাত ছেড়ে দিলে ভয় লাগে মন খারাপ হয়, সবে মাত্র চাকরির শুরুতে অমন হলে মন খারাপে ঠেলে দিতে কষ্ট লাগে। আছি ভাই আছি। এটুকুই তো পারি...লকডাউনে কিংবা তারপরে...

************************************

৩ এপ্রিল ২০২০

প্রত্যেক মানুষের জীবনে একটা সময় আসে যখন সে নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়, যখন সে নিজের কাজ যা সে বিরাট কিছু ভাবতো তা যে আসলে একটি ভয়ানক জিনিস তা বোঝে। 

আমার ক্ষেত্রে এটা হল, যখন ট্র‍্যাক অন করে নিজের গান রেকর্ড করলাম।
আমি আমার প্রতিবেশীর দুঃখ এতদিনে বুঝলাম!

*************************************

০৫ এপ্রিল ২০২০

থালা বাজানোর পরের টাস্ক ছিল, দশ মিনিট আলো বন্ধ করে রাখা।এ নিয়ে কদিন ফেসবুক  সরগরম ছিল। আজ নির্দিষ্ট সময় দেখি পিলপিল করে লোক রাস্তায় বেরিয়ে গেছে, কে যেন  তুবড়িতে আগুন দিলো, পটকা ফাটালো এক বাড়ির ছাদ থেকে, সবুজ রঙের আলোয় আকাশ উদ্ভাসিত,দুম দাম শব্দে আকাশ মুখরিত..আহাহা ....করোনা মহোৎসব 😌

*************************************

০৬ এপ্রিল ২০২০

একটা কাল্পনিক কথোপক........

  - বলছি শোনো না।

- কী হয়েছে কি? চা ফা পাওয়া যাবে না এখন। অত চা পাতা নেই। 

- আহা শোনোই না।

- থাক আমার জানা আছে,  নিশ্চয়ই শক্ত মতো বর্মটা থেকে পা বের করে বলবে আঙুল গুলো টেনে দিতে।

- না না।  এই দেখো না কেমন আমাদের ছবি দিয়েছে। ওই যে বালিতে শুয়ে ছিলাম সবাই মিলে, ভীড় নেই বলে  ওই সময় তুলেছে। 

- তাই দেঝি তো? আমায় তো খুবই মিষ্টি লাগছে। আর তোমার ভুঁড়িটা দেখো,  আর ওই দেখো বর্মটার মধ্যে কেমন ছেতরে শুয়ে আছো,  একটু পরে বলবে হাত পায়ে ব্যথা করছে!

- উহ বউ। একটু চুপ করো দেখি, ওই দেখো নীলমাছ পিং করেছে, কত কী খাচ্ছে দেখো একবার। মানুষ গুলো না থাকায় খাবার দাবার পাওয়া সোজা হয়েছে বটে

- জানিনা যাও তো। সারাক্ষন খাই খাই না হলে মাথা টিপে দাও, এই দাও, জ্বালাবে না আমি এখনো খেন্তি, বুঁচি ওদের সাথে ঝিনুক কুড়োতে যাব। খাই খাই করবে না, একটু দেরী হবে, শ্যাওলার একটা রেসিপি আছে বানাবো। 

-আচ্ছা যাবে,  তোমায় আজ হেব্বি ঝাড়পিটের সিনেমা দেখাবো। কচ্ছপের ইতিহাসে এই সিনেমা একটা মাইলস্টোন বলতে পারো। 

- না আমি থ্রিলার দেখবো। জঙ্গলে একটা কচ্ছপ আটকে গেছে ওইখান থেকে বের হয়ে আসা নিয়ে দারুন একটা সিরিজ আছে তো, চলো না ওইটা দেখি, চলো না।

-আচ্ছা আচ্ছা সে হবে খন। বলছি যাবার আগে আমার পিঠটা একটু চুলকে দেবে?

-🤬🤬

ছবিঃ ইন্টারনেট




Tuesday, May 26, 2020

করোনা কড়চা (এক)

করোনা লকডাউনের দিন গুলোয় মাঝে মাঝে লিখে রাখতাম.... আজ একজায়গায় জড়ো করলাম। কেউ কখনো দেখতে পায় বা চায় যদি। আর নিজেও যদি তাকাতে চাই...
রাজ্যে লকডাউন শুরু হয় মার্চ ২৪ এর বিকেল থেকে আর সারা ভারতে মার্চ পঁচিশ। বাড়ি থেকে কাজ চালু থাকে অবশ্য।

মার্চ ২৭ ২০২০।
করোনার ফলে কত কী জানা যাচ্ছে। না না স্বাস্থ্য নিয়ে বিভিন্ন অবাস্তব  মতামত, কিছু মানুষের গান্ডুমি এসব না, ভেবে দেখেছি এসব আগেও ছিল। না হলে যেখানে সেখানে থুতু ফেলা, হর্ণ বাজিয়ে অতিষ্ঠ করে দেওয়া, যেখানে সেখানে নোংরা ফেলা,  নির্বিচারে গাছ কাটা এসব হত কী ভাবে? সুতরাং সেসব না, এই করোনার জন্যেই জানতে পারলাম একটা সিনেমা এসেছিল নাকি, যার নাম সুয়োরানী দুয়োরাণী।

কটকটে বেগুনি একটা ঝালর দেওয়া ফ্রক খুব টাইট একটা কমলা প্যান্টের মধ্যে গুঁজে ফিরদৌস তার শুভাশীষকে বলছে,  "বন্ধু, হাতিশালে হাতি মরছে, ঘোড়াশালে ঘোড়া, এ নির্ঘাত কোনো রাক্ষসীর কাজ।" আহা দেখে শুনেই ভালো লাগে। তারপর দৃশ্য বদলায়,  রাতে কাজ কর্ম করে বুড়ো রাজা খালি গায়ে ঘুমোচ্ছে, পাশে তার সুয়ো রানী রীতা কয়রাল কটকটে একটা বেগুনী শাড়ি পরে ঘুমোতে ঘুমোতে চোখ মেলে। কড়াৎ করে একটা আওয়াজ, ব্যাস, বেগুনী শায়া বুক অব্দি বাঁধা দুখানা দাঁত বের করা একটা রাক্ষসী হয়ে গেল সে। সবাই কেন এত বেগুনী রঙের ফ্যান কে জানে! তারপর ঘোড়াশালায় গিয়ে চেটে চেটে আরাম করে হাতি ঘোড়ার রক্ত খেতে লাগলো। ওদিকে ঘুমন্ত রক্ষীদের (তাদের গায়েও ঝলঝলে অদ্ভুত এক ফ্রক,  হ্যাঁ কটকটে নীল রঙের, এদের রঙ নিয়ে একটা ইয়ে আছে) পিছন থেকে উঁকি মারা রাজপুত্র ফিরদৌস আর তার "বন্ধু" রহিম তো সব দেখছে। তারপর, রাক্ষসী চলে যেতেই, অদ্ভুত ভাবে রাজপুত্রের ঝলমলে ঝালর ফ্রক বদলে হলুদ হয়ে গেল!

তারপর তো বুড়ো রাজা লাবনীর থেকে (দুয়োরাণী),  সুয়োরানী (রীতা কয়রাল) এ বেশী মজে তার কথা বিশ্বাস করল না। যদিও কারন বুঝলাম না, কারন, দুজনেই সমান খারাপ, আমি রাজা হলে এরকম ভয়াবহ সিদ্ধান্ত নিতাম না মাইরি, আমার ধারনা, সন্তু মুখোপাধ্যায় (রাজা মশাই) কে এক্সট্রা টাকা পয়সা দিয়ে রাজী করিয়েছে। যাইহোক, দুয়োরানী ছেলের হাত ধরে বেরিয়ে পড়ে, রহিমকে রাস্তায় পায়। দিনশেষে এক মন্দিরে এসে পৌঁছয়। রাজপুত্র বলছে মা এর জন্যে জল আনবে, ও বাবা দুয়োরাণি হলে কি হবে তার দাবীর শেষ নেই! বলছে জল আনলে সে আগে চান করে মন্দিরে জল ঢেলে তারপর নাকি জল খাবে! তারপর অবাক ব্যাপার, বেরোনোর সময় এক সেট প্রদীপ, তেল, দেশলাই এনেছিল মনে হয়,  প্রদীপ জ্বেলে পুজো দিতেই ব্যাস কড়াৎ করে বাজ পড়ল আর একটা সাধু চলে এলো। সে বলে দিলো নাগপাহাড়ে মনি নিয়ে মনিমালার কাছে যেতে, সে বলে দেবে কেমন করে রাক্ষসী মারবে।

তারপর তো ঝাঁ করে নাগপাহাড়ে চলে গেল এখন তার পরনে ফ্রিল দেওয়া নীল ফ্রক ও খুবই টাইট হলুদ প্যান্ট। বেচারার শ্যুটিং চলাকালীন ইয়ের খুবই চাপ গেছে। যাকগে, তারপর তো নাগরাজা আর নাগরাণীর জ্যোৎস্না রাতে খুবই প্রেম পায় কিন্তু সে সময় ফিরদৌস বিখ্যাত নাগীন এর বাঁশী বাজাতেই তারা হেলেদুলে নাচতে লাগলো আর নাগরাজা মরে গেল। ব্যাস আর কি, নীল ঝালরযুক্ত ফিরদৌস মনি নিয়ে চলল। এরপরেই একটা নদী পড়ল, আর রহিম দেখতে পেলো একটা মেয়ে খুব নাচ গান করে চান করছে। ব্যাস রহিমের হলুদ লুঙি তো তাঁবু হবার জোগাড়....

কিন্তু মেয়েটা এত খারাপ দেখতে আমার আর বাকিটা দেখার ধৈর্য্য চলে গেল। এই বাজেটে আর দেখা যায় না।

মার্চ ২৮, ২০২০

দুপুরে চান করতে যাওয়ার আগে বারান্দায় গেছি। একটা খুউউব বুড়ি মানুষ একটা লাঠি নিয়ে খুউব আস্তে আস্তে কোথায় যেন যাচ্ছে। হাতে একটা ব্যাগ। কোথায় যাচ্ছেন উনি? বাড়িতে কি কেউ নেই?এত বেলায় কিছু তো পাওয়ারও নেই তাহলে?  খুব মায়া লাগলো, ইচ্ছে করছিল নএকবার নীচে যাই, লকডাউন ভেঙে এই দুপুর রোদে একা একা এক বৃদ্ধা হেঁটে যাবেন, আশপাশ দিয়ে চলে যাওয়া এক দুটো বাইক বা রিক্সা কেউ জিজ্ঞেসও করবে না, " ঠাকুমা এই ভর দুপুরে কোথায় যাচ্ছ? কী চাই তোমার, আমায় বলো, আমি এনে দিচ্ছি"। এ জিনিস কষ্ট দেয়, তাহলে আর এই মহামারী আমাদের কী শিক্ষা দিলো! গায়ে জামা গলাতে গিয়ে দেখি বৃদ্ধা রাস্তা পার হয়ে অ্যাপলো ডায়গনস্টিকস এ ঢুকলেন। আহারে বেচারি, হয়ত বাড়িতে একাই থাকেন, টেস্ট করাতে যেতেই হবে হয়ত। আমার গ্রামের বাড়িতে এখনো আমার জ্যেঠুরা থাকেন। এক জ্যেঠুর ছেলে মেয়েরা সবাই বাইরে বাইরে থাকেন, আমার আরেক জ্যেঠুর ছেলেই তাদের খেয়ালও রাখে। সেই দাদার কথা একবার লিখেছিলাম হয়তো, কিছু তেমন করে ওঠেনি, হাজারটা চয়েস নেই তার জীবনে, তবে এই লকডাউন হয়ত ঘাড় দগরে শিখিয়ে দেবে আমাদের পরিজনের কাছে থাকার চয়েসটা হয়ত অনেক কটা চয়েসের থেকে ঢের বেশী জরুরী।

এপ্রিল ১,  ২০২০

 ধনী গরিবের প্রেম বলে একটা সিনেমার কিছু দৃশ্য দেখা গেলো, বাংলাদেশের সিনেমা। সে অপূর্ব এক সিনেমা। নামের মধ্যেই চমক৷ যা সিনেমা তাই টাইটেল, সোজা বিষয়। "টাইটানিক, জাহাজ ডুবে গেলো", "সোনার কেল্লা, পূর্বজন্ম আর দুষ্টু লোকের কাহিনী" এরকম হওয়া উচিত ছিল বটে।
এই সেরা সিনেমা আমি যেখান থেকে শুরু করলাম তাতে এক ধনী মহিলার কাপড়ে আগুন লেগেছে, এবং এক গরীব লোক সিঁড়ি থেকে ঝাঁপ দিয়ে পড়ে  জড়িয়ে ধরলো সেই ধনীকে,পরে যার নাম জানা গেলো বৃষ্টি। কিন্তু প্রশ্ন হল কেন!! মানে কেন! শাড়িটা চেপে ধরা বেশী কাজের হত না? যাই হোক আগুন নেভে এবং অন্য আগুন জ্বলে ওঠে। ওদিকে সেই গরীব যার নাম আকাশ সে অত্যন্ত ক্যবলা একট চুলের ছাঁট দিয়েছে বলেই হয়ত বৃষ্টির আপু তাকে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড় করিয়ে চলে যায়। আর সে হাবার মত সেখানে ভিজতেই থাকে। যে কোনো সিজনে এই বৃষ্টি আসার ব্যপারটা নিয়ে গবেষোণার প্রয়োজন আছে কিন্তু।

তারপর কিছুক্ষন দেখার সুযোগ ঘটেনি। মহারাজ সশক্তি পিতামাতা সহযোগে চাইনিজ চেকার খেলছিলেন চাইনিজ ভাইরাসের সিজনে। তারপর মনের দুঃখে খেয়াল করলেন এর মধ্যে ধনী গরীবের প্রেমে বিরাট পরিবর্তন ঘটে গেছে। গরীব আকাশ ওই বাটি ছাঁটকেই একটু কায়দা মেরে তুমুল বৃষ্টিতে খুব গরম নাচানাচি করছে বৃষ্টির আপুর সাথে।বলেছিলাম না এই যখন তখন বৃষ্টি নিয়ে গবেষনার প্রয়োজন। এবার মুশকিল হল গরীব আকাশের মুখে বোকাটে ভাবটা বদলায়নি, ফলে তাকে আরোই গাধার মত লাগছে। ওইদিকে বৃষ্টি কী করে জানি অন্ধ হয়ে গেছে আর,  কাউকে না ছুঁয়েই বলতে পারছে এ তো আকাশ না,  আকাশ কই আকাশ কই ও খুবই খারাপ একটা গান গাইছে।

বাইরে ঝোড়ো হাওয়া এলো দেখে ধনী গরীবের এই প্রেম স্থগিত রেখে বারান্দায় গিয়ে দেখি, পিলপিল করে লোক বেরিয়ে গেছে।

ভাইরাসের ভাই হয়েছে।

Monday, May 11, 2020

অসতো মা সদ্গময়

"মোরে ডাকি লয়ে যাও মুক্ত দ্বারে, তোমারও বিশ্বেরও সভাতেএএ..."

দূরে কোথা থেকে লাইনটা ভেসে আসে,  যেন পূর্বজন্মের স্মৃতি।  সরিয়ে দিই যেমন দিই, টলমল করে পড়ে যাওয়া মানুষ, রেললাইন ধরে হেঁটে যাওয়া রুটি। বেচারিরার জানতোই না, লকডাউনেও ট্রেন চলে, হুইশেল বাজে...

"উদয়গিরি হতে উচ্চে কহ মোরে, তিমির লয় দীপ্তি সাগরে....."

তিমিরের লয় হয় কই! হুট করে আজ ঘুম চোখে শাক্যদের মেরে ফেলার গল্প পড়ছিলাম। কই রক্তধোয়া রাস্তা তো বুদ্ধের করুণায় বন্ধ হয়নি, রাজপুরুষদের  কর্মফলের ভোগী নিরীহ শিশুও হয় কেমন করে হে তথাগত?

স্বার্থ হতে জাগো দৈন্য হতে জাগো সব জড়তা হতে জাগো জাগো রে...

"ওই ছেলেটা রেপ করতে পারে কিন্তু ভালো গান গায় গায়,পড়াশোনায় ভালো, গরীবদের জন্যে ভাবে, রেপও করে"। স্বার্থ হতে, দৈন্য হতে জাগারও কত শেড না? 

মৃত্যোর্মামৃতং গময়....

হলাহলাই উঠছে কেবল, অমৃতর দেখা নাই!  ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশের খারাপটা পার হবেই.....ভালোই বেশী এ জগতে, তবু কোল্যাটারাল ড্যামেজ হয়ে যায় কিছু,  যেমন ইচ্ছে করে কাল আমি পিঁপড়েগুলকে টিপে টিপে মারছিলাম, জলের ছিটে দিয়ে মাকড়সার জাল ভাঙছিলাম আর ঠিক কেমন করে জানি সে খুঁজে নিয়েছিল একটা কোন যেখানে জলের স্রোত পৌঁছয়না। অমনি করেই অমৃতস্য পুত্রকন্যারা গ্লানি কাটিয়ে খুঁজে নেবে সেই ভালোগুলো যেখানে বিষের ধারা পৌঁছবেনা, বিশ্বাস ভেঙে ধর্ষণ করতে ইচ্ছেই করবেনা। রেলপথে রুটিরা আর শুয়ে থাকবেনা.....

রুদ্র ইয়ত্তে দক্ষিণং মুখং

Sunday, May 3, 2020

বালিতে কদিন(শেষ)

বালি ঝেড়ে এগোতে লাগলাম। পুচকে একটা দ্বীপ, হাতে গোনা কয়েকটা মোটে থাকার জায়গা, সূর্যাস্তের দিকে এগোতে এগোতে তেষ্টা পেলে একটা পানীয় নিয়ে বসে পড়ো কোনো গদি মোড়া তক্তপোষে। তাকিয়ায় ভর দিয়ে চুমুক দাও পানপাত্রে, সূর্য তখন কম্পিউটার শাট ডাউন করার চিন্তা ভাবনা করছে। ফের এগোও, আস্তে আস্তে জলে রঙগোলা শুরু হবে, সমুদ্রে জোয়ারের জল বাড়বে, এদিক ওদিক হুটোপুটি করবে কোনো স্থানীয় বালক আর বহিরাগত বালিকা।তুমিবপাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাবে, দেখবে সমুদ্রে প্রোথিত দোলনায় লাল রঙের জল এসে দুলে যাচ্ছে। অন্ধকার নেমে আসবে ক্রমে, তুমি দ্বীপের প্রান্তে এসে দাঁড়াবে, প্রাণ ভরে শ্বাস নেবে তারপর ধীরে সুস্থে ফিরতি পথ ধরবে।  বালিতে হাঁটতে হাঁটতে হাসির ঝটকায় অন্ধকার দূরে হটবে, আস্তানার কাছাকাছি এসে খেয়াল হবে আরে দাঁড়াও মোবাইলে টর্চটাই জ্বালাই না হয়!

ঘরে ঢুকে এক ঢোক জল খাচ্ছি এমন সময় দকটা ডাক শোনা গেলো, "গেইকো গেইকো" বলে। ঘরের মধ্যে একটা গেকো বসে থাকা ভালো লাগার কথা না। খুব মোলায়েম করে বললাম, ভাই গেকো তিনজন মানেই ভীড়, তুই যা বাবা। তাতে তিনি আরো গম্ভীর হয়ে "গেইকো গেইকো" বললেন। ভারী রাগ হয়ে গেলো, ইয়ার্কি পায়া, চারদিকে খুব স্প্রে করে দিয়েছি। স্প্রে চলাকালীন কোনো আর আওয়াজ নেই, তবে গন্ধে আমারই হাঁচি শুরু হয়ে গেল এই যা। অ্যালার্জি আছে কিনা, সে থাক, গেকো বদটা গেছে এই ভালো৷ উহ,  ভারী অসুবিধে হচ্ছে কিন্তু, দরজাটা খুলেই দিই। হাঁচতে হাঁচতে যেই দরজা খুলছি, অমনি, ফের বদটা "গেকো গেকো" বলে হেসে উঠল।  হতভাগা!
এ দ্বীপে আলোর ব্যবস্থা খুবই সামান্য, টিমটিম করে আলো জ্বলা, গেকো ডাকা ঘরের থেকে বাইরে বেরিয়ে অন্ধকার গায়ে জড়ানো ঢের আরামের। এদিন চোদ্দই ফেব্রুয়ারী উপলক্ষে আবার মোমবাতি জ্বালিয়ে গেলো ডিনার টেবিলে। মোমবাতির আলোয়, এক আকাশ তারা মাথায় নিয়ে সমুদ্রের পাশে বসে রাতের খাওয়া শেষ করে গেকোর অভ্যর্থনা শুনতে ঘরে পা বাড়ালাম।



আবদুলের আসার কথা দশটায়, আমাদের বোট ছাড়ার কথা সাড়ে দশটা নাগাদ। আবদুল এলো যখন তখনো আমরা আরাম করে ব্রেকফাস্ট করছি। আমি চারবেলা খাবারের মধ্যে ব্রেকফাস্টটাই বেশী ভালোবাসি, অনেকে আবার ডিনারটা ভালোবাসে, তাড়াহুড়ো না করে খেতে পারে বলে। জেটিতে এসে বসে আছি তো আছিই, বোট আর আসেনা। এক ফরাসী দম্পতির সাথে আলাপ হল, এবারে নাকি তাদের অল্প সময় হাতে ছিল, তাই এক মাসের ছুটিতে থাইল্যান্ড আর ইন্দোনেশিয়া ঘুরতে এসেছেন। এর আগে ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা ইতুয়াদি ঘুরেছেন চার মাস এক এক জায়গায় ছিলেন। এক মাস শর্ট ট্যুর হ্যাঁ! আমি আট রাত নদিনের প্ল্যান করেছিলাম বলে কত লোক বলেছিল "আঅাট রাঅাঅাঅাত, নঅঅঅ দিইইইন"!  এভাবেই বাঁচা উচিত, আমাদের সব কিছু বড় বেশী একরকম বোরিং ছক,  একটা বয়স অব্দি সব্বাইকে ইস্কুল কলেজ করতেই হবে, একই রকম কটা চাকরি আছে করো, তারপর একইরকমভাবে কলুর বলদের মতো যৌবন খরচা করে বুড়ো হয়ে ভাবো তুমি কত দায়িত্বশীল ছিল। তুমি আসলে দায়িত্বশীল যতটা না তার থেকে বেশী, অন্যকিছু ভাবতে না পারা পাবলিক, আন্ডাবাচ্ছা প্রতিপালনের বাইরে। যাই হোক মন খারাপ করে আর কি হবে,  দুটো অপশন হয়, হয় বদলাও নয় মেনে নাও......





জেটিতে নামার আগে আগে একজন অদ্ভুত মানুষ অদ্ভুত একটা বন্দুক তাগ করে কী সব বলল, তাতে খালি করোনা নামটা বোঝা গেলো। পরে বোঝা গেলো, থার্মাল গান দিয়ে সবার টেম্পারেচার চেক করছে করোনা চেকিং এর পার্ট হিসেবে। করোনা তখনো হাসাহাসির বিষয়, তাই আমরাও হাসলাম এসব দেখে। জেটিতে পৌঁছে একটা ক্যাওস হল, একটা ছোট জায়গায় সব ব্যাগ নামাচ্ছে সেখান থেকে ওই গাব্দা ব্যাগ তুলে ভীড় কেটে বেরোনো মাত্রই দালালে থিক থিক করছে,,চারশো হাজার ইন্দোনেশিয়ান রুপি দিয়ে পৌঁছে দেবে। আমরা এসব কাটিয়ে এগোচ্ছি এমন সময় একজন আমাদের টিকিট দেখে বলল হ্যাঁ, " ঘন্টা চার পাঁচ লাগবে। তুমি ওদের সাথে চাইলে যেতে পারো", এক ট্যাক্সি ড্রাইভারের দিকে দেখিয়ে। আমরা প্রায় বিশ্বাস করে নিয়েছিলাম এই লোকটাই আমাদের এজেন্টের ড্রাইভার। কী মনে হতে বললাম,  না তুমি আমার টিকিট দাও, আমি দেখছি। তারপর অফিসে গিয়ে খোঁজ নিতে বলে আধ ঘন্টা চল্লিশ মিনিট লাগবে তোমাদের হোটেল অব্দি, একটু দাঁড়াও গাড়ি ছাড়বে!

দালাল চক্রের হাত থেকে বেরিয়ে আরাম করে গাড়িতে বসা গেল। একটা বুড়ি ফলওয়ালি কাটা ফল বিক্রী করছিল, মায়া লাগছিল দেখে কিন্তু কাটা ফল খেলে আমায় নিয়ে অন্য কেউআয়া করবে। দুপুরেই পৌঁছে যাচ্ছি যেহেতু ভেবেছিলাম মাউন্ট বাটুর যাবো। তারপর কাটিয়ে দিয়েছি। স্রেফ ভিউ এর জন্যে এতটা জার্নির মানেই নেই, কারন আলাশে মেঘ আছে ভালোই, কিছুই দেখা যাবে না। বরং আমাদের হোটেলে একটা গরীবের ইনফিনিটি পুল আছে সেখানে যাওয়া যাক।গরীবের ইনফিনিটি হলেও  বেশ ভালোই, পুল থেকে সমুদ্র বা উপত্যকা দেখা যায়না হয়ত, কিন্তু দূরের নারকেল সুপারি গাছের পাঁচিলটাওদিব্যি লাগে। ছায়া ছায়া, মেঘ মেঘ একটা বিকেল।























সন্ধ্যে নামার খানিক আগে লোকাল বাজারের দিকে যাব বলে বেরোলাম, তাছাড়া উবুদের রাস্তায় হাঁটতেও ভালো লাগে। বড় রাস্তা পেরিয়ে এদিক ওদিক করতে করতে একটা গলিতে ঢুকেই দেখি সে এক ব্যাপার বটে। পসরা সাজিয়ে বসেছে প্রচুর লোক, স্ট্রীট শপ। প্রচুর বার্গেইনিং, প্রচুর ডাকাডাকি, মান অভিমান, রাগ একদম চেনা সব যেন, খালি বিদেশী ভাষায়। মোহরের একটা সাপের ঝাঁপির মতো ব্যাগের শখ হয়েছিল, সাপের ঝাঁপি কেন পছন্দ তার উত্তর আমার জানা নেই। কত রকমের যে কান্ড হয় বিয়ে করলে জানা যায় বটে! ওর বাবা আর আমার বাবার জন্যে দুটো সারং কেনা হল খালি। সাপের ঝাঁপিটা মনোমতো পাওয়া গেল না। 





ততক্ষনে আলো জ্বলতে শুরু করেছে, এরাও ঝাঁপ গোটাতে শুরু করেছে। আমাদের আবার এ গলি  সে গলি ঘোরা শুরু। রেস্তোরাঁ গুলো জমজমাট হতে শুরু করেছে। হঠাৎ মনে হল, হাঁসের মাংস খাওয়া যাক, বালীর অন্যতম জনপ্রিয় খাবার। বেশ বেশ। বেবেক বেনগীল বলে একটা রেস্তোরাঁর নাম শুনেছিলাম।  রিভিউও চমৎকার,  সুতরাং চালাও ম্যাপ বেবেক বেনগীল।

অনেকটা হেঁটে ক্লান্ত হয়ে রেস্তোরাঁর কাছে এসে আবিষ্কার করলাম এটা আমাদের দুদিন আগের হোটেলের একদম কাছে! নিজেদের ছাগলামিকে ভেংচি কেটে ভিতরে যাওয়া গেলো। আলো আঁধারি রেস্তোরাঁটা বালিনিজ ধাঁচেই সুসজ্জিত। উঁচু মাচায় তাকিয়া ফরাসে ঠেস দিয়ে অর্ডার দিন।  বালিনিজ একটা মিউজিক ভাসবে এদিক সেদিক।  ঠিক কী নাম ছিল আমাদের হাঁসের আইটেমটার মনে নেই, তবে যা এসেছিল তা হল হাঁসের ঝলসানো মাংস, ভাত, ঝাল মিষ্টি নানানরকম সস/চাটনি,  ফল ।

হাঁসের মাংস আর ভাত

আইস্ক্রীম খেয়ে মুখ মুছে  যখন হাঁটা লাগালাম হোটেলের রাস্তায় বেশ অন্ধকার হয়ে এসেছে। গুগল ম্যাপ দেখে হাঁটতে হাঁটতে মাংকি ফরেস্টের পাশের রাস্তায় পৌঁছলাম। অনেকটা বড় জঙ্গলাকীর্ণ বলে এই জায়গাটায় আলো নেই একদম। অন্ধকারে লোকও নেই কোনো। একটু গা ছমছম করেনি বলব না। হনহন করে মোবাইলের আলোয় পথ দেখে হেঁটে চলেছি। মাঝে মাঝে হুশহুশ করে একটা দুটো স্কুটি চলে যাচ্ছে। খানিকক্ষণ হাঁটার পর একটা আলো জ্বলা রাস্তায় এসে পৌঁছলাম। লোকজন এখানেও বেশী নেই, দোকানপাট এরা সন্ধ্যের মুখেই বন্ধ করে দেয়, খালি একটা ইন্ডিয়া মার্ট ছিল সেখান থেকেই জল কেনা হল। গুগল বলছে এখান থেকে চারশো মিটার,  আর দেখাচ্ছে উল্টো দিকের একটা গলি। গলিটায় একটা দুটো লোক চলাচল আছে, কিন্তু সব কিছু বন্ধ হওয়ায় অদ্ভুত নিস্তব্ধতা জায়গাটায়। রাস্তাটা চড়াই হচ্ছে ক্রমে, সৌভাগ্যের বিষয় গুগলে রাস্তা কম হচ্ছে ক্রমে। দুজনে নানান রকম কথা বলছি কিন্তু রাস্তাটা নির্জন হয়ে যে অস্বস্তি লাগছে সেটা বলছিনা।জুতোয় ফোস্কা, ভরপেট খাওয়া আর বিদেশী অচেনা নির্জন রাস্তায় দুজনের পাড়ি দেওয়া পরস্পরকে কিচ্ছু না বলে ভরসা দিয়ে, এই ছবিটাই হয়ত সারাজীবনের পাথেয় হয়ে যাবে।

আজ সকালে আরাম করে ব্রেকফাস্ট করে দেরী বেরোনো। টুকটাক উবুদ ঘোরা আজ। কাল হাঁটতে হাঁটতে গুগল ম্যাপ যেখানে পৌঁছে দিল সেটা অন্য একটা হোটেল! বোঝো! যাইহোক তারপর তো পৌঁছনো গেলো। হোটেলটা পাহাড়ের নানান ধাপে ছড়ানো, গাছপালায় ঢাকা, জোনাকির আওয়াজ মনে হয় সভ্যতা থেকে কত দূরে আছি! সকালের রোদে অবশ্য তেমন কিছু মনে হয়না। আজ শুরুতে যাব তির্তা এম্পুল। বালিনিজদের কাছে খুবই পবিত্র এই মন্দির।   এই মন্দিরটায় স্নান করা যায়। পুন্যের দরকার আমাদের কারোরই ছিলনা,কিন্তু ওই পাথরের সিংহের মুখ থেকে জল বেরোবে, আর সেই মুখে মাথা পাততে ভারী আগ্রহ হল! অন্যজনের হয়নি,আমিই তাই সবুজ লুঙি পরে সিংহের মুখে মাথা পাতলাম।


গুনুং কায়ুই নামের আরেকটা মন্দিরে হাজির হওয়া গেল। এটায় আবার এইই বড় বড় উঁচু উঁচু সিঁড়ি। এক বুড়ি নারকেল বিকোচ্ছে উঁচু একটা চাতালে। তাই খানিক খাওয়া গেল। মন্দির গুলোয় পুজো সকালেই হয়ে মনে হয়, বেশী পূজারি দেখিনি কখনই। চাল সিঁদুর লেপা পাথর।  গোয়া গাজাহ তেও তাই। এইসব মন্দিরগুলো কত কত হাজার বছরের পুরোনো, পাথর কেটে কোথাও যক্ষীর মুখ, কোথাও হাতির, কোথাও জটায়ুর। যারা বানিয়েছিল তারা সব মরে হেজে গেছে তাদের কাজগুলো হাজার বছর পরেও টিকে আছে।  কেমন ছিল সেসময়ের মানুষ গুলো? তাদের রোজকার জীবন, তাদের পরিবারের সাথে সময় কাটানো, অবসর বিনোদন কে জানে! ইতিহাসে তো সব কিছু লেখা থাকে না। এই গোয়া গাজাহ মন্দিরের স্থপতি হাতির মুখ বানাতে বানাতে একটা শুঁড় বানিয়ে কি নিজের ছেলে মেয়েকে দেয়নি? সেই গল্প কই?  টাইম ট্রাভেল না করতে পারলে জানার উপায় নেই।


কেবল পেটে বড় ভুখ৷ না খেলে নাই কোনো সুখ....সুতরাং অগাসকে বলা হল কোথাও এওটা থামাও তুমি, জানি এটা ওয়ান ওয়ে, আমরা ঘুরে চলে আসবো ঠিক। নাম্বার তো আছেই। আসলে আমরা চাইছিলাম আজ পায়ে হেঁটে নগর পরিক্রমার মতো করতে দিনের আলোয়। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করে খুঁজে পাওয়া একটা ছোট্ট কিন্তু বালিনিজ এক রেস্তোরাঁ মিলে গেল।যেমনটা আমরা চাইছিলাম, বেশীরভাগ লোকাল লোক,অথবা অনেক দিন ধরে থাবা গেড়ে বসে থাকা বিদেশী। তেমন হাইফাই ভাব নেই কিন্তু খুবই চালু দোকান। ছবি দেখে দেখে অর্ডার দেওয়া হল। দাম কম, পরিমানেও কম কিন্তু স্বাদ চমৎকার।





এখানে একটা জায়গা আছে,  চাম্পুহান রিজ বলে। সেটায় বিকেলবেলা হাঁটতে যাব এটা ভেবে ছিলাম৷ রিজটা চমৎকার,  বড় বড় ঘাস, গাছপালার মাঝে একটা হাইকিং ট্রেইল। সেই ধফে ধরে হেঁটে যাও, তাড়া নেই কিছু, মাঝখানে দেখবে একটা ছোট্ট বাঁশের বাড়ি, পাশে দোলনা, ভুট্টাপোড়া বিক্রী হচ্ছে। ইচ্ছে হলে থামো, খাও, ফের এগোও। বাঁ দিক ডান দিক দুদিকেই ঘাস জমির পরেও পাহাড়টা ঢালু হয়ে খাদের সৃষ্টি করেছে। ওপাড়ে পাহাড়ের গায়ে কিছু কিছু বাড়ি। এ পথ কতটা যায় কে জানে। আমরা প্রথম থেকেই ঠিক করেছিলাম, এমনিই যাব যতদূর ইচ্ছে হয়। কিছু দেখতেই হবে এমন না, স্রেফ ভালো লাগছে বলেই হাঁটা নিজেদের সাথে। হাঁটতে হাঁটতে বিকেলের আলো মরে আসা দেখা, তাজা বাতাসে হুড়োহুড়ি করে খানিক ছুটে নেওয়া এমন মানে নেই কিছু কাজ করা। ইচ্ছে হলে যাও ওই ঘাসের উপর একটু বোসো, সাপ খোপের ভয় করছে? বেশ তাহলে লাঠি দিয়ে একটু এলোমেলো করে দাও তারপর বোসো। 

চাম্পুহান রিজে কতক্ষন ছিলাম কে জানে, গোধূলির আলো মেখে ফিরতি পথে উবুদ প্যালেসটাও ঘুরে নিলাম। রাজারা থাকেনা, তাও ভীড় ভালোই আছে। আজই শেষ দিন এখানে, চেটেপুটে নিচ্ছি যতটা পারি চারধার। মোহরের সাপের ঝাঁপিটা শেষতক কেনা হয়েছে। আজ বালিনিজ ব্র‍্যান্ডের একটা আইস্ক্রীম খেলাম, তেমন উমদা কিছু না। এদের ডেজার্ট আমাদের ভালো লাগেনি তেমন, মেইন কোর্স বেটার।
বালিনিজ নাচের টিকিট বিক্রী করছে


বালিনিজ ঘর বাড়ি
সকাল বেলা ব্রেকফাস্টের পর বাঁধাছাঁদা শেষ, অগাস এসে গেছে। এক জোড়া মহিলা আমাদের লিফট চাইল, আমি তো আনন্দিত হব হব করেও হতে পারলাম না। আমরা একটু ডিটুর করবো, বাটিক ফ্যাক্টরিতে কেমন করে এদেশের লোকে কাজ করে তা দেখবো। ইন্দোনেশিয়া থেকেই বাটিক এর কাজ শিখে নাকি রবীন্দ্রনাথ ফিরেছিলেন। স্থানীয় লোকজন একমনে বাটিকের নানান রকম কাজ, সেলাই, ছোপানো, আঁকা সব করছে। কাজের লোকেদের ধরন সব জায়গায় একই রকম হয় তাই না? আমরা কিছুই কিনলাম না। 
বাটিক ফ্যাক্ট্রিতে
কাজে ব্যস্ত
বাকি রাস্তা অগাসের সাথে গল্প করতে করতে বালিকে আরো খানিক জানতে চাইছিলাম। অগাস ইকনোমিক্স নিয়ে অনার্স করে ড্রাইভারি করছে এবং সেটা নিয়ে একটুও আক্ষেপ নেই ওর। যেন এটাই স্বাভাবিক। আমার প্রশ্নের উত্তরে জানালো, হ্যাঁ এখানে প্রচুর কাজের সুযোগ, তাই ও জাকার্তা থেকে এখানে এসেছে, গাইড, ড্রাইভার, হোটেল ইত্যাদি নানান কাজ হয়। আমি ভাবছিলাম, এদের সাথে আমাদের সাংস্কৃতিক মিল এত, অথচ আমাদের মধ্যে এমন ছোট কাজ বড় কাজের ভাগ  কেন? আমরা কেন সব কাজ একই রকম ভাবে গ্রহন করতে পারিনা? এই ছোট্ট পরিচ্ছন্ন দেশটা আমায় ভারী গোলমালে ফেলে দিয়েছে। এরা খুবই সুখী যতটুকু দেখেছি, শুনেছি। এই ছোট্ট দ্বীপটায় বড় ইন্ড্রাস্ট্রি কিছুই নেই। অথচ এদের মুদ্রার দাম একেবারেই নেই। পরে এক ইকনমিস্ট বন্ধুর থেকে জানলাম খেয়ে পড়ে সুখে থাকলেই হল না, তুমি উন্নতি আর কী করতে পারো বা করছ সেটা দিয়ে তোমার জিডিপি,  মুদ্রার দাম নির্ধারিত হবে। তোমার  বানিজ্য করার মত কিছু আছে কি? না হলে তোমার জিডিপি, মুদ্রার দাম এমন খারাপই হবে। অথচ এই জিডিপি এই মুদ্রা এসবই ভালো থাকার জন্যই, উন্নতি তো ভালো থাকার জন্যেই করে তাই না? ভারী গোলমেলে ধাঁধা।


বালিনিজ অসুরের এই মূর্তিটা চমৎকার না?

ধাঁধার উত্তর যাইহোক, বালি ভালো থাক, ওদের হাজার হাজার বছরের সংস্কৃতি,  বিশ্বাস যাপন নিয়ে ওদের মতো করে ভালো থাক। আমরা একটু "গরীব"  দেশের থেকে শিখে নিই বরং প্রকৃতি, নিজস্বতা ধ্বংস না করে ভালো থাকতে।





Sunday, April 19, 2020

বালিতে কদিন(পাঁচ)

আগের পর্ব

বেশাখী মন্দির থেকে গাড়ি অব্দি আসার রাস্তাটা হেঁটে নামতে হবে অথবা বাইক এ রাইড ভাড়া নেওয় যায়। মন্দির চত্বরটাই এতটা হাঁটাহাঁটি করে খিদে খিদে পাচ্ছিলো, তাই হাঁটার বদলে দরাদরি করে দুই বুড়োর বাইকে চড়েই বসলাম। সারং ফেরত দিয়ে গাড়ি অব্দি যেতে যেতেই খিদে বেশ চনমন করে উঠেছে। অগাস আমাদের নিয়ে গেলো আগুং পাহাড়ের কোলে এক রেস্তোরাঁয়, চমৎকার পরিবেশ কিন্তু সেখানে আবার আ লা কার্টে নেই, আমরা এরপর যাব টেকাড চেপুং প্রপাতে, তাই পেটপুরে বাফে খেতে চাইনা। সুতরাং বিস্কুটে ভর  টেকাড চাপুং এর পার্কিং লট অব্দি যাওয়া গেল। তখন দুপুর গড়িয়েছে অনেকটাই, রোদ আড়াল করে একটু এগোতে একটা ছোট্ট মত দোকান।  এক বুড়ি চালাচ্ছে, সে কোনো মতে কথা শোনে, হেসে হেসে খাবার দেয় নিজের মত, ইংরেজি প্রায় বোঝেই না। তবে দোকানটা নেহাতই ছোট মত এবং স্থানীয় লোকেই খাচ্ছে। একটা শিল নোড়া মর জিনিসে এটা সেটা দিয়ে পিষে কি যেন বানাচ্ছে দেখে কৌতূহল হল, টেস্টের জন্য অল্প একটু কেনাও হল।এটা একেবারেই স্থানীয় খাবার, ট্যুরিস্টরা খায়না, যে লোকগুলো বসে খাচ্ছিলো তারা ভাত আর এটা একটা কলাপাতায় নিয়ে খাচ্ছিল। আমাদের তেমন স্বাদ লাগলোনা। অগাস জানালো, সামনে ভালো খাবারের দোকান পাবো।


এর নাম গাদোগাদো, এখানে নিরামিষ বানাচ্ছিল , তবে চিকেন দিয়েও হয়

টিকিট কেটে ছায়া মাখা রাস্তা ধরে খানিক যেতেই খাড়াই পাহাড় ভাঙা শুরু হল, বন্যুমালার থেকেও বেশী উঁচু উঁচু স্টেপিং। দু তিন ধাপ নামতেই বাঁ পাশে ডানপাশে পাহাড়ের ধাপে ধাপে ছোট ছোট মিষ্টি সব রেস্তোরাঁ।  দাম তেমন কিছুনা, অথচ অদ্ভুত শান্তির পরিবেশ। আমরা আমাদের ইন্দোনেশিয়ান কমফোর্ট খাবার অর্ডার দিলাম, নাসি গোরেং, মি গোরেং। কফি আর চা সাথে। খিদে পেয়েছিল খুবই, সাথে এমন পরিবেশ,জঙ্গল ঘেরা পাহাড়ে বসে খাওয়া, খুবই উপভোগ্য। 
আহা বড় ভালো ছিলো



  টেকাড চেপুং আসলে একটা পাহাড়ের নীচে, দুটো পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া জল, নুড়িপাথর  হাইক করে গুহায় থাকা এক প্রপাত। পাশ দিয়ে একটা জলের ধারা সঙ্গে নিয়ে গাছপালা ময় একটা পাথুরে পাহাড় এর নীচে যাওয়া যে কী আনন্দের সেটা বোঝাতেই পারব না। খানিক বাদে কোমর সমান উঁচু ধাপ ধরে নেমে দেখি এবার একেবারেই নেমে গেছি, এবারের রাস্তা হবে জলে নেমে। জলে স্রোত বেশী নেই, কিন্তু পায়ের তলার পাথর খুবই অমসৃন,বন্ধুর। মাঝে মাঝে বড় উঁচু পাথর,  গায়ে শ্যাওলা মাখা শুয়ে আছে গিরিখাতে। খুব সাবধানে পাথর পেরিয়ে চলতে হয়। ঠান্ডা ঠান্ডা জল আর পাথরে পায়ে অদ্ভুত অনুভূতি হয়। অনভ্যস্ত পায়ে ব্যথা লাগে, প্রকৃতিকে সেইই কবেই এত দূরে ঠেলে দিয়েছি কাছে আসলেও দূরেরই থেকে যায়। একসময় রাস্তা আরো সরু হয়ে যায়, পাথরের ফাঁক দিয়ে আসা এক চিলতে আলোয় অন্ধকার কাটে না তেমন আর আরো খানিকটা এগোলেই ম্যাজিক দেখা যায়। পাহাড়ে ঘেরা চারদিক, মাথা খোলা একটা গুহার মাথা থেকে জল পড়ছে অঝোরে,
খানিকটা জমে আছে। সেই ধারায় দাঁড়ালে মন ভালো খারাপ এর বাইরে, শান্ত সমাহিত হয়ে যায়।মাথা উঁচু করলেই গাছপালা ঘেরা আকাশ আর জলের ধারা।
এমন সময়,
"বেবি,ফোটো এহি লেনা হ্যায় লেকিন থোড়া আউর দূর সে....অউর এক ক্লিক করো"।
চমকে তাকাতেই হতাশ, করুণ ছেলেটার চোখাচোখি হয়ে গেল,বেচারি এই সব সুন্দর ছেড়ে "বেবির" জন্যে জল ভেঙে কোমর নীচু করে ছবি তুলতে গেল.....
ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে যারা ফেসবুক ইন্সটার সুন্দরী দেখে তাক করেছ হে বালকগন, এ বিষয়টা খেয়াল রেখো।




আজ জলদিই ফিরে গেছি হোটেলে। দিনের আলোয় জায়গাটা অন্যরকম লাগছে কেমন। কাল আবার সকালে বেরোনো আছে,  গিলি এয়ার আইল্যান্ডে যাব। একেবারে চেক আউট করে বেরোবো, আরে তাই তো, টাকা বদলানো হয়নি তো! পড়িমড়ি করে ফের বেরোলাম দু মক্কেলে। ছটা বেজে গেছে তখন, কিন্তু আলো আছে এখনো। চতুর্দিকে হরেকরকম দোকান, রেস্তোরাঁই বেশী, আমরা অবশ্য মানি এক্সচেঞ্জের দিকে চোখ মেলতে মেলতেই চললাম ঊর্ধ্বশ্বাসে। ডলার বদলালে আসলে এত এদেশীয় টাকা হয় আমরা দু দিন এর মতো করে বদলাই। এক গাদা টাকা ব্যাগে  পুরে খানিক ধীরে সুস্থে ফিরছি গল্প গুজব করতে করতে, খানিক বাদে মনে হল এ রাস্তায় তো হেঁটে আসিনি! টেকনোলজি এসে জীবন এত সোজা হয়ে গেছে যে এই রকম মুহূর্তেও কোনো চিন্তা হয়না, খালি মনে হয় এহে এক কিলোমিটারের বদলে দেড় কিলোমিটার হাঁটতে হবে এখন।


সকাল সকাল গাড়ি এলো, আজ আমাদের দ্বীপান্তর হবে। বালির আর লম্বকের মাঝে তিনটে ছোট ছোট দ্বীপ আছে,  গিলি টি,  গিলি এয়ার আর গিলি মেনো। আমরা একরাত থাকবো আর আমরা ঠিক করেছিলকম এটা স্রেফ কিচ্ছু না করার জন্য যাওয়া হবে। করার অনেক কিছু হয় এখানে, স্নরকেলিং এর উপকরণ নিয়ে সমুদ্রে ডুব দিয়ে এসো, বা বোট ভাড়া করে জলের নীচে স্ট্যাচু দেখে এসো, বা কচ্ছপ। এর মধ্যে গিলি টি হল সব চেয়ে জমজমাট, গিলি মেনোটা ভূমিকম্পের পর একেবারেই নিরালা, গুলি এয়ার এর মাঝামাঝি, চাইলে পার্টি লাইফ না চাইলে ল্যাদ লাইফ।চিরকালের মধ্যমেধার, মধ্যবিত্ত, ভীরু, না ঘরে টিকতে পারে না ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যেতে পারে এমন বাঙালী কোনটা বাছল তা নিয়ে কোনো ক্যুইজ হয়না অবশ্য। জেটিঘাটে অনেক্ষন বসতে হল, স্থানীয় এক বুড়ি আর এক বুড়ো চিপস, নরম পানীয় ইত্যাদি বিক্রী করছিল। তারা ইংরেজি ভালো জানেনা, তবুও আকারে ইঙ্গিতে বোঝালো ছায়ায় খানিক বসতে, বোট আসতে দেরী আছে। এরকম লোক সব দেশেই একই রকম হয় তাই না?


গিলি এয়ারে বেশী লোক নামলো না। গিলি টি তেই বেশী যাবে, কারন ওখানে হুল্লোড় করার বেশী অপশন, তাছাড়া ওই দ্বীপটাও বড়। আমাদের সাথে যে কজন নামলো আমরা ছাড়া আর ভারতীয় কেউ নেই। আমরা একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।  জানি এইটা পড়েই আপনারা আমায় গালাগাল দেবেন, আগে যেখানে আমি লিখেছি, বিদেশে এসে চেনা গাছ দেখলে ভারী ভালো লাগে সেখানে বিদেশে দেশের লোক নেই ভেবে কেন স্বস্তির নিঃশ্বাস? আমি খুবই খারাপ লোক এটা তো  প্রথম কারন,  পরেরটা হলো, বিদেশে থাকতে না আমি ঘুরতে গেছি, ছুটি কাটাতে গেছি দেশীয় কৌতূহলের হাত থেকে বাঁচতে।  আমি দেশের মধ্যে বেড়াতে গেলে বাঙালী দেখলেও শশব্যস্ত হই, আর  এরকম একটা নিরিবিলি দ্বীপে সেই চেনা কথা চেনা অভিযোগ বা চেনা ফর্মালিটিস  জাতীয় কিছু করতে ইচ্ছে করে না। এ আমার ত্রুটি, আমি জানি। 

আমরা এই আইল্যান্ডে থাকার জায়গা ইচ্ছে করেই জেটি থেকে অনেকটা দূরে খুঁজেছিলাম, তাই হেঁটে যাওয়া যাবে না কোনোভাবেই। যাওয়ার উপায় হলো ঘোড়ার গাড়ি। এই দ্বীপে কোনো যন্ত্রচালিত যান নিষিদ্ধ, হয় সাইকেল নয় ঘোড়ার গাড়ি এইই আছে। পরের দিনের ফেরার বোটের সময় জিজ্ঞেস করে, একটা ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে বসা গেল। চালকের নাম আবদুল, ছোট খাটো চেহারার আবদুল আর তার বড়সড় চেহারার ঘোড়া নিয়ে রওনা হলাম, খানিক বাদের মনে হল পঞ্চাশ ষাট বছর আগের কোনো গ্রামের রাস্তায় চলেছি যেন, কিংবা আন্দামানের কোনো দ্বীপের ভিতরের রাস্তা। ঘোড়ার পায়ের খটখট ছাড়া কোনো শব্দ নেই, পাখির ডাকও কম। ঝিরঝিরে হাওয়া দিচ্ছে, হঠাৎ বাঁক ঘুরে সমুদ্রের ধারের রাস্তায় পড়লো। এক পাশে হোটেলগুলো আর সমুদ্রে তীরে ওপেন রেস্তোরাঁ।  বিচ নেই কোনো। সমুদ্রে নামার জায়গা কই? 
আব্দুল(যদিও ছুঁচোলো দাড়ি নেই)
ঘোড়াটা ভদ্র ছিলো কিন্তু






আরো খানিক গিয়ে আমাদের থাকার জায়গা এলো। সমুদ্রের পাশেই একটা দোলনা টাঙানো তারপর সরু একফালি রাস্তা পার হলেই আমাদের আস্তানা। চমৎকার একটা মুসাম্বির জ্যুস  খেতে দিয়ে সরাইখানার কর্মচারী বলল একটু সমুদ্র দেখো ওই দোলনায় বসে আমি তোমাদের ঘর ঠিক করছি। আরে হ্যাঁ হ্যাঁ সে আর বলতে! কোনো তাড়া নেই,  ছাতার মাথা লাগেজ,জলের বোতল,  হাবিজাবি সব রেখে রোদ মাথায় নিয়েই জলের সাথে আলাপে গেলাম। নীল আকাশ, নীল জল, সাদা মেঘ আর চড়চড়ে রোদ। দূরে লম্বকের পাহাড় দেখা যাচ্ছে। জলে নামতে গেলে আরেকটু এগোতে হবে,আমাদের আস্তানা  উত্তর-পশ্চিম দিকে,  এখান থেকে সানসেটও দেখা যাবে না। খানিক হাঁটতে হবে আর তাতে সমস্যা কিছু নেই। ঘরটা একটু সমস্যার।  মানে খুবই ভালো, সামনে সুইমিংপুল,  আধুনিক সুবিধে যুক্ত ওপেন এয়ার বাথরুম, গোল মশারিওলা খাট সব আছে কিন্তু ওই ওপেন এয়ারের কন্সেপ্টের কারনেই নন্দিনীর দ হয়ে গেছে। মানে কামধেনু নন্দিনীর কাছে কিছু চাইলে নাকি যেমন পাওয়া যায় তার সাথে ফাউতে কিছু ঝামেলাও আসে, নন্দিনীর দ । এইখানে সেই গোলমালটা হল, একটা গেকো, ওদের দেশের একটা নিরীহ সরীসৃপ, গিরগিটি টাইপ। বাথরুমে গেকো দেখে আনন্দ পাওয়া গেলো না। গেকোর গল্প পরে বলছি।





 সমুদ্রে ভূত হবার বাসনায় দুপুর রোদে আমরা চল্লুম। সমুদ্রে ধারে এইদিকটা সানসেট পয়েন্ট না বলেই খানিক লোক কম, খানিক ফাঁকা জায়গা, খানকতক গাছ। এখানের সমুদ্রের জলে টান খুব, ঢেউ নেই, আর পায়ের তলায় বালির বদলে মরা কোরাল, অভ্যস্ত হতে সময় লাগে। তারপর? তারপর এমনি এমনি ভাসতে হয়, নাক ডুবিয়ে কোরালন্দেখা যায় কিনা দেখতে হয়, ফেরার সময় খলবল করতে বেশী হয় স্রোতের বিপরীতে আসার জন্যে। পশ্চিমদিকে অনেকটা চলে গেছিলাম, এইদিকটা অনেক বেশী সাজানো দেখছি, বিকেলে আসবোখন। বালি মেখে ফেরার সময় এক জেলের সাথে আলাপ হল, মাছ কিছু নাই এসময় ঘরে ফিরছে সে। পেটের মধ্যে এক সমুদ্র খিদে ততক্ষনে, সমুদ্রে একদম  পাশে একটা ছায়ামাখা রেস্তোরাঁয় আরাম করে খাওয়া গেলো, একটা মাংসের সব্জি আর নারকেলের দুধ দেওয়া ঝোল, যাকে বলে ইন্দোনেশিয়ান কারি আর ভাত,আর একটা টুনা মাছ ভাজা সব্জি দিয়ে আর ইন্দোনেশিয়ান সস দিয়ে। হামহাম করে খেয়ে নিয়েছি সব। ঝাল ছিল, কিন্তু খিদেও পেয়েছিল খুব।




এমন একটা ফাঁকা দ্বীপে দুপুরবেলা ঘরে শুয়ে ঘুমোনোর প্রশ্নই ওঠে না, সুতরাং আমরা গাছের ছায়ায় নৌকার পাশে বালিতে তোয়ালে পেতে আরাম করে এক ঘুম লাগালাম। আহা মাথার উপর পাতার ফাঁকে নীল আকাশ, সামনে সমুদ্র, তকতকে সৈকত, আর ভরা পেট, এর চেয়ে বেশী কী লাগে হ্যাঁ? ঘুম ভাঙে এক বুড়ি ফেরিওয়ালার ডাকে। স্থানীয় কিছু ফল, চালের এবং আরো সব কিসের কিসের চিপস টাইপ বস্তু মাথায় নিয়ে ফিরি করছে বুড়ি। আমায় উঠে বসতে দেখে, ভাঙা ইংরেজিতে তার ডালা নামাতে বলল।  নামানো গেলো, এটা সেটা দেখে একটা ম্যাঙ্গোস্টিন (নামটা পরে খুঁজে বের করেছি) ট্রাই করে দেখা গেলো, বেশ খেতে। চালের গুঁড়ি দিয়ে বানানো চিপসটাও বেশ খেতে। ঘুম ভেঙে গেলে বসে থাকা যায় না, বিকেলও হয়ে এসেছে। দ্বীপটা হাঁটাহাঁটি করে এক্সপ্লোর করাও দরকার, সুতরাং উঠো মুসাফির বাঁধো ছাঁদা....(ক্রমশ)