Tuesday, August 11, 2015

ঘুরতে ঘুরতে (নিউয়র্ক)

সৈয়দ মুজতবা আলী নাকি একবার বলেছিলেন 'পেটের দায়ে লিখি মশাই' . আমার নগন্য ব্লগ এ ওনার নাম দিয়ে শুরু করার অপরাধে  জন্য আমায়  যা খুশি বলতেই পারেন।তবে কিনা  আমি এদেশে এসেছিলাম যখন আমার লাগেজ এর ওজনের বেড়াজালে আমি খান ৪এক বই খালি আনতে পেরেছিলাম। তারমধ্যে একটা হলো দেশে বিদেশে। প্রথমবার যখন বইটা পড়ি তখন অফিসে PL  এর চোখ এড়িয়ে খুজতাম গুগলে  দেখতাম কাবুল জায়গাটা কিভাবে যেতে হয়. কেমন করে খাইবার পাস যাওয়া সম্ভব।  তো যা হোক আমি লিখি অক্ষম ভাবে আমার কিছু কথা, অভিজ্ঞতা বলতে। যদিও শোনার লোকের কিঞ্চিত অভাব ঘটে এই আর কি।
বছর খানেক হয়ে গেল দেশের বাইরে। আগেকার দিনের লোকের ধৈর্য্য সহ্য  ক্ষমতা সবই খুব বেশি ছিল নির্ঘাত। আমি অসংখ্যবার কথা বলে skype /hangout করেও মন খারাপ করি আর তারা সেইসময় মাসে একটা চিঠি পেলেই সন্তুষ্ট! ছোটবেলায় বিজ্ঞান আশির্বাদ না অভিশাপ এ বরাবরনি উট্রাল কমেন্ট করে এসেছি,( সে অবশ্য নম্বর বাড়ানোর জন্য) কিন্তু বিজ্ঞান  আমার কাছে আশির্বাদ অবশ্যই। বিশেষ করে গত ১০-১৫ বছরে যা পেয়েছি তা অভাবনীয়। অনেকে বলেন অবশ্য, 'না আমার এইসব টেকনোলজি ভালো লাগেনা আমার সেই পুরাতন জামানার চিঠি'  ভালো। তাঁরা বলেন অবশ্য ফেসবুকে ! তাদের এই পুরানো প্রীতি দেখলে আমার আমিশ দের কথা মনে হয়।  আমিশ  মানে একটা জাতি যারা জার্মানি থেকে ১৮ শতকে মার্কিন মুলুকে পাড়ি  দিয়েছিল। তারা যুদ্ধ পছন্দ করেনা শান্তিপ্রিয় লোক।  এই ওব্দি ঠিক আছে কিন্তু গোলমালটা  হলো তারা নতুন  টেকনোলজি এড়িয়ে বাঁচে। মানে ড্রায়ার ব্যবহার করবেনা রোদে জামাকাপড় মেলবে,ঘোড়ার গাড়ি চড়ে যাবে,মোটর গাড়িব্যবহার করবে না, ইলেকট্রিসিটি ব্যবহার করেনা, লন্ঠন ব্যবহার করে। ব্যপার হলো এরা টেকনোলজি ব্যবহার করে তো বটেই, মানুষের ব্যবহৃত প্রথম টেকনোলজি হলো চাকা, সে জিনিস যখন ব্যবহার করতে পারছে ...  খালি পুরনো টেকনোলজি ব্যবহার করে এই আরকি। আর তাছাড়া আমাদের মত গরিব দেশের মানুষের কাছে বাপারটা হাস্যকর হয়ে যায়, কারণ আমাদের বহু গ্রামে ইলেকট্রিসিটি এখনো অধরা, ঘোড়ার  গাড়ি না তাঁরা পা গাড়ি ব্যবহার করে. আর সেখানে অমন পিচের রাস্তাও নেই। তবে হাঁ  কোনো জিনিস না পেয়ে ত্যাগ করা আর পাবার সুযোগ থাকলেও তাকে অগ্রাহ্য  করা দুটো অবশ্যই আলাদা। ও হাঁ  বলা হয়নি আমিশ  দের গ্রামে আমি কিছুদিন আগে ঘুরতে গেছিলাম। দীর্ঘসময় দেশে নাযাওয়ার কারনে আমার এক সপ্তাহ ছুটি মঞ্জুর হয়েছিল। সেই ছুটি দিয়ে আমি ইস্ট কোস্ট ঘুরে এলাম। আমিশ  দের গ্রামটা পেনসিলভেনিয়া তে।  ওখানে অনান্যাদি আর অরুনাংশুদা থাকেন। ভারী চমত্কার মানুষ দুজন। বহুদিন এদেশে থেকেও দিব্বি বাঙালি আছেন, অথচ একই সঙ্গে প্রচন্ড ভদ্র আর উদার। আচ্ছা ঘোরার গল্পটা প্রথম থেকেই বলি।  অনেক নতুন জিনিস নতুন জায়গা দেখেছি তো তাই সব ঘেঁটে  ঘ করছি।
ওই যে যাকে বলে স্ট্রিট স্মার্ট , আমি একটু কম, একটু মানে বেশ খানিকটা।  তাই ডিল ফিল ছাড়াই টিকেট কেটেছিলাম। গন্তব্য প্রথমে নিউয়র্ক, ওখান থেকে নায়াগ্রা, তারপর অনান্যাদি বাড়ি। নিউজার্সিতে  অর্নবদা থাকে।ওখানে গিয়ে উঠব।  রাতের ফ্লাইট ভোর বেলা পৌছবে  । ফ্লাইট এ ঘুম আমার হয়না তেমন, তাই অনেক অনেক দিন পর ব্রাহ্ম মুহূর্ত দেখার সুযোগ ঘটল।  আমার "vacation " সেই মুহূর্ত থেকেই শুরু  হয়ে গেল।   ফ্লাইট থেকে সেই দৃশ্য ক্যামেরায়  ঠিক ধরতে পারিনি, কিন্তু একটু একটু করে অন্ধকার কেটে ভোর  হওয়াটা ততটাই উপভোগ করলাম যতটা ওই সময় ঘুমিয়ে করি। 





আমাদের জিপিএস ঠাকুমা কিন্তু বহুত ভোগালো নেয়র্ক  এয়ারপোর্ট থেকে বের করে ফ্রীওয়েতে  তুলতে। যাই হোক ঘুরে পেঁচিয়ে , রাস্তা ভুল করে (অর্নবদা একটা সিগন্যালও ব্রেক করে ফেলল ) পৌঁছলাম। 
 স্ট্যাচু অফ লিবার্টির টিকেট কেটে রেখেছিলাম আগের থেকে। ভাগ্গিস! ওই ভিড়ে টিকিট কাটতে হলে পেটের  ইলিশ( বৌদি বেরোনোর আগে চমত্কার একখানা ইলিশ খাইয়েছিল) নির্ঘাত বেরিয়ে হাডসন নদীতে সাতার কাটতে চলে যেত!
ঘুরে ঘুরে এই সুবিখ্যাত মার্কিন দেবী দর্শন তো হলো।  অনেক ইতিহাস লেখা ছিল , আমি খুব একটা ইংরেজি পড়তে ভালোবাসিনা, কেমন যেন পড়াশোনা করছি পড়াশোনা করছি ভাব আসে। তাই কাটিয়ে দিলাম। তবে এই সুবিখ্যাত মূর্তিটি যথারীতি ওভার হাইপড ! পরিশ্রমটা অস্বীকার করছিনা (তাও আমেরিকানরা বানায়নি, ফ্রান্স এ বানানো বস্তু, টেনে এনেছে, এমনই  কি আর আমেরিকাই ইমিগ্রান্টই নজরে পরে!

ফ্রান্স এ তৈরি হওয়া জিনিসটি এখানে এনে এসেম্বল করাটা সহজ কাজ ছিলনা নিশ্চই


এই লিবার্টি আইল্যান্ড এর পাশে এলি'স আইল্যান্ড , যেখানে সচকিত বিজ্ঞাপন 'দেখো এই আমাদের দেশ USA , কত লোকজন কত দেশ থেকে এসেছে, অসুস্থ হলেও আমরা তাদের দেখেছি, দেখেছ ওইযে রাশিয়া থেকে,হাঁ হাঁ ইংল্যান্ড থেকেও, জার্মানি থেকে সব্বার একটাই আসার জায়গা । আমরা তো নিতেই চাই সবাইকে কিন্তু কি করবো  এদের অনেকরই ডকুমেন্ট ছিলনা, তাও দেখেছ তাদের কিসুন্দর ব্যবস্থা করে দেশে পাঠিয়েছি!'  আমার দেখে অবশ্য  মজা লাগছিল, USA  এর নাম শুনে  লাল গড়িয়ে গঙ্গা খালি তাহলে খালি তৃতীয় বিশ্বেরই হয় না !
স্ট্যাচু অফ লিবার্টি যেতে গেলে ব্যাটারি পার্ক এ আসতে হয়। এমন অদ্ভূত নাম কেন কে জানে। কিছু লোকজন স্ট্যাচু অফ লিবার্টি সেজে, কেউ কাঁধে সাপ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। 


পায়ে হেঁটে , সাবওয়েতে চড়ে ঘুরতে ঘুরতে ,সত্যি কথা বলতে আমার নিউয়র্ক শহর দেখে  খালি ধর্মতলা পার্ক স্ট্রিট মনে পরছিল, মানে নিঃসন্দেহে কলকাতার থেকে ঢের বেশি পরিচ্ছন্ন,বাড়ি ঘরের চেহারাও অনেক ঝকঝকে, তবু রাস্তার ধারে জিনিসপত্রের গাড়ি, খাবারের দোকান আমার চেনা শহরটাকে বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছিল। 

  
বিরিরানির দোকান থাকবেই ;)


ব্রুকলিন ব্রিজে ওঠার সময় দেখি একদল স্ট্রিট শো করছে।নেচে কুদে অভিনয় করে, কিন্তু আমাদের দেশেও যেমন দড়ির খেলা,বাঁদর নাচ, সাপখেলা(শেষোক্ত দুটোই  অবশ্য  ছোটবেলায় দেখা) দেখে পয়সা না দিয়ে লোকে কেটে পড়তে চায়, সে গল্প এখানেও দেখলাম।মানে সবাই কি আর , তবে ভিড় পাতলা হয়ে গিয়েছিল। 




ব্রুকলিন ব্রিজ এদের পুরনো ব্রিজ গুলোর অন্যতম। তবে ভাই বহূত  খাটনি পরে, কত্তটা রাস্তা রে বাবা! হেঁটে  হেঁটে  পা যখন হাতে চলে আসার উপক্রম তখন গিয়ে ব্রিজের উপর পৌছলাম। কাল হো  না হো  এর দৌলতে গিজগিজ করছে ভারতীয়। 





একা একা আর একদিন এসেছিলাম নিউয়র্কে। সেদিন তো ছড়িয়েছি  গোড়াতেই। নিউর্য়র্ক  এর সাবওয়েটা  সত্যি দারুন। যে কোনো প্রান্ত থেকে যেকোনো প্রান্তে ট্রেন এ করে চলে যাওয়া যথেষ্ট সহজ। কিন্তু ছড়ু  হলে তো সে সহজ জিনিসেও ছড়াবে। তাই যথারীতি উল্টোদিকের ট্রেন এ উঠেছি। আমার গন্তব্য মেট্রোপলিটন আর্ট মিউজিয়াম। সাবওয়েতে টাওয়ার থাকে না বলে আমি গুগল  ম্যাপ খুলেই রেখেছিলাম, তাই কিঞ্চিত সন্দেহ হলো। তা আমার অভিজ্ঞতা  থেকে জানি, বেশির ভাগ লোক, জিপিএস এর বাইরে কিছুই জানে না। তাও এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলাম যদি কাউকে জিগ্যেস  করা যায়। তা কামরায় লোক বেশি নেই। একজন চীনা/কোরিয়ান/জাপানী মহিলা পাশে, ষষ্ঠেন্দ্রিও বলছে একে জিগ্গেস করে ফল হবে না বিশেষ। ইয়ে  মানে উল্টোদিকের ওই অল্পবয়েসী মহিলা কেমন সন্দেহ সন্দেহ দৃষ্টিতে গোড়া  থেকেই দেখেছে আমায়, খামোখা ৯১১ এ কল করে দেবে বাবা। একজন বিশাল চেহারার আফ্রো-আমেরিকান  বসে বসে ঢুলছে, ওকে দেকে রাস্তা জিগ্গেস করলে সিওর ট্রেন থেকে ছুড়ে  ফেলবে। ঐযে একখান ছেলে মন দিয়ে বই পড়ছে , ওকে জিগ্যেস  করাই যায়। একা একা ঘোরার ফলে আমার অনুমান ক্ষমতা কিঞ্চিত বেড়েছে দেখা গেল। যথারীতি ছড়িয়েছি! যাক পরের স্টেশন এ নেমে চেঞ্জ করে নেওয়া যাবে।(চলবে)



সাবওয়েতে 
এরকম বাস কলকাতাতেও চালু হলে মন্দ হয়না 


5 comments:

  1. Deshe bidesher chobiwala version thakle kabul dekha hoye jeto..akhon jemon us ghurchi tor sathe....

    ReplyDelete
    Replies
    1. Ore baba bhoyanok barabari! Kothay deshe bideshe kothay amar elomelo bokbok!

      Delete
  2. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  3. Uchi hain building, lift teri bandh hain! Jodi NYC r uchu building gulo i lift bondho hoye jai, tahole ki hobe? Tor ei jhorer moto asha aar jhorer moto jawa aar tar majhe sob kichu chetepute newar mejaj ta durdanto! Jodi somoy ba sujog pas abar NYC asis! Tobe kalbaisakhi r jhorer moto noi; Ei sohor r sob rup oi 7 din e chena jai na!

    ReplyDelete
    Replies
    1. Arnab Da NYC er lift bondho hole sanghatik! vabo ekbar empire state er mathay hete uthte hochhe :D ....je kono sohori ki ar du-3 dine kichu bojha jay :( , thakte hoy jante hoy tobe na bojha jay :)

      Delete