Sunday, December 29, 2019

ভুটে আর ছোটকা

- ছোটকা
- হুঁ
- ও ছোটকা

- বলবি তো

- তুমি সন্ন্যাসী হয়ে গেছিলে কেন?

- কে বলল?

- ওই তো মা আর বাবা সেদিন কথা বলছিলো...

- ও আজকাল অন্যদের আলোচনায় কান পাতার অভ্যেসও তৈরী হয়েছে!

- না না, ওরকম না। আমার সামনেই বলছিল, তাই ভাবলাম তেমন পার্সোনাল কথা নিশ্চয়ই না। বলো না ছোটকা সন্ন্যাসী হয়ে গেছিলে কেন?

- হুম। তা ভুটেবাবু সন্ন্যাসী কাকে বলে জানা আছে?

-হ্যাঁ জানি তো। ছোট সংসারের মধ্যে আটকে না থেকে, পার্থিব জিনিসের মায়া ত্যাগ করে ভগবানের সন্ধানে যাওয়া।

- আরিব্বাস! ভুটেবাবু! পার্থিব, সংসারের মায়া, কী কেস রে? অংক ক্লাসের নতুন মেয়েটা পাত্তা দিচ্ছেনা?

- আহ ছোটকা! তোমার সবেতেই ঠাট্টা খালি। ঠিকাছে বাদ দাও, আমি যাই।

- আরে চটিস কেন! সত্যিই তো এ সব জিনিস নিয়ে ইয়ার্কি করা ভালোনা মোটেই। তা কী বলছে সে?

- কে আবার কী বলবে!

- ওহ। আচ্ছা ছাড় এসব, চল মন্টুর দোকানে নতুন একটা কারিগর এসেছে, মাছের ডিমের বড়া যা বানাচ্ছেনা রে। চল চারটে করে মেরে আসি।

- নাহ। তুমি যাও। আমার শরীরটা ভালো নেই!

- ওহ। হ্যাঁ শরীর ভালো না থাকলে এসব খাওয়া ঠিক না। তা যাবি নাকি কাল, পাঁচ নম্বর পুকুরে এপার ওপার এর রেস দিতে?

- নাহ ছোটকা, তুমিই যাও। আমার সামনে টেস্ট আছে, ঠান্ডা লেগে গেলে সমস্যা হবে।

- তাও বটে তাও বটে। তাহলে বুঝলি ভুটে এ কদিন তোর ডায়েটেরও বদল আনতে হবে, ঝোল ভাত, আর পেঁপে সেদ্ধ। আর সকালে এক গ্লাস লাউএর রস নাকি? মানে সামনে যখন টেস্ট আর শরীরটাও তোর ভালো নেই বলছিস। আরে আরে অত মুষড়ে পড়ছিস কেন, আচ্ছা আচ্ছা লাউ বাদ।
আচ্ছা আচ্ছা নে এবার বলতো কী হয়েছে। কে এমন পাপিষ্ঠ থোড় কিংবা লাউ মানুষ রূপে আমাদের ভুটেবাবুকে এত যন্ত্রণায় ফেলেছে! তোর ছোটকা আছে না, এত চিন্তা করছিস কেন?

- আমার না ভালো লাগছে না কিচ্ছু ছোটকা। আমি কেন তোমাদের মত হলাম না বলতে পারো? আমার মাথায় বুদ্ধি কম, আমি পড়াশোনায় তুখোড় না, সেরা জায়গা আমার জন্যে না, আমার হাইট দেখো, চেহারা দেখো, লোকজন খোরাক করে, অংক কোচিং এর মেয়ের কতগা বললে না? হুহ আমার দিকে তাকাবে এমন ভাবনাই অসম্ভব। তুমি বলবে আমি হীনমন্যতায় ভুগছি, এসব বাজে কথা, আমার থেকেও আরো কত কত লোকে খারাপ আছে তাই তো? আমি জানি ছোটকা এসব, কিন্তু আমার থেকে ভালোও তো কত লোকে আছে বলো। আমি কেন সেই সেরাদের দলে না? প্লিজ ছোটকা আমায় বোকোনা, হেসোনা। আমি কাউকে বলতে পারিনা এসব, আমার ভালো লাগেনা কিছু। মনে হয় সব ছেড়েছুড়ে চলে যাই।

- বেশ। বুঝলাম। না আমি হাসবোও না, বোকবোও না। ভুটে তোর ছোটকা কিছু সেরাদের দলে পরে না। না, না, আগে আমায় বলে নিতে দে। তুই বলছিলিনা, আমি কেন সন্ন্যাসী হয়ে গেছিলাম? আমি সন্ন্যাসী হইনি, স্রেফ বলতে পারিস ভবঘুরে হয়ে গেছিলাম। তুই জানিসই আমি নাস্তিক, ভগবানের খোঁজে আমায় যারা ভালোবাসে তাদের ফেলে বেরিয়ে যাওয়া আমার জন্যে না। আমি গেছিলাম কেন, সে প্রসঙ্গ আপাতত থাক, আমি ফিরে এসেছিলাম কেন সেটাই বলি বরং।
ঘুরতে ঘুরতে আমি সেবার একটা শহরের গঙ্গার কাছে এক বস্তির কাছাকাছি একটা আস্তানায় থাকি। দাড়ি গোঁফে এমন চেহারা হয়েছিল, আর ইচ্ছে করেই একটা গেরুয়া পরেছিলাম বলে খাওয়ার অভাব হতনা। তো আমার মনের অস্থিরতা কমেনি কিছুই, বিরক্ত লাগে সব কিছুই, হতাশ লাগে তোর মতই। মনে হয় আমি অপদার্থ। আমার বন্ধু বান্ধবরা বিরাট চাকরি করে তখন, কেউ কেউ ভারী চমৎকার গান করে, কেউ ভালো খেলে...আমি ফ্যা ফ্যা করে ঘুরছি! সে সময়েই খেয়াল হল হঠাৎ, বস্তির লোকগুলোর আনন্দ ফূর্তির কম নেই। মানে খুবই আশ্চর্য ব্যপার, এই আজ অমুক পুজো, কাল ডান্স ধামাকা, পরশু তমুক। তবে লোকগুলো বেশীরভাগ পুজোয় আশপাশের সকলকে খাওয়াতো, ওদের সামর্থ্য মত। আমি খুব তাচ্ছিল্য ভরে ভাবতাম, অশিক্ষার কারনে এসব করে৷ দুঃখের এত কারন তাও দুঃখ নেই, নির্বোধ ভাবতাম ওদের এতই নির্বোধ ছিলাম।
তারপর জানিস একদিন খেয়াল হল, আরে আমার বিরাট চাকরি করা সফল বন্ধু গুলোও তো দিন রাত খেটে, অবসরে এই হুল্লোড়টাই করে পাবে গিয়ে বা পুজোয় বা বারে। তারপর বলে, এত স্ট্রেস আর ভাল্লাগেনা।

ভাবলাম খুব বুঝলি ভুটে, ভালো থাকা খারাপ থাকা আসলেই তো নিজের উপর। আমি দশটাকায় ভালো থাকতে পারি আবার একশো টাকাতেও পারি। হয়ত দশটাকায় ভালো থাকাটা একশো টাকায় ভালো থাকা লোকটা বুঝতে পারছেনা তাই ভাবছে আমি খারাপ আছি। আমি খারাপ আছি না ভালো সেটা অন্যের ইলিউশনে হয়ে যাচ্ছেনা তো? বুঝতে পারছিস ভুটে কী বলছি?

- হ্যাঁ ছোটকা, মানে এই যে বড়রা ভাবে এখনকার আমাদের ভিডিও গেমস জীবন কীই দুঃখের, এদিকে আমরা দিব্যি আছি সেরকম না?

- কারেক্ট। একদম তাই। যেই মাত্র এটা ভাবলাম, অমনি মনে হল, বেশ তো আমার জীবনটা অন্যের চোখে "সফল" কিনা দেখার বদলে, নিজের চোখেই দেখি একবার? ঝেড়ে ঝুড়ে দেখলাম, আমার ছেঁড়া জামার পকেটে বোঝাই করা মনি মানিক! দাদা, বৌদি,দিদি, মা বাবা, দু চার খানা বন্ধু বান্ধব, তুই তখন হোসনি তাই তোকে কাউন্ট করিনি, যাইহোক সব্বাই আমায় কত ভালোবাসে তা টের পেতে বেগ হলনা। জানিসই তো ভালোবাসা দিব্যি বোঝা যায়। তো যেনা টের পাওয়া, দেখলাম, আমার সকালের রোদ মাখা বিছানায় যে ওম লেগে থাকে রাতের চাঁদের আলোয় তা ঝকঝকে হয়ে যায় কেমন। বুঝলি ভুটে, তুই হয়ত সেরা না, তুই হ্যান্ডসাম না, হয়ত কেন তাইই, তুই যা বললি তা মেনেই নিলাম, সবাই দিব্যি সোজা সরল পথে তরতর করে এগিয়ে যায় তুই পাক খেয়ে খেয়ে লগি ঠেলিস, তাও ভুটে দেখবি হয়ত ওই পাক খেতে খেতেই একটা ডলফিন ঘাই মারলো, অনূকুলে পাওয়া হাওয়ার তরতর করে এগিয়ে যাওয়া নৌকাটা সেই ডলফিন মিস করে গেল।

এক জীবনে সব মেলে না রে ভুটে, তার জন্যে হা হুতাশ করার বদলে না পাওয়া গুলোকে সঙ্গে নিয়ে চলতে গিয়ে দেখলি আচানক সব রামধনু জুটে গেল।

- ঠিক। আমার কোনো বন্ধুর এমন ছোটকা নেই এ আমি হলফ করে বলতে পারি। ইয়ে, মন্টুর দোকানে যাবে নাকি? শরীরটা এখন দিব্যি চাঙ্গা লাগছে কিনা....

Wednesday, December 18, 2019

তাড়াহুড়োয় তাড়োবা (শেষ)

বাঘ দেখে ফিরে ভয়ানক খিদে পেয়েছে দেখে গেটের বাইরেই এক হতভাগা রেস্তোরাঁয় ঢুকে পরা গেল। সে এক আজব রেস্টুরেন্ট মাইরি! ধরো খাবার অর্ডার দিলে,  বলল দেরী হবে কিন্তু, তুমি অন্য একটা অর্ডার দিলে বলল আচ্ছা এটা হয়ে যাবে এক্ষুনি। তো স্বাভাবিকাবেই জলদি হবে এমন জিনিস, ডিম পাঁউরুটি অর্ডার দেবে তুমি। তাতেও দেখবে এক্ষুনি ব্যাপারটা কালের কাছে স্রেফ মায়া। তার এক্ষুনি আসলে আধঘন্টা, কিন্তু তাতে কি, পুরো মহাকালের তুলনায় সে তো নখের ডগাও না। তাই তুমি বসেই থাকবে বসেই থাকবে, ঘড়ির কাঁটা সরে যাক, খিদেয় তুমি নেতিয়ে যাও, যাই হয়ে যাক। আমায় এমন হাব্লা মত দেখতে কাউকে তাড়া দিলেও পাত্তা দেয়না। সমুটা বেশ লম্বা চওড়া আছে , সৌরভটাও কুস্তিগীর মত হয়েছে দেখতে, কিন্তু দুটোই ভারী মোলায়েম স্বভাবের। কাউকে গিয়ে ধমক দিয়ে বলবে সে ওদের ধাতে নেই, নিজের মনে বিড়বিড় করবে , তারপর হয়ত দুটো ঘাসের ডগাই চিবোবে। আর দলের মেয়েগুলোও ওরমই , তাদের আবার যত ধমক ধামক মার ধোর আমাদের উপর, কিচ্ছু না করলেও , বাইরে বলতে বলো ঝিম মেরে পড়ে থাকবে। শেষে আর্যদা গিয়ে দাঁড়াতে সামান্য মিলি সেকেন্ড তাড়াতাড়ি করল বটে।

তখন বেশ রোদ উঠে গেছে। রিসর্টের চারদিকে যে উঁচু উঁচু ঘাসের বন দেখে মনে হয়েছিল কাল রাতে বাঘ লুকিয়ে বসে আছে, আজ কেমন রুক্ষ মত মায়া মায়া লাগছে। চারদিকটা বেশ ফাঁকা, রিসর্টে বেশী কাউকে দেখতেও পাচ্ছিনা। যদিও আরেকটা গাড়ি আছে এখানে। এমন পাখি ডাকা শান্ত পরিবেশ,  এমন ছুটি আমাদের খুব একটা মেলেনা কারোরই। এলোমেলো ছড়িয়ে বসে আড্ডা হচ্ছে,  তারই ফাঁকে একজন দুজন করে গিয়ে চান সেরে আসছে। সৌরভ এর ইচ্ছে ঘুম, এর মধ্যেই ঘুমিয়েও পড়েছে। কাল সারা রাত থেকে প্রায় জাগা, পেটে খাবার পড়তে আর এমন শান্ত পরিবেশে ইচ্ছে করছিল শুয়ে পড়তে। কিন্তু আমাদের ফের একটা সাফারি আছে। এবারের সাফারিটা ঘোষ দিয়েই বুক করা ছিল, তাই রিসর্টেই আনতে এসেছিল লোক। রাতের অন্ধকারে টের পাইনি, কিন্তু দুপুরের রোদে দেখতে পেলাম রিসর্ট আর মোহারলি গেটের মাঝে মস্ত একটা জলাশয়।  একটু দূর থেকে হুডখোলা জিপে বসে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে।

দুপুরের জঙ্গল সকালের থেকে আলাদা। শীতের দুপুরে গাছগুলো সারসার দাঁড়িয়ে। সকালের হিহি ঠান্ডা এখন নেই। নিস্তব্ধ জঙ্গলে মাঝে মাঝে মাঝে দুটো চারটে পাখির ডাক,  হরিনের ডাক। শুরুতে একটা সম্বর দেখে এদিক ওদিক ঢুঁ মারছি, এখনো কিছু পাইনি তেমন। তারপর হঠাৎ খুব উত্তেজিত হয়ে বলল কল শোনা গেছে কল শোনা গেছে। হুড়মুড় করে জিপ নিয়ে গেলো।  বাঘ ওই জঙ্গলে দেখা গেছে অল্প, এবার তিনি যে কোনো দিকে যেতে পারেন। এমন কি আরো গভীর জঙ্গলেও যেতে পারেন। সবাই অপেক্ষা করছে।  অপেক্ষা করতে করতেই দেখি একটা ডালে এক ঝাঁক হরিয়াল বসেছে। ওইদিকের গাছে ছোট্ট একটা দোয়েল পাখি মনের আনন্দে দোল খাচ্ছে। ওই একটা কাঠঠোকরা উড়ে গেল। কোনো চাপ নেই জীবনে, বাঘ দেখতে পাওয়ার, দেখাতে পারার কিচ্ছু না। ঝলমলে কটা প্রজাপতি উড়ছে এদিক্সেদিক।দূরে একপাল হরিণ অব্দি ঘাস খেয়ে চলেছে একমনে। জাস্ট পাত্তা দিচ্ছে না বাঘ আসতে পারে কি পারেনা তার। আর মানুষগুলো, ছুটিতে এসেও বাঘ দেখতে পাবে কিনা, পেলেও ক্যাপচার করতে পারবে কিনা সেই নিয়ে উৎকন্ঠায় কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে!  সুখ শান্তি আসলে মানুষ হারিয়েই ফেলেছে!









অনেক্ষন এদিকসেদিক করেও পাওয়া গেলনা বাঘের দেখা। খালি একদিনের বাসী বাঘের বর্জ্য দেখা গেল। এ জঙ্গলে একটা বেশ সুন্দর গাছ আছে। এরা বলে ঘোস্ট ট্রি। সাদা,  লাল আর বাদামী তিনটে কালার চেঞ্জ হয় সারা বছর ধরে।  ভারী সুন্দর গাছ। সাদা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে ডালপালা মেলে ভূতের সিনেমা ভাব আসে বটে। এ জঙ্গলে শাল গাছ প্রচুর আছে। তাড়োবা লেকে নাকি কুমীর আছে বলছিল। মিথ্যে না সত্যি কে জানে! এইসব জায়গায় এলে আমার কেমন মনে হয়, আমরা কখন চলে যাব তার অপেক্ষা করে গাছগুলো। চলে গেলেই নিজেদের গল্পগুজব শুরু করে দেবে। গাছ টু গাছ টক, মানুষের সে কথা শোনার অধিকার নেই। নিজেদের বিরাট সভ্য ভেবে সে অধিকার তারা নিজেরাই হারিয়ে ফেলেছে!


ফেরার পথে দুপুরের দেখা বাঁধটার জলে দারুণ একটা সূর্যাস্ত দেখলাম। হালকা থেকে গাঢ় হয়ে যাওয়া লালের নানান শেড দিগন্তব্যাপী বাঁধের জলের উপর।আহা এমন রঙ এর খেলা দেখতে পাওয়াও কম সৌভাগ্য না। না সে ছবি তুলিনি আমরা , ও ছবি স্রেফ মনে তুলে রাখতে হয়।রিসর্টে ফিরে খুব খানিক কাড়াকাড়ি করে খাওয়া,  আড্ডা হল জমাটি। আমরাবেই কজন সবসময় প্রাণের নেশায় বুঁদ থাকি, আলাদা করে মদ গাঁজা দিয়ে আমাদের বুঁদ হতে হয়না, হুল্লোড় করতে,  ফূর্তি করতে আলাদা করে উপকরণ দরকার পড়েনা। নেশা আমাদের কিসে হয় কে জানে, হয়ত একইরকম কটা একটু আধপাগল, তথাকথিত আনস্মার্ট,  হাবলা লোকেরা এক হলে তাদেরই আঁচে। নয়ত এরকম জঙ্গুলে সন্ধ্যেয়, মদ গাঁজা ছাড়া এত হাহা, এত প্রাণ লোকের কাছে অবিশ্বাস্য বটে।






রিসর্টে একটা ভারতীয় মেয়ের দল আর কটা বিদেশী এসেছে। বিদেশীগুলো রাতের একটা সাফারিতে যাচ্ছে। আমাদের অফার করেছিলো, দুটো সিট আছে, কেউ যদি যাই। সবাই আড্ডা দিতেই উৎসাহী বেশী, বন্ধুদের ছেড়ে অযাচিত সাফারি কেউই নিলনা। বাইরে আগুন জ্বেলে মেয়েদের দলটা নাচ গান করছে। আমাদের দলের ছেলেপুলেরা নেহাতই দুধভাত টাইপ। কেউই মাইরি গিয়ে আলাপ জমাবার চেষ্টাও করলাম না! বরং এক আকাশ তারা দেখে কোনটা কালপুরুষ,  কোনটা সপ্তর্ষিমণ্ডল, গুঁড়ো গুঁড়ো তারাগুলো কী হতে পারে সে সব আলোচনায় মেতে গেলাম সবাই মিলে। তবে মিথ্যে বলব না, আগুন ঘিরে গোল হয়ে বসে আড্ডা মারার ইচ্ছে আমাদের সকলেরই ছিল। রাতে খাওয়ার পর তাই নিভু নিভু আগুনের চারপাশে গুটিগুটি জড়ো হয়ে নরক গুলজার শুরু করা গেল ফের। হোটেলে লোকগুলো আমাদের দেখে ফের কাঠকুটো গুঁজে দিয়ে গেলো। আগুনে আঁচে মাথার উপর এক আকাশ তারা নিয়ে আমাদের আলাপ আরো একটু দমে বসানো গেলো, পাক হতে গেলে তা বড় জরুরী কিনা।

পরেরদিন আমাদের খুটওয়ান্ডা গেট থেকে সাফারি করার কথা। ওটা একটু দূরে, সকাল সকাল বেরোতে হবে কাল থেকে ভালো ঘুম নেই, তবুও শুয়ে পড়েও ফুক্কুড়ির শেষ হয়না। এ ওর ঠ্যাং টানাটানি করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি কে জানে। ভোরের আলো ফুটছে তখন, আমাদের গাড়িটা জঙ্গুলে রাস্তা ধরে এগোতে এগোতে জঙ্গলের পাশেই একটা ছোট্ট গ্রাম পেরোচ্ছে। সার সার লোক, বউ সব রাস্তাতেই সুলভ শৌচাগার চালু করেছে! আমাদের দেশের লোকেদের বেসিক সেন্স এত কম কেন? নোংরা থাকবো নোংরা ভাববো এতে এত সুখ পায়! এত গুরু ঠাকুর, এত ধর্মীয় অনুশাসন এত ছুৎমার্গ কোথাও বলা নেই পরিচ্ছন্নতার মত প্রাথমিক বিষয় নিয়ে? দারিদ্রতা কোনো কারনই না, আমি মার্সিডিজ এর দরজা খুলে থক করে রাস্তায় থুতু ফেলা লোক দেখেছি প্রচুর। বোধটাই নেই। মন খারাপ হয়ে যায় এসব ভাবলে। একটা সময় পর হয় সব ধ্বংস হয়ে যাওয়াই ভালো। ভারতবর্ষের এত প্রাচীন ইতিহাস, আজ নোংরা, জনসংখ্যার ভারে ক্লান্ত, অশিক্ষিত, গাম্বাট লোকের মুখ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাকগে,  ভাবব না এসব বেড়াতে এসে। মনটা সরাতে তাকালাম আকাশের দিকে একবার, সকাল হয়ে গেছে, আমরাও খুটওয়ান্ডা গেটে পৌঁছে গেছি।



খুটওয়ান্ডা গেট দিয়ে বেশী গাড়ি ঢোকে না, তাই সামনে আর কোনো গাড়ি ছিলো না। ঘুরে ফিরে সেই মোহারলির দিকেই যাবে যদিও তাও,  খানিক হলেও অন্য রাস্তা। জঙ্গলে হুড খোলা জিপসিতে ফাঁকা জঙ্গলে সকালবেলার বুনো গন্ধ নিতে নিতে যাচ্ছিলাম আমরা। ময়ূর, সম্বর, চিত্রল হরিণ, প্রজাপতি, পাখি দেখতে দেখতেই ফের উত্তেজনার খবর পাওয়া গেল। বাঘ দেখা গেছে!









বাঘের খবর শুনেই সারা পাড়া চুপ! দাঁড়িয়ে আছি তো আছিই, মানে বসে আছি আর কি জিপে।বিস্কুট খাচ্ছি, শুকনো ডাল থেকে পাশের বন্ধু কারোর ছবি তুলতে ছাড়ছিনা, দু চারটে ফিসফিস করে কথাও বলছে লোকজন, এমন সময় ঘাড়ুম করে একবার বাঘ ডেকে উঠলো, ব্যাস, পুরো এলাকা বোমা ছাড়াই তটস্থ। ও বাবা! সেই যে ডাক শোনালো তারপর আর কিচ্ছু নেই। মহা অলস বাঘ তো! আমার থেকেও বেশী দেখছি! বসে বসে আলোচনা করছি, বিস্কুটের লোভ দেখি বাঘটাকে বাইরে বের করা যায় কিনা। আসলে সে খুবই কাছে আছে, শীতকালের শুরুতে ঘন জঙ্গল বলে একশো মিটারের তফাতেও ব্যাটা গা ঢেকে জিরোচ্ছে। অনেক অনেক্ষন বসে থাকার পর,  গাইড আমাদের কথাকেই সমর্থন করল,"শুয়ে পড়েছে মনে হয়"। বোঝো! এ কেমন ব্যাভার হল হ্যাঁ? লোকজন এসেছে বাড়িতে আর আপনি শুয়ে থাকবেন? অবশ্য ঠিকই আছে! আমিও বাড়িতে লোকজন এলে পালাতে ভালোবাসি। মহারাজদের ধরন একই রকম হবে স্বাভাবিক!

একটা ঘুরতে যাবার কত কথা হতে থাকে, কত আলোচনা, কত ঝগড়া, কত তর্ক...... বেড়ানো মনে হয় আমাদের সেই সময় থেকেই শুরু হয়ে গেছিল,  সেই যখন থেকে স্বপ্ন দেখছিলাম। আমাদের বেড়ানোটা আসলে তো দেড়দি এর না, অনেক গুলো দিনের, মাসের। আবার কবে সবাই একসাথে হব কে জানে! ফেরার পথে  দুপুরবেলার হাইওয়েতে গাড়ির মধ্যে, পড়ন্ত বিকেলে ধাবায় খেতে গিয়ে, এয়ারপোর্টের সফিস্টিকেশনে আমরা দেড় দিনের মেয়াদটা আরো আরো লম্বা করছিলাম। না, বাঘ আমরা তিনটে সাফারিতে মোটে একটাতে দেখেছি, তবে তাতে আমাদের প্রাপ্তির ঝুলি কিছু কম হয়নি।  শেষ হয়ে গেল তাই মন খারাপ তো হচ্ছিলোই, কিন্তু তাই বলেই আমরা মন খারাপ করে মুষড়ে পড়ে বাকি সময়টা নষ্ট করার জনতা না। যেটুকু মুঠোয় ধরে বুকপকেটে গুঁজে নিই....পরের জার্নি শুরু করার আগে অব্দি।



Friday, December 6, 2019

তাড়াহুড়োয় তাড়োবা (২)

নেশা করলে যেমন মনে হয়, ভাই কাল সব সামলে দেব, আজ একটা বিছানা দে শোবার, ওইরকম ভাব নিয়ে আমাদের আর্লি চেকিন করা ঘরে ঢুকে পড়া গেল। রিসর্টের মালিক এর কিছু একটা ঘোষ, আমরা যখন বুক করছিলাম এর ঘরের ছবিতে খাটের যে ছবি ছিল তাতে আবার একটা আলো লাগানো টাইপ ছিল, আমাদের দলের একজন আবার তাই দেখে বলেছিল, মায়াবী আলো কেমন, চল এটাই বুক করি। তা চারটে দামড়া ছেলে দেখে মনে হয় মায়াবী আলোর তার কেটে দিয়েছিল। মেয়েদের ঘরে রেখেছিল কিনা জানিনা অবশ্য। যাইহোক আলো অন্ধকার কিচ্ছু না, শুতেই ঘুম। এমন ঘুম সৌরভের অ্যাসিংক্রোনাস নাক ডাকার আওয়াজ অব্দি কিচ্ছু করতে পারেনি।

জামা বদলাবার মত গাধামি আমাদের ঘরের কেউই করেনি, জিন্স জামা যা পরে ছিলাম সব পরেই শুয়েছি, খালি তার উপরে হুডি আর মাফলার। এই বুদ্ধিমানের মত ঘটনায় আমাদের ঘরটা মিনিট দশ পনেরো সময় বেশী ঘুনিয়ে বেশ বাঘের মতই হালুম হুলুম করে পার্কের গেটে পৌঁছে দেখি,   একটা মিটমিটে আলোয় কজন গাইড না ড্রাইভার খোদায় মালুম বসে আছে। তখনও কাউন্টার খোলেনি, ভোরবেলার অন্ধকারে বসে বসে খিদে পেয়ে গেল। এদিকে ঘাপচু (আসল নাম ভুলে গেছি)  আর নন্তে খালি বিস্কুট এনেছে তাও হাবার মত মেরি বিস্কুট!! কোনো মানে হয়! গজগজ করে তাই খান পাঁচেক খেতে খেতেই কাউন্টার খুলে দিল। ওবাবা এখানে ভারী অব্যবস্থা তো! আমরা সেই কখন এসেছি অথচ আমরা ফার্স্ট জিপ হব এমন উপায় নেই। ওদিকে কাউন্টারে আমাদের অনলাইন এর বুকিং দেখে বলল,  তোমরা এক গাড়িতে সব কটা ক্যামেরা রেখেছ, অন্য গাড়িটায় কিন্তু নিতে পারবেনা!! মাইরি বর্গি এলো দেশে বলে কেন ভয় দেখাতো বুঝছি! এই সাফারিটাতেই দুটো জিপ আর ক্যামেরা মিলে হাজার চব্বিশ দিয়েছিলাম( পরের গুলোতেও তাইই অবশ্য),  এরপরেও আবার অযথা ক্যামেরার চার্জ নিলে ভাল্লাগে? খুব গজগজ করে নিলাম অযথা, আর আসবোনা ইত্যাদি বলে, যদিও এমনিতেও আর আসা আমাদের হবেনা সেও জানি!

গাড়ি ছাড়ার আগে পাশে ঝুপড়ি থেকে চা খেতে গিয়ে দেখি এই সাতসকালে কয়েকজন স্থানীয় মানুষ  ভয়ানক তেল মশলা দেওয়া কি একটা তরকারি, খানিক পোহার উপর দিয়ে খাচ্ছে। তাড়াতাড়ি পালিয়ে এলাম,  বাফ্রে, যদি বলে চা এর সাথে এ জিনিসও খান! আমার এর আগে এমন হুড খোলা জিপে জঙ্গল সাফারির অভিজ্ঞতা বছর আষ্টেক আগে ডুয়ার্সে। গেট পার হয়ে খানিক যেতে যেতেই জঙ্গল তার পরিপূর্ণ রূপ নিয়ে ধরা দিতে থাকে। লাল মাটির রাস্তায় ধূলো আর ঠান্ডা হাওয়ার ঝাপট নিয়ে জিপ এগোয়, তখনো ভালো করে রোদ ওঠেনি। তাই ভরসা আছে, জঙ্গল এর প্রাণীদের দেখা পাবার। জিপটা একটা গোঁত খেয়ে একটা সরু রাস্তায় ঢুকে একটা জলাশয়ের ধারে পৌঁছলো। গাইড ব্যাটা খালি বলে চলেছে গরমে সব ঘাস ফাঁকা হয়ে যায় তো, তাই খুব ভালো সাইটিং হয়, এই সব জলে বাঘে জল খেতে আসে হ্যানা ত্যানা। শুনলেই রাগ আর দুঃখ হচ্ছিল। তাড়োবার জঙ্গলে বড় জানোয়ার বলতে মূলতঃ বাঘই। এছাড়া ব্ল্যাক লেপার্ড আছে, সে তো এমনিই ভয়ানক রেয়ার। আর বুনো কুকুর আছে।  বাঘ দেখতে না পেলে মুখে যাই বলি না কেন৷ ভয়ানক দুঃখ হবে  একথা সত্যি। তবে আমরা জঙ্গল ব্যপারটা এমনিতেও খুব ভালোবাসি, তাই সে শোক সামলেও নেব এ কথাও মিথ্যে না। তাই বলেই যদি সকাল থেকেই গাইড গান শোনায় যে কিছুই না মিলতে পারে বলে ভাল্লাগে নাকি!  জলের উপর গাছে কটা সারস বসে ছিল। সারসই তো বলে নাকি, ইংরাজিতে স্টর্ক বলে যাকে? খচাং খচাং করে ছবি তুলে নেওয়া গেল কুয়াশার সর পড়া জলের উপর দিয়ে।












দুধারে ঘন বাঁশবন এর ফাঁকে বাঘ থাকতেই পারে, এমন অবস্থার মধ্যে দিয়ে খোলা জিপে সকাল সকাল যেতে বেশ লাগছিল। মাঝে মাঝে এ ভারতভূমির আদিবাসী রাজাদের তৈরী নিশান দেখা যাচ্ছিল মাঝে মাঝে রাস্তার পাশে। তাড়ু বলে একজন বাঘের দ্বারা মারা যায়, সেই থেকেই তাড়োবা। মন্দিরটাও আছে একখানে। নানান রকম পাখির ডাক, জিপের টায়ারের সাথে লাল মাটির ঘষার আওয়াজ আর গাইডের টুকটাক কথা শুনতে শুনতে হঠাৎ একজায়গায় দেখি আরো কটা গাড়ি দাঁড়িয়ে। গাইডে গাইডে কথা হয়ে গেল, উত্তেজনা দেখেই মনে হল কিছু নির্ঘাত আছে এখানে...বাঘই নাকি?

জানা গেল হ্যাঁ, কল শোনা গেছে। কল মানে বাঘের আসার খবর জঙ্গলে ছড়িয়ে পড়ে বার্কিং ডিয়ার বা বাঁদর বা ময়ুরের মাধ্যমে। জঙ্গলের নিজস্ব সিকিউরিটি সিস্টেম। তাহলে বাঘ হরিণ পায় কি করে? বাঘ অনেক অনেক ক্ষন একই জায়গায় বসে থাকে,  তারপর হরিণে বা বাইসনের দল যখন একটু ঢিল দেয় ব্যাস। ঘাপ!

জিপ গুলো সব টানটান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের সামনে একটু জল, তারপরে ওই পারে বাঁশের বন। বাঘ বাঁ দিক থেকে আসবে এমনটাই কল থেকে বোঝা গেছে। টানটান স্নায়ূ প্রায় শিথিল হয়ে আসবে এমন সমত কোঁয়াকো করে ময়ূরের তীক্ষ্ণ স্বর শোনা গেল,  তাতে যেন নিস্তব্ধতা না ভেঙে আরো ছমছমে হয়ে গেল চারিদিক। ওই যে ওই যে কোনায়, ওই গাছের ফাঁকে আসছেন তিনি। লম্বা লম্বা ঘাস এর ফাঁক দিয়ে অবয়বটা দেখা যেতে সবার ক্যামেরা সচকিত হয়ে গেল। ক্রমে ঝোপঝাড় পেরিয়ে রাজার মত মর্ণিং ওয়াকের ভঙ্গীতে এগিয়ে আসতে লাগলেন তিনি। দৃপ্ত ভঙ্গী, কোনো টেনশন নেই।থাকবেই না কেন! একটা থাবড়া মারলে সামনের জনের (বেশীভাগের) ভব্লীলা কাবার হয়ে যাবে! ক্রমে ক্রমে আমাদের দিকেই আসতে লাগলেন। চিড়িয়াখানায় বন্দী বাঘ না, নিজের এলাকায় ঘুরতে বেরোনো পূর্ণবয়স্ক একজন বাঘ যার থেকে আমাদের দূরত্ব হয়ত পঞ্চাশ -ষাট মিটার! অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল। বাঘ চাইলে আমাদের দিকেও আসতেই পারে। গাইড ফিসফিস করে বলে দিচ্ছিল এলেও আমরা যেন কেউ উত্তেজিত হয়ে লাফালাফি না করি। চুপ করে বসে থাকলে,  বাঘকে বিরক্ত৷ না করলে সে নিজের মত চলে যাবে, মানুষ কিছু তার ছুঁয়ে দেখতে চাওয়ার জিনিস না। বিরক্ত করলেই চিত্তির!

ব্যাটা জলের কাছে এগিয়ে এসেই জলশৌচের ভঙ্গীতে পেছন ডুবিয়ে দিয়ে বসে গেল! নির্ঘাত কোনো বাঙাল বন্ধুর বাড়ি নিমন্ত্রণ ছিল আগের রাতে, একগাদা ঝাল খেয়ে ত্রাহিমাম ত্রাহিমাম বলে সাত সকালেই ছুটে আসতে হয়েছে! অনেকক্ষন জলে পেছন ডুবিয়ে থেকে শান্তি পেয়ে ফের উঠে বাঁশবাগানের ধারে খেলতে খেলতে চলল, কখনো থাবা ছুঁড়ে বাঁশপাতা ধরছে লেজটা খাড়া করে। একবার মিষ্টি করে হাই তুলল একটা চমৎকার। তারপর হেলতে দুলতে চলে গেল আরো গভীর বনের দিকে।








বাঘ দেখে ফেলেই আমাদের এত্ত আনন্দ হয়েছিল  কী বলব! অথচ এমন কিন্তু হবার কথা ছিল না! বাঘ  এরকম কোনো ক্রমে বাঁচিয়ে রাখতে হবে এমন দিন হয়ত তিন পুরুষ আগেও কেউ ভাবেনি! আর ভাবেনি বলেই ওদের মেরে পিটে এমন সংখ্যালঘু করে দিয়েছে!  কেত আছে ভাই। কেমন আরামসে এলো, আশেপাশে লোকজনকে স্রেফ ইগ্নোর করে নিজের মত ঘুরলো, চলে গেল। এইসব নানান কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ গাইড এর ইশারায় গাড়ি দাঁড়িয়ে দেল। দেখি সামনে এক বিস্তীর্ন ঘাসভূমি, অনেক কটা চিত্রল হরিণ ঘুরছে(বেশী দেখা যায় বলে কদর নেই তেমন), সামনেই গাছে রাস্তায় অসংখ্য হনুমান মজাসে ডাল ধরে ঝুলছে, রাস্তাত বসে আছে। চমৎকার একটা সকাল!








হরিণ গুলো শিং তুলে একবার দেখে, তারপর নিজের মনে ঘাস খায়, হনুমান গুলোকে দেখলে আমার বরাবর হিংসে হয়। কিরকম লেজ ঝুলিয়ে বসে থাকে ডালে। পরেরবার আমি হনুমান হব ঠিক। অমন একটা তাগড়া লেজ থাকবে, মগডালে বসে দোল খাব..মাঝে মাঝে ফল পাকুড়ে কামড় দেবো, ভালো না লাগলে ছুঁড়ে ফেলব। তবে বনের হনুমানই হব, লোকালয়ের গুলো কেমন উকুন বাছতেই ব্যস্ত থাকে মানুষের মত। দূষন বেশী বলেই হয়ত।



হনুমানদের কেরদানী আর হরিণদের শান্তিতে ঘাস খাওয়া দেখার পর ফের এগোনো গেলো।



(ক্রমশ)