Thursday, September 10, 2020

কাছেপিঠে

 সকাল থেকে ঝড় জল, মেঘলা। সূর্য না দেখতে পেলে ভাল্লাগেনা। এই দুপুরে থম মারা আকাশে পাশের বাজারের মুরগীওয়ালার বাক্স থেকে মোরগের কঁকর কোঁ আওয়াজ আসছে। কেমন যেন পাহাড়ি জায়গায় আটকে গেছি মনে হচ্ছে। লকডাউনের জন্যই গাড়ি  বাইকের হর্ণ নেই, আওয়াজ নেই৷ কতদিনের পর সেদিন বেরিয়েছিলাম।  ফেসবুকে আর খবরের চ্যানেল এর বাইরে যে বিরাট দুনিয়া আছে, তারা দিব্যি আছে। মাস্ক এর বালাই নেই, করোনাতঙ্ক নেই। বাজার হাট করছে, বউকে সাইকেলের ক্যারিয়ারে বসিয়ে চলেছে। স্বাভাবিক দুনিয়া যেমন ছিল তেমন টাইপ। সত্যি বলব? দেখে রাগ হবার চেয়ে আনন্দই হল। ভুল ঠিক জানিনা বেঁচে তো আছে তারা। সুস্থ ভাবেই। আর আমরা হলাম ব্রয়লার মুরগী আমরা কিনা, তাই ফ্লাস্কে চা, কাগজের কাপ, স্যানিটাইজার এর বোতল, টিফিন ক্যারিয়ারে লুচি তরকারি, ব্রেকফাস্ট বক্সে স্যান্ডউইচ। খোরাক লাগছিল নিজেদের। চেনা রাস্তা ছেড়ে একটা অচেনা রাস্তায় গেছিলাম। দুপুরবেলায় খেয়ে আঁচাচ্ছে মেয়ে বউ, দুটো  জোয়ান লোক চিংড়ি মাছের খোসা শুকিয়ে গুঁড়ো করছে। লোকজন নেই কেউ ওখানে। মেছো গন্ধর ঝাপটা সরিয়ে মেঘের আড়াল ধরে হাঁটতে বেড়ে লাগছিল। ওই দূরে একদল লোক নৌকা নামালো জলে, আরো দূরে কাঁধে জাল নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে এক বুড়ো। আহ! কতদিন পর আলাদা কিসিমের মানুষ দেখা গেল। আমাদের বাড়ির টবের নিমগাছটার যেমন বৃষ্টি হলে খুব ফুত্তিতে মাথা নাড়িয়ে গান গায় অমনি বেতাল ফূর্তি হল।  ফিরতি পথে আবার রিটার্ন গিফট,ঝুম বৃষ্টি নেমেছে। সন্ধ্যে হয়ে গেছে তখন। গাড়ি সাইড করে চুপ করে বসে আছি কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না বৃষ্টির প্রাবল্যে, খালি গাড়ির আলোয় ড্যাশবোর্ডের উপর কারুকাজ হচ্ছে আলোয় ছায়ায়। আমি যদি আঁকতে জানতাম বৃষ্টিতে আলোতে ছায়ারে মাখামাখি আমার গাড়িটার ফূর্তির একটা ছবি আঁকতাম বেশ। আবোলতাবোল ভাবনার মাঝেই যেন ফিসফিসিয়ে জানান দিলো, দূর ছবি আঁকার কী, শিগগির আরেকদিন নিয়ে এসো বরং, গ্যারাজ বন্দী থেকে থেকে আর ভাল্লাগেনা। 

জড় জিনিস কথা বলবে কেমন করে ভাবছ বুঝি খুব। বলে, আমরা অমন আলাদা করেছি জড় জীব, আসলে ওদের ভাষা টের পাইনা বলেই। এইতো সেদিন, জায়গা অকুলান হচ্ছিল বলে নতুন ফ্রিজ আনাহল,পুরোনো ফ্রিজটার দুঃখ হচ্ছিল সেকথা বললেই ভাববে, আমার মনগড়া। কিন্তু সত্যিই পাচ্ছিল সে কষ্ট, একদিনের জন্যও খারাপ হয়নি সে, কোনো ট্রাবল দেয়নি, তবু তাকে বিদায় জানানো হচ্ছে তা সে ভাবছিল। ফিসফিস করে বললাম, সে অন্যজনের ঘরে যাবে। তারা তাকে আদরে রাখবে, নেহাত দরকার ছিল বলেইনা নতুন আনা। আমার কথায় কী বুঝল কে জানে, মনে হল যেন অভিমান কমলো তার। 

বড় মায়া হে, সমুদ্রের ঢেউ থেকে নির্জন বিচ,  সাহায্য করতে এগিয়ে আসা ফোগলা বুড়ো থেকে বুড়ো ফ্রিজ সবাই মিলে বড় আঁকড়ে থাকে। এক জীবন,বহুজীবন।