Friday, October 26, 2018

কোজাগরী

আমাদের বাড়িতে, মানে গ্রামের বাড়িতে, লক্ষ্মী পুজো হতো যখন ভারী মন কেমন করতো। এ কেমন পুজো, আওয়াজ নেই, রোশনাই নেই, দুগগা পুজোয় আসা একগাদা আত্মীয়দের কেউই প্রায় নেই!

আমাদের ঠাকুর হয়, হাতির পিঠে, হাতে ধানের ছড়া নিয়ে। ঠাকুরদালানের চত্বরের অংশটা ছাড়া আর আলো বলতে চাঁদ। ছোট বেলায় চাঁদের আলো অত কিছু আনন্দ দিতো না, হিম পড়া শুরু হয়ে যায়, মা মাথা ঢাকা দিতে বলে। এখানে মানে ঠাকুরদালানে, পুজো হলে মা আরেকটা পুজো করে, ঘরেতে। দোতলার মস্ত ঘরের মধ্যেই মস্ত ঘেরা বারান্দা, একা একা সেই বারান্দা পেরোতে ভয় করে, সেই খানে চৌকি পেতে, সিংহাসনে মায়ের সব ঠাকুরেরা থাকতো। সত্যনারায়নের সিন্নি ছাড়া বাকিদের মধ্যে লক্ষ্মীর কথা মনে আছে। দিদিরা আলপনা দিয়ে দিতো সুন্দর করে, মা নিজে নিজেই পুজো করতো। আমি একটু বড় হতে ভোগটা বানাতাম। আজ আমাদের বাড়িতে শুকনো খাবার মানে ভাত/খিচুড়ি জাতীয় কিছু হয় না, তাই আমি চিঁড়েতে ডাবের জল, গুড়, মুড়কি, নারকেল কুড়ো এইসব দিয়ে কাঁসার বড় জামবাটিতে ভোগ বানিয়ে দিতাম।

মা পাঁচালী পড়তো কিনা মনে পড়ছেনা, তবে কোজাগরী মানে বলে দিয়েছিলো মনে আছে দিব্যি। আমি মায়ের কাছে বসে বসে শুনতাম, একটা সাদা প্যাঁচায় চেপে লক্ষ্মী ঠাকুর আসবে রাত্রে বেলা, কে জাগে দেখবে, অশান্তি হওয়া ঘর এড়িয়ে শান্ত শিষ্ট ঘরে। আমি দক্ষিণের বারান্দার ঘুলঘুলিতে(পায়রাদের বসার জন্য বানানো হয়েছিল) , নাক লাগিয়ে কুয়াশা মাখা ধোঁয়া ধোঁয়া মাঠে চাঁদের আলোয় খুঁজতাম কোথায় সেই প্যাঁচাটা.....

আজ অফিস থেকে ফেরার পথে দেখছি আলোয় ঝলমলে শহরে কোজাগরি চাঁদের এন্ট্রিই নেই তো প্যাঁচার! হঠাৎ করে মন খারাপ হলো, একটা মেয়ে যেন তার পরিচিত জায়গায় টাইম ট্রাভেল করে অন্য সময়ে গিয়ে পড়েছে কিচ্ছু খুঁজে পাচ্ছে না.....আহারে। আজ সারারাত হয়তো এই হিম মাথায়, চাঁদের আলোর রাস্তা খুঁজে ফিরবে, কে জেগে আছে কে জানে!

No comments:

Post a Comment