Monday, January 30, 2017

বইমেলা

এ তুলো ধুনবে কে , কথাটা আমার ব্লগের জন্য।  আমার এক বন্ধুকে এই ব্লগের কথাটা বলেছি সেদিন, কি খ্যাক খ্যাক করে হাসলো মশাই কি বলব।  বললো সে ব্লগ পড়ে  কে ? আমি আর কি বলি , মান রাখতে ঢপ  দেওয়া শাস্ত্রে লেখা আছে। তাই  বললাম ,কেন , জানিস না কত্তো  লোক আছে পরে তারা , শুধু কি স্বদেশ বিদেশ থেকে অব্দি।  কি বলব আর , আয়সা খ্যাক খ্যাক করে হাসলো , নেহাত আমি সত্যি কোথায় প্রতিবাদ করতে পারিনা তেমন তাই  বেঁচে গেলো। তা কেউ পড়ুক না পড়ুক লিখি এক দু কথা।  আজ্ঞে  হ্যাঁ বইমেলা এসে গ্যাছে আর তা নিয়ে দু কথা লিখবো না তাও কি হয়। 

ফেসবুক এখন মোটামুটি মনোপলি বাকি ,  বিবাহ কিংবা মৃত্যু , পোস্ট দিয়ে খুন তো তুশ্চু , লোকে ফেসবুকে সেরা গ্রুপ পিকনিক প্রতিযোগিতা অব্দি নামিয়ে দিচ্ছে।  বাঙালির জীবনে দুটো জাতীয় দাবি, অম্বল আর লেখা।  আমার মতো প্রতিভাবিহীন লোক ব্লগে পোস্ট নামিয়ে দিচ্ছে আর ফেসবুকে সাহিত্য কর্ম করবেননা , বই লিখবেন ও শ দুই কপি বেচবেন না এটা অন্যায়।  তা ভালোর সাথে সাথে কিছু বাঁশ এসে টুকটাক খোঁচা মেরে যাচ্ছে বইকি।  এই ধরুন কাগজের শিলালিপি ( শিলালিপি কি করে কাগজের হয় তা আমায় জিজ্ঞেস করে লাভ নেই, আমার বুদ্ধি ওই মুরগির লেভেলের ) গ্রন্থটির জনপ্রিয় লেখক কে এড়িয়ে আপনাকে মেলায় যেতে  হবে।  দেখা হলেই ভদ্রতা করে হলেও বইটা কিনতে হবে , সে আপনি পড়তে চান বা না চান।  এ ছাড়াও আছে , যে সারাবছর প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বুক ফাটিয়ে লিখেছে জ্বালাময়ী ভাষণ তার বই বের হচ্ছে নামি পাবলিশার থেকে এরম নানা বৈচিত্র্যে ফেসবুক সরগরম।  বইমেলা এসে গ্যাচে।

কিছু কিছু লোক থাকে যাদের সব পুরোনো জিনিসই ভারী পছন্দ , আমাদের সময় হু হু বাবা কেমন হ্যারিকেন ছিল জানিস , মশারি পুড়িয়ে দিয়েছি তাতে কি অধ্যাবসায়ের আরেক নাম ছিল ইত্যাদি।  তা সেরকমই লোকের পোস্টও ফেসবুকে তাক লাগাচ্ছে। ' আমাদের সময় ধুলো ছিল আজ আর নেই আজ আর নেই , কোথায় হারিয়ে গেলো সোনালী ধুলো গুলো সেই।  আজ আর নেই।'  কিংবা কেউ লিখছে 'ধুলো ও হাঁচিদের দাবি মানতে হবে , ছোট বলে তাদের হটিয়ে দেওয়ার এ ভোগবাদী দুনিয়ার আক্রোশের তীব্র বিরোধিতা করলাম।'
হাঁচি বলতে মনে পড়লো , আমি বইমেলায় কত জন কে যে হেঁচে অন্যের গায়ে হাত মুছতে দেখেছি তার তুলনা বুঝি  স্রেফ দুর্গাপূজোয় মেলে।
এবারে বইমেলায় বড় বড় তাঁবু মতো করেছে,  স্টল গুলো সব। মন্দ না বেশ বাইরে স্টল নাম্বারও আছে। আর বড় পাব্লিশাররা অফকোর্স বাইরে। এখন বইমেলায় সব চেয়ে সুবিধে যেটা লাগে আমার ধূলোর ওই নাকানাকি বা চুলোচুলি নেই।

বছর দুই পর আমিও এবারে গেছিলাম বইমেলায়। আইন্সটাইনের অপ্রকাশিত সূত্রের একটি হলো যেকোনো স্থান , সঙ্গী বা সঙ্গীনীর উপর প্রভাবশীল । মানে গঙ্গার ধারে গার্লফ্রেন্ডের সাথে গিয়ে যেরকম লাগবে একা গিয়ে বা দঙ্গলে গিয়ে সেরকম লাগবে না । বইমেলার তা না কিন্তু । একবার বইএ মিশে গেলে আর কিছু লাগে না। তবে তেমন বইপড়ুয়া বন্ধু পেলে ঘোরাটা জমে যায়। 

বই পড়ুয়া মানেই জমবে তাও না। আমার এক বন্ধু আছে যে ভারী কঠিন কঠিন বই পড়ে, আমার সব মাথার উপর দিয়ে যায় সেসব বই। আমি তাকে এড়িয়ে যেতে ভালোবাসি বইমেলায়। আবার আরেক বন্ধু আছে যে প্রকাশকের সামনেই বলে এটা কিনেছিস, তুই কিছুই কিনিস না (নিজে অবশ্য কি কিনেছে ভগবানেও জানে না, প্রকাশক দূর কি বাত) আমি তাকেও এড়িয়ে যাই। একদল বাংলাদেশ এর স্টলের সামনে সেল্ফি তোলা ঝাঁককে পেরিয়ে, টিভি চ্যানেলের গেম শো টপকে, পাঁচ মেশালি প্রকাশনে ঢুকলে খানিক বই দেখা যায় স্বস্তিতে। 
ফেসবুক খ্যাত প্রকাশনা গুলোতে আমি তবু যেতে পারি বই দেখতে,  কেউ চেনে না  তাই "এটা আমার বই দেখুন না একবার" এ বক্তব্যকে গড়িয়াহাট বা কলেজস্ট্রীটের ফুটপাথ ধরে যাওয়ার সময় যেমন উপেক্ষা করা যায় তেমনই করা যায়। খুব অস্বস্তি লাগলে অন্য যে কোনো স্টলে চলে যাওয়া যায়। আর চেনা স্টল,  যে বই গছাবেই তার নাম্বার আর পজিশন মুখস্থ করে যাওয়াই ভালো।

এ বার বই মেলায় আমার একটা প্রাপ্তি হয়েছে, কি সেটা পরে জানাবো। কয়েকটা বই কিনেছি,  কয়েকটা পাইনি পরে কিনবো। বাকিরা কে কেমন ঘুরলো বইমেলা?

2 comments:

  1. আমি তো যাইনি, যাবও না, তবু তোমার লেখায় পড়ে অর্ধভ্রমণ হল, প্রদীপ্ত। ওই সব বন্ধুরা ভারি ডেঞ্জারাস, ঠিকই বলেছ। কী কী বই কিনলে জানার উৎসাহ রইল।

    ReplyDelete
    Replies
    1. Thank you KuntalaDi :) ...boi er chobita mobile theke add holo na bari fire add kore debo :)

      Delete