Thursday, September 1, 2016

ছোটবেলার হিজিবিজি 2



অনেকের পরের পার্ট শুনতে ইচ্ছে হলো তাই তাই পরের কিস্তি লিখতে বসলুম।

মহালয়া তো চলে এলো। ভাবলে অবাক লাগে এত্ত গাছ পালা চারদিকে ছিলো কিন্তু একটাও শিউলি গাছ ছিলো না। শিউলি গাছ ছিলো স্কুলে, হস্টেলে থাকতে সকাল বেলা পড়া পড়া খেলতাম যখন দেখতাম গাছের তলাটা সাদা আর হলুদের কম্বিনেশনে ছেয়ে গেছে। কিন্তু কোনো পল্লী বা শহুরে বালা সে ফুল আমায় দেবার যুগ্যি মনে করেনি কখনওই। যাকগে কৈশোর না আমার ছোটবেলার কথা হচ্ছিলো। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহালয়ার থেকে আমাদের টিভিতে দেখানো মহালয়া নিয়ে বেশী উৎসাহ থাকত। তখন কালার টিভি এসে গেছে, রংচঙে যুদ্ধ দেখতে ভারী ভালোলাগত। মেজজ্যেঠু আবার চারটের সময় উঠবেই আর চালাবেই। সত্যি বলতে কি, আমি এই বয়েসেও মহালয়া শুনতে বসলে একটা করে নতুন গান আবিষ্কার করি। যাই হোক ওই রেডিওর মহালয়া নিয়ে আমাদের একদমই উৎসাহ ছিলো না তাই শুনতামও না। আমাদের মানে আমার এক কাকা থাকত হিন্দমোটরে, সেই খুড়তুতো ভাই, দিদিরা আমার বয়েসী ছিলো তারা আসত, তারপর দিদিভাই মানে সব থেকে বড় দিদির ছেলে মেয়েরাও আমার বয়েসি তারাও আসত। এছাড়া আমার দিদি তো আছেই। পাড়ার ছেলেদের সাথে বিকেলে মাঠে যা খেলা হতো অন্যসময় তেমন বন্ধুত্ব ছিলো না। তার একটা কারন তারা বেজায় শক্তপোক্ত ছিলো, আমি প্যাংলা দুর্বল সে লড়াইতে হেরে ঘরে ফিরতাম। তাছাড়া আর একটা কারন ছিলো গ্রামের দিকে লোকজনের মুখের ভাষা অত রেস্ট্রিক্টেড ছিলো না। তারা ওই বয়েসেই অনায়াসে খিস্তি দিতো আমিও সে জিনিস শিখে বাড়িতে বলে বেশ অভূতপূর্ব অভ্যর্থনা পেয়েছিলাম বলে বেশ মনে আছে। ফুলদিদি কলেজ থেকে ফিরে আমার জন্য আনা সন্দেশটা অব্দি লুকিয়ে দিতে পারেনি :'( । ছোড়দি মানে আমার দিদি পর্যন্ত বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলো। সেবার যখন মা ওকে ঘরে খাটের পায়ার সাথে বেঁধে রেখেছিলো কে বাবুজিকে ডেকে এনেছিলো হ্যাঁ, এই শর্মাই তো নাকি। কোন আক্কেলে তুই মাকে বলতে গেলি " ম্যা ম্যা বাবু না **** বলেছে "!! যাকগে সে শোধ আমি নিয়েছিলাম এক খাবলা চুল তুলে এনে। সে অন্য প্রসঙ্গ। যা বলছিলাম, তা আশেপাশের ছেলেপুলেদের সাথে পূজোর সময় খেলার কোনো মানা ছিলো না। খালি মারামারি না করলেই হলো। মারামারি মূলত আমার ভাগনের সাথেই হতো অবশ্য। ঠিক বেছে বেছে যে সোজা প্যাঁকাটি টা আমি তুলে আনবো ব্যালেন্স করে আঙুলের ডগায় নিয়ে ঘুরবো বলে সেইটিই ওনার চাই। না পেলেই চিলচিৎকার করবে। ও আবার কি! আর আমি বাড়ির ছেলে ওরা নাকি কুটুম মানুষ ওদের দিয়ে দেওয়াই উচিতকর্ম। কই মামাবাড়ি আমি যখন যাই পাপুদা যখন বাজি ফাটায় আর আমায় বলে তুই বাচ্ছা ওদিকে গিয়ে দাঁড়া তখন তো কারোর উচিতকর্ম এর কথা মনে পরেনা। হুহ।

তো মহালয়ার সময় যেটা দেখানো হত টিভিতে সেটা আবার ষষ্ঠী বা সপ্তমীর দিন দেখানো হত। অসুরের ওই ডায়লগ আর হাসিটা আমি ওর মধ্যে তুলে ফেলতাম। আমাদের অসুরের উপর বেশী শ্রদ্ধা ছিলো মনে হয়, গায়ের সবুজ রংটার জন্য কি? নইলে আমরা যখন নিজেদের মহালয়া করতাম ওই টিভির মতো অসুরের পার্টটা করার জন্য এমন লড়াই হবে কেন? আমাদের চার জনের মূল যে দলটা ছিলো তাতে মেয়ে কেউ ছিলোনা বলেই বোধহয়, আর সে বয়েসে নিজের পুরুষত্ব সম্পর্কে আমরা চার জনেই বেশ সচেতন ছিলাম দেবত্ব লাভেরর জন্যও সে বিসর্জন দিতে নারাজ ছিলাম। মহালয়ার পরেও স্কুল খোলা থাকত কিন্তু সে খালি সময় নষ্ট করা। আমি তখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম কাকারা আর দিদিরা কবে আসবে। চতুর্থীর রাতেই সব জড়ো হতো। মামাতো দাদা দিদি আর মাসতুতো দাদারাও আসতো কিন্তু ওরা ঢের বড় ছিলো তাই তাদের আমার তাদের নিয়ে কোনোরকম উৎসাহই ছিলো না। ওরা বোকার মতন না খেলে দিনরাত গান শুনতো আর আড্ডা মারতো। আমাদের ওদিকে ঘেঁষতে অব্দি দিতোনা। আমরাও থোড়ি পাত্তা দিতাম। মা মাসি জ্যাঠি দিদিদের আলাদা দল ছিলো ওদিকেও যেতাম না কি বকতে পারে বাবা। বাবা কাকারা কোথায় থাকত কে জানে এমনিতেই বাবাই এর সাথে আমার যোগাযোগ ওই রাতের বেলা গরম রসগোল্লায় আর সকাল বেলা আপিস যাবার সময় বাবাই এর পাত থেকে এক গাল খাওয়ায় ও একখানা করে লাল নোট ( দু টাকার নোট, পাঁচ টাকার নোট দিতে গেলেও আমি দুটাকাটাই নিতাম ওই লালের মোহে!!) পাওয়ায়। পূজোর সময় সে ভদ্রলোককে দরকার পড়তো খালি ক্যাপ ফুরিয়ে গেলে। এমনিতে ওই চতুর্থী বা পঞ্চমীর দিন মেজদাদা বন্দুক ক্যাপ সব এনে দিতো কিন্তু সে তো কেমন করে জানি এক দিনের মধ্যেই নেই হয়ে যেত।

ঠাকুরের গায়ে গর্জনতেল মাখানো আর ডাকের সাজ হতো পঞ্চমীর দিন। চোখ আঁকাও ওইদিন রাতেই হতো বোধহয়, তারপর তো ঘিরে দেওয়া হত বোধনের আগে দেখতে দেওয়া হত না। কিন্তু ওই যে ফিনিশিং টাচটা দেওয়া হত ওই সময় আমরা সবাই হাঁ করে বসে থাকতাম আর আমাদের এক্সপার্ট কমেন্ট দিতাম। এবারের অসুরটা কেমন রোগাটে হয়েছেনা? ক্লাবের ঠাকুরের ময়ূর টা দেখেছিস যেন সব পালক ঝড়ে যাবে এক্ষুনি। আর সাপটা আমাদের ঠাকুরেরই সেরা। সিংহটা বেশী ভালো হয়েছে না ইঁদুর সে নিয়ে আমাদের খুব গন্ডগোল হতো। কেন জানিনা দুগগা ঠাকরুন ছোটদের কাছে তেমন ইয়ে পেতেন না তার অস্ত্র শস্ত্র বরং বেশী আকর্ষণীয় ছিলো। একবার মহালয়াতে হেমা মালিনী দুর্গা হয়েছিলো, আমাদের জ্বলে গিয়েছিলো দেখে। মানে এটা একটা কথা হলো হ্যাঁ সারাক্ষণ নেচে যাবে সে আবার কি। একটা যুদ্ধ নেই ভালো গল্পো নেই ভালো!! যত্তসব!! এর চেয়ে সেই যেবার কুমিরে মহিষাসুরের বাবা না কাকা কাকে টেনে নিয়ে গেছিলো সে বরং ঢের ভালো হয়েছিলো। এরকম সব কর্মব্যস্ত ভাবেই পঞ্চমীর বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নামত। বড়দের অত্যাচারে অত্যাচারিত আমরা ঝুলন্ত হয়ে ( মানে হেঁটে স্বেচ্ছায় তো আর যেতাম না ) ঘরে ফিরতাম

2 comments:

  1. এই সিরিজটা চমৎকার হচ্ছে।

    ReplyDelete