ষষ্ঠীর
সকাল থেকে ঢাক বাজতো না বোধহয় । বাজলেও
আমার মনে নেই। জেনারেটার
এর লোকজন এসে আলো লাগাত । তাপস
, মানকে গৌরহরি ওরা কেমন ওই বয়েসেই দুটো তার জোড়া দিয়ে আলো জ্বালিয়ে দিতে পারত । ফটকে
ওর দাদুর ঢাকের সাথে কাঁসি বাজাত । কিন্তু
ব্যাটা যা নাচত না । অক্ষয়কুমারের
মতন নাচতে পারত । আমি
অরিত রন্টি বুয়া (পিসি ফিসি না, আমার এক দিদির ছেলে) একবার লুকিয়ে নাচতে গেছিলাম , ধরা পড়ে "কান ধরে তুমি নিয়ে চল" হয়ে গেছিলো । -_- যাকগে
। বড়পুকুরে ছোটদের
নামা বারণ ছিল একা একা কিন্তু সঙ্গে বড় কেউ থাকলে নামা যেত । ঘাটের
সিঁড়ি কতদূর চলে গেছে জানার খুব ইচ্ছে হতো । ওর
তলাতেই পাতালপুরী? সোনার কাঠি পকেটে ছিলো না কিন্তু ডুব দেবার সাধ হত ভারী । সিঁড়ি
ধরে পা ছুঁড়তাম আর একবার অরিত এক ধাক্কা মেরেছিল কি নিয়ে একটা লড়াই হয়েছিল তাই , আমিও নাকানি চোবানি খেয়ে সাঁতার এবং ডুব দুটোই শিখে গেলাম । ধাক্কা
জরুরী , ভালবেসেই হোক কি খারাপবেসেই হোক ।
বড়পুকুর
এপাড় ওপাড় করতে পারা মানে তুমি হ্যায় ব্যাক্তি । আমি
পারতাম না কিন্তু পাড়ার ছেলেরা নারকেল, তাল গাছ থেকে ঝাঁপ মারতে পারত। আমার
বাড়ির সব কটা ছেলেই ইঙ্কলুডিং মি , ন্যাদোশ , কেউ পারবে না আমি জানি , অত ভয় দেখালে আর কি করে হবে -_- ।
পুকুরের
পারের কৃষ্ণচুড়া গাছটায় যে ফল হত তা দিয়ে খেলা হত, কার মুণ্ডু কাটা পড়বে ।
সপ্তমীর
দিন সকালে কলাবউ চান হবে তার আগে ঘট ডুবানো হবে । সক্কাল
বেলা ঢাকের আওয়াজে ঘুম ভাঙবে , কনরকমে ব্রাশ করে (বা না করে ) জামা বদলে ( এটা মাস্ট , পূজোর কাছে বাসী জামা প্যান্ট গেলে ঘাড়ধাক্কা খাওয়া মাস্ট) দৌড় দিতাম । মূল
যে পুরোহিত সে তো আমাদের বাড়ির ফিক্সড পুরোহিত , লক্ষ্মী সরস্বতী কালী সব পূজোয় সেই আসবে তার কাছ থেকে গল্প শুনবো , কেমন করে আমাদের বাড়ির কালীপূজোর দিন ডাকাত আসতে গিয়ে নাকাল হয়েছিলো ডাকাতেরা ( তখন অত কূট প্রশ্ন মাথায় আসত না , নিজের নাকাল হবার গল্প কেন কেউ বলবে বা ইত্যাদি, আমি গল্প শুনেই দেখতে পেতাম একটা নৌকা করে দামোদর দিয়ে লাল ফেট্টি বাঁধা ডাকাত আসছে ) যাইহোক তাকে আমরা সব্বাই নাম মাধঅবো বলে ডাকতাম , আসল নাম অন্য , কিন্তু কেন কি জানি আমরা ওই বলি এখনও মানে আমারা যারা ছোট ছিলাম এখন ধেড়ে হয়ে গেছি ।
মা
জ্যেঠিমারা কেউ শাঁখ বাজাচ্ছে ,কেউ জলের ঝারি টা দিয়ে জল ফেলছে আর দাদারা বোমগাছ বাঁধতে ব্যস্ত । শব্দদূষন
নিয়ে অত চিন্তা করিনি , কড়াকড়িও ছিলো না খুব । দিনে
রাতে যখনই আরতি বা কলাবউ চান বা ওরকম কিছু হবে একটা করে গাছ ্বোম বাঁধা , একসাথে আটটা না বারোটা ধুম দাম করে ফাটবে । বেশ
আওয়াজ হয় । পিলে
চমকানো টাইপ আর যে কানে হাত চাপা দেবে তাকে বাকিরা দুয়ো দেবে । পিলে
চমকালেও , ছেলে ছোকরারা কানে হাত চাপা দিত না। লুজ
বোমও হত সেগুলো ফাটাতে এক্সেস পাওয়া মানে বড় হয়ে গেছি । মনে
আছে আমি ক্লাস সেভেনে না এইটে পেয়েছিলাম , কি হাবভাবটাই না নিয়ে ছিলাম।
ঘটডুবানো
আর কলাবউ চান এর পর ঘরে গিয়ে খেয়ে দেয়ে আবার পুজোর কাছে । আমরা
একটা খেলা খেলতাম , লে ম্যান বলে , দু দল থাকবে একজন এক পায়ে গিয়ে ওপারের লোককে ছুঁয়ে দিলে আউট । মানে
কাবাডির মত । আর
খেলতাম চোর পুলিশ । পুলিশ
হতে কেউ রাজি হত না , কারন চোরের জীবন অনেক রোমাঞ্চকর। সে
যে কোন নিয়ম ভেঙ্গে যে কারোর পিছনে শেল্টার নিতে পারত , কিন্তু পুলিশ তো নিয়ম ভাঙ্গে না । তাই
লটারি করে মারামারি করে চোর পুলিশ ঠিক হত । আরও
একটা কারন ছিল , চোর এর গুলি করার স্কোপ অনেক বেশী , সে যাকে পারে গুলি করে , পুলিশ পারে না ফলে ক্যাপ ফাটাতে কম পারে ।
দুপুরবেলায়
মা এর একটু ঘুম লাগবেই , এবং মা এর লাগবে না শুধু কাকিমাদের জ্যাঠিমাদেরও লাগবে এবং আমরা তো ফ্রি । সুতরাং
বিছানায় বন্দি । আমাদের
কোড ছিল, নাম ধরে ডাকলে তো বকুনি এবং মা শুধু না মা এর কাঁচা ঘুম বরবাদ এর শাস্তি হিসেবে বিকেলেও আটকে দিতে পারে তাই কুহু (কোকিলের ডাকটা ইজি কিনা) করে ডাক দেওয়া হত । বেজায়
বেশী বুদ্ধি ছিল তাই বুঝিনি , মা এরা বুঝেও পাত্তা দিত না । অমন
কাঁচা হরবোলার ডাক ধরতে না পারার কোনও কারন থাকতে পারে নাকি । কোনো
কোনো দিন বাকিরাও ঘুমিয়ে পড়ত। আমার
চোখে আর ঘুম আসত না , আমি উঠে পড়তাম । পুরনো
বাড়ির পিছন দিয়ে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াতাম । ঝুপ্সি
হয়ে থাকত এক এক জায়গা , আমার মন খারাপ করত আমি আবার এসে মা এর কাছে শুয়ে পড়তাম ।
সন্ধ্যে
হত , আলো জ্বলে উঠত । একরাশ
ফুল দিয়ে সাজানো হত বিকেল থেকেই , আর বেলপাতার মালা গাঁথা হত । ওই
দূরে হটে যেত অন্ধকার।যে
জায়গা গুলো পেরোতে অন্যসময় বুক শুকিয়ে যেত , বীর এর ন্যায় এগিয়ে যেতাম সেসব জায়গায় ।
বাজি
পোড়ান হত চারদিনই । ছাদের
থেকে দেখতাম উঠে একটু রাত হলে , সিনেমা চালানো হত । আমাদের
টিভিটা বাইরে বের করে দেওয়া হত । কিন্তু
কি সিনেমা চলত আমার মনে নেই । আমি
ঘুমিয়ে পরতাম -_- । অষ্টমীর
দিন সকাল সকাল উঠতে হবে বলে বাজি পোড়ানোর পরেই আমাদের ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হত।
ধাক্কা জরুরি। আমিও মানি। খুব ভালো লাগছে পড়তে তোমার ছোটবেলার কথা, প্রদীপ্ত।
ReplyDeleteধন্যবাদ কুন্তলাদি :)
DeleteTomar r ekta boi paona holo Sunil Jana-r Maa Durga and Co. Kolkata esei amake mone korabe.
ReplyDeleteHighlight option ta ektu change kora jaay, Tab e porte besh chokhe lagche.
করে দিয়েছি সৌগত দা , বই এর কথা ভেবেই আনন্দ হচ্ছে :)
Deletekhub bhalo hocche kintu doshomir galpo ta aslei kanna peye jacche. Abar porte boste hobe ki na! :(
ReplyDeleteহাহা , বেশ দশমী একটু কম দুঃখী করা যায় কিনা দেখি :)
Delete