Saturday, October 24, 2015

পূজো-মনকেমন

মাকে একটু আগে ফোন করেছিলাম, বোধন হয়ে গেছে, ঢেনকুড়  ঢেনকুড়  করে ঢাকের আওয়াজ আসছে। আমাদের দেশের বাড়ির পূজো। তেমন বড় কিছু না হলেও , একগাদা লোকজন , কেজো অকেজো নানা কিসিমের লোকের ব্যস্ততা, পূজোর সময় ঢাকি আর পুরোহিতের নাচ, ফাক পেলে মাঠে চলে যাওয়া।  মিস করছি।  আমাদের এখানে পরের সপ্তাহে পূজো হবে। টিকিটের দাম বেশ চড়া রেখেছে তাই এখনো দোটানায়আছি যাব কি যাব না, কারণ ওর ১/৪ টাকায়  দুবার বুফে হয়ে যাবে। তাছাড়া মেনু তেমন আকর্ষক না, আর এই সব ক্লাব কালচারের পূজোর মেন ফোকাসটাই  তো খাওয়া। দেখা যাক।  এদিকে এদের মানে আমার আমেরিকা নিবাসী ভ্রাতা এবং ভগিনীদের উত্সব এর দিন সমাগত। ভূত সেজে আনন্দ! ওরে আর কদিন সবুর কর, ভুশুন্ডি তে ডাক পড়ল বলে।  তখন আর সাজের দরকার নেই এমনি এমনই ভয় দেখাতে পাবি।

শীত আসছে। বেশ রোজই  একটু একটু করে টেম্পরেচার কমছে , গাছ গুলো ন্যাড়া হচ্ছে। আচ্ছা গাছেদের ঠান্ডা লাগে না? অন্তত শীতের সকালে যে হওয়াটা দেয় তাতে মন খারাপ ও তো করতে পারে!
দুদিন ধরে টানা বৃষ্টি হয়ে চলেছে। এমন মন খারাপ করা আবহাওয়া বেশি বাজে লাগে , এর চেয়ে বরফে ঢেকে থাক আর রোদ  ঝকমক করুক সে অনেক ভালো। টেম্পরেচার ৪৫F  এ স্থির। সকালে উঠতে বেজায় কষ্ট , তবু অফিস যাবার পথে খান কতক ছবি না তুলে পারিনি।






আজ তো দশমী হয়ে গেল। মা বলল এবার নাকি আলাদা আলাদা দলের জন্য আলাদা আলাদা ইভেন্ট ছিল, গান নাচ ইত্যাদি মিলিয়ে বিশাল হই হুল্লোর।কাকার ছেলে মেসেজ করেছিল, রাত একটাতেও মন্ডপে সবাই, দুর্গাকে যতক্ষণ আটকে রাখা যায় আরকি। আর দূর্গা ঠাকুরকেও বলিহারি বাপু, এত খাতির করে লোকে রাখতে চায়,পাঁজি ওলাদের কানমুলে দিতে পারে না।  আসলে দুর্গার দুকখুটা  খালি আমি জানি, অমন নিরামিষ খাওয়ালে কে থাকবে, হুহ। একদিনে পালায় না বাঙালির বাপের ভাগ্গি।

ও হাঁ এক গল্প তো বলা হয়নি ,কয়েকদিন আগে আমরা ঘুরতে গেছিলাম Bryce ,Zion আর আরিজোনার horseshoe বেন্ড। ওখানে যেতে যেতে একখান মস্ত কেস খেয়েছিলাম, গাড়ির স্পিড লিমিট ছিলো ৮০মাইলস/ঘন্টা। আর তেজা চালাচ্ছিলো ১১০-১২০ তে, এক ব্যাটা পুলিশ ক্যাঁক করে ধরেছে। ইয়ার্কি পায়া ক্যা , ইত্যাদি বলে বলল জেনে শুনে এইসব করার শাস্তি জানো , দাও লাইসেন্স।  আমরা হৃত্পিন্ড হাতে নিয়ে ভাবছি কি হয় কত ফাইন করে, দেখি মামা এসে ওয়ার্নিং দিয়ে ছেড়ে দিল।  আমরা তো হাঁ , এমন হয় নাকি। যাই হোক তারপর থেকে আর কোনো রিস্ক নেইনি বাবা। এই গল্পটা মনে পড়ল কারণ আমার আবার ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করছে।


আচ্ছা এরকম মন খারাপ করা পূজোয় একটা খুশির খবর আসছে, খানকতক বাঙালি জুটেছে আমাদের এখানে, বাঙালি আর পুজো নেই তাও কি হয়, ব্যাস লাগাও লক্ষী পূজো।  আমি প্রথমে উত্সাহ পাচ্ছিলাম না নিরামিষ বলে, এর চেয়ে কালী পূজো  করলে কেমন হয় , কালী আর লক্ষী সে তো একই ইত্যাদি অনেক লড়াই এর পর মিমাংসা হয়েছে লুচি আলুরদম আর নাড়ু  হবে। এই তো জীবন  কালীদা। ..









Monday, October 5, 2015

এটাসেটামিক্স

দেখতে দেখতে বছর ঘুরে গেল।  আমার একলা বকার রোগ ছোটবেলার , কিন্তু ঘাড় ধরে সক্কলকে পড়ানোর রোগটার কথা বলছিলাম আরকি। গত বছর এরকমই একটা সময়ে, যখন ঠান্ডা হওয়ার ঝাপটা শুরু হয়েছে , গাছেদের একটা দল সব পাতা ঝরিয়ে বিবাগি আর একটা দল বিবাগি হওয়ার আগে যথাসম্ভব নিজেদের রাঙিয়ে নিচ্ছে হলুদ লালে (লাল হলুদ রংটা মাঠে যতই বিচ্ছিরি হোক, গাছে গাছে মন্দ না, তবে ইটা অবশ্য হলুদ সবুজ লাল ,মোটেই লাল-হলুদ না)। আহা এইসময়টা গাছেদের নিশ্চই খুব খারাপ লাগে কিন্তু আমার দারুন লাগে। একা একা বিভিন্ন রঙের গাছেদের তলায় বিছানো কার্পেটের উপর দিয়ে হেঁটে যেতে।  আর কখনো ফিসফিস করে কখনো তাদের জিগ্গেস করেছি  কিরে এত যে আমোদ আল্হাদ করছিস জানিস তো দুদিন বই নয়, কদিন পরেই সব বেমালুম ফাঁকা হয়ে যাবে।..মন খারাপ করবে না? আমার বোকামিতে তারা বোধয় মুচকি হাসে , বোধহয় ফিসফিসিয়ে বলে ওহে বেশি ডায়লগ না দিয়ে নিজেদের দিকে তাকাও, দুদিন বই নয় জেনেও যা কান্ডটা কর তার চেয়ে বরং আমাদের থেকে শিখলে পারো কেমন করে নিজেদের রঙ্গিন করে নিতে হয়! তা যাক যে কথা বলছিলাম,দূরের পাহাড়গুলো আর কদিন পরেই বরফ টুপি পরা শুরু করবে তারপরেই ঠান্ডার রাজামশাই এসে একে ফুঁয়ে সব সাদা করে দেবে। এরকম একটা সময়েই আমার এই এলোমেলো হিজিবিজি লেখার শুরু। সারা বছরে কত কি ঘটল, কখনো লিখেছি কখনো লিখিনি। 
মাঝে মাঝে আমার মনে হয় যক্ষ ঠিক একবছরের জন্য নির্বাসিত হয়েছিল বুঝি মেঘদূতম লেখার জন্যই।  ২০১১ সালে আমি প্রানপন চাইতাম কলকাতার বাইরে যেতে, যেখানে হোক, মরুভূমি মালভূমি যেখানে ইচ্ছে, খালি "এই শহর যেন আমার পিছু পিছু না আসে' । আর এখন বাড়ি ফেরার জন্য ছটপট করছি , খালি মনে হচ্ছে বাকি দিন গুলো তাড়াতাড়ি  কেটে যাক।  আসল কথা আমার পালাতে ইচ্ছে করে, কোনো জায়গায় বেশিদিন থেকে গেলেই মনে হয় আমার বুঝি শিকড় গজিয়ে যাবে, তখন পালাতে ইচ্ছে করে। 

মহালয়া আসছে, তারপরেই পূজো। পূজো নিয়ে বেশিরভাগ লোকের দুটো মত , এক হয় ৪তে দিন আড্ডা, ঠাকুর দেখা (মানে ক্যামেরায় , আজকাল তো নিজের চোখে কেউ কিছু দেখে না ) , গুছিয়ে খাওয়া আর না হলে ফেসেবুকে কমেন্ট দেব উফ, এই পুজোর কদিন লোকের আদিখ্যেতা দেখলে বিরক্ত লাগে, ইত্যাদি। আমার মত নাস্তিক মানুষের দ্বিতীয়টাই হওয়া উচিত ছিল হয়ত, কিন্তু আমি যেকোনো উত্সব চেতে পুটে উপভোগ করি, বড়দিন হোক কি দুর্গাপূজো একটু তফাতে থেকে হই হুল্লোড় দেখা আমার বেশ লাগে। একদম ছোটবেলায় পূজো ছিল একরকম, রোজ একটু একটু করে চোখের সামনে ঠাকুর তৈরী হওয়া, সব ভাই বোন , ভাগ্নে ভাগ্নি আসবে তার অপেক্ষা , নতুন পূজোবার্ষিকী আর নতুন জামার গন্ধ , ঠাকুর কেমন হলো কাদের ঠাকুর বড় তাই নিয়ে চুলচেরা মতামত! হই হই করে ৪টে দিন কেটে যেত। আর একদশীর দিন যখন সবাই চলে যেত কি মন খারাপ !! ওই ফাঁকা  ঠাকুর দালানটা পান্ডেল খোলা ফাঁকা  সদর সব কিছু যেন কিরকম হাঁ  করে আসতো।  আরো একটু বড় হয়ে পূজোর  দিনগুলো ছিলো বড় হয়েছি তার প্রমান দেবার দিন, মানে গাছ বোম বেধে আসতে পারি, ঢাক বাজাতে পারি, ক্রিকেট থেকে গান সব বিষয়ে মতামত দিতে পারি। তারপর ১১-১২ নাগাদ ওটা হয়ে গেলো বোরিং পুজো, আত্মীয়ের কেউ আসেনা, সবার পড়ার চাপ, আমার বাদে ... 
সে যাই হোক তারপর কলেজে উঠে বড় হয়ে যাওয়া পূজো, হোলনাইট ঠাকুর দেখতে পারি বন্ধুদের সাথে,  ষষ্ঠীর বোধন বা সপ্তমীর সকালের কলাবৌ চানের সাথে ঢাকের আওয়াজ এর থেকেও বেশি বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারায় আনন্দ বেশি। 
আর এখন , এখন পূজো খালি ফেসবুকেই। মহালয়ার ভোর মানে আমার ঝকঝকে বিকেল।  তাই আধঘুমে এখন আর মহালয়া শোনা বা শুনতে শুনতে নতুন গান আবিষ্কার করা (ইয়ে মানে প্রতিবার আমি মহালয়া শুনি সত্যি বলছি , তবু প্রতিবার কি করে একটা নতুন গান বা একটা নতুন অংশ আবিস্কার করি কে জানে) কিছুই হবে না।  
তাই বলে হা হুতাশ করছিনা মোটেও, যা নেই খালি সেটাই ভালো বলার মতো বুড়ো আমি এখনো হয়ে যাইনি। এইত Aspen ঘুরে এলাম, সাথে hanging  লেক। হ্যাঙ্গিং লেক এর hike  টা কিন্তু বেশ পরিশ্রম সাধ্য। ১.২ মাইল ১০০০ এলিভেশন।  তো বেশ হাঁচোর  পাঁচর করে উঠতে হয়।  উঠতে উঠছে ভাগ্গিস জিরোনোর জন্যে থামতে হয়. তা না হলে এমন রংবেরঙেরগাছের নিচে , কুলকুল করে বয়ে যাওয়া জলের শব্দ শোনার অবকাশ ঘটত নাকি।  লক্ষ্যে পৌঁছোনোটা  জরুরি তো বটেই তবে আমার কাছে পথের আকর্ষণ ও কম না। এবং সারাক্ষণ ক্যামেরার নিচে চোখ দিয়েও না, অনেকে আছে আমার একবন্ধু আছে যে পারলে রাস্তার  প্রতিটা বাঁকের ছবি তোলে , এদিকে চোখের থেকে দামী লেন্স যে হয়না আর তাই সব ছবিই যে পরবর্তী কালে একই বাঁক বলে মনে হবে সে তার মাথায় ঢোকে কে!  ছোটবেলা থেকে যারা খুব খেটে ঘুড়ি না উড়িয়ে কিংবা, পড়ার বই এর ফাঁকে গল্পের বই না পরে বড় হয়েছে তাদের জন্যে আমার মায়া হয়, ওরা এই ছায়া ঢাকা পথের মজাটাই নিতে পারেনি কখনো।  আমি যদিও একটা গ্রুপ এ  গেছিলাম,কিন্তু একটু তফাতে আলাদা  হাটছিলাম, এইসব জায়গা যেখানে শোনার অনুভবের এত জিনিস আছে মাঝে মাঝে জনসমাজ থেকে বিছিন্ন হয়ে যেতে মন্দ লাগে না। 
hanging লেক এর উপরে 

Hanging lake 

Aspen নাকি একটা গাছের নাম।  আমি অবশ্য যাবার আগে জানতাম না। Aspen জায়গাটাও বেশ।  ওখানে Maroon Bells বলে একটা জায়গা আছে,  সেখানে তিনদিক পাহাড় ঘেরা একটা লেক আছে। একটা পাহাড় ন্যাড়া , মারুন রং এর একটা পাহাড় সবুজ ঢাকা,  আর একটা হলুদ গাছ এ ভরা। সামনে ছোট্ট  লেক , সূর্যের প্রথম এল এসে ওই মারুন রঙের চূড়ায়  পরে ,  আর তারপর একটু পরে রোদ উঠে আসে যখন পাহাড়ের মাথায় ওই হলুদ পাহাড়টায় সবুজ, লাল আর হলুদ এর এক অপূর্ব ক্যানভাস তৈরি হয়ে যায়।  
Maroon Bells 


পুজোর সময় এমনিতেও সবাই ক্যামেরায় ছবি তুলতে ব্যস্ত থাকবে, আমি fb  তেই দেখে নেব। আড্ডাটা  মিস করব, ঠিক আছে পরের বার হবে না হয়। পূজোর আগাম শুভেচ্ছা রইলো সবার জন্য ।