Tuesday, April 2, 2019

বেনামী চিঠি

#বেনামী_চিঠি কতনম্বর হল এটা? ভুলে গেছি....অবশ্য নাম্বারে কিই বা হয়)

এই যে তোমায় হিজিবিজি লিখি, এ চিঠি পৌঁছয়না তুমি অব্দি তাও কেন লিখি? আসলে মনে হয় নিজের সাথেই কথা বলা এ একরকম। আজ অফিসে বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলাম, ছোটবেলার গরমের বিকেলের হাওয়াটার মত হাওয়া দিচ্ছিল, ভেড়ির উপর দিয়ে এসে। এ হাওয়াটার মত অদ্ভুত হাওয়া বড় একটা হয়না। আমি খুব একটা নস্টালজিয়ায় বাস করিনা জানোই তো। ছোটবেলায় আমি ফিরতে চাইনা কোনোভাবেই, সে সময়টা মোটেও নিরবচ্ছিন্ন সুখের ছিল না। আমি তখন লাজুক, লোকের সামনে খেতে গেলেও অস্বস্তিতে থাকি, আমার সমস্ত অস্তিত্ব নিয়েই যেন লজ্জায়....গ্রাম থেকে আসা সেই বোকাটে ভীরু লাজুক ছেলেটার জায়গা ছিল একমাত্র লাইব্রেরীই। সেখানে সে মনের সুখে কল্পনায় ভেসে যেত। ছাপার হরফে তার প্রচুর বন্ধু হয়েছিল। তুমি আমায় এস্কেপিস্ট বলো না? আমরা যারা বইয়ে আশ্রয় নিই কোথাও তারা সবাইই এস্কেপিস্ট নয় কি?
সাদা ঘোড়া কেনার স্বপ্ন দেখতাম একটা, বুলেটের মত একটা বন্ধুর স্বপ্ন দেখতাম...সেভেনের হাফইয়ার্লিতে সংস্কৃতে কোনো রকমে পাশ করেছিলাম না ফেলই করেছিলাম মনে হয়। বাড়িতে স্কুলে তখন সবাই বুঝেই গেছে এ একটা মিডিওকারই এর থেকে খুব বেশী কিছু হবে না। আচ্ছা তুমি তো খুব ভালো স্টুডেন্ট ছিলে, খুব কি তফাৎ কিছু দেখলে ভালো হয়ে? না না এ তোমায় ব্যঙ্গ করে বলা না, আসলে বলতে চাইছি ছোটবেলাটা যতই হাইপড থাক মোটেও অত ভালো ছিল না। আসলে আমরা সুখের স্মৃতি মনে রাখি কিনা তাই ছোটবেলা ছোটবেলা করে হেদিয়ে মরি। কিন্তু আজকের হাওয়াটা ছোটবেলার কথা মনে করিয়ে দিল। পুকুরে ঝাঁপাই জুড়তাম এ সময়টায় পরীক্ষা শেষের পর, বকে বকে টেনে তুলতে হত। তুমি সাঁতার জানো না, পারলে শিখে দেখো, ভারী মজার জিনিস। তবে সুইমিং পুলে সে মজা পাবে কিনা জানিনা।

তোমার সাথে আমার কথা হয় না কতদিন বলো তো? তোমায় বলেছি কি আমাদের টবের নিম গাছটায় আবার পাতা হয়েছে ছোট ছোট অনেক, আর আমি যে দুটো পেঁয়াজ গাছ লাগিয়েছিলাম তার একটায় পেঁয়াজকলি হয়ে আবার ফুলও হয়েছে। সকালবেলা ব্রাশ করতে করতে হাত ছুঁইয়ে দিই আলতো করে। কী অদ্ভুত না? মাটি থেকে এতো দূরে চলে গেছি দুটো রোগা গাছকে আঁকড়ে ধরে ছায়া খুঁজতে হয়!

অনেক অনেক দিন দেখা হয়না, কথা হয়না, আমি জানিনা তুমি কেমন আছো তুমিও জানোনা আমি কেমন আছি।হয়তো তুমিও আনমনে আমায় চিঠি লেখো। আজ সন্ধ্যেয় ফেরার সময় দেখি কালো পিচে একরাশ খই ছড়িয়ে কে যেন চলে গেছে সব ছেড়ে দিয়ে, চৈত্র মাসের হাওয়ায় সে খই পাক খাচ্ছে চকচকে পিচের রাস্তায়....তোমার আমার চিঠির মতই....কোথাও পৌঁছতে না পেরে...

ভালো থেকো। খুব খানিক রোদ জল মাটির গন্ধ পাঠাতে গিয়ে সেই মন খারাপই পাঠিয়ে ফেললাম। আচ্ছা সরি হ্যাঁ? বলছি তুমি ওই গানটা শুনেছ, প্রেমে পড়া বারন? ভারী মন কেমনিয়া গান। লুপে শুনছি কদিন। আসলে আমি একবার গানের গল্প লিখেছিলাম ফেসবুকে, এক বন্ধু সেটা উড়িয়ে আনলো বিকেলে গরমকালের হাওয়াটার মতোই, কত কত গান মনে পড়ে গেল ফের। অনেক অনেক গল্প জমে আছে, এই একটু আগেই কী একটা বলব বলে যেন ফের ভুলে গেলাম। যাকগে বাদ দাও, এমনিতেও লম্বা চিঠি হয়ে গেল। অবশ্য হলেও ক্ষতি নেই ওই যে এ চিঠি আসলেই কোথাও পৌঁছবেনা।

তারপর,তারাপদ রায় এর কবিতাটার মত মাঝে মধ্যে দেখা হয়ে যাবে হয়ত আমাদের, আমরা বলব, " এই বা মন্দ কি"।

No comments:

Post a Comment