Sunday, June 27, 2021

কোলকাতার কাছেই

 কতদিন পর এমন দুম করে পালিয়ে বেরোলাম কে জানে। পালিয়ে বেরানোই, কারন অফিসের দিন, কাজ আছে, স্ক্রাম কলে হিসেব নিকেশ মেলাতেও হবে। কিন্তু অত হিসেব মেনে চললে তো হয়েই যেত। সুতরাং চল যাই, বলে দুড়ুম করে বেরিয়ে পরা। এই ভর দুপুরেও মোড়ের মাথায় লোকজনের কমতি কিছু নেই। আদা রসুনের ঠেলা, কলাবেচিয়ে সবাইকে ডজ করে সার্ভিস রোড নেওয়া গেল। খালের পাশের ওই রাস্তাটা নেবো, কখনো যাইনি, অন্যসময় বেজায় ভীড় থাকে, গাড়ি নিয়ে বিরক্ত লাগে। করোনা তায় দুপুরবেলা তাই লোকজন বেশ কম। দু চারটে সাইকেল বা বাইক সারানোর দোকান খোলা স্রেফ। আরো খানিক এগোই। মাঝে মাঝে সাইকেলে চলে যাচ্ছে কেউ কেউ। খানিক এগোলেই দৃশ্যপট বদলে যায় একদম৷ কোলকাতায় আছি বলে মনে হয়না, খাল্রর উপর টিনের শেড দেওয়া কাঁঠাল কিংবা মাছের দোকান, পাশেই মন্দির একটা, এইপাশের ঘর বাড়ি গুলোও যেন মফস্বলের বাজার। এই দুপুরেও কাঁঠাল বিক্রী হচ্ছে এদিক সেদিক। গুমটির মতো ছোট্ট মিষ্টির দোকান খোলা, দানাদার, রসগোল্লা, আর পান্তুয়া ছাড়া বিশেষ কিছু নেই। আরো এগোলে বাজার হালকা হয়ে যায়, রাস্তাও ফাঁকা। এ পাশে ভেড়ির জলে জাল দেওয়া।খেজুর গাছের তলায় উদাস মুখে কাটারি হাতে একটা লোক বসে। এক দুটো ভ্যান চলে যাচ্ছে নির্লিপ্ত মুখে, অবিক্রীত আম নিয়ে। ভরন্ত মেঘলা দুপুর। মেঘ কেটে নীল আকাশ ঝকঝক করছে। সদ্য ওঠা বড় বড় ফ্ল্যাটবাড়ি কিংবা পার্টিওফিস কোথাও থেকে আওয়াজ নেই। "মাটির মূর্তি বানানো হয়, প্রোঃ হাস্যবদন মন্ডল", লেখা সাইনবোর্ড পেরিয়ে ক্রমে নিউটাইনে এসে উঠি, রোদ মাথায় এসে লাগছে, আরাম হচ্ছে না আর। এতক্ষনের ছায়া মাখা পথ শেষ। ফের একটা সরু রাস্তা দিয়ে ঢুকে যাই, এখানেও লোকজন নেই বিশেষ। কিন্তু এ রাস্তায় বাড়ি দোকান বেশী। গাছকম, ভেড়িও নেই। গলায় ধুকধুকি ঝোলানো খালি গায়ে একটা দুটো বাচ্ছা ছেলে। দুপাশের সাইনবোর্ডও বদলে গেছে, শাহরুখ ফ্যাশন হাউস,  মনিরুল স্টোর্স। বাঁ পাশে পবিত্র কবরস্থান, দিব্যি ভুট্টা গাছ হয়েছে সেখানকার জংলা জমিতে। মাটির জিনিস মাটির কাছে ফিরে গিয়ে গাছ হয়েছে আর কিইই বা চাই। হোক না সে গুল্ম, মহীরূহদের থেকে কম নাকি তার জীবন। আরো এগোলে শহর গ্রাস করে নেয়, একটাও গাছ নেই, গুমোট বাড়ে, প্রায় পনেরো কিলোমিটার পথ চলেছি, সাইকেলের প্যাডেল আর যেন ঘোরে না। একটু হাওয়াও কি দিতে নেই!

তবে, সব গুমোট গরমের শেষে একটা ভাঁড় চা কিংবা সিমেন্টের স্ল্যাবের আরাম থাকে। রাস্তাটা আবার অবান্তর জমা খরচের হিসেব কষার শক্তি দিয়ে শেষ হয়, ফের আরেকদিনের ভরসা রেখে।