Wednesday, January 2, 2019

নতুন বছরের প্রথম দিনে

বচ্ছরকার প্রথম দিন বলে আপিস ফাঁকা। অফিসের গলিটায় রাস্তার কাজ চলছে, একটা তাঁবুতে ছোট ছানা ঘুমোচ্ছে, মাথায় গামছা বেঁধে পিচ ঢালছে একজন, আর ঝাঁটপাট দিয়ে সাফ করছে একজন। বিশুর দোকানে ভীড় নেই তেমন আজ, স্যান্ডউইচওয়ালাও ফাঁকাই বসে। চারদিক ছুটি ছুটি আবহাওয়া।

আপিসে আজ একটা গোটা টেবিল নিয়ে আরাম করে লাঞ্চ করতে পেয়েছি। সল্টলেকের কয়েকটা বাড়িতে নতুন বছর আসেনি মনে হয়। রোজ যে বুড়োটাকে দেখি, বারান্দায় বসে উদাস চোখে রাস্তা দেখে, আজও তেমনই বসে। মন্দিরের সামনে লম্বা লাইন পড়েছে। চিকেন চাপ এর দোকানদার এক মনে ঝোলটা নেড়ে দিচ্ছে।(চাঁব লিখেও মুছে দিলাম, নিজেই সইতে পারছিলাম না। ওদিকে মুছে কথাটা লিখে ভাবছি আগামী দিনে লিখেও কেটে দিলাম কথাটা রিপ্লেস হয়ে যাবে, অবসোলেট টেকনোলজি)।

আমার পুরোনো ম্যানেজার ফোন করেছিল খানিক আগে। নিউ ইয়ার উইশ এর ছলে জানালো, নিজের হাইটাইম কেরিয়ারে মন না দিয়ে, অনসাইট অপারচুনিটি ছেড়ে খুবই ভুল করছি। আমি খালি আমার দিক থেকে হ্যাঁ বললেই ইবি ওয়ানে গ্রিন কার্ড এর ইনিশিয়েশন সে দেখে নেবে।
যে রাস্তা নিজের ইচ্ছেয় ছেড়ে এসেছি তা নিয়ে আপশোষ আমার হয়না , তাও উন্নতির গল্প শুনে টলে গেল নাকি ঋকানন্দ? 'হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিকই বলেছ। আমি দেখছি। তা অমুকদা আজ কি করলে বলো নিউ ইয়ারে?' 
'ঘরে একটা পেঁপে ছিলো, তাই বানালাম। আর আমার তো অ্যাবসোলুট আছেই। আবার কি!' 
মনে মনে এক পাক ঘুরে বললাম, কাকা, মা আজ কড়াইশুঁটির কচুরি করেছে! মুখে অবশ্য বললাম, আরে জিও, আর কি চাই! ভদ্রলোক একা থাকেন অনেকবছর, বউ এখানে, বচ্ছরকার দিনে মনে কষ্ট দিয়ে কি লাভ!

আমার গাড়িতে হস্তশিল্প মেলা থেকে কেনা একতারাটা রয়ে গেছিল, গ্যারাজ থেকে বাড়ি অব্দি বাজাতে বাজাতে ফিরছি। একটা ছেলে, ফর্মাল পরে, গায়ে চেন খোলা জ্যাকেট, পিঠে ব্যাগ, হাতে একতারা নিয়ে বেসুরে বং বং করে বাজাতে বাজাতে রাস্তা দিয়ে চলেছে এ দৃশ্য সচরাচর দেখা যায়না। মহিলারা ভ্রু কুঁচকে, অল্পবয়সী মেয়েরা 'ক্রেজি!' চোখে, প্রৌঢ়রা বিরক্ত নিয়ে, আর ছোট ছেলেটা ঈর্ষান্বিত চোখে তাকিয়ে দেখছিল।

আমার একতারায় সুর লাগবে কিনা জানিনা, এরকম আধ ছটাক কর্পোরেট হয়েই কাটবে বছরটা এটাই বোধহয় জানান দিয়ে শুরু করলো...তাই হোক....

শুভ নববর্ষ।