Sunday, October 28, 2018

বাড়িটার গল্প

সে এক পাড়া। এককালে সব একই পরিবারের ছিলো, ক্রমে লোক বাড়ে, খুড়তুতো থেকে জ্ঞাতি হয়, তারপর পাড়ার লোক। দু ভাই এ হয়তো দু যুগ কথা নেই, তাদের ছেলেরা দশমীর কোলাকুলি করে। তো সেরকম এক পাড়ার গল্প। 

বাড়িটা পাড়ার এক কোনে, এটাই আসলে শুরুর বাড়ি। তারপর যা হয় ছানা পোনা আন্ডা বাচ্ছা বাড়তে থাকে, নতুন বাড়ি হয়ে, ছেলে মেয়েরা এদিক সেদিক ছড়িয়ে পড়ে, বাড়িটার বয়স বাড়ে, বৃদ্ধ হয়।

বুড়ো হলে হরেক জ্বালা, এই আজ এখানে চুন সুরকির দেওয়াল ভেঙে পড়ছে, ওই কাল কড়িকাঠের পাশ থেকে ঘুন পোকার আওয়াজ আসছে। তা এতো ডাক্তার বদ্যি আর কে করে, সকলেরই নিজের ঘর হয়ে গেছে, বাড়িটা আস্তে আস্তে অথর্ব হয়েএ শয্যা নেওয়া ভাঙা বাড়ি হয়ে পড়ে। তার ছাদ ভেঙে পড়ে, দেওয়া ধ্বসে যায়। মানুষরা না থাকলে কি হবে, বাড়ির মধ্যে নতুন নতুন আগন্তুক জুটে যায় ঠিকই। মৌমাছি বোলতা চাক বানায়, ইঁদূর ছুঁচোয় ফুটবল খেলে, ঘর গেরস্থালী পাতায়। বাড়িটা দেখে। আজকাল সে নির্লিপ্ত হয়ে গেছে, এক জীবনে কম দেখা হয়নি তো তার। কিন্তু বাড়ির বর্তমান বাসিন্দাদের এ নির্লিপ্তিতে আপত্তি আছে খুব। তারা খুব চেষ্টা করে বাড়িটার সাথে গল্প করতে, যদি একটু হেসে ওঠে তাদের সাথে।

এমন সময় এক চড়াই দম্পতি এলো সে বাড়ির ঘুলঘুলিতে। কর্তা চড়াইটা একটু ছোট খাটো আর  গিন্নী চড়াইটা একটু মোটাসোটা। সবে বিয়ে হয়েছে তাদের। বিয়ের পর চড়াইরা মা বাবার সাথে থাকেনা, আলাদা সংসার পাত্তেই হবে, আর আজকাল থাকার জায়গার দাম খুব বেড়ে গেছে। মানুষেরা ঘুলঘুলি রাখেনা, গাছ কেটে দেয়। সব অগ্নিমূল্য তাই। কর্তা চড়াইটা সারাক্ষন গান গাইছে শিস দিয়ে নইলে খাই খাই করছে নইলে চেঁচাচ্ছে এমনি এমনি মোট কথা বাড়িতে হুলুস্থুল ফেলেছে একটা। সে বোলতার সাথে আলাপ করে দিব্যি রোজ বিকেলের স্ন্যাক্স হিসেবে পোকা জোগাড় করে ফেলেছে, মোমাছির সাথে মান্থলি মধুর জোগান নিয়েছে, গিন্নীর আবার মধু না হলে রুটি খেতে অসুবিধে হয়।  ইঁদুরের পিঠে চেপে সেদিন বাড়িটার গায়ে গজিয়ে ওঠা বটের কোটরে ঢুঁ মেরে এসেছে। এসব করে টরে, তার নজরে পড়েছে বাড়িখানা। 

চড়াই এর জন্যে বাড়িটায় বেশ একটা সাড়া পড়েছে আগেই বলেছি। বাড়িটা নিজের দুঃখ ঝেড়ে একটু একটু করে জেগে উঠছিলো। তাছাড়া উপায়ই বা কি, চড়াই এর জ্বালাতন কম নাকি! এতো হুড়ুমদুড়ুম করে চুপ করে থাকাই মুশকিল।  সেই কোনকালে, যখন বাড়ির বউ গুলো কাজ সেরে বিকেল বেলা চুল বাঁধতে বসতো তার ভিতরের রকে, আর গল্প তামাশায় হেসে উঠতো তখন যেমন বাড়িটা প্রশ্রয়ের হাসি হাসতো এখনও তো মৌমাছি আর বোলতার গুনগুনে তেমনই প্রশ্রয় আসে। সত্যি বলতে, গরমের দুপুরে জানলা দরজা বন্ধ করে একতলার ঘরে গার্হস্থের শান্তির ঘুমের ছোঁয়া, কিংবা উৎসবের দিনের মেয়ে বউদের আড্ডায়, কিংবা টিমটিমে আলোর সন্ধ্যেবেলার নির্জন রেডিওর খবরের আওয়াজে যেমন বাড়িটা বুঝতো নিজেকে তেমনই এই চড়াই, ইঁদুর, বোলতা, মৌমাছি কিংবা ওই ভাঙা দেওয়ালের নীচে শুয়ে থাকা সাপেদের মাঝেও তো নিজেকে পায়। অন্য ভাবেই হোক না। মানুষগুলোর চোখে সে অশতিপর বৃদ্ধ, যাকে দিয়ে আর কিছুই হবে না, প্রায় মৃতই কিন্তু এদের চোখে বেঁচে আছে তো দিব্যি। 

এই ট্রানফরমেশনটা হয়েই বড় সুখে আছে বাড়িটা।   জানলায় নতুন গজানো বটের চারাটাকে আতা গাছ টার গল্প শোনায়, এই বাড়িরই দক্ষিনের ঘরের জানলার ঠিক পাশেই ছিলো। ভারী বন্ধু ছিলো... তারপর একদিন মরে গেলো না মেরে দিলো মনে পড়ে না আজ আর। তারপর সেই তেঁতুল গাছটা, হনুমানে এসে লম্ফঝম্প করতো ফলের সময়ে, জামরুল গাছটা, ভারী নরম স্বভাবের ছিলো অল্প বয়সে। এখন না হয় খানিক বয়স হয়ে গম্ভীর হয়েছে। আর ছিল একটা জাম গাছ, উত্তর দিকে, খস খস আওয়াজে কত কথা শোনাতো। সে সব কথা বলার নয়ও। 

একটা একটা করে পুরাতন ইঁট ভাঙে, পুরোনো পাঁজরা খসিয়ে বাড়িটা একটা একটা করে নতুন কাউকে থাকতে দেয়...আশ্রয় দিতে সে অঙ্গীকারবদ্ধ, মানু্ষ হোক কি গাছ, সাপ হোক কি ইঁদুর.....ফিসফিসিয়ে গল্প বলে নতুনদের হাসতে হাসতে চুন চুরকি খসিয়ে ফেলে তবু বাড়িটা বেশ দিব্যি আছে কিন্তু।

Friday, October 26, 2018

কোজাগরী

আমাদের বাড়িতে, মানে গ্রামের বাড়িতে, লক্ষ্মী পুজো হতো যখন ভারী মন কেমন করতো। এ কেমন পুজো, আওয়াজ নেই, রোশনাই নেই, দুগগা পুজোয় আসা একগাদা আত্মীয়দের কেউই প্রায় নেই!

আমাদের ঠাকুর হয়, হাতির পিঠে, হাতে ধানের ছড়া নিয়ে। ঠাকুরদালানের চত্বরের অংশটা ছাড়া আর আলো বলতে চাঁদ। ছোট বেলায় চাঁদের আলো অত কিছু আনন্দ দিতো না, হিম পড়া শুরু হয়ে যায়, মা মাথা ঢাকা দিতে বলে। এখানে মানে ঠাকুরদালানে, পুজো হলে মা আরেকটা পুজো করে, ঘরেতে। দোতলার মস্ত ঘরের মধ্যেই মস্ত ঘেরা বারান্দা, একা একা সেই বারান্দা পেরোতে ভয় করে, সেই খানে চৌকি পেতে, সিংহাসনে মায়ের সব ঠাকুরেরা থাকতো। সত্যনারায়নের সিন্নি ছাড়া বাকিদের মধ্যে লক্ষ্মীর কথা মনে আছে। দিদিরা আলপনা দিয়ে দিতো সুন্দর করে, মা নিজে নিজেই পুজো করতো। আমি একটু বড় হতে ভোগটা বানাতাম। আজ আমাদের বাড়িতে শুকনো খাবার মানে ভাত/খিচুড়ি জাতীয় কিছু হয় না, তাই আমি চিঁড়েতে ডাবের জল, গুড়, মুড়কি, নারকেল কুড়ো এইসব দিয়ে কাঁসার বড় জামবাটিতে ভোগ বানিয়ে দিতাম।

মা পাঁচালী পড়তো কিনা মনে পড়ছেনা, তবে কোজাগরী মানে বলে দিয়েছিলো মনে আছে দিব্যি। আমি মায়ের কাছে বসে বসে শুনতাম, একটা সাদা প্যাঁচায় চেপে লক্ষ্মী ঠাকুর আসবে রাত্রে বেলা, কে জাগে দেখবে, অশান্তি হওয়া ঘর এড়িয়ে শান্ত শিষ্ট ঘরে। আমি দক্ষিণের বারান্দার ঘুলঘুলিতে(পায়রাদের বসার জন্য বানানো হয়েছিল) , নাক লাগিয়ে কুয়াশা মাখা ধোঁয়া ধোঁয়া মাঠে চাঁদের আলোয় খুঁজতাম কোথায় সেই প্যাঁচাটা.....

আজ অফিস থেকে ফেরার পথে দেখছি আলোয় ঝলমলে শহরে কোজাগরি চাঁদের এন্ট্রিই নেই তো প্যাঁচার! হঠাৎ করে মন খারাপ হলো, একটা মেয়ে যেন তার পরিচিত জায়গায় টাইম ট্রাভেল করে অন্য সময়ে গিয়ে পড়েছে কিচ্ছু খুঁজে পাচ্ছে না.....আহারে। আজ সারারাত হয়তো এই হিম মাথায়, চাঁদের আলোর রাস্তা খুঁজে ফিরবে, কে জেগে আছে কে জানে!

Sunday, October 21, 2018

পুজোর গল্প

এবারে পুজোয় কোলকাতায় থাকতে হয়েছিলো বেশীর ভাগ দিন। দশমীতে গিয়েছিলাম খালি । সেসব নিয়েই গল্প খানিক।

*****************************************************************************

পঞ্চমী

"পঞ্চমীতে কি করছিস? অনেক দিন দেখা হয়না, চলে আয় নরক গুলজার করি"। উস্তুম খুস্তুম আড্ডা, মাটন বিরিয়ানি, মিষ্টি খেয়ে ল্যাদ ট্যাদ খেয়ে বিকেলে নেহাত যখনই গা তুলতে হলো ভাবলুম একটু ঘুরে দেখি। ঋকানন্দের সফরনামা চালু না হলে আর চলে নাকি! 
বন্ধুবান্ধব ছাড়া একা একাই বেরিয়েছিলা। সল্টলেক জায়গাটা আমার ভারী ভাল্লাগে, গাছপালা, ঝকঝকে রাস্তা নিয়ে কেমন চুপ করে বসে থাকে।

একা একা একটু তফাতে থেকে উৎসব দেখতে আমার দিব্যি লাগে। এই যে বাবা মা ছেলে মেয়ে নিয়ে রাস্তার দোকানের প্লাস্টিকের চেয়ারে তরিবত করে চাউমিন খাচ্ছে, ওই যে একটা বাবা তার ছেলের হাত ধরে আসছে, ছেলে বলছে, "বাবা, ঠাকুর আমার দিকেই চেয়েছিলো না?" একটা বাচ্ছা ছেলে তার পসরা সাজিয়ে বসেছে, বেলুন, ক্রাউন, শিং। শিংটা সে নিজেই একটা পরে নিয়েছে। হাফপ্যান্টুল, খালি গায়ে লাল শিং, চমৎকার লাগছে। আমার একটা ক্যাপ বন্দুক কিনতে ইচ্ছে করছিলো। নাহ থাক! ঋকানন্দ জানে সব ইচ্ছের জিনিস পেতে নেই....

আইস্ক্রীম, চিকেন, রোল, পান, বিরিয়ানি, ফুচকা কি যে নেই। ডাইনোসর পেরিয়ে তবে দুগগা ঠাকুর, হুঁ হুঁ বাওয়া, এ মোটেও গৌরি না, যে বাপের বাড়ি এসেছে, উনি হলেন ডাইনোসর মর্দিনী। বাচ্ছা গুলো ডাইনোদের ভয় দেখাচ্ছে নিরাপদ দূরত্বে, যেমন আমরা দেখাই না ফেসবুকে? অমনি।

উল্টোডাঙায় ফলওয়ালা আর সব্জিওয়ালার পাশ দিয়ে যেতে যেতে মনে হলো যেন পুজো এসেছে বলে কিছু নেইই, আশেপাশে যা হচ্ছে বেবাক ইগ্নোর করে নিজেদের মধ্যে বাজার নিয়ে আলোচনা চলছে। একটা ঘেয়ো কুকুর গজিয়ে ওঠা চাউমিন সেন্টারের পাশে শুয়েছিলো, তার অবশ্য পুজো দিব্যি রোল চাউমিনে চলছে। তেলেঙ্গাবাগানে এরা এটা কি করতে চেয়েছে হ্যাঁ? আমি আবার গোদা মানুষ তো, এমনিতেই ছোট হাত বড় মুখ দুর্গামূর্তি বুঝিনা, তায় থিম গুলো তো আধুনিক কবিতার মতোই দুর্বোধ্য ঠেকে।

হাঁটতে হাঁটতে সেল্ফি ভীড়ে ক্লান্ত লাগে...ঝপাং করে একটা অটোয় উঠেছি, দুটো সিট ফাঁকা এখনো তাও অটো দাঁড়াচ্ছেনা কোথাও। জ্যাম নিয়ে অটোওলাও বিরক্ত হয়ে পড়েছে, 'ছুটি নেবে কবে ঠাকুর দেখতে?' 'অষ্টমী নবমী তো যেতেই হবে ভাই, বউ ছেলেটার পুজো আর নষ্ট করা যায়! লোকসান হবে, হোগগে, বচ্ছরকার দিন, কি বলো হ্যাঁ?' মাঝ রাস্তায় একটা ছেলে হাঁইমাই করে অটো থামালো, তাকিয়ে দেখি তার গার্ল্ফ্রেন্ড রাস্তার ধারে একটা ল্যাম্পপোষ্টের নীচে বসে পড়েছে, নির্ঘাত নতুন জুতোয় ফোস্কা! 
অটোয় উঠে শুনতে পাই বলছে, 'খুব কষ্ট হচ্ছে না রে? আসলে বুঝতে পারিনি এতোটা হাঁটা রে....সরি'।
মেয়েটার গলা ভেসে আসে, 'আহ সরি কেন....গাধা কোথাকার'। 
ফিক করে হাসলো কিনা দেখিনি অবশ্য।

আরো নতুন পুরোনো গল্প তৈরী হোক পুজোয়, আনন্দে, ভালোবাসায়....


*************************************************************************
ষষ্ঠী

উফফ এই ফোনের আর ডিএসেলার ক্যামেরা! সারাক্ষন দুমদাম দাঁড়িয়ে ভীড় বাড়াচ্ছে!প্যান্ডেলগুলোয় ঠাসাঠাসি ভীড়ে, যাদেরই ফোন/ক্যামেরা নিয়ে দুর্গার/থিমের/নিজের/ফুলপিসির/নরেনকাকার/খেন্তিসোনার ছবি তুলতে দেখেছি হাত নাড়িয়ে দিয়েছি....


***************************************************************************
সপ্তমী

পাড়ার প্যান্ডেলে এতক্ষন "চিতাতেই সব শেষ চলছিলো" --- সপ্তমীর রাতের উপযুক্ত গানই বটে!

ও হ্যাঁ সকালে চলছিলো, "পালকিতে বউ চলে যায়, হায় রে শরমে মন ভরে যায়" -- এ গানটার তাৎপর্য কি? মানে পালকিতে বউ গেলে শরমে মন ভরবে কেন? বউ দেখে লজ্জা? ভাগ্যিস গানটা পুরুষ কন্ঠে না, তাহলে ফুলশয্যায় তো বিরাট চাপ ছিলো!


কিংবা ওই উপরোক্ত চিতাতেই সব শেষ কি শরমে জর্জরিত হয়ে হতাশার ফুলশয্যার পরের দিনের গান?

******************************************************************************
অষ্টমী

লুচিতে ডুবে ছিলাম কিনা তাই বিকেলের পঁচানব্বই এর পল্লীর পাঁচ মাইল হাঁটাও মাফ করে দিয়েছি।
তবে সন্ধি পুজো নিয়ে একটা ভাবনা মনে এসেছিলো ঃ
মাঝরাত পেরিয়ে গাল্ফেন এর বাড়ির দোরগোড়ায় হতে পারে শ্বশুর এর সাথে দেখা হওয়াকেই সন্ধিক্ষন বলা হয়ে থাকে!

তারপর উভয়েই উভয়ের দিকে তাকিয়ে(এই উভয় মাল্টিপল, গাল্ফেন এর সাথে এক দফা ও হতে পারে শ্বশুরের সাথে এক দফা), ফ্যাকাশে হাসির ক্ষনটিই সন্ধিপুজো!

ব্যাকগ্রাউন্ড দামামা ধ্বনি--- তোমার বাড়ির সামনে দিয়ে আমার মরন যাত্রা যেদিইইইইন যাবে


*******************************************************************************
নবমী

একা একা কোলকাতায় পুজো কাটবে বলে মন খারাপ করেছিলাম পুজোর আগে। তা সাধক মানুষের কি আর লোকের অভাব হয়, কেউ না হলেই নিজেই নিজের জন্য জুটে যায়। কাল অব্দি টই টই করে, খেয়ে, আড্ডা মেরে এমন অবস্থা আজ এক বন্ধুর বাড়ি মাটনের নিমন্ত্রণ ইগ্নোর করে দুপুরে ঘরে ঘুমাবো ঠিক করেছি।

এদিকে সকাল থেকেই মন খারাপ বেজায়। গ্রামের বাড়িতে আজ মাছ ধরতে আসে সকালে, অষ্টমীর লুচি খেয়ে আপোষ করেছি বলে মা তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্টেই মাছ ভেজে দেবে। তার আগে নবমীর চিঁড়ে ভোগ প্রসাদ। তারপর মাঠে ঘাটে ঘুরে বেড়াবো, সাইকেল নিয়ে কিংবা পায়ে হেঁটে। আড্ডা। দুপুরে জমিয়ে খেয়ে একটু পুজোবার্ষিকি পড়ব তারপর ফের পালাবো এদিক সেদিক....সেই সন্ধে নামার মুখে বাড়ি আসবো...প্রতিবারেই মা কিংবা জেঠিমা বলবে, 'উহঃ রোদে ঘুরে ঘুরে পুড়ে গেছিস তো'।

এখানে আমি বাজার করে এনে দিলেই মিঠুদি বানিয়ে দিতো হয়তো কিছু, আমি একা আছি বলে ছুটি নেয়নি, কিন্তু ইচ্ছে করেনা....লস্ট চাইল্ডের বাচ্ছাটার মতো না না করতে ইচ্ছে করে খালি। কিন্তু আমি জানি এ ভাবে থাকলে আরো খারাপ লাগবে, বিকেলে বন্ধুর বাড়ি যাবার আগে তাই একটু পাড়া টহল দিতে গেছি।

একটা পুজো মন্ডপে দেখি ঠাকুরটা দিব্যি ভালোমানুষের মতো দেখতে, ভীড়ও নেই। টেবিল ফ্যানের সামনে বসে পড়েছি। ওদিকে কি যেন প্রসাদ দিচ্ছে, চাইবো? নাহ! বাড়িতে কিনা সেধে দিয়ে যায় ধনাদা, বেছে বুছে খেজুর, চিঁড়েভোগ, লুচি,নাড়ু...বেপাড়ায় নবমীর দিন চাইতে বাধে। চুপ করে বসে আছি, দেখি একটা লোক শালপাতার বাটিতে, একটু লুচি,সুজি, চালকলা মাখা দিয়ে গেলো। এরা বুঝি চাল্কলা মাখা খায়? দুধচিঁড়ে না? যাকগে। এও ভারী ভালো খেতে। আরে, শাল্পাতার বাটিতে দুখানা খেজুরও আছে দেখছি!


মনের আনন্দে একটা মশালা ছাঁচ খেতে খেতে বাড়ি এসে শুকতারা পড়ছি...শুভ নবমী। আজকের দিনটাই তো আর পুজো...আনন্দে কাটুক সবার।।

******************************************************************************
দশমী

'রাখাল ছেলে! রাখাল ছেলে! বারেক ফিরে চাও, 
বাঁকা গাঁয়ের পথটি বেয়ে কোথায় চলে যাও?' 
'ওই যে দেখ নীল-নোয়ান সবুজ ঘেরা গাঁ 
কলার পাতা দোলায় চামর শিশির ধোয়ায় পা; 
সেথায় আছে ছোট্ট কুটির সোনার পাতায় ছাওয়া, 
সেই ঘরেতে একলা বসে ডাকছে আমার মা 
সেথায় যাব, ও ভাই এবার আমায় ছাড় না!' 

-জসীমউদ্দিন







শুভ বিজয়া