Sunday, March 26, 2017

রাস্তায়- কোলকাতায়

শনিবারের সক্কালে সাতটায় ওঠা শুধু না চান করা এবং এক কাপ চা না পাওয়ার মত খারাপ খুব কম জিনিস আছে। এই সময় ক্যাটরিনা কাইফ প্রোপোজ করলেও না বলে দিতে ইচ্ছে হয়। তার মধ্যে হতভাগা জায়গাটার নাম পার্ক স্ট্রীট মানে আপনার মানিব্যাগ পার্ক করে দিন এরপর আপনাকে স্ট্রীটে বসতে হলো বলে! তা যাই হোক এট্টু চা খেয়ে ফেসবুকে ইতি উতি ঘুরতে ঘুরতে রেস্তোরাঁ খোলার সময় হয়েছে দেখে ঢুকতে গেলুম, হাতে একটা ঝাড়ন ধরিয়ে দিলো!! বলে, এত দেরী করে আসতে হয়, এক্ষুনি সব কাস্টমার চলে আসবে। মিনমিন করে আমায় কেন এসব... বলতে না বলতে দেখি বলে 'ওহ এলেন লাট সাহেব উনি ঝাঁড়পোছ করবেন না, বলি কাজ কে করবে তবে চাঁদ'। কি মনে করে আমার দিকে তাকালো ভালো করে ঝাড়বে বলেই বোধায়, তারপর একহাত জিভ বের করে সরি টরি বলে বিষম খেলো। নেহাত খিদে পেয়েছিলো আর জামাটা হাফ হাতা, আস্তিন গোটনো যায়না, নইলে হুহ।

চেলো কাবাব নামে না চালায় আসলে মাখম ভাত আর কাবাব, তাও ভালো কাবাব না ওর চে ভালো কাবাব আমার আপিসের ক্যাফেটেরিয়াতে পঁয়ষট্টি টাকায় দেয় মাঝে মাঝে। খিদের মুখে সব ভালো অবশ্য, আর কড়কড়ে অনেককটা টাকা গচ্চা গেলে আরো ভালো। সোনা মুখে খেয়ে মুখ মুছতে যাবো দেখি তামার ঘটিতেতুলসী সমেত গোলাপফুল বসানো। অর্থাৎ যা বিল আসবে তোমার অন্তিমদশা ঘনাতে পারে বইকি। ভালো, সবই মায়ার খেলা, রবীন্দ্রনাথ নিশ্চয়ই কখনো এখানে খেতে এসেছিলেন। 


মন্থর গতিতে সাড়ে তিন হাত জায়গা বুক করা যায় কিনা সে উদ্দেশ্যে টুকটুক করে এগোচ্ছি। মনে পেটে এমন বল না টুকটুক এর বদলে টকাটকা করে এগিয়ে যাবো। এদিকের কোলকাতা তো আজকাল আসা হয়না, পসরার তফাৎ বোঝা যায় বইকি। যেমন রাজারহাট, সল্টলেকে পেয়ারার সাথে কাসুন্দির ডিব্বা থাকবে। পেয়ারা ওদিকে কাসুন্দি দিয়ে মাখা দস্তুর। এদিকে শশা পেয়ারা পাশাপাশি স্রেফ নুনের কৌটো যোগে। বাদাম বিক্রী হচ্ছে ডিরেক্ট দাঁড়িপাল্লায় ফেলে এ জিনিসটাও অনেকদিন পর দেখলাম। একজন লোক দেখি কাগজ পেতে আরাম করে বসে কাগজ পড়ছে। কি বিক্রী করতে চায় কে জানে। একবার জিজ্ঞেস করব ভাবলাম, কিন্তু যদি কামড়ে দেয় আবার ইঞ্জেকশন ইত্যাদি থাকগে। অবশ্য সব পাগল এমন ন। কামড়াবেই, এই তো একটু আগে একটা ভাঙা বাড়ির ছবি তুলছিলাম, একজন এসে বলল কই আমার একটা তুলে দাও তো। দিলাম, দাড়ি গোঁফের ফাঁকে কি হাসি ব্যাটার। তারপর আবার দেখতেও চাইলো সে ছবি।

মল্লিক বাজারের দিকে এগোচ্ছি গানগাইতে গাইতে একজন বলল মাপ করো আগে যাও! ভগবান আজ আর কত কী হ্যাঁ আর কত কি? মনের দুঃখে চোখ বুজে এগিয়ে গেলাম। পার্ক স্ট্রীট সিমেট্রির আগে দেখি কতকগুলো লোক প্লাস্টিক থেকে ঝোল মাখা মাখা ভাত গপগপ করে খাচ্ছে। কেউ উবু হয়ে কেউ পিছন ফিরে কিন্তু সব্বাই দ্রুত গতিতে। আমাদের ওদিকটা ভীড়ভাট্টা খুব বেশী হলেও এরম গরীব কম বোধহয়, অন্তত আমার চোখে খুব একটা পড়েনি। বাগুইয়াটি কেষ্টপুর তেঘরিয়া ওদিককার সব গলি রাস্তায় ঘুরতাম এক সময় লুকিয়ে সিগারেট খাওয়ার জায়গা খুঁজতে, তবুও পড়েনি। একটু আগেই কতকগুলো সুগন্ধি ভাত ফেলে দিয়ে এসেছি, পেট ভরে গেছিলো বলে ইচ্ছে হচ্ছিলো না বলে। পেটের মধ্যেকার ভাতগুলোও বিদ্রোহ করছে যেন। পা চালিয়ে পার হও হে হ্যাপ্পি প্রিন্স , তুমি সত্যই খোকাবাবু।

সিমেট্রি তে বেজায় ভীড় মশাই, মানে একেবারে গায়ে গায়ে কবরও আছে দেখছি। ঘুরে ঘুরে একটা ঘাসের অংশ ফাঁকা দেখে বেশ খুশী হয়েছি, হ্যাঁ হ্যাঁ এইখানেও শুয়ে থাকবো বেশ। কি সুন্দর ঝিরিঝিরি হাওয়া দেবে, কংকালের মধ্যে দিয়ে সে হাওয়া সাঁত করে মরমে পশিয়া যাবে। এহঃ ছ্যাঃ কুত্তো না বিড়ালের ইয়ে। আমার সাধের সাড়ে তিন হাত। হতভাগাগুলোকে এই জন্য দু চোখে দেখতে পারিনা। ওদিকটা আবার জ্যান্ত মানুষের ভীড়। না না ঋকানন্দ সিদ্ধপুরুষ, যোগীপুরুষ না যে ঝাঁট জ্বলবে প্রেম করছে দেখলে কি চুমু খাচ্ছে দেখলে। কিন্তু সারাদিন এত বকমবকম করলে ঘুমাবো কখন হ্যাঁ? তার মধ্যে ওদিকে আজানের আওয়াজ ওদিকে গীর্জার টংটং বেঁচে থাকতে ফেসবুকে ধর্মের কচকচি আর বেঁচে গিয়ে সেই ধর্মের শব্দছায়ায় আশ্রয় নেওয়া পোষাবেনা মাইরি। যদিও ম্যালা গাছ আর কোকিল টোকিল আছে তাও




তো মিঁত্রো যবতক আচ্ছা জায়গা (বেশ অাক্সেসবল দূরত্বে রাবড়ি, মাটন বিরিয়ানি পাওয়া যাবে, গাছের ছায়া পাওয়া যাবে) না পাওয়া যাচ্ছে, খোঁজ জারী থাকবে আর রাবড়িও।

Wednesday, March 22, 2017

ভার্চুয়াল, রিয়েল

নতুন একটা রোগ বাজারে এলো বলে , মানে ডাক্তারদের সিলেবাস আপডেট করতে হলো বলে। ইন্টারনেটে নাম পাওয়া যায় অবশ্য এ রোগের কিন্তু সেই অর্থে সমস্যা বলে ডিক্লেয়ার্ড না বোধহয় । ফেসবুক অ্যাডিকশন সিন্ড্রোম । আমার যেটা হয়েছে।  খাই দাই  বগল বাজাই এর বদলে খাই দাই ফেসবুকাই। সারাদিন অনলাইন সারাদিন !! নিজের উপর বিরক্ত হয়ে গেলাম মশাই।  চোখ কন কন করছে মাথা ঝনঝন করছে তবু করছি।   কেন করছি? কারণ কি? অস্বাভাবিক কনসেনট্রেশন সমস্যা হয়ে গেছে।  একটানা কোনো কাজ করতে পারিনা , নেশার দাস বুঝতে পারি তবু কেন করে চলেছি ? এমন তো না আমার হাতে অঢেল সময় এসে গেছে বা হঠাৎ করে আমি দারুন লিখতে শুরু করেছি আর ফেসবুকে আমার পাঠক পাঠিকারা অপেক্ষা করছেন কখন আমি বাণী দেব।  আমি না গেলে ফেসবুকে কারো কিচ্ছু যাবে আসবে না ,এ সত্যি জেনেও , কারোর মতবাদে আমার কিচ্ছু যাবে আসবে না এ তথ্য অনুধাবন করেও কেন যাই ? উত্তরটা যাই হোক না কেন সমস্যাটা রয়েই যায় , আমি ফেসবুক ছাড়তে পারছি না।  এমন না আমি সারাক্ষণ যা খাচ্ছি যা পড়ছি তাই আপডেট দিচ্ছি কিন্তু সময়টা দিয়ে দিচ্ছি।  একটা গল্প পড়েছিলাম, একবার একজন আফশোষ করছে  যদি আর পাঁচ মিনিট আগের সময়টায় পৌঁছনো যেত তাহলে একটা বিরাট ডিল ফিক্স করা যেত , সেই সময় একজন হঠাৎ উদয় হয় বলে আমি তোমায় ওই সময় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারি কিন্তু তাতে তোমায় আমার তোমার আয়ু থেকে পাঁচ মিনিট দিয়ে দিতে হবে। লোকটা ভাবে মাত্র পাঁচ মিনিট জীবন থেকে গেলে কি এমন হবে, এই ভেবে সানন্দে রাজী হয়ে যায়, এবং এই প্রসেস চলতেই থাকে,  মানে প্রায়ই আগের কোনো সময়ে চলে গিয়ে সেটা ফিক্স করে আর তার আয়ু থেকে খানিকটা সময় চলে যায়। এই ভাবে বেশ কিছুদিন চলার পর দেখা যায়, সে তার জীবনের বেশ অনেক গুলো বছর সে লোকটাকে দিয়ে দিয়েছে, তার আয়ুরেখা কমে গেছে। শেষটা কি ছিলো মনে নেই, কিন্তু ফ্রি এর ফেসবুক কি আমাদের সেরকম আয়ু কেড়ে নেওয়া জিনিস হয়ে দাঁড়াচ্ছে না?
তবে কি জানেন তো,  আমি ভার্চুয়াল দুনিয়ার বাইরেও খুব ইন্টারেস্টিং কিছু পাইনা যাতে মনে হয় আমি নেটে সারাক্ষণ থেকে খুব অপরাধ করি। আমার রিয়েল লাইফ এমন বন্ধু নেই যাকে রাত বারোটায় বা সকাল সাতটায় ফোন করা যায় অনায়াসে, আমার মন খারাপ হলে বরং ফেসবুকে হিজিবিজি ভাট বকে সময়টাকে বইয়ে দিতে পারি। তবু তবু আমি ফেসবুক থেকে,  মেসেঞ্জারে আড্ডা থেকে খানিকটা সময় সরে আসার চেষ্টা করছি কারন বেঁচে থাকার জন্য কিছুর উপর ডিপেন্ডেন্ট হয়ে যাওয়াটা খুব রিস্কি বলে মনে হচ্ছে।  অবশ্য আমি এমনিতেও খুব বেশী কারণ পাইনা বেঁচে থাকার, মানে খুব ডিপ্রেসিভ কথা বলছি হয়ত কিন্তু আমার মনে হয় আমারা বিবর্তন কে উলটোপথে হাঁটানোর চেষ্টা করছি বলেই এত সমস্যা।  আমার মত কয়েক কোটি লোক স্রেফ এম্নিই বেঁচে আছি কোনো উদ্দেশ্য ছাড়াই তার ফলই হয়ত অন্যভাবে আসছে। কে জানে। 

Tuesday, March 14, 2017

উপনিষদ মহারাজ - আগের বারের পর

রাধা কৃষ্ণ নিয়ে বোধহয় কয়েকশ বা কয়েককোটি লেখালেখি হয়ে গেছে। দোলের সময় বলে আসলে মনে এলো,  নইলে আমি সেই সমুদ্রে আর কিই বা জল ঢালবো। রাধা কৃষ্ণ কে অ্যাক্সেপ্ট করার মধ্যে  তৎকালীন সমাজের একটা দিক অন্তত বোঝা যায় ( মানে ওই নামে কেউ থাক বা না থাক,  গল্পটা আছে যখন আর সেটা চলছে যখন) তা হলো,  তুমি যদি শারীরিক ভাবে সক্ষম হও তবে তুমি যা চাও তাই পাবে সমাজ গল্প সাজিয়ে দেবে, ঈশ্বর বানিয়ে দেবে। আর তুমি যদি অক্ষম হও তবে গল্পে কাব্যে জীবনে তোমার ঠাঁই নেই। আমি জানিনা এ গল্প কতটা সত্যি, আয়ান ঘোষকে নপুংসক বানানো হয়েছিলো কৃষ্ণ কে ঈশ্বর বানাতে কিনা, আমি জানিনা এ কাহিনী কোনো বিক্ষিপ্ত রাখাল ছেলের কিনা আমি জানিনা এ গল্প কোনো বিরহিণী নিজেই বানিয়েছে কিনা,  কিন্তু মাঝে মাঝে ভাবতে চেষ্টা করি যে সমাজে জরু গরু এক পদবাচ্য করা করা সে সমাজে বউ চোখের সামনে অন্য পুরুষে আসক্ত,  এ তথ্য জেনেও কিছু বলতে পারেনি তা কি শারীরিক দুর্বলতায় না সুগভীর উদাসীনতায় বা ঘৃনায়? হয়ত আয়ান ঘোষ সেই সময়ের থেকে একটু অন্যভাবে ভাবত,  যে আমার না, তাকে জোর করে কি পাওয়া যায়, সেই টুকু বোধ ছিলো আর তাই হয়ত ভারতীয় সমাজ তাকে নপুংসক আখ্যা দিয়েছে। আসলে আমরা বোধহয় সবাই বড় বেশী কৃষ্ণ সিন্ড্রোমে আক্রান্ত, একা মেয়ে নদী পেরোতে গেলেই ঝাঁপিয়ে পরা যায়, একা মেয়ে স্নানে গেলে তার সাথে অসভ্যতা করা যায় তাকে লজ্জায় ফেলা যায়, কেউ রিফিউজ করলে তাই তার মুখে অ্যাসিড ছোঁড়া যায়, ধর্ষণ তো জলভাত।
আয়ান ঘোষের উদারতা শেখা আমাদের কর্ম না বোধহয়।
এইসব আবোল তাবোল ভাবতে ভাবতে রাস্তা পেরোচ্ছিলাম। এইদিককার কোলকাতা টা যেন অন্যরকম, এত গাছ এত পাখি ঠিক কোলকাতার সাথে যেন যায় না। আবার যায়ও। নইলে ধর্মতলার এই ইউরিনালের গন্ধেও পলাশ ফোটে কি করে। রাজভবন দেখলেই আমার কেমন মনে হয় আমরা প্রজা হয়ে থাকতেই ভালোবাসি, নইলে রাজভবন নাম রেখে দেওয়ার কি মানে কে জানে। অবশ্য নাম বদলাতে গেলেও মুশকিল, পূর্ব দিকে থেকেও পশ্চিমবঙ্গ নাম কেন বদলে বাংলা বা বঙ্গ হবে না সে নিয়েও গোছা গোছা প্রতিবাদ নেমে যায় আজকাল। মাঝে মাঝে আমি ভাবি,  ভাগ্যিস কাগজ কলমে লিখতে হয়না, তাহলে বোধহয় আর একটাও গাছ বাঁচত না যে পরিমান লেখালেখি হয়। খারাপ বলছি না তবে মাঝে মাঝে মনে হয় শব্দরা আজকাল স্যোশাল মিডিয়া ছেড়ে জ্যান্ত হয়ে পড়ছে, ধেয়ে আসছে, কোনোদিন হয়ত এই শব্দবানেই মারা যাবো।

এমনিতেই সবাই বলে পালানো খারাপ, কিন্তু আমি জানি পালানো ভালো মাঝে মাঝে। তাই যথারীতি পালিয়ে ছিলাম পূর্নিমায়।

"বাবু , রাত্তিরে জঙ্গলে না যাওয়াই ভালো" । জঙ্গলে না যাওয়াই ভালো! বলে কি? আরে এরকম পূর্নিমার রাতে জঙ্গলে যাব বলেই তো এত কাঠখড় পুড়িয়ে এলাম নাকি? কেওনঝাড়ের এক জঙ্গলে এসেছি, অখ্যাত জঙ্গল । এই ঝাঁ ঝাঁ বৈশাখে খুব এক্টাকেউ এ তল্লাটে আসে না । তবুও , আমার টিকিট কাটা ছিলো না বলে, কাল অব্দি আসার ঠিক ছিলো না । তারপর হঠাৎ করে তৎকাল এ টিকিট পাওয়া এবং কপাল জোরে ডাকবাংলো ফাঁকা পাওয়া । না পেলে কি হত জানি না , কারন এখানে থেকে ফেরার ট্রেন নেই বিকেলে কোনো । আর স্টেশনের যা ছিরি দেখলাম আসার পথে তাতে রাতে ওখানে থাকা আর গাছতলায় থাকায় খুব তফাৎ কিছু হতো না ।
যখন নামলাম স্টেশন থেকে, কড়া রোদে চারদিক ঝকঝক করছে । লু বইছেই বলা ভালো । তবে আমার আবার এরকম ঝাঁ ঝাঁ রোদ বেশ লাগে । ঘাম হওয়া রোদ না , এরকম খাঁ খাঁ রোদ । জানিনা এখানে কি আছে দেখার মতো । জঙ্গল আছে এটুকুই জানি খালি, আর সেই শুনেই বেড়িয়ে পরেছি । স্টেশন এ নেমেই বুক শুকিয়ে গেলো , গাড়ি নেই । ট্রেন একটু দেরী করে এসেছে বটে তবে সেটা কারন না মনে হয় । যাকগে কারন নিয়ে মাথা ঘামালে আমার চলবে না । দেখি আর কি উপায় হয় ।
একটা গাড়ি পাওয়া গেছে শেষমেশ । এক রাত থাকবো খালি বেশী ঝামেলার দরকার নেই , কিছু চাল ডাল আর ডিম কিনে চললাম । বনের মধ্যে দিয়ে রাস্তা , চারদিক শুনশান । একটু একটু গা ছম ছম করে বইকি , একদম একা ঘুরতে গেছি অনেক জায়গায় কিন্তু বনের মধ্যে আসা হয়নি কখনও । টাওয়ার আছে এখনো তবে নেট নেই । ভালোই হয়েছে। খেয়ে দেয়ে একটু চরকি পাক লাগাতে লাগাতেই বিকেল ঘনিয়ে এলো । চারিদিকটা কি অস্বাভাবিক নিরিবিলি। তারপর আসতে আসতে চাঁদ উঠতেই যেই না আমি জঙ্গলে যাব বলে পা বাড়িয়েছি অমনি , কেয়ারটেকার সনাতন এর সাবধানবানী, ,"বাবু, রাত্তিরে জঙ্গলে না যাওয়াই ভালো "।
এমন চমৎকার চাঁদ উঠেছে , হাওয়া দিচ্ছে , আশপাশে না গিয়ে বসে থাকিই বা কি করে , তাই বললাম আরে এই তো আশেপাশেই আছি । একটু পরেই তো রাতের খাওয়ার ব্যাপার আছে আর কাল তো চলেই যাবো , একটু ঘুরে নিই। সনাতন আর কিছু বলল না আমিও এগিয়ে গেলাম । বাংলোর পাশ দিয়ে একটা শুঁড়ি পথ জঙ্গলে ঢুকেছে , খানিকটা এগিয়ে দিয়ে ওই পায়ে চলা রাস্তাটা আবার দু ভাগে ভাগ হয়ে গেছে একটা গেছে নদীর দিকে আর একটা জঙ্গলের দিকে। শালের জঙ্গল তাই ফাঁকাই মোটামুটি , খুব গভীর না । জ্যোৎস্নার আলোয় সব পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে । মায়া মায়া লাগছে সব । ইচ্ছে করেই নেট অফ রেখেছি , যাতে টাওয়ার থাকলেও আমি এ বনভূমি থেকে বিচ্যুত না হই । অনেক অনেক ক্ষন এলো মেলো ঘোরার পর যখন , ভালো লাগছে ,ভালো লাগছে ভাবে টইটম্বুর বাংলোর দিকে ফের রওনা দিলাম।
এখানে খাওয়া দাওয়া জলদি হয়ে যায় । খেতে খেতে যথারীতি ভুতের গল্পও শোনা হয়ে গেলো । পুরনো বাংলো আর ভূতের গল্প থাকবে না তাইই কি হয় । তা ভূতের গল্পে রসভঙ্গ করতে নেই , আমি তাই বিস্ময় ভাব নিয়ে সব কটাই শুনে গেলাম ।  তারপর সব চুপচাপ হতেই আমিও বেড়িয়ে পড়লাম । ইচ্ছে ছিলো নদীর ধারে যাওয়ার । জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে এই রাতে নদীতে যেতে চমৎকার লাগবে । তবে অনর্থক রিস্ক নেওয়ার ইচ্ছে আমার নেই , তাই সাথে ফোন টা নিয়ে বেরিয়েছি , অন্তত টর্চ হিসেবে কাজে দেবে।
ঝিম ধরা রাত, অনেক্ষন জ্যোৎস্নায় থাকতে থাকতে গাছ গুলোরও যেন নেশা ধর গেছে। কি অদ্ভুত যে লাগছে কি বলব । নদীর দিকটা তূলনামূলক ভাবে ফাঁকা । নদীর পাড়ে বসে রইলাম অনেক অনেকক্ষন । তারপর একসময় ফেরার জন্য হাঁটা দিলাম । খুব একটা দূরে না বন বাংলো গান গাইতে গাইতে হাঁটছি এলোমেলো ভাবতে ভাবতে। হঠাৎ খেয়াল হলো , অনেক্ষন হাঁটছি । এতোক্ষনে রাস্তা যেখানে ভাগ হয়েছিলো সেখানে না পৌছনোর কিছু নেই। বুকের মধ্যে একটা ঢেউ খেলে গেলো । এ জঙ্গল কত বড় নিরাপদ কিনা ইত্যাদি খুব বেশী ডিটেইলস আমার জানা নেই , তার থেকেও বড় কথা আমার মনে এলো , এরকম শুখা জায়গায় বিষাক্ত সাপের আনাগোনা অস্বাভাবিক না ।

অজ্ঞতা একপ্রকার আশীর্বাদ , কিন্তু সবক্ষেত্রে না । যতক্ষন সাপের কথা মনে পড়েনি একরকম ছিলো , মনে পড়ে থেকে অবস্থা শোচনীয় । যতদূর মনে পড়ছে কেলোটা করেছি নদীর ধার থেকে ফেরার পর জঙ্গলে ঢকার সময় , অন্য কোনো শুঁড়ি পথে ঢুকে গেছি । রাত্তির বারোটা বাজে , এ সময় জঙ্গলে এরকম আবোলতাবোল ঘোরা বিপজ্জনক । মাথা খারাপ করে লাভ নেই । শান্ত হয়ে ভাবলাম , আমি রাস্তায় কোনো টার্ন নিইনি , মানে কোনো গলিতে ঢুকিনি , তারমানে উলটো রাস্তায় হাঁটলে আমি নদীর পাড়ে পৌঁছতে পারবো। একবার নদীর পাড়ে পৌঁছে গেলে যে জায়গাটায় বসে ছিলাম সেখানে গিয়ে ফের ফেরার চেষ্টা করা ভালো । জ্যোৎস্নাতে ভুল হওয়াটা অস্বাভাবিক না সুতরাং রোমান্টিসিজম বেশী না করে টর্চ জ্বালিয়ে সতর্ক ভাবে দেখে নেওয়াই ভালো ।
সত্যি বলতে কি ভয় করছেনা এটা বলব না ।বেশ ভয় করছে কিন্তু ভালোও লাগছে । এই মাঝরাত্তিরে , ফটফটে জ্যোৎস্নায় ঘুমিয়ে থাকা বোকামো না পথ হারানো?
নদীর পাড়ে এলাম , এদিক ওদিক একটু মন দিয়ে দেখতেই রাস্তাও খুঁজে পাওয়া গেলো । বাংলোর কাছাকাছি প্রায় তখন , সড়সড় করে কি যেন চলে গেলো আমার কাছ দিয়েই । আমি জঙ্গল অভিজ্ঞ লোক না , আমি জানিনা কিসের শব্দ কতদূর দিয়ে গেলো । আমি জানি ওই মুহুর্তে আমি স্রেফ জমে কুলফি হয়ে গেছিলাম । নড়তে পারার অবস্থায় আসার পরেই প্রায় দৌড় লাগিয়ে বাংলোয় ।
আমরা আমায় ভিতু বলতে পারেন কিন্তু ওই অবস্থায় না পড়লে ঠিক বোঝাতে পারবো না। নিস্তব্ধ জঙ্গল , জ্যোৎস্নায় সব অপার্থিব লাগছে সেই সময় যে কোনো শব্দই অন্য রূপ নিয়ে আসে। পরে ভেবেছি বোকার মতো পালিয়ে না এলে ঠিক পরীদের দেখা যেত, এরকম রাতেই তো তারা নামে।
পরের দিন সকালে আলোয় ঝলমল করছে চারিদিক গতরাতের কথা মনে করে একটু হেসে রওনা দিলাম, ডেরায় ফিরবো বলে।