Sunday, March 26, 2017

রাস্তায়- কোলকাতায়

শনিবারের সক্কালে সাতটায় ওঠা শুধু না চান করা এবং এক কাপ চা না পাওয়ার মত খারাপ খুব কম জিনিস আছে। এই সময় ক্যাটরিনা কাইফ প্রোপোজ করলেও না বলে দিতে ইচ্ছে হয়। তার মধ্যে হতভাগা জায়গাটার নাম পার্ক স্ট্রীট মানে আপনার মানিব্যাগ পার্ক করে দিন এরপর আপনাকে স্ট্রীটে বসতে হলো বলে! তা যাই হোক এট্টু চা খেয়ে ফেসবুকে ইতি উতি ঘুরতে ঘুরতে রেস্তোরাঁ খোলার সময় হয়েছে দেখে ঢুকতে গেলুম, হাতে একটা ঝাড়ন ধরিয়ে দিলো!! বলে, এত দেরী করে আসতে হয়, এক্ষুনি সব কাস্টমার চলে আসবে। মিনমিন করে আমায় কেন এসব... বলতে না বলতে দেখি বলে 'ওহ এলেন লাট সাহেব উনি ঝাঁড়পোছ করবেন না, বলি কাজ কে করবে তবে চাঁদ'। কি মনে করে আমার দিকে তাকালো ভালো করে ঝাড়বে বলেই বোধায়, তারপর একহাত জিভ বের করে সরি টরি বলে বিষম খেলো। নেহাত খিদে পেয়েছিলো আর জামাটা হাফ হাতা, আস্তিন গোটনো যায়না, নইলে হুহ।

চেলো কাবাব নামে না চালায় আসলে মাখম ভাত আর কাবাব, তাও ভালো কাবাব না ওর চে ভালো কাবাব আমার আপিসের ক্যাফেটেরিয়াতে পঁয়ষট্টি টাকায় দেয় মাঝে মাঝে। খিদের মুখে সব ভালো অবশ্য, আর কড়কড়ে অনেককটা টাকা গচ্চা গেলে আরো ভালো। সোনা মুখে খেয়ে মুখ মুছতে যাবো দেখি তামার ঘটিতেতুলসী সমেত গোলাপফুল বসানো। অর্থাৎ যা বিল আসবে তোমার অন্তিমদশা ঘনাতে পারে বইকি। ভালো, সবই মায়ার খেলা, রবীন্দ্রনাথ নিশ্চয়ই কখনো এখানে খেতে এসেছিলেন। 


মন্থর গতিতে সাড়ে তিন হাত জায়গা বুক করা যায় কিনা সে উদ্দেশ্যে টুকটুক করে এগোচ্ছি। মনে পেটে এমন বল না টুকটুক এর বদলে টকাটকা করে এগিয়ে যাবো। এদিকের কোলকাতা তো আজকাল আসা হয়না, পসরার তফাৎ বোঝা যায় বইকি। যেমন রাজারহাট, সল্টলেকে পেয়ারার সাথে কাসুন্দির ডিব্বা থাকবে। পেয়ারা ওদিকে কাসুন্দি দিয়ে মাখা দস্তুর। এদিকে শশা পেয়ারা পাশাপাশি স্রেফ নুনের কৌটো যোগে। বাদাম বিক্রী হচ্ছে ডিরেক্ট দাঁড়িপাল্লায় ফেলে এ জিনিসটাও অনেকদিন পর দেখলাম। একজন লোক দেখি কাগজ পেতে আরাম করে বসে কাগজ পড়ছে। কি বিক্রী করতে চায় কে জানে। একবার জিজ্ঞেস করব ভাবলাম, কিন্তু যদি কামড়ে দেয় আবার ইঞ্জেকশন ইত্যাদি থাকগে। অবশ্য সব পাগল এমন ন। কামড়াবেই, এই তো একটু আগে একটা ভাঙা বাড়ির ছবি তুলছিলাম, একজন এসে বলল কই আমার একটা তুলে দাও তো। দিলাম, দাড়ি গোঁফের ফাঁকে কি হাসি ব্যাটার। তারপর আবার দেখতেও চাইলো সে ছবি।

মল্লিক বাজারের দিকে এগোচ্ছি গানগাইতে গাইতে একজন বলল মাপ করো আগে যাও! ভগবান আজ আর কত কী হ্যাঁ আর কত কি? মনের দুঃখে চোখ বুজে এগিয়ে গেলাম। পার্ক স্ট্রীট সিমেট্রির আগে দেখি কতকগুলো লোক প্লাস্টিক থেকে ঝোল মাখা মাখা ভাত গপগপ করে খাচ্ছে। কেউ উবু হয়ে কেউ পিছন ফিরে কিন্তু সব্বাই দ্রুত গতিতে। আমাদের ওদিকটা ভীড়ভাট্টা খুব বেশী হলেও এরম গরীব কম বোধহয়, অন্তত আমার চোখে খুব একটা পড়েনি। বাগুইয়াটি কেষ্টপুর তেঘরিয়া ওদিককার সব গলি রাস্তায় ঘুরতাম এক সময় লুকিয়ে সিগারেট খাওয়ার জায়গা খুঁজতে, তবুও পড়েনি। একটু আগেই কতকগুলো সুগন্ধি ভাত ফেলে দিয়ে এসেছি, পেট ভরে গেছিলো বলে ইচ্ছে হচ্ছিলো না বলে। পেটের মধ্যেকার ভাতগুলোও বিদ্রোহ করছে যেন। পা চালিয়ে পার হও হে হ্যাপ্পি প্রিন্স , তুমি সত্যই খোকাবাবু।

সিমেট্রি তে বেজায় ভীড় মশাই, মানে একেবারে গায়ে গায়ে কবরও আছে দেখছি। ঘুরে ঘুরে একটা ঘাসের অংশ ফাঁকা দেখে বেশ খুশী হয়েছি, হ্যাঁ হ্যাঁ এইখানেও শুয়ে থাকবো বেশ। কি সুন্দর ঝিরিঝিরি হাওয়া দেবে, কংকালের মধ্যে দিয়ে সে হাওয়া সাঁত করে মরমে পশিয়া যাবে। এহঃ ছ্যাঃ কুত্তো না বিড়ালের ইয়ে। আমার সাধের সাড়ে তিন হাত। হতভাগাগুলোকে এই জন্য দু চোখে দেখতে পারিনা। ওদিকটা আবার জ্যান্ত মানুষের ভীড়। না না ঋকানন্দ সিদ্ধপুরুষ, যোগীপুরুষ না যে ঝাঁট জ্বলবে প্রেম করছে দেখলে কি চুমু খাচ্ছে দেখলে। কিন্তু সারাদিন এত বকমবকম করলে ঘুমাবো কখন হ্যাঁ? তার মধ্যে ওদিকে আজানের আওয়াজ ওদিকে গীর্জার টংটং বেঁচে থাকতে ফেসবুকে ধর্মের কচকচি আর বেঁচে গিয়ে সেই ধর্মের শব্দছায়ায় আশ্রয় নেওয়া পোষাবেনা মাইরি। যদিও ম্যালা গাছ আর কোকিল টোকিল আছে তাও




তো মিঁত্রো যবতক আচ্ছা জায়গা (বেশ অাক্সেসবল দূরত্বে রাবড়ি, মাটন বিরিয়ানি পাওয়া যাবে, গাছের ছায়া পাওয়া যাবে) না পাওয়া যাচ্ছে, খোঁজ জারী থাকবে আর রাবড়িও।

No comments:

Post a Comment