আমি বুড়ো কক্ষনো হবনা এমন কথা হামেশাই বলি আমরা। কিন্তু খেয়াল রাখিনা অজান্তেই আমাদের হাঁটুর জোর কেমন কমে যায়, কিংবা সেই ছোটবেলা থেকেই তো।সাবধানী , ভিতু ভিতু।সে যাই হোক বুড়ো হতে হলে এরকম ভাবেই হওয়া উচিত মানে আমার মতে। কোলোরাডো ন্যাশনাল মনুমেন্টে দেখেছিলাম দুই বুড়ো বুড়ি চেয়ার পেতে বসেছেন। সামনে নীল আকাশ ঝকঝক করছে। খানিকটা এগুলোতেই গিরিখাতটা শেষ হয়ে নেমে গেছে।ভদ্রমহিলাটি ছবি আঁকছেন আনমনে। আঁকার পর ভদ্রলোককে দেখালেন , তিনি কিছু বললেন আর তারপর দুজনেই হেসে উঠলেন। সেই ম্যাজিক দিন গুলোর কথা দুজনে কেউ ভোলেননি একটুও।
ওখানেই অন্য একটা পয়েন্ট এ দেখেছিলাম আর এক আঁকিয়েকে। এক মনে তুলিতে ফুটিয়ে তুলেছে সামনের আকাশ।
এরা ঘুরতে আসে অনেকটা রিলাক্স করে। আমাদের মত আজ রাতে পাহাড়ে উঠলাম ,ভোরে নেমে মন্দির এর আর্কিটেকচার একবার চোখ বুলিয়ে মূল্যবান মতামত দিয়ে দুপুরে সমুদ্রে ডাইভ দিয়ে বিকেলে অমুকের বিখ্যাত খাবার খেয়ে এবং বেঁধে, সন্ধ্যেবেলা পিসেমশাইয়ের জেঠতুতো বোনের ননদের জন্য উপহার কিনে তবে রাতের ট্রেন ধরবো এরকম না।
মনুমেন্ট এর কোনো একটা রিম এর উপর শুয়ে সারা সকাল দুপুর কাটিয়ে দেবে।
আমি ক্যালিফর্নিয়াতে একটা লোককে দেখেছিলাম যে রোজ সে একটি বিশেষ জায়গা থেকে পাহাড় সমুদ্রের ওই ছবিটা আঁকতে আসত, একই ছবি খাতায় আঁকত আর ছিড়ত , সে অবশ্য খেয়ালী শিল্পী। নিচের ভদ্রলোক তা না অবশ্যই
এই সব জায়গা গুলো যখন ঘুরতে যাই দেখেছি একদল বাইসাইক্লিস্ট ওই চড়াই উতরাই ভেঙ্গে চলেছে। বাপস কি খায় এরা কে জানে। হেঁটে উঠতেই যাকে বলে জিভ বেরিয়ে যাবার হাল। আর এরা দিব্বি ওই খাড়া পাহাড় সাইকেলে করে ঘুরছে। আমরা যেদিন মনুমেন্ট গেছিলাম ঐদিন ছিল মেমোরিয়াল ডে , একদল চির যুবক, বয়েসে হয়ত বুড়ো, বেরিয়েছিল একই ধরনের গাড়ি নিয়ে। দিব্বি লাগছিল দেখতে, একইরকম গাড়ি নিয়ে একসাথে এতজন প্রানবন্ত মানুষ দেখতে
এদেশের কুকুরদের রাজার জীবন , সত্যি! তুষারপাতের সময়েও তাদের নিয়ে বেড়াতে যেতে হয়। দেখি দুজন বয়স্ক-বয়স্কা হার্লে নিয়ে বেড়িয়েছে , একজনের কুকুর তার গলার ঝোলার মধ্যে, কুকুরের চোখে সানগ্লাস, আর তার সঙ্গিনীর পিছনের সিটে কুকুরের বসার জন্য আলাদা ব্যবস্থা, যাতে করে কুকুরের মুখ আর হাত মানে সামনের দুখানা দেখা যাচ্ছে।
বাঙালি আর মধ্যপ্রদেশে কিঞ্চিত জমি জায়গা থাকবে না তা কি হয়। আমার নিজের হাতের রান্না খেয়েও যখন সেই জমির মালিক হতে পেরেছি তখন বলাই যায় ভুঁড়ির আমি ভুঁড়ির তুমি ভুঁড়ি দিয়ে যায় চেনা। একটা মজার খেলা হয়ে গেছে, ভারতীয় দেখলেই আন্দাজ করা কোন প্রদেশ এর লোক(অন্য কোনো দেশের লোককে দেখে আন্দাজ করার বিদ্যে এখনো হয়নি কিনা)। মিলে গেলে "কি বলেছিলাম না" গোছের ভাব। মনুমেন্টে যাদের হাইকিং করতে দেখছিলাম বেশিরভাগই এদেশীয়। ভারতীয়রা এত কষ্ট করে হাটাহাটি করে ঘুরতে বোধহয় কম ভালবাসে। তা এরকম একজনকে বাঙালি অনুমান করেছি আর মিলেও গেছে তার পরের বাক্যে "বাবু আর দূরে যাবেনা "। ১০ বছরের খোকাটির থেকেও ঢের দূরে বেশ কিছু কচিকাঁচা মনের আনন্দে মাটিতে বসে ধূলো মাখছে, তাদের বাবা মা দাঁড়িয়ে মজা নিছিল বেমালুম তোয়াক্কা না করে, কারোর কারোর তো পাত্তাও দিচ্ছেনা। একটা বাচ্ছা দেখি একা, বসে বসে মাটি মাখছে, আসে পাশে বড় কেউ নেই তারপর দেখি দূরে তার বাবা হাসছে, কাছে এসে বলল কি আবিষ্কার করলে ডিয়ার আমাকেও দেখাও। প্রত্যেক বাবা মার স্বাধীনতা থাকবেই তারা কেমন তাদের বাচ্ছাকে বড় করবে, তবে সাবধানী আর ভিতু না শেখালেও ক্ষতি হয়না বোধহয়।
রান্নার কথা বলতে গিয়ে মনে পড়ল, আগেই আমি পেটুক মানুষ। পেটুক এর মধ্যে যদি গোত্র থাকে আমি তবে মিষ্টি ভুখ এবং আমিষাশী পেটুক। তা সেদিন সপ্তাহান্তে কথাও যাওয়া হয়নি।বাড়িতে বসে বসে ল্যাদ খেতে খেতে হটাত মিষ্টি খেতে ইচ্ছে হল। এখন মিষ্টি পাব কোথায় , এত আমাদের দক্খিন্পারার মোড় না যে গেলাম আর কিনে আনলাম। তাইঅগত্যা বানাতে গেছিলাম।নিজের বিবেচনা মতকরছিলাম। দুধটা খির বানিয়ে, আটা তা গিয়ে ভেজে তাতে দিয়ে লাড্ডু বানানোর চেষ্টায় ছিলাম। তা আটার লাড্ডু বাপারটা খুব একটা সুস্বাদু লাগছেনা, এটাকে বিসকুট এ পরিনত করি। যা ভাবা তাই কাজ,মাইক্রো ওভেন এ ওই বস্তুত যেটা কিনাআটার নাড়ু বলা চলে, সেটাচ্যাপ্টা করেঢুকিয়েছি, এবং আমি কি একখানা কাজ করতে লেগেছি, হটাথ কি মনে হলো সেই টিভিতে স্বর্গরাজ্যে যেরকম ধোঁয়ার মধ্যে দেবতারা দাড়িয়ে থাকে নিজেকে তেমন লাগছে। আমি এখনো জলজ্যান্ত মানুষ ধরাধামেই বর্তমান, কেসটা কি হলো ভেবে ঘুরে দেখি মাইক্রো ওভেন থেকেই স্বর্গরাজ্যের আবির্ভাব।(পরিচালকেরা সস্তায় কাজ সারতে চাইলে এভাবে ধোয়া বের করতে পারেন, কিংবা যদি কোনো মহাপুরুষকে বিতারিত করতে ধোয়ার দরকার পরে). এখানে স্মোক এলার্মটা বড় 'ইসেনসিটিভ' বোঝেনা মার্কিন না বাঙালি রান্নাঘর , এক্ষুনি সারা পাড়া কাঁপিয়ে বেজে উঠবে, দমকল এসে যেতে পারে। চটপট আমার জ্যাকেট খানা দিয়ে ধোঁয়া মুক্ত হলাম। ও হ্যা , খাবার জন্য আটার লাড্ডু বা বিস্কুট বানালে নিজের রিস্কে, আমার কোনো দায় নেই কিন্তু।