Monday, July 4, 2016

ঘোরাঘুরি ( নিউ মেক্সিকো এবং অন্যান্য )

মাঝে মাঝে যে প্রানটা কেন ছটপট করে ওঠে বোঝা যায় না।  ভুল বললাম, দিব্ব্যি বোঝা যায়। আমরা কারনটা এড়িয়ে যাই। নিজেকে ঠকানো এতই সোজা নাকি! ব্যাস তখন তামাম দুনিয়ার সব ভালো জিনিসেও সুখ আসে না। তা আমি নিজেকে ঠকাচ্ছিলামনা , আমি জানতাম আমার মন কেন উচাটন। আমার একটা ঘুরতে যাওয়ার প্রয়োজন। নিজের মত করে। কিন্তু আমার নিজের গাড়ি নেই এখানে, আমি যখন তখন হুটহাট বেরোতে পারিনা। আর রেন্ট নিয়ে বেরোনো যায় কিন্তু সবাই মিলে বড়ই  হাঁ হাঁ করলো। কারণ তারা সুহৃদ , আমার যেহেতু প্র্যাকটিস কম তাই এতো দূর যাওয়ার রিস্ক নেওয়াটা মূর্খের এডভেঞ্চার। অবশ্য এডভেঞ্চার তথাকথিত মূর্খেরাই করে। যাই হোক আমার তো সে ভয়ানক অবস্থা।  মানে ঠিক বোঝাতে পারবনা কেমন কিন্তু আমার খালি মনে হচ্ছিলো আমি আটকা পরেআছি । রোজ অফিসে কাজ করতে করতে , খেতে বসে , ঘুমতে যাবার আগে একলা হাঁটলে স্বপ্ন দেখছি আমি লং ড্রাইভ এ বেড়িয়েছি। সামনে লম্বা একটা রাস্তা , আমি চলেছি। তা অবশেষে আর এক মক্কেল জুটলো।  লং উইকেন্ড এ ঘুরতে যাব। এবং কথা হলো বেশিরভাগ সময় গাড়ি আমি চালাবো। যাব ডিউরাঙ্গো , মেসা ভার্ডে , সান্টা ফে আর নিউ মেক্সিকো।
শুক্রবার তায় লং উইকেন্ড। বিকেল বিকেল বেরোতে পারব আশা ছিল। তা না করেও বা উপায় কি , ডিউরাঙ্গো পৌঁছতে সাত ঘন্টা অন্তত লাগবে।  ১২টায় না পৌঁছলে পরের দিন সকালে বেরিয়ে ঘুরতে যাওয়া চাপ। তো গাড়ি তুলে , মালপত্তর চাপিয়ে সওয়া চারটে নাগাদ বেরোনো হলো।  শুরুটা বন্ধুটা করলো।  খানিক যেতে না যেতেই দেখি বৃষ্টি শুরু হয়েছে , কেস করেছে।  বৃষ্টি দেখতে ভালো , ভিজতে ভালো , চাষে ভালো কিন্তু বেড়ানোর সঙ্গী হলে মুশকিল। এখানে মেঘ গুলো ছোটবেলায় দেখা কার্টুন এর বা ছবির বই এর  মেঘ এর মতন। মানে এই  একটা মেঘ কালো করে বৃষ্টি ঢালছে ১০মাইল পরে সেই মেঘের দম ফুড়ুৎ , সে জায়গা হয়তো খটখটে। বেশ জিপসি জিপসি ভাব আছে , আমাদের মতন দলবল নিয়ে সংসার করা টাইপ না।  তাই কিঞ্চিৎ ভরসা ছিলই।  তাই হলো। ঘন্টা খানেক পর আমি যখন শুরু করলাম দেখি দিব্যি মেঘ গুলো নিজেদের মধ্যে খুচরা আড্ডা মারছে আর এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে।  একটু আগেকার মুখ গোমড়া করা কি ঝগড়াঝাটির লেশ নেই।  সোজা রাস্তা , দুপাশে খোলা মাঠ আর দূরে দেখি একটা চমৎকার রামধনু।  অরোরা বেরিয়ালিস টাইপ দেখতে রামধনুটা ( ইয়ে মানে অরোরা বেরিয়ালিস আমি দেখিনি , কিন্তু ঐ   রামধনুটার নাম অমনিই মনে এসেছিলো কেন কে জানে। )





এই রামধনুটা খানিকটা আমাদের সঙ্গ দিলো, তারপর তার চা খাওয়ার সময় হতেই ,সূর্য্য কে হোস্ট এর ভূমিকা দিয়ে ধাঁ। সূর্য্য এত চাপ নেয় না , ব্যস্ত মানুষ থুড়ি সূর্য্য স্র্রেফ বলে দিলো বাপু , আমার সাথে এলে অত রঙের খেলা দেখতে পারবনা এখন , স্রেফ আমার পেটেন্ট গোধূলি দেখাবো , কেমন করে টুপ করে সন্ধ্যে হবে তা দেখবে , and that's it .আমার তো তাতে আপত্তি নেই, কখনো মেঘেদের হুল্লোড় , কখনো ঝগড়া , কখনও রং বেরঙের নক্সা এই দেখবো বলেই তো বেরিয়ে পড়তে চেয়েছি।




এই খানে রাস্তাটা সিঙ্গল  লেন। তাই ওভারটেক করতে হলে নির্দিষ্ট জায়গায় , গাড়ি আর স্পিড বুঝে করাই দস্তুর।  তাই করছিলাম , খালি একটা গাড়ি খুব জ্বলছিলো , ঠিক জায়গা গুলো স্পিড বাড়াচ্ছিল শেষ মেস ওদিকে গাড়ি নেই দেখে ,যে জায়গায় ওভারটেক করা যায় না ( মানে সলিড লাইন রয়েছে)  তেমন জায়গায় স্পিড তুলে সামনেরটাকে কাটালাম।  পাশ থেকে সৌরভডা হাঁ হাঁ করছে , "কি করিস কি করিস, ভাই তুই আজ টিকিট খাবি" ইত্যাদি উপেক্ষা করেই।  তারপর তাকে পার করে হাসি এবং ঠিক একইরকম ভাবে তাকে জ্বালানো।



একটু পর গাড়ি পাহাড়ি রাস্তায় পরলো। এখানে বলা ভালো পাহাড়ি রাস্তা মানে দাজির্লিং এর ঐ ভয়ানক রাস্তার মতন মোটেও না , তাহলে আমি হয়ত পারতাম না।  কিন্তু এটাও বেশ সরু, বৃষ্টি শুরু হয়েছে আবার।  অন্ধকার নেমে আসছে দ্রুত । অসুবিধে হচ্ছিলো কিন্তু চালাতে পারছিলাম । স্পীড কমে গেছিলো , পিছনকার সব গাড়ি সুযোগ পেলেই পেরিয়ে যাচ্ছিল তবে তাতে কি , পাশের ঝুপ্সি গাছ , আবছা হয়ে আশা পাহাড় , অঝোর বৃষ্টি সঙ্গ দিচ্ছিলো , চ্যালেঞ্জ দিচ্ছিলো কিন্তু সে চ্যালেঞ্জ অনেকটা ছোটো বেয়ে প্রথম সাইকেল কিংবা সাঁতার শেখার সময় দাদারা যেরকম দেয় , শিখতে পারার জন্য চ্যালেঞ্জ। আমি এগিয়ে চলছিলাম।
মাঝে একবার তেল নিতে থামা হলো।  তারপর হোটেলে বলে দেওয়া হলো আমাদের দেরি হবে। সাড়ে ১২টার সময় পৌঁছলাম ডিউরাঙ্গো।  (ক্রমশঃ )