Monday, December 7, 2015

ভুলভাল

প্রেমে পরা আর ভূতে ভয় পাওয়া একই ব্যাপার। লজিক নেই তবু আটকানো মুশকিল। ভূত নেই তাই নিশুত রাত, গা ছমছম , বুক ঢিপঢিপ  কোনো মানে হয় না।  তেমনি , বেশিরভাগ  প্রেমেরই পরিনতি তো একই ,  হয় ব্রেক আপ না হলে সেই গতানুগতিক জীবন। মানে ৫ বছর পরেও তো আর আপনার ইডেন গার্ডেন এর পাশ দিয়ে হাঁটতে যাবার জন্য দুপুরের ভাতঘুম বিসর্জন দেওয়ার ইচ্ছে থাকবে না নাকি? তবু লোকে ভয় পাবে , পিসা খরচা করে দরকার হলে ভূতুরে  বই পড়ে  কিংবা সিনেমা দেখে।  আর ব্রেক আপ এর সেই ভয়াবহ দিন গুলো মনে রেখেও তুমুল বৃষ্টিতে সারা শহরকে অদৃশ্য করে পাশাপাশি হেঁটে যাবে দুজন।  তবে হাঁ  কেউ কেউ যেমন ভূত দেখেন নিজের চোখে ( তাদের আবার আমরা দেখতে পাই না , গোলমেলে কেস মশাই) তেমনি কারো কারো নাকি প্রেমের কোনো ডাউনফল হয়না ( এনাদের অবিশ্যি দেখা যায় , মানে শোনা যায়) .

******************************************************************************
আচ্ছা মানুষ মরে যদি ভূত হয় ডিম মরে কি হয়? মানে ধরুন গিয়ে আমি স্বর্গ/ বেহস্তে  গেলাম।  আমার হুর পরীর দরকার নেই , এখন বলুন যে ডিমটা মরে গেল , মানে পচে গিয়ে মৃত্যু বা সুসিদ্ধ /ভাজা হয়ে , সে কি অবস্থায় স্বর্গে পৌছবে? নিশ্চই ঝরঝরে দেহে , তারমানে পচার বা ফ্রিদ্গে এ জমে যাবার  আগের অবস্থায়? না না কূট  সন্দেহ করার দরকার নেই , আমার আজ ব্রেকফাস্টে ডিম ছিল না , তাই পচা হওয়ার চান্সও ও ছিল না।  হাঁ  যা বলছিলাম , তো তো ওই ওই ডিম আমি আবার ব্রেকফাস্ট এ খেলাম স্বর্গের গাছতলায় বসে (ধরে নিছি  বেহস্তের পাখিরা সভ্য হবে, মাথায় ইয়ে না করেও চলাফেরা করা যায় জানবে) সেক্ষত্রে ওই ডিমটির কি অবস্থা প্রাপ্ত হবে? মানে মানুষ মরলে ভূত , ভূত মরলে কি মানুষ মানে ডিম হবে আবার?
*******************************************************************************
এবার আরো কঠিন সমস্যা ধরা যাক যে ডিমটা মরে ডিম-ভূত হয়ে বেহস্তে হাজির হয়েছে তার সঙ্গে তার হতে পারতো বোন  এর দেখা হলো , মানে একই মুরগির ডিম আরকি , একজন মুরগি হলো একজন হলো না।  এবার দুজনকেই ধরা যাক আমি খেয়েছিলাম , একজনকে সকালে একজনকে দুপুরে , এবার রাত্রে পটল তুলে তিনজনেই বেহস্তে/স্বর্গে।  এবার আমার স্বর্গ আর ওদের এক হবে না , স্বাভাবিক ভাবেই ডিম এবং তার হতে পারতো  ভগিনীরা বলবে অমন স্বর্গের মুখে আগুন যেখানে ওই মানুষটা আবার আমাদের খাবে ! লজিক্যালি আমি যদি খান তখন কতক সুন্দরী যুবতীর সাথে গপ্প করতে করতে ভাবি একটা পোচ  আসুক , সেই সময় সেই ডিমের তখন পোচ  না হয়ে কোনো সুন্দরী ডিমিনীর  সঙ্গে গপ্প করতে সাধ হতেই পারে , সেক্ষেত্রে কার ইচ্ছে প্রাওরিটি পাবে , ভগবানের চোখে আমিও যা ডিমও  তাই তাইলে?
*******************************************************************************
ডিম যদি না আসে সেই সময় আমি নরকে যাওয়া প্রেফার করব।

*******************************************************************************
আজ একখানা পোস্টার দেখলাম। বাংলা তর্জমা করলে এরম দাঁড়ায়:
আমাদের ভালবাসার ধন , বুকের পাঁজর , আমাদের মেয়ে ফুলি (নাম খানও বাংলা করে দিলাম ) হারিয়ে গেছে। ও অসুস্থ , সুগার এবং ব্লাড প্রেশার দুইই বেশি। কক্ষনো ফুলি আমাদের ছেড়ে আগে থাকেনি। আমরা দুই বৃদ্ধ দম্পতি দুদিন ধরে এই বিচ্ছেদ বুকে নিয়ে বেঁচে আছি। কি করছে কি খাচ্ছে কিছু জানিনা। যদি আপনার কেউ খোঁজ পান আমাদের সাথে স্বত্বর যোগাযোগ করুন, যেকোনো সময়ে।
বললে বিশ্বেস করবে না , এ অব্দি পরে আমার মতো পাষন্ডের মনও দুর্বল হয়ে গেল। ল্যাপটপের ব্যাগ নিয়েই ফুলিকে খুঁজতে বেড়িয়ে পরছিলাম। তারপরই নিচের ছবিটার উপর চোখ পড়ল।

বি:দ্র: - নির্জলা সত্যি , ফুলির সুগার আর রক্তচাপের দিব্যি 
******************************************************************************
একা থাকার সবচে বড় সুখ হলো ভাত খেতে বসে যদি দেখেন চাল আধকাঁচা আছে বা গলে গেছে, মাংস বলে ভেবেছিলেন যাকে গরম করতে সে ঝোল প্রতিরূপ হইল , এমন দিনে সে খাবার খেয়ে মনের অস্বস্তি কাটাতে শনপাপড়ির বাক্স থেকে খাবলা মারতে পারেন, আপনার চামচ ইত্যাদি নেওয়ার দায় নেই , তারপর সেটা প্লেটে বাটিতে নিতে হবে না ( নিলেই ধুতে হবে ) , হাতে নিয়ে টেবিল এ ঠ্যাং নাচাতে নাচাতে মুখ ডুবিয়ে ডুবিয়ে খেতে পারেন। মুখ ময় শনপাপড়ি লেগে গেলে কেউ চেঁচিয়ে উঠবে না বা হেসে উঠবে না।শেষ পাতে তো মিষ্টিটা মশাই শাস্ত্রের বিধান , তাই খেয়েছেন বলে তো আর ফ্রিজে রাখা ক্রাঞ্চি ভানিলা মিল্ক আমন্ড চকোলেট বার কে উপেক্ষা করতে পারেন না। এবং এ কথা কে না জানে চকলেট বার না ছড়িয়ে খাওয়া মোদিকে দেশে পাওয়ার মতোই কঠিন ব্যাপার। তা সেসব যোগসাধনা তো আমার আপনার নেই মশাই তাই এসব ক্ষেত্রে নির্জন ঘরের কোন মশাই আদর্শ । আহা মুখ ময় আইসক্রিম লেগে যাওয়ার পরোয়া না করে ভেঙ্গে পরা চকলেট একহাতে ধরে বাকি আইস্ক্রিমটুকু খাওয়া...... স্বর্গ মসায়  স্বর্গ


Monday, November 16, 2015

দুইয়ের পিঠে আট



অনেকদিন লিখিনি কিছু , লেখার কি থাকে না, অনেক কিছু থাকে কিন্তু সমস্যা হলো লেখা যখন মনে আসে হাত তখন ক্রিমিনাল কেস খেলতে ব্যস্ত থাকে।.দুজনের বনছে না আর কি ,আসলে  ২৮ বছর কাটিয়ে দিল তো একসাথে। দাম্পত্য পুরনো হলে যা হয় তাই হয়েছে। তবে এবারের লেখাটা আমি জন্মদিন স্পেশাল করব ভেবেছিলাম, কিন্তু আমার ছোটবেলার সঙ্গী জ্বর ব্যাটা বাধ সাধলো। যাকগে, দেরী তো কি কোনো একটা মহাপুরুষ বলেছেন না 'যাব উঠে তব সবেরা ' বা এমনি কিছু একটা। 
তুষারপাত শুরু হয়ে গেছে। আগের বারের উত্সাহ এইবার নেই, বরং মনে হচ্ছে ওরে বাবা শীতকাল চলে এলো আবার।  কিন্তু সেদিন সারা রাত বরফ পরার পর সকাল বেলা বেরিয়ে মনটা ভালো হয়ে গেল।  হু হু হাওয়া দিছে, ঠান্ডায় দাঁড়ানো মুশকিল, তবু চোখ জুড়িয়ে যায়। গাছ, রাস্তা সব সব ঢেকে গেছে সাদা চাদরে, রোদ উঠেছে তাতে আরো ঝক ঝক করছে, দূরের পাহাড়টা থেকে ধোয়া বেরোচ্ছে।  





সেদিন রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ছেলেমানুষের মত বরফ নিয়ে বরফের গোল্লা করছিলাম আর পাশের গাছে ছুঁড়ে ছুঁড়ে মারছিলাম, হাতে গ্লাভস ছাড়াই( জ্বরকে দোষ দিয়ে লাভ আছে কাকা) এইসব পাগলামি করতে পেরে মন্দ লাগছিল না. ভাগ্গিস কেউ দেখেনি, যদিও আমি হেড আপিসের বড়বাবুর মতো গোমড়া না , তবে এইরকম করতে দেখলে লোকজন আওয়াজ দিতো  নিসন্দেহে।  

ভাইফোঁটাপাওয়া বছর তিনেক হলো বন্ধ হয়ে গেছে, কিন্তু এ বছরটা অন্যরকম। অনন্যাদির কাছ থেকে ভাইফোঁটা উপলক্ষে গিফট পেলাম  , কাঁকনদি ফোঁটা দিলো। জীবনটা কখনো কখনো লীলা মজুমদার এর গল্প হয়ে যায় যেখানে দুখী মানুষদের জন্য পরীরা আসে রাতের বেলা , দুধ কমলা না পেলেও বর দিয়ে যায়। 
ভাইফোঁটা সাথে প্রাপ্তি যোগ 



লীলা মজুমদার বলতে খেয়াল হলো, এবার অনেক কটা পূজো সংখ্যা পরলাম, বেশির ভাগ গল্পে একটা মানবিক আবেদন দেখলাম আমার যেটা বড় ভালো লাগে। ছোটবেলায় যে গল্প গুলোয় দূর্বল ছেলে গুলো জিতে যেত সেগুলোই ভালো লাগত, নিজে দুর্বল বলেই বোধহয়। সেই জন্যই পাগলা সাহেবের কবরের ওই ছেলেটা সন্তুর থেকে বেশি আপন ছিল।  সন্তু তো ভালো ছেলে , সাঁতার, ক্যারাটে সব পারে , আর ওই অদ্ভূতুরের ছেলে গুলো কিছুই পারত না।  

নিজের জন্মদিন নিয়ে মাতামাতি অত্যন্ত বোকা /মূর্খ  না হলে কেউ করে না। আমি মুর্খ এবং বোকা দুটোই , তাই আমার জন্মদিন আমার কাছে বেশ একটা উত্সব উত্সব ব্যপার।  বাড়িতে থাকতে সকালে ৯রকম মিষ্টি (৯ কারণ একটা বিজোড় সংখ্যা দরকার আর এর  বেশি  রফা করা যায়নি ) , মটরশুটির কচুরি আর আলুর দম, পায়েস তো আছেই।  দুপুরে ৫ রকম ভাজা সহ সুখাদ্য , রাতে বিরিয়ানি।  নিজেকে রাজা রাজা ফিল , হত ওই যে মুর্খ তো তাই।  জানি এরকম করাটাকে আদেখলেপনা বলে তবুও আনন্দ এতটাই পাই যে মূর্খ  ভাবতেও কষ্ট  হয় না।  গতবার জন্মদিনটা লম্বা ছিল, IST টাইম জোন দিয়ে শুরু আর MT টাইম জোনে শেষ।  আসে পাশে কেউ উইশ করার মতো ছিল না, তাই নিজেই নিজেকে ট্রিট দিয়েছিলাম। p f  Chang বলে যে চাইনিজ চেইনটা  আছে ওখানে  , Genghis গ্রিল  বলে একটা মঙ্গোলিয়ান রেস্টুরেন্ট , যেখানে বিভিন্ন উপাদান সাজানো থাকবে আর নিজের ইচ্ছে মত জিনিস নিয়ে ওদের দিলে ওরা বানিয়ে দেবে সেইখানে আর ihop এ , ওখানে খুব ভালো প্যানকেক পাওয়া  যায় , আর ওদের চিকেন ফাহিতা ওমলেট এই সব দিয়ে নিজে নিজেকে উইশ টুইশ করে মন খারাপ কমানোর ব্যবস্থা আর কি।  
অনেকদিন থেকে ইচ্ছে ছিল BMW বা কোনো convertible চালানোর , তো জন্মদিন উপলক্ষে  bmw  একদিনের জন্যে তুলেছিলাম । কেনা কোনো দিন হবে বলে মনে হয় না একদিনের জন্যই হোক।তবে একটা ভয়ানক তথ্য পেলাম,   ফেরারী বুক করতে গেলে নাকি ৩৮" কোমরের মাপ হতে হবে!! গাড়ি চালাতে গেলে কোমরের মাপ জরুরি কেন সেটা ঠিক বুঝিনি অবশ্য। 


এখানে কয়েকটা বন্ধু হয়েছে তারা  কেক কাটলো , একজন বিরিয়ানি বানিয়েছিল। আমি এত কিছু এক্সপেক্ট করিনি ...হুম বসুধৈবম কুটুম্বম।  

Saturday, October 24, 2015

পূজো-মনকেমন

মাকে একটু আগে ফোন করেছিলাম, বোধন হয়ে গেছে, ঢেনকুড়  ঢেনকুড়  করে ঢাকের আওয়াজ আসছে। আমাদের দেশের বাড়ির পূজো। তেমন বড় কিছু না হলেও , একগাদা লোকজন , কেজো অকেজো নানা কিসিমের লোকের ব্যস্ততা, পূজোর সময় ঢাকি আর পুরোহিতের নাচ, ফাক পেলে মাঠে চলে যাওয়া।  মিস করছি।  আমাদের এখানে পরের সপ্তাহে পূজো হবে। টিকিটের দাম বেশ চড়া রেখেছে তাই এখনো দোটানায়আছি যাব কি যাব না, কারণ ওর ১/৪ টাকায়  দুবার বুফে হয়ে যাবে। তাছাড়া মেনু তেমন আকর্ষক না, আর এই সব ক্লাব কালচারের পূজোর মেন ফোকাসটাই  তো খাওয়া। দেখা যাক।  এদিকে এদের মানে আমার আমেরিকা নিবাসী ভ্রাতা এবং ভগিনীদের উত্সব এর দিন সমাগত। ভূত সেজে আনন্দ! ওরে আর কদিন সবুর কর, ভুশুন্ডি তে ডাক পড়ল বলে।  তখন আর সাজের দরকার নেই এমনি এমনই ভয় দেখাতে পাবি।

শীত আসছে। বেশ রোজই  একটু একটু করে টেম্পরেচার কমছে , গাছ গুলো ন্যাড়া হচ্ছে। আচ্ছা গাছেদের ঠান্ডা লাগে না? অন্তত শীতের সকালে যে হওয়াটা দেয় তাতে মন খারাপ ও তো করতে পারে!
দুদিন ধরে টানা বৃষ্টি হয়ে চলেছে। এমন মন খারাপ করা আবহাওয়া বেশি বাজে লাগে , এর চেয়ে বরফে ঢেকে থাক আর রোদ  ঝকমক করুক সে অনেক ভালো। টেম্পরেচার ৪৫F  এ স্থির। সকালে উঠতে বেজায় কষ্ট , তবু অফিস যাবার পথে খান কতক ছবি না তুলে পারিনি।






আজ তো দশমী হয়ে গেল। মা বলল এবার নাকি আলাদা আলাদা দলের জন্য আলাদা আলাদা ইভেন্ট ছিল, গান নাচ ইত্যাদি মিলিয়ে বিশাল হই হুল্লোর।কাকার ছেলে মেসেজ করেছিল, রাত একটাতেও মন্ডপে সবাই, দুর্গাকে যতক্ষণ আটকে রাখা যায় আরকি। আর দূর্গা ঠাকুরকেও বলিহারি বাপু, এত খাতির করে লোকে রাখতে চায়,পাঁজি ওলাদের কানমুলে দিতে পারে না।  আসলে দুর্গার দুকখুটা  খালি আমি জানি, অমন নিরামিষ খাওয়ালে কে থাকবে, হুহ। একদিনে পালায় না বাঙালির বাপের ভাগ্গি।

ও হাঁ এক গল্প তো বলা হয়নি ,কয়েকদিন আগে আমরা ঘুরতে গেছিলাম Bryce ,Zion আর আরিজোনার horseshoe বেন্ড। ওখানে যেতে যেতে একখান মস্ত কেস খেয়েছিলাম, গাড়ির স্পিড লিমিট ছিলো ৮০মাইলস/ঘন্টা। আর তেজা চালাচ্ছিলো ১১০-১২০ তে, এক ব্যাটা পুলিশ ক্যাঁক করে ধরেছে। ইয়ার্কি পায়া ক্যা , ইত্যাদি বলে বলল জেনে শুনে এইসব করার শাস্তি জানো , দাও লাইসেন্স।  আমরা হৃত্পিন্ড হাতে নিয়ে ভাবছি কি হয় কত ফাইন করে, দেখি মামা এসে ওয়ার্নিং দিয়ে ছেড়ে দিল।  আমরা তো হাঁ , এমন হয় নাকি। যাই হোক তারপর থেকে আর কোনো রিস্ক নেইনি বাবা। এই গল্পটা মনে পড়ল কারণ আমার আবার ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করছে।


আচ্ছা এরকম মন খারাপ করা পূজোয় একটা খুশির খবর আসছে, খানকতক বাঙালি জুটেছে আমাদের এখানে, বাঙালি আর পুজো নেই তাও কি হয়, ব্যাস লাগাও লক্ষী পূজো।  আমি প্রথমে উত্সাহ পাচ্ছিলাম না নিরামিষ বলে, এর চেয়ে কালী পূজো  করলে কেমন হয় , কালী আর লক্ষী সে তো একই ইত্যাদি অনেক লড়াই এর পর মিমাংসা হয়েছে লুচি আলুরদম আর নাড়ু  হবে। এই তো জীবন  কালীদা। ..









Monday, October 5, 2015

এটাসেটামিক্স

দেখতে দেখতে বছর ঘুরে গেল।  আমার একলা বকার রোগ ছোটবেলার , কিন্তু ঘাড় ধরে সক্কলকে পড়ানোর রোগটার কথা বলছিলাম আরকি। গত বছর এরকমই একটা সময়ে, যখন ঠান্ডা হওয়ার ঝাপটা শুরু হয়েছে , গাছেদের একটা দল সব পাতা ঝরিয়ে বিবাগি আর একটা দল বিবাগি হওয়ার আগে যথাসম্ভব নিজেদের রাঙিয়ে নিচ্ছে হলুদ লালে (লাল হলুদ রংটা মাঠে যতই বিচ্ছিরি হোক, গাছে গাছে মন্দ না, তবে ইটা অবশ্য হলুদ সবুজ লাল ,মোটেই লাল-হলুদ না)। আহা এইসময়টা গাছেদের নিশ্চই খুব খারাপ লাগে কিন্তু আমার দারুন লাগে। একা একা বিভিন্ন রঙের গাছেদের তলায় বিছানো কার্পেটের উপর দিয়ে হেঁটে যেতে।  আর কখনো ফিসফিস করে কখনো তাদের জিগ্গেস করেছি  কিরে এত যে আমোদ আল্হাদ করছিস জানিস তো দুদিন বই নয়, কদিন পরেই সব বেমালুম ফাঁকা হয়ে যাবে।..মন খারাপ করবে না? আমার বোকামিতে তারা বোধয় মুচকি হাসে , বোধহয় ফিসফিসিয়ে বলে ওহে বেশি ডায়লগ না দিয়ে নিজেদের দিকে তাকাও, দুদিন বই নয় জেনেও যা কান্ডটা কর তার চেয়ে বরং আমাদের থেকে শিখলে পারো কেমন করে নিজেদের রঙ্গিন করে নিতে হয়! তা যাক যে কথা বলছিলাম,দূরের পাহাড়গুলো আর কদিন পরেই বরফ টুপি পরা শুরু করবে তারপরেই ঠান্ডার রাজামশাই এসে একে ফুঁয়ে সব সাদা করে দেবে। এরকম একটা সময়েই আমার এই এলোমেলো হিজিবিজি লেখার শুরু। সারা বছরে কত কি ঘটল, কখনো লিখেছি কখনো লিখিনি। 
মাঝে মাঝে আমার মনে হয় যক্ষ ঠিক একবছরের জন্য নির্বাসিত হয়েছিল বুঝি মেঘদূতম লেখার জন্যই।  ২০১১ সালে আমি প্রানপন চাইতাম কলকাতার বাইরে যেতে, যেখানে হোক, মরুভূমি মালভূমি যেখানে ইচ্ছে, খালি "এই শহর যেন আমার পিছু পিছু না আসে' । আর এখন বাড়ি ফেরার জন্য ছটপট করছি , খালি মনে হচ্ছে বাকি দিন গুলো তাড়াতাড়ি  কেটে যাক।  আসল কথা আমার পালাতে ইচ্ছে করে, কোনো জায়গায় বেশিদিন থেকে গেলেই মনে হয় আমার বুঝি শিকড় গজিয়ে যাবে, তখন পালাতে ইচ্ছে করে। 

মহালয়া আসছে, তারপরেই পূজো। পূজো নিয়ে বেশিরভাগ লোকের দুটো মত , এক হয় ৪তে দিন আড্ডা, ঠাকুর দেখা (মানে ক্যামেরায় , আজকাল তো নিজের চোখে কেউ কিছু দেখে না ) , গুছিয়ে খাওয়া আর না হলে ফেসেবুকে কমেন্ট দেব উফ, এই পুজোর কদিন লোকের আদিখ্যেতা দেখলে বিরক্ত লাগে, ইত্যাদি। আমার মত নাস্তিক মানুষের দ্বিতীয়টাই হওয়া উচিত ছিল হয়ত, কিন্তু আমি যেকোনো উত্সব চেতে পুটে উপভোগ করি, বড়দিন হোক কি দুর্গাপূজো একটু তফাতে থেকে হই হুল্লোড় দেখা আমার বেশ লাগে। একদম ছোটবেলায় পূজো ছিল একরকম, রোজ একটু একটু করে চোখের সামনে ঠাকুর তৈরী হওয়া, সব ভাই বোন , ভাগ্নে ভাগ্নি আসবে তার অপেক্ষা , নতুন পূজোবার্ষিকী আর নতুন জামার গন্ধ , ঠাকুর কেমন হলো কাদের ঠাকুর বড় তাই নিয়ে চুলচেরা মতামত! হই হই করে ৪টে দিন কেটে যেত। আর একদশীর দিন যখন সবাই চলে যেত কি মন খারাপ !! ওই ফাঁকা  ঠাকুর দালানটা পান্ডেল খোলা ফাঁকা  সদর সব কিছু যেন কিরকম হাঁ  করে আসতো।  আরো একটু বড় হয়ে পূজোর  দিনগুলো ছিলো বড় হয়েছি তার প্রমান দেবার দিন, মানে গাছ বোম বেধে আসতে পারি, ঢাক বাজাতে পারি, ক্রিকেট থেকে গান সব বিষয়ে মতামত দিতে পারি। তারপর ১১-১২ নাগাদ ওটা হয়ে গেলো বোরিং পুজো, আত্মীয়ের কেউ আসেনা, সবার পড়ার চাপ, আমার বাদে ... 
সে যাই হোক তারপর কলেজে উঠে বড় হয়ে যাওয়া পূজো, হোলনাইট ঠাকুর দেখতে পারি বন্ধুদের সাথে,  ষষ্ঠীর বোধন বা সপ্তমীর সকালের কলাবৌ চানের সাথে ঢাকের আওয়াজ এর থেকেও বেশি বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারায় আনন্দ বেশি। 
আর এখন , এখন পূজো খালি ফেসবুকেই। মহালয়ার ভোর মানে আমার ঝকঝকে বিকেল।  তাই আধঘুমে এখন আর মহালয়া শোনা বা শুনতে শুনতে নতুন গান আবিষ্কার করা (ইয়ে মানে প্রতিবার আমি মহালয়া শুনি সত্যি বলছি , তবু প্রতিবার কি করে একটা নতুন গান বা একটা নতুন অংশ আবিস্কার করি কে জানে) কিছুই হবে না।  
তাই বলে হা হুতাশ করছিনা মোটেও, যা নেই খালি সেটাই ভালো বলার মতো বুড়ো আমি এখনো হয়ে যাইনি। এইত Aspen ঘুরে এলাম, সাথে hanging  লেক। হ্যাঙ্গিং লেক এর hike  টা কিন্তু বেশ পরিশ্রম সাধ্য। ১.২ মাইল ১০০০ এলিভেশন।  তো বেশ হাঁচোর  পাঁচর করে উঠতে হয়।  উঠতে উঠছে ভাগ্গিস জিরোনোর জন্যে থামতে হয়. তা না হলে এমন রংবেরঙেরগাছের নিচে , কুলকুল করে বয়ে যাওয়া জলের শব্দ শোনার অবকাশ ঘটত নাকি।  লক্ষ্যে পৌঁছোনোটা  জরুরি তো বটেই তবে আমার কাছে পথের আকর্ষণ ও কম না। এবং সারাক্ষণ ক্যামেরার নিচে চোখ দিয়েও না, অনেকে আছে আমার একবন্ধু আছে যে পারলে রাস্তার  প্রতিটা বাঁকের ছবি তোলে , এদিকে চোখের থেকে দামী লেন্স যে হয়না আর তাই সব ছবিই যে পরবর্তী কালে একই বাঁক বলে মনে হবে সে তার মাথায় ঢোকে কে!  ছোটবেলা থেকে যারা খুব খেটে ঘুড়ি না উড়িয়ে কিংবা, পড়ার বই এর ফাঁকে গল্পের বই না পরে বড় হয়েছে তাদের জন্যে আমার মায়া হয়, ওরা এই ছায়া ঢাকা পথের মজাটাই নিতে পারেনি কখনো।  আমি যদিও একটা গ্রুপ এ  গেছিলাম,কিন্তু একটু তফাতে আলাদা  হাটছিলাম, এইসব জায়গা যেখানে শোনার অনুভবের এত জিনিস আছে মাঝে মাঝে জনসমাজ থেকে বিছিন্ন হয়ে যেতে মন্দ লাগে না। 
hanging লেক এর উপরে 

Hanging lake 

Aspen নাকি একটা গাছের নাম।  আমি অবশ্য যাবার আগে জানতাম না। Aspen জায়গাটাও বেশ।  ওখানে Maroon Bells বলে একটা জায়গা আছে,  সেখানে তিনদিক পাহাড় ঘেরা একটা লেক আছে। একটা পাহাড় ন্যাড়া , মারুন রং এর একটা পাহাড় সবুজ ঢাকা,  আর একটা হলুদ গাছ এ ভরা। সামনে ছোট্ট  লেক , সূর্যের প্রথম এল এসে ওই মারুন রঙের চূড়ায়  পরে ,  আর তারপর একটু পরে রোদ উঠে আসে যখন পাহাড়ের মাথায় ওই হলুদ পাহাড়টায় সবুজ, লাল আর হলুদ এর এক অপূর্ব ক্যানভাস তৈরি হয়ে যায়।  
Maroon Bells 


পুজোর সময় এমনিতেও সবাই ক্যামেরায় ছবি তুলতে ব্যস্ত থাকবে, আমি fb  তেই দেখে নেব। আড্ডাটা  মিস করব, ঠিক আছে পরের বার হবে না হয়। পূজোর আগাম শুভেচ্ছা রইলো সবার জন্য ।




Wednesday, September 30, 2015

ঘুরতে ঘুরতে (নিউয়র্ক)....শেষ

মেট্রোপলিটন মিউজায়াম টা  সত্যি দারুন। মানে ওই মার্ক টোয়েন এর লাইব্রেরির মতো। আমেরিকার ইতিহাসতো খুব পুরনো কিছু না , আর ওদের নিজস্ব শিল্প কলাও কিছু বিশেষ উল্লেখযোগ্য না কিন্তু সারা বিশ্ব থেকে জোগাড় করে যা বানিয়েছে তা সত্যি দেখার মত। এমনকি একটা আস্ত মন্দির অব্দি তুলে এনেছে!





ইজিপ্সিয়ান কালেকশন টা  দেখতে দেখতেই সময় কেটে যাবে। মিশর আমার বেশ রহস্যময় লাগে, কিসব কান্ড করেছিলো সেই কত্তদিন আগে!

এমনি করে ঝগড়া করতো 

এইটা কি করছে একদম বুঝতে পারিনি, লেখা ছিল বটে দূর অত পড়া  যায় নাকি!

মমি করে রাখবে বলেছিলো , তাই মুখটা কেমন হয়ে গেছে :(

এই ভাবেই মমি করতো , ব্যাস আর কি সব লেগে পরো 

রাগের ধরনটা অবশ্য এখনো একই রয়ে গেছে 

আমার অবশ্য ছবির ব্যাপারে জ্ঞান্গম্মি বড়ই কম, তাই ওদিকটা খুব বেশি সময় দেবোনা  জানি, এমনকি ইউরোপিয়ান কালেকশন এ যে সব ভাস্কর্য দেখে লোকে আহা বাহ বলে আমি সেগুলো তেমন বুঝি না. খালি একটা মূর্তি খুব নাড়া দিয়েছিল। রোমান ভাস্কর্য। একজন লোককে তার ছেলে এবং নাতি সমেত একটা ঘরে আটকে রেখে দিয়েছিল।  হয় উপোস  নয় কানিবালিজম। মুর্তিগুলো দেখে আর লেখাটা পরে আমার টিফিন বাক্স আর খোলা হলো না।  
:(

অস্ত্র-শস্ত্র আমায় খুব টানে।  নিজে খুব একটা বীর  নয় তো ,তাই চোখ বুজে অসি ঝনঝনাই। কত্তরকমের পিস্তল।  একা একা ঘোরা বোরিং হতে পারে কিন্তু একা একা ঘুরলে অনেক কিছু দেখা যায় চোখ খুলে আর চোখ বুজে।  যেমন ওই পিস্তল গুলো দেখে তারিনী খুড়োর  ডুয়েল এর কথা মনে পরে গেলো।  এক মুহূর্তে  আমি বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত শহর থেকে লখনৌ এর একটা ভোর বেলায়  পৌঁছে  গেলাম। 


ফিরতে সময় বেশি লাগলো না অবশ্য , কারণ পেটের মধ্যে ছুঁচো  গুলো ডুয়েল লড়তে শুরু করে দিয়েছে। বেশিক্ষণ মিউজিয়াম এ থাকলে কান কট কট , পা মোচর  ইত্যাদি নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে।  তাই বেড়িয়ে  পরলাম সেখান থেকে।
১১-১২ এ পড়তে কেষ্টপুর  যেতাম টিউশন পড়তে, তো বাগুইআটি থেকে কেষ্টপুর বাসের পাদানি তে চড়ে  যেতাম , আর ওই পয়সাটা দিয়ে বিকেলে ঘুগনি বা আলুরদম খেতাম। এদের দোতলা বাস গুলো ভালো কিন্তু পাদানিতে চড়ে  যাওয়া দূর একটা স্টপেজে যাওয়া যায়না , পুরো দিনের টিকেট কেটে সব কটা  দ্রষ্টব্য স্থান ঘুরতে হবে।  জঘন্য ব্যপার। 
আমার এক বন্ধু অফিস ফেরতা আসবে , দুজনে মিলে  টাইমস স্কোয়ার  আর সেন্ট্রাল পার্ক যাব একা একা এই দুজায়গায় অন্তত ঘুরে মজা নেই তেমন। যে কোনো শহরের রাস্তায় হেঁটে  বেড়ানোর একটা আলাদা মজা আছে। কত কিসিমের মানুষ দেখা যায়, কতরকম নতুন জিনিস পত্র দেখা যায়।  আর একটা জিনিস, ভালো লোকের সংখ্যা যে কত তাও টের  পাওয়া যায়। যেমন মেট্রোপলিটান  মিউজিয়াম থেকে বেরিয়েই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হলো। ছাতার ব্যবহার আমার মোটামুটি অজানাই বলা যায়। ঠিক সামনেই একটা হট হগ ষ্টল ছিল, ভ্যাবলার মত ভিজতে দেখে স্টলওয়ালা তার স্টল এর নিচে দাঁড়াতে বললো ! এ জিনিস কলকাতার রাস্তাঘাটে হর হামেশাই হয় কিন্তু এমন কেতা ধারী  শহরে এমন প্রস্তাব! ব্রুকলিন ব্রিজের সামনে কতকগুলো আফ্রো আমেরিকান রোড শো করছিল। আমি শুনেছি আমাদের দেশে গাঁয়ে  নাকি এজিনিস দেখা যেত, তবে আমার কাছে নতুন। খান কতক ছেলে হেসে নেচে কুঁদে অভিনয় করার পর যখন টাকা চাব শুরু করলো, তার আগের ডায়লগ তা বেশ। "তোমরা ভাবছ হয়ত এইসব টেলেণ্টেড ছেলেপুলেরা এখানে কি করছে।.উমমহাঁ ঠিক ধরেছেন টাকার জন্য, তাই লজ্জা ত্যাগ করে একে ডলার দিন " ।

আমার খুবই ইচ্ছে ছিল সেন্ট্রাল পার্ক এ খানিকক্ষণ সাইকেল চালাবো , কিন্তু কি বলব মশাই। কি খোরাকটাই  না হলাম। আমি আর আমার বন্ধুটা  গেছি, দুটো সাইকেল নেব।  দাম জিগ্গেস করায় বলল নাকি ও সস্তায় দেবে খুব আর বাচ্চার সাইকেলটা ফ্রি!! রেগে গিয়ে  শিগগির চলে এলাম, লোকটা অবশ্য ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছিল, বুঝলনা কেন রেগে গেলাম, ফ্রি শুনে তো লোকে খুশি হয়! 

খুব খিদে পেয়েছে।  পান -আহারের   সন্ধান করতে হয়।  এদিক সেদিক ঘুরে জিপিএস দেখে ৪কাছাকাছি যেখানে পৌঁছলাম  , সম্ভবত জায়গাটাতে  ফরাসী বেশি থাকে। মানিব্যাগ এর মায়া ত্যাগ করে এক বেশি কেতাওয়ালা রেস্টুরান্ট এই ঢুকেছি। এদেশে খাবার দাবার , বা পানাহারের জন্য বেশি কেতাওয়ালা জায়গায় যাবার দরকার পরেনা, মানে যেতে তো পারেনই , সে যাই হোক , নেহাত আমাদের খিদে পেয়েছিলো খুব।  কি বলবো আর ইংরাজি যে অমন ফরাসী হয়ে যায় মেনুকার্ড  না দেখলে বুঝতেই পারতাম না! কিচ্ছুটি  বুঝতে না পেরে একখানা চিকেন লেখা আছে এরকম ডিশ  অর্ডার দিলাম। অর্গানিক চিকেন নাম ছিল। অরগানিক মানে হেলদি চিকেন হবে ভেবেছি, এলো কিনা , কুমড়,বেগুন আর চিজ দিয়ে চিকেন!!! হাঁ রান্না নাই বা জানতে পারিস, আমিও জানিনা, তাই বলে কুমড়ো  দিবি চিকেনে! অর্নবদার বাড়ি গিয়ে, বাঙালি মাছ খেয়ে তবে স্বস্তি, তার আগে অব্দি বাসএ ক্রমাগত স্বপ্ন দেখেছি, একটা মুরগী  তার মুখটা কুমড়ো, আর সে বেগুন বিক্রি করছে....
  

Thursday, August 27, 2015

নানারকম ৬

কোনো জায়গায় ঘোরা মানে শুধু  পাহাড় নদী পর্বত তো না, সেখানকার মানুষ হলো আসল। তবে মানুষের অভ্যেস বোধহয় যেখানে যায় সেই জায়গাটা ছেড়ে আসা জায়গাটার মতো  করে বানিয়ে নেওয়া। আর সত্যি বলতে কি মানুষ যে জায়গাটা বা জিনিসটা ছেড়ে চলে যায় বা যেতে বাধ্য হয় সেটাকেই সেরা বলে মনে হয়। তাই জন্যই হয়ত গল্প উপন্যাসে যত ওপার  বাংলার গল্প পড়ি , যারা বাধ্য হয়ে চলে এসেছে , তাতে প্রাচূর্য্যের ছড়াছড়ি। আমি কোলকাতার কথা ভাবলে ঘাম. মশা , জল জমা কিছুর কথা ভাবিনা, কোলকাতা  এখন আমার কাছে আপাতত এল ডোরাডো।  যাই হোক, আমি হুতুম প্যাঁচা না আর আমার ওই চোখে দেখার ক্ষমতাও নেই।  তাই বেশি জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় না যাওয়াই  ভালো! 
ডেনভারটা পাহাড়ি অঞ্চল, তাই ছোট ছোট নদী আছে অনেক, সেগুলো নালাও বলা যায় বলেছি আগেই। তবে  এদের আবার ছোট জিনিসকে হাইপ করার অভ্যেস  বা বদভ্যেস আছে। মানে জন স্পার্ক বলে আমার এক ক্লায়েন্ট বলেছিল হুভার ড্যাম নাকি প্রায় অষ্টম  আশ্চর্যের মত ! তাহলেই বোঝো।  তবে এই নালা বা নদী গুলো যেহেতু বরফ  গলা জল দিয়ে পুষ্ট, মে ,জুন জুলাই মাসে নদী গুলোয় খুব স্রোত থাকে।  ফলে ওয়াটার  রাফটিং এর জন্য আদর্শ। মে মাসে যাওয়া যায়না কারণ অত্যধিক ঠান্ডা জল হয়। আমরা গিয়েছিলাম এই গরমে।  চারিদিকে পাহাড় ঘেরা, তীব্র স্রোতের মধ্যে দিয়ে নৌকো বেয়ে চলা, সে এক দারুন অভিজ্ঞতা। মাঝে নৌকো আটকে গেলে কোনো পাথরে, সবাই মিলে চেষ্টা করে ছাড়া পাওয়ার মজাটাই অন্য।কপাল ভালো ছিল না খারাপ জানিনা বৃষ্টি নামল, সাথে দুরন্ত হাওয়া। বৃষ্টিতে ভিজে নৌকো চালাতে যেমন ভালো লাগছে তেমনি ঠান্ডা লাগছে।  নৌকো বাওয়ার পরিশ্রমে ততটা বুঝছিনা হয়ত কিন্তু পৌছনোর পর সে কি কাঁপুনি ভাই! অনেক প্রকৃতি প্রেম হয়েছে ভাই এবার বৃষ্টিটা থাম একটু।  কোনমতে জামা প্যান্ট বদলে গাড়িতে উঠেই হিটার অন করে নিশ্চিন্তি।

বিকেলে মাঝে মাঝে জিম যাই।  আহা অত হাসার কি শুনি  কত্তা ! ছোটবেলায় তো শুনতাম আমি নাকি লোকের হাড়েদুব্বো গজিয়ে দিতে পারি, তা নিজের গায়ে একটু মাসল গজাতে পারে না নাকি ! তাছাড়া জিমটা সুইমিং পুলের পাশে বলে আমি তো আমি আর ওদিক পানে চেয়ে দৌড়ই না, ওদিকে বড্ড রদ্ধুর, তার চেয়ে উল্টোদিকে আয়নের দিকেই আমি তাকিয়ে কসরত করি।  তো ওখানে এক আমেরিকান ছেলের সাথে পরিচয় হয়েছে, ব্রুক নাম।  তারা ৯ ভাই দুই বোন !! বোঝো!  মানে নিজেরাই ফুটবল টীম নামাতে পারে আর কি।ছোটো ভাইটা  বোধ হয় বছর ছয়েক এর হবে।ব্রুকের  ছেলে হবে শিগগির, তা ওর বেবী শাওয়ার এ  গেছিলাম। মানে ওই বাঙালির স্বাদ যেমন হয় ওই টাইপ  ব্যাপার তবে এরা তো জিভে প্রেম ব্যাপারটা বোঝে না তাই  কিছু কুকি, গাজর, ফলমূল , কোল্ড ড্রিঙ্কস  রাখা থাকবে। তারপর লোকজন ওদের জন্য প্রার্থনা করবে। তো সবাই চোখ টোখ বুজে, গম্ভির  মুখে যখন প্রার্থনা করছে আমি নজর রাখছি কুকি গুলোর  আমার মতই এক মক্কেল (পরে জেনেছি ওটা ব্রুকের ভাই) , সে জানে প্রার্থনার থেকে কুকির জোর বেশি, পাগলা প্রার্থনা তো আসবে যাবে। কুকি গুলোকে  তাছাড়া  একটু নজরে রাখাও তো পরম কর্তব্য।  তো আমার সাথে চোখাচোখি হতে চোরে  চোরে  মাসতুত ভাই গেলাম! আমার জন্য একখান নিয়ে আসলো যাতে ওই  প্রার্থনা হজম হয়।
Add caption


ব্রুক আর ক্রিস্টিন 

কি সব ভুল ভাল খেলা , চোখ বুজে বাচ্ছার  ন্যাপি বদলানো।














ওর  নাম টান্ডেন , বছর দশেক বয়েস,ওর একখান পিঠোপিঠি ভাই আছে জেনী  না কি যেন নাম। দু মক্কেলই ওস্তাদ বেশ। এদের সাথেই গিয়েছিলাম পিকনিক তথা কায়াকিং করতে। ওদের নিজস্ব নৌকো আছে। এদের দেশে একটা জিনিস লক্ষ্য করেছি , বয়েসে ছোটো মানেই পূজোর  ঘট হয়ে বসে থাকবে অমন না।  নৌকো গুলো বেশ ভারী। গাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়ার সময়  একটা নৌকোর আমি একদিক ধরেছিলাম আর অন্যদিক ওই দুই মক্কেল। এমন না লোকজন হাঁ  হাঁ  করে আসবে, কি বাহাদুরী  দেবে। এমন কি ওই ৬ বছরের বাচ্ছাটাও মাছ ধরার সরঞ্জাম বয়ে নিয়ে গেলো। এদের বিশাল বড় যৌথ পরিবার, যেমনটা আমাদের দেশে দেখা যেত দেখে  আমার ছোটবেলাটা  মনে পরে যাচ্ছিলো।  আমার ছোটোবেলাও  কেটেছে জয়েন্ট ফ্যামিলিতে ,হাঁ মেজাজে তো তফাত আছেই। ওই জেনী  ও দৌড়ে  গিয়ে নৌকোয় চড়ে বসলো নৌকোগুলো পরীক্ষা করার সময়, লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই ব্যাস অমনি কোথাথেকে এক বনকর্মী এসে ক্যাঁক  করে ধরে ফাইন করে দিলো। এদেশে তো শাস্তি  মানে বাবা বাছা  করে বলা যে তুমি কাজটা মতেই ভালো করনি, মারা ধরার উপায় নেই। ফাইন  দিয়ে সকলের খানিক মন খারাপ হলো, তাই বলে জেনী  দমার পাত্র  না, বালির মধ্যে ঢুকে মারমেড  হলো।  আমি যদি ওরকম ফাইন খাওয়াতাম নির্ঘাত একটা শোরগোল হত। মা-বাবাই এর মার , আমার ভ্যা , কারোর না কারোর এসে আমাকে সামলানো, এরা দেখলাম ওই সব বাপার নিয়ে ১০মিনিট সময় নষ্ট করলো খালি।








সেই বিখ্যাত জেনী 






আমরা পিকনিক করছিলাম একটা নদীর পাশে।  নদী বলাটা যদিও জায়েজ হবে না , তো পাহাড়ি খাল  তো তাই বেশ খরস্রোতা। তো ওখান থেকে হ্রদে যাওয়া সহজ কিন্তু আবার ফিরে আসাটা মুশকিল হবে ভেবে ঠিক করা হলো যে আমরা কয়েকজন নৌকো এবং জিনিসপত্র নিয়ে হ্রদ অব্দি চলে যাই , বাকিরা গাড়িতে আসুক ,অহ্রদে পৌছলে বাচ্ছা  গুলো নৌকোয় চড়তে পারবে।  দিব্বি রেস করে যাওয়া হচ্ছিল , কিন্তু  হ্রদের এদিকটা যে কোনো কারণেই হোক  জল কম,  মানে এতটাই অগভীর যে নৌকো থেকে নেমে নৌকো ঠেলে নিয়ে যেতে হলো।  কাদায় চটি আটকে যাচ্ছে ,পিছলে পরার প্রবল সম্ভবনা ( সে সম্ভাবনা সত্যি করে ইমরান আর আলেক্স পরেও গেল) তবুও সব মিলিয়ে দারুন লাগে।  এক ঝঁক  পেলিক্যান্ বসে আছে ,তাদের অবশ্য  দূর থেকে দেখাই  ভালো যদিও কারন  কাছে গেলে তীব্র গন্ধে অস্থির হতে হয়।






গভীর মনোযোগ দিয়ে মাছ ধরছে কয়েকজন।  একজন নাকি ১০পাউন্ডের ক্যাট ফিশ  ( আমাদের আড় মাছের মত) পেয়েছে। এই মাছ শিকারী দের ভয় ভক্তি সব করি।  বাপরে বাপ কি ধৈর্য্য , তাছাড়া আমার আমার মাছ ধরার কপাল খারাপ খুব , মাছেরা আসে টোপ খায় এবং বড়শী  খালি করে চলে যায়।  একবার ছোটো  বেলায় বাবাই আমার জন্যে একটা মাছ এনে দিয়েছিল বাজার থেকে , মাছটা তখনও  জ্যান্ত ছিলো  , আমি করুনা  বশত  তাকে পুকুরে নিয়ে গিয়ে জল ছিটিয়ে বাঁচাতে চেয়েছিলাম।  মাছটা কত বড় নিমক হারাম থুড়ি জল হারাম যেই না জলটল খেয়ে একটু বল হলো একটা ডাইভ  মেরে  'দাদা আমি বাঁচতে  চাই বলে' বেবাক মাঝ পুকুরে!  কি হেনস্থাটাই  না হয়েছিলো  আমার।  মাছেদের তাই আমি তারপর থেকে প্লেটেই আপ্যায়ন  করি।

সেদিন আমাদের অফিসের সামনের মাঠে দুটো ঘোড়া।  একটা ব্রাউন আর একটা সাদা। কোনভাবে কোনো ranch  থেকে পালিয়ে এসেছিল। সিকিউরিটিরা বোকার মত ওদের সামনে হুইসেল বাজাল আর দুজনেই সারা মাঠ ধরে ছুটে বেড়াল। ধরা দেবেনা।  স্বপ্নে সাদা ঘোড়ার  সওয়ারী  আমি কতবার হয়েছি, অথচ সামনে খোলা মাঠে সাদা ঘোড়া  সত্যি যখন এলো আমি মিটিং করতে চলে গেলাম।




Tuesday, August 11, 2015

ঘুরতে ঘুরতে (নিউয়র্ক)

সৈয়দ মুজতবা আলী নাকি একবার বলেছিলেন 'পেটের দায়ে লিখি মশাই' . আমার নগন্য ব্লগ এ ওনার নাম দিয়ে শুরু করার অপরাধে  জন্য আমায়  যা খুশি বলতেই পারেন।তবে কিনা  আমি এদেশে এসেছিলাম যখন আমার লাগেজ এর ওজনের বেড়াজালে আমি খান ৪এক বই খালি আনতে পেরেছিলাম। তারমধ্যে একটা হলো দেশে বিদেশে। প্রথমবার যখন বইটা পড়ি তখন অফিসে PL  এর চোখ এড়িয়ে খুজতাম গুগলে  দেখতাম কাবুল জায়গাটা কিভাবে যেতে হয়. কেমন করে খাইবার পাস যাওয়া সম্ভব।  তো যা হোক আমি লিখি অক্ষম ভাবে আমার কিছু কথা, অভিজ্ঞতা বলতে। যদিও শোনার লোকের কিঞ্চিত অভাব ঘটে এই আর কি।
বছর খানেক হয়ে গেল দেশের বাইরে। আগেকার দিনের লোকের ধৈর্য্য সহ্য  ক্ষমতা সবই খুব বেশি ছিল নির্ঘাত। আমি অসংখ্যবার কথা বলে skype /hangout করেও মন খারাপ করি আর তারা সেইসময় মাসে একটা চিঠি পেলেই সন্তুষ্ট! ছোটবেলায় বিজ্ঞান আশির্বাদ না অভিশাপ এ বরাবরনি উট্রাল কমেন্ট করে এসেছি,( সে অবশ্য নম্বর বাড়ানোর জন্য) কিন্তু বিজ্ঞান  আমার কাছে আশির্বাদ অবশ্যই। বিশেষ করে গত ১০-১৫ বছরে যা পেয়েছি তা অভাবনীয়। অনেকে বলেন অবশ্য, 'না আমার এইসব টেকনোলজি ভালো লাগেনা আমার সেই পুরাতন জামানার চিঠি'  ভালো। তাঁরা বলেন অবশ্য ফেসবুকে ! তাদের এই পুরানো প্রীতি দেখলে আমার আমিশ দের কথা মনে হয়।  আমিশ  মানে একটা জাতি যারা জার্মানি থেকে ১৮ শতকে মার্কিন মুলুকে পাড়ি  দিয়েছিল। তারা যুদ্ধ পছন্দ করেনা শান্তিপ্রিয় লোক।  এই ওব্দি ঠিক আছে কিন্তু গোলমালটা  হলো তারা নতুন  টেকনোলজি এড়িয়ে বাঁচে। মানে ড্রায়ার ব্যবহার করবেনা রোদে জামাকাপড় মেলবে,ঘোড়ার গাড়ি চড়ে যাবে,মোটর গাড়িব্যবহার করবে না, ইলেকট্রিসিটি ব্যবহার করেনা, লন্ঠন ব্যবহার করে। ব্যপার হলো এরা টেকনোলজি ব্যবহার করে তো বটেই, মানুষের ব্যবহৃত প্রথম টেকনোলজি হলো চাকা, সে জিনিস যখন ব্যবহার করতে পারছে ...  খালি পুরনো টেকনোলজি ব্যবহার করে এই আরকি। আর তাছাড়া আমাদের মত গরিব দেশের মানুষের কাছে বাপারটা হাস্যকর হয়ে যায়, কারণ আমাদের বহু গ্রামে ইলেকট্রিসিটি এখনো অধরা, ঘোড়ার  গাড়ি না তাঁরা পা গাড়ি ব্যবহার করে. আর সেখানে অমন পিচের রাস্তাও নেই। তবে হাঁ  কোনো জিনিস না পেয়ে ত্যাগ করা আর পাবার সুযোগ থাকলেও তাকে অগ্রাহ্য  করা দুটো অবশ্যই আলাদা। ও হাঁ  বলা হয়নি আমিশ  দের গ্রামে আমি কিছুদিন আগে ঘুরতে গেছিলাম। দীর্ঘসময় দেশে নাযাওয়ার কারনে আমার এক সপ্তাহ ছুটি মঞ্জুর হয়েছিল। সেই ছুটি দিয়ে আমি ইস্ট কোস্ট ঘুরে এলাম। আমিশ  দের গ্রামটা পেনসিলভেনিয়া তে।  ওখানে অনান্যাদি আর অরুনাংশুদা থাকেন। ভারী চমত্কার মানুষ দুজন। বহুদিন এদেশে থেকেও দিব্বি বাঙালি আছেন, অথচ একই সঙ্গে প্রচন্ড ভদ্র আর উদার। আচ্ছা ঘোরার গল্পটা প্রথম থেকেই বলি।  অনেক নতুন জিনিস নতুন জায়গা দেখেছি তো তাই সব ঘেঁটে  ঘ করছি।
ওই যে যাকে বলে স্ট্রিট স্মার্ট , আমি একটু কম, একটু মানে বেশ খানিকটা।  তাই ডিল ফিল ছাড়াই টিকেট কেটেছিলাম। গন্তব্য প্রথমে নিউয়র্ক, ওখান থেকে নায়াগ্রা, তারপর অনান্যাদি বাড়ি। নিউজার্সিতে  অর্নবদা থাকে।ওখানে গিয়ে উঠব।  রাতের ফ্লাইট ভোর বেলা পৌছবে  । ফ্লাইট এ ঘুম আমার হয়না তেমন, তাই অনেক অনেক দিন পর ব্রাহ্ম মুহূর্ত দেখার সুযোগ ঘটল।  আমার "vacation " সেই মুহূর্ত থেকেই শুরু  হয়ে গেল।   ফ্লাইট থেকে সেই দৃশ্য ক্যামেরায়  ঠিক ধরতে পারিনি, কিন্তু একটু একটু করে অন্ধকার কেটে ভোর  হওয়াটা ততটাই উপভোগ করলাম যতটা ওই সময় ঘুমিয়ে করি। 





আমাদের জিপিএস ঠাকুমা কিন্তু বহুত ভোগালো নেয়র্ক  এয়ারপোর্ট থেকে বের করে ফ্রীওয়েতে  তুলতে। যাই হোক ঘুরে পেঁচিয়ে , রাস্তা ভুল করে (অর্নবদা একটা সিগন্যালও ব্রেক করে ফেলল ) পৌঁছলাম। 
 স্ট্যাচু অফ লিবার্টির টিকেট কেটে রেখেছিলাম আগের থেকে। ভাগ্গিস! ওই ভিড়ে টিকিট কাটতে হলে পেটের  ইলিশ( বৌদি বেরোনোর আগে চমত্কার একখানা ইলিশ খাইয়েছিল) নির্ঘাত বেরিয়ে হাডসন নদীতে সাতার কাটতে চলে যেত!
ঘুরে ঘুরে এই সুবিখ্যাত মার্কিন দেবী দর্শন তো হলো।  অনেক ইতিহাস লেখা ছিল , আমি খুব একটা ইংরেজি পড়তে ভালোবাসিনা, কেমন যেন পড়াশোনা করছি পড়াশোনা করছি ভাব আসে। তাই কাটিয়ে দিলাম। তবে এই সুবিখ্যাত মূর্তিটি যথারীতি ওভার হাইপড ! পরিশ্রমটা অস্বীকার করছিনা (তাও আমেরিকানরা বানায়নি, ফ্রান্স এ বানানো বস্তু, টেনে এনেছে, এমনই  কি আর আমেরিকাই ইমিগ্রান্টই নজরে পরে!

ফ্রান্স এ তৈরি হওয়া জিনিসটি এখানে এনে এসেম্বল করাটা সহজ কাজ ছিলনা নিশ্চই


এই লিবার্টি আইল্যান্ড এর পাশে এলি'স আইল্যান্ড , যেখানে সচকিত বিজ্ঞাপন 'দেখো এই আমাদের দেশ USA , কত লোকজন কত দেশ থেকে এসেছে, অসুস্থ হলেও আমরা তাদের দেখেছি, দেখেছ ওইযে রাশিয়া থেকে,হাঁ হাঁ ইংল্যান্ড থেকেও, জার্মানি থেকে সব্বার একটাই আসার জায়গা । আমরা তো নিতেই চাই সবাইকে কিন্তু কি করবো  এদের অনেকরই ডকুমেন্ট ছিলনা, তাও দেখেছ তাদের কিসুন্দর ব্যবস্থা করে দেশে পাঠিয়েছি!'  আমার দেখে অবশ্য  মজা লাগছিল, USA  এর নাম শুনে  লাল গড়িয়ে গঙ্গা খালি তাহলে খালি তৃতীয় বিশ্বেরই হয় না !
স্ট্যাচু অফ লিবার্টি যেতে গেলে ব্যাটারি পার্ক এ আসতে হয়। এমন অদ্ভূত নাম কেন কে জানে। কিছু লোকজন স্ট্যাচু অফ লিবার্টি সেজে, কেউ কাঁধে সাপ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। 


পায়ে হেঁটে , সাবওয়েতে চড়ে ঘুরতে ঘুরতে ,সত্যি কথা বলতে আমার নিউয়র্ক শহর দেখে  খালি ধর্মতলা পার্ক স্ট্রিট মনে পরছিল, মানে নিঃসন্দেহে কলকাতার থেকে ঢের বেশি পরিচ্ছন্ন,বাড়ি ঘরের চেহারাও অনেক ঝকঝকে, তবু রাস্তার ধারে জিনিসপত্রের গাড়ি, খাবারের দোকান আমার চেনা শহরটাকে বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছিল। 

  
বিরিরানির দোকান থাকবেই ;)


ব্রুকলিন ব্রিজে ওঠার সময় দেখি একদল স্ট্রিট শো করছে।নেচে কুদে অভিনয় করে, কিন্তু আমাদের দেশেও যেমন দড়ির খেলা,বাঁদর নাচ, সাপখেলা(শেষোক্ত দুটোই  অবশ্য  ছোটবেলায় দেখা) দেখে পয়সা না দিয়ে লোকে কেটে পড়তে চায়, সে গল্প এখানেও দেখলাম।মানে সবাই কি আর , তবে ভিড় পাতলা হয়ে গিয়েছিল। 




ব্রুকলিন ব্রিজ এদের পুরনো ব্রিজ গুলোর অন্যতম। তবে ভাই বহূত  খাটনি পরে, কত্তটা রাস্তা রে বাবা! হেঁটে  হেঁটে  পা যখন হাতে চলে আসার উপক্রম তখন গিয়ে ব্রিজের উপর পৌছলাম। কাল হো  না হো  এর দৌলতে গিজগিজ করছে ভারতীয়। 





একা একা আর একদিন এসেছিলাম নিউয়র্কে। সেদিন তো ছড়িয়েছি  গোড়াতেই। নিউর্য়র্ক  এর সাবওয়েটা  সত্যি দারুন। যে কোনো প্রান্ত থেকে যেকোনো প্রান্তে ট্রেন এ করে চলে যাওয়া যথেষ্ট সহজ। কিন্তু ছড়ু  হলে তো সে সহজ জিনিসেও ছড়াবে। তাই যথারীতি উল্টোদিকের ট্রেন এ উঠেছি। আমার গন্তব্য মেট্রোপলিটন আর্ট মিউজিয়াম। সাবওয়েতে টাওয়ার থাকে না বলে আমি গুগল  ম্যাপ খুলেই রেখেছিলাম, তাই কিঞ্চিত সন্দেহ হলো। তা আমার অভিজ্ঞতা  থেকে জানি, বেশির ভাগ লোক, জিপিএস এর বাইরে কিছুই জানে না। তাও এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলাম যদি কাউকে জিগ্যেস  করা যায়। তা কামরায় লোক বেশি নেই। একজন চীনা/কোরিয়ান/জাপানী মহিলা পাশে, ষষ্ঠেন্দ্রিও বলছে একে জিগ্গেস করে ফল হবে না বিশেষ। ইয়ে  মানে উল্টোদিকের ওই অল্পবয়েসী মহিলা কেমন সন্দেহ সন্দেহ দৃষ্টিতে গোড়া  থেকেই দেখেছে আমায়, খামোখা ৯১১ এ কল করে দেবে বাবা। একজন বিশাল চেহারার আফ্রো-আমেরিকান  বসে বসে ঢুলছে, ওকে দেকে রাস্তা জিগ্গেস করলে সিওর ট্রেন থেকে ছুড়ে  ফেলবে। ঐযে একখান ছেলে মন দিয়ে বই পড়ছে , ওকে জিগ্যেস  করাই যায়। একা একা ঘোরার ফলে আমার অনুমান ক্ষমতা কিঞ্চিত বেড়েছে দেখা গেল। যথারীতি ছড়িয়েছি! যাক পরের স্টেশন এ নেমে চেঞ্জ করে নেওয়া যাবে।(চলবে)



সাবওয়েতে 
এরকম বাস কলকাতাতেও চালু হলে মন্দ হয়না