Monday, August 7, 2017

হিরোশিমা অথবা ফ্রেন্ডশিপ ডে

ঘুম থেকে উঠেই দেখি পিতাশ্রী ও মাতাশ্রী হিরোশিমা ডে পালন করছে। পার্ল হারবারে কে বোমা ফেলেছিলো জানিনা কিন্তু মাতারাণী আলমারি খুলে শাড়ি টাড়ি পরে তৈরী। পিতাশ্রী হতাশ ও ভীত গলায় আমায় অনুযোগ করলেন, দেখ না আমি কিচ্ছু বলিনি খালি বলেছি এ বর্ষায় কেউ দই খায় তাতেই কোথায় চলে যাবে বলছে। আমি কোনো রকমে চশমাটা হাতড়ে মশারি টশারি জড়িয়ে বেরিয়ে দেখি, সার সার লুচির লেচি নীরবে চোখের জল ফেলছে, গরম জিলিপি অবহেলায় শুয়ে আছে টেবিলে আর মা কোনো কথার জবাব না দিয়ে ভ্যানিটি ব্যাগেটাকা ঢোকাচ্ছে। অবস্থা কেরোসিন বল্লেও কম আর কি, তা ফাদারবাবু যে অমন এক কথাটা শান্ত গলায় বলেছেন এ আমি কেন ভদ্রলোক নিজেও বিশ্বাস করেন এমন না। আমি রাশিয়া হবো না চিন ভাবতে ভাবতে ভুটান এর মতো হওয়া স্থির করে ফের ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি, ভদ্রলোক নিরুপায় হয়ে দরজায় ভিতর থেকে তালা ঝুলিয়ে চাবিটি লুঙ্গির গেঁজে গুঁজে বসে আছেন আর ভদ্রমহিলা অধিক শোকে পাথর হয়ে শাড়ি টাড়ি না বদলেই বসে বসে সুদোকু করছেন।
হাসি টাসি সামলে খুব গম্ভীর মুখে চা বানাতে গেলাম। ভদ্রমহিলা আজ চা বানাবে না শিওর, আর ভদ্রলোকের থেকে হেল্প নিলে আবার রাজমাতার রোষানলে পড়ার চান্স আছে। থাক। চুক চুক করে চা খেতে খেতে ভাবলাম নিজের জন্য চারটে লুচি ভেজেই নিই নাকি? দুপক্ষই লুচি খাবেন না জানিয়েছেন।
মহা মুশকিল তেল কই? কুকারটা গ্যাসের ওপর মানে আলুর তরকারি করা আছে নির্ঘাত। যাক তাহলে বরং ঘি এই ভাজা যাক নাকি? এহেহে হড়াৎ করে আধ শিশির বেশী পড়ে গেলো যে, যাকগে আজ এসব নিয়ে কেউ কিছু বলবে না। কাজ শেষে করে শিশিতে তুলে রখবোখন। অনেকদিন অব্যেস নেই ত কিরকম ন্যাতপেতে টাইপ হলো ধুসস। যাকগে। তবে এই ঝর্না ঘি টা জালি শালা, একদম জালি।
আররে এ তো স্রেফ আলু টুকরো টুকরো করে কেটে জলে ফেলা, কিচ্ছুই হয়নি। ধ্যার। যাকগে জিলিপি আর নাড়ু দিয়েই মেরে দিই। নীচে গিয়ে মুন্নার দোকানের কচুরি খেয়ে আসলেই হতো। আমার যখন আশু গৃহত্যাগের সম্ভাবনা নেই, আশা করা যায় তাতে ভদ্রলোকের আপত্তি হত না।
দুপুরে চান করতে যা এর তাড়া নেই, রান্না টান্না কিচ্ছু হয়নি, অল কোয়ায়েট অন ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট। বেশ চমৎকার ভাবেই হিরোশিমা ডে পালন হচ্ছে। আমিও বেশ মনের সুখে ল্যাদ খেয়ে আড়াইটার সময় ম্যাগি বানিয়ে বসেছি, আহ একটা বোলতা বোঁ বোঁ করে ম্যাগি দে ম্যাগি দে করে জ্বালিয়ে খেলে তো! তা তাকে দেওয়া গেলো এক কুচো। কিরম বদ যেই দিলাম, এক চক্কর ঘুরে নাক টাক কুঁচকে এহ কেঁচো আমি খাইনা বলে চলে গেলো। আরে হতভাগা তোকে আমি সেধে দিতে চাইনি, এতোক্ষন কি চোখে চামচিকে পড়েছিলো তোর হ্যাঁ? চাইলি কেন তবে? বদ কাঁহিকা। ঢুকে দেখ ফের আমার ঘরে, কংকাল ছাপ আংটি নাই কিন্তু কংকাল ছাপ চপ্পল আছে এক জোড়া, তোকে কীচকবধ করব হতভাগা।
ফের মন দিয়ে খাচ্ছি, ফ্রেন্ডশিপ ডে মেসেজ ডিলিট করছি, প্লেটটা সিঙ্কে রাখতে গিয়ে দেখি, ভদ্রলোক দু কাপ চা বানাচ্ছেন! আমায় দেখে কিঞ্চিৎ নজ্জা টজ্জা পেয়ে, 'না মানে যদি খায় তাই... আমি বানাচ্ছিই যখন..'
ভাগ্যিস সকালে বার টার খেয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ থিমে নাম লেখাইনি, ভদ্রলোক ট্রাম্পকেও দশগোল দিতে পারে মশাই

Thursday, August 3, 2017

ভাইরাল


জ্বর বন্দী ঘর বন্দী....এমন দিনে লোকে কিই বা করতে পারে জানলা দিয়ে বৃষ্টি দেখা ছাড়া। তাও মা চান করতে গেছে বলেই, নইলে জোলো হাওয়া লাগাচ্ছি দেখলেই চেঁচিয়েমেচিয়ে এক করতো। সকালে উঠে ফের ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, ঘামে বালিশ চাদর তোশক সব নাকি ভিজে গেছে,  কি আশ্চর্য ব্যাপার আমি জানবো কি করে! আমি তো শূন্যে ভেসে বেড়াচ্ছিলাম। জ্বর হলে কষ্টের মাঝেও এই যে ঝিমঝিম ভাব এটাই ভাল্লাগে খালি, স্বপ্ন আর বাস্তব বড় গোলমাল হয়ে যায়। ছোটবেলায় একবার প্যারাটাইফয়েড হয়েছিলাম সেবার প্রথম এই শূন্যমার্গ ভ্রমন হয়েছিলো, সাঁইসাঁই করে কন্ট্রোল হীন হয়ে ওড়াউড়ি। শিব্রাম বলেছিলেন, ঈশ্বর পৃথিবী  ভালোবাসায়, অসুখ বিসুখ একাবোকাদের হয়না। মানে এরকমভাবে না ওনার ভঙ্গীতে, তা কথাটা ভুল না, বিদেশে আড়াই বছরে একবার জ্বর, দেশে ফিরে এক বছর না হতেই বারদুই। ওই মা এর কাছে গিয়ে ঘ্যানঘ্যান করা, থেকে থেকে এসে জ্বর দেখে যাওয়া, ওষুধ খাওয়ার তাড়া দেওয়া, মুখে লাগে এমন কিছু বানিয়ে দেওয়া, মধু তুলসীপাতার রস খাওয়ানো, এসব আহ্লাদ পাওয়া না থাকলে জ্বরেরই বা এসে আনন্দ হয় নাকি।
ওদিকে হুল্লাট বৃষ্টি নেমেছে, পানওয়ালা দোকানঘর প্লাস্টিক দিয়ে ঢাকছে, গামছা পরে বিপজ্জনকভাবে একজন বালতিতে জল নিয়ে যাচ্ছে, এই বৃষ্টিতে গামছা পরে জলের বালতি না বইলেই পারতো, যাকগে। ওদিকে ইস্কুল থেকে দুজন ছেলে বাড়ি ফিরছে একখানা ছাতা মাথায়, বেশীরভাগটাই ভিজতে ভিজতে। আমাদের পাড়াটা দুপুরবেলা বুঝি এরকম শান্ত হয়ে যায়? কাল বিকেলে শুয়ে শুয়ে ছটফট করছিলাম যখন কি খারাপটাই লাগছিলো, বিকেলবেলা বাড়িতে থাকা খুব খারাপ জিনিস। একটা রিক্সা প্যাঁকোরপ্যাঁক করতে করতে চলে গেলো। খামোখা হর্ন দিতে দিতে একটা অটো। আমাদের দেশে হবে সেই গাড়ি কবে, হর্নের তারখানি কাটা থাকিবে!
বৃষ্টি কমে এলোলো তারপর, আমার জানলাবিলাসও শেষ, জ্বোরোবাবু ফের ঘুমাতে গেলেন....
***********

ওদিকে হুল্লাট বৃষ্টি নেমেছে, পানওয়ালা দোকানঘর প্লাস্টিক দিয়ে ঢাকছে, গামছা পরে বিপজ্জনকভাবে একজন বালতিতে জল নিয়ে যাচ্ছে, এই বৃষ্টিতে গামছা পরে জলের বালতি না বইলেই পারতো, যাকগে। ওদিকে ইস্কুল থেকে দুজন ছেলে বাড়ি ফিরছে একখানা ছাতা মাথায়, বেশীরভাগটাই ভিজতে ভিজতে। আমাদের পাড়াটা দুপুরবেলা বুঝি এরকম শান্ত হয়ে যায়? কাল বিকেলে শুয়ে শুয়ে ছটফট করছিলাম যখন কি খারাপটাই লাগছিলো, বিকেলবেলা বাড়িতে থাকা খুব খারাপ জিনিস। একটা রিক্সা প্যাঁকোরপ্যাঁক করতে করতে চলে গেলো। খামোখা হর্ন দিতে দিতে একটা অটো। আমাদের দেশে হবে সেই গাড়ি কবে, হর্নের তারখানি কাটা থাকিবে!
বৃষ্টি কমে এলোলো তারপর, আমার জানলাবিলাসও শেষ, জ্বোরো ফের ঘুমাতে গেলেন....

জ্বর নেমে যাওয়ার পরেও জ্বর আচ্ছা হ্যায়। তখন বালিশে ঠেস দিয়ে কম্বল নিরুদ্দেশ থাকে, দিদির ফোন থাকে, বন্ধুদের জ্বালাতন করা যায় ইচ্ছে মতো। ওই এখন না আমার জ্বর এখন কিছু বলতে পারবি বলে সেন্টি দেওয়া আর কি। কতদিন পর মা এর হারমোনিয়াম এ গিয়ে হুজ্জুতি করলাম। ছোটবেলায় বেলোর ফুটোয় আঙুল দিয়ে দিয়ে জ্বালাতাম। মা গান করতে বসলে চেনা মা ছেড়ে অচেনা মা হয়ে যেত বলে আর কঠিন কঠিন কি সব গান গাইতো বলে, মা গান গাইতে বসলেই বিরক্ত করতাম, ও মা আর কটা গান গাইবে বলে বলে। কাল গুটিগুটি গিয়ে হাজির হয়েছি ফের, এলোমেলো রিড টিপছি। ছোটবেলায় মা কয়েকটা গান টান তুলিয়েছিলো, সব বেবাক ভুলে গেছি। মা আবার শেখাচ্ছে, যে পরিমান বিরক্ত নিয়ে মাকে হোয়াট্যাপ আর নেট শেখাই তার ডাবল ভালোবাসা নিয়ে একই জিনিস বারবার করে দেখাচ্ছে। আমি শেষমেশ রনে ভঙ্গ দিয়ে মায়ের কোলে ছেতরে পরে,  একটু মাথার চুল টেনে দাও।
আমি গানের কাজ ফাজ বুঝিনা, মান্নার থেকে হেমন্তের উদাস ভঙ্গী আমায় টানে বেশী। হঠাৎ হঠাৎ পুরোনো গান শুনতে ইচ্ছে করে মাঝে মাঝে। ল্যাপটপে হেমন্ত 'রাঙা যে গো দূর আকাশের ওই যে অস্তরাগ',  মা এর পুরোনো গল্প পায়, মামারা মা মাসিরা মিলে যখন বসত,  মেজোমামার এই গানটা ছিলো, বড়মামার অলিরও কথা শুনে।
তারপর সকালবেলা ঘুম ভাঙে,  জ্বরের শেষের সূর্য্য ধোয়া ঘর। লাফিয়ে লাফিয়ে ঘোষণা, মা আজ আর আমার জ্বর নেই দেখো আজ আপিস যাবো।
সব্বাই বারণ করবে, লাফিয়ে লাফিয়ে সিঁড়ি নামতেও পারা যাচ্ছে না তবু বেরিয়েই বড্ড ভাল্লাগে, দুদিনের ঘরবন্দীতেই পাগল পাগল অবস্থা হয়েছিল। কত কিছু চাই আমরা, কত না পাওয়া নিয়ে অস্থির হই, এই সব ছোটখাটো জ্বরজারি বুঝিয়ে দেয় ওই যে বারান্দায় আমার লাগানো গাছে চড়াই পাখির কিচমিচ,  কার্নিশে গর্বিত পায়রার চলন, আপিস যাওয়ার রাস্তাটা, ওই যে ধূ ধূ মাঠ, আড্ডা আদর আবদার এ বড় কম নয়....বেঁচে থাকা ইজ নট দ্যাট ব্যাড।