Sunday, February 12, 2017

সবুজ-নীল স্বর্গে (হ্যাভ্লক পর্ব )

নবমীর চাঁদ উঠেছে আকাশে, পরিষ্কার বিরাট আকাশে অজস্র তারা ঝিকমিক করছে। দূরে কোনো একটা রিসর্টে বোধহয় একদল বিদেশীরা আস্তানা গেড়েছে , সকালে দেখেছিলাম বটে কয়েকজনকে এই বিচেই ঘোরাঘুরি করতে। তাদের গান বাজনার আওয়াজ ভেসে আসছে। বিচে তেমন লোক দেখছিনা। একটা কাপল অব্দি নেই। হ্যাভলকের ডলফিন রিসর্ট এর বিচটা খুব মায়াময়। রিসর্টটা গাছপালাইয় ভরা । বিছানা থেকে শুয়ে সমুদ্র দেখা যায় তাই জন্যই কি লোকে ঘর ছেড়ে বাইরে এসে বসেনি। একজন বুড়ো মানুষ খালি নারকেল গাছের বেঞ্চে বসে আছে । 




ভদ্রলোকের সাথে আলাপ হয়েছে আমার । ব্যাচেলর, মহারাষ্ট্রের মানুষ, বুড়োদের জ্ঞান দেওয়া দোষ এখনো আচ্ছন্ন করেনি ভদ্রলোককে। আমায় বললেন ইয়ংম্যান  আমি এখানে এই নিয়ে সাতবার এলাম । তোমার বয়েসে বোধহয় প্রথমবার এসেছিলাম , তখন সব দেখার ইচ্ছেতে দৌড়াদৌড়ি করে আন্দামান ঘুরতাম। বার দুই এসেছি গার্লফ্রেন্ডদের নিয়ে , বার  দুই বন্ধুদের নিয়ে । এখানে এলে আর ফিরতে ইচ্ছে করে না ঠিকই আবার করেও বুঝলে । ও ভারী ধাঁধার জিনিস । কদ্দিন আছি কদ্দিন নেই , তার আগে প্রিয় জায়গা গুলো ভিজিট দিচ্ছে বুঝলে । যাও ইয়ংম্যান, ঘুরে এসো ...এ সময়খানা পাসিং ক্লাউডসদের দিলে তুমি আমায় গালি দেবে মনে মনে হাহাহা। 

আমিও আর বসিনি , অন্ধকারে সমুদ্রের নীল সবুজ রঙ দেখা যাচ্ছে না বটে কিন্তু নবমীর চাঁদে একটা নীলচে এফেক্ট দেখতে পাচ্ছি যেন । মনে ভুল নাকি কে জানে। সারাদিন ক্লান্তিহীন ভাবে সমুদ্র দেখে চলেছি বলেই নাকি?  রিসর্টএর এয়ারকন্ডিশন্ড বারে কিছু লোককে দেখেছি খানিক আগে তারা কি পাগল? এখানে এসে বিচের ধারে মদের গেলাস নিয়ে বসলেও বুঝতাম। গাছ ঝুঁকে এসেচে জলের ধারে । ওয়াই আকারের ডালের উপর আমি লম্বা হয়ে পা মেলে শুয়ে পড়েছি । পাতার ফাঁক দিয়ে ঝিরিঝিরি চাঁদ দেখা যাচ্ছে আর তারা । পায়ের কাছে সউদ্রের জল ছলাৎ ছলাৎ করছে । ইন্টারনেট এর কোনো অভাব বোধ করছিনা আমি , কোন রকম অভাবোধ মনে আসছে না । আহ কি আরাম।


আন্দামান এসেছি নয় রাত্রি কাটাবো বলে । তার মধ্যেই একদিন এখানে মানে হ্যাভলকে এসেছি । এত পরিষ্কার ঝকঝকে বিচ ,এত সবুজ দেখে আমি পাগলে গেছি। দুপুরে রাধানগর বিচে স্নান করতে গেছিলাম । ফেব্রুয়ারি বলেই বোধহয় লোকজন কম। তাও কিছু বাঙালী, কিছু নিউলি ম্যারেড কাপল ( মেয়েগুলোর হাত ভরা শাঁখা পলা , চুড়ি মেহেন্দি আর ছেলেগুলোর বংশংবদ ভাব দেখে মনে হচ্ছিলো) , কিছু সাদা চামড়ার লোকজন আছে বই কি । আমি একটু ফাঁকা একটা জায়গায় নেমেছিলাম । স্বচ্ছ কাচের মতো জল , যেন খাওয়া যাবে। চারিদিক সবুজে ঢাকা । এ সমুদ্রে ঢেউ নেই খুব বেশী । আমি ভেসে ভেসে সাদা বালি আর পাহাড় গাছ এইসবের দিকে চেয়েছিলাম । 







জলের রঙের এরকম ভ্যারিয়েশন আমি খুব বেশী দেখিনি । ক্যালিফোর্নিয়ার সমুদ্র কালির দোয়াতের মতো নীল ছিলো । আর দীঘা পুরী তো কোনোভাবেই এ লিস্ট এ আসবে না। এখানে তীরের কাছে পাথরেরর উপর সাদা জল তারপর সবুজ তারপর নীল। হ্যাঁ কালাপানি লোকে বললেও আ মার কাছে নীলই লাগছিলো । কালচে নীল । 


আন্দমান ঠিক উইকেন্ড ট্রিপের মধ্যে পড়েনা বলেই বোধহয় এখনো এত সুন্দর আছে । আমরা তো ইজিলি এক্সসসেবল জিনিস ভালো করে রাখতে জানিনা । হয়ত আমার কথাটা একটু ক্যাপিটালিস্ট , বুর্জোয়া টাইপ হচ্ছে কিন্তু তাও সব জিনিসে সবার অধিকারে আমি বিশ্বাসী না। তার ততটাই পাওয়া উচিত যে যতটার যোগ্য। আমি যদি গামছা পরে সমুদ্রে নামি বা নাইটি পরে তাহলে সমুদ্রের মর্যাদাহানী ঘটে এটা বোঝার ক্ষমতা যাদের নেই তাদের দীঘাই থাক স্নানের জন্য। ভালোবাসা আদর যত্ন রেস্পেক্ট প্রকৃতি কম বোঝে না। যারা দেয়না তারা পায়ও না।