Saturday, July 7, 2018

ডিম্ভূত

সেইবার একটা ডিম ভূত হয়েছিলো। সব ডিম কিন্তু ভূত হয় না। যেমন যারা ফ্রিজে থেকেও পচে যায় তারা আবার এস্কিমো ডিম ভূত হয়। যারা সিদ্ধ হয়ে টিফিন বক্সে যায় কিন্তু শেষ অব্দি পেটে পৌঁছয়না তারা মরুড্ডিভূত হয়। এরকম নানান ব্যাপার আছে।মরে যাবার পর মুরগিদের সাথে আর কোনো ডিমের ভূত জগতে দেখা হয়না বলব না, হয়, তবে তারা ওখানে কেউ নিজেদের বংশ পরিচয় ইত্যাদি নিয়ে মাথা ঘামায়না। ওখানে সবাই আলাদা এন্টিটি, অর্থাৎ নিজের পরিচয়েই বাঁচে।

এবার মানুষ ভূতেদের যেমন আলাদা জায়গা আছে ডিম্ভূতেদেরও আলাদা জায়গা। এমন না চাইলেই একটা মানুষ ভূত গিয়ে একটা ডিম্ভূত তুলে এনে কপাৎ করে খেয়ে নিলো। এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে যেতে ট্রানজিট পাস লাগে। তবে খুব জটিল পদ্ধতি কিছু না। যে ভূতের ডিম খাবার বা চিকেন তন্দুরি খাবার ইচ্ছে হবে তারা একটা রিকোয়েস্ট পাঠাবে, এখন তো ক্লাউড এসে গেছে ভূতেরা তাইই ব্যাবহার করে, তার আগে অন প্রিমাইসেস হার্ডোয়ারের ব্যাপার ছিলো তারও আগে ভুতুরে কালি। যাই হোক একটা রিকোয়েস্ট পাঠাবে, ভৌতিক পদ্ধতিতে তা প্রায় সাথে সাথে অ্যাপ্রুভ হয়ে যাবে, যে ডিমের একটু চেঞ্জ এর ইচ্ছে ছিলো তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে পাঠানো হবে। ভূতের খাওয়া হলে ডিম স্বাধীন, চাইলে একটু অক্টোপাস হয়ে বাইরের দেশে ঘুরে এলো কিংবা ডিমই হলো ফের। যা ইচ্ছে। তবে ওই যার ডাক পড়বে তাকে আসতেই হবে। অনেক সময় কি হয় ঠোকাঠুকি খেলছে হয়ত চারটে ডিম, মানে কে কাকে ঠুকে ভাঙতে পারে চোখ বুজে, এবার খেলার মাঝেই ডাক এলো। এবার কোনো এক ডিম হয়ত তেড়েল মানুষ বাড়িতে অনেকদিন ছিলো তার স্বভাব পেয়েছে। বলল এখন যাবো না। ব্যাস। ওতেই ডিমের নরক প্রাপ্তি ঘটে। ভূতের কাছে যেতে তো হবেই সাথে তারপর সে আর ফিরতে পারবে না ডিম ভূত সমাজে সহসা। তাকে লাউ হয়ে যেতে হবে। সে বড় ভয়ানক শাস্তি। তাই পুরোনো কোনো ডিমই এরকম মানুষামো করে না।

তা যাই হোক আমি এসব যার মুখে শুনেছিলাম সে একজন জাতিস্মর ডিম। ডিম জন্ম লাভের আগের ডিম ভূত জন্ম ছিলো যখন তখনকার কথা কিছু কিছু মনে ছিলো তার। সেদিন ছিলো ভয়ানক গরম, ঠাকুর দেখে ফিরেছি, সারা গায়ে আইস্ক্রীমের ফুচকার ঘামের রসে গন্ধে ম ম করছে। চান টান করে একা একাই বেশ ক্যান্ডেল লাইট ডিনারে বসেছি এমন সময় কে বাংলায় কথা বলে উঠলো!! সত্যি বলতে কি ঘাবড়ে আমি গিয়েছিলাম, "একটা ডিম যদি বলে আরে কাকা খাবে দাঁড়াও একটু আড্ডা হোক এত তাড়া কিসের?" তাহলে চমকানোটা কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। তবে আজকাল এতো রকম চমকানোর ব্যাপার ঘটে আমার অভ্যেস হয়ে গেছে, আমি অজ্ঞান টজ্ঞান হইনি। এখানে একটা কথা বলার আমি গাঁজা মদ কিচ্ছু খাইনি, নেশায় কানে বেশী দেখেছি এমন না। ঘটনা হলো এটাই যে আমাদের আশে পাশে সবাইই কথা বলতে পারে, আমরা খালি শুনতে পাইনা এই যা। আসলে ওদের ওয়েভ লেনথ আলাদা আমাদের রাডার ধরতে পারেনা। সেদিন গরমে অ্যান্টেনা একটু বেঁকে অন্য ফ্রিকোয়েন্সি ধরতে পেরেছিলো বলেই শোনা গেছিলো।

সেই জাতিস্মর ডিমটা ছিলো, বিরিয়ানির এর ডিম। ভারী ভালোডিম, খুব আড্ডা জমেছিলো বটে সেবার। তখনই এই সব গোপন খবর পাই।

সেইই বলল ওহে, এখন যা যা খাচ্ছো তার একটা ছাপ কিন্তু পড়ছে ভূত জন্মে। তা জানো কি? উল্টোপাল্টা মানে ঢ্যাঁড়শ , থোড় পনীর খেলে কিন্তু প্রপার ভূত হতে পারবে না তাহলে সমুদ্রের সাত তলায় ডুবে নীল মাছের শুড়ে বসে পা দোলাতেও পারবেনা।
নীল মাছ তার শুঁড়!! ভূত হয়ে গাঁজা খাও? খুবই খারাপ ব্যাপার মশাই। 
আরে আছে রে বাবা এসব। ডিম্ভূত হওয়া কি মুখের কথা। মাছের ডিমের ভূত হলেই ওখানে এক্সেস পায়, কিন্তু আমার একটা ভালো বন্ধু ছিলো তাছাড়া এমনিতে আমার গায়ে একটু কালচে দাগ ছিলো বলে আমি একটু ভালো ভূত হিসেবে গন্য হই। ফলে টুক করে ডুব দেওয়া গেছিলো। সে এক অদ্ভুত দেশ বুঝলে ভায়া, ভাসছি না ডুবছি তুমি তফাৎ করতে পারবে না। আর ওই শুঁড়ওলা মাছ শুনে তুমি গাঁজার কথা বলছিলে তো? তবে শোনো ওখানে শিংওলা অক্টোপাস আছে, ডানাওলা তিমি আছে। আরে তুমি সেদিনের ছোকরা , এসব জানবে কি করে হে।

এদিকে আমার বিরিয়ানি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, বিরিয়ানির ডিম বকেই চলেছে। মহা যন্ত্রনা হলো দেখি। গল্পের লোভে না থামালে মুশকিল, এদিকে থামালেও মুশকিল। সমস্যাটা বললাম ব্যাটাকে। খ্যাক খ্যাক করে হেসে ব্যাটা ডিম বলে, "পেটুক মানুষ তুমি , গল্প শুনবে ধৈর্য্য নাই তাই তো?" 
আমি আর কী করি, বললাম, হেঁ হেঁ মানে বিরিয়ানির সামনে বুঝতেই পারছো....

বেশ তুমি এক কাজ করো , তুমি আমায় লাস্টে খেও, তাহলে আমিও মুক্তি পেয়ে যাবো ,তোমড় গল্পও শোন হবে আবার বিরিয়ানিও ঠান্ড হবে না। কী বলো? 
আরিব্বাস বলে কি !! এতো বুদ্ধি যার তাকে সহজে ছাড়ি কি করে! বললাম , সে আমি লাস্টে খেয়ে মুক্তি দিতেই পারি, কিন্তু ইয়ে তোমার মতো সেক্রেটারি আমার ভারী দরকার, মুক্তি পেলে কি লাভ হবে বলো, সেই তো ক্লাউড হয়ে রাত দুটোয় ডেটা প্রসেস করবে, তার চেয়ে ফের ভূত হয়ে যাও না কেন? তোমার বন্ধু দের সাথে মোলাকাত হবে ফের, আমার একবার জন্মাতেও পারবে ডিম হয়ে, আমায় মাঝে মাঝে শলা পরামর্শ দিতেও পারবে, কী বলো?

কুসুমটা একটু ঘুরপাক খাইয়ে ব্যাট বলল , "মন্দ বলোনি, ইনফ্যাক্ট ভূত অবস্থায় একটা ডিমনি ভূতের সাথে আমার বেশ ইয়েও হয়েছিলো । তাহলে এক কাজ করো তুমি, আর্ধেকটা ডিম ভালোবেসে কাউকে দাও, আহা আজ রাত হয়ে গেছে কালই দিও, তাহলে আমি বেশ পূন্যাত্মা ডিম্ভূত হবো ! "

ভূতেদের কথা অমান্য করা ভালো না, ডিম্ভূতদের কথা তো আরোই না, তাতে পেটে বায়ু হয়। সুতরাং পরদিন , আমি খোঁজ লাগালাম, ভালোবেসে ডিমের আর্ধেক কাকে দেওয়া যায়, তারপর.....তারপর তো অন্য গল্প বড়দের গল্প।

ডিম্ভূত আসে মাঝে মাঝে, ভালো পরামর্শ দেয়, গল্প টল্প করে, তোমাদের কারো কিছু জানার থাকলে বোলো খন, জানাবো তাকে।

2 comments:

  1. Good one, why are you not trying to give this in any children's magazine?

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ অর্ণবদা। তাদের কি আর পছন্দ হবে!

      Delete