Wednesday, July 18, 2018

দিনের শেষে

ওইইই গুড্ডু, গুড্ডুউউউ জামাটা ভিতরে তুলে "রাখ, দক্ষিণ দিকে খুব মেঘ করেছে।"
মেঘ সত্যিই করেছে বটে, দুপুর বেলায় সন্ধ্যে বেলা নেমে এসেছে। বুড়ো কত্তা নরেন গোয়ালাকে দি গাই দোয়াচ্ছে। "তাড়াতাড়ি টান রে শালা, বিষ্টি এলো বলে"।

এবারে জৈষ্ঠ্য মাস মল মাস পড়েছিলো, কালীপুজো পিছিয়ে পিছিয়ে আষাঢ়ের রথে। গাছপালা ঘেরা ঝিমোনো ঘাট-ভাঙা পুকুর পেরিয়ে বুড়ো বাড়িটায় এক পশলা উৎসবের রঙ। উৎসব মানে ছড়িয়ে পড়া আনাচকানাচ থেকে ছেলেপুলের দলের বাড়ি আসা, কোন কালে বিয়ে হয়ে যাওয়া মেয়েগুলোর একে অপরের মুখ দেখা। অনেক আলোকবর্ষ পেরিয়ে খুড়তুতো ভাই বোন একসাথে ফের উপোস করা। ছোটকাকিমা চা করে কখনো উপোসী ছেলে মেয়েগুলোর জন্য সেজ জ্যেঠিমা হয়তো ডাব কেটে দেয় অসুস্থ শরীরে।

অচেনা তুতো ছেলে মেয়ে গুলো ঠাকুরতলায় ভীড় করে, কারিগর এক মনে তুলি বুলোয়, এক এক আঁচরে কেমন মাটির তাল থেকে প্রনম্য কেউ হয়ে যায়। 
- কোন ক্লাসে পড়িস তুই?
- ফাইভ। তুই?
- সিক্স।আমি তোর থেকে বড়।.....
আলাপ বাড়ে, খেলা বাড়ে। ওদিক মেঘ গুলো দিয়েও কোন কারিগর যেন মূর্তি গড়ে। ওই দেখ না দেখ মাথা চাড়া দেয় ড্রাগন, কারিগরের পছন্দ হয়না। এমন আদিগন্ত মাঠ, সবুজ সবুজ আবহ, ড্রাগন হয়ে যায় ক্ষুদে এক ছাগলছানা। তিড়িংবিড়িং করে লাফাতে লাফাতে যেতেই বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে। 
বর্ষায় পুকুরে মাছেদের ঘাই মারা ছাপিয়ে এক ঝাঁক কিশোরীর উচ্ছ্বাস, সাঁতার, চুলের পরিচর্চা অকারণ হাসি। 
" রিল্টু কবে এলি? একটা নারকেল নাড়ু খাবি? ওই তিস্তা তোর মামাকে একটা নাড়ু দে দেখি"।
"ও ছোট, মাছগুলো কোথায় রাখবো?"
"মৌ তোর বাবা কই রে?"
"ও সেজমা ছাদে যে জামাকাপড় মেলা আছে তোমাদের, বৃষ্টি আসছে।"
ছিটকে ছিটকে যায় হাঁকডাক, ভালোবাসা আর বুড়ো ঝিমিয়ে পড়া বাড়িটার আড়মোড়া ভাঙে একটু একটু করে। সেইইই কবেকার বর্ষাকাল মনে পড়ে তার, যখন গমগম করতো এ বাড়ি। নীচের কোনো ঘরে যখন বউদের ব্যস্ততা হতো, উপরের কোনো ঘরে ফুলদিদি, খুকুদিদি, মেজদাদা, ছোড়দাদা,বড়দাদা এসব ডাক শোনা যেত।

গাছ ভরা তাল ধুপ ধুপ করে পড়ে এ উৎসবে সামিল হতে যায় যেন, কিন্তু কেউ যায়না ছুটে তাল কুড়োবার জন্য। গাছটা ঘাবড়ে যায়, ইতিউতি চায়, তাল কুড়োতে লোক নেই কেন? তার কি তবে ভুল হচ্ছে? বাড়িটায় তো লোকের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। 
- ও বড়দা, ও বড়দা, তোমার তো খুব ব্যস্ততার দিন গো, কই এদিকে কেউ আসছে না কেন?
- আহা সব পুজোয় এসেছে রে। তুই কি ভাবলি ফের সব থাকতে এসেছে!
- আসেনি? ও।
চুপ করে যায় সে, হাওয়ায় হাওয়ায় শ্বাস বইয়ে দেয়, কেউ থাকবে না, ফল লাগবে না কারো....

তবুও সে তারমতো আরো সব গাছগুলো অপেক্ষায় থাকবে, ফল ফলিয়েই যাবে যদ্দিন না বুড়ো হয়....কেউ যদি আসে মন খারাপ করে, ফিরিয়ে দেবে নাকি! গাছেদের অমন স্বভাব-ধর্ম না। তাছাড়া ওরা জানে, ফিরতে একদিন হবেই....

No comments:

Post a Comment