Thursday, February 28, 2019

দিনকাল

দিনকাল খুবই খারাপ যাচ্ছে। হাজারটা চিন্তার মাঝে একটা কাচের বয়ামের গজা নিয়ে আনমনে খাচ্ছি, একটা বাইক এসে প্রায় গুঁজে দেয় আর কি! খাবি খেয়ে হাত থেকে সাধের গজা গেল মাটিতে...টাকা মাটি হতে পারে ডিমনিটাইজেশনে টাকা বদলাতে ভুললে, গজায় মাটি লাগলে দিনটাই মাটি হয়!

যে ঝালমুড়িওলার থেকে খাই, সে ছেলেটা এক মনে দাদ চুলকাচ্ছে দেখলাম...ওই হাত দিয়েই আবার পিঁয়াজ শশা মেশাবে...থাক গে যাক আমি চা খাই বরং। ও বিশু, একটা খুব কড়া কফি...
-দাদা আজ তো কফি করিনি।

নাহ এ দুনিয়ায় বেঁচে থেকেই বা কি লাভ...উদাস মনে তাই এক ভাঁড় চা আর কাচের বয়ামের সাদা পাতা জড়ানো প্যাটিস,  ভিতরে সুজি আর কিসের যেন পুর দেওয়া, ছোটবেলায় খাওয়া বিলকুল মানা ছিল, সেই জিনিস খাচ্ছি। এক জীবনে থুড়ি এক দিনে আর কিই বা বাকি আছে খারাপ হবার, কাকে ঠুকরে দেবে হয়তো কিংবা কুকুরে তাড়া করবে...করুক গে যাক...

এমন সময়...না কাক বা কুকুর না,  আরো সাংঘাতিক বিপর্যয়! এক সাথে চার জন ম্যানেজারের দল বিশুর দোকানেই চা খেতে এসেছে...এহে আরেকটু আগে দেখলেই বাপীদার দোকানে চলে যেতাম...গাড়িটার পিছনে লুকোবো?  অ্যাঁ কি বললেন? এরকম কেন করছি? আরে এক্ষুনি, ক্লায়েন্ট, ক্লাউড, হাবিজাবি বকতে হবে... এই শোকের দিনে অন্তত না প্লিজ....
"কিরে, কি খবর?"
হয়ে গেল! 

দিনের শেষ আওয়াজ খাওয়াটা বাকি ছিল...হাবিজাবি বকতে বকতে বলে, কিরে বিয়েবাড়ি নেই? 
-না ওই জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে আছে।
- তা তোর বিয়ে হয়ে গেছে?
- না -_- 
- হবে না?

অ্যাঁ এটা একটা কথা? হবে না আবার কি!  তোমার মেয়ের সাথে আলাপ করব হ্যাঁ? 😡

Monday, February 18, 2019

একদিন হঠাৎ

একটা কাজ ছিল আজ। জরুরী খুবই। তা বেরোনোর আগে,শীত ফুরোনোর রবিবারের সকালে পাতলা চাদরে পা ঢুকিয়ে, সব্যর আশ্চর্য ভ্রমন পড়ছিলাম। সান্দাকফুর রাস্তায় হাঁটছে তারা,  জলে ভিজছে, জ্যোৎস্না মাখছে, হাঁটছে হাঁটছে....আমার সব গোলমাল হয়ে গেল। বই নামিয়ে চানে ছুটলাম....চেয়ারে রাখা জামা জিন্স গলিয়ে হনহন করে গ্যারাজে। ততক্ষনে আমি জানি আমার আর ওই জরুরী কাজ করার উপায় নেই, আমায় বেরোতেই হবে। আলতো শীতের এই রোদ উপেক্ষা করে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে আমার রবিবার কাটতে পারবে না।

সাড়ে এগারোটা কোথাও যাওয়ার জন্যে বেশ দেরী। রোদ চড়া,  বেলাও অনেক। কোথায় যাব মাথায় আয়াছে না, মালঞ্চর রাস্তা ধরেই যাই। যদ্দুর যাওয়া যাবে যাব। ডেস্টিনেশন জেনে আর কবেই বা আমার কোন চলাটা হয়েছে। ঠিকাছে, চালাও পান্সি....

এই কিছুদিন আগেই শীতের শুরুতে এসেছিলাম যখন এ রাস্তাটা অন্যরকম ছিল। অনেক কটা গাছেই পাতা নেই আর এখন, পলাশ, সজনে ফুলে ছেয়ে আছে।  সজনে ফুল এক অদ্ভুত কম্বিনেশন দেয়। সাদাটে ফুলগুলো সবুজ গাছে যেন আলো জ্বালিয়ে রাখে। বাঁ পাশে খাল সংস্কার হচ্ছে মনে হয়, পাঁক তুলছে। উহ বেজায় গন্ধ। ডান দিকের জমিগুলোয় সর্ষেফুল আর নেই...ন্যাড়া জমি পড়ে আছে শুয়ে। 

বাবুরহাট বলে একটা জায়গার নাম শুনেছিলাম। দেখা যাক কেমন হয়! ভালো না লাগলে ব্যাক করবো। মীনাখাঁ থেকে বাবুরহাট সাত কিলোমিটা মত। সুতরাং চাপ নাই খারাপ লাগলেও চট করে চলে আসা যাবে ফের। তাছাড়া এমনিতেও জানিনা কোথায় যাব! মেন রাস্তার থেকে সরু খানিক, দুপাশে জমিতে ধান বুনছে।  এসময় ধান কেন? শীতের শেষে এ সময় ধান রুইতে হয় নাকি? আলু উঠে যায় তারপর কি হয় যেন চৈত্রের ফসল? মনে পড়ে না....চাট্টি হাবিজাবি জঞ্জালে মাথা ভরা, নিজের জমির হিসাব নাই....ফসল এর খবর রাখিনা ভাত জুটে যায়! 

স্যালোর জলে চান করছে কটা ছেলে।  দেখে আমারও ভারী সাধ হল অমন করে হুড়ুম হুড়ুম করে চান করবার। এহ একটা গামছাও যদি আনতাম! গাড়িটা সাইড করে আল ধরে ধরে হাঁটছি, ধান জমির মাঝে মাঝে শশা ক্ষেতও আছে। একটা ফিঙে তারে বসে দোল খাচ্ছে। কোথা থেকে উদাসী কোকিলের ডাক ভেসে আসছে একটা।  সব ঋতুর আলাদা আলাদা গন্ধ,  রঙ থাকে। হ্যাঁ আমাদের এই ঘোলাটে আকাশেও থাকে, আমি বুঝতে পারি। মানে শুধু তাপমাত্রা বা ফুল দিয়ে না, সবটা দিয়ে। গরমের দুপুরের রঙটা প্রায় এরকমই হবে খালি ধরো এক্সপোজারটা আরেকটু বেশী হবে, তুলিতে আরেকপোঁচ নির্জনতা আর উদাসী কুবো পাখীর ডাক শোনা যাবে। জমির কাছে এলেই এমন ভালোলাগে আমার। অবশ্য আমার অনেক কিছুতেই ভালো লাগে, আমার নীল আকাশ দেখলে ভালো লাগে, জল দেখলে ভালোলাগে, পাহাড়ে পাইন বনে হেঁটে যেতে ভালো লাগে, রোদ উঠলে ভালো লাগে, চমৎকার গান শুনলে ভালো লাগে, পছন্দের খানা মিললে ভালো লাগে....খারাপ লাগার লিস্টিও কম না যদিও তবে এমন ঝকঝকে দুপুরে খারাপ জিনিস কে মনে রাখে! 

একটা শশা তোলার ইচ্ছে হচ্ছিল খুব। কিন্তু কেউ তো নেই, না বলে ঋকানন্দর নিতে বাধে, আমাদের গ্রামে আমি জমিতে গেলে কেউ না  কেউ এমনিই দিত, "একটা  খা না শশা, ভালো রে"।  কিন্তু 'রাখতে যদি আপন ঘরে বিশ্ব ঘরে পেতাম না ঠাঁই '।   সুতরাং গা ঝেড়ে উঠে পড়া গেল। বাবুর হাটে খান দুই রিসর্ট আছে। একটায় আঁ আঁ আঁ আঁখ মারে হচ্ছে উদ্দাম বেগে  আরেকটায় একটা ছোট পুলে জাঙ্গিয়া পরা একদল মুশকো লোক জলকেলি করছে।  কিছু লোক বিয়ারের বোতল হাতে বসে চিকেন পকোড়া সাঁটাচ্ছে। আমি যেন বুক করব এরকম একটা ভাব নিয়ে মালিকের সাথে কথা টথা বলে চা পেয়ে গেলাম এক কাপ। এমন হুল্লোড়ে  দোষ নেই কিছু তবে আমার এমন হুল্লোড়ে আরাম নাই৷ তাড়াতাড়ি ওখান থেকে বেরিয়ে ফের মীনাখাঁ এসে মালঞ্চ। আর একটু এগোলে একদিকে ধামাখালি, আরেকদিকে বাসন্তি,ক্যানিং ঝড়খালি।  চিকেন পকোড়ার গন্ধে খিদে খিদে পাচ্ছিল। রবিবারের দুপুরে মালঞ্চ বাজার ফাঁকাই। একটা লোক গরম গরম কাঠি ভাজা করছে, পেয়ারা জামরুম নিয়ে বসে একজন। হাবিজাবি মিষ্টির ঠেলা নিয়ে একজন। কাঠিভাজা খেতে খেতে মিষ্টির ঠেলার সামনে গেছি। আজ তো আমার দিন, সারাদিন উল্টোপাল্টা অখাদ্য খাবো।
 " কাকা ওই গোল গোল খাজা গুলো কত করে? একটা দাও তো।" 
আরে হেব্বি খেতে তো। রসে টুপটুপে, পুরীর লম্বাটে খাজাগুলোকে দশ গোল দেবে। জিলিপিও আছে, গুড়কাঠিও আছে, নিকুতি এরা যাকে খেজুর বলছে, আর মালপো। কোনটা খাই? উমম গুড়কাঠিই খাব। 
-কাকা আরেকটা খাজা আর একশো গুড়কাঠি দাও দেখি৷ 

খেতে খেতেই গল্প হয়। তার বাড়ি কোথায় আমার বাড়ি কোথায়। আমার বাড়িতে কে আছে,  এ মিষ্টি কে বানায়....আমার চলার রাস্তায়, গাঁয়ে, হাটে বাজারে পথের আলাপ ছড়িয়ে আছে এমন কত। আগের বার ধামাখালী গেছিলাম, এবার বাসন্তীর দিকে যাই। ক্যানিং গেলে নদী কাছে পাব, ঝড়খালি তো দূর হবে, অন্যদিন আসবো খন, এই ভেবে মাতলা দেখতে চলা শুরু ফের। ক্যানিং এ ব্রিজ হয়ে গেছে, ফেরী নৌকা চলে না,  নদীতে জলও নেই। মন ভরল কই! এক লোক বুদ্ধি দিল, চারটে বাজে, ঝড়খালি চলে যাও, আসতে যেতে দু ঘন্টা লাগবে। 

আসতে যেতে দু ঘন্টা মানে রাত হবে ফিরতে। বুদ্ধিমান লোক হলে কখনোই যেত না। কিন্তু আমার যে চলাতেই আনন্দ, এক্সট্রা চল্লিশ বিয়াল্লিশ কিলোমিটার মানে আশী পঁচাশী কিলোমিটার  তো, টেনে দেব খন। কিন্তু এদিকের রাস্তা তো হাইওয়ে না, আর রাস্তাও বেশ প্যাঁচালো, ফেরার সময় অন্ধকারে তো স্পীড তুলতে পারবো না সেসব খেয়াল করিনি। মাথায় যদি পোকা নড়ে তাহলে আর উপায় কি। সাঁই সাঁই রাস্তা, গোল গোল  টার্ণ, হাপুসহুপুস করে ঝড়খালি পৌঁছলাম যখন সূর্য অস্ত যাচ্ছে। এই একটা দৃশ্য কত শতবার দেখেও পুরোনো হয়না। জলের মধ্যে রঙ তুলি ধুয়ে নিয়ে সূর্য বাড়ি ফিরলো আমিও এক কাপ চা খেয়ে আড়মোড়া ভেঙে ফিরতি পথ ধরলাম। ব্যাঘ্রপ্রকল্প দেখা হল না, বন্ধ হয়ে গেছে। অবশ্য দেখবার তাড়া নিয়ে আসিওনি। অনেক লোক সুন্দরবন ঘুরে ফিরছে। আমি আলগোছে একবার বোট ভাড়া কিরকম খোঁজ নিয়ে নিলাম,  বলা যায় না হয়ত কোনদিন শখ হবে রাতে আর না ফিরে থেকেই গেলাম! 

এ রাস্তায় স্ট্রীট লাইট নেই, হুশহাস গাড়ির আলো খালি। বাসন্তী হাইওয়ে উঠে গাড়ির স্পীড বাড়িয়েছি এমন সময় হঠাৎ দেখি চাঁদ উঠে গেছে অনেক্ষন। আজ বুঝি ত্রয়োদশী,  চারদিকে ভেড়ির জল চাঁদের আলোয় চকচক করছে। গাড়ি সাইড করে আলো নিভিয়ে বাইরে এলাম।  আমি জানি এসব অঞ্চল সেফ না মোটেও। খুন, রাহাজানি লেগেই থাকে। কিন্তু এ চারিদিকে আদিগন্ত ভেড়ির মাঝে ফাঁকা রাস্তায় চাঁদের আলোয় সে এমন দৃশ্যপট তৈরী হয়েছে তাকে অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই। সে দৃশ্যের বর্ণনা করতে পারি এমন সাধ্য আমার নেই, এ সৌন্দর্যের আনন্দ প্রকাশ করতে পারি তেমন ভাষাও নেই। চাঁদের আলোর নেশা বড় তীব্র,  যে একবার সেই নেশায় বুঁদ হয়েছে তার আর কিছু নেশা লাগে না, মদ না গাঁজা না,  রাজনীতি না, যশ না কিচ্ছু না। 

ফিরতে ইচ্ছে করে না তবু ফিরতেই হয়। এক বুক চাঁদের আলো নিয়ে ফের চলা শুরু।  সায়েন্স সিটির কাছাকাছি তখন, চারদিক ধোঁয়াশায়, মিটমিটে আলোয় আরেক ছবি তৈরী হয়েছে। মাঠের উপর জমাট ধোঁয়াশা, চারদিক শুনশান।  আরেকবার থামতেই হল। চাঁদের আলোয় ভেড়ির জল একরকম আর এই ধোঁয়াশা মাখা মাঠ আরেকরকম। নিস্তব্ধ ভুতুড়ে। ভুতুড়েই কারন এ তো সত্যিই অতীত।  আর একটু পরেই আলো জ্বলা শহরে ঢুকে যাব,  এ সব অলীক ছবি হয়ে থাকবে খালি। তারপর একদিন ঘোর ভেঙে যাবে,  এই সব আলো, হিসেব নিকেশ আসলে বেকার জিনিস, ওই ধোঁয়াশা মাখা ঝুপ্সি মাঠ, সাদা সাদা ফুলের আলো জ্বলা সজনে গাছ, চাঁদের আলোয় ভেসে যাওয়া ভেড়ির জল, টুপ করে ডুবে যাওয়া সূর্য,  ঘেমো কপাল গলার গামছায় মুছে কাগজে মুড়ে দেওয়া খাবার.....এসবই আসলে সত্যি টের পেয়ে আবার বেরিয়ে পড়তে হবে একদিন।


Thursday, February 14, 2019

ব্যাঙ আর প্রজাপতি

ভ্যালেন্টাইন্স ডে বলে মনেও পড়েনা আজকাল, বয়স হয়েছে কিনা৷ তবে ফেসবুক খুললে মনে পড়ে যায়। তা প্রেমের উচ্ছাস করছে অল্পবয়সী ছেলে মেয়ে গুলো মন্দ কি। প্রেমের দিন  উপলক্ষে একটা প্রেমের গল্প হোক নাকি?

গল্পটা আসলে একটা ব্যাঙের আর একটা প্রজাপতির। অসম প্রেম। আজকেই একটা ছবি দেখলাম নেটে, সে দেখেই লেখা।

**********************************************

গাছের ডালে বসেছিল সে চুপটি করে। মন ভালো নেই তার।না হয় সে মোটাসোটা থলথলে, গায়ে বড় বড় আব, না হয় তা গলায় গান খেলেনা, না হয় বদমেজাজী বলেই জানে সবাই তাই বলেই অমন করে বলে দেবে সকলের সামনে? 

আজ এখানে উৎসবের দিন ছিল। এখানে মানে এই চত্বরে। বেশী কেউ থাকে না এখানে, কয়েকঘর  সোনা ব্যাঙ, একটা কোলা ব্যাঙ, কিছু প্রজাপতি, কিছু বট, অশ্বত্থ, পেঁপে, পেয়ারা, একটা পিঁপড়েদের ডেরা,  কিছু মৌমাছি, আর কিছু চড়াই, শালিখ, ফিঙে, দোয়েল, মাছরাঙা। ব্যাস। আগে আরো অনেকে মিলে থাকতো। সেবার আকাশ থেকে জ্বালা ধরা  বৃষ্টি নামলো, কত ঘাস গাছ, প্রাণী মরে গেলো। মানুষ গুলো এসে আরো গাছ কমিয়ে দিল, নোংরা ফেলে ডোবাটা ভরিয়ে ফেলল, ব্যাস যারা ছিল তারাও কমে গেল।  এখন খালি ওরাই আছে। 

সেদিন ওরা এক হয়ে উইকেন্ড পার্টি করছিল। সারা সপ্তাহ কাজ থাকে ওদের সবারই খুব, এই মধু জোগাড় করো কি এই পোকা ধরোরে। উইকেন্ড পার্টি মানে আড্ডা খাওয়া গান বাজনা এই আর কি। টুকটাক মনের কথা বলে কেউ কেউ। এই যেমন দেখোনা,  মিষ্টি হাসি নিয়ে ফিঙেটা কেমন দোয়েলের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে গান শুনছে। দুজনের দুজনকে ভালো লেগেছে বোঝাই যায়। এক ভাঁড় মধু নিয়ে ওদের আড্ডা এগোক আমরা বরং চারদিক ঘুরে দেখি। আকাশটা আজ ঝকঝকে নীল।  ওদের এই জমায়েতটা সকালেই হয়ে থাকে৷ অশ্বত্থ একটা ডাল নাড়িয়ে তাল দিচ্ছে।  মাথা নেড়ে গান গাইছে পেঁপে গাছটা। চারদিকে খুশী খুশী হাওয়া। 

ভাবছ বুঝি তাহলে প্রথমে কার কথা দিয়ে শুরু করেছি? সে কথায় আসছি। তাড়ার কি? ছুটির দিন, দিব্যি আরাম আরাম গন্ধ চারদিকে। কোনের বাড়ির সোনালী ব্যাঙ পরিবারের একটা মেয়ে আছে। ভারী সুন্দর গানের গলা, দেখতেও তেমনই মিষ্টি। আর নামটাও ভারী  চমৎকার, টুরিং। কিন্তু হলে কি হয় সে মেয়ে বড়ই খামখেয়ালী,  এই ভালো মনে আছে তো তোমায় নিয়ে ছিপ ফেলে মাছ ধরতে গেলো এই মেজাজ খারাপ তো তোমায় ধাক্কা দিয়ে জলে ফেলে দিল। 

বলছিলাম না ও পাড়ায় এক মাত্র একটা কোলা ব্যাং থাকে? তাকে দেখতে যেমন খারাপ, মেজাজও তার তেমন খারাপ আর নামটা? সেও ততটাই খারাপ, অন্তত তার তো তাই মনে হয়। কালো কোলা থপথপে আবওয়ালা সেই ব্যাং এর নাম  বুরুৎ। শুরুতে এই বুরুৎ এর কথাই বলছিলাম। 

কোনো একদিন এরকম  একআনন্দ খুশীর দিনেই টুরিং কে দেখে মন মজে যায় বুরুৎ এর। টুরিং তখন একটা কচুপাতায় চড়ে দোল খাচ্ছিল আর গান গাইছিল। সেই গানের সুরে হাওয়ায়,  পুকুরের জলে আর বুরুৎ এর মনে লেগেছিল কাঁপন। বুরুৎ  গুটি গুটি এগিয়ে গেছিল গানের দিকে। তারপর? তারপর আবার কি যেমন হয়, টুরিং আর বুরুৎকে প্রায়ই এদিক সেদিক একসাথে দেখা যায়। পাতার প্লেটে পোকা রেখে দুজন দুদিক থেকে খায়, টুরিং গান পাঠায় বুরুৎ শোনে। বুরুৎ চিঠি লেখে গাছের ছালে, টুরিং লজ্জা পায়। বুড়ো বট খুশী হয়ে হয়ে ঘাড় নাড়ে। 

সব ঠিক চলতে চলতেই হঠাৎ করে বাধলো গোলমাল। কাটা গেলো আরো একটা বট, মারা পড়লো আরো অনেক কটা পাখি, পোকাদের চলাফেরার জায়গা গেল কমে। ফলে ওদের পাড়ায় এলো খাবারের কষ্ট। কাজ নেই, সারাদিন বসে বসে একটা পোকাও মেলেনা, সাপ্তাহিক আড্ডা তেমন জমে না আর। কজনই বা আছে পড়ে।  অসময়ে ভালোবাসা টিকতে গেলে যে জোর লাগে তা মনে হয় ছিল না বুরুৎ আর টুরিং এর গল্পে। ফলে হল কি, পোকা না পেয়ে পেয়ে দুজনেই বিরক্ত হয়ে গলা ফুলিয়ে ফুলিয়ে খালি ঝগড়া করে গেল। করতে করতে বিরক্ত হয়ে একদিন দুজনেই অন্য জায়গায় চলে গেল পোকার খোঁজে। 

তারপর অনেক শীত বসন্ত বর্ষা  পার হয়ে ক্রমে ক্রমে জায়গাটায় একটা দুটো নতুন গাছ দেখা গেল, একদুটো নতুন পোকার দেখা মিলল, নতুন দু চারটে পাখিও দেখা গেল, দেখা গেল নতুন নতুন ব্যাঙাচি, ডোবায় নতুন পদ্মফুল, তাতে পদ্মমধু। আবার এক দুই করে মৌমাছি, বোলতা, প্রজাপতি স, মাছরাঙারা আড্ডা জমাতে শুরু করলো। মেজাজ ভালো হল টুরিং এর। মজলিশে এলো সোনালী ব্যাঙেদের পরিবার। খালি সবাই ভুলে গেলো বুরুৎ এর কথা। বুরুৎকে তো আলাদা করে মনে রাখারও কিছু নেই কারন বুরুৎ তো কিছুই পারে না তেমন, না পারে গাইতে না পারে বাজাতে বা পারে মজলিশ জমিয়ে তুলতে। তাছাড়া ও পাড়ায় কোলাব্যাঙ আর একটাও ছিল না, তাই মনেও পড়েনি কারো।

বুরুৎ তো এমনিতেই বদমেজাজী।  তার মেজাজ গেল আরও খারাপ হয়ে। মন খারাপটা রাগে বদলে গিয়ে চেঁচামেচি করতে লাগল ওখানে গিয়ে৷ চারদিকে কেউ কেউ বলল, ওরে থাম থাম, ভুলে গেছি তো কি হয়েছে। এখানে তো আমরা সবাই বন্ধু চলে আয় তো। তাতেও বুরুৎ এর মেজাজ ঠিক হয়না। টুরিং এর কাছে গিয়ে সে বলল, "তুমি তো আমায় ডাকতে পারতে?"
টুরিং তার সোনালী রঙের থ্যাবড়া নাকের ফুটোটা বাঁকিয়ে বলল, উফ ফের তুমি! তোমায় কত খারাপ দেখতে তুমি জানো? তুমি কেমন বদ্মেজাজি জানো? তাছাড়া তোমার কোনো নিজের ছাতাও নেই তবে তোমায় আমি ডাকবো কেন? 
বুরুৎ এর রাগটা মন খারাপে ফিরে গেছে তখন। মুখটা নামিয়ে সে জিজ্ঞেস করে, "তবে আগে ডাকতে কেন?" 
-অত বলতে পারিনে বাপু। তুমি এখন যাও দেখি,  এদিকে মজলিশ ভণ্ডুল হবে আমার তোমার জন্যে। ওই দেখো মাছরাঙা কেমন ম্যাজিক দেখাচ্ছে।

তারপরেই বুরুৎ গাছের ডালে বসেছিল মন খারাপ করে। তা সত্যি বলতে মন খারাপ হয়েছে ঠিকই কিন্তু ভুলও তো কিছু বলেনি। তোমারই বা অমন হুড়মুড় করার কি ছিল। ভুলে গেছে ডাকতে যখন মনে করিয়ে দাও।  এ তো আর মানুষ না তুমি যে ডাকতে ভুলে গেছে বলে সে নিয়ে দক্ষযজ্ঞ করবে!  তাও এমন আনন্দের দিনে কেউ একজনেও মন খারাপ করলে খারাপ লাগে বৈকি। হোক না সে বদমেজাজি৷ 

মন খারাপ করে বসে ছিল বলেই বুরুৎ খেয়াল করেনি একটা পোকা তার নাকের ফুটোর মধ্যে দিয়ে হেঁটে গেল। হঠাৎ চমক ভাঙলো, খিলখিল করে একটা হাসি শুনে। কে হাসে? 
একটা হলুদ শাড়ি পরা প্রজাপতি। 
বুরুৎ হেঁড়ে গলায় হাঁক দিয়ে বলল, "এইয়ো কী ব্যাপার? হাসছ কেন?"

-হাসবোনা? ব্যাঙের নাকের ভিতর দিয়ে পোকা ঘুরে চলে যায় আর ব্যাঙ ছেতরে পড়ে থাকে এ দৃশ্য দেখেও হাসবোনা? খ্যা খ্যা খ্যা।

-অ্যাই মেয়ে ফের? দেবো থাবা মেরে বুঝবে। নেহাৎ আমার মন ভালো নেই তাই নাহলে না...

- না হলে কি? সত্যি মারতে? বাচ্ছা মেয়েকে মারবে বলে ভয় দেখাও, কেমন বীরব্যাঙ বোঝাই যাচ্ছে!

- বাচ্ছা! কে তুমি? তুমি হলে ধানী লংকা একটা। যাওনা যাও ওদিকে তো মজলিশ হচ্ছে, এখানে কেন।

- সে আমি যেখানে খুশীই যেতে পারি। কিন্তু তুমি এমন ছ্যাতরাব্যাতরা হয়ে শুয়ে কেন?

- এমনি।

-বেশ তাহলে এমনি এমনি চলো দেখি মজলিশে। 

-না না আমি যাব না৷ তুমি যাও।

- কেন তোমার পেট খারাপ হয়েছে বুঝি?

- সে আবার কি! পেট খারাপ হবে কেন। আশ্চর্য মেয়ে তো!

- তুমিও কম আশ্চর্য নাকি! আমায় তো কই বললে না এই হলুদ শাড়ি পরে আমায় কেমন লাগছে? মা এর থেকে চেয়ে নিয়ে পরেছি।

- আজব তো! আমি বলতে যাবই বা কেন! তোমার ইচ্ছে হয়েছে পরেছ, যাও মজলিশে অনেকে কম্পলিমেন্ট দেবে।

ও কি মন খারাপ করে বসে পড়লে কেন!

- আমায় নিশ্চয়ই বাজে লাগছে। 

- না না খুবই মিষ্টি লাগছে তো!

- সে তো এখন আমায় ভোলাতে বলছ। না হলে এতক্ষন তো খারাপ বলছিলে।

- খারাপ আবার কখন বললাম। উফফ মেয়েটা পাগল করে দেবে তো। আমি মরছি আমার জ্বালায়! 

হলুদ শাড়ি পরা প্রজাপতিটা দৌড়ে গিয়ে ব্যাঙের কাছে গিয়ে বলল, "কই দেখি দেখি, কোথায়, দাঁড়াও আমার কাছে ভালো একটা ফুলের রেনু আছে লাগালেই সেরে যাবে। "

- আরে কী আশ্চর্য!  সত্যিকারের পোড় নাকি! এ অন্য পোড়া, তুমি বুঝবে না।

- বোঝাও।

- না। 

- না বোঝালে তোমার নাকে কিন্তু পরাগ গুঁজে দেব।

- আহ মহা ঝামেলা তো! সে অনেক বড় গল্প।

- হ্যাঁ আমি কি ছোট করতে বলেছি নাকি। তুমি যা ক্যাবলা নির্ঘাত তাহলে ঘেঁটে ফেলবে সব।

- কী আমি ক্যাবলা! যাও আমি কিছুই বলব না আর।

- আচ্ছা আচ্ছা  রাগ করেনা.....

.......কথায় কথায় রাত নামে কখন।  বাড়ি ফিরতে দেরী হয়ে যায় তাদের। পরদিন সকালে বুরুৎ দেখে তার মন খারাপটা চলে গেছে, বুকের মধ্যে কেমন যেন উচাটন ভাব। এই যাঃ কাল তো মেয়েটার নাম জানা হয়নি তবে? আর কি দেখা হবে না? দুরুদুরু বুকে ব্যাঙ চলে যায় কালকের সেই গাছের ডালে। কই কেউ নেই। বেলা গড়ায়, মৌমাছির গুনগুন,  পাখিদের হুল্লোড় সব শোনা যায়, কিন্তু সেই হলুদ শাড়ি পরা প্রজাপতি কোথায়? দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলেছে, বুরুৎ কিছুই খায়নি সারক্ষন।  পেটের মধ্যে গুড়্গুড় আওয়াজ হচ্ছে।  মনের মধ্যে একশো মন ভারী বস্তা যেন! এমন সময় কানের মধ্যে কে যেন সুড়সুড়ি দিল।

"কে রে?" 

তাকিয়ে দেখে কালকের সেই মেয়েটা। আজকে একটা সোনালী আর সবুজ বুটিদার শাড়ি পরেছে।  দেখেই তো বুরুৎ এর উলটানো জিভ সোজা হয়ে যায় প্রায়! 

-এতক্ষণ আসোনি যে?

- বা রে তুমি তো বলোনি আমার জন্যে অপেক্ষা করবে। আমি তো এমনিই এলাম।

- না বললে জানতে নেই? 

- না নেই।তোমার নাম কি?

-বুরুৎ। তোমার?

- পুপাকি। তোমার নামটা ভারী মিষ্টি। তুমিও ভারী ভালো।

বুরুৎ তো অবাক। ওকে আবার ভালো বলছে! ওর নামটা ভালো বলছে! এ কেমন মেয়ে। আচ্ছা পাগলি তো। 

বুরুৎ হঠাৎ বলে, " একটা কথা বলব "?

-হুঁ।

-আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম সেই সকাল থেকে...কালকে পরশু রোজ রোজ অপেক্ষা করবো...

- হিহিহি। তাহলে কাজ করবে কখন?

- তাহলে তুমি আমার সাথে চলো। অপেক্ষা না করিয়ে।

- চিনিনা জানিনা যাব কেন? কোথায় রাখবে আমায়?

- উমম...চিনে না হয় নেবে। আর আপাতত এই যে মাথায় বসো আরাম করে আমি তাহলে গল্প করতে করতে চলে যাওয়া যাবে। 

-কোথায় যাবে?

-চলোই না,  যদ্দুর যাওয়া যায় একসাথে।

.....তারপর দেখা যায় কালো থপথপে ব্যাঙ মুখে হাজার ওয়াটের আলো জ্বালিয়ে মাথায় করে একটা প্রজাপতি নিয়ে পথ চলেছে।

Saturday, February 9, 2019

সরস্বতী পুজোয়

"আরে আমি তো দু বছর দুবাইতে বিল্ডিং এর কাজ করেছি। তারপর এই খানে। "
- ফিরলে কেন? এখানে মাইনে তো আর দুবাই এর মতো হবে না।
- মাইনে বাড়াচ্ছিলো না, তারপর আরো সমস্যা...

পাড়ার ওষুধের দোকানের ছেলেটার সাথে কথা হচ্ছিল। হাসীখুশী ছেলেটা আমায় ব্যথা না দিয়ে ইঞ্জেকশন দিয়ে দেয়। আজ দোকান ফাঁকা গল্প করছিলাম তাই। গল্প করতে করতেই খেয়াল করছিলাম, ছেলেটা যা কথাই বলছে তাতে কিন্তু অভিযোগ নেই, হতাশা নেই। দিব্যি হাসিমুখে বলছিল তার ঠিকাদার কেমন নিয়ে গেছিলো এক কাজে লাগিয়েছিল অন্য কাজে, পাসপোর্ট জমা রেখে দিয়েছিল কিনা তাই সুযোগ থাকতেও অন্য জায়গায় চাকরি করা হল না। বোকা সোকা মানুষ বোঝাই যায়। পাসপোর্ট জমা রাখাটাই তো ঠিক না, কে বলবে! কত শত শ্রমিক ওই ভাবে বন্ডেড লেবার হয়ে কাজ করে৷ আর এই হাসিমুখে, তুড়ি মেরে সব, বাঁচাটাই এদের মূলধন হয়ত, না হলে এমন ঝকঝকে হাসিমুখে বাঁচে কেমন করে? কেমন করে দু হাজার টাকায় নিজের খরচা চালিয়ে সব বাড়িতে পাঠিয়েও ফের সে জায়গায় যেতে চায়!

"এখানে মাইনে কম পাই, জমে না কিছু, তাই ভাবছিলাম আবার চলে যাব কিনা। এখানে থাকলে মেয়েটাকে দেখতে পাই রোজ, এটাতেই সব মেকাপ হয়ে যায় বুঝলে। ওখানে থাকতে তো মেয়েকে দেখতেই পাইনি দু বচ্ছর। "

কার সুখ যে কিসে লুকিয়ে থাকে। ছেলেটার দোলাচল বুঝি৷ টাকার টান, অপত্যের টান.....এ দড়ি টানাটানি সব জায়গায়তেই ভায়া। মুখে বলি, হ্যাঁ হ্যাঁ দেখো যেখানে ভালো লাগবে। তার বেশী বলার অধিকার তো আমার নেই। আমি ওর জীবন জানিনা, ওর ভালো থাকা খারাপ থাকা জানিনা, ওর সুখ অসুখ না বুঝে পরামর্শ দেবার আমি কে!

সুখের মতই সত্যি জিনিসটাও বড়ই গোলমেলে৷ ধরা যাক বিদেশী কেউ, যে কোলকাতাকে বোঝেইনি, বলল, কোলকাতায় কোনো সুস্থ মানুষ বাস করে নাকি! এতো ধোঁয়া, অসভ্যতা, কাজ নেই, পরিষ্কার জল নেই, গিজগিজে মানুষ.... এখানে যারা থাকে তারা সবাই খুব খারাপ থাকতে বাধ্য। কথাটা খানিক ঠিক কিন্তু খানিক ভুল। এতো লোক খারাপ থাকলে এমন ঝকঝকে হাসতে পারে?

তার থেকেই সাইকেল নিয়ে মিষ্টি কিনতে যাচ্ছি। কতদিন পর সাইকেল চড়লাম, লগবগ করতে করতে প্যাডেল ঘোরাচ্ছি। এ সাইকেলে আবার বেল নেই, ও কাকা সাইড করে সাইড করে....লগবগ করতে করতেই ব্যালেন্স হয়ে যায়। জ্যাম কাটিয়ে একটা গলিতে ঢুকলাম, অনেএএক দিন আগে কিশোরবেলায় ঘুরতাম এ গলিতে, লুকিয়ে সিগারেট খাবার জন্যে। একবার উত্তেজনায় পিছনের পকেটে রেখে দিয়েই টিউশন ক্লাসে চলে গেছিলাম। কেমিস্ট্রি টিউশন ছিলো মাটিতে বসে, এক টাকাটা পঁচিশ পয়সার ফ্লেক দুমড়ে যাওয়ায় সেকিইই দুঃখ।

এখন এ গলিটা বদলে গেছে, বিস্তর ফ্ল্যাট উঠে গেছে। তাও এখানে বাতাস এখনো একটু পাতলা...একটু ভীতু। 
সরস্বতী পুজোয় রাস্তা জুড়ে জ্যান্ত সরস্বতী ঘুরে বেড়াচ্ছে। কালো শাড়ী পরা এক সরস্বতী ফোনের ওপারে বিশেষ কাউকে বলছে, "গাধাটা, মা এর গলা আমার গলা চিনিস না! "

কাকে হেগে একেবারে যাতা করেছে গাড়িটায়। কন্সটিপেশনের রুগী কাক। শক্ত ইঁট হয়ে গেছে। ভেজা লাল কাপড় দিয়ে ঘষছি, গাড়িটাকে বিড়বিড় করে বলছি, "আমি নিজেও তো খানিক গোছানো খানিক অগোছালো বল, মানিয়ে গুছিয়ে নে একটু। দুবছর এর উপর ঘর করছিস, না হয় কদিন পরিষ্কার করিনি অমন উদাস হয়ে যাবার কি! তাই জন্যেই তো কাল কাপড় বাঁধা ডাকাতনী তোকে আঁচড় কেটে বেড়িয়ে গেল। দুঃখ হয় তো বল?"

"ও ভাই, আমার গাড়িটা ধুয়ে দিবি? কত নিবি?"

আমার উস্কো খুস্কো চুল, বিড়বিড় বকা, গাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে ছাদ সাফ করা দেখে আমায় গাড়ি ধোয়ার ছেলেটা ভেবেছে নির্ঘাত! এহ ডিমোশন হলো। আগে মোটর মেকানিক ভাবত। অবশ্য দোষ দেওয়া যায়না। কারন আমায় দেখতে অমনই লাগে....কিন্তু দুঃখ তাতে না, দুঃখ হল পাশ দিয়ে তখনই একটা বেশ মানে বেশ ভালো আর কি, তরুণী যাচ্ছিলেন, যাকে আমি গাড়ি ধোয়ার ফাঁকে একটু ওই আর কি যাকে বলে তাকাচ্ছিলাম। কে যাচ্ছে না যাচ্ছে খোঁজ রাখা দরকার কিনা!

সবই মায়া হে...যাক যা গেছে তা যাক। বিকেলে আজ রাস্তা ফাঁকাই। সরস্বতী পুজো আজ না কাল? যেদিনই হোক আজ দিনটা সব মিলিয়ে মন্দ না, ওই যে একটা গাছে পলাশ ধরেছে, একজন সার্জেন্ট হাত দেখিয়ে গাড়ির স্রোত থামিয়ে দুটো বাচ্ছাকে রাস্তা পার করে দিচ্ছে, একটা পাঞ্জাবী পরা আর একটা হলুদ শাড়ি পরা। এইসব সুখ গুলো লুকিয়ে থাকে বলেই আমার এই শহর ছেড়ে পালানো হয়না, ওই ওষুধ দোকানে ছেলেটার মত যে ঠিকাদারের বন্ডেড লেবার হয়ে বেশী মাইনের চাকরির মায়া কাটিয়ে রয়ে যায়, মেয়েটাকে বুকের মধ্যে নিয়ে ঘুমোতে যাবে বলে।