Friday, December 23, 2016

মনখারাপের গন্ধ

মন খারাপ ব্যাপারটা খুব গোলমেলে কেন যে মন কেমন করে কেন যে করেনা কে জানে।  খেয়াল করলেন কি , মন কেমন বললাম দ্বিতীয় ক্ষেত্রে আসলে কিন্তু দুটো মোটেও এক না। বন্ধুত্ব আর প্রেমের যতটুকু তফাৎ ততটাই তফাৎ এক্ষত্রেও।  আর তাই গুলিয়ে যাওয়া সহজ।  এই যে শীতের পড়ন্ত বেলা ,আমি অফিসে বসে হিজিবিজি টাইপ করছি , কাজে ফাঁকি মারছি এসবের মধ্যেও আমার  মন পড়ে আছে একটা নদীর ধারের ঘুমন্ত গ্রাম , দাঁড়িরা ঝপাং ঝপাং দাঁড় টানছে , দূরে দূরে একপাল গরু ঘুরে বেড়াচ্ছে , একটা বৌ এক বোঝা এঁটো বাসন নিয়ে মাজতে এসেছে।  আমি কিন্তু জীবনেও এরকম দৃশ্য দেখিনি।  পড়েছি হয়ত,  দেখিনি। আমার গ্রামের বাড়ির দিকে নদীই নেই ।  শীতকালে দুপুরে মা জ্যেঠিমা জ্যেঠতুতো দিদিরামিলে  রোদ পোহাতে যেত ছাদে।  লেপ তোষক মেলা থাকত।  কয়েৎবেল মেখে খেত , আমার জন্য বরাদ্দ থাকত কমলালেবু। আমি  বই পড়তে পড়তে কমলালেবু খেতাম। বিকেলবেলা হাফপেন্টুল জুতো মোজা পরে ফুটবল খেলতে যেতাম , শীতকালে বোধহয় একটু আগেই যেতাম।শীতকালে আলু ফলত , ছুটির দিন পড়াশোনা সেরে আমি মাঠে যেতাম বড় জ্যেঠা মানে বাবুজির সাথে।  ছোট ছোট আল দিয়ে দিয়ে খাল থেকে জল এনে মাঠে দেওয়া হত।  আমি আল গুলো ফুটো করতাম , তারপর ফের বাঁধ দিতাম।  সারা হাতে পায়ে কাদা মেখে একটা বা দুটো আলু বসতাম। আলু বসানোর নিয়ম আছে , ওই যে ছোট ছোট চোখ মত , ওগুলোর এদিক ওদিক করে লাগাতে হয়। আমি যে আলুবসাতাম সেই আলু গাছটা থেকে আলু হতো  কিনা তা জানার আগ্রহে রোজ উত্যক্ত করতাম বাবুজিকে।  সর্ষে গাছের মধ্যে দিয়ে ইচ্ছে করে যাতায়াত করে গায়ে সর্ষে ফুল মাখতাম , কেউ দেখলেই বকুনি দিতো। সন্ধ্যেবেলা বাড়ির সামনে আগুন পোহানো হতো।  তারপর আলু কাটা হতো , মনে আলুর চোখ  দেখে দেখে কাটা হতো বসানো হবে বলে। বাকি আলুটা খাওয়ার জন্য ব্যবহার হতো। আলুরদম মুড়ি আর দুধ যে কি অমৃতের মতো খাবার শহুরে লোকেরা জানতেও পারবে না।  অবশ্য অমৃত ব্যাপারটাই তো তাই। শান্ত  গেরস্থালি শেষপাতে ক্ষীর কারোর কাছে অমৃত কারোর কাছে বিষ।  হ্যাঁ  যা বলছিলাম , আমাদের বাড়িতে গরু ছিল সে গরুর দুধ এর মোটা মিষ্টি সর পড়তো , আমি দুড়মুড়ি আলুরদমের সাথে ওই সরটা  মাখতাম।  ঠান্ডা কোনোদিন পড়তো কোনোদিন তার আত্মীয়  পরিজন নিয়ে আসত। মানে আমরা বলতাম আজ শীতের বাবা মা সবাই এসেছে। এই যে শীতকাল এর জন্য আমার মাঝে মাঝে মন কেমন করে, মন খারাপ না। আমার একটা যদি নদীর ধারে জায়গা থাকতো তবে আমি এই যে শীতের ভোরে লেপের আদরে থাকার মতো বুকের মধ্যে যে মনখারাপটা সেঁধিয়েছে তাকে তুড়ি মেরে বের করে ওই জায়গায় চলে যেতাম। ভালো লাগতনা হয়ত, সন্ধ্যের পর ঝিঁ ঝিঁ ডাকা ঘুমন্ত জায়গা আমার ভালো লাগবেনা এতো বলাই বাহুল্য। এত কথার কারন আর কিছুই না মন ভাল লাগছে না। কিছুতেই না,  আর্সালানের বিরিয়ানি  না,  নলেন গুড়ে আর পিঠে না,  পুরোনো বই যাই দিই মন খারাপটাকে,  সেই লস্ট চাইল্ড এর বাচ্ছাটার মতো না না করছে। এ ব্লগ যদি কেউ পড়েন এ লেখা যদি কারোর চোখে পড়ে বলতে পারেন আপনাদেরও এমন হয় কি? কেমন করে রোদ জ্বালানো যায়?

Monday, December 12, 2016

রাস্তায়

সকালবেলায়
আগে বাইক নিয়ে যাতায়াত করতাম যখন নজর খালি স্পিডোমিটার এর দিকে থাকত, মানে কোন ফাঁক পেলেই সাঁই সাঁই স্পীড উঠবে তাই চিন্তা। আজকাল ফের রাস্তাঘাটে নজর দিতে দিতে যাওয়া যায়। সকালে চারদিক যখন প্রচন্ড ব্যস্ত তখনও আমাদের শহরে কছু লোক ভারী নির্বিকার চিত্ত থাকে। অটোর বাইরে মুখ বাড়িয়ে দেখতে দেখতে দিব্যি লাগে। একজন পচাৎ করে থুতু ফেললো, আবার নিজেই নিজের থুতু মাড়িয়ে চলে গেলো কোনো হেলদোল ছাড়াই। মোড়ের মাথায় রিক্সা গুলো মাইকেল শুমাখার এর মতো টার্ন নেয়। সে সময় ধাক্কা লাগার, জামা ছিঁড়ে যাবার বা স্ক্র্যাচ পড়ার সম্ভবনা ৯৯.৯৯%। সেটা অবশ্যই রিক্সাওলার দায় না। এরকম শিল্পকর্ম যে দেখায় তার অহংকার না থাকাই খারাপ। সে সুন্দরী তরুণীর মতো নির্লিপ্ত ভঙ্গীতে গোঁত্তা দিয়ে চলে যাবে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে এটাতেই বরং স্বাভাবিক লাগে। বুকের মধ্যে শান্তি আসে যাক এই পাঁচশ হাজারের বাজারে সব বদলে যায়নি।
একটা ভ্যান দেখি ডানদিক ধরে একগাদা সিমেন্ট এর বস্তা নিয়ে হেলতে দুলতে যাচ্ছে। পিছনেই একটা বাম্পার লাগানো টয়োটা ইনোভা প্যাঁ পোঁ করে অস্থির হর্ন দিচ্ছে। ড্রাইভারটা নিশ্চয়ই পায়ের সাথে ব্রেক বেঁধে রেখেছে। নইলে ড্রাইভার এর ভালো ধৈর্য, গুঁতো মারার ইচ্ছে দমন করা খুব সহজ কাজ না। অটোরা আবার ভ্যানেদের ব্যাপারে বেশ সহনশীল দেখা যাচ্ছে। একবারও হর্ন না দিয়ে 'মেরা আশিক ছাল্লা' শুনছে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে। গানের আওয়াজ সম্ভবত অটো ছাপিয়ে ভ্যান অব্দি পৌঁছচ্ছে, ভ্যানচালকের মাথাও দুলছে তালে তালে। ইনোভার ড্রাইভার এর দু চারটে দাঁত এতক্ষনে পড়ে যাওয়া উচিত, কড়মড় করতে করতে। ডানদিকে টার্ন নেওয়া এতো যন্ত্রণা জানলে সে হয়ত বাঁয়ে টার্ন নিতো, গন্তব্য পাল্টাতো কিন্তু দাঁত বাঁচত। আমি এরকম একটা সাজেশন দিতাম হয়ত কিন্তু আমার পাশের রাগী ভদ্রলোক অলরেডি এ নিয়ে একটা পেপার রেডি করে পড়তে শুরু করছেন, রিস্ক হয়ে যাবে।
এতো ভালো ভালো জিনিস দেখার পর আমার অফিস বাস মিস করাই উচিত ছিলো, কিছু উপভোগ করতে গেলে তার দাম দিতে আমি প্রস্তুত ছিলাম কিন্তু চিনার পার্কের মোড়ে দেখি আরেক।মজা চালু। কি করে যেন একটা ডানদিকে টার্ন নেওয়া জাইলো দুটো বাঁয়ে যাওয়া রিক্সার মাঝে পড়ে গেছে। একেবারে দাঁড়ে দাঁড়ে দ্রুম কেস । যেহেতু এ মজাটা আমি দেখিনি তাই বাকিরা দাম দিলো, বাসটা আটকে রইলো আমার ওঠার জন্য।
******************************************
ছুটির দিনে গাড়িখানাকে অসূর্যস্পশ্যা হবার হাত থেকে বাঁচাতে নিয়ে বেরিয়েছিলাম। তা পাড়ার লোক ভালো বলতে হবে, গলিতে আড়াই প্যাঁচে পড়েছি যখনই বা মোড়ের মাথায় ডানহাতে মুরগি বাঁ হাতে ডাবোলা আর সামনে থেকে ধেয়ে আসা রিক্সার ভয়ে কম্পিত হৃদয়ে স্টার্ট বন্ধ করে খাবি খেয়েছি এগিয়ে এসেছে তারা। "হ্যাঁ ভাই দে ফার্স্ট গিয়ার দে, কোনো ভয় নেই এগো আসতে আসতে"। আমি এগিয়ে গেছি। কিন্তু বেপাড়ার লোক বা রিক্সা কেউই এতো উদারহৃদয় না। গলি থেকে মেন রাস্তায় পড়ার মুখে, কিঞ্চিৎ অপেক্ষা করেছি বেশী, একটা বাসকে বেড়িয়ে যেতে দিয়েছি দুটো অটোর পথ ছেড়ে দাঁড়িয়েছি এবং তারও পরে দুইখানি রমণীর পথের কাঁটা না হয়ে অপেক্ষা করেছি দস্তুরমতো ভদ্রলোকসুলভ আচরণ করে।
তা রিক্সাওলার আচরণটা দেখুন একবার, বাস অটো কারোরটা চোখে পরলোনা, মেয়েদুটির জন্য অপেক্ষা করাটাই চোখে পড়লো!!!
আমায় বলল "ছবি তুলে রাখো, ছবি"!!

****************************************
রাজারহাটের এই রাস্তাটা আমায় লবটুলিয়া মনে করিয়ে দেয়। যেন জমি বিলির বন্দবস্ত হয়ে গেছে মকাইএর ক্ষেত বা টালির খোলা বা কংক্রিট এর বাড়ি উঠবে। সব বাড়ি ঘর তৈরী হয়নি এখনো তাই ইতস্তত ঝোপঝাড়, গাছপালা ফাঁকা মাঠ দেখা যায়। সকালগুলো ভারী নরম হয়, বেলা বাড়লেই কেজো ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায় আর দুপুর গুলো ফের উদাসীন। দিনে রাতে প্রায় সব ধরনটাই আমি গেছি এ রাস্তায়। শীতকালে সন্ধ্যেবেলা গাছগুলো ঝুপ্সি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে একা একা সেই কবে থেকে, যখন এ রাস্তা ব্যস্ত হয়নি তখনও বা যখন এ রাস্তা হয়নি তখনও। যেদিন জ্যোৎস্নায় ভিজতে পারে সেদিনও গাছেদের খুব কিছু যায় আসে না। মাঠগুলো খুশি হয়ে যায় খালি।
এ রাস্তায় একটা জলাশয় আছে ছোট্ট, ইকোপার্ক না, সে তো এখন সাজানো গোছানো ড্রয়িংরুম এর বাসিন্দা। এ একটা ছোট্ট জলাশয়, পরে হয়ত নোংরা নালা হয়ে যাবে। একটা হাফপেন্টুল পরা ছেলে খালি গায়ে একা একা আখ চিবোচ্ছে মন দিয়ে। দূরে বড় যে বাড়িটা তৈরী হচ্ছে সেখানে দড়ি ঝুলে ঝুলে মিস্ত্রীরা রঙ করছে। বাসটা একটা টার্ন নিলেই রাস্তা আরও ফাঁকা হয়ে যায়। অনেককটা কলা গাছের ঝাড় আছে। বোধয় গাছের প্রাচীরের অন্যদিকে কয়েকঘর রয়ে গেছে এখনো।তাদের গরু গুলো আরাম করে শুয়ে জাবর কাটে।এখনোও এখানে অনেক বক দেখা যায়। সাদা সাদা বকগুলো গরুগুলোর ঘাড়ে পিঠে লাফিয়ে লাফিয়ে হেঁটে নেয়। গরুগুলো বৃদ্ধ ঠাকুরদার মত চোখ বুজে প্রশ্রয় দেয় খালি। আর একটু গেলেই আমাদের আপিস। কেন যে রাস্তাটা এত তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যায়। ওই যে দূরে একটা ভাঙা বাড়ি আছে ওখানটা কোনোদিন যাওয়া হয়নি, যাবোও না কখনও। ওই ভাঙা বাড়ি, গাছ, মাঠ ঝোপ যদ্দিন আছে এ রাস্তা আমার সারাদিনের ফুয়েল, ততদিন আপিস যেতে আমার কষ্ট নেই।
*****************************************

আমার মাথায় কিঞ্চিৎ গোলমাল আছে এ মোটামুটি সবাই জানে, তবে ওটা যে কিঞ্চিৎ না ভালোরকম আছে আজ নিজে ভালোমতো প্রমান পেয়ে ধন্য বোধ করছি। এই ভরা সোমবারে, ইনবক্স উছলিয়া যায় কাজের লিস্টে আমি মাঝপথে বাস থেকে নেমে পড়েছি কেন না আমার এই মাঠ মাঠ রাস্তা দিয়ে হাঁটার সাধ হয়েছে। তামাম বাস, গাড়ি, বাইক হাঁ করে একবার নজর করে নিচ্ছে হলো কি, মানে দেখে তো অপ্রকৃতস্থ মনে হয় না, দিব্যি নিঁভাজ ফুল হাতা শার্ট, পেন্টুল, পালিশ করা জুতো পিঠে ব্যাগ, এ হেঁটে বেড়াচ্ছে কেন এমন তাও এমন প্রফুল্ল বদনে একা একা। মহিষ গুলোর গলায় ঘন্টা বাঁধা টুং টুং করে জাবর কাটছে। পিচ ঢালা হচ্ছে রাস্তায়, বেজায় ধূলো, আমি আমার ডাস্ট এলার্জি ভুলে ছোটবেলার মতো হাঁ করে দেখছি একটা লোক কেমন দড়ি বাঁধা বালতি নিয়ে খাল থেকে জল তুলছে। এ জিনিস এখনও আছে জানতেই পারতাম না। রোদটা সোজা মুখঝামটা দিচ্ছে। আচ্ছা রোদের যে একটা গন্ধ আছে বলেছি কি? গরমকালের রোদের গন্ধ আর শীতের রোদের গন্ধ এক না কিন্তু। ধূলোরও গন্ধ আছে। তার রোদ আর ধূলোর মিক্সড ফ্লেভারের গন্ধটা আবার হাওয়ার উপর ডিপেন্ড করে। একগাদা নীল ফুল হয়েছে। কি ফুল কে জানে। খচমচ করে ছবি তুলে রাখলাম। অ্যাহঃ মনের ভুলে ঠোঁট চেটে ফেলেছি একগাদা বাজে খেতে বালি।
শীতকালের রোদ বড় বিপজ্জনক হে, কোনদিন আমার অফিস, শহর সব পেরিয়ে যাবে এ শর্মা থামবে না।

Wednesday, October 26, 2016

বাড়ি ফেরা

হ্যাঁ হ্যাঁ দিব্যি বেঁচে বর্তে আছি হে। অনেক দিন পাত্তা নেই দেখে ধরে নিচ্ছি কেউ কেউ উদগ্রীব হয়ে পড়েছিল আমার জন্য ( কেন মশাই অমন খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসার কি হ্যাঁ , আমি কি অত টাই ইয়ে নাকি যে কেউ ব্লগে ঢুঁ মারেই না , নতুন লেখা না পেলে খোঁজ নেয় না, হুহ ) , তাই বলছি বেঁচে তো আছি বটেই দিব্যি কলকাতার দুর্গাপূজো ২বছরকাল পর দেখে, পাটিসাপ্টা ক্ষীর , লুচি , মাছ মাংসের ভবিষ্যৎ উদ্বিগ্ন করে , ভুঁড়ির পরিধি বাড়িয়ে বহাল তবিয়তে বিরাজমান।
হ্যাঁ  কথাটা ঠিকই ধরেছেন , স্বদেশে পূজ্যতে রাজা আপ্তবাক্য স্মরণ রেখে মহারাজ দেশে ফিরে এসেছেন।
ফলে আপনাদের সাথে বিস্তর আড্ডা দেওয়ার আছে।  কেমন আমায় হবু প্রোডিউসার ভেবে ওলার দাদা (বিহারি দাদা) আমায় তাঁর  বীরত্বের কাহানি শোনালেন।  কেমন আড়াই বছর পরে দোকানে এক অনুষ্ঠান উপলক্ষে ফুল কিনতে গিয়ে দর করতেই কাকুটি বললেন আমি তো তার রেগুলার খদ্দের উনি আমায় ঠকাবেন!! তাপর অটোভাড়া দেবার আগে থ্যাংক ইউ বলতে অটোওলা কেমন সন্দ সন্দ করে তাকালো।  তারপর বাসে এখনো লোকে কেমন তুই তোকারি করলো -_- ।  সব বলতে হবে তো নাকি।
তো শুরু থেকে বলি কেমন? টিকিট পেয়ে আমি খুশি তো বেজায় সাথে চিন্তা ২৩+২৩+ক্যারি অন + ব্যাকপ্যাকে আমার এই রাশি রাশি মালপত্র ধরবে কেমনে। জিনিসপত্র দেদার কেনা হয়েছে , বই নয় নয় করেও দেখি ১০ কেজি।  হ্যাঁ বলে কিরে।  দওওশ কেজিইই।  লোকনাথ কে ডেকে লাভ নাই।  আমি রণেও নেই , বনেও নেই , জলেও নেই , জঙ্গলেও নেই।  তাইলে।  লাগাও সমুদ্র মন্থন পালা।  অগতির ভরসা অর্ণবদা।  বললাম তোমায় অল্প বই পাঠাই ? ভালোমানুষদের সমস্যা হলো তারা মুখের উপর না বলতে পারে না।  হ্যাঁ  বলল, আমিও ভালোমানুষদের সাথে যা করে তাই করলাম , মানে আমার খান কতক মানে বেশ  বেশ কিছু বই পাঠিয়ে দিলাম।  তবুও ওজন আর কমে না।  কি রে বাওয়া ওয়াটার অফ ইন্ডিয়া নাকি।  যাক অবশেষে ফেলে ছড়িয়ে যাহোক করে হাজির। ক্যারিঅনে ৭ কেজি না ১৬ কেজি জিনিস ভরেছি।  ওজন নিলেই চিত্তির ।এয়ারপোর্ট  এ ব্যাগ উল্টে গড়াতে গড়াতে কোনো মতে চেকিন করতে গিয়ে দেখি আমার শুরুতেই চাপ। বলে নাকি একখান ব্যাগের ওজন ৫১lbs ।  অবশ্য মাসিমা ভালোই ছিলেন আমায় গম্ভীর হয়ে বললেন যা বাছা এবারের মতো ছেড়ে দিলাম। খুশি খুশি যাচ্ছি মনে চিন্তা , ক্যারিঅন টা কি হবে।  তা যেখানে বাঘের ভয় ইত্যাদি , খ্যাক করে ধরলো । তোমার পেটমোটা বলে তোমার  ব্যাগের এমন পেটমোটা করেছো এ ফিট করবে বলে আমি মনে করছি না ইত্যাদি ।যথারীতি মাপ টাপ  নিয়ে দেখা গেলো তিনি আনফিট।  বললুম উপায় কি মাদমোয়াজেল।  বললো আজ তোর শুভ দিন (আমাদেরও, হতচ্ছাড়া আব্লুশ  এদ্দিনে বিদেয় হচ্ছে ) তোর এ ব্যাগটা  আমরা চেকিন্ করে দিচ্ছি।  ভয়ে ভয়ে জানতে চেয়েছি যেই পয়সা কত লাগবে দিদি, বলে ওরে বিচ্ছু  কিচ্ছু না কিচ্ছু না , তুই বিদেয় হচ্ছিস এ খুশিতে ফিরি ফিরি।
আম্মো লাফাতে লাফাতে ঢুকে পড়লুম।
জানলা দিয়ে শেষ বারের মতো ডেনভার দেখলাম , আমার এদ্দিনের সুখ দুঃখের শহর।
শিকাগো এয়ারপোর্ট টা বলবো কি মনে হচ্ছিলো ভারতের কোনো এয়ারপোর্ট।  সব ভারতীয় বাবা মা।  ছেলে মেয়েদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে ফিরছন।  এক কাকিমা দেখি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন ঠায়  , একিরে বাবা চেনা তো না , তবে কি বাঙালি? খিস্তি মেরেছি ফোনাচ্ছি সেইটে শুনেছে নাকি।  নাহ  মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে  দক্ষিণ প্রদেশীয়।  ভয়েভযে ফোন রাখতেই দেখি বলে একখান কাগজ দিয়ে তার মেয়ের সাথেএকটু কানেক্ট করিয়ে দিতে হবে।  যাক বাবা স্বস্তি।  সন্ত্রাসবাদী ভাবেনি এই ঢের।  শিকাগো থেকে প্লেন  এ আবুধাবি ওখান থেকে কলকাতা। শিকাগো থেকে প্লেন টেকঅফ করার সময় মিশিগান হ্রদ দেখলাম , হ্যাঁ বড় বটে।  এই যে ছবি


  তা শিকাগোর ফ্লাইটে  আমার পাশে দুই কাকু কাকিমা বসলেন।  আমার জ্যাকেট ও প্যান্টে ম্যাংগো জুস্ ঢাললেন।  আমি সবিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম আমি ম্যাচিওর্ড মানুষ হয়ে উঠেছি।  " নো ওরিজ  , আই উইল টেক কেয়ার অফ ইট আন্টি " ছাড়া কিছুই বললাম না ।  বাকি যাত্রাপথ যেমন বোরিং এক্সপেক্ট করেছিলাম তেমনই হলো খালি অনেক ভালো ভালো মেঘ , অনেক কটা মালভূমি আর খান কতক লেক দেখেছি।



আমায় আপনারা আওয়াজ দিতে পারেন কিন্তু কলকাতায় ট্যাক্সি স্টার্ট নেবার পর আমার মনে হয়েছিল একি রে বাবা কি করছে এ , রেলিং এ ধাক্কা লাগবে নাকি , আর তারপর অপরিসীম দক্ষতায় যেভাবে কাটালো আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম, এ কথা স্বীকার করতে আমি বাধ্য।
পরেরদিন এক বন্ধুর বাড়ি যাবো , তার বাড়িতে অনুষ্ঠান ছিল।  তখনই ওই ফুলের দোকানের ঘটনা ঘটলো।  আমি তো অব্বাক।  বলে কি রে , আড়াই বছরের পুরোনো খদ্দেরও  রেগুলর কাস্টমার। এ কি মহাকাশ টাইম জন্যে চলে নাকি। আর অটোর কথা তো বললামই , যেই থ্যাঙ্কু বলেছি , পরিষ্কার শুনতে পেলাম মনে মনে বলছে ব্যাটা ভাড়া না দিয়ে পালাবার ছক করছে নির্ঘাত।
 
ওলার দাদার গল্পটাও শুনিয়ে দিই তবে। " সে তো হয়েছিলো একবার , এক মন্ত্রী আমার গাড়ির সামনে বাইক রেখে চলে গেছে । হরিদ্বারের মন্ত্রী । আমি বলেছি কে রেখেছে এখানে বাইক । মন্ত্রী বলে আমি । আমি তো সোজা বলে দিয়েছি সরাও এখান থেকে । ব্যাস মন্ত্রী দিয়েছে আমায় এক চড় । আমার মাথা ফাথা গরম । এত বড় সাহস আমার গায়ে হাত তুলিস । দিয়েছি এক ঝরাকসে । ব্যাস পুলিশ , পার্টির ছেলেরা হাজির । পুলিশ কথা তথা বলে আমায় বলল , যে তুই যদি পায়ে হাত দিয়ে ক্ষমা চাস তবেই ছাড়া পাবি ।আমিও বললাম  আমার মাথা কেটে ফেললেও আমি মাথা ঝোকাব না । তারপর অন্য পার্টির আরেক নেতা এসে গেলো । আমায় বুকে নিয়ে বলল আমি অনেক দেখেছি কিন্তু এরকম ছোট বেলায় মা কা দুধ পিকে আয়া বহুত কম দেখা । ব্যাস তারপর লড়াই শুরু হয়ে গেলো । আমিও দিলাম উস্তুম খুস্তুম । তারপর থানার বড়বাবু নিজে আমায় ছেড়ে দিয়ে গেলো স্টেশনে । "
সিনেমার নাম কি দেবো বলুন তো ? বেঙ্গল কা সিঙ্ঘাম?
আচ্ছা শুভ  বিজয়া জানানোর পক্ষে কি বেশি দেরি হয়ে গেছে? তাইলে হ্যাপ্পি দিওয়ালি।  আপনাদের তুবড়ি দোতলা অব্দি উঠুক , রং মশালে বালি কম থাক , চরকি বাঁই বাঁই করে ঘুরুক।

Wednesday, September 7, 2016

ছোটবেলার হিজিবিজি ৩

ষষ্ঠীর সকাল থেকে ঢাক বাজতো না বোধহয় । বাজলেও আমার মনে নেই। জেনারেটার এর লোকজন এসে আলো লাগাত । তাপস , মানকে গৌরহরি ওরা কেমন ওই বয়েসেই দুটো তার জোড়া দিয়ে আলো জ্বালিয়ে দিতে পারত । ফটকে ওর দাদুর ঢাকের সাথে কাঁসি বাজাত । কিন্তু ব্যাটা যা নাচত না । অক্ষয়কুমারের মতন নাচতে পারত । আমি অরিত রন্টি বুয়া (পিসি ফিসি না, আমার এক দিদির ছেলে) একবার লুকিয়ে নাচতে গেছিলাম , ধরা পড়ে "কান ধরে তুমি নিয়ে চল" হয়ে গেছিলো । -_- যাকগে । বড়পুকুরে ছোটদের নামা বারণ ছিল একা একা কিন্তু সঙ্গে বড় কেউ থাকলে নামা যেত । ঘাটের সিঁড়ি কতদূর চলে গেছে জানার খুব ইচ্ছে হতো । ওর তলাতেই পাতালপুরী? সোনার কাঠি পকেটে ছিলো না কিন্তু ডুব দেবার সাধ হত ভারী । সিঁড়ি ধরে পা ছুঁড়তাম আর একবার অরিত এক ধাক্কা মেরেছিল কি নিয়ে একটা লড়াই হয়েছিল তাই , আমিও নাকানি চোবানি খেয়ে সাঁতার এবং ডুব দুটোই শিখে গেলাম । ধাক্কা জরুরী , ভালবেসেই হোক কি খারাপবেসেই হোক ।
বড়পুকুর এপাড় ওপাড় করতে পারা মানে তুমি হ্যায় ব্যাক্তি । আমি পারতাম না কিন্তু পাড়ার ছেলেরা নারকেল, তাল গাছ থেকে ঝাঁপ মারতে পারত। আমার বাড়ির সব কটা ছেলেই ইঙ্কলুডিং মি , ন্যাদোশ , কেউ পারবে না আমি জানি , অত ভয় দেখালে আর কি করে হবে -_- ।
পুকুরের পারের কৃষ্ণচুড়া গাছটায় যে ফল হত তা দিয়ে খেলা হত, কার মুণ্ডু কাটা পড়বে ।
সপ্তমীর দিন সকালে কলাবউ চান হবে তার আগে ঘট ডুবানো হবে । সক্কাল বেলা ঢাকের আওয়াজে ঘুম ভাঙবে , কনরকমে ব্রাশ করে (বা না করে ) জামা বদলে ( এটা মাস্ট , পূজোর কাছে বাসী জামা প্যান্ট গেলে ঘাড়ধাক্কা খাওয়া মাস্ট) দৌড় দিতাম । মূল যে পুরোহিত সে তো আমাদের বাড়ির ফিক্সড পুরোহিত , লক্ষ্মী সরস্বতী কালী সব পূজোয় সেই আসবে তার কাছ থেকে গল্প শুনবো , কেমন করে আমাদের বাড়ির কালীপূজোর দিন ডাকাত আসতে গিয়ে নাকাল হয়েছিলো ডাকাতেরা ( তখন অত কূট প্রশ্ন মাথায় আসত না , নিজের নাকাল হবার গল্প কেন কেউ বলবে বা ইত্যাদি, আমি গল্প শুনেই দেখতে পেতাম একটা নৌকা করে দামোদর দিয়ে লাল ফেট্টি বাঁধা ডাকাত আসছে ) যাইহোক তাকে আমরা সব্বাই নাম মাধঅবো বলে ডাকতাম , আসল নাম অন্য , কিন্তু কেন কি জানি আমরা ওই বলি এখনও মানে আমারা যারা ছোট ছিলাম এখন ধেড়ে হয়ে গেছি ।
মা জ্যেঠিমারা কেউ শাঁখ বাজাচ্ছে ,কেউ জলের ঝারি টা দিয়ে জল ফেলছে আর দাদারা বোমগাছ বাঁধতে ব্যস্ত । শব্দদূষন নিয়ে অত চিন্তা করিনি , কড়াকড়িও ছিলো না খুব । দিনে রাতে যখনই আরতি বা কলাবউ চান বা ওরকম কিছু হবে একটা করে গাছ ্বোম বাঁধা , একসাথে আটটা না বারোটা ধুম দাম করে ফাটবে । বেশ আওয়াজ হয় । পিলে চমকানো টাইপ আর যে কানে হাত চাপা দেবে তাকে বাকিরা দুয়ো দেবে । পিলে চমকালেও , ছেলে ছোকরারা কানে হাত চাপা দিত না। লুজ বোমও হত সেগুলো ফাটাতে এক্সেস পাওয়া মানে বড় হয়ে গেছি । মনে আছে আমি ক্লাস সেভেনে না এইটে পেয়েছিলাম , কি হাবভাবটাই না নিয়ে ছিলাম।
ঘটডুবানো আর কলাবউ চান এর পর ঘরে গিয়ে খেয়ে দেয়ে আবার পুজোর কাছে । আমরা একটা খেলা খেলতাম , লে ম্যান বলে , দু দল থাকবে একজন এক পায়ে গিয়ে ওপারের লোককে ছুঁয়ে দিলে আউট । মানে কাবাডির মত । আর খেলতাম চোর পুলিশ । পুলিশ হতে কেউ রাজি হত না , কারন চোরের জীবন অনেক রোমাঞ্চকর। সে যে কোন নিয়ম ভেঙ্গে যে কারোর পিছনে শেল্টার নিতে পারত , কিন্তু পুলিশ তো নিয়ম ভাঙ্গে না । তাই লটারি করে মারামারি করে চোর পুলিশ ঠিক হত । আরও একটা কারন ছিল , চোর এর গুলি করার স্কোপ অনেক বেশী , সে যাকে পারে গুলি করে , পুলিশ পারে না ফলে ক্যাপ ফাটাতে কম পারে ।
দুপুরবেলায় মা এর একটু ঘুম লাগবেই , এবং মা এর লাগবে না শুধু কাকিমাদের জ্যাঠিমাদেরও লাগবে এবং আমরা তো ফ্রি । সুতরাং বিছানায় বন্দি । আমাদের কোড ছিল, নাম ধরে ডাকলে তো বকুনি এবং মা শুধু না মা এর কাঁচা ঘুম বরবাদ এর শাস্তি হিসেবে বিকেলেও আটকে দিতে পারে তাই কুহু (কোকিলের ডাকটা ইজি কিনা) করে ডাক দেওয়া হত । বেজায় বেশী বুদ্ধি ছিল তাই বুঝিনি , মা এরা বুঝেও পাত্তা দিত না । অমন কাঁচা হরবোলার ডাক ধরতে না পারার কোনও কারন থাকতে পারে নাকি । কোনো কোনো দিন বাকিরাও ঘুমিয়ে পড়ত। আমার চোখে আর ঘুম আসত না , আমি উঠে পড়তাম । পুরনো বাড়ির পিছন দিয়ে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াতাম । ঝুপ্সি হয়ে থাকত এক এক জায়গা , আমার মন খারাপ করত আমি আবার এসে মা এর কাছে শুয়ে পড়তাম ।
সন্ধ্যে হত , আলো জ্বলে উঠত । একরাশ ফুল দিয়ে সাজানো হত বিকেল থেকেই , আর বেলপাতার মালা গাঁথা হত । ওই দূরে হটে যেত অন্ধকার।যে জায়গা গুলো পেরোতে অন্যসময় বুক শুকিয়ে যেত , বীর এর ন্যায় এগিয়ে যেতাম সেসব জায়গায় ।
বাজি পোড়ান হত চারদিনই । ছাদের থেকে দেখতাম উঠে একটু রাত হলে , সিনেমা চালানো হত । আমাদের টিভিটা বাইরে বের করে দেওয়া হত । কিন্তু কি সিনেমা চলত আমার মনে নেই । আমি ঘুমিয়ে পরতাম -_- । অষ্টমীর দিন সকাল সকাল উঠতে হবে বলে বাজি পোড়ানোর পরেই আমাদের ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হত।

Thursday, September 1, 2016

ছোটবেলার হিজিবিজি 2



অনেকের পরের পার্ট শুনতে ইচ্ছে হলো তাই তাই পরের কিস্তি লিখতে বসলুম।

মহালয়া তো চলে এলো। ভাবলে অবাক লাগে এত্ত গাছ পালা চারদিকে ছিলো কিন্তু একটাও শিউলি গাছ ছিলো না। শিউলি গাছ ছিলো স্কুলে, হস্টেলে থাকতে সকাল বেলা পড়া পড়া খেলতাম যখন দেখতাম গাছের তলাটা সাদা আর হলুদের কম্বিনেশনে ছেয়ে গেছে। কিন্তু কোনো পল্লী বা শহুরে বালা সে ফুল আমায় দেবার যুগ্যি মনে করেনি কখনওই। যাকগে কৈশোর না আমার ছোটবেলার কথা হচ্ছিলো। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহালয়ার থেকে আমাদের টিভিতে দেখানো মহালয়া নিয়ে বেশী উৎসাহ থাকত। তখন কালার টিভি এসে গেছে, রংচঙে যুদ্ধ দেখতে ভারী ভালোলাগত। মেজজ্যেঠু আবার চারটের সময় উঠবেই আর চালাবেই। সত্যি বলতে কি, আমি এই বয়েসেও মহালয়া শুনতে বসলে একটা করে নতুন গান আবিষ্কার করি। যাই হোক ওই রেডিওর মহালয়া নিয়ে আমাদের একদমই উৎসাহ ছিলো না তাই শুনতামও না। আমাদের মানে আমার এক কাকা থাকত হিন্দমোটরে, সেই খুড়তুতো ভাই, দিদিরা আমার বয়েসী ছিলো তারা আসত, তারপর দিদিভাই মানে সব থেকে বড় দিদির ছেলে মেয়েরাও আমার বয়েসি তারাও আসত। এছাড়া আমার দিদি তো আছেই। পাড়ার ছেলেদের সাথে বিকেলে মাঠে যা খেলা হতো অন্যসময় তেমন বন্ধুত্ব ছিলো না। তার একটা কারন তারা বেজায় শক্তপোক্ত ছিলো, আমি প্যাংলা দুর্বল সে লড়াইতে হেরে ঘরে ফিরতাম। তাছাড়া আর একটা কারন ছিলো গ্রামের দিকে লোকজনের মুখের ভাষা অত রেস্ট্রিক্টেড ছিলো না। তারা ওই বয়েসেই অনায়াসে খিস্তি দিতো আমিও সে জিনিস শিখে বাড়িতে বলে বেশ অভূতপূর্ব অভ্যর্থনা পেয়েছিলাম বলে বেশ মনে আছে। ফুলদিদি কলেজ থেকে ফিরে আমার জন্য আনা সন্দেশটা অব্দি লুকিয়ে দিতে পারেনি :'( । ছোড়দি মানে আমার দিদি পর্যন্ত বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলো। সেবার যখন মা ওকে ঘরে খাটের পায়ার সাথে বেঁধে রেখেছিলো কে বাবুজিকে ডেকে এনেছিলো হ্যাঁ, এই শর্মাই তো নাকি। কোন আক্কেলে তুই মাকে বলতে গেলি " ম্যা ম্যা বাবু না **** বলেছে "!! যাকগে সে শোধ আমি নিয়েছিলাম এক খাবলা চুল তুলে এনে। সে অন্য প্রসঙ্গ। যা বলছিলাম, তা আশেপাশের ছেলেপুলেদের সাথে পূজোর সময় খেলার কোনো মানা ছিলো না। খালি মারামারি না করলেই হলো। মারামারি মূলত আমার ভাগনের সাথেই হতো অবশ্য। ঠিক বেছে বেছে যে সোজা প্যাঁকাটি টা আমি তুলে আনবো ব্যালেন্স করে আঙুলের ডগায় নিয়ে ঘুরবো বলে সেইটিই ওনার চাই। না পেলেই চিলচিৎকার করবে। ও আবার কি! আর আমি বাড়ির ছেলে ওরা নাকি কুটুম মানুষ ওদের দিয়ে দেওয়াই উচিতকর্ম। কই মামাবাড়ি আমি যখন যাই পাপুদা যখন বাজি ফাটায় আর আমায় বলে তুই বাচ্ছা ওদিকে গিয়ে দাঁড়া তখন তো কারোর উচিতকর্ম এর কথা মনে পরেনা। হুহ।

তো মহালয়ার সময় যেটা দেখানো হত টিভিতে সেটা আবার ষষ্ঠী বা সপ্তমীর দিন দেখানো হত। অসুরের ওই ডায়লগ আর হাসিটা আমি ওর মধ্যে তুলে ফেলতাম। আমাদের অসুরের উপর বেশী শ্রদ্ধা ছিলো মনে হয়, গায়ের সবুজ রংটার জন্য কি? নইলে আমরা যখন নিজেদের মহালয়া করতাম ওই টিভির মতো অসুরের পার্টটা করার জন্য এমন লড়াই হবে কেন? আমাদের চার জনের মূল যে দলটা ছিলো তাতে মেয়ে কেউ ছিলোনা বলেই বোধহয়, আর সে বয়েসে নিজের পুরুষত্ব সম্পর্কে আমরা চার জনেই বেশ সচেতন ছিলাম দেবত্ব লাভেরর জন্যও সে বিসর্জন দিতে নারাজ ছিলাম। মহালয়ার পরেও স্কুল খোলা থাকত কিন্তু সে খালি সময় নষ্ট করা। আমি তখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম কাকারা আর দিদিরা কবে আসবে। চতুর্থীর রাতেই সব জড়ো হতো। মামাতো দাদা দিদি আর মাসতুতো দাদারাও আসতো কিন্তু ওরা ঢের বড় ছিলো তাই তাদের আমার তাদের নিয়ে কোনোরকম উৎসাহই ছিলো না। ওরা বোকার মতন না খেলে দিনরাত গান শুনতো আর আড্ডা মারতো। আমাদের ওদিকে ঘেঁষতে অব্দি দিতোনা। আমরাও থোড়ি পাত্তা দিতাম। মা মাসি জ্যাঠি দিদিদের আলাদা দল ছিলো ওদিকেও যেতাম না কি বকতে পারে বাবা। বাবা কাকারা কোথায় থাকত কে জানে এমনিতেই বাবাই এর সাথে আমার যোগাযোগ ওই রাতের বেলা গরম রসগোল্লায় আর সকাল বেলা আপিস যাবার সময় বাবাই এর পাত থেকে এক গাল খাওয়ায় ও একখানা করে লাল নোট ( দু টাকার নোট, পাঁচ টাকার নোট দিতে গেলেও আমি দুটাকাটাই নিতাম ওই লালের মোহে!!) পাওয়ায়। পূজোর সময় সে ভদ্রলোককে দরকার পড়তো খালি ক্যাপ ফুরিয়ে গেলে। এমনিতে ওই চতুর্থী বা পঞ্চমীর দিন মেজদাদা বন্দুক ক্যাপ সব এনে দিতো কিন্তু সে তো কেমন করে জানি এক দিনের মধ্যেই নেই হয়ে যেত।

ঠাকুরের গায়ে গর্জনতেল মাখানো আর ডাকের সাজ হতো পঞ্চমীর দিন। চোখ আঁকাও ওইদিন রাতেই হতো বোধহয়, তারপর তো ঘিরে দেওয়া হত বোধনের আগে দেখতে দেওয়া হত না। কিন্তু ওই যে ফিনিশিং টাচটা দেওয়া হত ওই সময় আমরা সবাই হাঁ করে বসে থাকতাম আর আমাদের এক্সপার্ট কমেন্ট দিতাম। এবারের অসুরটা কেমন রোগাটে হয়েছেনা? ক্লাবের ঠাকুরের ময়ূর টা দেখেছিস যেন সব পালক ঝড়ে যাবে এক্ষুনি। আর সাপটা আমাদের ঠাকুরেরই সেরা। সিংহটা বেশী ভালো হয়েছে না ইঁদুর সে নিয়ে আমাদের খুব গন্ডগোল হতো। কেন জানিনা দুগগা ঠাকরুন ছোটদের কাছে তেমন ইয়ে পেতেন না তার অস্ত্র শস্ত্র বরং বেশী আকর্ষণীয় ছিলো। একবার মহালয়াতে হেমা মালিনী দুর্গা হয়েছিলো, আমাদের জ্বলে গিয়েছিলো দেখে। মানে এটা একটা কথা হলো হ্যাঁ সারাক্ষণ নেচে যাবে সে আবার কি। একটা যুদ্ধ নেই ভালো গল্পো নেই ভালো!! যত্তসব!! এর চেয়ে সেই যেবার কুমিরে মহিষাসুরের বাবা না কাকা কাকে টেনে নিয়ে গেছিলো সে বরং ঢের ভালো হয়েছিলো। এরকম সব কর্মব্যস্ত ভাবেই পঞ্চমীর বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নামত। বড়দের অত্যাচারে অত্যাচারিত আমরা ঝুলন্ত হয়ে ( মানে হেঁটে স্বেচ্ছায় তো আর যেতাম না ) ঘরে ফিরতাম

Monday, August 29, 2016

ছোটবেলার হিজিবিজি



কোনো কিছুর জন্যই নির্দিষ্ট অপেক্ষা ভারী চমৎকার হয়। মানে যে জিনিস আসবেই জানি বা হবেই জানি শিগগির সেরকম জিনিস এর অপেক্ষা। যেমন পূজোর মাস খানেক আগে থাকতে পূজোর অপেক্ষা। পূজো আসছে বলে আমার ছোটবেলার গল্পো মনে পড়ছে এবং শোনাতেও -_- ^_^ । আমার ছোটবেলা কেটেছে গাছপালা পুকুর মাঠ মানুষ জন দিয়ে। তাই বোধহয় এ সবকটা আমি আমি এখনো এত ভালোবাসি। হ্যাঁ ইনক্লুডিং মানুষ। আমি ক্যাবে উঠি কি ফেসবুকে বকবক করতে আমার আপত্তি নাই।জানতে শুনতে দেখতে আমার ভারী ভালোলাগে।

ছোটবেলার কথা বলছিলাম না। আমার ছিলো মস্ত যৌথ পরিবার। জ্যাঠা জ্যেঠী কাকা কাকি দাদা দিদি ভর্তি। আমার বেশ মনে আছে আমাদের পেল্লায় একটা হাঁড়ি ছিলো ভাতের। মাঠে কাজ করতে আসা বা এদিক সেদিক সব মিলিয়ে জনা ত্রিশ জনের রান্না হতো। শুনতে ভালো বোধ হলে কি হয় খানিক বড় হয়ে টের পেয়েছি সে কি ঝঞ্ঝট এর জিনিস। তবে সে এক মস্ত ব্যাপার বাপস। ভাতের ফ্যান গালার জন্য একটা নির্দিষ্ট উঁচু জায়গা থাকত, দুজন মিলে ওই মস্ত হাঁড়িটা নিয়ে হেলিয়ে দিতো কি এক কায়দায়। তারপর একটা জাঁতাও ছিলো আর শিলনোড়াটা একটা ফিক্সড জায়গায় বসানো থাকত। না দুটো শিলনোড়া থাকত একটা আমিষ মানে পিঁয়াজ রসুন বাটা হবে একটা নিরামিষ পোস্তো ফোস্তোর জন্য। আর আমাদের জেলে একজন নির্দিষ্ট ছিলো, মানে সবারই থাকত কিনা জানিনা তবে আমাদের বামুন, নাপিত আর জেলে নির্দিষ্ট ছিলো। নাপিত মানে হরেনকাকা আসত আমাদের ন্যাড়া করে দিতে -_- । তবে মাছধরাটা একটা বিরাট ব্যাপার ছিলো। ভোরবেলা শংকর জেলে মানে আমার শংকর কাকা আসত, হাঁক দিতো, গ্রামের দিকে সকাল তাড়াতাড়ি হয়। লোকজন সব জড়ো হতো। তারপর সেই মাছ ভাগ বাটোয়ারা করে কেটে ধুয়ে প্রত্যেকের জন্য ঠিক করা.... সে এক যজ্ঞ্যি!! ওই সময় মা জ্যেঠিমাদের কাছে গেলে কপালে দুক্ষু থাকত। মাছ ফাছ তাই মোটেও রোজ ধরা হতো না। ওই বিশেষ দিনেই। বাকি কেনা। ছোটবয়েসে অত কিছু বুঝতাম না অবশ্য। বাড়ির ছোট ছিলাম, আমার বড় জ্যেঠু ছিলেন আমার দাদুর মতন, মানে আমার বড় জ্যেঠতুতো দিদি আমার মা এর বয়েসি ফলে আমার ঠাকুমা ঠাকুর্দার অভাব আমার বড় জ্যঠু যাঁকে বাবুজি বলতাম তিনি আর বড় জ্যেঠিমা মেটাতেন। আমি ইশকুলে ভর্তি হবার আগে আমার বড় জ্যেঠিমার কাছে দুপুরে গপ্পো শুনতে যেতাম। সব রূপকথা আর ভূত। জানলার বাইরে একটা আতা গাছ ছিলো, সারা বছরে একটা বা দুটো আতা হয়ত ফলত আর পাশেই ছিলো একটা জামরুল গাছ। কি মিষ্টি জামরুল ফলত। পিছনের পুকুর জাম গাছ জামরুল গাছ আর কি কি সব গাছ ছিলো আর ওইটেই ছিলো আমার কল্পনার রাজত্ব। ওই পুকুরটায় ডুব দিলেই আমি জানতাম সেইই পাতালপুরি পৌঁছব। রাজকন্যার থেকে ও বয়েসে তলোয়ার বেশী ইন্টারেস্টিং ছিলো।আমাদের পাড়া মানে আমাদের জ্ঞাতিরাই। সেইরকম সম্পর্কিত এক দাদা আমায় ধনুক বানিয়ে দিতো। এক কাকা আমায় গুলতি ছোঁড়া শিখিয়েছিলেন সে অবশ্য অনেক পরে, আরও বড় হয়ে। শীতকালের সকালে আর সন্ধ্যেবেলা আমাদের বাড়ির সামনে সবাই আগুন পোহাতো। আমিও যেতাম। আর বাবুজি আমায় নিয়ে মটরশুঁটি ক্ষেতে নিয়ে যেত আমিও তছনছ করতাম সারা মাঠ দাপিয়ে বেরিয়ে। আর ফেরার সময় একটা বাপুজি কেক বরাদ্দ ছিলো ^_^। কার কোলে পিঠে চড়ে থাকতাম সারাক্ষন কে জানে তবে মাকে আমার খালি রাতেরবেলা ঘুমোতে যাবার সময় ছাড়া লাগতই না।

আমাদের দক্ষিনবাড়ির যে মাঠটা, ওই যে তারপর যে খালটা দেখা যায় ওপাড় টা কত কি যে হতো! আমার খাল পেরোনো মানা ছিলো একা একা নইলে আমি জানি ওখানে সাপের মাথার মণি ঠিক পাওয়া যাবে খুঁজলে। আর সেই যে মধুসূদন দাদার ভাঁড় সেও কি এখানে এত মেলা লোকের মধ্যে মিলবে নাকি। ওখানেই পাওয়া যাবে।

গুপী বাঘার ক্যাসেট বাজতো ছুটির দিন দুপুরে শুনতে শুনতে বা আনন্দমেলা কি অন্য কোনো বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়তাম বা জেগে থাকতাম।বিকেলবেলা ফুটবল ম্যাচ থাকত। রোদ না পড়লে বেরোনোর অনুমতি ছিলো না, মা এর নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে টের পেলে এক পা এক পা করে বেরোতে গেলেই মা উঠে পড়ত আর আমি বাথরুম যাচ্ছি বলতাম। ঝাঁ ঝাঁ দুপুরের প্রতি টান কি তখন থেকেই কি জানি। আমাদের টিউবওয়েল এর হ্যান্ডেল ধরে ঝুলতাম, খিড়কির দরজা বন্ধ থাকত তাই পিছনের পুকুরের দিকে যেতে পারতাম না। কিন্তু আমাদের বাড়ির পিছোনে আর একটা দরজা ছিলো, গরু গুলো কে ওই রাস্তা দিয়ে বের করা হত তা সবাই আমায় গরু বলত বলেই বুঝি ওই দরজার প্রতি টান ছিলো, ওখান থেকে বেরিয়েই আমতলা, গরুগুলো ওখানে বাঁধা থাকতো, ফোঁস ফোঁস নিশ্বাস ফেলত। ওদের মধ্যে একটা একটু শিং নেড়ে তাড়া করত বাকি সবকটা শান্ত মনে জাবর কাটত। আমতলা পেরোলেই ইঁটপাঁজা, ওইখানে সাপের খোলস মিলত কিন্তু ওই ছায়া ছায় জায়গাটা আমার ভারী পছন্দ। ওইটে ছিলো আমার রাজপ্রাসাদ, আর খড়ের গাদাটা আমার দরবার। ভারি কুটকুটে আমার সিংহাসন কিন্তু সিংহাসন তো বটে।

রথের দিন আমাদের ঠাকুরের কাঠামো পূজো হত। তারপরেই সেই ম্যাজিক অপেক্ষা। রোজ রোজ ইশকুল যেতাম আর দেখতাম খড়ের ঠাকুরের গায়ের মাটি পড়লো, মুণ্ডু আলাদা করে হবে। দো মেটে হবে এবার। আকশের রঙ এর খেয়াল করিনি তবে মেঘ গুলো বেজায় ফূর্তি করতো। আমিও গাড়ি দাদা নিতে আসার আগে এক কলি হিন্দি গান গেয়ে নিতাম। আমাদের বাড়িতে হিন্দি গান গাওয়ার অর্থ ছিলো সে বখে গেছে। মেজদাদা জানলে তো হয়ে গেলো, স্কেল দিয়ে দেবে হাতের মধ্যে। হ্যাঁ মারধোর করার অনুমতি নিতে হতনা কারোর থেকে তবে মারলেই কাকা(আসলে জ্যাঠা আমি কেন জানিনা কাকা বলি) বা কাকি বা ফুলদিদি বা খুকুদিদি বা কেউ না কেউ এসে বকে দিতো আর মেজজ্যাঠা গুড়কাঠি কিনে দিত। গুড়কাঠি কি ভালো খেতে ^_^।

তারপর একদিন প্যান্ডেল বাঁধা শুরু হতো। আমি ইশকুল থেকে ফেরার পর খেলতে যাওয়া ফেলে ঠাকুর গড়া আর প্যান্ডেল গড়া দেখতাম। তারপর চব্বিশ বাইশ করতে করতে মহালয়া চলে আসত। তারপর...

Tuesday, August 9, 2016

ঘোরাঘুরি ( নিউ মেক্সিকো এবং অন্যান্য )(2)

পৌঁছে দেখি দিদিমা দিদিমা চেহারার একজন রিসেপশন এ বসে আছেন। চেহারার সাথে স্বভাবে মিল আছে দিব্যি। সেদিন দুঃখ প্রকাশ ছাড়া আর কথা হয়নি তার সাথে , পরের দিন ম্যাপ নিয়ে ঐ বুঝিয়ে দিলো। আমাদের যাওয়ার কথা সেদিন মেসা ভার্ডে( mesa verde ) পার্কে।  বললো পার্কের মধ্যে মামা থাকে তাই খামোখা যেন স্পিডিং টিকিট না খাই।
মেসা ভার্ডেতে আমেরিকার আদি অধিবাসীরা বাসকরতো । পাহাড়ের উপরে বা কোলে ঘরবাড়ি বানিয়ে   আমার ভারী অবাক লাগছিলো ওরা যে সময়কালটা বলছিলো সব চেয়ে উন্নতি করেছে বললো সেটা হলো ঐ ১১০০ থেকে ১৩০০ মতো সময়ে।  ঐ সময়টা ভারতবর্ষ তখন তার সংস্কৃতি , শিল্প সব কিছুতে মাথা ছাড়িয়ে লুটেরাদের কবলে পড়ে  গেছে। আর এরা তখন এই সব তৈরি করছে।






অবশ্য স্বাভাবিক। ক্লিফ প্যালেস বলে এই জায়গাটায় যে লোকজন থাকত তাদের  মেয়েদের গড় আয়ু ছিল ২৪-২৮।  আর ছেলেদের ২৮-৩২।  কারণ সিম্পল।  ঐ পাহাড়ের মাথা থেকে জল নিয়ে এসে , ভুট্টা ভেঙে কিংবা পাইন কোন ভেঙে খেয়ে বাঁচার জন্য ২০০০ ক্যালোরি মিনিমাম লাগে সেখানে ছেলেগুলোর জুটতো খুব বেশি হলে ৯০০ ক্যালোরি।  ব্যাস গল্প শেষ।  আর মেয়েগুলো তো ১৩-১৫ বছর থেকেই বাচ্ছার মা হতে শুরু করত।  তারপরে আর ২৫ এর বেশি বাঁচবে কি করে। আর্ট তো অপচয় ছাড়া হয় না।  খালি খাওয়া বেঁচে থাকার সংগ্রামে আর্ট হবে কি করে।
ওখানে একটা বাঁশের মই বেয়ে উঠতে হতো উপরে , আর সেই নিয়ে এদের আদিখ্যেতা দেখে কি বলব আর।   ৫০০ বার সাবধান করছে যার হাইটে ভয় সে যেন না আসে , জল খায় বেশি করে ইত্যাদি ইত্যাদি। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় এদের আমাদের দেশে পাঠিয়ে দিই , ট্রেনে ঝুলতে ঝুলতে যাওয়া কি লাফিয়ে বাসে চড়া এইসব কদিন করলে যদি একটু নিয়ে কমে আর কি।   রেঞ্জার মেয়েটি হাসিখুশি ভালোই ছিলো। কিন্তু সে ভারী ইয়ে মানে বললো যে আমার একজন ভলেন্টিয়ার রেঞ্জার চাই যে আমার সাথে সবার আগে উপরে উঠবে।  এবং অবশ্যই রেস্পন্সিবল এডাল্ট চাই।  আমি নিজেকে যথেষ্ট দায়িত্ববান বলেই মনে করি, না করারই বা কি। মদ খেয়ে গাড়ি চালাই না , স্পিড লিমিট +১০ এর বেশি ছাড়াই না (সে অবশ্য আপনারা বলতেই পারেন যে পুলিশের ভয়ে ) কিন্তু জিলিপির দোকান উপেক্ষা করে চলে কি আমি যাইনা , স্রেফ ভুঁড়ির কথা ভেবে।  তাছাড়া দায়িত্ব নিয়ে আমি নিজের প্লেট এর তন্দুরি শেষ করে অন্য লোকেরটা খাই , যাতে নষ্ট মস্ট না হয়।  তাই আমি তার সহায়ক রেঞ্জার হতে আগ্রহী হলাম।  কি বলব মশাই , আমায় বললে আমি এডাল্ট একজন কে চাই , তোমার সাথে যিনি  আছেন তোমার বাবা বুঝি , তা যাও বাবার সাথে দাঁড়াও, একলা এসো না।  রাগ হয় কিনা , অ্যাঁ এত বড় অপমান।  যা যা আমার দরকার নেই তোর সঙ্গী হওয়ার।


যাই বলো বাপু অদ্দিন আগে তো ভিড় ভাট্টা কম ছিলো খামোখা অত উপরে উঠে কষ্ট করার কি যে দরকার ছিলো!!

 যাই হোক এর কাছের শহর হলো ডিউরাঙ্গ। ছোট্ট ছিমছাম শহর।  পাশ দিয়ে নদী বইছে , ছু ছু ট্রেন মানে কয়লার ট্রেন যায় একটা।  নদীর ধার জলের শব্দ , ট্রেনের হুইসল মনে হয় এখানেই থেকে যেতাম যদি।  তারপরেই অবশ্য ছটপট করে প্রাণ। কফি চাই। কফি খেয়ে একটু জিরিয়ে ফের রওনা। পরের গন্তব্য আমাদের সান্টাফে। ছোট্ট স্প্যানিশ উপনিবেশের স্মৃতি। পৌঁছতে রাত হবে। সান্টাফে  নিয়ে আমার খুব আশা ভরসা ছিলো এমন না কিন্তু এমন চমৎকার লাগলো শহরটা কি বলব।  স্প্যানিশ আদলে তৈরী ঘর বাড়ি গির্জা। চমৎকার লাগে সব মিলিয়ে ঘুরে বেরাতে।তেমন ভিড় ভাট্টা নাই।  শহরটা পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখছি হটাৎ দেখি একদল মানুষ এসে নাচ গান করে জায়গাটা সরগরম করে দিলো। একটা ভুট্টা না কি যেন খেতে খেতে নাচ গান দেখতে শুনতে বেশ লাগছিলো।










বালি সাদা হয় এ জিনিস ভাবলে অবাক লাগে বইকি। আর আমরা পোঁছেছি সূর্যাস্তের ঠিক আগে আগে। ধূ ধূ সাদা বালির মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে আছি , সূর্য্য অস্ত যাচ্ছে , লাল রং ছড়াচ্ছে সাদা বালিতে।   অদ্ভুত সুন্দর একটা দৃশ্য। অনেক অনেক খন পর পার্ক বন্ধ হবার হাঁক দিতে আমরা বেরোলাম ওখান থেকে।





পরদিন সকালে আবার গেছি , কিন্তু উল্টো দিকের রাস্তায় যে এমন বিপদ  জানতো।  নিউ মেক্সিকো বর্ডার সিটি, তাইজন্য বর্ডার পেট্রোলিং পুলিশ চেক করছে সব গাড়িকে। আমরা দুজন কেউই পাসপোর্ট ক্যারি করছিলাম না এবং যেহেতু আমরা সিটিজেন না এখানকার তাই নাকি আমরা সবসময় পাসপোর্ট ক্যারি করতে বাধ্য। বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ করছে। কারণ আমাদের গাড়ি সাইড এ দাঁড়াতে বলেছে। জেলে পুরে দেবে নাকি? মোবাইলে টাওয়ার নেই. সফট কপিও ডাউনলোড করতে পারবো না।  কি রে বাবা আসে না কেন।  গাড়ির এসিও অন করার সাহস হচ্ছে না।  কারণ গাড়ির ইঞ্জিন স্টার্ট করলে যদি ভাবে পালাচ্ছি।  ভাবছি কাকে আবার কল করে বেইল নেব। অতঃপর একজন মুশকো লোক এসে গম্ভীর মুখে ড্রাইভিং লাইসেন্স ফেরত দিয়ে গেলো।  যাক এ যাত্রায় জেল এ ঢুকতে হলো না !!



ফেরার সময়টা আমিই চালালাম পুরোটা। ভারী মজা পেয়েছি।  কারণ সত্যি বলতে কি একটানা ৫৬০ মাইল ড্রাইভ আমি আগে করিনি আর সৌরভদা ভরসা করে না ছাড়লে হয়তো হতোই না।  নিউমেক্সিকো রুক্ষ প্রদেশ আর কলোরাডো সবুজ ফলে যেই নিউ মেক্সিকো পার হয়ে কলোরাডো ঢুকি যে ফিলিংটা হয় তা হলো , ট্রেন এ করে বিহার থেকে পশ্চিমবঙ্গের সীমানায় প্রবেশ করার। পাহাড় বাঁক সবুজ গাছ দেখে স্বস্তি ফেরে। না ফিরলে যে পরের বার বেরোনো যাবে না। (শেষ)

*********************************************************************************
এই লেখাটা অনেক দেরি করে দিলাম তাই দুঃখিত যারা অপেক্ষা করছিলেন/করছিলে।  নতুন লেখা আসবে( ইয়েলোস্টোন ঘুরতে গেছিলাম আর সে গপ্পো শোনানোর জন্য প্রাণ চটপট করছে ) তাই এটা শেষ করতেই হতো এবং শেষ হলো :)

Monday, July 4, 2016

ঘোরাঘুরি ( নিউ মেক্সিকো এবং অন্যান্য )

মাঝে মাঝে যে প্রানটা কেন ছটপট করে ওঠে বোঝা যায় না।  ভুল বললাম, দিব্ব্যি বোঝা যায়। আমরা কারনটা এড়িয়ে যাই। নিজেকে ঠকানো এতই সোজা নাকি! ব্যাস তখন তামাম দুনিয়ার সব ভালো জিনিসেও সুখ আসে না। তা আমি নিজেকে ঠকাচ্ছিলামনা , আমি জানতাম আমার মন কেন উচাটন। আমার একটা ঘুরতে যাওয়ার প্রয়োজন। নিজের মত করে। কিন্তু আমার নিজের গাড়ি নেই এখানে, আমি যখন তখন হুটহাট বেরোতে পারিনা। আর রেন্ট নিয়ে বেরোনো যায় কিন্তু সবাই মিলে বড়ই  হাঁ হাঁ করলো। কারণ তারা সুহৃদ , আমার যেহেতু প্র্যাকটিস কম তাই এতো দূর যাওয়ার রিস্ক নেওয়াটা মূর্খের এডভেঞ্চার। অবশ্য এডভেঞ্চার তথাকথিত মূর্খেরাই করে। যাই হোক আমার তো সে ভয়ানক অবস্থা।  মানে ঠিক বোঝাতে পারবনা কেমন কিন্তু আমার খালি মনে হচ্ছিলো আমি আটকা পরেআছি । রোজ অফিসে কাজ করতে করতে , খেতে বসে , ঘুমতে যাবার আগে একলা হাঁটলে স্বপ্ন দেখছি আমি লং ড্রাইভ এ বেড়িয়েছি। সামনে লম্বা একটা রাস্তা , আমি চলেছি। তা অবশেষে আর এক মক্কেল জুটলো।  লং উইকেন্ড এ ঘুরতে যাব। এবং কথা হলো বেশিরভাগ সময় গাড়ি আমি চালাবো। যাব ডিউরাঙ্গো , মেসা ভার্ডে , সান্টা ফে আর নিউ মেক্সিকো।
শুক্রবার তায় লং উইকেন্ড। বিকেল বিকেল বেরোতে পারব আশা ছিল। তা না করেও বা উপায় কি , ডিউরাঙ্গো পৌঁছতে সাত ঘন্টা অন্তত লাগবে।  ১২টায় না পৌঁছলে পরের দিন সকালে বেরিয়ে ঘুরতে যাওয়া চাপ। তো গাড়ি তুলে , মালপত্তর চাপিয়ে সওয়া চারটে নাগাদ বেরোনো হলো।  শুরুটা বন্ধুটা করলো।  খানিক যেতে না যেতেই দেখি বৃষ্টি শুরু হয়েছে , কেস করেছে।  বৃষ্টি দেখতে ভালো , ভিজতে ভালো , চাষে ভালো কিন্তু বেড়ানোর সঙ্গী হলে মুশকিল। এখানে মেঘ গুলো ছোটবেলায় দেখা কার্টুন এর বা ছবির বই এর  মেঘ এর মতন। মানে এই  একটা মেঘ কালো করে বৃষ্টি ঢালছে ১০মাইল পরে সেই মেঘের দম ফুড়ুৎ , সে জায়গা হয়তো খটখটে। বেশ জিপসি জিপসি ভাব আছে , আমাদের মতন দলবল নিয়ে সংসার করা টাইপ না।  তাই কিঞ্চিৎ ভরসা ছিলই।  তাই হলো। ঘন্টা খানেক পর আমি যখন শুরু করলাম দেখি দিব্যি মেঘ গুলো নিজেদের মধ্যে খুচরা আড্ডা মারছে আর এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে।  একটু আগেকার মুখ গোমড়া করা কি ঝগড়াঝাটির লেশ নেই।  সোজা রাস্তা , দুপাশে খোলা মাঠ আর দূরে দেখি একটা চমৎকার রামধনু।  অরোরা বেরিয়ালিস টাইপ দেখতে রামধনুটা ( ইয়ে মানে অরোরা বেরিয়ালিস আমি দেখিনি , কিন্তু ঐ   রামধনুটার নাম অমনিই মনে এসেছিলো কেন কে জানে। )





এই রামধনুটা খানিকটা আমাদের সঙ্গ দিলো, তারপর তার চা খাওয়ার সময় হতেই ,সূর্য্য কে হোস্ট এর ভূমিকা দিয়ে ধাঁ। সূর্য্য এত চাপ নেয় না , ব্যস্ত মানুষ থুড়ি সূর্য্য স্র্রেফ বলে দিলো বাপু , আমার সাথে এলে অত রঙের খেলা দেখতে পারবনা এখন , স্রেফ আমার পেটেন্ট গোধূলি দেখাবো , কেমন করে টুপ করে সন্ধ্যে হবে তা দেখবে , and that's it .আমার তো তাতে আপত্তি নেই, কখনো মেঘেদের হুল্লোড় , কখনো ঝগড়া , কখনও রং বেরঙের নক্সা এই দেখবো বলেই তো বেরিয়ে পড়তে চেয়েছি।




এই খানে রাস্তাটা সিঙ্গল  লেন। তাই ওভারটেক করতে হলে নির্দিষ্ট জায়গায় , গাড়ি আর স্পিড বুঝে করাই দস্তুর।  তাই করছিলাম , খালি একটা গাড়ি খুব জ্বলছিলো , ঠিক জায়গা গুলো স্পিড বাড়াচ্ছিল শেষ মেস ওদিকে গাড়ি নেই দেখে ,যে জায়গায় ওভারটেক করা যায় না ( মানে সলিড লাইন রয়েছে)  তেমন জায়গায় স্পিড তুলে সামনেরটাকে কাটালাম।  পাশ থেকে সৌরভডা হাঁ হাঁ করছে , "কি করিস কি করিস, ভাই তুই আজ টিকিট খাবি" ইত্যাদি উপেক্ষা করেই।  তারপর তাকে পার করে হাসি এবং ঠিক একইরকম ভাবে তাকে জ্বালানো।



একটু পর গাড়ি পাহাড়ি রাস্তায় পরলো। এখানে বলা ভালো পাহাড়ি রাস্তা মানে দাজির্লিং এর ঐ ভয়ানক রাস্তার মতন মোটেও না , তাহলে আমি হয়ত পারতাম না।  কিন্তু এটাও বেশ সরু, বৃষ্টি শুরু হয়েছে আবার।  অন্ধকার নেমে আসছে দ্রুত । অসুবিধে হচ্ছিলো কিন্তু চালাতে পারছিলাম । স্পীড কমে গেছিলো , পিছনকার সব গাড়ি সুযোগ পেলেই পেরিয়ে যাচ্ছিল তবে তাতে কি , পাশের ঝুপ্সি গাছ , আবছা হয়ে আশা পাহাড় , অঝোর বৃষ্টি সঙ্গ দিচ্ছিলো , চ্যালেঞ্জ দিচ্ছিলো কিন্তু সে চ্যালেঞ্জ অনেকটা ছোটো বেয়ে প্রথম সাইকেল কিংবা সাঁতার শেখার সময় দাদারা যেরকম দেয় , শিখতে পারার জন্য চ্যালেঞ্জ। আমি এগিয়ে চলছিলাম।
মাঝে একবার তেল নিতে থামা হলো।  তারপর হোটেলে বলে দেওয়া হলো আমাদের দেরি হবে। সাড়ে ১২টার সময় পৌঁছলাম ডিউরাঙ্গো।  (ক্রমশঃ )




Wednesday, June 15, 2016

আমাচু

এভরিথিং কামস উইথ প্রাইস কথাটা আমি আর নতুন করে কি বলব।  ব্লগ এ পাঠকের সংখ্যা বাড়ার বদলে যে কমছে সে কি আমি মূল্য দিয়ে খরিদ করিনি।  দিনের পর দিন ফুককুড়ি করে কাটাই , অফুরান সময় বরবাদ করি সেই মূল্যেই এটা কেনা। একটা  দিলাম।  একবার মাথায় ভূতচেপেছিল রূপকথা লেখার সে সময়কার। তেমন দাঁড়ায়নি তাও যারা পড়েন যদি একটু মতামত দেন।
******************************************************************************

 সে এক দেশ ছিল নাম সর্গিরি। সেখানে গোলা ভরা ধান ছিলো , খাল বিলে মাছ ছিল, মোবাইল এ টাওয়ার ছিল, ইন্টারনেট এ স্পিড ছিল, রাস্তায় জ্যাম, খানাখন্দ কিচ্ছুটি  ছিল না।  কিন্তু আমাচু  এর মনে সুখ ছিল না. থাকবে কি করে তার যে নির্বাসন চলছে। হয়ত ভাবছ  নির্বাসন দেওয়া হয়েছে বলে সে বেজায় বাজে ছেলে, ইস্কুলে পড়া  না করা, কুকুরের লেজ এ পটকা ফাটানো ছেলে। তাহলে বাপু রোসো  একটু, আগে পুরোটা বলি কেন এমন হলো তার।আমাচু এর দেশ গোরামুর এর অদ্ভূত এক নিয়ম ছিল, পড়াশোনা করে আমরা যেমন চাকরি বাকরি করি ওদের দেশে নিয়ম ছিলো রাজার সেনাদলে নাম লেখাতে হবে। সেই সেনাদলে তোমাকে যুদ্ধ করতে হতে পারে রাজার হয়ে, সে রাজা যতই ভুল করুক, কিচ্ছুটি  বলা যাবে না, কিংবা রাজার যা আদেশ দেবে তাই করতে হবে।ভাবো একবার।  তোমার ইচ্ছে তুমি গিটার বাজাবে তা না তোমাকে চাষ করতে যেতে বললো  রাজা।তোমাকে তাই যেতে হবে।আমাচু ছিলো  বেজায় ভিতু আর কুঁড়ে।  তাই রাজা তাকে হুকুম দিল 'যাও তুমি ওই পূব দিকের যে প্রকান্ড মাঠটা  আছে সেখানে গরু চড়াও'। সে বেচারা আর কি করে তাই গেলো  করতে।ভাবছ বুঝি গরু চড়ানো  মজার কাজ মোটেই তেমন না , প্রায় মরুভূমির মত কড়া  রোদ সেখানে। তারমধ্যে সাপখোপে ভরা জায়গা। তবু আমাচু মন দিয়ে করত. কারণ ও সত্যি যে আর কিচ্ছুটি  করতে পারেনা। প্রথম প্রথম গরুগুলো জঙ্গলে হারিয়ে যেত, যেখানে সেখানে গোবরের নাদা ফেলে একাকার করত, কিন্তু আস্তে আস্তে আমাচু শিখে নিয়েছে কি করে গরুগুলোকে এক জায়গায় রাখা যায়, কি করে গরুর দুধ বাড়াতে হয়।  গরুপ্রধান ও খুব খুশি। খালি সুখ নেই আমাচুর মনে, থাকেই বা কি করে,চারিদিকে একটা জনপ্রাণী নেই, কাহাতক গরুদের  সাথে কথা বলে তাদের যত্ন আত্তি  করে দিন কাটে।  এমন সময় একদিন জঙ্গল পেরিয়ে, তারপর যে বড় মাঠটা  আছে সে মাঠ পেরোলে  যে গ্রামটা আছে, যার নাম কিরিমুরু  সেখানের লোকেরা এদিকে ঘুরতে এলো।আমাচু তো ভারী খুশি। ওদের সাথে গল্প গুজব করে তবু কটা দিন ভালই কাটবে ভেবে। তা কাটলও কটা  দিন মন্দ না।আমাচুরের ব্যবহারে খুশি হয়ে সক্কলে জানালো যে ওকে কিরিমুরু গ্রামের সাথে যোগাযোগ রাখতেই হবে। এদিকে ওই জঙ্গলে তো ইন্টারনেট নেই, তবে উপায়?কারণ  ওই দলের সাথেই আসা এনাকিনি নামের মিষ্টি মেয়েটাতো ওর জন্যে অপেক্ষা করে থাকবে। আমাচু  তখন করলো কি কাঠকুটো জড়ো  করে একটা নৌকো বানালো।  তারপর অনেক কষ্টে মাঝে মাঝে গিয়ে এনাকিনির সাথে দেখা করে গল্প করে আসত। এদিকে হয়েছে কি , গরুপ্রধান আমাচুরের  এই এডভেঞ্চার টের  পেয়ে গেলো।  সে লোকটা ভারী হিংসুটে, সে রাজামশাই কে জানালো, আমাচু  নিয়ম ভেঙ্গেছে।ও ব্যাটা ভুলে গেছে যে এই দেশে যা কখনও  ঘটেনি তা করাই হলো অন্যায়। আমাচু  তেমন কাজ করেছে। নিজের সীমানার বাইরে ও কিনা পা রেখেছে তাও এতবড় স্পর্ধা আমাদের পথ না থাকায় নিজেই নিজের পথ তৈরি করেছে! এদিকে রাজা পড়লেন মুশকিলে।  আমাচুকে মেরে ফেলা যায়  বা নির্বাসন দেওয়া যায় কিন্তু আজকাল আবার রাজ্যে বিদ্রোহ দেখা যাচ্ছে এদিক সেদিক , যদি আমাচুর কথা তাদের কানে ওঠে মুশকিল হয়ে যাবে। রাজামশাই বুদ্ধি খাটিয়ে আমচুকে বলল 'সর্গিরি দেশে  গরু গুলো চড়ানো শুনেছি ভারী মুশকিল, তুমি তো এ কাজে বেশ দক্ষ হয়েছ তাই যাও ওই দেশে গিয়ে গরু চরাও'।আমাচু  পড়ল বিপদে। কি করে আর , এনাকিনি কে বলে গেল যত্ততাড়াতাড়ি পারে সে ফিরবে। দিন যায় রাত যায়, আমাচুর  ফেরার দিন আর আসে না। রাজা খালি বলে না না এখনি আসবে কি। সর্গিলি থেকে কিরিমুরু গ্রামে নৌকো করে যাওয়া যায় না। সে অনেক দূরের  পথ। মাঝে পাহাড়, নদী মরুভূমি, ঠান্ডা সমুদ্র সব পরবে।  এখন উপায়! শেষ মেস  আর না পেরে আমাচু নাইটেঙ্গেল পাখিটার কাছেযাবে স্থির  করলো ।  সেই যে নাইটেঙ্গেল পাখিটা, মনে আছে তো।  সারা রাত শিশিরে ভিজে যে বুকের উষ্ণতা দিয়ে রাজকুমারির জন্যে একটা লাল গোলাপ ফুটিয়ে দিয়েছিল।  সেই নাইটেঙ্গেল। সবাই তোমরা জানো  বটে যে সে মরে গেছিলো , আসলে উষ্ণতার দেবতা ওর কাজে খুশি হয়ে ওকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল আর বর দিয়েছিলো  যে ও  হবে তাদের রাজা যারা এখনো ভালোবাসে। কারণ তাদের সবার থেকে উষ্ণতা নিয়েই নাইটেঙ্গেল প্রাণ ফিরে পেয়েছে।  আমাচু  জানে না কোথায় থাকে এই নাইটেঙ্গেল । আমাচু  বেড়িয়ে  পড়ল নাইটেঙ্গেলকে খুঁজতে। বড্ড শীত পড়েছে। আমাচু  গরু চড়ায় ,ওর কাছে গাড়ি ঘোড়া  কিছু নেই. কোথায় খুজবে নাইটেঙ্গেলকে। কিন্তু  নাইটেঙ্গেলকে আজ যে ওর বড্ড দরকার। আমাচু  পেলেট  নদীর ধারে  যে মস্ত ঝাঁকড়া গাছ আছে সেখানে গেলো।  সেখানে টুই পাখি আর টিটিটি  পাখি মন দিয়ে গান ধরেছে। কিচ কিচ পাখি ,ক্যাকাও এর সাথে কি একটা বিষয়ে গম্ভীর আলোচনা করছে। আসেপাশে আরো হাজারও পাখির মেলা। আমাচু  জিগ্গেস করলো তোমরা কেউ কিং নাইটেঙ্গেলকে দেখেছ? সব পাখি সমস্বরে জানালো কেউ দেখেনি। কেউ দেখেনি। আমাচু  তখন পিসিং সমুদ্রের ধরে বসে থাকা  সিগাল পাখি পককম  কে জিগ্গেস করলো "সী  গাল তুমি তো কত্ত পাখিকে দেখেছ যারা শীতকালে উড়ে যায় ওই দূর দেশে তুমি নাইটেঙ্গেলকে দেখোনি?' পককম  গম্ভীর ভাবে একখানা মাছ চিবুতে চিবুতে  জানালো সেও দেখেনি। মনের দুক্ষে আমাচু  গেলো  ঈভান পাহাড়ের চুড়ায় , কিন্তু সেখানে বরফে ঢাকা সব, কেউ কথাও নেই। আমাচু  আর কি করে ফিরতে লাগলো। খানিক দূর এসে ঠান্ডায় আমাচুর  নাকের ডগা অসার হয়ে গেলো। সস্তার টুপি  আর দস্তানা ভেদ করে কান আর হাত ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। ছেড়া  জুতো  ভেদ করে বরফের কুচি ঢুকে যাচ্ছে পায়ের মধ্যে। খিদেয়  তেষ্টায়  ঠান্ডায় আমাচুর প্রায় বেঁহুশ অবস্থা তখন। হটাৎ সুইটুইটুই সুইটুইটুই করে ভেসে এলো একটা স্বর।কিং নাইটেঙ্গেলএসেছে! 'আমাচু  , ওঠো দেখো আমি এসেছি' আমাচু  খুশিতে ক্লান্তিতে কেঁদে ফেলল।
'কেঁদনা আমাচু , তুমি ভারী ভালো ছেলে আমি জানি। এনাকিনি তোমার অপেক্ষায় আছে যাবে না তুমি'?
আমাচু  কাঁদতে কাঁদতে জানালো এনাকিনির কাছে ফিরতে গেলে ওদের দেশের রাজা ওকে কয়েদ করবে।  রাজা কিরিমুরু গ্রামের সক্কলকে বশ  করেছে, তাই কেউ চায়না এনাকিনি আর আমাচুর  বিয়ে হোক। ওদের ওরা একসাথে থাকতে দেবে না. ও এনাকিনিকে সর্গিলিতে আনতেও পারবে না , রাজার সেনারা সীমান্ত পাহারা দিচ্ছে এখন উপায়। এনাকিনির কাছে ও কেমন করে পৌঁছবে ?
কিং নাইটেঙ্গেল  বলল ও একটা বর দিয়ে  আমাচুকে কে পাখি বানিয়ে দিতে পারে কিন্তু আমাচুকে ঠান্ডা পিসিং সাগর পেরোতে হবে। নাইটেঙ্গেল  পাখি বর দিয়ে খালি নাইটেঙ্গেল পাখিই বানাতে পারে। যদি আমাচু পিসিং সাগর পৌঁছতে  গিয়ে জমে যায় তবে নাইটেঙ্গেল কিছুই করতে পারবেনা।  তবে আরো একটা উপায় আছে।  এনাকিনি যদি খুব খুব মন দিয়ে চায় আমাচুকে  দেখতে তবে এনাকিনির উষ্ণতায় পিসিং সাগরের ঠান্ডা ও কেটে যাবে।  কিন্তু এনাকিনি কে এক মুহুর্তও অন্য দিকে মন দিলে হবে না, তাহলেই পিসিং সাগরের ঠান্ডায় আমাচু পাথর হয়ে যাবে। কিন্তু পাখি হয়ে পৌঁছলে এনাকিনি আমচু কে চিনবে কেমন করে? নাইটেঙ্গেল জানালো সে উপায় আছে কিরিমুরু গ্রামে পৌঁছনোর  পর ভয় না পেয়ে রাজাকে কাছে দাঁড়িয়ে জানাতে হবে রাজা অন্যায় করেছে, আমাচু তাহলেই মানুষ হয়ে যাবে, আর কিরিমুরুর লোকেরাও রাজার বশ  থেকে বেরিয়ে আসবে।  এদিকে এনাকিনি তো এমনিতেই সারাদিন মনমরা হয়ে থাকে আর আমাচুর  কথা ভাবে। আমাচু জানে , আমচু তাই এককথায় রাজি হয়ে গেল। নাইটেঙ্গেল বললো  'বেশ , আজ  তুমি এমনিতেই ক্লান্ত, গিয়ে ঘুমিয়ে পর, কাল সকালেই রওনা  দিও। পরের দিন সক্কাল বেলা আমচু দেখল সে নাইটেঙ্গেল  পাখি হয়ে গেছে। আর কি তর সয়।  উড়তে থাক উড়তে থাক। পাহাড় , নদী মরুভূমি পেরিয়ে আমচু এলো পিসিং সাগরের সামনে। চারিদিকে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া  দিছে। বরফ পড়ছে  সমানে , সূর্যের নাম গন্ধ নেই কোথাও। মনে মনে বলল আমচু এনাকিনি আমি জানি তুমি চাইছ আমি যাতে আবার কিরিমুরু গ্রামে তোমার সামনে হাজির হই। তুমি খালি সেটাই চাও, আর বলো মনে মনে ঘিরে থাকো  যাতে পিসিং সাগরের ঠান্ডা দৈত্য আমায় না ছুঁতে পারে। এনাকিনি শুনতে  পেল সেকথা সেইই দূর কিরিমুরুতে বসেও।  এক মনে যা বলা হয় তাই ঠিক পৌঁছে যায় সে তো তোমরা জানই। এনাকিনি তখন দূরের  জঙ্গলের পাশে গিয়ে একমনে বলতে লাগলো 'আমাচু  যেন পৌঁছে  যায়, পিসিং সাগরের ঠান্ডা দৈত্য যেন ছুঁতে  না পারে আমাচুকে '। এদিকে হয়েছিল কি রাজামশাই তো সবাইকে বশ করে রেখেছিলো  , এনাকিনির মা বাবাকেও বশ করে রেখেছিল।  এনাকিনি যখন একমনে ডাকছে , এনাকিনির মা এসে এনাকিনিকে খুব বকাবকি করতে লাগলোকেন এনাকিনি কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বেড়িয়েছে , কেন এখানে আমাচুর  জন্যে কাঁদতে এসেছে, এনাকিনি কি জানে না, আমাচু  খারাপ, আমাচুকে নিয়ে সবাই তামাশা করে। গরুপ্রধান এর ছেলেই তো আছে, এনাকিনিকে বিয়ে করার জন্যে।তাছাড়া আমাচু রাজার প্রিয় না , আমাচু  খারাপ কারণ আমাচু  যা নিয়ম তা না মেন মেনে এনাকিনিকে ভালোবেসেছে। এনাকিনি এইসব কথায় হটাৎ মনসংযোগ  হারিয়ে ফেলে। এদিকে আমাচু  মাঝ সমুদ্রে তখন  , চারিদিকে হু  হু করা ঠান্ডা বাতাস। ঠান্ডার দৈত্যটা ছো মারবে বলে এগিয়ে আসছে। আমাচুকে ঘিরে থাকা উষ্ণতা ক্রমশ কমে যাচ্ছে। আমাচুর  ডানা  পাথর হয়ে যাচ্ছে।
'এনাএএএকিনই' মনে মনে চেঁচিয়ে  উঠলো আমাচু। আমাচু  আর পারছে না। সব শক্তি একাকার করে ঠান্ডার দৈত্যের হাত এড়াতে চাইছে আমাচু। যে গাছটার  নিচে বসে এনাকিনি আমাচুকে ডাকছিল সেই গাছটা ফিসফিসিয়ে বল , 'এনাকিনি, এনাকিনি ,মিষ্টি মেয়ে , আমাচুকে ঘিরে রাখো। তোমার মা এখন রাজার বশে আমাচু  এসে সব ঠিক করে দেবে।' এনাকিনির হুশ ফিরল , তারাতারি আবার চোখ বুজে আমাচুকে ডাকতে থাকলো। আমাচু তখন প্রায় দৈত্যের কবলে। আমাচুর  শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে। কিন্তু তখন পাথর হয়ে যায়নি আমাচু। এনাকিনির উষ্ণতা একটু একটু করে জ্ঞান ফিরিয়ে আনলো আমচুর , তলিয়ে যাবার আগে উড়ে চলল কিরিমারুর পথে আবার। কিন্তু ছোট্ট পাখি সে এখন, এনাকিনির উষ্ণতায় এখনো ঠান্ডার দৈত্য ওকে পাথর করে দেয়নি , কিন্তু ছোট্ট শরীরে আমাচু  আর বল পাচ্ছে  না। আমচুর ঘুম পাচ্ছে ,  ৩দিন কিচ্ছু  না খেয়ে সে উড়ছে এখনো একদিনের রাস্তা বাকি। এমন সময় আমাচু দেখল একটা পীচ ফল কে যেন ওর ঠোটে ধরল। অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে একঝাঁক  পাখি , ওরা এইসময় শীতের দেশ থেকে গরমের দেশে যায় ওদের নাম  দিংকানো।  ওদেরই  একজন  একজন  নিজের ঠোট  থেকে বাড়িয়ে দিয়েছে একটা ফল।
'আমাচু  ছোট্ট  পাখি , তোমার কথা আমরা জানি ,আমরা সবাই আছি তোমার সাথে'  ---কিচির মিচির করে জানালো ওরা।
আরও একদিন এক রাত উড়ে গোরামুর দেশে পৌঁছলো  যখন অর আর একফোটাও শক্তি বাকি নেই এইরত্তি শরীরে। কিন্তু আমাচুর  ওই বন্ধুরা, দিংকানোরা  তারপর  গোরামুর  দেশের গাছেরা  আমচুকে ভোলেনি।  গাছের দিল আশ্রয়, পাখিরা দিলো  খাবার, নদী দিল জল।  আমাচু  সুস্থ হয়ে সোজা উড়ে গেলো  রাজার কাছে।  একরত্তি পাখিটা গলা ফুলিয়ে জানিয়ে দিল রাজাকে রাজা আমাচুর  সাথে অন্যায় করেছে। সে এনাকিনিকে বিয়ে করবে আর কিরিমুরু গ্রামেই থাকবে। রাজা ওই খুদে পাখিরসাহসে ভয় পেয়ে গেল। যেই না ভয় পাওয়া, সব লোকেরা রাজার বশ মুক্ত হয়ে গেল, আর আমাচুও মানুষ হয়ে গেল আবার। তারপর আর কি দুজনে বিয়ে করে একসাথে সুখে দিন কাটাতে লাগলো। কিরিমুরু গ্রামের সক্কলে সে বিয়ের ভোজে হাজির ছিল। আর এসেছিল দিংকানোরা , টুই পাখি আর টিটিটি  পাখি কিচ কিচ পাখি ,ক্যাকাও ,পককম।  কিং নাইটেঙ্গেল এর এর অবশ্য ভোজ এ আসা হয়নি ওকে আর এক জায়গায় যেতে হয়েছিল কিনা । সে অন্য গল্প ,আমাচুর ভোজের খাওয়া  শেষ হোক তারপর বলব তোমাদের।



Tuesday, June 7, 2016

একলা পথে ...(বাকিটুকু)

শুরুতেই মাপ চাইছি , অনেকদিন পর আবার পরের পর্ব লিখছি তাই। বেশি বাকি নেই , আগেই শেষ করা উচিত ছিলো।

******************************************************************

 ...আবার একটা মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলে এলাম। নদীর ঘাটে গিয়ে দেখি তখনো লোক হয়নি তাই এখন ভটভটি ছাড়বে। না নদীর ধরে ঘটে একা বসে রইলাম। আমার তাড়া নেই।  একজন দুজন করে লোক হচ্ছিলো। সব ৪-৬ জনের দোল. আমি একা তাই ভরসা আছে কথাও না কথাও ঢুকে যাব।  এক দলের এক মাঝবয়েসী লোক , বেশ একটা নেতা নেতা ভাব আছে,  দেখি মাঝির সাথে দরাদরি করতে শুরু করলো। মাথা পিছু ১৫ টাকার পরিবর্তে ২৫ টাকা করে দিলে সে আমাদের নিয়ে যাবে।নেতামষায় আর তার সঙ্গী ভদ্রলোক দুজনেই খানিক নেশা করেছেন , তবে নেতা মশাই এর অবস্থা কিঞ্চিত অস্থিতিমূলক।ভটভটিতে এক মহিলাও ছিলেন , আলগা চটক আছে। তাকে দেখে তো নেতা মশাই এর নেশা এবং অস্তির অবস্থা বেড়ে গেলো। হটাৎ লম্বা হয়ে নৌকোয় শুয়ে পড়লেন। সঙ্গী বললেন " কিরে কি হলো? তুই ঘুমোনোর জন্য এলি নাকি " ?
-তুই থাম।  বরং একটা গান কর।
সঙ্গী হাঁ। নেতা মশাই আবার বললেন , " জানিস না রাজেশ খান্না যখন শুয়ে ছিলো শর্মিলা ঠাকুর গান গাইছিলো '!
কে যে রাজেশ খান্না কে যে সর্মিলা ঠাকুর পুরো ঘেঁটে ঘ।  সঙ্গীর অবস্থা করুন। মেয়েটি মুচকি হাসলো। নৌকো এগিয়ে চলেছে।ওদিকটা বাংলাদেশ এদিকটা ভারত। আমার বাংলাদেশ নিয়ে তেমন কোনো টান বা  নস্টালজিয়া নেই , তবু অদ্ভূত একটা মনের ভাব হলো।  খানিক দূরে তিন নদীর মোহনা। জলঢাকা , ইছামতি আর একটার কি নাম ছিল ভুলে গেছি। খানিক নদীর উপর ঘুরে ফেরা। চা খেতে সেইচা এর দোকানেই আবার।  খিদে পাচ্ছিল , কিন্তু কোনো খাবারই মন:পূত  হচ্ছিলনা। আরো খানিকক্ষণ থাকতে ইচ্ছে করছে।  ওদিকে মেঘ করেছে  খুব।  থাকি আর একটু? বৃষ্টি হলে ভিজব না হয়। এই করে আরো খানিকক্ষণ কাটিয়ে বাইক স্টার্ট করার পর পরই তিনি এলেন। আকাশ ভাঙ্গা না হলে বেশ ঝমঝমিয়ে। তীরের ফলার মত বিধছে গায়ে।  তবু দাঁড়াতে ইচ্ছে করছে না।  রাস্তায় লোক কমে গেছে। গাছগুলো মাথা নেড়ে নেড়ে এনজয় করছে দিব্বি , ব্যাটা থাকতোরা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে। হু হু বাওয়া , আম্নুষ হওয়ার মজা মন্দ নাকি। দেখ দেখ কেমন সাঁই সাঁই  করে চলেছি আর  বিভিন্ন জায়গার বৃষ্টি দেখতে দেখতে ভিজতে ভিজতে যাচ্ছি।
কিঞ্চিত পরেই অবিশ্যি এ সুখ আর ছিলো না , বৃষ্টির দাপট বাড়ল , আমার পক্ষিরাজ থামলো।  গাড়ি থামিয়ে আপাদমস্তক ভেজা অবস্থায় এক কা এর দোকানে চা চাইলাম। লোকটা কিরম সন্দেহ জনক দৃষ্টিতে দেখছিল , যেন এরকম ভিজে কেউ যায়না।  যত্তসব জ্বালাধরানো ফোস্কার দল।
উহ বেজায় ঠান্ডা রে বাবা।  কাঁপতে কাঁপতে  রওনা দিলাম।  

Wednesday, April 27, 2016

একলা পথে ...

আমার মাথার মধ্যে একটা পোকা আছে যেটা কিনা প্রায়ই নড়ে ওঠে। খাচ্ছি , অফিস যাচ্ছি , আড্ডা মারছি , বই পড়ছি সব ,  ওই , দিনকতক কোথাও না বেড়াতে গেলেই কিরকম অস্থির অস্থির লাগে। আমারপক্ষিরাজ মানে আমার পালসারটাও আস্তাবল মানেগ্যারাজে বন্দী থাকলেক্ষেপে যায়।  আর কেউ টের না পাক আমি পাই। তাই কোনো এক শনিবার না রবিবার দুম করে বেরিয়ে পরেছিলাম। মানে ঘুম থেকে উঠে দাঁত মাজতে মাজতে সিদ্ধান্ত ঘুরতে যাব , তো চালাও পানসি বেলঘরিয়া।
বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় অবধি ঠিক ছিলো গাদিয়াড়া যাব ,কিনতু হটাৎ  করেইমত বদলে টাকি।  টাকিতে লোকে পিকনিক করতে যায় বা ভাসান দেখতে।  আমার কিনতু টাকি যাওয়ার এক এবং একমাত্র কারণ ছিল ইছামতি। এমন সুন্দর নামের একটা নদী তাকে না দেখে থাকা কি ঠিক! নদীর বুঝি অভিমান হয়না।

বাইক এ তেল ভরা নেই --দূর  দেখা যাবে , রাস্তায় কি আর কিছু পাবোনা।  ...এহে ক্যামেরাটাও তো আমার কাছে নেই ---তাতে কি চোখের লেন্সটা তো আছে রে বাবা।  উফফ বয়স্ক লোকেদের মতো করিস না তো , চল তো ,যা হবে দেখা যাবে। কিছু খেয়ে বেরোতে বলেছিলেন বটে বাবা কিনতু আমি এমনিতেই যথেষ্ট দেরী করে ফেলেছি এরপর দেরী করলে রোদ উঠে যাবে। এয়ারপোর্ট এর জ্যাম কাটিয়ে মধ্যমগ্রাম পৌঁছলাম , স্পীড ৬০-৬৫ এর বেশি ওঠেনি তেমন। মধ্যমগ্রাম থেকে ডানদিকের বাদু যাবার রাস্তা ধরে এগোলাম, বারাসাত দিয়ে না গিয়ে।  রাস্তা মোটামুটি যেমন খারাপ হয় তেমনই , ভালো হবে এমন আশাও ছিল না। রাস্তা চিনিনা , এদিক সেদিক জিগ্গেস করে এগোচ্ছিলাম।  তা হটাৎ  একটা রাস্তা বেশ ভালো লেগে গেল. চারিদিকে প্রচুর গাছপালা রাস্তাটার , আর বেশ মসৃনও বটে।কিনতু ইনটুশ্যন  বলছে এ রাস্তা ভুল।  তবু ওই রাস্তা ধরেই এগোলাম। কিছুদূর গিয়ে আমার অনুভূতি  সত্যি করে রাস্তাটা ভুল প্রমানিত হলো। আমায় ঠিক প্রমান করলো মানে মারাত্মক ভাবে ঠিক প্রমান করলো।  রাস্তা বলে আর কিছু নেই।  একধারে ভেড়ি আর অন্যপাশে ইঁট  পাঁজা।  আর আমার চমত্কার মসৃন রাস্তা একটা মাটির রাস্তায় পরিনত হয়েছে। অত্যন্ত অসমান।  প্রচুর ধূলো উড়ছে। ভেড়ি দেখে আমায় থামতেই হলো।  জল দেখলেই আমি আরস্থির থাকতে পারি না।  একজন লোক মাছ ধরছে। "ও কাকা কি মাছ ধরছ?" , বেশ একটা "কুবের হে মাছ কিবা" স্টাইল নিয়ে জিগ্গেস করলাম।  লোকটা আমায় সম্পূর্ণ  উপেক্ষা করে উদাসীন হয়ে মাছ ধরতে লাগলো , কয়েকটা ছেড়ে দিলো।  ভাগ্যিস আসে পাশে কেউ নেই , এই বলে মনকে সান্ত্বনা দিয়ে আমি নিজের মনে ভেড়ির  জল , মাছেদের লাফালাফি , পাখিদের ওড়া উড়ি ,পোড়া ইঁটের  গন্ধ নাকে নিয়ে দেখতে লাগলাম। আহা বড্ড ভালো লাগছে।  টাকি  অবধি যাওয়ার কি খুব দরকার আছে. এখানেই দাঁড়িয়ে থাকি না কেন।
            হটাৎ  লোকটার মনে হয় আমায় ন্যালাখ্যাপার মত দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মায়া হলো।  আমার সাথে খানিক কথা বার্তা বললো।  কথা থেকে আসছি কোথায় যাব।  মানে সেই চিরন্তন বেসিক প্রশ্ন।  আমি অবশ্য দার্শনিক জবাব দেওয়ার রিস্ক নিইনি  , এ চত্বরে মেরে পুঁতে দিলে কেউ খবর পাবে না।  যাইহোক সে চিংড়ি মাছ ধরছে সে খবর শোনার পর আমার চটকাটা ভেঙ্গে গেছিলো। আবার বাইক স্টার্ট করলাম।  এহে বেজায় ধূলো। রাস্তা অতি খারাপ , আজ ফিরে পালসি কে চান করাতে হবে। এই সময় পুরো দুনিয়ার উপর রাগ হয়ে যায়। শালা বড্ড রোমান্টিসিজ্ম এর ভূত চেপেছিল  না তোমার।  নাও বোঝো এখন।
সাড়ে ১২টা  পৌনে একটা নাগাদ পৌঁছলাম শেষমেষ।
আমার পালসি কে একধারে দাঁড় করিয়ে রেখে চক্কর কাটা শুরু করেছি, হটাৎ   একটা ডাবওয়ালা কাম  ভ্যানওয়ালা এসে আমায় খুব উত্সাহের সাথে জিগ্যেস  করলো "কোথা থেকে আসছ  , বর্ডার দেখতে যাবে? বাইক তো যাবে না -- তা কোনো ব্যাপার না।  ক জন আছ  তোমরা?"
-"আমি একা। "
- "একা তো ভাই একটু বেশি ভাড়া  পরবে , তা তোমার থেকে বেশি নেব না তুমি আমায় ২০০ টাকা দিও। "
ধুস কোথায় ভাবলাম একাবোকা দেখে সাহায্য করতে এলো।  বুঝলে হে সবই give  এন্ড take . তাকে কাটিয়ে আমি এগোলাম খানিক।  এদিক সেদিক জেনে বুঝলাম বাইক  যায় বর্ডার কিংবা  মিনিসুন্দরবন অবধি তবে আই -কার্ড লাগে , তা আমার তো ড্রাইভিং লাইসেন্স আছেই।  মিনি সুন্দরবন আর কিছুই না কৃত্রিম ভাবে খানিকটা জায়গায় সুন্দরবন অঞ্চলের গাছপালা লাগানো হয়েছে।  টাকির আসল রাজবাড়ি ভেঙ্গে গেছে আর একটা আছে তবে তা দেখতে আমি একটা উত্সাহী না।  বস , বর্ডার মিনি সুন্দরবন সব হবে আমি আগে একটু ইছামতি দেখতে চাই. যার জন্যে আসা।  গেলাম নদীর ধারটায়। ঘটে কেউ নেই , বসলাম।  স্বপ্নের ইছামতির সাথে  স্বাভাবিক ভাবেই মিললনা।  না মিলুক।  এই ইছামতি আলাদা থাকবে আর স্বপ্নেরটাও থাকবে। এক বুড়ো মাঝি দাঁড় বেয়ে চলেছে।  খানিক আগেই শুনেছি , হাতেটানা  নৌকো বন্ধ।  চড়তে হলে ভটভটি চড়তে হবে , তাই দাঁড় টানা নৌকো দেখে খুব উত্সাহ নিয়ে ডাকলাম - "ও চাচাআআআ ,... নেবে একটু, একা আছি, কোনো ঝামেলা করব না। " কিনতু আবার সেই উদাসীনতা! আমাকে একটুও পাত্তা না দিয়ে বুড়ো  মাঝি তার নৌকো নিয়ে চলে গেল।  একটু নিলে কি এমন ক্ষতি হতো  . দূর দূর।  উঠে পড়লাম।  যাই একটু মিনি সুন্দরবনই দেখে আসি।  তার আগে এক কাপ চা পেলে মন্দ হয় না!
                                            আমার মুখের মধ্যে মনে হয় একটা অজ্ঞানতার চাপ আছে।  তাই আমায় বেশির ভাগ লোকেই জ্ঞান দিয়ে ওই অজ্ঞানতাটা মুছে দিতে চায়। এখানেও তার বিরূপ ঘটল না।  চা দোকানি  ভদ্রলোক বললেন - " কলকাতাআআ  থেকে  একা আসছ !এই বয়েসে বাইক  চালাচ্ছ ! না না খুব রিস্কি , একা একা এতদূর আসা বাইক  নিয়ে। " মনে মনে বললাম 'যতোটা ছোট ভাবছেন অতোটাও না , মেঘে মেঘে বেলা মন্দ হয়নি। ' মুখে বললাম " হ্যা কাকু এইতো চলে তো এলাম। "
- "কিসে পড় ?"
এটাও বাঁধা প্রশ্ন।  ওই যে অজ্ঞানতার ছাপ তার ফল মনে হয়। একবার একজনকে মরিয়া হয়ে বলেছিলাম "পড়িনা , ক্লাস সেভেন পাস করে এদিক সেদিক হাতের কাজ করি। " চাকরি করি বললে উল্টোদিকের লোকজন হয় অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মত করতে থাকে বা দর্জি হয়ে যায় , জুল জুল করে মাপতে থাকে , তাই আমি আজকাল আরবলিনা আমি কোনো এক বাতানুকূল  অফিসের শ্রমিক , লোকে গালভরা নাম যাই দিয়ে থাক না কেন।  বরং বলে দিই কিছু একটা যখন যেমন মনে আসে।  বললাম "ফার্স্ট ইয়ার এ পড়ি। " মানুষটা  খারাপ না , আমায় বললেন, " দেখো এদিক সেদিক ঘুরে।  বর্ডার মিনি সুন্দরবন,ভটভটিতে চড়বে তো চড়ো। বনধুদের  সাথে এলে আরো ভালো করতে।"  একা এসেও যে আমি খারাপ করিনি সে কথা তাঁকে না বলে আমার পক্ষিরাজ কে বললাম "চল তোকে মিনিসুন্দরবন ঘুড়িয়ে আনি । সুন্দরবন তো মনে হয়না যাওয়া হবে তোকে নিয়ে। "

মিনিসুন্দরবন  জায়গাটা ভালো।  কৃত্রিম ভাবে তৈরী হলেও , ভারী চমত্কার জায়গা। সুন্দরী গাছ ,মাঝে মাঝে পাখিরা উড়ছে, ডাকাডাকি করছে।  একটা জায়গায় ঝুম হয়ে কিছুক্ষণ বসে রইলাম খানিক।  হাঁটাহাঁটি করতেও দিব্যি লাগছিল। স্থানীয় কিছু মহিলারা খেজুর গুড় , রস আর কি কি যেন সব বিক্রি করছিল।  অনেকবার ধরে ডাকাডাকি করার পর দাঁড়িয়ে পরে বললাম " না গো দিদি , আমি খেজুর রস খাইনা , আর এখন এই চড়া রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে খেজুর গুড় খাওয়ার ইচ্ছাও নেই (এটা অবশ্য মনে মনে বলেছি )।"
-"নিয়ে যাও খেজুর গুড়  বাড়ির জন্য।"
তাতেও আমি ঘাড়  নেড়ে উদাস গলায় বললাম নাহ।  কি জানি কেন আমি কিছু না নিলেও তার আমাকে বেশ পছন্দ হয়েছিলো , হতে পারে আমি তার গুড়ের খাঁটিত্ব নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলিনি বলে কিংবা আমায় দেখে তার যাদবপুর  পড়তে যাওয়া ভাই এর কথা পরে গেছিল সেই জন্যে।  
-"গুড়  তুমি বানিয়েছ দিদি?"
-"নাহ তোমার জামাইবাবু , ও এইসব বানায় আমি খালি বিক্রি করি। "
-"কখনও  বাংলাদেশ গেছো ?"
- নাহ আমাদের কেউ তো ওখানে নেই খামোখা যাব কেন। "
তার সাথে আরও খানিক গল্প হলো।  তার ভাই যাদবপুরে পড়ে। সবসময় তো লোক আসে না , এইবার গরম পরে গেছে আর রসও  হবে না লোকও  হবে না।  আমায় বললো  "মুখটা তো শুকিয়ে গেছে একেবারে, খাওয়া দাওয়া করেছ কিছু? চট  করে মিথ্যে আমি বলতে পারিনা , বিশেষ করে এমন মায়া নিয়ে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে মিথ্যে আদৌ বলা যায় কিনা আমি জানিনা , তাই সত্যিটাই বললাম , এখানে তো খাওয়ার দোকান তেমন নেই , ফেরার পথে খেয়ে নেবো কিছু। বললো "  চলো  আমাদের বাড়ি কাছেই ,  ওখানে যাহোক দুটো মুখে দেবে।" সামান্য একটা জিনিসও কিনিনি আমি তার থেকে , তবু কে ভাবতে পেরেছিলো এমন অচেনা একজন  মানুষ তার মায়ার আঁচল  বিছিয়ে দেবে। আমি আমার জীবনে এরকম কত মানুষের কাছে যে ঋণী  আমি জানি না।  একবার কলেজে পড়ি  তখন।  প্রচন্ড এক গরমের দুপুরে কলেজ এর ক্লাস না করে মাঠে মাঠে ঘুরতে বেড়িয়ে ছিলাম।  রাস্তা ভুল করে তেষ্টায়  যখন ধুঁকছি , আমাদের হোস্টেল এ কাজ করতো  এমন একজন আমায় ডেকে  তার বাড়ি নিয়ে নিয়ে ঝকঝকে ঘটি ভরে ঠান্ডা জল দিয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে খেতে নিষেধ করেছিল , এবং জলের সঙ্গে খানকতক বাতাসা দিয়েছিল , শুধু জল খেতে নেই।  আমি এদের ভালবাসা কক্ষনো ফিরিয়ে দিতে যাইনি  কারণ আমার সে ক্ষমতা কোথায়।  খালি বুকের মধ্যে যখন অনেকটা ফাঁক  হয়ে যায় , বেড়িয়ে  পরি আমি জানি পথে ঘাটে  সে ফাঁক  বুজিয়ে দেওয়ার লোক আছে। (ক্রমশ) 

Saturday, April 16, 2016

বসন্তে বরফে

ধরা যাক শুক্রবারের রাত বৃষ্টি দিয়ে সুরু হয়েছে, এবং আপনি জানেন শনিবার ও রবিবার স্নো স্টর্ম এলার্ট আছে। ভরা বসন্তে। অবশ্যই শীতের দেশের  কথা হচ্ছে এখানে।  গাছ-টাছ গুলো পুরো  ঘেঁটে গেছে, বল ভাই ফুল ফোটাবো না ফোটাবো না।  ওসব ফুল ফুটুক না ফুটুক জাতীয় কাব্য করা পোষাচ্ছে না আমদের।  সারা শীত অপেক্ষা করে সবে একটু মাঞ্জা মারতে লেগেছি আর সেসময় এইসব ঝকমারি ভাল্লাগেনা সত্যি! তা আমি এসব কথা জানি কারণ আমার তো নির্বাণ লাভের বিশেষ বাকি নেই , আমি হত জন্মে কি ছিলাম কিঞ্চিত বুঝতে পারি , আগামী দিনের শিষ্য শিস্যাদের জন্য এগিয়ে রাখছি আর কি।  আমি আগের জন্মে গাছ ছিলাম , তাই এ জন্মে আমার এক জায়গায় থিতু হতে এত আপত্তি , বোর ভাবটা এখনো এজন্মেও আছে আর কি।  আর আমার রোদ উঠলেই যে এত ফূর্তি হয় তার কারণও ওই পেটুক মানুষ তো তাই আগের জন্মে কিসে খাবার দাবার বানানো যেতো সেটা এ জন্মেও মনে রেখে দিয়েছি আরকি। তো যা বলছিলাম , সকাল বেলা খামোখা ঘুম ভাঙ্গার যেদিন কারণ থাকবেনা সেদিনই তাড়াতাড়ি ঘুম ভাঙবে , আড্ডা মারার যখন কেউ থাকবেনা আড্ডা পাবে এসব তো চিরন্তন সমস্যা ও আজকাল আমি গায়ে মাখিনা। তাই চোখ মটকে , কম্বল চাপা দিয়ে ভাবছিলাম ঠিক কি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করলে শুধু  এবং শুধুমাত্র নাকটা বাইরে বেরিয়ে থাকবে, বাকি সমস্ত চোখ কান মাথা ঢাকা থাকবে। আর সেই সঙ্গে ফেসবুক আর চ্যাট কর্তে কোনো সমস্যা থাকবে না. তা উত্তর যে আসবেনা তা তো আমরা জানিই(অবশ্য বদলে তুমি বলে কে  আসার কথা সেও আসেনা) , কিন্তু এক বন্ধুকে খুব বেশি জ্বালাতন করায় একখান আইডিয়া দিলো অবিশ্যি।  ওই সেই হতোনা ছোটবেলায় কিছু জিনিস নিয়ে ঘ্যান ঘ্যান করলে হাতে একটা কিছু ধরিয়ে দিয়ে বলতো যাহ পালা এটা নিয়ে, বা কই দেখি কে আজকে তাড়াতাড়ি ঘুমোতে পারে বা কে বেশিক্ষন  চুপ থাকতে পারে সেরকম।  বলল স্নো পরছে যখন যাও না কেন একটা স্নো ম্যান বানাও না , আর শোনো গাজর দিও নাকে , তোমায় ভরসা নেই কাচকলা গুঁজে দিতে পারো। তা প্রথমে আমি বলেছিলাম যে আমি তো বাচ্ছা  ছেলে না , যে স্নো ম্যান বানাবো, সে তখন জ্বালাতনের হাত থেকে বাঁচতে মরিয়া , খুব উত্সাহ দিলো , আরে বাচ্চা বয়েসে কি তোমার ওখানে বরফ পড়ত ? ইত্যাদি ইত্যাদি।  তা বার আমি খেয়ে যাই , খেয়ে গেলামও ( ভালই হয়েছে স্বীকার করি অবশ্যি) জ্যাকেট জুতো গ্লাভস পড়ে  , বাড়িতে যে বাচ্চাটা থাকে তাকেও বললাম কিরে চল  যাবি নাকি। তার মা তো খচে ব্যোম , এই না টিনটিন ওকে আমায় এখন রেডি করাতে হবে। তা আমি তো প্রায় সন্ন্যাসীর লেভেল এর মানুষ , তাই নির্বিকার ভাবে বললাম তা করাও না , আমি অপেক্ষা করতে পারি , কিরে যাবি তো? স্নো ম্যান বানাবো কিন্তু আমি। ব্যাস আর কিছুর দরকার পরে কি।  দুই মক্কেল , বড়া মহারাজ ছোটা মহারাজ চলিলেন, সাগর থুড়ি বরফ সঙ্গমে। তা আমি যেমন বুদ্ধিমান , একখান জায়গায় অনেক স্নো জমা করে স্নো  ম্যান  রূপ দেবার চেস্টা করছিলাম। 
এমনটা শুরুতে আমি করছিলাম 

বাচ্ছাটাই বললো আরে টিনটিন এরকম না , স্নো  ম্যান বানাতে প্রথমে তোমায় একটা বড় আর একটা ছোট স্নো বল বানাতে হবে।  প্রথমে একটা স্নো  বল বানিয়ে রোল  করো  তাহলেই ওটা বড় হয়ে যাবে। আমি দেখলাম সত্যিই তাই। দূর দূর কত কম জেনেও যে মানুষ বাঁচে আমায় না দেখলে বোঝা মুশকিল। তো যাই হোক দুখানা স্নো বল হলো ছোটটিকে বড়র মাথায় বসানো হলো।  গাছের ডাল ভেঙ্গে হাত আর চোখ ও হলো।  কিন্তু ওই নাকেই  সমস্যা। আমার যেমন আমার বানানো স্নো ম্যান এর ও তাই হবে , স্বাভাবিক , কুছ নেহি তো থোড়া  থোড়া  তো হবেই। যতবার আমি গাজর গুঁজি ততবার সে পপাত চ।  এমন কল্লে রাগ ধরে না, দিয়েছি জোরে গুঁজে ব্যাস , আমার স্নো ম্যান এর মুন্ডুও গেলো।  এত সইতে পারে কখনও।  রাগ করে বললাম আমার ক্ষুদে সঙ্গীকে সব ব্যাটা এই গাজরের দোষ।  কিন্তু যথারীতি ছোটরা  জানে বেশি , আমায় বলল  না টিনটিন , আসলে এই স্নোটা তেমন স্ট্রং ছিলো  না। পরেরবার অবশ্য  ভালই হয়েছিলো।  


তারপর আমরা বরফে দৌড়াদৌড়ি করে স্নো  ফাইটও করেছি হু হু।  বসন্ত আসুক না আসুক কত্তা ফূর্তি  বেড়ে হয়েছে।



Wednesday, March 23, 2016

নানারকম (৮)

ধরুন আপনি বিদেশী রেস্তোরাতে খেতে গেছেন , চোখের সামনে থরে থরে সাজানো জিলিপী। লালচে হলুদ রসালো বস্তুটা দেখেই চোখ অবভিয়াসলি চকচক করে উঠবে। মেনুতে দেখি জিলিপীর নামও নিশান নেই।  ভাবলাম ডেকে জিগ্যেস করে ব্যাপারটা বুঝিয়ে নাম জেনে অর্ডার দেবখন। মধ্যপ্রাচ্যের দোকান এর হিসেব মেনে বেশ সুন্দরী একজন খাবার দাবার দিচ্ছিল।  তাকে এই বিষয়ে খানিকটা জ্ঞান দেওয়া তো ফু মশাই। বেশ ডেকে গুছিয়ে বলা হলো , ওই যে প্যাঁচানো , সোনালী বর্ণের বস্তুটি দেখা যাচ্ছে , ওটা আমাদের অতি প্রিয় একটি ইন্ডিয়ান মিষ্টি। তা ওই বস্তুটা আপনাদের ফ্লেভার এ কেমন হয় তা জানার বিশেষ আগ্রহ  হচ্ছে।  তা ও জিনিস কে বলেন কি আপনারা?
"ওহ ইউ মিন জালেবী "? 
আমাদের মুখের অবস্থা কেমন হয়েছিল সে বর্ণনা না দেওয়াই ভালো। 
খেতে গিয়েছিলাম জেরুজালেম বলে একটি রেস্টুরান্ট এ।  ছোট্ট , বাঁশ এর দিয়ে ঘেরা ছাউনি মতো করা।  দেখনদারির দিক থেকে ভারতবর্ষের যেকোনো পাহাড়ি এলাকার পাতি রেস্টুরেন্ট এর মতই। কেবল মাছি নেই ,আর প্লাস্টিক এর জগ নেই , যেটা এক্ষুনি উল্টে পরে একাকার হবে। আমরা অনেকজন ছিলাম তাই একটা গোল টেবিল বৈঠক এর মতই  বসে অর্ডার নিয়ে বিরাট চিন্তায় পরে গেলাম। তার কারণ অনেক কিছুই খেতে ইচ্ছে করছে।  শেষ মেষ আলাদা আলাদা অর্ডার করাই সাব্যস্ত হলো। আমি একটা কম্বিনেশন প্ল্যাটার নিয়েছিলাম।  তাতে ফালাফেল নাম একটা অতি সুস্বাদু খাবার থাকে  যেটা কিনা আমাদের আমাদের পৌকোড়ার মত খেতে অনেকটা। সেটার সাথে হামাস ডিপ থাকে। আর ছিল আঙুর পাতার একটা বস্তু।  খেতে মন্দ না।  আর থাকে অনেক কটা কাবাব আর পোলাও এর মত একটা ব্যাপার। 
এটা গুগল বাবুর থেকে ধার করা ছবি , আমি খেতে ব্যস্ত ছিলাম তাই ভালো ছবি তুলতে পারিনি 
এইটার নাম হলো ল্যাম্ব শ্যাঙ্ক ,আদতে পার্সিয়ান খাবার সম্ভবত 

এখানার নাম চিকেন Gyro



বাক্লাহামা বলে একটা মিষ্টি খেলাম , মশাই কি বলব দিল জান তর হয়ে গেল একেবারে। বেশি মিষ্টি খাইনি , একটা জিলিপি একটা বাক্লাহামা আর একটার নাম ভুলে গেছি ,  দেখা হিসেবে নাম দিলে  খেজুর স্যান্ডউইচ বলা যায়।
********************************************************************************

আমি যেখানে থাকি সে বাড়িতে একটা বাছা আছে যে মোটামুটি আমার বন্ধু স্থানীয়।  আমার বাচ্চাদের ততক্ষণ ভালো লাগে যতক্ষণ না তার বাবা মা তাদের প্রতিভার প্রদর্শন শুরু না করে। স্বাভাবিক বাচ্চা গুলোর সাথে আমার বরং বেশ জমেই যায়।  তো সেই ছেলেটার সাথে আমার যেহেতু বন্ধুত্বপূর্ণ  অবস্থান , তাই সে কার্পেট এ জল ঢাললে আমি ব্যাপারটা চেপে দেওয়ার চেষ্টা করি , সে মাঝে মাঝে চাঁদে বা মঙ্গলে রকেট ছাড়ে , আমি তার একমাত্র প্যাসেঞ্জার যাকে সে প্রাণ হাতে করে জায়গা দেয়।  এবং অবশ্যই যখন যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা হয় , এক আধটা বুলেট অর গায়ে লাগলেও (ইচ্ছে করে নয়রে ভাই , আমি পাষন্ড না) চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় করে না।  তো একদিন আমি কৌতূহলী হয়ে জিগ্যেস করেছিলাম , সারাক্ষণ যে তোমার রি দুটো  "গুড পিপল" আর "ব্যাড পিপল" এর ফাইট চলে , কেন? ভালোরাই তো জিতবে ?
"ওহ টিনটিন , আমি তোমাকে আমার মতো বুদ্ধিমান ভেবেছিলাম। যে ভালো যুদ্ধ করবে সেই জিতবে" ।
ঠিকই তো , ভালো খারাপ তো বিজয়ী বা বিজিত নির্ধারণ করেনা , যুদ্ধ করে , ক্ষমতা করে।  বাচ্ছারা চিরকালই বুদ্ধিমান হয়। 






Friday, March 4, 2016

ঘোরাঘুরি - হার্শী(2)

জীবন অনেকটা বাইক চালানোর মতো। হু হা স্পিড তুলে যাচ্ছ , আচমকা গর্ত , লাও , হয় ছিটকে পড়লে নয় কোনরকমে বেঁচে গেলে।হাঁ সাবধানী বাইক ওলা কি নেই আর , প্রচুর। অচেনা রাস্তায় ৪০ এর বেশি স্পিড তুলবেই না। আমি ওই প্রথম শ্রেণীতে পড়ি। বাইক  থেকে ছিটকে পড়ি , চোট্ পাই আবার অজানা রাস্তায় গাড়ি ছোটাই। অজানা রাস্তা আমায় গাছের ছায়া , নদীর জল দেয়, এবড়ো খেবড়ো রাস্তাও দেয়না এমন নয়। এত কথা বললাম কারণ হার্শী ঘোরার বাকিটুকু বলতে বসেছি কিনা। 
যাই হোক , হার্শীতে পৌঁছে , অনেক কেক , মিষ্টি (বাড়ির তৈরী বেকড সন্দেশ) আরো অনেককিছু সাঁটিয়ে দেখি অর্ণব দা , আর অনন্যাদি দুজনেই আমার জন্যে হরেক রকম গিফট এনে রেখেছে। আহা এই বয়েসেও বড়দিনের গিফট পেতে কি যে ভালো লাগে তা কি বলব। তা এমন দাদা দিদি কি আমার পাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু পেয়েছি তো :)।  
বেকড সন্দেশ 

হু হু বাওয়া , ছবি তুলে রেখেছি,  এক আধটাও সরানোর চান্স নেই 

আমরা দুটি ভাই যিশুর গান গাই 


 দেহে মনে বল জোগার করে বেরোনো হলো, অরুনাংশু দার বন্ধুকে নিয়ে আসা হলো। তারপর বাকি কটা  দিন যা আড্ডা হলো তা তো আর না বললেও চলে। এর মাঝে একদিন নর্থ আর সাউথ এর যে সিভিল ওয়ার  হয়েছিলো , সেই গেটিসবার্গ যাওয়া হলো। একটা জিনিস দেখে ভালো লাগে , বিজয়ী এবং বিজিত দুইয়ের জন্যই স্বারক রয়েছে।কেমন উত্তর দক্ষিন ঝগড়া করার পরেও মিলেমিশে আছে, আমাদের ভারত পাকিস্থান বাংলাদেশ এর বর্ডার মুছে যদি এমন একটা যুক্তরাষ্ট্র হত বেশ হত কিন্তু। তা হওয়ার না বোধহয়।  পারস্পরিক কারনহীন ঘৃনা কি আর যাওয়ার। 



গেটিসবার্গ যাওয়ার পথেই এদেশের আদি অধিবাসী আর বর্তমান অধিবাসী দের লড়াই এর গল্পটা জানা হলো। আগে ভাসা ভাসা  জানতাম। ব্রিটিশ উপনিবেশের একদল দন্ডপ্রাপ্ত আসামী জাহাজে করে ছেড়ে যাওয়া হয়।  ঠান্ডায় খিদেতে তাদের নরখাদক করে তুললেও শেষ রক্ষা হয়নি। সেই জাহাজের কেউই বাঁচেনি। তারপর আরো দু জাহাজ লোক আসে, আরো বেশ কিছুদিন পর. তার কয়েকজন টিকে যায়।তারপর আরো এবং তারাই ক্রমে শক্তিশালী হয়ে এদেশে আদি অধিবাসীদের মেরে তারায় , লুকিয়ে পরতে বাধ্য করে।  
গেটিসবার্গের যে জায়গায় লড়াই এ  উত্তরের লোক জিতে গেছিলো ( দক্ষিন নাকি একটা সময় অবদি জিতছিলো তারপর তাদের সেনাপতি ভাবলো আরে এত মেরেই এনেছি প্রায়, চলো সোজাসুজি চার্জ করা যাক, এদিকে গরুগুলো বোঝেনি পাহাড়ের নিচে আছে ওরা , ওই ভাবে হামলা করা আর আত্যহত্যা করা একই ব্যাপার হবে) সেই জায়গায় একটা একটা স্থাপত্য আছে যেটা কেমন দূর্গ মার্কা দেখতে। তবে উপত্যকাটা সত্যি সুন্দর।ছোটো টিলা , ঢেউ খেলানো মাঠ , গাছের সারি সব মিলিয়ে চমত্কার ল্যান্ডস্কেপ।


আসলে এই হার্শী গ্রামটা বেশ সুন্দর।ছিমছাম ছোট্ট। দূরে পাহাড় আছে, ছোটো নদী আছে , আঙুরের খেত আছে। ঘোড়ার আস্তাবল আছে আবার চকোলেট  ফ্যাক্টরি এবং তার কারণে গড়ে ওঠা এই জনপদ টাতে রেসের মাঠ ও আছে।
হার্শী চকলেট ফ্যাক্টরি এর লোকজন ব্যবসা ভালো বোঝে তাই , ওখানে গিয়ে কি করে চকলেট তৈরি হয়ে তার ডেমো দেখা যায়। এমনকি একখান করে চকলেট খেতেও দেয়. কিন্তু যেখান দিয়ে বেরোয় লোকে ওই ট্যুর শেষ করে সেখানে যথারীতি গুচ্ছ ম্যাগনেট টিশার্ট ইত্যাদি হরেক মাল, যার দাম মোটেও ৫টাকা নয়। 
বোঝো!




আঙুরের ক্ষেত আর ঘোড়ার চারণভূমি পাশাপাশি। আমি আগে কখনও আঙুর ক্ষেত ও দেখিনি, ইচ্ছে ছিলো আঙুর  ছিঁড়ে মুখে ফেলার কিন্তু , ইয়ে একা কিংবা আমার বাঁদর বন্ধুকুলের সাথে যাইনি।  তাই সংযত বাচ্চা হয়ে রইলাম।

আঙুর ক্ষেত 




ইন্ডিয়ান ক্রেভের্নস বলে একটা গুহা আছে যেখানে স্ট্যালাগটাইট আর স্ট্যালাগমাইট দেখা যায়. এক ভদ্রলোক নাকি এখানে একা একা বিশ বছর কাটিয়েছিলেন।বোঝো! ওই প্রায়ন্ধকার গুহায় এদ্দিন কাটানো! কার সুখ যে কিসে থাকে কেই বা বলতে পারে।

এটা ভুট্টার মত দেখতে না?



সেই আমিশ দের গপ্পো বলেছিলাম না কোন একটা লেখায় তারা 

চাকা ব্যবহার করে বলে সভ্য সমাজের সাথে মিশবো না 


 ফেরার সময় গ্রেহাউন্ড এর বাস ধরে ফিরছিলাম। রাতের বেলা ট্রাভেল করা একটা অন্য অনুভূতি। দুপাশের গাছ গুলো ছায়া ছায়া হয়ে থাকে। দূরে মিটমিটে আলো।আকাশে আজ মেঘ বলে পুরপুরি অন্ধকার ননা। কেমন আলোর একটা আভা এখনো। পেন্সিলভেনিয়া থেকে ওয়াশিংটনডিসি এর রাস্তায় খুব বেশি শহর পরে না। একটানা গাড়ির স্রোত, ভিডিও গেমস এর মতো।
একটু একটু খিদে খিদে পাচ্ছিলো, পকেট হাতরে দেখি, ক্রিস্পি মজুদ। অনন্যাদি, রাস্তার কথাও ভোলেনি।শরতচন্দ্রকে "সেন্টিমেন্টাল " টাইপ বলে যতই খোরাক করি, সেই কবে লিখে গেছিলো " এদেশের পথে ঘাটে দিদিরা রয়েছে", আজও সমান সত্যি,শুধু দেশে না বিদেশেও।

Tuesday, February 9, 2016

ব্যাচেলার আর বাচ্ছা

আমাদের মতো ব্যাচেলার  দের খুব যন্ত্রণা। বিবাহিত এবং ছোটো বাচ্ছা হয়েছে এমন বন্ধু বান্ধব দের সংখ্যা কম না। তাদের ধারনা ছুটির দিন,  অফিস দিন যেকোনো সময়েই তাদের সময়ে তাদের বাচ্ছাদের বিপুল বুদ্ধি (যা কেবল ও কেবলমাত্র তাদের ছেলে/মেয়েদেরি আছে) দেখতে আমি খুবই উতসুক, কারন আমি ব্যাচেলার আর আমার অফুরন্ত  সময়। আর মশাই বিয়ে শাদি করে ছেলে পুলে হলে লকে এমন ভোঁতা হয়ে যায় জানা ছিলো না।  ফেসবুকের দৌলতে তারা কবে হাঁটছে, লাথি মারছে সব জেনে ধন্য হচ্ছি তাতেই শান্তি নেই, সেদিন রোববার,  সুন্দর  রোদ উঠেছে।  আমি সারা দিন ল্যাদ খাওয়ার ইচ্ছে নিয়ে ১২টার সময় প্রথম চায়ে চুমুক দিচ্ছি। এক সহকর্মী  র ফোন,  দুপুরে খেতে ডাকছে। শুনতে সাধু প্রস্তাব। কিন্তু এর একটা ছোট ছেলে আছে, সুতরাং সেই বিস্ময় বালকের কান্ড কারখানা আমায় শুনতে হবে ও পরম পরিতোষে আহা অবিশ্বাস্য বলতে হবে। ইয়ে হবে না,  হয়েছিল। আমার সাধের রবিবার দুপুর স্রেফ ইন দ্য ভোগ অফ বাচ্ছা হয়েছিলো :(

Friday, January 29, 2016

নানারকম 7

বেড়ানোর গল্পটা না শেষ করে অন্য বকবক করছি বলে মাফ চাইলাম আগেই।  কিন্তু কি করবো , আজকে যে রোদ ঝলমলে সকালে হাটতে পেয়েছি। বেশ কয়েকদিন পরে আজ টেম্পারেচার ০ এর উপরে। আজ ইচ্ছে করেই হেঁটে এলাম। এখানকার রাস্তায় এমনিতেই লোকজন কম , তে শীতকালে এরই কম।  তাই বরফ চূড়ো পাহাড়টা পাশে নিয়ে,হাত পা নেড়ে গান গাইতে গাইতে  হাঁটতে দিব্বি  লাগছিল।  মাথার উপর দেখি একঝাঁক বোকা হাঁস ক্যাও ম্যাও লাগিয়েছে। বোকা না বলে উপায় কি , জানুয়ারি শেষ হতে চললো এই সময় ওরা এখানে কি করছে , ওদের তো এখন আমাদের দেশের ওদিকে থাকার কথা! নির্ঘাত জিপিএস হারিয়ে ফেলেছে, আর এখন চেঁচামেচি করছে। 

দেশে বইমেলা শুরু হয়ে গেছে।  বইমেলাটা আমার মত কিছু বই পাগলের কাছে দুর্গাপূজোর মত। বই দেখব ,নাড়বো ঘাঁটবো , হয়ত বেশি কিনিনা , কিন্তু লিস্ট করে রাখব। কলেজ স্ট্রিট থেকে কিনব বলে। আহা। বইমেলা  হলো এমন এক জায়গা যেখানে একা একাও যাওয়া যায়, দোকাও যাওয়া যায় ,দল মিলেও যাওয়া যায়।  প্রতিটা জায়গার চরিত্র বদলে বদলে যায় কার সাথে যাওয়া হচ্ছে তার উপর। যেমন গঙ্গার পারে একা বসে থাকতে যেমন লাগবে , পাশে প্রেমিক/প্রেমিকা থাকলে অন্যরকম , আর বন্ধুরা থাকলে অন্যরকম। কিন্তু বইমেলার চরিত্র বদলায় না। এত বই এত বই , কি কিনবো কি কিনবনা সেটাই সব না। 

আজকে আবার মেঘলা দিন।  বাড়ি থেকে বেড়িয়েই দেখি পাইন গাছের মধ্যে  দিয়ে শন শন  করে হাওয়া দিছে।  শব্দে মনে হচ্ছে সমুদ্দুরের পাড়ে দাঁড়িয়ে আছি। আজ আর নীল পাহাড়টা পাশে নিয়ে হাঁটা যাবে না, গাড়িতে যেতে হবে। 
কয়েকদিন আগে একটা স্টেট পার্ক এ গেছিলাম। উপত্যকার মতো।  পুরো মাঠ জুড়ে বরফ চিক চিক করছে।  অনেকদিন আগের মরে যাওয়া এক ড্যাম এক পাশে পরে আছে।  বরফ এর নদীর মতো লাগছে দেখতে।  কয়েকটা গাছ যারা পাতা জড়িয়ে ফেলে না তারা বসন্তের ভরসা দিচ্ছে। আর যাদের পাতা নেই তারা অদ্ভূত জীবনীশক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বসন্তকালের জন্য। 



মৃত নদীও দাগ রেখে যায় 



কতদিন হয়ে গেলো বাড়ির বাইরে। ভয় করছে , চেনা মুখগুলো বদলে গেছে নাকি কে জানে। তবু রিস্ক তো নিতেই হবে, ফিরতেও হবে। কোলকাতা নিয়ে এই পোস্টটা  দেখলাম সেদিন ফেসবুকএ , রইলো