Thursday, February 22, 2018

গুটুল আর বিল্বপত্রের অভিযান

মাঠাংবুরুর মন ভালো নেই, গল্প শুনতে গেছিলাম, রাবড়ির ভাঁড় নিয়ে, রাবড়িটা চুকচুক খেয়ে খ্যাঁকম্যাক করে উঠলো। মন ভালো না থাকলেই ব্যাটা এমন খিটখিটে হয়ে যায়। তাই আর ঘাঁটালাম না, কি জানি হয়তো কাজ করেনি বলে হোমরা চোমরা পিঁপড়েদের থেকে ঝাড় খেয়েছে কিংবা হয়তো পিঁপড়েনি পাত্তা দেয়নি....জানিনা, মন ভালো হলে, যদি গল্প শোনায় শোনাবো আবার। তবতককে লিয়ে বিল্বপত্র কে মনে আছে তো আর গুটুলকে? মনে না থাকলেও সমস্যা নেই, লিংক পেলে দিয়ে দেবো কমেন্টে। তার একটা গল্প দিলাম

****************************
বিল্বপত্র আর গুটুলের বন্ধুত্ব বেশ কিছুদিন হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে গুটুলকে সাঁই করে বিরাট লম্বা কোনো বিল্ডিংএর টঙে উঠিয়ে নিয়ে যায় বিল্বপত্র। কার্নিশে আরাম করে বসে গুটুলের আনা আইস্ক্রীম খায় দুজনে। এমনিতে গুটুল খুবই ভীতু, এত বড় বাড়ির ছাদের কার্ণিশে বসা তো তো দূর ভাবতে গেলেই সে অজ্ঞান হয়ে যাবে, নেহাত ভুতুড়ে শক্তি ছিলো তাই। ওদিকে ভূতেরা আবার এই সব কাবাব, তন্দুরি এসবের স্বাদ জানে না, লুচি সন্দেশ যৎসামান্য জানে, আইস্ক্রীম জানেনা আবার। জানবে কি করে ভূত হয়, কিছু মরে বা দুজন ভূতের বিয়ে হয়ে বাচ্ছা হয়ে। তা কাবাব তো মুরগি ইত্যাদি মরেই হয়, তারা তাই আর ভূত হয়না, সোজা কাবাব জন্ম নেয়। তা দুজন বসে বসে খুব খানিক সুখ দুঃখের কথা হয়, বাড়িতে তো সব সময় পড়াশোনা করতে বলা, না খেলা ইত্যাদি তো আছেই। আজকাল গুটুলকে ভূত বলে আর বিল্বপত্র কে মানুষ বললে ওরা রেগে যাচ্ছেনা তাই ওদের বাবা মা দের রাগ বেড়ে যাচ্ছে। একথা কে না জানে, কাউকে রাগানোর সহজ উপায় তার রাগের কথায় রাগ না করা। মারামারিও হয় মাঝে মাঝে, ভূত ভালো না মানুষ সে নিয়ে। কিন্তু সে নেহাতি মাঝে মাঝে, ঝগড়া হয় মারামারি হয় আবার ফের দুজন গলায়গলায় হয়ে খেলে গল্প করে নানান রকম জিনিস নিয়ে পরীক্ষা করে। এই যেমন মশাদের শীত করে কিনা এটা তো খুবই দরকারী প্রশ্ন।

বিল্বপত্রদের পাড়ায় খুব একটা মশা ভূত নেই। ওরা মশাভূতদের আলাদা একটা জায়গা করে দিয়েছে আর সেখানে একটা জায়ান্ট স্ক্রীনে সব সময় কার্টুন চলে, এক্স বক্স আছে গেমস এর জন্য। আর খাবার দাবার হিসেবে রক্তের বদলে কচুপাতার রস এর ব্যাবস্থা করা আছে। কার্টুন আর গেমসে ডুবে থাকায় মশা ভূতেরা খেয়ালই করেনা কচুপাতার রস খাচ্ছে না রক্ত। ফলে ভূতেদের মশার বিনবিন সইতে হয়না। কিন্তু গুটুল কে করতে হয় আর বেঁচে থাকা অবস্থায় মশা গুলো অমন ভদ্র মোটেও না, কচুপাতার রস ছুঁয়েও দেখবে না। যাই হোক তা সেদিন তারা দেখতে চাইছিলো মশার শীত করে কিনা। তা পরীক্ষা করতে গেলে একটু আশেপাশে বাবা মা দাদা দিদিদের সাহায্য লাগে। গুটুলের বাড়ির লোক এসব যুগান্তকারী জিনিস তো বুঝবেই না উলটে বিল্বপত্রকে দেখতে না পেয়ে ভাব্বে গুটুল বেশি কার্টুন দেখে দেখে হয়ত পাগল হয়ে গেছে। ধরে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে নয়ত অংক করতে বসিয়ে দেবে। তাই সেদিন রাত্তিরে সবাই ঘুমানোর পর একটা আইস কিউব বের করে গ্লাসে নিয়ে, কয়েলের ধোঁয়ার নেতিয়ে পরা সন্ধ্যেবেলা ধরে রাখা মশাটাকে যেটাকে সে না মেরে রেখে দিয়েছিলো সে মশাটার সাথে রাখলো। দেখা যাক সর্দি লাগে কিনা, হাঁচি হয় কিনা। তা সাথে সাথে তো হবে না এদিকে বরফ হলে জল হয়ে গেলে মশা আবার জলে ডুবে মরবে। উপায়? গ্লাসের উপর একটা ছাঁকনিতে আইস কিউব আর তার পাশে একটা কাগজের টুকরোয় মশাটা রেখে দিলো। আইস কিউবে শোয়ালে এম্নিই মরে যাবে, মর্গ এ এভাবেই মানুষ কে রাখে গুটুল দেখেছে টিভিতে। তা এই সব ব্যবস্থা করে গ্লাসটা খাটের তলায় রেখে দিয়েছিলো। বিল্বপত্রকে বলা ছিলো খেয়াল রাখতে। তা রাতে কোনো ঝামেলা হয়নি, মশাটা খুব বেশী জ্বালায়ওনি। সক্কালবেলা গৌরীমাসী ঘর মুছতে গিয়ে নিজেই না দেখে সব উল্টালো, গ্লাস ভাঙলো উলটে এমন চেঁচামেচি করলো যেন সব দোষ গুটুলের। গুটুলের নাকি যত আজেবাজে দিকে বুদ্দি, ও নাকি বড় হয়ে গরু হবে, নাহলে চা এর দোকানের বয় হবে। হবে তো হবে গরু হওয়া কি এমন খারাপ, ঘাস খেতে খারাপ অবশ্য কিন্তু পড়াশোনা করতে হয়না কেমন, বকুনি দেয় না কেউ। আর চায়ের দোকানের বয় হলে তো সবচে ভালো, যত ইচ্ছে চা খাওয়া যাবে, মা তো ওকে খালি এক ফোঁটা চা দেয় তাও এক কাপ দুধের মধ্যে। সেদিন বিকেলে খেলতে যাচ্ছি বলে বেরিয়ে একটা গাছের ডালে শুয়ে শুয়ে বিল্বপত্রের সাথে এই সব দুঃখের কথাই হচ্ছিলো। 'নাহঃ এ পরাধীন জীবন আর ভাল্লাগেনা, চল বিল্বপত্র পালিয়ে যাই যাবি? '

তা বিল্বপত্রও খুব ভালো নেই, ভূতের মতো ভূত হতে হবে সারাক্ষণ এ নিয়ে শুনতে শুনতে ও বিরক্ত। কি হবে ভালো ভূত হয়ে? মানুষদের মধ্যে লড়াই লাগাতে হবে, নইলে ভুল বিশ্বাস চালিয়ে দিতে হবে এই তো? সব মানুষ কি খারাপ? যদি লড়াই এ তার বন্ধু গুটুলও মারা যায়? না না সে খুব খারাপ হবে, মরে গেলেই তো আর ভূত হবেই এমন নিশ্চয়তা নেই, তাছাড়া ওদের অঞ্চলেই আসবে তারও মানে নেই। হতেই পারে গুটুল মরে গিয়ে কোন দূর পাহাড়ের নীল ঘাসফুল হলো তাহলে সে কার সাথে খেলবে কার সাথে গল্প করবে কার থেকে গল্প শুনবে। না না লড়াই ভালো না, সে ভালো ভূত হতে চায়না।
বিল্বপত্র এসব ভাবতে ভাবতে একটু অন্যমনস্ক হয়ে গেছিলো। 
'কিরে যাবিনা' - গুটুলের কথায় চমক ভাঙলো। 'হ্যাঁ রে যাবো, চল চলেই যাই। কোথায় যাওয়া যায় বলত? আমার ইচ্ছে বেশ মানস সরোবর যাবো, নীল জল আছে শুনেছি, যাবি'?
'মানস সরোবর? কোথায় সেটা? তিব্বতে হলে সোজা আমি বইতে পড়েছি, রাণাঘাট তারপরেই তিব্বত। চল কালকেই যাই।'
ব্যাস যাই মানে যাই। নেবার মতো অনেক জিনিস আছে বটে কিন্তু সব নিয়ে তো আর পালানো যায় না, তাই গুটুল একটা কাগজ কাটার ছুরি, জলের বোতল, আর জমানো একশো টাকা নিয়ে বেরিয়ে পরলো। বিল্বপত্র মানুষ এর মতো সেজে থাকে যাতে বেশী কথা না ওঠে। আসলে অদৃশ্য হওয়া অবস্থায় গুটুলের সাথে গল্প করলে আবার লোকের মাথা খারাপ হবার জোগার হবে কিনা। সত্যি বলতে কি গুটুলের একটু একটু মন খারাপ করছিলো মায়ের জন্য কিন্তু নাহ এই ভাবে সে আর থাকবে না। ঘুরে বেরিয়েই দিন কাটাবে। বিল্বপত্র ভাবছিলো তাকে না দেখে বাকি ভূতেদের কি অবস্থা হবে। আসলে ভূতেরা ভারী নিয়মনিষ্ঠ হয়, খুব নিয়ম মেনে চলে বলেই মাঝে মাঝে কোনো কোনো মানুষ এর সাথে ভূতেদের গোলমাল হয়ে যায়। তাই কাউকে কিছু না বলে এরকম নেই হয়ে যাওয়াটা ভূত সমাজে আলোড়ন ফেলবে। ভেবেই বিল্বপত্রের হাসি পাচ্ছিলো। 
-হ্যাঁ রে কোন ট্রেনে উঠবো? নাকি হেঁটে হেঁটেই যাবো? 
- চল না ওই যে ঝিলটা দেখেছিলাম না সেই যে রে সেবার তোকে নিয়ে গেলাম বট গাছের ডালে, মনে পড়েছে? ওই ঝিলের ধারে যাই চল। ওখানে বটগাছকাকাকে জিজ্ঞেস করে দেখা যাবে। কিছু জানে কিনা।
দুজন হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছলো। গুটুলের এর মধ্যেই খিদে পেয়ে গেছে। 
- হ্যাঁ রে এই পুকুর থেকে একটা মাছ ধরতে পারবি না তুই?
- না রে ধরতে পারবো না, তবে তুই ধরলে আমি গ্রিল্ড ফিশ বানাবার ব্যাবস্থা করে দিতে পারি। 
- কেন ভূতেদের মাছ ধরা মানা? 
আহা তা না, কিন্তু জানিসই তো ভূতেরা খালি মাছ ভূতই ধরতে পারে, তুই কি আর মাছ ভূত খাবি? উদাস মুখে একটা কলকে ফুলের মধু খেতে খেতে বলল বিল্বপত্র।
'হ্যাঁ হ্যাঁ তোর যত্ত বাহানা, আসলে ঘেঁচুর মাথা পারিস তুই।' খিদেতে গুটুলের মেজাজ ভয়ানক খারাপ হয়ে গেছে তখন। লড়াই এবার লাগলো প্রায়। কিন্তু বিল্বপত্র খুবই ঠান্ডা খুলির ভূত। এদ্দিনের বন্ধুত্ব তো, ও জানে গুটুল একটু পরে নিজেই সরি বলবে শুধুশুধু রাগমাগ করার জন্য। সত্যিই বিল্বপত্র কিই বা করতে পারে, ভূতেরা যদি নিজেদের ইচ্ছেমতো জ্যান্ত মানুষ, প্রাণী, জিনিস ভূত সমাজে আনতে পারতো তাহলে তো ওর গুটুলের সাথে বন্ধুত্ব হবার সেই ঘটনাটাই ঘটতো না।

গুটুল আরো খানিক রাগ করে চেঁচিয়ে নিলো। আসলে খিদে পেলে ও আর কিচ্ছু ভাবতে পারেনা, বাড়ি থেকে চলে আসাটাও মনে হচ্ছে ভুলই করেছে। শেষে খানিক থুম হয়ে বসে একটু জল টল খেয়ে মাথা ঠান্ডা হলো। 
-অ্যাইই বিল্বপত্র, সরি রে আসলে খিদে পেয়েছিলো কিনা খুব। প্লিজ রাগ করিসনা ভাই, আচ্ছা, তোকে আমার রিমোট কন্ট্রোল্ড হেলিকপ্টারটা দিয়ে দেবো। 
-নাহ আমার চাইনা, তুই নে তোর হেলিকপ্টার, আর চল ফিরে যাই, তুই তোর বাড়ি আমি আমার।
-রাগ করিস না রে আর, সত্যিই খুব খিদে পেয়েছে।
-হুঁ আমারো কি আর পায়নি, তাই বলেই তো আর আমি অমন করিনি।
-ভুল হয়ে গেছে ভাই, আর রাগ করিস না। জিজ্ঞেস করনা রে বটকাকাকে কিভাবে যাবো সেসব। 
-হুঁ, জিজ্ঞেস করে নিই দাঁড়া। ও বটকাকা, আমরা মানস সরোবর যাবো। ওখানে নীল পদ্ম ফোটে, সাদা সাদা হাঁস চড়ে বেড়ায়, কস্তুরী হরিণের গন্ধ ভেসে আসে, আমরা ওখানে যাবো। আমাদের এখানে কেউ ভালোবাসেনা, কেউ বোঝে না, ও বটদাদা আমাদের রাস্তাটা বলে দেবে প্লিজ? এই যে আমার বন্ধু গুটুল, ও গুগল করে দেখতে গেছিলো কিন্তু সে ভারী ভজঘট ব্যাপার তুমি সোজা রাস্তা বলে দাও না বটদাদা।

খুব খানিক থম মেরে রইলো চারদিক প্রথমে। তারপর বট হাওয়া হয়ে ওদের দুজনের গায়ে মাথায় বুলিয়ে গেলো, বলল 'যাওয়া তো অনেক ভাবেই যায়,চলতে শুরু করলেই পথ তৈরী হয়ে যায়। বিল্বপত্র ভেসে ভেসেই যেতে পারিস, কিন্তু তাহলে গুটুল যেতে পারবে না, আর দুজন একসাথে যেতে গেলে সহজে যেতে পারবিনা।' 
গুটুল বিল্বপত্র একসাথে বলে উঠলো না বটদাদা আমরা একসাথে যেতে চাই। তা সে যত কষ্ট হোক। 
ফের বটের ঠান্ডা পরশ ভেসে এলো। 'বেশ, তাহলে শোন কঠিন পথ চলতে যাওয়ার আগে নিজেদের তৈরী হতে হতে হয়। এই ধর আমি এতদিন ধরে রয়েছি তা কি এমনি? এই যে আমার শিকড় এতো দূর ছড়িয়ে গেছে এরাই আমায় ধরে রেখেছে। কিন্তু শিকড়টা তো ছড়াতে হয়েছে নাকি? এখন তোদের নিজেদের মধ্যে, পরিবারের মধ্যে শিকড় ছড়ানোর সময়, প্রস্তুতির সময়। নীল পদ্ম, কস্তুরির গন্ধ, সাদা হাঁস, সব তোলা থাকবে। তাছাড়া কি জানিস তো তোদের দেখতে না পেয়ে তোদের বাপ মা এরও কষ্ট হচ্ছে কিন্তু। বড়রা তো বোকা হয় জানিসই, এম্নিতে তোদের অমন করলে কি হবে তোদের না দেখে অস্থির হয়ে পড়েছে এদিকে। তোরা ফিরলে মার খাবি হয়ত কিন্তু এই দেখ আমি দেখাচ্ছি কিরকম কান্নাকাটি করছে সব। 
বটের গায়ে ছবি ফুটে উঠলো, গুটুলের বাবার উদভ্রান্তের মতো অবস্থা, মা এর চোখ কেঁদে কেঁদে ফুলে গেছে। বিল্বপথের বাবার চকচকে সাদা মাথায় কালো কালো চুলের ছাপ দেখা যাচ্ছে, ওর মা এর চোখের লালচে ভাবটা কমে গেছে একদিনে কেমন ফ্যাকাসে মার্কা দেখতে হয়েছে বদলে। দুজনেরই বুকের মধ্যে পাক দিলো। বাড়িতে ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে এক্ষুনি। বটগাছ মুচকি হেসে ছবি বন্ধ করে বলল, যা বললাম মনে রাখিস। ফিরে মার খেলেই এদের বোকামিটা টের পাবি, যারা ভালোবাসাই বোঝাতে পারেনা তাদের উপর রাগ করে আর কি করবি, যা আমি তোদের খেয়াল রাখবো। তোদের মানস সরোবারের ব্যবস্থা ঠিক হবে।

বট কি করে খেয়াল রাখবে তা আর গুটুল জিজ্ঞেস করেনি, ওকে বিল্বপত্র এসব আগেই বলে দিয়েছে, গাছেদের সুপার নেটওয়ার্ক এর কথা। আশেপাশের গাছেরা রিলে করে খবর নিয়ে খবর পাঠাবে। বাড়ির দিকে পা চালালো দ্রুত দুজনে। গুটুলের বাড়ির কাছাকাছি এসে বিল্বপত্র নিজের বাড়ির দিকে গেলো।
ফিরে অবশ্য খুব মার খায়নি, অল্পই বলা যায় সে গুটুল বা বিল্বপত্র কেউই পাত্তা দেয়নি। ওরা বুকের মধ্যে খানিক জায়গা করে নীল পদ্মের গাছ বসিয়েছে, মানস সরোবর যাবার আগে অব্দি ওগুলো ওদের সাথে থাকবে, শিকড় গজিয়ে শক্তপোক্ত হয়েই যাবে ওরা একদিন। যাবেই।

Friday, February 16, 2018

একদিন দলবেঁধে কজনে মিলে

ঠান্ডা পাথরটায় চিৎ হয়ে শুয়েছিলাম। পাহাড়ের নীচের স্পিকারের আওয়াজ এখানে পৌঁছয়না। পাখির ডাক, হাওয়ার শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। শাল একটু গম্ভীর গাছ তাই বেশী কথা বলে না এ জঙ্গল। শুশুনিয়া পাহাড়ের চড়াই খুব বেশী হয়তো না, ফিট লোকেদের কাছে, কিন্তু অনভ্যস্ত শরীর ঘামে ভেজা, পাথরের ঠান্ডাতে, গাছের হাওয়ায় ভালো লাগা ছড়াচ্ছে শরীর জুড়ে।



শুশুনিয়া এতো কাছে তবু যাওয়া হয়নি এতোদিনেও। সুতরাং চল যাওয়া যাক। দল তৈরী হলো এরকম, আমি আমার এক বন্ধু, আমার বন্ধুর এক বন্ধু, বন্ধুর বন্ধুর বন্ধু। বসুধৈব কুটুম্বকম। কে কার পূর্বপরিচিত তার দিয়ে কাজ কি, সাত পা এক সাথে হাঁটলেই তো বন্ধু হয়ে যায় সেখানে একসাথে এতোটা রাস্তা যাবো। অবশ্য সত্যি বলতে আমি এতো কিছু ভাবিইনি, এই বন্ধুর বন্ধু দলটায় এক মাত্র একজনই মেয়ে যাচ্ছে, তার একটু ইয়ে ভাব তো হবেই স্বাভাবিক। আর আমাদের দেশে দুজন ছেলে মেয়ে, প্রেমিক প্রেমিকা ছাড়া অন্য কোনো সম্পর্ক হতে পারে এমন ভাবতেই হোঁচট খায় যেখানে সেখানে তিন তিন খানা ছেলে ও একখানা মেয়ে, তায় আবার সে কারোর প্রেমিকা না স্রেফ বন্ধু। যাক সে সব বাধা অতিক্রম করে আমরা চার জন প্ল্যান করা শুরু করলাম।



বেড়ানো দুরকম হয়, হুট করে আর প্ল্যান করে। আমি দুরকমই ভালোবাসি যদি না আমায় কিছু দায়িত্ব নিয়ে কাজ কম্মো করতে হয়। মানে হোটেল বুক, হ্যানা ত্যানা। তা সৌভাগ্য ক্রমে দলে দু দুখানা দায়িত্ববান ও দায়িত্ববতী পাওয়া গেছে। অমিতা হোটেল বুক করেছে প্রিন্ট আউট নিয়েছে, জলের বোতল নিয়েছে(দুটো নিয়েছে, আমি যথারীতি নিইনি), কেক বিস্কুট নিয়েছে, এমনকি সকালে চান অব্দি করে বেরিয়েছে। ওদিকে আমাদের সৌরভও কম যায় না, হ্যান্ডস্যানিটাইজার থেকে ফ্লাস্কে কফি সব নিয়েছে। আমি ড্রাইভার, তাই গাড়ীতে তেল ভরা আর হাওয়া চেক করার কাজটা করেছি। সাতটায় শুরু করার কথা, তা শুরুতেই বাবু শ্রীল শ্রীযুক্ত অমিতেশ দেরী করলেন। চা বিস্কুট খাওয়া হয়ে গেলো দু রাউন্ড রাস্তায় দাঁড়িয়ে, তারপর উনি গার্ল্ফ্রেন্ড কাঁধে মানে ইয়ে ওনার ডিএসএলার কাঁধে এলেন।



আমি পথে বিশ্বাসী, গন্তব্য তো আছেই কিন্তু যে পথ দিয়ে চললাম তাকে উপেক্ষা করে না। আর গাড়ি চালাতেও ভালোবাসি। ন্যাশনাল হাইওয়ে ধরে আমার বাহন আড়মোড়া ভেঙে ছুটছে, স্পীড বাড়ছে কমছে, সামনে ট্রাক, দুধারে গাছ কাটিয়ে এগোচ্ছে, রাস্তা পুরো মাখন। শক্তিগড়ের ল্যাংচা নাকি ভয়ানক খারাপ আসলে, মানে কোয়ালিটিতে, বাসী মাল দেয় ইত্যাদি কিন্তু তাও আমরা নিজের মুখে ঝাল থুড়ি মিষ্টি খেতেই পছন্দ করি কিনা তাই শক্তিগড়ে জমিয়ে খেলাম। সত্যি বলতে কি আমাদের ভালোই লেগেছে।



ইয়ুথ হস্টেলে গাড়ি রেখে, ঝটাপট প্ল্যান করে নেওয়া গেলো। রুমে ঢোকার দরকার নেই, খেয়ে সোজা পাহাড়ে ওঠা যাবে। আমি খেয়ে পাহাড় চড়ার থেকে বিছানা বালিশে ধ্যান করতে পছন্দ করবো বেশী জানি তাই স্রেফ মাছ ভাজার উপর রইলাম। আলুপোস্তটা ব্যাপক করেছিলো তাও খাইনি। বাকি তিনটে আমার কথা শুনলো না, 'যা যা তুই খেতে পারিস না তাই অমন করছিস।' আচ্ছারে ব্যাটা, বেশ বুঝবি। দুধারে সারা বছরের মেলা বসেছে। খাজা, জিলিপি, আলুর চপ, চা, পাথর খোদাই করে তৈরী জিনিস হরেকমাল। এসব কাটিয়ে এগোতেই, দেখি ভাঙাচোরা খাড়াই রাস্তা উঠে গেছে পাহাড়ে। ধুলো খুব। সেই খাড়াই খানিক ভাঙার পরেই, অমিতা আর অমিতেশ হাত তুলে দিলো। যা ভাই তোরা যা আমরা এখানেই পাহাড় এর ফিল নিই।







সৌরভ আর আমি হুহুমনা হুহুমনা করে চল্লুম। রাস্তায় দেখি একটা শুঁড়িপথ জঙ্গলে ঢুকে গেছে, নীচে পাহাড়ের স্পিকারের আওয়াজ, লোকজনের ক্যালোরব্যালোর এড়িয়ে আমরা জঙ্গল এর শান্ত চাইছিলাম, তাই অমোঘ আকর্ষনে দুজনে মূল রাস্তা ছেড়ে এগিয়ে গেলাম। বেশীদূর যেতে হলো না, যে পাখির ডাক এতোক্ষণ শুনিনি সেই পাখির আওয়াজ (খুব কম তাও আছে )। খানিক্ষন চুপ করে বসে থেকে আবার মূল রাস্তায় ফিরে পাহাড় চড়া, খাড়া   পাহাড়, আনফিট শরীর, রোদে ঘেমে, লেবু জল খেয়ে খেয়ে যখন বড়চূড়াটা পৌঁছলাম সে অদ্ভুত ভালোলাগা।চিৎপাত হয়ে শুয়ে শুয়ে যখন মন শরীর দুইই চাঙ্গা হয়ে গেলো আমরা রোদপড়া বিকেলে নামতে লাগলাম। এদিকে খুব বেশী লোক আসেনি, ছোট চূড়াটা অব্দিই লোকে পৌঁছেছে। তাই রাস্তাঘাট ফাঁকা। আশেপাশে প্রচুর বিন বানানো আছে তাও লোকে রাস্তায় প্লাস্টিক, প্যাকেট ফেলে গেছে। আমাদের স্বভাব! ভালো রাখবোনা আমাদের চারপাশ! হলুদ আলোয় চারপাশটা ভারী বড় সুন্দর লাগছে। এই আলোকে বলে কনে দেখা আলো, আচ্ছা গাছেরা কনে দেখা আলোয় কনে গাছ দেখে? ওদের হয়তো, প্রপোজ করতে গেলে হাওয়া দিয়ে ভাসিয়ে দিতে হয়। ও ছোট শাল গাছ তুমি আমার গাছিনী হবে?






অন্ধকার দেখতে হলে গ্রামে আসতে হয়। ইয়ুথ হস্টেলের বাইরের রাস্তায় চা খেতে বেরিয়ে দেখি চারজনের টর্চ জ্বেলেও খুব বেশী কিছু চোখে পড়ছে না। দুপাশে শালের জঙ্গল, অন্ধকার রাস্তা, চারটে ছেলে মেয়ে অন্ধকার ভেঙ্গে হাহাহিহি করতে করতে চলেছে। শালগাছেদের সাথে ভাব জমেনি তেমন, তাই তারা আমাদের ফাজলামিতে আমোদ পাচ্ছিলো না বিরক্ত হচ্ছিলো বুঝিনি। অন্ধকার রাস্তায় আমরা অবশ্য এসব দর্শন না আমরা চলেছিলাম একে অন্যের ঠ্যাং টানতে টানতে।


ইয়ুথ হস্টেলের বাথরুম বর্ষার কলেজস্ট্রীট। বাথ্রুমে কেউ গেলো মানে সে জলমগ্ন হয়ে পড়ে। একটা কম্বল চাপা দিয়ে শুতে শুতে অমিতেশের আপশোষ শোনা গেলো, এহ একটা ক্রেট তুলে আনা উচিৎ ছিলো মাইরি। সকালে গীজার দেখি কাজ করছে না, সুতরাং ডিওই ভরসা। এই জানুয়ারিরর ঠান্ডায় পুরুলিয়ার হেদুয়া বাথ্রুমে স্নান করার কোনো ইচ্ছে নেই। অমিতাকে না বললেই হলো, কাঁইকিচির লাগাবে, বনমানুষ ইত্যাদি বলে।



সকালগুলো ভারী সুন্দর হয় কিন্তু এসব দিকে। শীতের রোদ মাখা নরম পাকের সকাল, ইতিউতি পাখি ডাকছে। এক চক্কর হেঁটে ফিরে জয়চন্ডীর দিকে যাচ্ছি হঠাৎ ফাঁকা জঙ্গুলে রাস্তায় হঠাৎ দেখি গুড়ের জ্বাল দিচ্ছে। কাল থেকে খেজুর গুড় করে করে পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। এমন মাটি ফুঁড়ে সে মিলবে কে ভেবেছিলো। একটা টিনের ছাউনিতে লোকটা থাকে, আজ সংক্রান্তি, তাই এক বুড়ি এসেছে খালি বোতল হাতে, দর কষাকষি চলছে। আমাদের অনেকটা করে গুড় খেতে দিলো, বোতল নেই শুনে জায়গা মেজে দিলো। তারপর খেজুর রস খাবো বলে গাছ থেকে হাঁড়ি নামিয়ে দিলো। রস জমেনি বেশী। সকালেই সবটা নিয়ে গুড় জ্বাল দিতে বসে গেছে। তাও যেটুকু ছিলো দিয়ে দিলো। 


আমি আগেও বলেছি না? আমাদের চারপাশে ভালো লোক বেশী, কাগজে যাই লেখা থাক না কেন। এই যে কাল আমরা যখন রাস্তা খুঁজছি, মাইলস্টোনে ভরসা রাখা যাচ্ছে না, জিপিসেও না তখন একজন "না না ওদিকে রাস্তা ভালো না, এদিকে ভালো" এসব বলে যে ডিরেকশন দিলো কি দায়?




জয়চণ্ডী পাহাড়ে একটা ছেলে পাকামো মেরে একটা খাড়া পাথরে চড়ে বসেছে। আর নামতে পারছে না ব্যাটা। তার বাড়ির লোকে উৎকণ্ঠিত হয়ে দেখছে, অবশেষে একজন হাত বাড়ালো, সে হাঁচোরপাঁচোর করে নেমে এলো। আমরাও হাঁফ ছাড়লাম, ওখান থেকে পড়লে আর দেখতে হতো না।




গড়পঞ্চকোট ঘুরে আমরা ফিরতি পথে আর শোভা দেখতে দেখতে না, হোটেল দেখতে দেখতে আসছি। কিছুই পছন্দ হয় না শেষ অব্দি হাইওয়েতে ধাবায় খাবো ঠিক হলো। খেয়েই কেসটা খেলাম।
ঘুম পাচ্ছে বেজায়। কোনো গানই আর ভালো লাগছে না। বাকিরা (অমিতেশ বাদে, সে ব্যাটা ঘুমোচ্ছে) চেষ্টা করছে পছন্দের কোনো গান চালাতে, সৌরভ হলো জিপিএস কিং, সে জিপিএস এর বাইরে অন্য কিছুকে ভারী ইয়ের চোখে দেখে সেও দেখি জিপিএস ছেড়ে ঘুম দেবার ফিকির ভাঁজছে। ক্রমে সূর্যদেব আপিসের কাজ সেরে ফেসবুক করতে গেলেন, আমরা শক্তিগড় পৌঁছলাম।




জানিনা কী যে গেরো চা এ লেগেছে যা চা খাচ্ছি তাইই খারাপ। অমিতেশ কফি খাবে আমরা চা, তাতে লোকটা চাফি বানিয়ে দিলো!! রাগের চোটে গড়গড় করতে করতে মিষ্টিই খেয়ে নিলাম গোটা কতক। যদিও দুপুরের রুটি মাংস পেটে তাঁবু গেড়ে বসেছে তাও।


রাতের বেলা গাড়ি চালানোর আলাদা রকম ব্যাপার। পুরো ফোকাসটা দিতে হয় রাস্তায়, গাড়িতে। চারদিকে ঘোঁত ঘোঁত করে গাড়ি ছুটবে তারমধ্যে বিচলিত না হয়ে গাড়ি চালাতে হবে। তবে গাড়িতে ইয়ার্কি মেরে উড়িয়ে দেবার বন্ধু বান্ধব থাকলে সে চ্যালেঞ্জ মজার, সব চ্যালেঞ্জ এর মতোই। গান, ইয়ার্কি, হাসি, আর হুশ হাশ করে পেরিয়ে যাওয়া বিপজ্জনক গাড়ির মাঝে.....এমনি করেই যায় যদি দিন যাক না ।









Thursday, February 1, 2018

এ শহরে, আনাচে কানাচে

লিফটটা নীচে ছিলো, আমি ঢুকে দেখি দুটো ছেলে এক মনে টাইপ করছে মাথা নিচু করে অথচ কোনো ফ্লোরই সিলেক্ট করেনি! আমি তিন দিলাম। তাদের কোনো হেলদোল নেই, হয়ত তিনেই যাবে। তিনে নেমে দেখি তারাও নামলো, নামার পর হোয়াটস্যাপ গ্রুপে দেখি কলটা ক্যানসেল হয়ে গেছে। এই এই হোয়াটস্যাপ হয়েছে মাইরি, অফিস এর লোকজন এটাকেই অফিস বানিয়ে দিয়েছে। রিড রিসিপ্ট অফ করেছি, কাল জানলাম গ্রুপে তাতে কোনো ফরক পড়ে না। জানাই যায়, কে পড়েছে কে পড়েনি।  যন্ত্রণা মশাই।
ফের লিফটলবিতে এসে দেখি সে দু মক্কেল এক জন  উপরে যাবার আরেকজন নীচে যাবার বোতাম টিপে দাঁড়িয়ে, আবার ফোনে ব্যস্ত। বোঝো! এনারা একজন চারে যাবেন আরেকজন দুই বা একে আর চ্যাটের নেশায় ভুলেই গেছেন।

দিনের সব চেয়ে কোন সময়টা ভালো লাগে? আমার অফিসের দিনে দুপুরের সময়টা, আর ছুটির দিনে সকালবেলাটা। আলসে মানুষ কিনা আমি। আজকাল লাঞ্চ স্কিপ করি, ওই সময়টা নিজের মতো ঘুরে বেড়াই। লাঞ্চ করলে ঘোরা যায় না, কিন্তু ঘুরলে পাঁচ মিনিট দাঁড়িয়ে পেয়ারা মাখা, কি চা আর কাচের বয়ামে রাখা লম্বু বা খাস্তা বিস্কুট দিব্যি খাওয়া যায়।  নিউটাউনে আজকাল সাইকেল ভাড়া পাওয়া যায়। সাইকেল চালিয়ে প্রেম করে লোকজন মলয় বাতাসে কিংবা ব্যায়াম, আমি ধুলোভরা রাস্তায় লোক,  ভেড়ির জলে মাছরাঙা, চকচকে পিচঢালা ফাঁকা রাস্তা এই সব দেখে বেড়াই।

অফিসের বাইরে দাঁড়িয়ে বড় বড় মিষ্টি নারকেলি কুল খাচ্ছি দেখি এক মক্কেল পেল্লায় বিপদে পড়েছে। ক্লায়েন্ট এসেছে। সে সাহেব তো নানান প্রশ্ন করছে তাকে, ঝুপ্স দেখে বিমোহিত সে, হর্ণের শব্দে হাঁ, এরই মাঝে আশে পাশে সকলে মজা করে পেয়ারা মাখা খাচ্ছে আর ওই ছোকরাকে, নিঁভাজ শার্ট পেন্টুল পরে, হাতা না গুটিয়ে বিদেশী কায়দায় ইংরেজি বলতে হচ্ছে, বাইরে ফেসবুকিয় কায়দায় "দেখেছ ক্যায়সা লাট হ্যায় হাম" মুখ কিন্তু মনে মনে ফাটছে সে পস্ট বোঝা যায়।

ইউনিটেক এর মোড় পেরোতেই রাস্তা ক্রমে ফাঁকা, এক দুটো গাড়ি ধুলো ছিটিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। রবিরশ্মি নামের একটা লাল বাড়ির কম্পলেক্স, কারা থাকে? কাঁটাঝোপ, বাবলা গাছ গাছড়া পেরোলে নার্সারি। দুপুর বেলার রোদে লোক নেই তেমন। বড় সড় যে কম্পলেক্সগুলো,  কারা যেন রয়েছে। যাক এখানে তবু লোক থাকে, ইডেন কোর্টটা দেখলে মনে হয় যেন ঘন্টা হিসেবে কাটাতেই লোক আসে। একোয়াটিকার আগে একটা ঝুপড়িতে হাম হাম করে টুয়েলভ সি বাই টু এর ড্রাইভার খালাসীরা ভাত মাছের ঝোল খাচ্ছে। আমার পিঠটা ঘেমে উঠছে ক্রমে। টাইম হিসেব করে দেখলাম এবার ফিরতে হবে। চা চা করছে মনটা। এ দিকে এতোই লোক কম দুপুরে চা ওলারা চা বানায়ই না।

ফিরতি পথে সিগ্ন্যালে দাঁড়িয়ে আছি, এক বাইকওলা  আমায় জিজ্ঞেস করলো, এইসব সাইকেল আমাদের কোম্পানি থেকে দেয় কিনা। বললাম না ভাড়া নিতে হয়। বলে নিলে কি হয়?" এই সাইকেল চালানো যায়"। 
- ব্যাস খালি এমনি এমনি চালানো?
মানে অ একটা ওই পাহাড়ে উঠে কি লাভ যখন নেমেই আসতে হয়!

সন্ধ্যেবেলা চা খেতে নেমে দেখি নিটোল একটা চাঁদ উঠেছে। অফিসের এতো আলোয় কিচ্ছু দেখা যায়না। সাইকেল গুলো তখনো আছে। ফের একখান সাইকেল নিয়ে ডিএলেফটু এর পাশ দিয়ে,  খালের দাহার ধরে নেশাগ্রস্তের মতো চালালা। ভেড়ীটা দূর আছে কিন্তু এই মায়া মায়া চাঁদের আলোয় ওখানে না পৌঁছতে পারলে হবে না মনে হচ্ছে যেন।  পাহাড়ে বসে চাঁদের আলোয় জ্যোৎস্না মাখা হয়না কতকাল, ভেড়ির আলোয় হোক।

অনেক অনেক্ষণ পর ফিরে দেখি অফিস ফাঁকা, বেশীরভাগ বেরিয়ে গেছে। ম্যালা কাজ জমে আছে, ঘাড় গুঁজে কাজ শেষ করতে আর কষ্ট হলো না, চাঁদের আলোয় মাখা ভেড়ির জল তেষ্টা মিটিয়ে দিয়েছে আজ....