Sunday, May 21, 2017

মাঠে ঘাটে বেলা কাটে

তীরকাঠি করার জন্য ফেলাকাকা কঞ্চি কাটতে গেছে, আমি যাচ্ছি ফেলাকাকাকে খুঁজতে। তীরকাঠি বানানো দেখবো, রাতে পূজোর জন্য চাই, কঞ্চির মাথা চারফালি করে তালপাতা গাঁথা হবে তারপর কাদার তালের মধ্যে গুঁজে দেওয়া হবে, তারপর সূতো জড়িয়ে মাধব(মা স্পেস ধ স্পেস বো এভাবে বলতে হবে) মানে আমাদের পুরোহিত, বিড়বিড় করে এটা সেটা বলে ঠাকুরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করবে। ঠাকুরের প্রাণ ধরে রাখবে যে ভোমরা সে জিনিস কি সোজা নাকি?
এখন তিল,বাদাম,পটল, পাটের সময়, তিলফুলে প্রজাপতি উড়ে বেড়াচ্ছে, একটা কাঠঠোকরা তালগাছে নক করছে "ঠক ঠক, কেউ আছেন? কই, পোকা টোকা কেউ আছো নাকি হে"। আমবাগান পেরোতে গিয়ে দেখি একটা গাছ পাকা আম মাটিতে পড়ে আছে। আমি তো আর বোকা মানুষগুলোর মতো না যে ভাববো,  বোঁটা শুকিয়ে পাকা আম খসে পড়েছে। আমি জানি এটা আমার গিফট, আম গাছটা দিয়েছে। গিফট দিলে নিতে হয় থ্যাংকুও বলতে হয়। "থ্যাংকু স্যার" বলেই জিভ কেটেছি। হাওড়া জেলার গাছকে বাংলায় বলা উচিত ছিলো, এ ভাষাটাই জানে নির্ঘাত। বাংলায় ফের বলতে গেলাম, দেখি সব কটা গাছ মুচকে মুচকে হাসছে। আররে তাই তো গাছেরা তো আমাদের থেকে এগিয়ে আছে,  অত কথা বলতে হয় নাকি। আমি একটা ছানা পাতাকে ছুঁয়ে দিলাম, অমনি পুরো ডালটা এগিয়ে এসে আমার চুল ঘেঁটে কপালে আদর করে দিলো।
ওইতো ফেলাকাকা, বাঁশঝাড় থেকে কঞ্চি কাটছে। 'আমায় দাও না কাঠারিটা আমি পারবো দেখো'। বাড়ির থেকে দূরে থাকা সব চেয়ে ছোট ছেলে হলে অনেক খাতির। এমনিতে দিতো না হয়ত, কিন্তু আজকে একচান্সেই দিয়ে দিলো, "কই কাট দেখি?"
আমার কোপ গুলো কিছুতেই একজায়গায় পড়েনা,  এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে তবু মসৃন করে আনছি....প্রডাকশনে লাইভ হয়ে গেছে।
ঠাকুরের পূজোর শশা তুলতে যাচ্ছে সুজিতদাদা, আমি লেজ হয়ে গেছি। শশা তুলবো আমিও। আমি টান মারছি গুঁড়ি মেরে বসে মাচার নীচে, সুজিতদাদা শিখিয়ে দিচ্ছে, না পাইলট গাছ টানলে পুরো মাচা ভেঙে পড়বে; আমি পাক দিয়ে ছিঁড়ে নিচ্ছি, সুজিতদাদা ফের নিষেধ করছে, পাক দিলে গাছের লাগে, ক্ষতি হয় গাছের, বোঁটার গোড়াটা ধরে ঠেলতে হয়। খানিকক্ষণের মধ্যেই দেখি কাদায় ঘামে আর ফুর্তিতে আমার ফতুয়া মাখামাখি হয়ে যাচ্ছে।
ছানা পাতাটার কাছে ফের গেলাম, খুব মজায় আছে, জৈষ্ঠ মাসের গরমে আমেদের কষ্ট হচ্ছে হয়ত কিন্তু ছানা পাতার কিচ্ছু যায় আসছেনা। খানিক লাফালাফি করবেই হাওয়া দিলে। গাছটাও বুড়ো কাকা জ্যাঠার মতো প্রশ্রয় দিচ্ছে। বললাম কই এই অব্দি আয় দেখি,  এক লাফে চলে এসে নাক ছুঁয়ে দিলো। আচ্ছা বেশ আমিও মাথা দিয়ে ঢুঁসো দেবো। ওদিকে মেজদাদা ডাকছে ডাব খেতে আচ্ছা পরে হবে ফের।
আইস্ক্রীমওলা এসেছে, দুটাকার কাঠি আইস্ক্রীম, আগে চারানার ছিলো। ঘেমে গেছি বলে কাকা,  মেজদাদা সবাই মিলে চেঁচামেচি করে আর খেতে দিলোনা।
গরমকাল আমার বড্ড ভাল্লাগে। খাওয়ার পর সারা বাড়ি নিঃঝুম,  আমাদের বাড়ির কলতলায় সিমেন্টের খোবলা উঠে গেছে একেক জায়গায়।সেখানে জল জমে থাকে আর বাকি সব জায়গাটা রোদে শুকনো। আমি সেই ছোটবেলার গরমের ছুটির দুপুর এর মতো জল দিয়ে গর্তটা ভর্তি করে দিচ্ছি। একটা গর্ত শ্যাওলা ভরা টলটলে জল আরেকটা গর্ত সোঁ করে ফুরিয়ে যাওয়া। ওইটার নীচে চোরাবালি আছে নাকি? কিংবা সেইই পাতালপুরীতে যাচ্ছে হয়ত। গুপ্তধনও থাকতে পারে। নইলে ওখানটা অমন ফাঁপা কেন?
কিসের যেন একটা হট্টগোল হচ্ছে, এক দৌড়ে গেলাম। হনুমান এসেছে আম খেতে, তনুদা তাড়া দিচ্ছে, চলে গেছে। তাড়া দিতে গেলো নাকি আম খেয়ে টক লেগেছে বলে গেলো কে জানে। বোকা আছে কিন্তু, কাঁচা আম কেউ খায়!! হনুমান না গরু কে জানে!
মাঠ চড়তে বেড়িয়েছি। জবাব দিতে দিতে হাঁটছি, কাদের বাড়ির ছেলে, কবে এসেছি, দিদিরা আসেনি কেন, রোগা হয়ে গেছি, এখনো বাইক চালাই কিনা, কোন 'ফ্যাক্টরি' তে কাজ করি, মা কেমন আছে,বাবা কেমন আছে এইসব। মাঠে সেকেন্ড শিফটের কাজ চলছে, ডিপ টিউবওয়েল থেকে জল নিয়ে নিয়ে পটল, বাদাম জমিতে জল যাচ্ছে। পাট ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে চমৎকার হাওয়া দিচ্ছে, পৃথিবীর যে কোনো সেরা পাখার থেকে জোর হাওয়া আর সেরা এসির থেকে ঠান্ডা আরামের হাওয়া। জল নালা দিয়ে ছপছপ করতে করতে এগিয়ে গিয়ে খুরপিটা দাও না কাকা বলে আল কাটছি,  আল বাঁধছি। ফিরে এসে ফের ডিপটিউওয়েলের পাশে বসেছি। আরে একপাল মা বিছে তার ছানা পোনা নিয়ে ইভনিং ওয়াক করতে বেরিয়েছে দেখি। আরে আরে একটা গেলো জলে।হারাধনের দশটি ছেলে কেস।
বেলা পড়ে আসছে, একজন লোক কোদাল নিয়ে হাত পা মুখ ধুয়ে গেলো ডিপটিউওয়েলের জলে। একজন তার ঘোলা জলের বোতলটা ভরে নিলো। একটা বাচ্ছা মেয়ে নেংটি পরে ছুটতে ছুটতে বাবার পিছনে পিছনে বাড়ি যাচ্ছে, বাবা একহাতে গামছা দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে আরেক হাতে কোদাল নিয়ে যাচ্ছে।
দূর থেকে আমাদের বাড়ির থেকে ঝাঁঝ কাসর ঘন্টা ঢাক এর সম্মিলিত আওয়াজ ভেসে আসছে। ক্রমে অন্ধকার হয়ে এলো। তারা নেই চাঁদ ওঠেনি এখনো তবু আকাশের আলো আছে,  জোনাকিরা গান ধরেছে। গাছপালা গুলো শিল্যুট ছবি হয়ে দাঁড়িয়ে।
সারারাত্তির পূজো দেখার এনার্জি আমার নাই, ছোটবেলায় ছিল কিন্তু ছোটবেলায় মা জোর করে ঘুম পাড়িয়ে দিতো। কৈশোরসুলভ নিজেদের বড় প্রমান করার প্রচেষ্টায় একবার আমি ছোড়দি অরিত বুয়া রিমাদি মিলে সারারাত জেগেছিলাম বটে, ওই একবারই। ভোরবেলায় মা যেই বলেছে মাছ ধরা দেখবি যে,  তড়াক করে উঠে চোখ হাফ বুঝেই পুকুরপাড়ে। এদিকে চশমা ফেলে এসেছি, তাও দেখতে পাচ্ছি বটে জামগাছে হেলান দিয়ে, জেলেরা মাছ বেছে বেছে হাঁড়িতে ফেলছে আর নয়ত জলে ফেলে দিচ্ছে।
পুকুরে জল কমে কাদা কাদা হয়ে গেছে, একটা বক বাবাজি ট্রাই করছে কাদা ঘেঁটে কিছু পাওয়ার। একটা মাছরাঙা সাঁ করে ডাইভ মেরে একটা মাছ নিয়ে পালালো। আমি ফের মাঠে দিকে হাঁটা দিয়েছি।
বাদাম জমিতে সাপ থাকে কাল আমাদের এক চাষী বলছিলো, সে আমায় কিছুতেই তার জমিতে নামতে দিতে চায়নি, ও জল নাকি ভালো না। আমার সাথে পারবে কেন,  বললাম কই তোমার তো কিছু হচ্ছে না কাকা। বলে আমাদের অভ্যেস আছে, আমিও নাছোড়বান্দা, প্রথমদিনে হয়েছিল কিছু?
সাপ এর ভয় পাচ্ছি একটু,  তিলগাছ গুলো খসখসে,  একটা কি পোকা কামড়াচ্ছে পায়ে এদিকে নিচুও হতে পারছি না,  পায়ে সাপ কামড়ালে হাত দিয়ে বাঁধন দেয়, হাতে কামড়ালে পা দিয়ে তো আর বাঁধন দিতে পারবো না। এদিকে ওদিকটা দিয়ে ঘুরে কালকের রাস্তাটা ধরার উপায় নেই, একটা জাঁদরেল গরু শিং বাগিয়ে বসে আছে।
কালকের সেই ফ্রেন্ডলি আমগাছটার কাছে গিয়ে দেখি,  একদিনেই ছানা পাতাটা খানিক বেড়ে গেছে। আজ কেউ মাথাও দোলাচ্ছে না কিচ্ছু না।  সাধারণত গাছেরা রিজার্ভ প্রকৃতির হয়, মানে তুমি ছায়া নাও ফল নাও পাতা ছেঁড়ো কিছুইতেই কিছু রিয়্যাকশন দেয়না। আসলে গাছেরা একটা অন্য লেভেলে বাস করে, মানে চাষের গাছ গুলো অতটা না তবে বৃক্ষ টাইপ প্রাচীন গাছ গুলো। কি করে কমিউনিকেট করব ভাবছি, কার তো ছানা পাতাটা নিজে থেকেই এগিয়ে এসেছিলো। দাঁড়িয়ে আছি, টুকটাক কথা বলছি, শেষে মনে হলো কালকের আমটা কেমন ছিল জানাইনি কিনা তাই হয়ত একটু গোঁসা হয়েছে। তা মশাই আমার সাথে করলে আমারও হতো। স্বীকার করলুম খাইনি এখনো বিকেলে খেয়ে জানাবো। এরপর যা ঘটলো তা এমনি মানুষেরা হয়ত বিশ্বাস করবে না কিন্তু তাই বলেই তো সত্যিটা মিথ্যে হয়ে যায়না। এতোক্ষণ হাওয়া দেয়নি, কথাটা বলার পর হাওয়া দিলো আর ডাল আর পাতা গুলো আমার মুখ নাক ছুঁয়ে, আচ্ছা আচ্ছা, মোগাম্বো খুশ হুয়া বলে গেলো।
আসিরে ব্যাটা বিকেলে আসবোখন জানাতে। বলে ফের সেই বাদামবন,  তিলজমি। 'আমগাছ আমার বন্ধু হে, রাস্তা ছাড়ো দিকি' বলে টলে যাহোক পেরিয়ে আসা গেলো।
ঝাঁ ঝাঁ করছে জৈষ্ঠ্য মাসের রোদ্দুর, একটা ছাতারে পাখি ছ্যা ছ্যা করে গেলো আমি এরম রোদ্দুরে মাঠে মাঠে ঘুরছি বলে। মাধব আমাদের রোয়াকেই গামছা মাথায় ঘুমোচ্ছে। ঢাকি ঢুলি তাদের ঢাক রেখে গামছার বিঁড়ে করে শুয়ে নাক ডাকাচ্ছে। রাস্তায় একটাও লোক নেই। অজা পাল কাদায় নেমে ল্যাটা কই শিঙ্গি মাছ ধরছে। "নিয়ে যা না রে দুটো" কে কাটিয়ে এগিয়ে গেলাম। আমি কিচ্ছু নিতে চাই না তো, এদের বোঝায় কে। গাছের ধারে বসে আছি, এ রোদ্দুরে আর হাঁটাও যাবে না ফেরাও যাবে না।
টেঁপিদিদির মা আমাদের বাড়িতে কবে থেকে কাজ করে কে জানে, আসল নামটা সে নিজেও ভুলে গেছে বোধায়, দাঁত ফোকলা সাদা শাড়ি আর সাদা চুলের বুড়িটা এখন আর পারে না কাজ করতে খালি আমরা এলেই চলে আসে। "হ্যাঁ বাপ, তোমাদের গরমের ছুটি নাই আর কটা দিন থাকলে হতোনা?" এরম সরল প্রশ্নের কি কোনো উত্তর হয়, বললাম না গো জ্যেঠিমা নেই।
বাড়িতে ঢোকার মুখে ঠাকুর দালানের পাশে একটা নারকেল গাছ ছিলো, আগে খেয়াল  করিনি, দেখলাম গাছটা আর নেই, মস্ত শিকড়টা পড়ে আছে।

Monday, May 15, 2017

মাঝারি সমস্যা

প্যাশন আর ডিসিপ্লিন ছাড়া বোধহয় কিছুই করে ওঠা যায়না।  আমার দুটোর একটাও নেই।  এই ব্লগ লিখতে শুরু করেছিলাম , কারণ আমার দেখার কথা বলার কথা লেখার দরকার ছিল , কারণ আমি বকবক করতে ভালোবাসি আর কিছু না।  এমনিতে আমি একটু লাজুক মানুষ ছিলাম , মানে এখনো আছি কিন্তু সে  কথা সবাই জানে না।  আসলে ছোটবেলায় আমি এতটাই একচোরা  ছিলাম কোনো বন্ধুই হতো না , আমি মশারির সাথে কথা বলতাম , গাছেদের সাথে কথা বলতাম , মিছিমিছি কৌটোতে কাগজ পুঁতে গুপ্তধন খুজতাম। কিন্তু আসলেই আমি মানুষের সাথে কথা বলতে চাইতাম।  গল্পের বই ছিল একমাত্র বন্ধু , আর আমি ভাবতাম গল্পের বই এ সবার কত বন্ধু থাকে আমার কেন নেই।  গ্রাম থেকে শহরে আসা ছোট আমি ভারী নিঃসঙ্গ বোধ করতাম।  মাঝারি মাপের স্টুডেন্ট , বেয়াড়া, কোনো এক্সট্রা ক্যারিকুলার অ্যাক্টিভিটি না পারা আমি একা হতে হতে কি করে যেন নিজেকে খানিক বদলে দিলাম।  মানে পুরোটা তো বদলায় না , আসল অামিটা আড়ালে গেলো।  ভালো খারাপ জানিনা , তবে অনেক পরে দেখা গেলো কিছু বদল ভিতর থেকেও বদলে দিয়েছে আমায়।  তবে ওই যে ছোটবেলার ওই ভাবটা আমার এখনো যায়নি , আমি এখনো একা একা হতে, ভিড়ের মাঝে থেকেও, ভালোবাসি।  তাই বোধয় ভার্চুয়াল দুনিয়া আমায় আকৃষ্ট করে বেশি।  এখানে অপছন্দে জায়গা স্কিপ করে বেরিয়ে যাওয়া যায়।
সেদিন এক বন্ধু কে কুঁই কুঁই  করে বলছিলাম আমার বড্ডো ফেসবুক নেশা হয়েছে , এ নিয়ে লিখেওছিলাম আগে।  ভেবে দেখলাম , আমার আসলে কিছু পাওয়ার নেই দেওয়ার নেই।  আমি জানিনা আমি কি চাই বা কেন চাই।  ফলে সেই সময়টা নিয়ে আমি করবোই বা কি।  আমার বন্ধু সংখ্যা খুব কম , সে হয়তো আমারই প্রকৃতির দোষ  , কিন্তু নেই যে সেটাই সত্যি।  ফলে আমি কি করি , এক দুজন যা বন্ধু পাই ঝাঁপিয়ে পড়ি , কথার চাপ , সময় দেওয়ার চাপ ইত্যাদি করে আমি তাও নষ্ট করে দিই।  ফলে হাতে রইলো পেন্সিল। এমন না ফেসবুক আমার হতাশা বাড়িয়ে দিয়েছে বেশি , বরং ফেসবুক অর্কুট আমায় অনেক কিছু দিয়েছে।  আমি আসলে শান্ত হয়ে আত্মস্থ হয়ে কিছু করতেই পারিনা। ফেসবুক আমার ঐ স্কিপ করে চলে যাওয়ার প্রবনতাটা বড় বেশী বাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু নিজেকে নিয়ে নিজের মতো করে খুশি থাকলে হয়তো এতো উচাটন হতো না , এতো ছটপটানি হতো না। 
এতো বিষন্নতাও হতো না।  কাউকে বলা যায়না এ অকারণ মন খারাপ , কারণ দুঃখবিলাস বলে মুচকি হাসি তারা হাসতেই পারে।  হয়ত তাদের পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে দেখলে ঠিকই।  চাকরি আছে , মাথার উপর সেরকম বিরাট দায়িত্ব কিছু নেই তবু ভালো থাকতে পারছিনা তা কি কারণ।
আমি আসলে এসব দিনযাপনের অর্র্থই পাইনা , মনে যারা খুব দায়িত্ব নিয়ে ফ্ল্যাট বুক করছে নিয়ম করে ইএমআই দিচ্ছে , ছেলে মেয়েকে ইস্কুল কলেজে পাঠাচ্ছে , তাদের চিন্তায় দিন যাচ্ছে তাদের জীবনের অর্থ পাইনা , আবার যারা গ্রামে প্রায় একই লেভেলের ( ইএমআই বাদ দিয়ে ) জীবন কাটায় তাদেরটাও ইন্টারেস্টিং লাগে না। এদিকে আমার মেধা ডিসিপ্লিন , প্যাশন নেই সত্যজিৎ রায় , স্টিফেন হকিং , বা ওই লেভেলের কোনো ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠার। 
মাঝারি মাপের খুব সমস্যা,  না পারে অটোর মতো গলে যেতে না পারে ট্রাকের মতো দাপিয়ে যেতে। মাঝারি হওয়ার খুব জ্বালা, সে ফুটপাতে বসে লাল মাংসের ঝোল খেতে পারে না আবার ওহ ক্যালকাটায় গিয়ে ডিনার করতে পারেনা। কিন্তু মাঝারির মধ্যেও মাঝারি হওয়া আরো সমস্যার, তার পায়ের শিকল গুলো না থাকলে সে আর সে থাকে না আবার শিকল থাকায় সে,  কিছুতেই সে হয়ে ওঠেনা। বসন্তের বাতাস বইবে আর একটা পাহাড়ের মাথায় লম্বা হয়ে শুয়ে থাকবে এ স্বপ্ন বুকে নিয়ে সে বালিশে মাথা পাতে এক বুক দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আবার ঘুম থেকে উঠেই রান্নাঘরে মাকে রাঁধতে দেখতে পেয়েই সারাদিনের পালিয়ে যাবার কথা ভাবার দম নিতে পারে। মাঝারির মাঝারি যে ফেসবুকেও খিস্তি করতে পারেনা, আবার নিজের দেওয়ালেও ফুল ফোটানোর দম থাকেনা তার। এইসব মাঝারি মাপ গুলোর খুব সমস্যা না দিতে পারে না, না দেওয়াটা হজম করতে পারে। 
আমার প্রশ্ন এটাই, এই মাঝারি মাপের মানুষ আমরা পৃথিবীর ভীড় বাড়ানো ছাড়া আর কি করি , দরকারটাই বা কি।

Monday, May 1, 2017

*****ভূতের ছানা বিল্বপত্র *****

ভূতের ছানা বিল্বপত্র খুব বায়নাবাজ হয়ে উঠেছে। বিল্বপত্র নামটা ওর ঠাকুর্দার দেওয়া। রাগী বিটকেল এই ভূতটি ছিলেন ভূত সমাজের মাথা প্রায়। ওনার আমলেই ভুতেদের সমাজে আমূল পরিবর্তন ঘটে। বেল গাছে স্রেফ ব্রহ্মদৈত্যরা বাস করবে এ নিয়ম উনি বদলান স্রেফ একটা সহজ পদ্ধতি দিয়ে। এক বামুন ভূতকে উনি বলেছিলেন বেল গাছের নিচে এক দিন কাটাতে হবে বসে বসে। যে পারবে সেইই গাছের উপর যাবে। ওনার নাম ছিলো হাহা ভূত। আসলে এটি একটি সংক্ষিপ্ত রূপ নাম, আধুনিক তরুন ভূতেরা তার খবর না রাখলেও, প্রাচীন ভূতেরা এ নামকে বেশ মর্যাদা দেয়। যাই হোক হাহা বাবু করেছিলেন কি, এমন সময় প্রতিযোগিতা রেখেছিলেন যখন বেল পাকার সময়। আর ওই দিন ওখানে একদল মানুষদের পিক্নিক করতে আসার সময়ও ছিলো। তা যা হবার তাইই হলো। বেল পড়লো বেহ্মদৈত্যর খুলিতে ব্যাস। আর যায় কোথা বরফ দে রে বরফ দে বলে ছুটলো। যারা পিকনিক করতে এসেছিলো তাদের কাছে বরফের বাক্স ছিলো। তারা তো তখন তন্দুরি খাচ্ছে বরফ মেশানো, ড্রিংক্স এর সাথে। খুলিতে বরফ ঘষতে ঘষতে ভারী আনমনে এক চুমুক ঠান্ডা পানীয় দিয়েছে এক চুমুক। তার পর কাবাবের গন্ধ নাকে গেছে, বেভুলে দিয়েছে এক কামড়। বেহ্মদত্যির যেন নতুন ভূত জন্ম লাভ হলো। আহা আহা করে মন গেয়ে উঠলো। চুলোয় যাক বেলগাছের অধিকার। মাটনের বাটিতে ডুব দে মন বলে সারাদিন কেটে গেলো ওখানেই। অবশ্য মানুষগুলো খুব ঘাবড়ে গেছিলো, এত খাবার দাবার কোথায় নেই হয়ে যাচ্ছে রে বাবা। যাই হোক ওদিকে হাহাভূত তার কাজ করে নিয়েছে। হেলমেট পরে আগে থেকেই রেডি ছিলো। ব্যাস আর কি সে রাত থেকেই বেলগাছে ব্রহ্মদৈত্যর অধিকার শেষ হয়ে গেলো। সেই হাহা ভূতের নাতিই হলো বিল্বপত্র।
তা বিল্বপত্র বায়নার কারনটাও খুব ফেলনা না। আসলে যে সব জিনিস মানুষ জগতে নষ্ট হয়ে যায় ভূত জগতে তাদেরই এন্ট্রি হয়। মানে কোনো মোবাইল খারাপ হওয়া মানে সে মোবাইল ভূতজগতে জন্ম নেয়। তা আজকাল রোজ রোজ নতুন নতুন মডেলের মোবাইল বেরোয় আর আগেরটা স্ক্রীন ভাঙা ভূত হয়ে বা স্লো মোবাইল ভূত হয়ে জন্ম নেয় ম, ভূতেদের মহা ফুর্তি। আর মাঝে মাঝেই নেটওয়ার্ক জ্যাম হয়ে যায় মানে ওই সময় ভূতেদের ব্যবহার চলে। সোজা হিসেব। তা বিল্বপত্রের তাতেও হবে না । ভূতেরা কিন্তু স্রেফ ভয় দেখায়না, মানুষের বুদ্ধিও নষ্ট করে দেয়, এটা ওদের পার্ট অফ জব। তো বিল্বপত্র একজনের হাতে একটা ড্রোন দেখেছে এক মানুষের বুদ্ধি নষ্ট করতে গিয়ে। ড্রোন দেখে তো তার মাথা গেছে পাগলে। লোভে পড়ে বুদ্ধি নষ্ট দূরে থাক সে পারলে এক্ষুনি ছিনিয়ে নেয় ড্রোনটা। সে ড্রোনটাই চাই তার এক্ষুনি মানে এক্ষুনি। এদিকে ভূতেরা কিন্তু মানুষ এর থেকে কেড়ে নিতে পারবে না কিছু আবার ইচ্ছে করলেই কোনো জিনিস নষ্ট করে দেবে তাও হবে না। যদি মানুষটা স্বেচ্ছায় পরিত্যাগ করে কোনো জিনিস বা খারাপ হয়ে যায় তবেই তার ভূত জন্ম লাভ হয়।
ভূত সমাজে ছি ছি পড়ে গেছে। একি, মানুষের মতো বায়না করবে কেন। কোথায় মানুষকে এসব কুপরামর্শ দিয়ে ঠাকুর্দা হাহার নাম আরও ছড়িয়ে দেবে তা না এইসব। বিল্বপত্রের বাবা দেখেন ধর্মীয় দিকটা। মানে কোথায় কিরকম ভাবে ক্ষেপালে বেশ জমজমাট খুনোখুনি হবে সেইসব ট্যাকল করাই ওনার কাজ। ওনার কানে যখন ছেলের এ অধঃপাতের খবর গেলো উনি তো পারলে বিল্বপত্রকে মেরে মানুষ করে দেন এরকম অবস্থা। বিল্বপত্র থামলো বটে কিন্তু ভুললো না। 
তারপর একদিন মাথা খাটিয়ে বিল্বপত্র একদিন গেলো সেই মানুষ টার কাছে তাকে ভয় দেখিয়ে যদি আদায় করা যায় ড্রোনটা। ও হ্যাঁ ড্রোন মানে সত্যিকারের যুদ্ধে ব্যাবহার করা ড্রোন না, খেলনা ড্রোন, তবে দিব্যি ওড়ে ভোঁ ভোঁ করে। তা হঠাৎ করে ভূতের ছানা দেখে, গুটুল একটু ঘাবড়ে গেছিলো বটে। তবে সামলেও নিলো খুব জলদি, নাহলে যে একে আটকানো যাবে না তা বইতে পড়ে জানেই সে। এমন কি মনে মনে ভয় পেলেও তাও ভৌতিক র্যাডারে ধরা পড়বেই। গম্ভীর গলায় (আসলে গলার আওয়াজ ভয়েই বেরোচ্ছিল না, গম্ভীর মনে হচ্ছিলো) গুটুল বলল কে তুই, মুখোশ পরে ভয় দেখাতে এসেছিস? বিল্বপত্র খুব রেগে গেলো, হাড়হিম করা নিশ্বাসের ঝড় বইয়ে জানান দিলো সে আসলে কে। গুটুল সাহসী ছেলে না তেমন কিন্তু প্রাথমিক ধাক্কায় দাঁড়িয়ে গেছিলো বলে আর ভয় পাচ্ছিলো না, তাছাড়া ভয় পাওয়ার উপায় খুব একটা ছিলো না। বিল্বপত্র মনে মনে ভারি ধাক্কা খেলো। এক তো পুরাকাল এর মতো সে ভূত রূপে, ভয় দেখাতে এসেছে আর তাতেও বিল্বপত্রকে ভয় দেখিয়ে উঠতে পারেনি। সামান্য একটা মানুষের ছানা তারই মাথায় মাথায়, সে কিনা ভয় না পেয়ে সটান দাঁড়িয়ে?
রেগে গিয়ে বিল্বপত্র এক ঘুঁষি মারতে এলো গুটুলকে। গুটুল এমনিতে ভীতু হলেও দুষ্টু কম না, ফলে মারধর ওর কপালে লেগেই থাকে। মার খেতে খেতে মোটামুটি শক্তপোক্ত হয়ে গেছে সে। আর যে ব্যায়াম করতে হয় বলে সাত সকালে ওঠায় তার রোজ আপত্তি, সেই ব্যায়ামের ফলে তার পেশীর জোরও বেড়েছে খানিক। ফলে কংকালি ঘুঁষিতে বিল্বপত্র গুটুল কে কাত করতে পারলো না তেমন। তার এ এতদিনের ভূতজীবনে এরকম বেকায়দায় সে পড়েনি কক্ষনও, খানিক দমে গিয়ে ভাবলো একবার, চলেই যাবে কিন্তু কোনোভাবে যদি ভয় না দেখাতে পারাটা তার বাবা বিল্বদল এর কাছে পৌছয় তাইলেই চিত্তির। মিনমিন করে বিল্বপত্র বলল "শোনো, সব কিছুর একটা নিয়ম আছে। আজ যদি দেখো শোলা জলে ডুবছে তা কি খুব ভালো হবে? কিংবা দেখলে পাটিসাপটায় টম্যাটো সস দিয়ে দেওয়া হচ্ছে ভালো লাগবে কি? চিরটাকাল মানুষ, ভূতকে সমীহ করেছে, অন্তত কাঁপুনি ব্যাপার টা এনেছে তা তুমি কোন নদেরচাঁদ এলে হে সে নিয়ম এর অন্যথা করো। জানো আজ আমি ত্যাজ্যভূত হয়ে যেতে পারি স্রেফ তোমার জন্য।" শেষ কথাটা বলার সময় বিল্বপত্রর চোখে দু ফোঁটা আগুন দেখা গেলো (ভূতেদের চোখে জল আসতে নেই, খুব কষ্ট হলে এক ছটাক আগুন)। 
তা গুটুল তো এম্নিতে ভারী নরম মনের ছেলে। ঘ্যানঘ্যান প্যানপ্যান তার ভাল্লাগেনা, সে তাড়াতাড়ি বলল, "আহা অত দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই, এট্টু ভয়ইই তো তা না হয় পেয়ে নেবো খন। আমার বন্ধু বান্ধব নাই বিশেষ তুমি আমার বন্ধু হয়ে যাও। " 
বিল্বপত্র পড়লো মহা মুশকিলে, এ ছেলেটা বলে কি?এতো ভালোবেসে ভয় পাবে বলছে। ভালোবাসা!! আরে মানুষকে আবার ভালোবাসা যায় নাকি, মানুষ মানে তেঁএঁটে বদ একটা প্রাণী, যাকে ভয় টয় দেখিয়ে খানিক গুব্লেট কাজ করা যায়, আর তারপর মজা নেওয়া যায়। 
বিল্বপত্র বলল " শোনো তোমায় আমারও ভালো লেগেছে খুব, কিন্ত ভূতে মানুষে তো বন্ধুত্ব হয় না, আমি বরং আসি, তোমায় ভয় পেতে হবে না বাদ দাও। "
গুটুল বিল্বপত্র এর কংকাল টা ধরে বলল আরে বললেই যেতে দিচ্ছি নাকি তোমায়। ভূতে মানুষে বন্ধুত্ব হয়নি তো হয়নি, আমরা থোড়াই সবাইকে বলে বেড়াবো। খালি মাঝে মাঝে চলে আসবে, মজা করে খেলা যাবে, লুকিয়ে লুকিয়ে এট্টু ঘুরে আসা যাবে। আসবে তো? 
বিল্বপত্ররও তো বন্ধু তেমন নেই, না আর বলে কি করে তাছাড়া ড্রোনটাও পাওয়া যাবে। সুতরাং ফ্রম দ্যাট ডে অনওয়ার্ডস এক মানুষ ছানা ও এক ভূতের ছানার বন্ধুত্ব হয়েই গেলো। তাদের কীর্তিকলাপ এর গল্প গুলো পরে পরে শোনাবোখন।