Monday, January 30, 2017

বইমেলা

এ তুলো ধুনবে কে , কথাটা আমার ব্লগের জন্য।  আমার এক বন্ধুকে এই ব্লগের কথাটা বলেছি সেদিন, কি খ্যাক খ্যাক করে হাসলো মশাই কি বলব।  বললো সে ব্লগ পড়ে  কে ? আমি আর কি বলি , মান রাখতে ঢপ  দেওয়া শাস্ত্রে লেখা আছে। তাই  বললাম ,কেন , জানিস না কত্তো  লোক আছে পরে তারা , শুধু কি স্বদেশ বিদেশ থেকে অব্দি।  কি বলব আর , আয়সা খ্যাক খ্যাক করে হাসলো , নেহাত আমি সত্যি কোথায় প্রতিবাদ করতে পারিনা তেমন তাই  বেঁচে গেলো। তা কেউ পড়ুক না পড়ুক লিখি এক দু কথা।  আজ্ঞে  হ্যাঁ বইমেলা এসে গ্যাছে আর তা নিয়ে দু কথা লিখবো না তাও কি হয়। 

ফেসবুক এখন মোটামুটি মনোপলি বাকি ,  বিবাহ কিংবা মৃত্যু , পোস্ট দিয়ে খুন তো তুশ্চু , লোকে ফেসবুকে সেরা গ্রুপ পিকনিক প্রতিযোগিতা অব্দি নামিয়ে দিচ্ছে।  বাঙালির জীবনে দুটো জাতীয় দাবি, অম্বল আর লেখা।  আমার মতো প্রতিভাবিহীন লোক ব্লগে পোস্ট নামিয়ে দিচ্ছে আর ফেসবুকে সাহিত্য কর্ম করবেননা , বই লিখবেন ও শ দুই কপি বেচবেন না এটা অন্যায়।  তা ভালোর সাথে সাথে কিছু বাঁশ এসে টুকটাক খোঁচা মেরে যাচ্ছে বইকি।  এই ধরুন কাগজের শিলালিপি ( শিলালিপি কি করে কাগজের হয় তা আমায় জিজ্ঞেস করে লাভ নেই, আমার বুদ্ধি ওই মুরগির লেভেলের ) গ্রন্থটির জনপ্রিয় লেখক কে এড়িয়ে আপনাকে মেলায় যেতে  হবে।  দেখা হলেই ভদ্রতা করে হলেও বইটা কিনতে হবে , সে আপনি পড়তে চান বা না চান।  এ ছাড়াও আছে , যে সারাবছর প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বুক ফাটিয়ে লিখেছে জ্বালাময়ী ভাষণ তার বই বের হচ্ছে নামি পাবলিশার থেকে এরম নানা বৈচিত্র্যে ফেসবুক সরগরম।  বইমেলা এসে গ্যাচে।

কিছু কিছু লোক থাকে যাদের সব পুরোনো জিনিসই ভারী পছন্দ , আমাদের সময় হু হু বাবা কেমন হ্যারিকেন ছিল জানিস , মশারি পুড়িয়ে দিয়েছি তাতে কি অধ্যাবসায়ের আরেক নাম ছিল ইত্যাদি।  তা সেরকমই লোকের পোস্টও ফেসবুকে তাক লাগাচ্ছে। ' আমাদের সময় ধুলো ছিল আজ আর নেই আজ আর নেই , কোথায় হারিয়ে গেলো সোনালী ধুলো গুলো সেই।  আজ আর নেই।'  কিংবা কেউ লিখছে 'ধুলো ও হাঁচিদের দাবি মানতে হবে , ছোট বলে তাদের হটিয়ে দেওয়ার এ ভোগবাদী দুনিয়ার আক্রোশের তীব্র বিরোধিতা করলাম।'
হাঁচি বলতে মনে পড়লো , আমি বইমেলায় কত জন কে যে হেঁচে অন্যের গায়ে হাত মুছতে দেখেছি তার তুলনা বুঝি  স্রেফ দুর্গাপূজোয় মেলে।
এবারে বইমেলায় বড় বড় তাঁবু মতো করেছে,  স্টল গুলো সব। মন্দ না বেশ বাইরে স্টল নাম্বারও আছে। আর বড় পাব্লিশাররা অফকোর্স বাইরে। এখন বইমেলায় সব চেয়ে সুবিধে যেটা লাগে আমার ধূলোর ওই নাকানাকি বা চুলোচুলি নেই।

বছর দুই পর আমিও এবারে গেছিলাম বইমেলায়। আইন্সটাইনের অপ্রকাশিত সূত্রের একটি হলো যেকোনো স্থান , সঙ্গী বা সঙ্গীনীর উপর প্রভাবশীল । মানে গঙ্গার ধারে গার্লফ্রেন্ডের সাথে গিয়ে যেরকম লাগবে একা গিয়ে বা দঙ্গলে গিয়ে সেরকম লাগবে না । বইমেলার তা না কিন্তু । একবার বইএ মিশে গেলে আর কিছু লাগে না। তবে তেমন বইপড়ুয়া বন্ধু পেলে ঘোরাটা জমে যায়। 

বই পড়ুয়া মানেই জমবে তাও না। আমার এক বন্ধু আছে যে ভারী কঠিন কঠিন বই পড়ে, আমার সব মাথার উপর দিয়ে যায় সেসব বই। আমি তাকে এড়িয়ে যেতে ভালোবাসি বইমেলায়। আবার আরেক বন্ধু আছে যে প্রকাশকের সামনেই বলে এটা কিনেছিস, তুই কিছুই কিনিস না (নিজে অবশ্য কি কিনেছে ভগবানেও জানে না, প্রকাশক দূর কি বাত) আমি তাকেও এড়িয়ে যাই। একদল বাংলাদেশ এর স্টলের সামনে সেল্ফি তোলা ঝাঁককে পেরিয়ে, টিভি চ্যানেলের গেম শো টপকে, পাঁচ মেশালি প্রকাশনে ঢুকলে খানিক বই দেখা যায় স্বস্তিতে। 
ফেসবুক খ্যাত প্রকাশনা গুলোতে আমি তবু যেতে পারি বই দেখতে,  কেউ চেনে না  তাই "এটা আমার বই দেখুন না একবার" এ বক্তব্যকে গড়িয়াহাট বা কলেজস্ট্রীটের ফুটপাথ ধরে যাওয়ার সময় যেমন উপেক্ষা করা যায় তেমনই করা যায়। খুব অস্বস্তি লাগলে অন্য যে কোনো স্টলে চলে যাওয়া যায়। আর চেনা স্টল,  যে বই গছাবেই তার নাম্বার আর পজিশন মুখস্থ করে যাওয়াই ভালো।

এ বার বই মেলায় আমার একটা প্রাপ্তি হয়েছে, কি সেটা পরে জানাবো। কয়েকটা বই কিনেছি,  কয়েকটা পাইনি পরে কিনবো। বাকিরা কে কেমন ঘুরলো বইমেলা?

Thursday, January 19, 2017

উপনিষদ মহারাজ

"আরে দেখে চলতে পারেন না নাকি, অদ্ভুত লোকজন সব, না মেয়ে দেখলেই ধাক্কা মারতে ইচ্ছে করে"। 

ঝাঁ ঝাঁ করে বাক্যবান উড়ে এলো। তাকিয়ে দেখলাম, অল্পবয়সী না, তবে তরুণী,  সুন্দরী না  তবে মিষ্টি, তন্বী না বরং ঈষৎ পৃথুলা। আমার বয়স এখন ত্রিশ, কিছু না হোক খান দুই জোরালো আর খান পাঁচেক খুচরো প্রেম করেছি।  এ বয়েসে এসে খামোখা কাউকে ধাক্কা মেরেছি এ অপবাদ সহ্য শুনব কেন। মেয়েদের অত ইয়ে করার কিছু নেই আমার মতে আসবে যাবে,  না থাকলে কবিতা আউরাবে কিছু ন্যাকা বাঙালি এই তো। আমি আধুনিক সন্ন্যাসী, এসবে কিছু যায় আসে না।  অত অবাক হবার কিছু নেই। আধুনিক কবিতায় 'তুমি কাঁসার থালার আর আমি গাড়ির স্টিয়ারিং শুনে যখন চমকাননা সন্ন্যাসী আধুনিক শুনেও অমন ইয়ে করার কিছু নেই। আজ্ঞে না আসারাম বাপু টাইপ না। আমার নাম মহারাজ  উপনিষদ। অবশ্যই বাপ্ মা এর দেওয়া নাম না।  সন্ন্যাসী মানেই কোনো নেশা করবে না নির্মোহ হবে এমন তো না রে ভাই, স্বয়ং বিবেকানন্দ চা সিগেরেটের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন আমারও প্রচুর শখ ইত্যাদি আছে বৈকি।

 হ্যাঁ যা বলছিলাম আপনাদের রোমান্টিক নায়কদের মতো ভ্যাগাবন্ড না আমি। গরীব পকেটে পয়সাহীন চেয়ে চিনতে খাওয়া সমাজের প্রতিভূও না। আমার একটা ফার্ম হাউস আছে, তিরিশ বিঘে জমি নিয়ে। ক্ষতিকারক সার ছাড়া অবলুপ্তপ্রায় ধান ফলাতে চেষ্টা করি। কেবল পুরোনো বইয়ে যে আমের দেখা পাওয়া যায় সে আম গাছ খুঁজে আনতে চেষ্টা করি। খরচা অনেক হয় তবে আরাম যেটা হয় তা হল হারিয়ে যাওয়া বীজ ফের চালু করতে পারলে। এসব জিনিস বাজারে প্রচুর দামে কেনার লোক আছে।  কিন্তু সেইই সব না, আবার এ আমার আশ্রমও ঠিক না আশেপাশের গ্রামের লোকেদের কাজ করার জায়গা কিন্তু গ্রামের লোক মানেই বুক ভরা মধু ভাবার কারন নেই তাছাড়া দাদা মামা কাকারা মেলা ঝামেলা  আছে সে সব সাম্লাতে আমার ভাল্লাগেনা। আমার এক পার্টনার আছে সেই এসব দেখে, আমায় কি করে যেন সহ্য করে নিয়েছে ব্যবসাতে। আসলে সেই কোন ছোট্ট বেলার বন্ধুত্ব , সহজে ছেঁড়া মুশকিল। মাঝে মাঝে আমি পালাই,  পালাই মানে এই না এক বস্ত্রে বা প্রচুর টাকাপয়সা নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট জায়গায়। যখন যেমন ইচ্ছে করে তখন তেমন। কখনো ইচ্ছে হলে এএক বস্ত্রে কখনও রুক্স্যাক কাঁধে।এখন যেমন আমি বেরিয়েছি অনেকদূরের একটা ধোঁয়া ধোঁয়া গ্রামে যাবো বলে। গ্রামের নাম জানিনা, কোনোদিন দেখিনি কিন্তু কেমন জানি চোখে ভাসছে। প্রথমে কোলকাতা, এখানে কয়েকদিন এলোমেলো ঘুরব, ইচ্ছেমতন খরচা করব খেয়ে, কি কোলকাতা থেকে নৌকো ভাড়া করে সপ্তাহব্যাপী ঘুরব। নেশা আমার দাস, ইচ্ছে হলে মদ সিগারেট খাই ইচ্ছে না হহলে মাস বছর না খেয়েও থাকি।আমার নৌকো আমার আধিপত্য,  গড়গড়া থাকবে,  অম্বুরি তামাক থাকবে, বেকড রসগোল্লা থাকবে।  মানে জমিদারের মতন। তারপর হাতে যখন পয়সা তলানিতে ঠেকবে তারপর ভাবছি ট্রেনে টিকিট ফাঁকি দিয়ে ওই ধোঁয়া গ্রামখানায় যাবো। এবারের প্ল্যান এটাই তবে আমার মাথায় পোকা আছে তো তাই অন্যরকম হতেই পারে, প্ল্যান করে কিছু করব না এবারের ইচ্ছে এরম ঘোষনা হলো মাথার মধ্যে। যাই হোক এসবের আগে আমায় এরম অপবাদ দিচ্ছে কে তাকে একটু চমকানো যাক। আজ্ঞে হ্যাঁ আমি ইচ্ছে না হলে মেয়ে বলেই শিভালরি দেখাতে এক্সট্রা অ্যাডভান্টেজ দিইনা।  ইচ্ছে হলে দিই। এখন আকাশে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ আমার একটা পাহাড়ের নিচে দাঁড়িয়ে মোষের পিঠে চড়তে ইচ্ছে করছে তা না এই ভরা ধর্মতলায় আমি করে কাকে ধাক্কিয়েছি!!


"কেন আপনাকে খামোখা ধাক্কা দেব কেন? আপনার কাঁধ বেশ শক্তপোক্ত,  আরেকটু হলে আমার মোবাইল পড়ে যেত আমার কি দায় পড়েছে আমার মোবাইল কত হার্ড সে টেস্ট করার না,  মোবাইলখানা মাটিতে পড়ে গেলে কি থুতুর মধ্যে, আপনার ধারনা সেটা খুব উপভোগ্য আমার জন্য? "
মেয়েটা একটা মন্তব্য করেই এগিয়ে গেছিলো, কেউ তাকে ডেকে এরকম কথা বলবে আশা করেনি বুঝি।  আর এখনকার মেয়েদের যেমন ধারা, খান দুই ইংরেজি গুঁজে দিয়ে মুখে বিরক্তি, বিস্ময় রাগ এর ঝাল্মুড়ি বানিয়ে "হোয়াটস রঙ উইথ য়ু, এক তো অসভ্যের মতো না দেখে চলেন আবার ঝগড়া করেন"?
 খুব গম্ভীর হয়ে বললাম " দেখুন মহাশয়া,  আপনি যবন বাক্যে কি বললেন আমি বুঝতে পারিনি, বাকি কথার এক এক করে উত্তর দিচ্ছি, আমি দেখেই চলছিলাম আপনিই মোবাইল দেখে চলছিলেন।  দুই আমি ঝগড়া করছি এমন যদি বলেন আপনি ঝগড়াঝাঁটি করছেন"।
 মেয়েটার মুখে খুব দ্রুত একটা ভয়ের ছায়া খেলে গেলো, পাগলদের দেখলে  ভরা রাস্তাতেও যেরম ভয় নিয়ে রাস্তা ছেড়ে সরে দাঁড়ায়। এবার কি হবে আমি জানি,  খুব দ্রুত হাঁটবে মেয়েটা আর বাড়ি গিয়ে বলবে কি অসভ্য একটা।লোকের পাল্লায় পরেছিলো। সে সুযোগ না দিয়েই আমি বেশ সন্ন্যাসী সুলভ একখান হাসি যাতে হালকা তাচ্ছিল্য হালকা কয়টুক ইত্যাদি মেশানো থাকে না সেরকম ছুঁড়ে এবাউট টার্ন করে নিলাম।আরো ঘাবড়াক খামোখা লোককে কটু কথা বলবে না আজ।

এগিয়ে গেলাম প্রিন্সেপ ঘাটের দিকে।  নৌকা গুলো সব ডিঙি নৌকা টাইপ। আমাদের সব ভালো জিনিস শখের জিনিস আয়েসের জিনিস শেষ করে দেবার এ প্রবৃত্তি কেন কে জানে। একটা বাজরা পাওয়া যায়না একটা ঘোড়া পাওয়া যায়না ধুস। একাবোকা দেখেই বোধায় কেউ গা করছেনা।  হুঁ হুঁ যখন জানবে আমি পুরো সাতদিনের জন্য নৌকা ভাড়া করব তাহলে আর এরকম নির্লিপ্ত ভাব স্রেফ কর্পূর হয়ে যাবে। একজন বুড়ো মাঝিকে জিজ্ঞেস করলাম কাকা ভাড়া যাবে নাকি। আমায় অবাক করে হাত নেড়ে বলল না ভাড়া নাই। বোঝো!! মাথা এরপরেও গরম হয়নি সে স্রেফ ওই যোগবলের কারনে। অন্য জায়গায় যেতেই পারতাম, কিন্তু আমি তো সন্ন্যাসী মানুষ আমার ধৈর্য থাকা উচিত। বেশ মোলায়েম করে জিজ্ঞাসা করলাম কেন কাকা,  আজ বুঝি কাকিকে নৌকা চড়ানোর আছে, তা আমায় দাও না আমি না হয় হাল টেনে দেবো। যথারীতি রেগে টগবগ করতে লাগলো, এই ভাই তুই যা তো এখান থেকে,  ফোট। খুব মানে লাগলো জানেন। খুব মানে খুব,  বেশ শাপ টাপ দেওয়া যেত, নৌকা ডুবে যাবে আর আমায় গিয়ে উদ্ধার করতে হবে তাহলেই ঠিক হত। কিন্তু সন্ন্যাসী হলেও আমার সে তেজ নাই। তাই বললাম,  কাকা,  ফোট মানে? আমায় কি তুমি ফুলের কুঁড়ি বা বোম ভাবছ? আমি তোমার নৌকায় ফোটার ইচ্ছা প্রকাশ করিনি সত্যি, স্রেফ ঘুরব ভাবছিলাম। সে আর সময় ব্যয় না করে এগিয়ে গেলো। আমিও এদিক সেদিক দেখে একটা অল্পবয়সী ছেলেকে পাকড়ালাম। সন্দ সন্দ মুখ করে রাজি হলো।

 আমার একটা সমস্যা আছে পরিচিত লোকেদের সামনে আমার সংকোচ হয়, আমায় ভদ্রতা করতে হয় হেঁ হেঁ হাসি দিতে হয়। আজকাল ফেসবুক এসে অনে সুরাহা হয়েছে,  যেমন কেউ বলল,  "আমার ঠাকুমা পঁচানব্বই বছর বয়েসে চলে গেলেন আমাদের শিশুপ্রান কে অনাথ করে, যদিও উনি শেষে দু বছর বিছানা ছেড়ে ওঠেননি তাও ওনার স্নেহাশীষ  থেকে বঞ্চিত হইনি"..ইত্যাদি। সাথে শেষশয্যায় শায়িত ঠাকুমার সাথে সেল্ফি। আমার ঠিক জানা কত বছর অব্দি ঠাকুমাকে উনি এক্সপেক্ট করেছিলেন। মায়াদয়া থাকলে সন্ন্যাসী হওয়া যায়না। তাই আমার মায়াদয়া এমনিতেই কম,  রাস্তায় কুকুর এর পাল কে আদর দিলে আমার ইচ্ছেহয় ওদের বাড়িতে একপাল ছেড়ে দিয়ে আসতে।  পঁচানব্বই বছর বয়েসের একজন মারা যাওয়ায় যখন কেউ শিশু প্রাণে ককিয়ে ওঠে তাকে দেখলে আমার  অটোমেটিকালি শ্রদ্ধা হয়, আহা পারলে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করতাম মশাই। লোকসমাজে ভদ্রতা করে বলা  যায়না, কিন্তু ফেসবুক সমাজে যায়। সে মশাই এক অদ্ভুত জগৎ যে যা পারছে করছে। এক পাল লোক একটা খেলনা পেয়েছে, যেখানে প্রেম, চুমু, সেক্স পলিটিক্স, খিস্তি আঁতলামি সব চলে।  ভাটবকা তো বটেই।  আমি খিস্তি দিইনা সুড়সুড়ি দিই, তাই তো তাই তো মশাই, কি করে এ কচি বয়েসে (বয়েস কিছু না হোক চল্লিশ হবে) এ শোক সইবেন এরকম আরকি।

মাঝি ছেলেটা বেশ চটপটে, অম্বুরি তামাক গড়্গড়া আমিই এনেছিলাম, দেখে বলল স্টিক লাগবে কিনা। গাঁজার গন্ধ আমার পোষায়না আর গাঁজ টেনেও আমি সজ্ঞানে ছিলাম তাই আমার গাঁজার দরকার নেই বললাম।  তাকে বলাই ছিলো আগামি সাতদিন আমি এখানেই থাকবো। অবাক হয়েছিলো কিন্তু রাজিও হয়ে গেছিলো অ্যাডভান্স দিতে।
ধুঁকতে থাকা ট্রাফিক, ঘাম পেরিয়ে ছেলেটা পৌঁছয় অবশেষে। ভিড় দেখে গাছের পাতাগুলোও থমকে গেছে।  হাওয়াহীন সে শহরও শীতল হয়ে যায়। গঙ্গার বুকে সন্ধ্যে নেমে গেছে কখন। নৌকোয় টিমটিম করে হ্যারিকেন জ্বলে। মাঝিদের খাবারের গন্ধ নাকে ঝাপটা মারে। ছেলেটা বোধহয় অন্ধকারে নৌকোয়য় ভাসতে চায়,  মেয়েটা বোধহয় ভয় পায়। বাতাসে গুমোট ভাব বেড়ে যায়। দূরে ভোঁ শোনা যায়। অলস ট্যাক্সি শেষ সওয়ারির জন্য বসে।বাদামওলার আর বিক্রির চেষ্টা নেই। ট্রাফিক পুলিশও খানিক নিশ্চিন্ত। চা এর দোকানে ভিড় মরে গেছে।  মেয়েটার বাস ছেড়ে দেয়। ছেলেটা দৌড়ে বাসের পাদানিতে। গুমোট কেটে হঠাৎ ছাতিমের গন্ধ ছড়িয়ে যায়। ছেলেটার ফাঁকা শহর,  ছাতিম ফুলের গন্ধ আর হঠাৎ নামা বৃষ্টি সংগে নিয়ে হাঁটা দেয়।
আমি মহারাজ উপনিষদ যার প্রেম সয় না সেও খানিক থমকে দাঁড়াই তারপর আমার মাঝিকে বলি নৌকা ছাড়তে। 
গঙ্গায় আজকাল আর স্রোত কই। হেলতে দুলতে এগিয়ে যাচ্ছে নৌকা। প্রায় খাল হয়ে যাওয়া নদীর দুপাড়ে এলোমেলো দৃশ্য। একমনে নাক খুঁটছে একজন, একজন ঘাটের ধারে উদাস। আমার হঠাৎ ভারী ক্লান্ত বোধ হতে লাগলো। সাতদিন বোধহয় কাটাতে পারব না।
(কেমন লাগছে প্লিজ জানাবেন কেউ যদি পড়েন, এটা সিরিজ করন কিনা ভাবছি)

Tuesday, January 10, 2017

**** দুপুরবেলায় ****

দুপুরমানেই কিছু আলসে ব্যাপার নয়। অন্তত আপিসপাড়াতে তো নয়ই। পার্সোনাল লোন নেবার জন্য এক দুটো ছেলে যারা থাকে দুপুরবেলা কি একটু বেশী তৎপর হয়? আর আজকাল নেটব্যাঙ্কিং এর জমানায় কেউ কি সত্যিই নেয়? কি জানি। আমি ওদের পাশ কাটিয়ে তাড়াতাড়ি এগিয়ে যাই। পেয়ারামাখার ভ্যানের সামনে মাছির মতো ভীড়। এই ভীড়ে কিছু মহৎ প্রাণ থাকে যাদের দেখলেই শ্রদ্ধা হয়, তারা পাকা পেঁপে কিনে খায় এক প্লেট ভরে। রুটির ঝুপ্স আর ভাতের ঝুপ্স গুলোতেও খুব ব্যস্ততা। শিঙাড়ার দোকান বা ঝুপ্স এর কোনো চিহ্নই থাকেনা, কোন মন্ত্রবলে সন্ধ্যেবেলায় গজিয়ে যায় কে জানে। আমি পায়ে পায়ে বিশুর দোকানে এগিয়ে যাই, পুদিনা হজমোলা না ইমলিটা সেটা দেখিয়ে দিতে হয় খালি। পাশের নোংরা মাঠটায় কতকগুলো ছেলে ক্রিকেট খেলছে, এদের স্কুল নেই নাকি! পাশের আমড়া ওলাটার বিক্রির দিকে মন নেই, একজন কে বলে দিলো হবে না এখন। রাস্তায় কুকুর এর আধিক্য আমাত না পসন্দ তার থেকেও না পসন্দ ছোট কুত্তোগুলো মলিন মুখে ঘুরে বেড়ালে। আজ আমায় স্বস্তি দিয়ে ব্যাটারা ঘুমোচ্ছে দেখি এক মনে, মায়ে পোয়ে। ওই একটা ক্ষুদে ছানা ঠিক ফাঁকি দিয়ে উঠে এদিক ওদিক টহল দিচ্ছে। অনেককটা ওলা, থাকে সবসময়েই এই সময় তাদের ল্যাদ টাইম। মানে বুকিং না এলেই ভালো হয় খানিকটা এরম ভাব। এক মনে গাছের ছাওয়ায় বসে তাস খেলছে বাসের ড্রাইভার কন্ডাকটর রা। এহ আমার কি ইচ্ছে ছিলো ট্রাক ড্রাইভার হবার। রাস্তায় ধারে এরকম দুপুরে ধাবায় বসে ঝাল ঝাল মাংস (তখন নিশ্চয়ই ঝাল খেতে পারতাম) আর রুটি খেয়ে ফের রওনা দিতাম, কান্ট্রি রোড ইয়ে মানে কুমার শানু শুনতে শুনতে।
নাহ যাই, এম্নিতেই পিএল খচে আছে। আমায় বলেছিলো এটা একটা ডেলিভারেবল হল হ্যাঁ, এইরকম ফন্ট এইরকম বক্স। তা আমি ভালো মনে বলেছিলাম এই বক্সে ফ্লিপকার্টের ডেলিভারিও হয়ে যাবে। নাহ ট্রাক ড্রাইভার না হয়ে সুখ নেই।

Tuesday, January 3, 2017

ফ্রেন্ডায়নামিক্স

-"বাবান,  অ্যাইই বাবান ফের টিভির সামনে।  সারাদিন তোর কার্টুন দেখা আর ভিডিও গেম ছাড়া আর কাজ নেই না। "
-"বারে আমার তো ছুটি এখন। এখনও কি ক্লাস শুরু হয়েছে নাকি। "
- কেন এতো বই কিছু পড়া যায় না না? কেয়ারলেস মিস্টেক গুলো হয় বলে মিস বলেছেন না তোকে বই পড়তে।
এরপর যা হবার তাই, বাবান এর ভ্যাঁ, ওর মা এর মার ইত্যাদিতে পাড়া চমকিত,  টিভি বন্ধ,  অল কোয়ায়েট অন ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট। রন্টুর দিদি আর ভাগ্নে দিন দুয়েকের জন্য এসেছে, টিভি আর গেম নিয়ে মা ছেলের খন্ড যুদ্ধ লেগেই আছে। আজ কিছু বাড়াবাড়ি এই যা। রন্টু তখন ডমরুধরের আড্ডায় ডুবে ছিলো, খেয়াল করেনি। খানিকবাদে চা এর দরবার করতে গিয়ে দেখে পরিস্থিতি কিঞ্চিৎ বেশীই শান্ত। বাবান এর দাদু দিম্মা গেছে ডাক্তারের কাছে তাই বাবান আজ প্রায় একা অভিমন্যু,  ওর মা মানে মৌ একাই সপ্তরথী তুল্য আর কি বাবান এর জন্য। ভাগনের ভগ্ন হৃদয় পুনরুত্থানে যুগে যুগে মামারাই আবির্ভূত হন।  তাই রন্টু বারান্দায় গিয়ে বাবানের কাছে দাঁড়ালো। সে তখনও ফোঁপাচ্ছে।
- " আরে ধুর ব্যাটা,  তুই দেখি আমার কালকে তোর সাথে বক্সিং টুর্নামেন্টটা প্রায় কেঁচিয়ে দিলি। আমি তো আবার বাচ্ছাদের সাথে লড়ি না আমি বড়দের সাথে ছাড়া লড়িনা।"
- "আমি বড় হয়ে গেছি" - কান্না চেপে জবাব এলো।
- "তাহলে কাঁদছিস যে,  বড়রা কাঁদে নাকি।  তা তুই যে বই পত্তর মোটে পড়িস না তার ফলে তো তুই জানতেই পারছিস না সে কেঁদো বাঘ আর ডাইনোসর এর যুদ্ধ টার কথা "।
- "ধ্যাস ওরকম লড়াই আবার হয় নাকি, বাঘ আলাদা সময় এর আর ডাইনোসর আলাদা সময় এর।  মামান তুমি আমায় বড্ড ছোট ভাবো।"
- ধুর ব্যাটা,  সে তো এক এই ওয়ার্ল্ড এ দুজন দু সময়ের লোক। আমি যে ইউনিভার্স এর কথা বলছি সেটা তো প্যারালাল একটা ইউনিভার্স। সেখানে বাঘ,  ডাইনোসর,  তিমি, ইঁদুর সব্বাই থাকে। শুনবি তো বল।
- হ্যাঁ হ্যাঁ মামান বলো প্লিজ। 
- দাঁড়া এক কাপ চা নিয়ে আসি আর ওয়াইফাই টা কানেক্ট করে দিই দিদিকে ব্যাস তাইলে আমরা অন্য ঝাড়া হাত পা হয়ে অন্য ওয়ার্ল্ড এ।
চা খেতে খেতে,  রন্টু শুরু করে, সেবার বেজায় বৃষ্টি হচ্ছে জঙ্গলে।  বৃষ্টি মানে কোলকাতায় যেমন দেখিস এক ঘন্টা খুব জোর তেমন না।  জঙ্গলে বৃষ্টি মানে সে একটানা।  সাতদিন দশ দিন ধরে হয়েই চলেছে। জঙ্গলের মধ্যে ঝির ঝির করে বয়ে চলা নদী সে জল কোথায় রাখবে না বুঝতে পেরে দুকূল ছাপিয়ে দিচ্ছে। বনের পশুদের হয়েছে মুশকিল। ওরা সাঁতার জানে কিন্তু এরকম চুপ্পুর বৃষ্টি খাওয়া দাওয়া হচ্ছে না ভালো, রোদের দেখা নেই বলে মন মেজাজও ভালো নেই। কত বড় বড় পশু গেলো ভেসে। একটা বাঘ ছিলো ওই জঙ্গলে। বাঘেরা ইউজুয়ালি একাই থাকে। এ বাঘটাও একাই থাকত। তার উপর ছিলো সে বদমেজাজি। ফলে বন্ধু বান্ধব প্রায় ছিলোই না তার। কেবল একটা ছোট সাদা ইঁদুর কি করে যেন তার বন্ধু হয়ে গেছিলো। সাদা ইঁদুর আবার বেজায় ভদ্র ইঁদুর। সাত চড়ে রা কাড়ে না,  মনে বেশী দুঃখ হলে কুড়কুড় করে আরও খানিক গর্ত খুঁড়ে মাটির নিচে চলে যায়। এ দু মক্কেলের বন্ধুত্ব হবার চান্স নেই তবু হয়ে গেছিলো কিরকম করে যেন।
- ও মামান,  ইঁদুরের ভাষা আর বাঘের ভাষা কি এক নাকি, ওরা কথা বলত কি করে?
- শোন ব্যাটা,  বন্ধুত্বের একরকম ভাষা হয়, যেমন তুই যখন তুই যখন ক্লাসে গার্ডার ছুড়ে লোককে মারিস আর সেই সময় মিস আসলে তোর বন্ধু অয়ন দূর থেকে তোকে সাবধান করে দেয় তেমন। তবে এরা কথা বলত জঙ্গলের ভাষায়।
- জঙ্গলের ভাষা কি হয় মামান?
- মানুষেরা কি সব জানে বা বোঝে নাকি? এই যে জঙ্গলে কত কি ঘটে যাচ্ছে,  রাত হলে হুতুম প্যাঁচা হুতুম থুমো করে কি বলছে এসব মানুষ বোঝে না বলে ভাবে মানুষ খালি কথা বলতে পারে তাদেরই ভাষা আছে। কিন্তু তা নয় সবার আলাদা আলাদা ভাষা আছে, সে অন্য একদিন বলবখন, এখব গল্পটা শোন।
এইবারের বৃষ্টিতে জল যখন আস্তে আস্তে নিচু জমি ছেড়ে এগোচ্ছে ক্রমে আর একটু উঁচুর দিকে তখন পশু পাখীরা সব  উড়ে গেছে, বাঘ তো আগের দিনই শজারুকে চোখ রাঙিয়ে এসেছে, সেই নিয়ে কিছু বচসা হয়েছে। বাঘকে কেউ আর ডাকেনি। ইঁদুর এর বন্ধুরা অবশ্য ইঁদুরকে ডেকেছিলো কিন্তু ইঁদুর বন্ধুকে ফেলে যায়নি।  সে বাঘকে ডাকতে গেছিলো। কিন্তু এর মধ্যেই, জলের বেগ বেড়ে যায় খুব আর সেই সাথে বাঘ আর ইঁদুর দুজনেই ভেসে যায়। ইঁদুর বাঘের গোঁফ ধরে ঝুলে পড়েছিলো বলে একসাথেই ছিলো।
নদীর স্রোতে অনেক সময় ঘুর্নি হয় দেখেছিস তো?আরে মনে নেই সেবার সেই দামোদরের বান দেখাতে নিয়ে গেছিলাম,  দেখালাম, হ্যাঁ ওরকম। ওরকম একটা বড় পাকের মধ্যে দু মক্কেল গিয়ে পড়ল ভাসতে ভাসতে। তারপর সোঁ সোঁ শব্দ আর হাঁচরপাচোঁর ভেসে যাওয়া ছাড়া কিছু খেয়াল নেই তাদের।  অবেক অনেক্ষন পর তার টের পেলো স্রোত হাল্কা হয়ে এসেছে,  মৃতপ্রায় অবস্থায় তারা এক নদীর ধারে পৌঁছল।
ঝকঝকে রোদ উঠেছে।  অমন বিরাট একটা বিপর্যয় যে ঘটেছে টেরই পাওয়া যায় না। ইঁদুরের জ্ঞান এলো আগে।  সে উঠে বাঘের নাকের ফুটো দিয়ে লেজ গলিয়ে সুড়সুড়ি দিয়ে ঘুম ভাঙালো বাঘের। তাদের সেই বনটাই না?  তবে গাছপালা গুলো এমন অন্যরকম লাগছে কেন? যাই হোক বাঘ আর ইঁদুর দুজনেই এইসব ব্যাপারে খিদে পেটে মাথা ঘামায় না। ধড়ফড় করে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ালো তারা।
-কিরে সব গেলো কোথায় বলত? অ্যাইসান খিদে পেয়েছে মনে হচ্ছে তোকে দিয়েই ব্রেকফাস্ট করি, হেঁড়ে গলায় বাঘ বলে উঠলো।
-" মামান, বাঘটা কি পচা,  বন্ধুকেই খেয়ে নেবে বলছে "।
-"দূর ব্যাটা,  ইয়ার্কি করে বলেছে,  এই যে কাল আমাদের লড়াই হবে তার মানে কি আমরা সত্যি কারের শত্রু  নাকি? যাইহোক শোন তারপর।"
ইঁদুরও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে,  গাছে চেনা পাখিদের ডাক শোনা যাচ্ছে না,  চেনা বন্ধুদের কথাবার্তাও শোনা যাচ্ছে না। এক জায়গায় বসে থাকলে তো হবে না,  তাই তারা এগোলো একটু। ইঁদুরের আর কি সে তো ঘাসের বীজ, ছোট পোকা টোকা খেয়ে নিচ্চে মজাসে। ইঁদুরের পার্সোনাল ফেভারিট ব্ল্যাক ফরেস্ট কেক অবশ্য, তা যখন পাচ্ছে না যা পায় খেয়ে নিচ্ছে। খেয়াল কর বাবান,  ইঁদুরটার বুদ্ধি কেমন খাওয়া নিয়ে অত ইয়ে নেই।
- "মামান তুমি কি আমায় গল্প বলতে গিয়ে পড়ার কথা বলতে চাইছ তাহলে আমি আর শুনব না।  তাছাড়া ব্ল্যাক ফরেস্ট কেক ইঁদুর পাবে কোত্থেকে।"
- "আরে না খামোখা মামার বাড়ি এসে কেউ পড়ার গল্প করে নাকি। আমি বললাম ইঁদুরটার ভালো বুদ্ধি। আর ব্ল্যাক ফরেস্ট কেক পাবে না কেন, সেই সেবার ইঁদুরদের গ্রামের একটা স্মার্ট ছোকরা ইঁদুর গেছিলো তো শহরে,  কেকের দোকানেই থাকত তো,  দেখে শিখে নিয়েছে। নেহাত ওর ডাস্ট এলার্জি ছিলো তাই জঙ্গলে ফিরে এলো নইলে ব্ল্যাক ফরেস্ট কেক ছেড়ে আসতই না। আর শোন তুই যদি এভবে বিরক্ত করিস আমি আর বলব না গল্প।"
- আরে না না মামান, রাগ কোরোনা প্লিজ,  বলো "।
হ্যাঁ,  এদিকে বাঘের তো খিদে পেয়েছে সে তো আর এইসব ঘাসপাতা খেয়ে বাঁচতে পারবে না। মাংস চাই।  কি হবে দেখতে দেখতে দেখে একপাল হরিণ চড়ছে। ব্যাস বাঘের ব্রাঞ্চ কম্পলিট। ব্রাঞ্চ মানে জানিস তো? ব্রেকফাস্ট আর লাঞ্চ এর মাঝামাঝি খাবার আর কি। কিন্তু এরকম কেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে, জঙ্গলটা, তবে কি সবাই অন্য জায়গায় চলে গেলো?  আসলে কি হয়েছে বলত, বাঘ বাবাজি আর ইঁদুর রানী ওই যে ঘূর্ণিতে পড়েছিলো, ওটা ছিল একটা একটা ওয়ার্ম হোল।
- "মামান ওয়ার্ম হোল কি হয়"?
- বলছি।  কিন্তু আমি যখন বললাম প্যারালাল ওয়ার্ল্ডে বাঘ আর ডাইনোসর এর লড়াই হয়,  প্যারালাল ওয়ার্ল্ড কি হয় জিজ্ঞেস করলি না কেন?
- "আমি তো জানি,  তুমি সেদিন  গল্প বলছিলেনা, টাইম ট্রাভেল নিয়ে, কিন্তু ওয়ার্ম হোল কি বলোনি তো।
- আচ্ছা বলিনি? তবে শোন,  ছোট করে কেমন, নইলে বাঘটার আবার দুঃখ হবে ওদিকে। ধর তুই একদিন পেটে ব্যাথার বাহানা করে স্কুল গেলিনা,  না না আমায় লুকিয়ে লাভ নেই আমার এক্সট্রা একটা পাওয়ার আছে আমি এসব জানি, হ্যাঁ তো স্কুল গেলিনা আর সেদিন তোদের স্কুলে একটা সারপ্রাইজ ট্রিট হলো। তুই গেলি না তাই খেতে পেলিনা এবার পরের দিন স্কুল গিয়ে তোর বন্ধুর থেকে তুই জানতে পারলি ঘটনাটা। তোর কাছে একটা টাইম মেশিন থাকলে ডেফিনিটলি তুই আগেত দিন ফিরে যাবি আর স্কুল গিয়ে খেয়ে আসবি। কিন্তু তাহলে তো আজকে তোর বন্ধুর সাথে এ কথা বার্তাটাই হতোনা তাই না। তাই বিজ্ঞানীরা বলছে তুই যেই মুহূর্তে টাইম মেশিনে করে অতীতে ফিরে গেলি আর অতীতটা কোনোভাবে ট্যাম্পার করলি সাথে সাথে একটা প্যারালাল ওয়ার্ল্ড তৈরী হয়। সে দুনিয়ায় তুই স্কুল।গেছিস,  ট্রিট পেয়েছিস। আর এ দুনিয়ায় ট্রিট পাসনি।  এবার এই সব ভিন্ন যে প্যারালাল দুনিয়া চলছে তার মধ্যে চলাচল সম্ভব আর এই রাস্তাটাকেই বলছে ওয়ার্ম হোল। কোথায় যে আছে এ ওয়ার্ম হোল কেউ জানে না। আমাদের বাঘ বাবাজি আর ইঁদুর রানী সেই ঘূর্ণিতে পড়েছিলো সেই সময় ওরা একটা ওয়ার্ম হোলে পড়ে গেছিলো।
এইবার বাঘ আর ইঁদুর একটা জরুরী মিটিং এ বসল। অনেক বাকবিতণ্ডার পরেও দুজনে কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না কি হয়েছে ব্যাপারটা। সেই সময় হঠাৎ একটা রক্তজল করা হুংকার শুনতে পেলো তারা। বাঘ বনের রাজা, সে যে যথেষ্ট সাহসী সে কথা কে না জানে।  আর ইঁদুর ছোট হতে পারে তবে সাহস তারও কম না। তবুও সে ডাক শুনে দুজনেরই প্রাণপাখি খাঁচা ছাড়া হবার জোগার। তারা আগে এমন ডাক শোনেনি। সামনে তাকিয়ে দেখে বাঘের দ্বিগুণ চেহারার এক বিরাট প্রাণী এগিয়ে আসছে। ওরা তো আর আগে ডাইনোসর দেখেনি তাই বুঝতে পারলো না এটা কে তাই ডাইনোবাবু নিজেই নিজের পরিচয় দিলেন। 'আমি ডাইনো দ্য গ্রেট, যাকে বলে এ জঙ্গলের শেষকথা। কোথাকার খোকারে তুই'? বাঘ তো হেভভি খচে গেলো। হ্যাঁ তাকে খোকা বলা ইয়ার্কি পায়া,  সে রাজা বাঘ তাকে এমন করে ইয়ে করা। বাঘও রেগে মেগে উত্তর দিলো 'শোনো আমি বাঘ আমার জঙ্গলের রাজা তুমি ডাইনো না ভলক্যানো আমার জানার দরকার নেই। আওয়াজ নিচে রাখো। '
এই সময় হঠাৎ ডাইনোর নজরে ইঁদুর পড়লো। মানে পড়ার কথা না,  তাও কিরম দেখতে পেয়েছে। আর পেয়েই ডাইনোবাবুর সেকি হাসি, খ্যাক খ্যাক, খাউয়া খাউয়া, খোয়াক খো খোয়াক খো মানে যতপ্রকার বিশ্রী করে হাসা যায় হেসেছে আর কি। বাঘ আর ইঁদুর দুজনেই খুব অবাক। এই ধেড়েটার মাথায় গন্ডগোলা আছে নাকি রে। হাসি থামিয়ে ডাইনো বলল,  এই পোকাটা কে রে তোর সাথে, তোর বডিগার্ড নাকি। অপমানে ইঁদুরের নাক লাল হয়ে গেলো। মানে ইঁদুর যাকে খায় তাকে বলা মানে কি হেনস্থার কথা। বাঘ ইঁদুরের বন্ধু তো তাই বাঘ ব্যাপারটা বুঝে গেলো আর রেগে গেলো খুব। 'এই শোন মোটুরাম,  আমার বন্ধুকে আজেবাজে কথা বলার স্পর্ধা পাস কোত্থেকে তুই। চুপ করে যা আর সরি বল না হলে তোর খবর আছে। '
'খবর আছে? হ্যাঁ আমার?' ফের এক দফা খচমচ করে হেসে নিলো ডাইনো।
'শোন সাহস থাকে কাল সকালে এই নদীর ধারে আয়। আশা করি ভয় পাবি না।  লড়ে দেখাস আমার সাথে।'
' ওরে তোকে ভয় পাবো!! তুই বরং তোর বডিগার্ড পোকাকে নিয়ে আসিস। ' বলে দুমদাম করে চলে গেলো। 
ইঁদুর দুঃখ পেয়েছিলো খুব কিন্তু একই সাথে ভয়ও পেলো বাঘের জন্য। অতবড় চেহারার প্রাণীটার সাথে বাঘ লড়বে কিভাবে। হ্যাঁ বাঘ শক্তি সাহস দুটোরই তুলনা হয় না তাও। এই অজানা দেশে তো বাঘ একমাত্র বন্ধু।  তাছাড়া বাঘ বদমেজাজি হলেও বাঘকে ইঁদুর খুব ভালোবাসে, এমন চমৎকার বন্ধু তার আর নেই। ইঁদুর কিচমিচ করে সেটাই বলল বাঘকে। বাঘ বলল অত ভাবিস না যা হবে দেখা যাবে কাল।
পরেরদিন সকাল সকাল দুজনেই হাজির নদীর ধারে। ওখানে অবশ্য শুধু ওরা দুজনেই ছিলো না।  ইঁদুর এসেছে, দূর থেকে হরিনেরা এসেছে, নীলতিমি এসেছে,  ম্যাকাও পাখি এসেছে আরও অনেকে এসেছে যারা ভুল করে ওয়ার্ম হোলে ঢুকে পড়েছিল। ডাইনো বলল প্রাণের মায়া চাইলে ফিরতে পারিস কিন্তু। বাঘ বলল তোর ভয় করে তুই পালা। ডাইনো বলল 'বেশ তবে আর দেরী করা কেন। শুরু করা যাক। '
রেফারি কেউ ছিলো না। জঙ্গলের নিয়ম হলো যে বাঁঁচবে সে জিতবে। তারপর সে লড়াই শুরু হলো। বাঘের ক্ষিপ্র গতি ডাইনোর বিপুল শক্তির সামনে লড়ে যেতে দিচ্ছিলো। একসময় বাঘ এর পা পড়ে গেলো একটা গর্তে। ইঁদুর ভয়ে চোখ বুজে ফেলল। কিন্তু অবাক ব্যাপার ডাইনো হাত বাড়িয়ে বলল উঠে এসো হে আগে বেকায়দায় পেয়ে তো মারতে পারিনা। বাঘ তো অবাক। আরে এতো খারাপ লোক না। ফের বাঘ উঠে আবার লড়াই শুরু হলো এবার ওই গর্তে ডাইনোর পা ঢুকে গেলো। এবার বাঘ বলল তুমি উঠে এসো দেখি আমার হাত ধরে। এবার ডাইনোও অবাক। নীলতিমি বলল পাশ থেকে ওহে তোমরা খামোখা লড়ছ কেন? দুজনেই তো দিব্যি ভালোমানুষ দেখছি। বাঘ মুখ গোমড়া করে বলল ও আমার বন্ধুকে অপমান করেছে। ডাইনো অবাক হয়ে বলল,  অপমান করলাম কই হে আমি তো মজা করছিলাম। অ তুমি আমায় জানোনা কিনা তাই ভুল বুঝেছ। ম্যাকাও আর ফিঙেও বলল হ্যাঁ হ্যাঁ ডাইনোদাদা আমাদের অমন খারাপ নয়।
তারপর আর কি ব্যাস। মিটমাট হয়ে গেলো। ওরা ওখানেই রয়ে গেলো সবাই মিলে।
যা ব্যাটা এবার দেখতো মাংসের গন্ধ আসছে মনে হচ্ছে দুজনের জন্য দুখানা করে কষা জোগাড় হয় কিনা?