Thursday, August 27, 2015

নানারকম ৬

কোনো জায়গায় ঘোরা মানে শুধু  পাহাড় নদী পর্বত তো না, সেখানকার মানুষ হলো আসল। তবে মানুষের অভ্যেস বোধহয় যেখানে যায় সেই জায়গাটা ছেড়ে আসা জায়গাটার মতো  করে বানিয়ে নেওয়া। আর সত্যি বলতে কি মানুষ যে জায়গাটা বা জিনিসটা ছেড়ে চলে যায় বা যেতে বাধ্য হয় সেটাকেই সেরা বলে মনে হয়। তাই জন্যই হয়ত গল্প উপন্যাসে যত ওপার  বাংলার গল্প পড়ি , যারা বাধ্য হয়ে চলে এসেছে , তাতে প্রাচূর্য্যের ছড়াছড়ি। আমি কোলকাতার কথা ভাবলে ঘাম. মশা , জল জমা কিছুর কথা ভাবিনা, কোলকাতা  এখন আমার কাছে আপাতত এল ডোরাডো।  যাই হোক, আমি হুতুম প্যাঁচা না আর আমার ওই চোখে দেখার ক্ষমতাও নেই।  তাই বেশি জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় না যাওয়াই  ভালো! 
ডেনভারটা পাহাড়ি অঞ্চল, তাই ছোট ছোট নদী আছে অনেক, সেগুলো নালাও বলা যায় বলেছি আগেই। তবে  এদের আবার ছোট জিনিসকে হাইপ করার অভ্যেস  বা বদভ্যেস আছে। মানে জন স্পার্ক বলে আমার এক ক্লায়েন্ট বলেছিল হুভার ড্যাম নাকি প্রায় অষ্টম  আশ্চর্যের মত ! তাহলেই বোঝো।  তবে এই নালা বা নদী গুলো যেহেতু বরফ  গলা জল দিয়ে পুষ্ট, মে ,জুন জুলাই মাসে নদী গুলোয় খুব স্রোত থাকে।  ফলে ওয়াটার  রাফটিং এর জন্য আদর্শ। মে মাসে যাওয়া যায়না কারণ অত্যধিক ঠান্ডা জল হয়। আমরা গিয়েছিলাম এই গরমে।  চারিদিকে পাহাড় ঘেরা, তীব্র স্রোতের মধ্যে দিয়ে নৌকো বেয়ে চলা, সে এক দারুন অভিজ্ঞতা। মাঝে নৌকো আটকে গেলে কোনো পাথরে, সবাই মিলে চেষ্টা করে ছাড়া পাওয়ার মজাটাই অন্য।কপাল ভালো ছিল না খারাপ জানিনা বৃষ্টি নামল, সাথে দুরন্ত হাওয়া। বৃষ্টিতে ভিজে নৌকো চালাতে যেমন ভালো লাগছে তেমনি ঠান্ডা লাগছে।  নৌকো বাওয়ার পরিশ্রমে ততটা বুঝছিনা হয়ত কিন্তু পৌছনোর পর সে কি কাঁপুনি ভাই! অনেক প্রকৃতি প্রেম হয়েছে ভাই এবার বৃষ্টিটা থাম একটু।  কোনমতে জামা প্যান্ট বদলে গাড়িতে উঠেই হিটার অন করে নিশ্চিন্তি।

বিকেলে মাঝে মাঝে জিম যাই।  আহা অত হাসার কি শুনি  কত্তা ! ছোটবেলায় তো শুনতাম আমি নাকি লোকের হাড়েদুব্বো গজিয়ে দিতে পারি, তা নিজের গায়ে একটু মাসল গজাতে পারে না নাকি ! তাছাড়া জিমটা সুইমিং পুলের পাশে বলে আমি তো আমি আর ওদিক পানে চেয়ে দৌড়ই না, ওদিকে বড্ড রদ্ধুর, তার চেয়ে উল্টোদিকে আয়নের দিকেই আমি তাকিয়ে কসরত করি।  তো ওখানে এক আমেরিকান ছেলের সাথে পরিচয় হয়েছে, ব্রুক নাম।  তারা ৯ ভাই দুই বোন !! বোঝো!  মানে নিজেরাই ফুটবল টীম নামাতে পারে আর কি।ছোটো ভাইটা  বোধ হয় বছর ছয়েক এর হবে।ব্রুকের  ছেলে হবে শিগগির, তা ওর বেবী শাওয়ার এ  গেছিলাম। মানে ওই বাঙালির স্বাদ যেমন হয় ওই টাইপ  ব্যাপার তবে এরা তো জিভে প্রেম ব্যাপারটা বোঝে না তাই  কিছু কুকি, গাজর, ফলমূল , কোল্ড ড্রিঙ্কস  রাখা থাকবে। তারপর লোকজন ওদের জন্য প্রার্থনা করবে। তো সবাই চোখ টোখ বুজে, গম্ভির  মুখে যখন প্রার্থনা করছে আমি নজর রাখছি কুকি গুলোর  আমার মতই এক মক্কেল (পরে জেনেছি ওটা ব্রুকের ভাই) , সে জানে প্রার্থনার থেকে কুকির জোর বেশি, পাগলা প্রার্থনা তো আসবে যাবে। কুকি গুলোকে  তাছাড়া  একটু নজরে রাখাও তো পরম কর্তব্য।  তো আমার সাথে চোখাচোখি হতে চোরে  চোরে  মাসতুত ভাই গেলাম! আমার জন্য একখান নিয়ে আসলো যাতে ওই  প্রার্থনা হজম হয়।
Add caption


ব্রুক আর ক্রিস্টিন 

কি সব ভুল ভাল খেলা , চোখ বুজে বাচ্ছার  ন্যাপি বদলানো।














ওর  নাম টান্ডেন , বছর দশেক বয়েস,ওর একখান পিঠোপিঠি ভাই আছে জেনী  না কি যেন নাম। দু মক্কেলই ওস্তাদ বেশ। এদের সাথেই গিয়েছিলাম পিকনিক তথা কায়াকিং করতে। ওদের নিজস্ব নৌকো আছে। এদের দেশে একটা জিনিস লক্ষ্য করেছি , বয়েসে ছোটো মানেই পূজোর  ঘট হয়ে বসে থাকবে অমন না।  নৌকো গুলো বেশ ভারী। গাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়ার সময়  একটা নৌকোর আমি একদিক ধরেছিলাম আর অন্যদিক ওই দুই মক্কেল। এমন না লোকজন হাঁ  হাঁ  করে আসবে, কি বাহাদুরী  দেবে। এমন কি ওই ৬ বছরের বাচ্ছাটাও মাছ ধরার সরঞ্জাম বয়ে নিয়ে গেলো। এদের বিশাল বড় যৌথ পরিবার, যেমনটা আমাদের দেশে দেখা যেত দেখে  আমার ছোটবেলাটা  মনে পরে যাচ্ছিলো।  আমার ছোটোবেলাও  কেটেছে জয়েন্ট ফ্যামিলিতে ,হাঁ মেজাজে তো তফাত আছেই। ওই জেনী  ও দৌড়ে  গিয়ে নৌকোয় চড়ে বসলো নৌকোগুলো পরীক্ষা করার সময়, লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই ব্যাস অমনি কোথাথেকে এক বনকর্মী এসে ক্যাঁক  করে ধরে ফাইন করে দিলো। এদেশে তো শাস্তি  মানে বাবা বাছা  করে বলা যে তুমি কাজটা মতেই ভালো করনি, মারা ধরার উপায় নেই। ফাইন  দিয়ে সকলের খানিক মন খারাপ হলো, তাই বলে জেনী  দমার পাত্র  না, বালির মধ্যে ঢুকে মারমেড  হলো।  আমি যদি ওরকম ফাইন খাওয়াতাম নির্ঘাত একটা শোরগোল হত। মা-বাবাই এর মার , আমার ভ্যা , কারোর না কারোর এসে আমাকে সামলানো, এরা দেখলাম ওই সব বাপার নিয়ে ১০মিনিট সময় নষ্ট করলো খালি।








সেই বিখ্যাত জেনী 






আমরা পিকনিক করছিলাম একটা নদীর পাশে।  নদী বলাটা যদিও জায়েজ হবে না , তো পাহাড়ি খাল  তো তাই বেশ খরস্রোতা। তো ওখান থেকে হ্রদে যাওয়া সহজ কিন্তু আবার ফিরে আসাটা মুশকিল হবে ভেবে ঠিক করা হলো যে আমরা কয়েকজন নৌকো এবং জিনিসপত্র নিয়ে হ্রদ অব্দি চলে যাই , বাকিরা গাড়িতে আসুক ,অহ্রদে পৌছলে বাচ্ছা  গুলো নৌকোয় চড়তে পারবে।  দিব্বি রেস করে যাওয়া হচ্ছিল , কিন্তু  হ্রদের এদিকটা যে কোনো কারণেই হোক  জল কম,  মানে এতটাই অগভীর যে নৌকো থেকে নেমে নৌকো ঠেলে নিয়ে যেতে হলো।  কাদায় চটি আটকে যাচ্ছে ,পিছলে পরার প্রবল সম্ভবনা ( সে সম্ভাবনা সত্যি করে ইমরান আর আলেক্স পরেও গেল) তবুও সব মিলিয়ে দারুন লাগে।  এক ঝঁক  পেলিক্যান্ বসে আছে ,তাদের অবশ্য  দূর থেকে দেখাই  ভালো যদিও কারন  কাছে গেলে তীব্র গন্ধে অস্থির হতে হয়।






গভীর মনোযোগ দিয়ে মাছ ধরছে কয়েকজন।  একজন নাকি ১০পাউন্ডের ক্যাট ফিশ  ( আমাদের আড় মাছের মত) পেয়েছে। এই মাছ শিকারী দের ভয় ভক্তি সব করি।  বাপরে বাপ কি ধৈর্য্য , তাছাড়া আমার আমার মাছ ধরার কপাল খারাপ খুব , মাছেরা আসে টোপ খায় এবং বড়শী  খালি করে চলে যায়।  একবার ছোটো  বেলায় বাবাই আমার জন্যে একটা মাছ এনে দিয়েছিল বাজার থেকে , মাছটা তখনও  জ্যান্ত ছিলো  , আমি করুনা  বশত  তাকে পুকুরে নিয়ে গিয়ে জল ছিটিয়ে বাঁচাতে চেয়েছিলাম।  মাছটা কত বড় নিমক হারাম থুড়ি জল হারাম যেই না জলটল খেয়ে একটু বল হলো একটা ডাইভ  মেরে  'দাদা আমি বাঁচতে  চাই বলে' বেবাক মাঝ পুকুরে!  কি হেনস্থাটাই  না হয়েছিলো  আমার।  মাছেদের তাই আমি তারপর থেকে প্লেটেই আপ্যায়ন  করি।

সেদিন আমাদের অফিসের সামনের মাঠে দুটো ঘোড়া।  একটা ব্রাউন আর একটা সাদা। কোনভাবে কোনো ranch  থেকে পালিয়ে এসেছিল। সিকিউরিটিরা বোকার মত ওদের সামনে হুইসেল বাজাল আর দুজনেই সারা মাঠ ধরে ছুটে বেড়াল। ধরা দেবেনা।  স্বপ্নে সাদা ঘোড়ার  সওয়ারী  আমি কতবার হয়েছি, অথচ সামনে খোলা মাঠে সাদা ঘোড়া  সত্যি যখন এলো আমি মিটিং করতে চলে গেলাম।




10 comments:

  1. চমৎকার হয়েছে লেখাটা, প্রদীপ্তা। তুমি যে এত ঘোরো, খুব ভালো ব্যাপার।

    ReplyDelete
  2. Moja pachhi...thamis na erokom huthat...

    ReplyDelete
  3. darun hoyeche Pradipta..chalie ja

    ReplyDelete
  4. Bhaloi to! Lekhai tor ghorar bohemian chap ta dhora pore!! Acha ke beshi choto? jenny na tui?

    ReplyDelete
    Replies
    1. Arnab Da last comment er jonno >:( :D , ar prothomtar jonno dhonyobad :)

      Delete