Tuesday, April 23, 2019

নতুন বৈশাখে

চৈত্র মাসের রোদে নাকি মাথা খারাপ হয়ে যায়। বৈশাখেও হয় কি? কিই জানি! এই যে ঘামে ভিজে ভিজে খামোখা হাঁটছি এ কি মাথা খারাপের লক্ষন? 
বানান ভুল হল মনে হয়। কিই আসে যায়! আজকাল কিছুতেই যেন কিছু আসে যায়না। মন খারাপ করা পোস্ট স্ক্রোল করে মন ভালো করা পোস্টে চলে যাই, দু সেকেন্ডের এফেক্ট!

ভেড়ির ধার কিন্তু গাছ পালা নেই মোটেও। গাড়ি দাঁড়ানো আছে সার সার মরা মাছের মত চোখ মেলে। এই রোদে মাথায় গামছা জড়িয়ে নৌকায় বসে আছে এক বুড়ো। আচ্ছা ভালো থাকা কি? অন্যের তুলনায় আমি কত সফল ভেবে আরামে জাবর কাটা না আমি যা পাচ্ছি তাইতেই আনন্দে থাকা? সেকেন্ড অপশনে উন্নতি নাই অবশ্য। আমি দেখি বেশী ভাবি বেশী কিন্তু বুঝি কম। মাথাখানা পুরোনো প্রসেসরে কাজ করে। ভালো করে না কিন্তু বদলাবার উপায় তো নেই তেমন, তাই চালিয়ে নেওয়া আর কি।

আজকাল দোকানেও কিছু না কিনলে মিষ্টির প্যাকেট দেয়না, তাদের আবার সাইজের তফাৎ থাকে, কাউকে আবার চাইতে হয় বিশুর দোকানে ওসব না, রেগুলার কাস্টমার হলে এমনিই প্যাকেট ধরাবে। সে তুমি পাঁচটাকার চায়ের খদ্দের হও কি বিশ টাকার সিগারেটের। বিশু ভালো আছে। না না প্যাকেট দিয়েছে বলে না, ওর মুখের হাসিটা দেখেই বোঝা যায়।

বুড়োটা এখোনো নৌকায় বসে আছে। রোদ পড়লে মাছ মেলেনা? একই জায়গায় দাঁড়িয়ে কেন? এসব প্রশ্নের উত্তর মেলেনা। গরমে রোদে হাক্লান্ত হয়ে হাঁটছি কেন জানিনা না আসলে, জানি...আমার গরম ভাল্লাগে। শীতে কুঁকড়ে যাবার থেকে বোতাম খোলা শার্টে দরদর করে ঘামা ভালো। ঝিমিয়ে পড়া কুকুর, ঝিমিয়ে পড়া গাছ পেরিয়ে হঠাৎ হাওয়া ভালো।

কী যেন বলছিলাম, ভালো থাকা। আমার এক দাদা আছে, বোকাটে দাদা, সারা কিশোর যৌবন জ্যাঠা কাকাদের হাত নুরকুট হয়ে কেটে গেছে, পড়াশোনাতে তেমন কিছু না, আরো অজস্রে নিম্নমেধার ছেলের মত....কোনোরকমে বিএ পাশ করে, ডিস্ট্যান্সে মাস্টার্স করেছিল। চাকরি পাবে আশায় আশায় যৌবন শেষ হয়ে গেল। আমরা বড় হয়ে গেলাম, চাকরি পেয়ে গেলাম, "সেটল" হয়ে গেলাম। দাদাটাকে ক্রমে মলিন হতে দেখতাম। বোকাসোকা দাদাটাকে দেখলে মায়া হত খুব, কিন্তু একটা বয়সের পর ভালোবাসা লুকিয়ে রাখতে হয় অনেক অনেক ক্ষেত্রে। বোকারা পারেনা অবশ্য, আমি ওদের বাড়ি গেলেই আমার ভালোবাসার খুব ছোট ছোট জিনিস ঢুঁড়ে আনে.....অর্থনৈতিক ভাবে তেমন ভালো নেই কিন্তু টিউশন করিয়ে ফিরে ছোট তুচ্ছ ঘটনাগুলো আর আশার আলো দিয়ে যখন ভাত খেয়ে ওঠে তৃপ্ত মুখে ভালো থাকার গল্পই লেগে থাকে।

ভালো থাকা আর সফল হওয়া আলাদা ট্র‍্যাক দুটোর সাথে দুটোর কোনোই সম্পর্ক নেই কোনো এক সময় ক্রশ করা ছাড়া।কেউ দুটো ট্র‍্যাকেই চলে কেউ একটায়, কারো কারো দুটো ট্র‍্যাক ক্রশ করে কখনো কারো কারো না.....সবার ট্র‍্যাকেই স্বপ্ন থাক, আশা থাক নতুন বছরে।

চোখের সামনে

আমাদের অফিসের বারান্দাটা ভারী ভালো। সামনে অনেক কটা খোপ কাটা খোপ কাটা ভেড়ি। একটা দুটো নৌকা চলছে। দূরে একটা বাড়ি থেকে ধোঁয়া উঠছে সরু হয়ে, গরম ভাত আর মাছের কি? একটা চিল মাঝে মাঝে আকশে ডাইভ দেয়। একটা হলুদ পাখি অকারণ ওড়াউড়ি করে। খুঁটির উপর বসে বসে পানকৌড়ি মাছের কাঁটা দিয়ে দাঁত খুঁচোতে খুঁচুতে একটু ঝিমিয়ে নেয়। দুপুরে বাপু একটু রিলাক্সেশন এর প্রয়োজন আছে। কাল একটা নারকেল পাতায় ওপেন এয়ার স্পা এর দোকান দেখলাম বুঝলে। ভারী সরল ব্যবস্থা, দু জন মোটে, একজন ম্যাসাজ করছে ঠোঁট দিয়ে দিয়ে আরেকজন চোখ বুজে নিচ্ছে। একটু দূরে লাইনে আরো তিনটে কাক আছে। তাড়া নেই কারোর। আর এমন না যখিন তখন খোলা পাবে। ঠিক দুটো থেকে তিনটে অব্দি খোলা। তারপর তো আরো কাজ থাকে নাকি। একই জায়গায় বসে থাকলেই হবে। ভেড়ীর পূব দিকে ভালো একটা ত্রিফলা লাইট ক্যাফে হয়েছে। ভেড়ির পচা মাছ ফাছ ইত্যাদি ফেলে যায়। ঢালোয়া আয়োজন।

বাড়ির বারান্দায় দাঁড়ালেও আশ্চর্য সব জিনিস দেখা যায়। এই একটা বর এলো ব্যান্ড বাজিয়ে, ঘোড়ায় টানা গাড়িতে নতুন বউকে নিয়ে। ঠিক মোড়ের মাথায় সব গাড়ি আটকে দিয়ে পরপর দশটা বাজি ছুঁড়লো,ওই যে আকাশে গিয়ে ফাটে যেগুলো ওগুলো। সব গাড়ি অটো টোটো দাঁড়িয়ে, কেন, না রাজপুত্তুর আজ যৌবন জ্বালা মেটাবেন! যাইহোক, বাজি তো শেষ কিন্তু ঘোড়া তো ঘাবড়ে গেছে। তারা আর এগোয় না। শেষে বর বউ ঘোড়ার গাড়ি থেকে নেমে এক টোপর, জোড়, ধুতি,শাড়ি মিলে লাট হয়ে এগোলো। কী আর করা..

আজকের চাঁদটাও সুন্দর তবে কালকেও একটা অবাক করা লাল চাঁদ উঠেছিল। গুড ফ্রাইডে বলে ফাঁকা মাঠে জলদিই বেরিয়েছিলাম। রাস্তা দিয়ে এই গাড়ি ওই অটো এসব কাটিয়ে হঠাৎ সামনে তাকিয়ে দেখি রাস্তার মুড়োয় গাড়ির সামনে একটা এইইই ব্বড় লাল চাঁদ। সে যে কিই সুন্দর কি বলব। হুট করে দেখেছি বলেই মনে হয় ডাবল ভালো লেগেছে। মানে যা পাবার আশাই করিনি এমন কিছু পেলে বেশী আনন্দ হয় না? ওরকম। কি ভাগ্যিস এখনো অবাক হতে পারি। লাল চাঁদটাকে গাড়ির বনেটের উপর ঝুলিয়ে ভারী আরামে আসা গেল।

Monday, April 15, 2019

অভ্যাস

অভ্যাস ব্যপারটা বড় অদ্ভুত না? আগের প্রজেক্টে একসাথে আমরা চা খেতে যেতাম, নতুন প্রজেক্টে সিঙ্গল ম্যান আর্মি, তাই একাই যাই....প্রথম প্রথম অসুবিধে হত ভারী আজকাল তো দিব্যি লাগে অসুবিধে হয়না। আবার যখন ডেনভারে থাকতাম, একা একা জীবনে ভয়ানক অভ্যস্ত হয়ে গেছিলাম, রাত দুটোয় বাড়ি ফেরা বা না ফেরা, চাঁদের আলোয় পাহাড় চড়া, বেলা বারোটায় বিছানা থেকে উঠে এক মগ চা আর বিস্কুট খেতে খেতে সিনেমা দেখে বিকেল অব্দি টেনে দেওয়া....বাড়ি ফিরে খুব অসুবিধে হত। কখন ফিরবো জিজ্ঞেস করা, মা বাবাই রাতের খাবার এর জন্যে বসে থাকবে, কী খাবো, কেন খাচ্ছিনা, রাতে কেউ উপোষ করে নাকি, এক স্যান্ডো গেঞ্জি দুবার পরার কি দরকার....উহ..... তারপর ফের অভ্যস্ত হয়ে গেলাম।

অভ্যেসের কথা বলছিলাম, কত রকম বিচিত্র অভ্যেস হয় মানুষের। খাবারের অভ্যেস নিয়ে কথা শুরি করলে তো শেষ হবে না? আমার অন্যের সামনে খেতে ভারী অস্বস্তি হয়। কারোর বাড়িতে কবেতে তো বিশেষ করে। কারন আমি ভাত রুটি কম খাই, বাকি তরিতরকারি ডাল মাছ মাংস প্রচুর খাই....লোকে ভাবে কিরকম নিকিরি টাইপ দেখো!

লোকের বাড়ি খাওয়া বলতে মনে পড়লো, আমি ছোটবেলায় কিছুই খেতে পছন্দ করতাম না প্রায়, মানে তরিতরকারি৷ প্রতিদিন স্কুল যাবার সময় মা আলুভাতে ডালভাতে ঘি আর ডিমসেদ্ধ মেখে খাইয়ে দিত, খাওয়াবার পর চাঁছিটা খাইয়ে বলত, "চাঁছিপুঁছি ভক্ষন এই ছেলেটা লক্ষন"। আর ছুটির দিনে খেতাম দুধ আলুভাতে ডালভাতে মাছ ভাত। হ্যাঁ আমি ছোট থেকেই বিচিত্র কম্বোতে খাবার খাই। সে সব বলব খন, আগে ছোটবেলার ঘটনাটা বলেনিই। তো একজনের বিয়েতে খেতে গেছিলাম, সমস্ত ফেলে আমি খুব তরিবত করে নুন আর ভাত খেয়েছিলাম। বাড়িতে ভাতই খেতে চাইতাম না! সকলে মাকে বলেছিল, ও ভাত খেতে খুব ভালোবাসে না? কেমন নুন দিয়েই খেয়ে নিল। এর আড়ালের কথা নাকি, " বাড়িতে ঠিক মত খেতে পায় না না?"

যাক বিচত্র খাবারের কথায় ফিরি। আমার খাওয়া দাওয়া খুবই বিচিত্র আগেই বলেছি। আমি মুড়ি দিয়ে আর মাছ দিয়ে সব রকম কম্বিনেশন খেতে পারি। যেমন মাছের ঝোল দিয়ে রুটি, মুড়ি। শাক দিয়ে মুড়ি....ইত্যাদি প্রভৃতি। তা আমার রুটি মাছ নিয়ে বন্ধু বান্ধবরা খুব আওয়াজ দেয়, আশ্চর্য এই যে তারাই আবার হাম হাম করে পচা মাছ(শুঁটকি), কাঁচা মাছ (সুশি) খায়! আমি ডেনভারেও রুটি মাছ খেতে দেখে তৎকালীন ম্যানেজার খুব আওয়াজ দিয়েছিল, ওমা দেখি একদিন টিম লাঞ্চে মেক্সিকান রেঁস্তোরায় গিয়ে ফিশ ট্যাকো অর্ডার করেছে!

যাকগে, যা বলছিলাম, বিচিত্র খাওয়ার কথা, আমার এক বন্ধু লেবু চিপে পান্তুয়া খায়, আরেক বন্ধু ব্রেকফাস্টে ভাত খায়, আরেক বন্ধু আছে আঙুরের থেকে পচা আঙুরের স্বাদ বেশী পায়। এক বন্ধু কফিতে ঘি দিয়ে খায়! এক কলিগকে দেখেছিলাম কর্ন স্যান্ডউইচ টা, পোচের তরল কুসুমে মেখে মেখে খাচ্ছে, সে আবার মাছের, চিকেনের আঁশটে গন্ধ সইতে পারেনা!
তবে সেরা দেখলাম আজ লাঞ্চে, একজন এসে আমার টেবিলেই বসেছিল, জায়গা না পেয়ে। লোকটা একটা কৌটো থেকে ভাত ঢাললো, একটা থেকে মাছের ঝোল আরেকটা কৌটো থেকে.....বলুন তো কি? 
চানাচুর!! 
হ্যাঁ হ্যাঁ চানাচুর। মুখরোচকের টক ঝাল মিষ্টিটা। দিব্যি মাছের ঝোলের সাথে ভাতে মাখিয়ে মাখিয়ে খেলেন।

তা আপনাদের কার কি বিচিত্র খাদ্যাভ্যাস আছে?

Tuesday, April 2, 2019

বেনামী চিঠি

#বেনামী_চিঠি কতনম্বর হল এটা? ভুলে গেছি....অবশ্য নাম্বারে কিই বা হয়)

এই যে তোমায় হিজিবিজি লিখি, এ চিঠি পৌঁছয়না তুমি অব্দি তাও কেন লিখি? আসলে মনে হয় নিজের সাথেই কথা বলা এ একরকম। আজ অফিসে বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলাম, ছোটবেলার গরমের বিকেলের হাওয়াটার মত হাওয়া দিচ্ছিল, ভেড়ির উপর দিয়ে এসে। এ হাওয়াটার মত অদ্ভুত হাওয়া বড় একটা হয়না। আমি খুব একটা নস্টালজিয়ায় বাস করিনা জানোই তো। ছোটবেলায় আমি ফিরতে চাইনা কোনোভাবেই, সে সময়টা মোটেও নিরবচ্ছিন্ন সুখের ছিল না। আমি তখন লাজুক, লোকের সামনে খেতে গেলেও অস্বস্তিতে থাকি, আমার সমস্ত অস্তিত্ব নিয়েই যেন লজ্জায়....গ্রাম থেকে আসা সেই বোকাটে ভীরু লাজুক ছেলেটার জায়গা ছিল একমাত্র লাইব্রেরীই। সেখানে সে মনের সুখে কল্পনায় ভেসে যেত। ছাপার হরফে তার প্রচুর বন্ধু হয়েছিল। তুমি আমায় এস্কেপিস্ট বলো না? আমরা যারা বইয়ে আশ্রয় নিই কোথাও তারা সবাইই এস্কেপিস্ট নয় কি?
সাদা ঘোড়া কেনার স্বপ্ন দেখতাম একটা, বুলেটের মত একটা বন্ধুর স্বপ্ন দেখতাম...সেভেনের হাফইয়ার্লিতে সংস্কৃতে কোনো রকমে পাশ করেছিলাম না ফেলই করেছিলাম মনে হয়। বাড়িতে স্কুলে তখন সবাই বুঝেই গেছে এ একটা মিডিওকারই এর থেকে খুব বেশী কিছু হবে না। আচ্ছা তুমি তো খুব ভালো স্টুডেন্ট ছিলে, খুব কি তফাৎ কিছু দেখলে ভালো হয়ে? না না এ তোমায় ব্যঙ্গ করে বলা না, আসলে বলতে চাইছি ছোটবেলাটা যতই হাইপড থাক মোটেও অত ভালো ছিল না। আসলে আমরা সুখের স্মৃতি মনে রাখি কিনা তাই ছোটবেলা ছোটবেলা করে হেদিয়ে মরি। কিন্তু আজকের হাওয়াটা ছোটবেলার কথা মনে করিয়ে দিল। পুকুরে ঝাঁপাই জুড়তাম এ সময়টায় পরীক্ষা শেষের পর, বকে বকে টেনে তুলতে হত। তুমি সাঁতার জানো না, পারলে শিখে দেখো, ভারী মজার জিনিস। তবে সুইমিং পুলে সে মজা পাবে কিনা জানিনা।

তোমার সাথে আমার কথা হয় না কতদিন বলো তো? তোমায় বলেছি কি আমাদের টবের নিম গাছটায় আবার পাতা হয়েছে ছোট ছোট অনেক, আর আমি যে দুটো পেঁয়াজ গাছ লাগিয়েছিলাম তার একটায় পেঁয়াজকলি হয়ে আবার ফুলও হয়েছে। সকালবেলা ব্রাশ করতে করতে হাত ছুঁইয়ে দিই আলতো করে। কী অদ্ভুত না? মাটি থেকে এতো দূরে চলে গেছি দুটো রোগা গাছকে আঁকড়ে ধরে ছায়া খুঁজতে হয়!

অনেক অনেক দিন দেখা হয়না, কথা হয়না, আমি জানিনা তুমি কেমন আছো তুমিও জানোনা আমি কেমন আছি।হয়তো তুমিও আনমনে আমায় চিঠি লেখো। আজ সন্ধ্যেয় ফেরার সময় দেখি কালো পিচে একরাশ খই ছড়িয়ে কে যেন চলে গেছে সব ছেড়ে দিয়ে, চৈত্র মাসের হাওয়ায় সে খই পাক খাচ্ছে চকচকে পিচের রাস্তায়....তোমার আমার চিঠির মতই....কোথাও পৌঁছতে না পেরে...

ভালো থেকো। খুব খানিক রোদ জল মাটির গন্ধ পাঠাতে গিয়ে সেই মন খারাপই পাঠিয়ে ফেললাম। আচ্ছা সরি হ্যাঁ? বলছি তুমি ওই গানটা শুনেছ, প্রেমে পড়া বারন? ভারী মন কেমনিয়া গান। লুপে শুনছি কদিন। আসলে আমি একবার গানের গল্প লিখেছিলাম ফেসবুকে, এক বন্ধু সেটা উড়িয়ে আনলো বিকেলে গরমকালের হাওয়াটার মতোই, কত কত গান মনে পড়ে গেল ফের। অনেক অনেক গল্প জমে আছে, এই একটু আগেই কী একটা বলব বলে যেন ফের ভুলে গেলাম। যাকগে বাদ দাও, এমনিতেও লম্বা চিঠি হয়ে গেল। অবশ্য হলেও ক্ষতি নেই ওই যে এ চিঠি আসলেই কোথাও পৌঁছবেনা।

তারপর,তারাপদ রায় এর কবিতাটার মত মাঝে মধ্যে দেখা হয়ে যাবে হয়ত আমাদের, আমরা বলব, " এই বা মন্দ কি"।

Monday, April 1, 2019

নির্বাণ

#হাবিজাবি

ভালো থাকা খারাপ থাকাটা নিজের উপর নিয়ন্ত্রিত করতে পারাকেই কি নির্বাণ বলে? চিনার পার্কের অটোয় একজন অটোওয়ালা আছে,  তাকে আমি কোনোদিন হাসিমুখে দেখিনি। খুব ভুরু কুঁচকে, প্যাসেঞ্জার, ভ্যানওয়ালা, রাস্তার লোক যাকে পারে মুখ ঝুক করে। আমায় একদিন ব্যাগ নিয়ে সামনে কেন বলে ধমকেছিল।আমি ভয়ে ওর অটোয় চড়িনা। হ্যাঁ, আমি একটু পলায়নবাদী আছি বটে কিন্তু নেগেটিভ লোক, অকারনে অপমান করা লোকের থেকে দূরে থাকলে শান্তি বজায় থাকে দেখেছি। যেসিন এসব তুচ্ছ খোঁচা গায়ে মাখবো না জানি নির্বান লাভ করবো। 

রাজারহাটের রাস্তায় দুধারের মাঠে সাদা সাদা মিনি কাশ ফুলের মত ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে, আর রাস্তার মাঝে গোলাপী আর হলুদ ফুল।  হুট করে চোখে পড়ে গেছিল, তারপর থেকে চোখ ফেরানো যায় না আর। খুউউব মন খারাপ থাকে যখন দেখেছি চারপাশে চোখ মেললেই মন ভালো হবার রসদ লুকিয়ে থাকে। কিংবা মন খারাপ থাকলে চোখ খুঁজে ঠিক কী দেখলে দোস্তের  মন ভালো হবে। 

 এপাড়ায় কেউ ঘুঘনি মুড়ি মাখিয়ে মাখিয়ে খায় না,  কিংবা চায়ে ডুবিয়ে ডুবিয়ে আয়েস করে বান পাঁউরুটি। আমি দেখেছি এ দুটো খাবারই বড় আরাম করে খেতে, আমি চায়ে ডুবিয়ে  খেতে গিয়ে অম্বল করে ফেলেছি, স্টিলের প্লেটে কিরকম করে ধোয়াতে আটকে গেছি। সব কিছুর স্বাদ সবাই পাবেনা এইই নিয়ম.....কিন্তু আমার ককম্ফোর্ট জোন কোথায়? আমি একদিনের আউটিং এর নামে রিসর্টে গিয়ে আরাম পাইনা আবার মাছি ভনভন করা জায়গায় স্বস্তি পাইনা। 

ইচ্ছে করে এক্ষুনি এই বসন্তের বিকেলের হাওয়া গায়ে ওই সেইই ফুলে ছাওয়া রাস্তাটা ধরে চলে যাই, সেই আমার পুকুরটার পাড়ে। বসে বসে ঠোঙায় মুড়ি আর সিঙারা মাখিয়ে মাখিয়ে খাব। মাড়োয়ারি শিঙারা না,  বাঙালী শিঙারা, হলুদ বেশী দেওয়া পুর। আঙুল গুলো হলুদ হয়ে যায়। ওই পুকুরটা আমার বলছি কেন? কারন ওটা আর কাউকে দেখাতে নিয়ে গেলে আর থাকে না যে, কালাচাঁদের দোকানের মত, স্রেফ আমার জন্যেই।

আজ রাতে খুব ঝড় জল বুঝি? হলেও আমি ভিজতে যাব না, আমার মন খারাপ লাগছে গাড়ির স্ক্র‍্যাচ রিমুভার বিক্রী করা ছেলেটার জন্যে। খুব করে বলেছিল, কত ডেমো দেখালো, নিয়ে নিলেই হত নাকি? সারাজীবন আমার এ দোলাচল কি ঘুচবেনা? সেদিন মাঝিটা মাত্র কুড়ি টাকা বখশিসের জন্যে আপনি আপনি করে কথা বলল আমার শুনে অস্বস্তি হচ্ছিল খুব তবু বলতে পারলাম কই,  আমায় তুমি বলুন। যেমন বলতে পারিনি ক্রেডিট কার্ডের ছেলেটাকে আমার সাথে চা খেতে, যেমন বলতে পারিনি আমার ম্যানেজারকে এরকম বালের কাজ আমি করবো না,  যেমন..... 

একদিন নির্বাণ হবে আমার, এসব তুচ্ছ জিনিস সব উপেক্ষা করে হলুদ রঙের ফুল হয়ে যাব।