Saturday, July 28, 2018

বিরিয়ানির ডিম ও প্রেম

- ওটা কী এমন পাঠালি যে মেসেজ ডিলিট করতে হলো?
- আহা, ওটা ভুল করে ব্ল্যাংক রেকর্ড হয়ে গেছিলো তাই।
- বাজে কথা বোলিসনা। কিছুই না যদি ডিলিট করলি কেন?
- কি মুশকিল! খামোখা ফোনে জায়গা খাবে তাই।
- কত জায়গা খেত ব্ল্যাংক রেকর্ড হলে? 
- ধোর বাবা। কথা না বল্লেও সাইজ তো থাকে নাকি?
- তোর ফোনে এতো জায়গার অভাবই বা কেন? 
- পানু রাখি? খুশ?
- বিয়ে করে নে। রিসোর্স ইউটিলাইজেশন কর বরং।
- বেশ তো করা যাক। করবি নাকি বিয়ে?
- অ্যা!! এইটা তোর প্রপোজ ছিলো?
- ইয়ে হ্যাঁ মানে সেই কলেজে পড়ার সময় থেকেই তোকে পছন্দ আসলে বলতে পারছিলাম না। 
- মানেটা কি হ্যাঁ!! আমার জন্য ছেলে দেখা হচ্ছে, আমি তাদের, তারা আমায়, অপছন্দ করছে, এদ্দিন তো বিয়েও হয়ে যেতে পারতো নাকি?
- তা সারাক্ষন অমন ভয় দেখালে আর ভরসা পাই কি করে। তাছাড় তোর মাও বেশ ইয়ে যাকে বলে ওই আর কি, থাক হতে পারে শাশুড়ি কিনা কিছু বলছি না।
- জুতো খুলে পিটবো শালা। তা এখন হঠাৎ সাহস গজালো কি করে শুনি?
- লাস্ট বারের ছেলেটা তোকে বেশ মুগ্ধ নয়নে দেখছিলো, তোর ছড়া পাঠটা গান বলে ভুল করলো, তা রিস্ক নিয়ে নিলাম আর কি 
- ওরে অলম্বুষ এর পরেও আশা করছিস তোকে আমি হ্যাঁ বলব? আমার গানটা ছড়া পাঠ? 
- তা না করতে পারিস। তবে আমার লজ্জা ভয় দূর হয়ে গেছে কিনা, যে ছেলেই তোকে পছন্দ করবে তার কাছেই ভাঙচি মেসেজ যাবে, এই মেয়েটি খুবই ভালো, খালি আবেগঘন মুহূর্তে নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা।
- হতভাগা! মিথ্যে কথা বলে ভাঙচি দিবি? 
- ওরে মিথ্যে কেন হবে বল। তোর ওজন সত্তর, তাও বিরিয়ানি পেলে দেড় প্লেট মেরে দিস, সুগার আছে তাও সরভাজা, জিলিপি পেলে হিতাহিত ভুলে যাস। এগুলো নাকি তোর আবগে, তাহলে আমি ভুলটা কি বললাম?
- ওজন সত্তর না আশী বোঝাবো রে বিটলে, বিয়েটা হতে দে।
- ইয়ে এডাল্ট কথাটার মানে তো তুই হ্যাঁ বলছিস নাকি রে?
- হ্যাঁ রে কুট্টিমদারু এডাল্ট গল্প না হরর গল্প বোঝাবো, বিয়েটা করছি সে কারনেই।
- এ কারনেই করনা, করছিস তো ব্যাস। ইয়ে শোন তোর বাবাকে গিয়ে না হয় বলব আমি, কিন্তু ওই ভদ্রমহিলাকে তুইই বলিস। হয়তো গেলাম বলতে, বিয়ে নিয়ে তুলনামূলক প্রবন্ধ লিখতে বসিয়ে দিলেন। 
- শোন, আমার মা তোকে আট বছর ধরে দেখছে, তুই কি জিনিস জানে। প্রবন্ধ দিলে হয়তো দুপুরে বিরিয়ানি খেতে চাইবি পারিশ্রমিক হিসেবে। বাজে না বকে, নিজের বাড়িতে আজ বল আর কাল আমার বাড়িতে আয়।ঝামেলা মিটিয়ে নেওয়া যাক, তোর বদামি ঘোচাচ্ছি দাঁড়া না।
- ইয়ে কালকের মেনুটা কি? মানে সেই বুঝে যেতাম আর কি। আসলে কাল ওই সুরভীদের বাড়িতে ইলিশ বিরিয়ানি হচ্ছে শুনলাম কিনা...
- আবার!! আবার তুই খচরামো শুরু করেছিস? 
- আহা মানে জেনে নিলে ভালো না? বিদেশী দুর্গে হানা দেওয়ার আগে সব জেনেশুনে এগোনোই উচিত না কি?
- উফফ। কাল মাটন বিরিয়ানিই বানাবো, খুশ? এবার এসে বলে যা, আমারই সব জোটে!
- হ্যাঁ হ্যাঁ, আর শোন কালকের স্পেশাল ত্যাগ, তোকে আমার থেকে বিরিয়ানির ডিমটা দিয়ে দেবো।
- হুঁ এইবার একটা প্রপার কারন পাওয়া গেলো, বাবাকে বলার, তাহলে ওই কথাই রইলো হ্যাঁ, বিয়ের মন্ত্র এরকম হবে কেমিন, 
'যদিদং বিরিয়ানির ডিম মম....'

Sunday, July 22, 2018

ভুটে আর ছোটকা

চল ভুটে আজ তোকে ডুব সাঁতার শেখাবো।
- সত্যি বলছ ছোটকা? 
- হ্যাঁ রে। চল না। যা ছোটবৌদির থেকে গামছা চেয়ে নিয়ে আয়। 
- কিন্তু ছোটকা আমার যে দম থাকে না, সবাই যে বলে আমি নাকি ল্যালা। ফুটবলে, ক্রিকেটে কোথাও আমায় নেয়না।
- নেয়না তো নেয়না। সাঁতার কাটা শেখাবো তোকে আজ, তারপর নিয়ে যাবো আমতলা হয়ে দক্ষিনবাড়ির মাঠে। গাছ চেনাবো, গাছেদের সাথে কথা বলা শিখিয়ে দেবো। তখন কে পরোয়া করে কে দলে নিলো না নিলো। 
- আমার যে খেলতে ইচ্ছে করে ছোটকা। কাদা মেখে, বৃষ্টিতে ভিজে খেলে পুকুরে সবার সাথে ঝাঁপাতে ইচ্ছে করে যে। 
- জানিস ভুটে তোর বয়সে, আমি ভারী দুবলা ছিলাম, তোর মতোই বা তোর চেয়েও বেশী। আসলে দুর্বল শুধু শরীরে না মনেও ছিলাম। একদিন বসে আছি জানারডাঙা পুকুরের ঘাটে। শুনশান দুপুর, কেউ কোথাও নেই। আমি খুব মন খারাপ করে বসেছিলাম, আমার পরীক্ষার রেজাল্ট ভালো হয়না, খেলতে পারিনা, ভয় পাই, কুইজ এর উত্তর মুখস্থ থাকে না, কিছুই পারিনা তাই বাড়িতে বাইরে কেউ কোথাও আমায় পোঁছে না। 
একটা কাগজের নৌকা বানিয়ে আলতো করে জলে ছেড়েছি। কাগজ দিয়ে বাকিরা কত কি পারে, আমি খালি নৌকা আর এরোপ্লেন বানাতে পারি।নৌকাটা ছেড়ে ফিস্ফিস করে নিজের মনেই বলেছি, "এই আমার পাল তোলা জাহাজ, রাজকন্যা ঘুমিয়ে আছে অনেক অনেক নীচে, নৌকাটা গিয়ে ঘুম ভাঙিয়ে দেবে"।

একটা পেন্সিল আর একটা পেন রেখেছিলাম, আমার সোনার কাঠি আর রূপোর কাঠি। তারপর পুকুরপাড়ে বসেই জানিস পৌঁছে গেলাম সাত সমুদ্দুর পাড়,ডাইনী বুড়ির সাথে লড়াই হলো। যত যা রূপকথা পড়েছিলাম, সব কটা তো বীর রাজপুত্র, আমি তো বীর ছিলাম না তাও আমার রূপকথায় আমি আমাকে জিতিয়ে দিলাম, একটা ভীতু দুর্বল ছেলেই কেমন করে যেন সব বাধা কাটিয়ে জিতে গেলো। সেদিন বুঝলি ভুটে, সেদিনই আমি জেনে গেছিলাম, আমার জন্য অন্য পৃথিবী আছে, সেদিন থেকে দুপুরে চিলছাত, ভাঙা তোরঙ্গ, নির্জন পুকুরপাড়ে আমি নিজের সাথে দেখা করতাম।

আমাদের সবার আলাদা আলাদা গল্প আছে জায়গা আছে, এ বিরাট পৃথিবীটা এরকম ল্যালা ছেলেদেরও, খালি তোকে খুঁজে নিতে হবে। চল ওঠ। সাঁতার শেখাবো, আমি তো চলে গেলাম তাই দেখা হলো না, দেখিস তো পুকুরের নীচে কোনো জাদুকরী তারের বাজনা পাস কিনা, সেই বাজনাটা শুনলেই সবার ঘুম ভেঙে যাবে।

- অমন বাজনা আছে ছোটকা? পুকুরের নীচে?
- কোথায় আছে কে জানে! খুঁজতে খুঁজতে হয়তো হীরের পাহাড় পেয়ে গেলি! 
- আমি গামছাটা নিয়ে আসি হ্যাঁ? তোমায় একটা জিনিস দেখাবো, আমি গামছা দিয়ে ঘুষোমাছ ধরতে পারি।
- আরিব্বাস! তাহলে! আমি ওসব পারিনা আবার। খামোখা মন খারাপ করছিলি দেখ। চল আজ পুকুরে রোদ ধরে আসি। 
- সে আবার কি ছোটকা?
- দেখিসনি একেকদিন রামধনু কেমন পুকুরের মাথাতেই ওঠে? জানিস তো রামধনুতে চেপে মেঘে চড়া যায়? আমি বহুবার চেষ্টা করেছি ধরতে বুঝলি, খালি পিছলে পালায়৷ চল দেখি দুজন মিলে পারি কিনা। না পেলে ডুব সাঁতার প্র‍্যাক্টিস হবে আর পেলে রাজা হয়ে যাবো! 
- পেয়ে গেলে বাড়ি ফিরবো না ছোটকা? 
- আরে দূর পাগলা, বাড়ি তো ফিরতেই হবে রে, রামধনুটার সিঁড়ি বেয়ে উঠে গল্প কুড়িয়ে নেমে আসতে হয় তো। না হলেই চিত্তির। তাছাড়া দুপুরে কচি পাঁঠার ঝোল , তাকেও তো উপেক্ষা করা যায়না। চল চল, না গেলে তো আর ফেরা যাবেনা।

Wednesday, July 18, 2018

দিনের শেষে

ওইইই গুড্ডু, গুড্ডুউউউ জামাটা ভিতরে তুলে "রাখ, দক্ষিণ দিকে খুব মেঘ করেছে।"
মেঘ সত্যিই করেছে বটে, দুপুর বেলায় সন্ধ্যে বেলা নেমে এসেছে। বুড়ো কত্তা নরেন গোয়ালাকে দি গাই দোয়াচ্ছে। "তাড়াতাড়ি টান রে শালা, বিষ্টি এলো বলে"।

এবারে জৈষ্ঠ্য মাস মল মাস পড়েছিলো, কালীপুজো পিছিয়ে পিছিয়ে আষাঢ়ের রথে। গাছপালা ঘেরা ঝিমোনো ঘাট-ভাঙা পুকুর পেরিয়ে বুড়ো বাড়িটায় এক পশলা উৎসবের রঙ। উৎসব মানে ছড়িয়ে পড়া আনাচকানাচ থেকে ছেলেপুলের দলের বাড়ি আসা, কোন কালে বিয়ে হয়ে যাওয়া মেয়েগুলোর একে অপরের মুখ দেখা। অনেক আলোকবর্ষ পেরিয়ে খুড়তুতো ভাই বোন একসাথে ফের উপোস করা। ছোটকাকিমা চা করে কখনো উপোসী ছেলে মেয়েগুলোর জন্য সেজ জ্যেঠিমা হয়তো ডাব কেটে দেয় অসুস্থ শরীরে।

অচেনা তুতো ছেলে মেয়ে গুলো ঠাকুরতলায় ভীড় করে, কারিগর এক মনে তুলি বুলোয়, এক এক আঁচরে কেমন মাটির তাল থেকে প্রনম্য কেউ হয়ে যায়। 
- কোন ক্লাসে পড়িস তুই?
- ফাইভ। তুই?
- সিক্স।আমি তোর থেকে বড়।.....
আলাপ বাড়ে, খেলা বাড়ে। ওদিক মেঘ গুলো দিয়েও কোন কারিগর যেন মূর্তি গড়ে। ওই দেখ না দেখ মাথা চাড়া দেয় ড্রাগন, কারিগরের পছন্দ হয়না। এমন আদিগন্ত মাঠ, সবুজ সবুজ আবহ, ড্রাগন হয়ে যায় ক্ষুদে এক ছাগলছানা। তিড়িংবিড়িং করে লাফাতে লাফাতে যেতেই বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে। 
বর্ষায় পুকুরে মাছেদের ঘাই মারা ছাপিয়ে এক ঝাঁক কিশোরীর উচ্ছ্বাস, সাঁতার, চুলের পরিচর্চা অকারণ হাসি। 
" রিল্টু কবে এলি? একটা নারকেল নাড়ু খাবি? ওই তিস্তা তোর মামাকে একটা নাড়ু দে দেখি"।
"ও ছোট, মাছগুলো কোথায় রাখবো?"
"মৌ তোর বাবা কই রে?"
"ও সেজমা ছাদে যে জামাকাপড় মেলা আছে তোমাদের, বৃষ্টি আসছে।"
ছিটকে ছিটকে যায় হাঁকডাক, ভালোবাসা আর বুড়ো ঝিমিয়ে পড়া বাড়িটার আড়মোড়া ভাঙে একটু একটু করে। সেইইই কবেকার বর্ষাকাল মনে পড়ে তার, যখন গমগম করতো এ বাড়ি। নীচের কোনো ঘরে যখন বউদের ব্যস্ততা হতো, উপরের কোনো ঘরে ফুলদিদি, খুকুদিদি, মেজদাদা, ছোড়দাদা,বড়দাদা এসব ডাক শোনা যেত।

গাছ ভরা তাল ধুপ ধুপ করে পড়ে এ উৎসবে সামিল হতে যায় যেন, কিন্তু কেউ যায়না ছুটে তাল কুড়োবার জন্য। গাছটা ঘাবড়ে যায়, ইতিউতি চায়, তাল কুড়োতে লোক নেই কেন? তার কি তবে ভুল হচ্ছে? বাড়িটায় তো লোকের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। 
- ও বড়দা, ও বড়দা, তোমার তো খুব ব্যস্ততার দিন গো, কই এদিকে কেউ আসছে না কেন?
- আহা সব পুজোয় এসেছে রে। তুই কি ভাবলি ফের সব থাকতে এসেছে!
- আসেনি? ও।
চুপ করে যায় সে, হাওয়ায় হাওয়ায় শ্বাস বইয়ে দেয়, কেউ থাকবে না, ফল লাগবে না কারো....

তবুও সে তারমতো আরো সব গাছগুলো অপেক্ষায় থাকবে, ফল ফলিয়েই যাবে যদ্দিন না বুড়ো হয়....কেউ যদি আসে মন খারাপ করে, ফিরিয়ে দেবে নাকি! গাছেদের অমন স্বভাব-ধর্ম না। তাছাড়া ওরা জানে, ফিরতে একদিন হবেই....

Monday, July 9, 2018

বাগচি আর লুচি

বস পাশের টেবিলের মেয়েটাকে দেখলে? বাঁ হাত দিয়ে চুলটা মাঝে মাঝে সরিয়ে দিচ্ছে। ওহ আমাদের ক্যান্টিনে এতো ঝাল দেয়না ,বেচারী নাক মুছবে না খাবে বলোতো।

- নিজের রুটি আর ঢ্যাঁড়শের দিকে কন্সেন্ট্রেট কর বাগচি, ও মেয়ে তোর জন্যে না।

-মানে!!! গুরু এরকম করলে কিন্তু খেলবো না, আমি দেখালাম আর আমাকে ডজ করছো! তোমার বৌদি হয় কিন্তু।

- থার্ড ফ্লোর, ডান দিকের কোনের ওডিসি। ছোট টিম, বটসওয়ানা যাচ্ছে শিগিগিরি, পিএল এর বয়স পঞ্চান্ন হবে কিন্তু বলে পঁয়তাল্লিশ । থাকে যাদবপুরের মেসে, এন্ড স্টিল সিংগেল।

- আ্যঁ মানে তুমি আগেই দেখেছো! গুরু তোমার পছন্দ বলবে তো।

- পছন্দ হলে পাশের টেবিলে বসতাম?

- তাহলে ? ওহ অনসাইট যাবে বলে সাবধান করছ? আহা বেশীদিন না তো তাছাড়া বিরহ তো প্রেমের পার্ট.....আমি ভিডিও কল করতে করতে বলব, "আমি তোমারো বিরহে....

-চোপ। হেঁড়ে গলার গান অন্য কারোর জন্য গাস। জানিস কি এই মেয়ের বাড়িতে ব্রেকফাস্টে চারখানা লুচি অফার করে খালি,তাও আটার কি না হেলথ ইস্যু, তাও আবার লালচে!!! ইলিশ এক পিস খেয়ে হাত গুটিয়ে নেয়!!! একে তোর বাড়িতে এন্ট্রি দিবি!! ভেবে দেখ এখোনো।

-- গুরু বাঁচিয়ে দিলে দাদা তুমি। চারটে লুচি! আটার! লাল লুচি!!! সামনে রাখী আসছে দেখি একটা কিনে আনবোখন।

- ইম্পসিবল। ও বাড়িতে ভাইফোঁটার নিমন্ত্রন খেতে গেলেও লস। যা বরং চারটে বেকড রসগোল্লা নিয়ে আয়,মেজাজ ভালো হবে।

Sunday, July 8, 2018

ঠিকানাহীন বেনামী চিঠি

কেমন আছো? ভালো নেই মনে হয়, কেমন করে জানিনা আমি বুঝি।
একটু তফাৎ থেকে দেখলে সব কিছুরই রঙ রস বেশ ধরা পড়ে। এই যে বর্ষায় এমন ঘাস বনের আগাছা বেড়ে বেড়ে আধ হাঁটু সমান হয়েছে ,এলোমেলো গাছপালাদের চনমনে ভাব এসব এর মধ্যে দিয়ে হাঁটলে হয়তো চোখে পড়তো না, গাড়ি থেকেও পড়ে না, তখন খালি স্পীড, হাওয়া এসব ধরা পড়ে। অটোয় বসে দিব্যি দেখতে পাচ্ছি ঘাসফুল ফুটেছে কেমন। আগাছা গুলো জাপ্টে ধরেছে ফেলে দেওয়া মেট্রোর লোহার বিম। আশ্চর্যজনক ভাবে আমার এই দৃশ্যটা বড় ভালো লাগে, এই যে পুরোনো ঘর ,বাড়ি বা পরিত্যক্ত লোহার, সিমেন্টের বিম , থাম এসব গুলো ঘিরে যখন ফের গাছ , ঘাস জঙ্গুলে আবহাওয়া গড়ে ওঠে। মনে মনে হয়তো আমি এই সভ্যতা ধ্বংস হোক চাই.....কিই জানি!

আমার গাড়িটা সেদিন বাইরে পার্ক করেছিলাম, আর পাখিরা তাদের সুলভ শৌচাগার বানিয়েছিলো, খুব আমোদ পাইনি বলাই বাহুল্য তবে অবাক ব্যাপার এই যে আমি খুব রেগেও যাইনি পাখিদের উপর। সুযোগ পেয়েছে করেছে কিই বা বলার! অফিসে পা ঘষে ঘষে ঢোকার সময় আমি চারদিক যেন আরো বেশী করে দেখে নিই সব, বেঁটে গাছেদের নীচে কয়েকজন লোক বসে বিশ্রাম নেয়, আমি হ্যাংলা ছেলের মতো দেখি, বিকেলে চা খেতে যাবার সময় দেখি বাগানে খুরপি চালাচ্ছে এক মনে বুড়ো আমি ভাবি আমার কোনো বিকেল নেই, গাছ নেই।

অফিস বাসটা বেরোয় যে রাস্তা দিয়ে সেটা ভারী অন্ধকার একটা রাস্তা, দুটো চা দোকান আছে কেন কে জানে! অন্ধকার হলে চেনা রাস্তাও কেমন অচেনা হয়ে যায়, ডোবার জল চকচকে মনে হয়, গাছ গুলোকে মনে হয় রহস্যময় । আমার খালি মনে হয় রাত হলে এদের আড্ডা বসে সবাই মিলে। তখন ওরা আমাদের নিয়ে তামাশা করে, কেমন আমরা আসল জিনস ফেলে নকল দিয়ে শহর সাজাই....

শহরে ঢকার মুখে ঝাঁ চকচকে সাজানো গাড়ির শো রুমের পাশেই একটা মুদীর দোকান, খালি গায়ে লোকটা জিনিস মেপে মেপে দেয় আমি দেখতে পাই, ওর জানলায় কাপড় কেটে ঝোলানো পর্দা ওড়ে আমি দেখি একটা খোকা পড়তে বসেছে। গেরস্থালীও ভালো আবার ওই রহস্যময় গাছপালা দের আড্ডাও আবার এই ঠিক বাড়ির সামনেই একটা ভবঘুরে পাগলা এসে জুটেছে ফুটপাতে সেও ভালো।আমায় সবকিছুই সমান টানে...তবে একটু তফাতে থেকে, কাছে গেলে আমি জানি ওই ঘাসের ঝোপ থেকে পিঁপড়ের সার কিংবা গোবর আমায় বিরক্ত করবে। ওই এক চিলতে ঘরে হাজারটা অভাব আমায় বিব্রত করবে। ওই ফুটপাতে আনমনা হয়ে বসে থাকতে গেলে আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবো না।

আসলে একটু দূর সব কিছুতেই ভালো হয়ত। ভালো থেকো।

---

Saturday, July 7, 2018

ডিম্ভূত

সেইবার একটা ডিম ভূত হয়েছিলো। সব ডিম কিন্তু ভূত হয় না। যেমন যারা ফ্রিজে থেকেও পচে যায় তারা আবার এস্কিমো ডিম ভূত হয়। যারা সিদ্ধ হয়ে টিফিন বক্সে যায় কিন্তু শেষ অব্দি পেটে পৌঁছয়না তারা মরুড্ডিভূত হয়। এরকম নানান ব্যাপার আছে।মরে যাবার পর মুরগিদের সাথে আর কোনো ডিমের ভূত জগতে দেখা হয়না বলব না, হয়, তবে তারা ওখানে কেউ নিজেদের বংশ পরিচয় ইত্যাদি নিয়ে মাথা ঘামায়না। ওখানে সবাই আলাদা এন্টিটি, অর্থাৎ নিজের পরিচয়েই বাঁচে।

এবার মানুষ ভূতেদের যেমন আলাদা জায়গা আছে ডিম্ভূতেদেরও আলাদা জায়গা। এমন না চাইলেই একটা মানুষ ভূত গিয়ে একটা ডিম্ভূত তুলে এনে কপাৎ করে খেয়ে নিলো। এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে যেতে ট্রানজিট পাস লাগে। তবে খুব জটিল পদ্ধতি কিছু না। যে ভূতের ডিম খাবার বা চিকেন তন্দুরি খাবার ইচ্ছে হবে তারা একটা রিকোয়েস্ট পাঠাবে, এখন তো ক্লাউড এসে গেছে ভূতেরা তাইই ব্যাবহার করে, তার আগে অন প্রিমাইসেস হার্ডোয়ারের ব্যাপার ছিলো তারও আগে ভুতুরে কালি। যাই হোক একটা রিকোয়েস্ট পাঠাবে, ভৌতিক পদ্ধতিতে তা প্রায় সাথে সাথে অ্যাপ্রুভ হয়ে যাবে, যে ডিমের একটু চেঞ্জ এর ইচ্ছে ছিলো তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে পাঠানো হবে। ভূতের খাওয়া হলে ডিম স্বাধীন, চাইলে একটু অক্টোপাস হয়ে বাইরের দেশে ঘুরে এলো কিংবা ডিমই হলো ফের। যা ইচ্ছে। তবে ওই যার ডাক পড়বে তাকে আসতেই হবে। অনেক সময় কি হয় ঠোকাঠুকি খেলছে হয়ত চারটে ডিম, মানে কে কাকে ঠুকে ভাঙতে পারে চোখ বুজে, এবার খেলার মাঝেই ডাক এলো। এবার কোনো এক ডিম হয়ত তেড়েল মানুষ বাড়িতে অনেকদিন ছিলো তার স্বভাব পেয়েছে। বলল এখন যাবো না। ব্যাস। ওতেই ডিমের নরক প্রাপ্তি ঘটে। ভূতের কাছে যেতে তো হবেই সাথে তারপর সে আর ফিরতে পারবে না ডিম ভূত সমাজে সহসা। তাকে লাউ হয়ে যেতে হবে। সে বড় ভয়ানক শাস্তি। তাই পুরোনো কোনো ডিমই এরকম মানুষামো করে না।

তা যাই হোক আমি এসব যার মুখে শুনেছিলাম সে একজন জাতিস্মর ডিম। ডিম জন্ম লাভের আগের ডিম ভূত জন্ম ছিলো যখন তখনকার কথা কিছু কিছু মনে ছিলো তার। সেদিন ছিলো ভয়ানক গরম, ঠাকুর দেখে ফিরেছি, সারা গায়ে আইস্ক্রীমের ফুচকার ঘামের রসে গন্ধে ম ম করছে। চান টান করে একা একাই বেশ ক্যান্ডেল লাইট ডিনারে বসেছি এমন সময় কে বাংলায় কথা বলে উঠলো!! সত্যি বলতে কি ঘাবড়ে আমি গিয়েছিলাম, "একটা ডিম যদি বলে আরে কাকা খাবে দাঁড়াও একটু আড্ডা হোক এত তাড়া কিসের?" তাহলে চমকানোটা কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। তবে আজকাল এতো রকম চমকানোর ব্যাপার ঘটে আমার অভ্যেস হয়ে গেছে, আমি অজ্ঞান টজ্ঞান হইনি। এখানে একটা কথা বলার আমি গাঁজা মদ কিচ্ছু খাইনি, নেশায় কানে বেশী দেখেছি এমন না। ঘটনা হলো এটাই যে আমাদের আশে পাশে সবাইই কথা বলতে পারে, আমরা খালি শুনতে পাইনা এই যা। আসলে ওদের ওয়েভ লেনথ আলাদা আমাদের রাডার ধরতে পারেনা। সেদিন গরমে অ্যান্টেনা একটু বেঁকে অন্য ফ্রিকোয়েন্সি ধরতে পেরেছিলো বলেই শোনা গেছিলো।

সেই জাতিস্মর ডিমটা ছিলো, বিরিয়ানির এর ডিম। ভারী ভালোডিম, খুব আড্ডা জমেছিলো বটে সেবার। তখনই এই সব গোপন খবর পাই।

সেইই বলল ওহে, এখন যা যা খাচ্ছো তার একটা ছাপ কিন্তু পড়ছে ভূত জন্মে। তা জানো কি? উল্টোপাল্টা মানে ঢ্যাঁড়শ , থোড় পনীর খেলে কিন্তু প্রপার ভূত হতে পারবে না তাহলে সমুদ্রের সাত তলায় ডুবে নীল মাছের শুড়ে বসে পা দোলাতেও পারবেনা।
নীল মাছ তার শুঁড়!! ভূত হয়ে গাঁজা খাও? খুবই খারাপ ব্যাপার মশাই। 
আরে আছে রে বাবা এসব। ডিম্ভূত হওয়া কি মুখের কথা। মাছের ডিমের ভূত হলেই ওখানে এক্সেস পায়, কিন্তু আমার একটা ভালো বন্ধু ছিলো তাছাড়া এমনিতে আমার গায়ে একটু কালচে দাগ ছিলো বলে আমি একটু ভালো ভূত হিসেবে গন্য হই। ফলে টুক করে ডুব দেওয়া গেছিলো। সে এক অদ্ভুত দেশ বুঝলে ভায়া, ভাসছি না ডুবছি তুমি তফাৎ করতে পারবে না। আর ওই শুঁড়ওলা মাছ শুনে তুমি গাঁজার কথা বলছিলে তো? তবে শোনো ওখানে শিংওলা অক্টোপাস আছে, ডানাওলা তিমি আছে। আরে তুমি সেদিনের ছোকরা , এসব জানবে কি করে হে।

এদিকে আমার বিরিয়ানি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, বিরিয়ানির ডিম বকেই চলেছে। মহা যন্ত্রনা হলো দেখি। গল্পের লোভে না থামালে মুশকিল, এদিকে থামালেও মুশকিল। সমস্যাটা বললাম ব্যাটাকে। খ্যাক খ্যাক করে হেসে ব্যাটা ডিম বলে, "পেটুক মানুষ তুমি , গল্প শুনবে ধৈর্য্য নাই তাই তো?" 
আমি আর কী করি, বললাম, হেঁ হেঁ মানে বিরিয়ানির সামনে বুঝতেই পারছো....

বেশ তুমি এক কাজ করো , তুমি আমায় লাস্টে খেও, তাহলে আমিও মুক্তি পেয়ে যাবো ,তোমড় গল্পও শোন হবে আবার বিরিয়ানিও ঠান্ড হবে না। কী বলো? 
আরিব্বাস বলে কি !! এতো বুদ্ধি যার তাকে সহজে ছাড়ি কি করে! বললাম , সে আমি লাস্টে খেয়ে মুক্তি দিতেই পারি, কিন্তু ইয়ে তোমার মতো সেক্রেটারি আমার ভারী দরকার, মুক্তি পেলে কি লাভ হবে বলো, সেই তো ক্লাউড হয়ে রাত দুটোয় ডেটা প্রসেস করবে, তার চেয়ে ফের ভূত হয়ে যাও না কেন? তোমার বন্ধু দের সাথে মোলাকাত হবে ফের, আমার একবার জন্মাতেও পারবে ডিম হয়ে, আমায় মাঝে মাঝে শলা পরামর্শ দিতেও পারবে, কী বলো?

কুসুমটা একটু ঘুরপাক খাইয়ে ব্যাট বলল , "মন্দ বলোনি, ইনফ্যাক্ট ভূত অবস্থায় একটা ডিমনি ভূতের সাথে আমার বেশ ইয়েও হয়েছিলো । তাহলে এক কাজ করো তুমি, আর্ধেকটা ডিম ভালোবেসে কাউকে দাও, আহা আজ রাত হয়ে গেছে কালই দিও, তাহলে আমি বেশ পূন্যাত্মা ডিম্ভূত হবো ! "

ভূতেদের কথা অমান্য করা ভালো না, ডিম্ভূতদের কথা তো আরোই না, তাতে পেটে বায়ু হয়। সুতরাং পরদিন , আমি খোঁজ লাগালাম, ভালোবেসে ডিমের আর্ধেক কাকে দেওয়া যায়, তারপর.....তারপর তো অন্য গল্প বড়দের গল্প।

ডিম্ভূত আসে মাঝে মাঝে, ভালো পরামর্শ দেয়, গল্প টল্প করে, তোমাদের কারো কিছু জানার থাকলে বোলো খন, জানাবো তাকে।