Friday, May 25, 2018

এখানে না হয় অন্যকোথাও ...

 শোনো?
- উঁ?
- কিছু না এমনি।
- হুঁ হুঁ। আচ্ছা শোনো পরশু তাই না?
- বার বার মনে করানোর দরকার আছে কিছু? আমরা এ নিয়ে কথা আর বলবো না ঠিক হয়েছে না?
- আচ্ছা আচ্ছা। রাগ করো কেন গিন্নী, এমনি একবার কাউন্ট করে লিয়া।
- করছি না কত্তা মশাই। আচ্ছা শোনো তোমার জন্য একটা নতুন মিষ্টি বানাচ্ছি। 
- বেশ বেশ। আচ্ছা গিন্নী এক কাজ করলে হয় না? ধরো এই মিষ্টি দিয়ে দূতকে ঘুম পাড়িয়ে রাখলাম হ্যাঁ? পরশুই চলে যেতে হবে? হতেই তো পারে ছমাসের টাইমটা শেষ হবার আগেই আমারমার ফুসফুস চাঙ্গাইল হয়ে গেলো?
- অমনি করে না। আচ্ছা অত মন খারাপ করলে হবে? আমি তো থাকবোই রে বাবা ওখানে।
- মোটেই তুমি না, সে হয়তো তোমার মতো ঝগড়া করতে পারে না, কী জানি সে হয়তো লজ্জা পেলে ওমন করে মুখ লুকোবে না, অভিমান করে ঠোঁট ফোলাবে না...দূর আমি যাবো না।
- আরে দেখো পাগলটার কান্ড কারখানা। ওরে আমিও তো আসছি নাকি? তুমিই তো বলো একটু দূর, একটু বিরহ খারাপ কিছু না? তবে? আর ওখানে তো তুমি আর আমিই হবো, এতোটা লম্বা সময় একটু আচারে বিচারে তফাৎ হবে খালি এসব এতদিন ধরে তো তুমিই বুঝিয়েছ আমায়। আজ এমন করে মন খারাপ করলে চলে? 
- হুঁ।
- কী হলো? ফের মন খারাপ করে পাগলা। অমনি করলে এখানে একা একা আমি থাকি কী করে?
- এখানে তো সবাই সব রইলোই। সয়ে যাবে। কিন্তু ওখানে কীরম হবে না হবে, চেনা লোকজন পেলে তারা কেমন ব্যবহার করবে। আমিই বা কেমন হবো কে জানে। হয়তো তুমি গিয়ে খুঁজছো উস্কোখুস্কো এলোঝেলো, খিটকেল কাউকে আর পেলে শান্ত স্থিতধী কাউকে হ্যাঁ? 
- তখন হয়তো তোমার শান্ত, স্থিতধী বউ খিটকেল ঝগড়াটে কেউ হবে।
- এহ তুমি নাকি স্থিতধী। ফুহ। হাসাস না রে আর হাসাস না।
- অমনি হিংসুটে পনা তো। আমি শান্ত না? 
- হুঁ ওই একটুই। 
- আচ্ছা শোনো না। ওখানে কী নিয়ম তা তো জানিনা, একটা সময় চক্র থেকে আরেক সময় চক্র। কত কী বদলে যাবে হয়তো, আবেগ ভালোবাসার জায়গাই থাকবেনা হয়তো। তাও, তোমার ইচ্ছে মতো তো নদীর ধারে, গন্ধরাজ ফুল আর ঘুঘু পাখর ডাকের গাছের নীচে, লীলা মজুমদার সমেত তুমি তো থাকবেই, আসবে তো গো? নাকি ওখানকার ছুঁড়ি গুলোকে পেয়ে ভুলে যাবে?
- দূর পাগলী, ভুলে যাবো কি রে। তবে দেখছোই তো ওখানকার আমি হয়ে হয়ত আসতে পারবো না। কিন্তু হঠাৎ করে যখন মেঘ কালো করে দুপুর বেলায় আঁধার হবে, বাজ পড়বে কড়ক্কড়াৎ করে রাস্তাঘাট শুনশান, হয়ত ওখানকার আমি আনমনা হয়ে যাবো কাজের ফাঁকে আর অমনি এখানকার নদীরে ধারের ঘুঘু ডাকা হাওয়া আমায় নিয়ে চলে আসবে। ওখানকার স্মৃতি আসবে কিনা জানিনা এখানকার টাও ওখানে যাবে না হয়তো। তবে আসবো তো বটেই, আমি তো আর অত রোবট হতে পারবোই না তাই না? যে যুগেই যাই না কেন, অসময় বৃষ্টি, মায়ের আঁচলের গন্ধ, নদী পাড়ের ঘুঘু ডাকা হাওয়া, মেঠো পুকুরে দাপাদাপি, রাস্তায় বসে চায়ে ডুবিয়ে বিস্কুট এসব যে আমার টিউনে ঢুকে গেছে। এর কোন টিউনে কখন আসবো জানিনা রে ঘঁচুম কিন্তু আসতে তো হবেই। যদ্দিন তুই না যাচ্ছিস তদ্দিন...
- আর আমি গেলে একসাথে তাই না?
- হুঁ হুঁ ওখানকার আমরা কেমন হবো কে জানে, হয়তো ওখামে ভালোবাসা মানা...
- না না ভালোবাসা মানা হলে হবে না।
- আচ্ছা আচ্ছা আমরা না হয় এখনকার মতো কোনো আবছায়া গলি, কিংবা পুরোনো রেস্তোরাঁর সিঁড়ি, ল্যান্ডিং খুঁজে নেবো?
- হুঁ, তারপর আমরা দুজন চলে আসবো হ্যাঁ? যা যা বাকি রইলো করা সব করবো হ্যাঁ? 
- হুঁ হুঁ তারপর টাইম ফুরোলে ফের সাঁইইই।
- হুঁ। কটাদিন একা ফুত্তি করে নে কচি ছুঁড়িদের সাথে। আমি এখানে করি ফুত্তি।
- সে কর গা যা, কিন্তু রেঁধে বেড়ে খেতে বসাবি যদি হতভাগাদের ঘাড় মটকে দেবো বলে দিলাম।
- এহ্ এলেন। ভূতেদের ঘাড় মটকাবার ক্ষমতাই নেই।
- আমায় ভূত বললে? 
- আহা তা ভূতই তো বলে নাকি?
- হুঁ, যদিও বলা উচিৎ সময় ভ্রমণকারী ভবিষ্যৎ। কী অদ্ভুত ব্যাপার না হ্যাঁ? দুদিন আগে অব্দি ব্যপারটা জানতামই না ভাবো? ভাগ্যিস ডাক্তার বলে দিলো ছ মাস আর আয়ূ। তারপর বাঁচলে অংকের এক্সট্রা। তাই জন্যই তো ফুল দমে বাঁচতে গিয়ে চাকরি ছাড়লাম, ঘুরে ঘুরে এদিক সেদিক করতে করতেই তো পুকুরে নাকানিচোবানি খেয়ে জলের গন্ধ মেখে,আমবাগানে হাওয়া মেখে, মায়ের শাড়ি দিয়ে বোনা কাঁথা চাপিয়ে পুরোনো বই এ ডুব দিলাম আর আমার ভবিষ্যৎ পৃথিবীর ডুপ্লিকেটেরও সেদিন মন খারাপ এর তরঙ্গে পুরোনো গন্ধের টিউন ম্যাচ করে গেলো। 
- কাঁচালংকাকে সবুজ বর্ণের ঝাল স্বাদের বস্তু বল্লেও উহা কাঁচা লংকাই থাকে মশাই।
- ফের বিচ্ছুমি করছো হ্যাঁ? দাঁড়াও ওখানে কী ব্যবস্থা দেখি, তোমার নাক মুলে যাবো রোজ রাতে বুঝবে।
- হুঁ তাই দিও। 
- কী হলো আবার মন খারাপ করে? আহা আমরা আবার মিট করবো তো। মরে যাচ্ছি রে ছেড়ে যাচ্ছিনা। চোখ মোছো দেখি, চলো আজ লং ড্রাইভে যাবো...নদীর ধারের ওই জায়গাটায়।

Thursday, May 10, 2018

আবার রাস্তায়

শিয়ালদায় জোড়া গীর্জায় যাইনি কখনো। এইসব প্রাচীন প্রাচীন স্থাপত্য কেমন মন কেমনের হয়। চাঁপা গাছ, আম গাছ, কলকে ফুলের গাছ আরো কি কি সব গাছ নিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যে কেউ ঢুকতে পারে, আমার পিঠে ব্যাগ, উস্কো খুস্কোচুল, চশমা পরা ঘামে ভেজা মুখ, আমি জানিনা গেটে আটকায় কিনা,একবার খালি নির্লিপ্ত চোখ মেলে দেখলো তারপর আর কিছুই বলল না। গীর্জা বন্ধ,আশপাশে চক্কর খাচ্ছিলাম, একটা চড়াই কল্কে ফুলে মধু খাচ্ছে। লাল ফুল ফুটেছে একটা গাছে, বাইরে ঝাঁঝাঁ করছে রোদ। পাশের স্কুলের দারোয়ান বসে ঝিমোচ্ছে। আমার এই সব পুরোনো জায়গায় গেলে কেমন বেভুল লাগে। যদি এমন হয় ভুল করে কোনো ওয়ার্মহোলে পড়ে আমি পুরোনো দিনে চলে গেছি, পাশের ওই দোতলা হলদে বাড়ি, এই চার্চ ছাড়া এ চত্বরে বড় বাড়ি নেই। মেমসাহেব গাউন পরে পিয়ানোয় সুর তুলছে, সেই সুর আর গীর্জার প্রার্থনা সঙ্গীত মিলে মিশে যাচ্ছে। যেমন এখন, ওই কোত্থেকে ভেসে আসছে আজানের আওয়াজ গীর্জার দেওয়ালে।

মেমসাহেব এর দাসী চাকর নিয়ে দিন কাটে হয়ত, সাহেব ফিরলে দৌড়ে যায়, একে অপরকে জড়িয়ে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে হয়তো। এই গাছ গুলো তখনো ছিলো তাই না? গাছেদের বয়স মাপা যায়, অত পুরোনো না হয়ত। তাতে কি, ধরা যাক এক দুটো প্রাচীন গাছ রয়ে গেছে। আচ্ছা গাছেদের স্মৃতিশক্তি কতদিনের হয়? মানুষের মতো? কবে শিখতে পাবো গাছেদের ভাষা?

পাশের স্কুলের সামনে ভীড়, কাঁচা আম বিক্রী হচ্ছে।
একটা ফার্স্ট জেনারেশন ছাত্র তার দেড়া সাইজের জামা প্যান্ট পরে স্যান্ডো গেঞ্জি, তেলকালি মাখা প্যান্ট বাবার হাত ধরে লাফাতে লাফাতে যাচ্ছে দেখছি। ওদিকে একটা ছানা, কলের জলের নীচে লাফিয়ে লাফিয়ে খেলছে। দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলো খানিক। যেমন, আমরা যারা গালভরা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, লোকে ভাবে, শাল্লা ক আরামের চাকরি, এসিতে সারাদিন চাট্টি কল আর কোড ব্যাস আর কি বলে দেখে, আর আমরা রাতভোর হলে আমি বাড়ি যাই গাইতে গাইতে, পিঠের, চোখের ব্যাথা নিয়ে,দু টাকার ইনক্রিমেন্ট নিয়ে, গরমের ছুটি কিংবা বিকেল দেখতে পাওয়া লোক গুলোকে দেখি। একটা লোক এই গরমে স্রেফ নিজের রাবারের চটি মাথায় ফুটপাতে শুয়ে ঘুমোচ্ছে কী আরামে! ভালো থাকা বা খারাপ থাকার বোধ না হলেই ভালো তাই না? নিজের অবস্থায় ভালো থাকলেই নির্বাণ লাভ? কী জানি।