Friday, January 29, 2016

নানারকম 7

বেড়ানোর গল্পটা না শেষ করে অন্য বকবক করছি বলে মাফ চাইলাম আগেই।  কিন্তু কি করবো , আজকে যে রোদ ঝলমলে সকালে হাটতে পেয়েছি। বেশ কয়েকদিন পরে আজ টেম্পারেচার ০ এর উপরে। আজ ইচ্ছে করেই হেঁটে এলাম। এখানকার রাস্তায় এমনিতেই লোকজন কম , তে শীতকালে এরই কম।  তাই বরফ চূড়ো পাহাড়টা পাশে নিয়ে,হাত পা নেড়ে গান গাইতে গাইতে  হাঁটতে দিব্বি  লাগছিল।  মাথার উপর দেখি একঝাঁক বোকা হাঁস ক্যাও ম্যাও লাগিয়েছে। বোকা না বলে উপায় কি , জানুয়ারি শেষ হতে চললো এই সময় ওরা এখানে কি করছে , ওদের তো এখন আমাদের দেশের ওদিকে থাকার কথা! নির্ঘাত জিপিএস হারিয়ে ফেলেছে, আর এখন চেঁচামেচি করছে। 

দেশে বইমেলা শুরু হয়ে গেছে।  বইমেলাটা আমার মত কিছু বই পাগলের কাছে দুর্গাপূজোর মত। বই দেখব ,নাড়বো ঘাঁটবো , হয়ত বেশি কিনিনা , কিন্তু লিস্ট করে রাখব। কলেজ স্ট্রিট থেকে কিনব বলে। আহা। বইমেলা  হলো এমন এক জায়গা যেখানে একা একাও যাওয়া যায়, দোকাও যাওয়া যায় ,দল মিলেও যাওয়া যায়।  প্রতিটা জায়গার চরিত্র বদলে বদলে যায় কার সাথে যাওয়া হচ্ছে তার উপর। যেমন গঙ্গার পারে একা বসে থাকতে যেমন লাগবে , পাশে প্রেমিক/প্রেমিকা থাকলে অন্যরকম , আর বন্ধুরা থাকলে অন্যরকম। কিন্তু বইমেলার চরিত্র বদলায় না। এত বই এত বই , কি কিনবো কি কিনবনা সেটাই সব না। 

আজকে আবার মেঘলা দিন।  বাড়ি থেকে বেড়িয়েই দেখি পাইন গাছের মধ্যে  দিয়ে শন শন  করে হাওয়া দিছে।  শব্দে মনে হচ্ছে সমুদ্দুরের পাড়ে দাঁড়িয়ে আছি। আজ আর নীল পাহাড়টা পাশে নিয়ে হাঁটা যাবে না, গাড়িতে যেতে হবে। 
কয়েকদিন আগে একটা স্টেট পার্ক এ গেছিলাম। উপত্যকার মতো।  পুরো মাঠ জুড়ে বরফ চিক চিক করছে।  অনেকদিন আগের মরে যাওয়া এক ড্যাম এক পাশে পরে আছে।  বরফ এর নদীর মতো লাগছে দেখতে।  কয়েকটা গাছ যারা পাতা জড়িয়ে ফেলে না তারা বসন্তের ভরসা দিচ্ছে। আর যাদের পাতা নেই তারা অদ্ভূত জীবনীশক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বসন্তকালের জন্য। 



মৃত নদীও দাগ রেখে যায় 



কতদিন হয়ে গেলো বাড়ির বাইরে। ভয় করছে , চেনা মুখগুলো বদলে গেছে নাকি কে জানে। তবু রিস্ক তো নিতেই হবে, ফিরতেও হবে। কোলকাতা নিয়ে এই পোস্টটা  দেখলাম সেদিন ফেসবুকএ , রইলো 


Thursday, January 14, 2016

ঘোরাঘুরি-হার্শী(1)

শীত পড়ছেনা শীত পড়ছেনা করে রোজী আক্ষেপ শুনি বাড়ি থেকে।  শীত কালের যে কি সুখ কি জানি বাপু।  হাজার খানা সোয়েটার কম্বল জড়িয়ে বসে থাকা। ব্রাশ করা থেকে শুরু করে বাড়ি ফিরে হাত মুখ ধোয়া তক , হাড় দাঁত সব্বাইকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলা! শীতকাতুরে যারা প্রেম করে তাদের কি সমস্যাতাই না হয়! প্রেমিকার সামনে মাফলার জড়িয়ে দাড়ানোর মতো বুকের পাটা আর কজনেরই বা হয়।  আহারে তারা নিগ্ঘাত বাড়ি ফিরে হেঁচে কেশে একাকার হয়।  এছাড়া বাইক  চালানোর সময় হেলমেট খুলে কেত মারার উপায় নেই , বারান্দায় দাঁড়িয়ে ফুকবে সে যো নেই। এর চেয়ে মশাই গরম কাল ঢের ভালো।  আহা ফুরফুরে হওয়ায় উড়তে উড়তে বাইক চালানো , ইচ্ছে হলেই জল খেতে পারা( দাঁত  থেকেহাড় ঠান্ডা হওয়ার ভয় না করে) ইত্যাদি ইত্যাদি।  তবে হাঁ  শীতকালের মরশুটির কচুরি , নলেনগুড় দিয়ে পিঠে , ইত্যাদি সুখাদ্যের সমাহার হয়, বইমেলা হয়।   তাই শীতকালটা সওয়া  যায় কষ্টমষ্ট  করে। তবে এসবই  দেশের কথা।  এখানে তো শীতকাল মানে ঘরবন্দি। ঘুরতে যাওয়া যাবে না , হাঁটতে যাওয়া যাবে না , দূর দূর।

তাই অনন্যাদি যখন ডাকলেন ওনার বাড়ি ঘুরে যাবার জন্য আমি তো শুধু খাড়া না রেডি স্টেডি গো  বলে ছুটবার জন্য প্রস্তুত। ফ্রন্টিয়ার ডিলটাও দিচ্ছিলো  ভালোই  মোটামুটি। এই সুত্রে একটা কথা বলে রাখা ভালো , এই অনন্যাদি আর অরুনাংশুদা , এনারা দুজনেই অসম্ভব ভালো দুজন মানুষ , আগের বার এনাদের ওখানে গিয়েছিলাম গল্পটা লেখা হয়নি। আমার ব্লগটা হলো দুধ ভাত টাইপ ব্লগ , নির্দিষ্ট পাঠক নেই , কেউ আদৌ পরে কিনা কে জানে তাই না লিখলেও কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি হয়নি। তাই আমার মতো আলসে মানুষের  লেখার কন্টিনিউইটি  বজায় থাকে না। প্রায় দুবছর হতে চললো আমি দেশ ছাড়া। তবে  ২০১৫ সালে আমি যা পেয়েছি তা অভাবনীয়। তারমধ্যে এই দুজন মানুষের সাথে পরিচিত হওয়া একটা ঘটনা তো বটেই। সব মানুষ তো সমান হয়না, কেউ গোলাপফুল ফোটায় কেউ খালি কাঁটা গাছ হয়ে থাকে। আমি মানুষ হিসেবে ওই কাঁটা গাছ শ্রেনীর।  লতানে তাও আবার।  তা আমার মতো স্বল্প বুদ্ধি , স্বল্প সাহসওলা কুকড়ে  মানুষগুলো যে করে কর্মে খাচ্ছে, তার কারণ ওই অনন্যাদিদের মতো মানুষরা  আছেন বলে।  একটু বেশি ব্যক্তিগত কথাবার্তা হয়ে যাচ্ছে বোধহয় , বোরিং , কিন্তু আমার ঘুরতে যাওয়ার গল্পও তো ব্যক্তিগতই।

তো যাক যা বলছিলাম , ফ্রন্টিয়ার এর ক্যারি অন লাগেজেও টাকা লাগে।  খালি একটা ব্যাকপ্যাক নিতে দেয়। তা আমার মতো ভবঘুরে মানুষের তাতে হয়ে যায়।  একটু চাপাচাপি করতে হয়নি তা নয় তবে সেটা ম্যানাজ করা যায়।
কোথাও যাওয়ার নাম শুনলে মনটা এমন হয়ে যায় অফিসের কাজকম্ম মোটামুটি ডকে উঠে যায়। তার জন্য আমায় ফাঁকিবাজ বললে কি আর করা।  ২৪ তারিখ ওই একটা ব্যাকপ্যাকে হয়ে যাবার যে কেতটা নিলাম একটু আগে , তার ফল টের পেলাম। আমাদের একটা ইংরাজি গপ্পো টাইপ ছিলো।প্যাকিং নাম ছিলো তার। একদম সেই কেস! যাই হোক ২৫তারিখ ভোর ভোর উঠে এক কাপ কফি বানাতে বানাতে আমার বন্ধুকে কল করলাম , তা সে উঠে পরেছিল ,যাই হোক ধরাচুড়ো পরে রওনা হলাম।  সিকিউরিটি লাইন এ কত  কিসিমের মানুষ দেখা যায়।  একজনকে দেখি কোট প্যান্ট পরে পায়ে চপ্পল , কেউ কেউ এই ঠান্ডাতেও হাফ প্যান্টুলুন পরা! ডেনভার এয়ারপোর্ট এ যতবার আসি টার্মিনাল টু  টার্মিনাল সাবওয়ে ট্রেনটা খুব উপভোগ করি। ট্রেনএর একদম সামনের কামরায় উঠলে সামনেটা বোঝা যায় , সাবওয়ে সারফেস বা টেম্পল রান এর জগতে ঢুকে পরেছি মনে হয় আর তারপরেই টার্মিনাল চলে আসে। সিকউরিটি পেরিয়ে এক কাপ কফি নিয়ে বসা গেলো জুত করে।
বাইরে তখন আলো ফুটছে সবে। পাশের আইলে ছোট্ট একটা কুকুর সহযাত্রী। বড়দিন বলে পাইলট থেকে এয়ার হোস্টেস মাথায় লাল টুপি। দিনটা বড় করেই শুরু হচ্ছ।কফির কাপে ছোট্ট চুমুক, আর ঘর থেকে বেড়িয়ে পরার আনন্দ।



আমার বাস ছিলো ওয়াশিংটন ডিসির ইউনিয়ন স্টেশন থেকে।  হ্যারিসবার্গ অব্দি।একটু চিন্তা ছিল।  ফ্লাইট দেরী করলেই তো চিত্তির। উবের বা লিফট নেব ভেবেছিলাম। তাও , অনেকসময়েই ওরা দেরী করে দেয় খুব. যাই হোক সময়ের অনেক আগেই পৌঁছে গেলাম। হাতে সময় ছিল তাই ইউনিয়ন স্টেশনটা  ঘুরে।  বেশ বড় টার্মিনাস। Amtrak এর ট্রেন ছাড়ে।  নিউয়র্ক , বস্টন , পেনসিলভেনিয়া নানান জায়গার যাবার বাস আছে। খিদে পেয়েছিল বেশ , খাবার দোকানও ছিল। (অনেকগুলো অবশ্য ২৫  বন্ধ ছিলো )  , আমি একটা ষ্টারবাকস দেখে এক কাপ কফি নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে দেখি লাইব্রেরী !!   আর সেখানে থেকে তুমি খুশি মতো বই নিয়ে নাও। আর তোমার কাছে এক্স্ট্রা  বই থাকলে দিয়ে দাও।  ভাবা যায়! এ জিনিস দেখে নড়ার সাধ্য রইলো না, খিদে বাবাজীবন সারা রাস্তা তার শোধ নিয়েছিল অবশ্য় ।


ওয়াশিংটন ডিসির সাথে আমার বৃষ্টির একটা সম্পর্ক আছে। আগেরবার এসেছিলাম যখন তখন এরকম আকাশ ভাংগা বৃষ্টি নেমেছিল। সেই বৃষ্টি ভিজে শহর দেখার গল্প করেছি অন্যজায়গায় । এবারে বৃষ্টি বাল্টিমোর থেকে শুরু হয়েছে। ওয়াইপার পাগলের মতো মাথা নেড়ে চলেছে, ভিজতে পারছিনা বটে তবে ভেজা হাইওয়ে শচিন কর্তা, সুমন , রফি , হেমন্ত এর গান (বাসে wifi আর প্লাগ পয়েন্ট দুইই ছিলো ) সব মিলিয়ে অসাধারণ লাগছিল। 
দুবার হল্ট দিয়ে শেষ মেষ বাস পৌঁছলো যখন আমি তখন কাহিল প্রায়। (চলবে)


Monday, January 4, 2016

ঘোরাঘুরি -সী -ওয়ার্ল্ড

--এই লেখাটা ম্যাজিক ল্যাম্প ওয়েবজিন বেরিয়েছিল। 

ছোটবেলায় দেশ বিদেশের এডভেঞ্চার পড়তে পড়তে কিংবা নতুন দেশের ছবি গল্প শুনতে শুনতে সবারই মোটামুটি আমাদের ইচ্ছে করে কবে যাব ওই সব জায়গা গুলো। না ফ্রান্সিস, বিমল কুমারের মত এডভেঞ্চার আমার হয়নি। তবে নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে কিছু।আমার প্রোজেক্ট  লোকেশন  ছিলো ক্যালিফর্নিয়া যখন এদেশে আসি। ভারী চমত্কার জায়গা ক্যালিফর্নিয়া। কালিফোর্নিয়ার আমি যেখানে উঠেছিলাম সেই জায়গাটার নাম অরেঞ্জ কাউন্টি। ওখান থেকে সী  বিচ গুলো কাছাকাছি। এছাড়া  ডিজনিল্যান্ড ইউনিভার্সাল ষ্টুডিও তো আছেই। এছাড়া আছে স্যান ডিয়াগো , প্যাসিফিক ওশান এর পাশের শহর। স্যান দিয়াগোতে  সি ওয়ার্ল্ডটা  দেখার ইচ্ছে বহুদিন ধরেই। সি ওয়ার্ল্ডহলো একটা এনিম্যাল থেমে পার্ক। মানেবিভিন্য মজাদার রাইড এর পাশাপাশি , সামুদ্রিক  প্রানীদের  নিয়ে তৈরি পার্ক। তাদের নিয়ে শো হয়. এমনি ঘুরে দেখা যায়। আমেরিকার  বেশিরভাগ প্রদেশে গাড়ি হলো অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বস্তু।  সৌভাগ্যক্রমে আমি যেখানে ছিলাম সেখানে গাড়ি ছাড়াও চলাচল সম্ভব। মানে বাস ট্রেন আছে আর কি। 
সঙ্গী নেই কেউ যাবার।তাই একা একাই একদিন বেরিয়েই পড়লাম। ও  হাঁ এইখানে বলে রাখি  আমার দেশে কেনা স্মার্টফোন  বিদেশে এসে আনস্মার্ট হয়ে গেছে। যে ফোনটা ব্যবহার করি যার  জিপিএস নেই। আমাদের দেশে জিপিএস ছাড়া অজানা জায়গায় যাওয়া কোনো বাপারই না।  কেউ না কেউ দেখিয়েই দেবে।  কিন্তু এদেশের লোকজন এতটাই টেকনোলজি নির্ভর সে আশা বৃথা। যেদিন যাব ঠিক করেছিলাম তার আগের দিন সন্ধ্যেবেলা গুগল করে পুরো বাপারটা নোট  করে নিয়েছি। দুটো বাস বদলাতে হবে, তারপর ট্রেন, তারপর বাস।  দেশে এই বাপারটা এতটাই সহজ যে  কোনো চাপ নিতে হয়না, কিন্তু এদেশে  যেখানে  সেখানে রাস্তাঘাটে "গুগল ম্যাপ" লোকজন থাকবেনা।


 .
পকেটে বিস্কুট ব্যাগে টুপি আর পাসপোর্ট, আর গায়ে জ্যাকেট চাপিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। বাসস্ট্যান্ডে 10 মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর খেয়াল হলো আরে এতক্ষণে তো বাস চলে আসার কথা. গুগল এ যে সময়টা দেওয়া থাকে বাস এর , সেই সময়েই বাস আসার কথা। ভালো করে বোর্ডটা খেয়াল করে দেখি যাহ বাবা, রোববার বাস বন্ধ থাকে! বোঝো কান্ড। এদিকে 8.10 এ ট্রেন। এখন উপায়! নতুন এসেছি, বুদ্ধি সুদ্ধি আমার একটু দেরিতে পাকে। উবার হবেনা,স্মার্টফোন নেই , উন্স্মার্ট আমার কাছে ক্যাব এর নম্বর নেই। ট্রেনের টিকেট কাটা নেই, তাই ফিরে আসাই যায় তবে যাব বলে বেরিয়ে ফিরে আসতে আমার খুব বাজে লাগে। দৌড়ে বাড়ি ফিরে রুমমেটের ঘুম ভাঙ্গিয়ে তার থেকে ইয়েলো ক্যাব এর ফোন নম্বর নিয়ে ফোন করলাম। ক্যাব এর ড্রাইভার শ্রীলঙ্কার লোক। দীর্ঘদিন আছেন। একজন বাঙালি আর একজন বার্মিজ এর সাথে থাকেন। বক বক করতে করতে ট্রেন এর সময় হয়ে যাচ্ছে কিনা আর চিন্তা করার অবকাশ পাইনি। নামার সময় চমক! দেখি কিছু একটা টিকেট আমায় দিতে চাইছে। জানা গেল, তার কাছে একটা গ্রীনলাইন ট্রেনের টিকেট আছে, এবং সেটাই সে আমায় দিচ্ছে ।এমনি এমনই। আর উনি এটা দিচ্ছেন আমি টিপস দেবার আগেই। (টিপস দেওয়াটা এদেশের বাধ্যতামূলক রেওয়াজ, না দিয়ে চলে যাওয়াটা চূড়ান্ত অসভ্যতা) ,. যদিও সেই টিকেট আমার কাজে লাগার নয়, কারণ আমি যাব Amtrak ট্রেনে। কিন্তু সেটা কথা না, এমন বিদেশ বিভুঁইে এমন অপ্রত্যাশিত ভালবাসা পেলে মনটা ভরে ওঠে। দেশের গন্ডি তখন উপমহাদেশ হয়ে গেছে।
ট্রেন দেখে যথারীতি ধাক্কা খেয়ে গেলাম। দোতলা ট্রেন। ভিতরটা ভারী চমত্কার। গদিমোড়া চেয়ার, কিছু সিট এর সামনে টেবিল আছে কফি খেতে খেতে কাচ ঢাকা জানলা দিয়ে বাইরে দিকে তাকিয়ে থাকতে পারো। তোমার খুশি। Amtrak এর এই ট্রেনটা প্যাসিফিক ওশান এর পাশ দিয়ে যায়। জানলা দিয়ে তাকালেই ঝকঝকে নিল আকাশ , ঘন নীল্ সমুদ্র। একতলাটা ডাইনিং আর টয়লেট। তোমরা আমায় আদেখলে ভাবছ হয়ত। কিন্তু আমার চোখে যে তখন আমাদের লোকাল ট্রেন ভেসে উঠেছে, ইশশ আমরাও যদি এমন পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতাম। যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা না ফেললেই তো এমন ঝকঝকে ট্রেন হয়ে যেতো। চেকারকে বললাম যেন সান ডিয়েগো এলে আমায় বলে দেয় আমি যদি এনাউন্সমেন্ট মিস করি বা ঘুমিয়ে পরি। বলে দিয়েছিল। এদেশের মানুষজন সম্পর্কে অনেকেরই শীতল ধারণা আছে, কিন্তু সে ধারণা ঠিক না তার উদাহরণ বহুবার পেয়েছি।





সী  ওয়ার্ল্ডে পৌঁছে মেতে যেতে সময় লাগেনা। শামুর শো দিয়ে শুরু। শামু  হলো তিমির নাম, তার নাচ দেখে মনটা একেবারে তাজা হয়ে গেল। এমনকি আমার মত খুঁতখুঁতে  লোককেও, ভিজিয়ে দিল বলে একটুও রাগ হোলোনা।






 ডলফিন এর মত বুদ্ধিমান প্রাণীর কসরত দেখতে দেখতে মনটা আরো খুশি হয়ে গেল।


 পেঙ্গুইনের নাচানাচি,সী-লায়ন  এর ঝাঁপাঝাপি,মাছদের খেলা এইসব নানান জিনিসের মধ্যে দিয়ে দিনটা কখন ফুরিয়ে গেল টেরই পেলাম না। 

\


 শেষে ওই ক্ষুদে ক্ষুদে মাছগুলো, আমাদের মৌরলা মাছের মত দেখতে ওদের সাথে খেলতে দিয়ে দেরী হয়ে গেল। জলের মধ্যে হাত ডুবিয়ে রাখলে ওরা এসে হাতের মধ্যে
মৃত কোষ খেয়ে যায়, বেশ মজা লাগে। বাপারটা আমি কাটিয়েই দিছিলাম, জানতামনা আগে, এক মার্কিন ভদ্রমহিলা নিজের থেকেই বললেন আমি যেন ওটা অবশ্যই করি, যদি করে না থাকি।ভাগ্গিস বলেছিলেন।হটাৎ খেয়াল হতে দেখি স্টেশন যাবার বাস আমি মিস করেছি এবং পরের বাস আধঘন্টা পরে, তারমানে ৬.৪৫ এর ট্রেন আমি মিস করেছি!

স্টেশনে এসে Amtrak এর কাস্টমার কেয়ারে খোঁজ নিয়ে জানলাম পরের ট্রেন 9.11 তে। এবং সেটাই লাস্ট ট্রেন।বাজছে সবে সাতটা কুড়ি। দুঘন্টা এই স্টেশনটাতে বসে থাকতে হবে!


স্টেশনটা আমাদের দেশের অজ পাড়াগাঁয়ের স্টেশন এর মতোই প্রায়। আসে পাশে একটাও দোকান নেই যে কিছু কিনে খাবো।বিস্কুট সেই কখন শেষ হয়ে গেছে, আর ঘোরাঘুরির নেশায় সারাদিন কিছু খাওয়াও হয়নি। শেড আছে কিন্তু যা হাওয়া দিচ্ছে, তাতে শেড থাকা না থাকা সমান। তারমধ্যে শার্টের দুটো হাতায় ভেজা, মাছগুলোর সাথে ছ্যাবলামো করার সময়। আমি এমনিতেই শীতকাতুরে, কি ঠান্ডা হাওয়া বাপরে বাপ, হাড় অব্দি কেপে যাচ্ছে। স্টেশনে লোক নেই বিশেষ।না একজন আছে দেখছি। স্টেশনে এর শেষ প্রান্তে একজন বসে বসে বিয়ার খাচ্ছে আর ফোনে কথা বলছে। ভালো লোক না মন্দ লোক কে জানে! আমার থেকেই খোঁজ নিলো ট্রেন এর, LA যাবে। এই ট্রেন টাই , অরেঞ্জ কাউন্টি মানে আমি যেখানে থাকি সেখান হয়ে LA যাবে। অন্ধকার স্টেশন, বাতাস বইছে হুহু করে, একটাই অজানা লোক, আশেপাশে দোকানপাট নেই, সব মিলিয়ে গা ছমছমে অবস্থা। এ যদি গুন্ডা বদমাশ জাতীয় লোক হয় হয়ে গেলো আজ আমার।উফফ , না মনটা অন্যদিকে ঘোরাই , দুঘন্টা এরকম খালি পেটে চিন্তা করে করে কাটানো যায় নাকি। থ্রিলার পড়তে গেলেও গরম কফি চাই আর সেখানে থ্রিলারের চরিত্র হতে গেলে খালি পেটে পোষাবেনা বাপু

ধ্যান করব নাকি উহহ আবার হাওয়া দিস কেন বাবা, একটু থামলেও তো পারিস। এই ভিজে শার্ট পরে এই ঠান্ডা হাওয়ায়, খালি পেটে ধ্যান করতে গেলে আমায় মহাপুরুষ হতে হবে। কাউকে ফোন করা যায়, তাতে মনটা অন্যদিকে ঘুরবে, বা বই পড়া যায় বা খেলা যায়, কিন্তু কিছুই করা যাবেনা। আমার অচল স্মার্ট ফোন যেটা কিনা এইসব কাজেই ব্যবহার করি তার চার্জ শেষ। আর যে ফোনটা কাজের, মানে যার থেকে ফোন করি সেটার চার্জ প্রায় তলানিতে, খানিকটা তো রাখতেই হবে।


অফিসের এক কলিগকে ফোন করে বললাম আমার ১১তা বাজবে সান্টা আনা স্টেশন পৌঁছতে সে যেন কষ্ট করে একটু আসে নিতে তার গাড়ি নিয়ে।আবোল তাবোল ভাবতে ভাবতে, কাঁপতে কাঁপতে ঘন্টা দেড়েক কাটালাম
এইসময় আরো একজন এলো. সেও আমার ওদিকেই যাবে।তার সাথে গল্প করে বাকি সময়টা কাটলো। ভদ্রলোক অ্যানিমেশন এর কাজ করতেন আগে। লাইফ অফ পাই এর কিছু গ্রাফিক্স এর কাজ হয়েছিল ওদের কোম্পানি থেকে।এখন নিজেই একটা ব্যবসা খুলেছে। ওর স্ত্রী আর ও। জমি বাড়ি কেনাবেচার। বোঝো! কোথায় অ্যানিমেশন কোথায় জমি-বাড়ি। আস্তে আস্তে আরো কিছু লোকজন এলো। ট্রেনও এলো। সারাদিনের ধকল এর পর ট্রেন এর উষ্ণ পরিবেশে ঘুমে চোখ জুড়িয়ে এলো। ওই ভদ্রলোককেই, সান্টা আনা এলে যেন আমায় একটু ডেকে দেয় অনুগ্রহপূর্বক বলেই ঘুম। 
স্টেশনে নেমে দেখি কলিগটি এসে গেছে। 



বাড়িতে খাবার ছিলোনা , কেনাও হয়নি, রেধে খেতে হবে ভেবেই খিদেটা দ্বিগুন হয়ে যাচ্ছিলো। এমন সময় রুমমেট এর মেসেজ পেলাম, আমি যেন কোনো দ্বিধা না করে ওর থেকে নিয়ে খেয়ে খেয়ে শুয়ে পড়ি। ...পৃথিবীটা যতটা কঠিন বলে লোকে অতটাও নয় বোধহয় না?