Wednesday, October 26, 2016

বাড়ি ফেরা

হ্যাঁ হ্যাঁ দিব্যি বেঁচে বর্তে আছি হে। অনেক দিন পাত্তা নেই দেখে ধরে নিচ্ছি কেউ কেউ উদগ্রীব হয়ে পড়েছিল আমার জন্য ( কেন মশাই অমন খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসার কি হ্যাঁ , আমি কি অত টাই ইয়ে নাকি যে কেউ ব্লগে ঢুঁ মারেই না , নতুন লেখা না পেলে খোঁজ নেয় না, হুহ ) , তাই বলছি বেঁচে তো আছি বটেই দিব্যি কলকাতার দুর্গাপূজো ২বছরকাল পর দেখে, পাটিসাপ্টা ক্ষীর , লুচি , মাছ মাংসের ভবিষ্যৎ উদ্বিগ্ন করে , ভুঁড়ির পরিধি বাড়িয়ে বহাল তবিয়তে বিরাজমান।
হ্যাঁ  কথাটা ঠিকই ধরেছেন , স্বদেশে পূজ্যতে রাজা আপ্তবাক্য স্মরণ রেখে মহারাজ দেশে ফিরে এসেছেন।
ফলে আপনাদের সাথে বিস্তর আড্ডা দেওয়ার আছে।  কেমন আমায় হবু প্রোডিউসার ভেবে ওলার দাদা (বিহারি দাদা) আমায় তাঁর  বীরত্বের কাহানি শোনালেন।  কেমন আড়াই বছর পরে দোকানে এক অনুষ্ঠান উপলক্ষে ফুল কিনতে গিয়ে দর করতেই কাকুটি বললেন আমি তো তার রেগুলার খদ্দের উনি আমায় ঠকাবেন!! তাপর অটোভাড়া দেবার আগে থ্যাংক ইউ বলতে অটোওলা কেমন সন্দ সন্দ করে তাকালো।  তারপর বাসে এখনো লোকে কেমন তুই তোকারি করলো -_- ।  সব বলতে হবে তো নাকি।
তো শুরু থেকে বলি কেমন? টিকিট পেয়ে আমি খুশি তো বেজায় সাথে চিন্তা ২৩+২৩+ক্যারি অন + ব্যাকপ্যাকে আমার এই রাশি রাশি মালপত্র ধরবে কেমনে। জিনিসপত্র দেদার কেনা হয়েছে , বই নয় নয় করেও দেখি ১০ কেজি।  হ্যাঁ বলে কিরে।  দওওশ কেজিইই।  লোকনাথ কে ডেকে লাভ নাই।  আমি রণেও নেই , বনেও নেই , জলেও নেই , জঙ্গলেও নেই।  তাইলে।  লাগাও সমুদ্র মন্থন পালা।  অগতির ভরসা অর্ণবদা।  বললাম তোমায় অল্প বই পাঠাই ? ভালোমানুষদের সমস্যা হলো তারা মুখের উপর না বলতে পারে না।  হ্যাঁ  বলল, আমিও ভালোমানুষদের সাথে যা করে তাই করলাম , মানে আমার খান কতক মানে বেশ  বেশ কিছু বই পাঠিয়ে দিলাম।  তবুও ওজন আর কমে না।  কি রে বাওয়া ওয়াটার অফ ইন্ডিয়া নাকি।  যাক অবশেষে ফেলে ছড়িয়ে যাহোক করে হাজির। ক্যারিঅনে ৭ কেজি না ১৬ কেজি জিনিস ভরেছি।  ওজন নিলেই চিত্তির ।এয়ারপোর্ট  এ ব্যাগ উল্টে গড়াতে গড়াতে কোনো মতে চেকিন করতে গিয়ে দেখি আমার শুরুতেই চাপ। বলে নাকি একখান ব্যাগের ওজন ৫১lbs ।  অবশ্য মাসিমা ভালোই ছিলেন আমায় গম্ভীর হয়ে বললেন যা বাছা এবারের মতো ছেড়ে দিলাম। খুশি খুশি যাচ্ছি মনে চিন্তা , ক্যারিঅন টা কি হবে।  তা যেখানে বাঘের ভয় ইত্যাদি , খ্যাক করে ধরলো । তোমার পেটমোটা বলে তোমার  ব্যাগের এমন পেটমোটা করেছো এ ফিট করবে বলে আমি মনে করছি না ইত্যাদি ।যথারীতি মাপ টাপ  নিয়ে দেখা গেলো তিনি আনফিট।  বললুম উপায় কি মাদমোয়াজেল।  বললো আজ তোর শুভ দিন (আমাদেরও, হতচ্ছাড়া আব্লুশ  এদ্দিনে বিদেয় হচ্ছে ) তোর এ ব্যাগটা  আমরা চেকিন্ করে দিচ্ছি।  ভয়ে ভয়ে জানতে চেয়েছি যেই পয়সা কত লাগবে দিদি, বলে ওরে বিচ্ছু  কিচ্ছু না কিচ্ছু না , তুই বিদেয় হচ্ছিস এ খুশিতে ফিরি ফিরি।
আম্মো লাফাতে লাফাতে ঢুকে পড়লুম।
জানলা দিয়ে শেষ বারের মতো ডেনভার দেখলাম , আমার এদ্দিনের সুখ দুঃখের শহর।
শিকাগো এয়ারপোর্ট টা বলবো কি মনে হচ্ছিলো ভারতের কোনো এয়ারপোর্ট।  সব ভারতীয় বাবা মা।  ছেলে মেয়েদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে ফিরছন।  এক কাকিমা দেখি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন ঠায়  , একিরে বাবা চেনা তো না , তবে কি বাঙালি? খিস্তি মেরেছি ফোনাচ্ছি সেইটে শুনেছে নাকি।  নাহ  মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে  দক্ষিণ প্রদেশীয়।  ভয়েভযে ফোন রাখতেই দেখি বলে একখান কাগজ দিয়ে তার মেয়ের সাথেএকটু কানেক্ট করিয়ে দিতে হবে।  যাক বাবা স্বস্তি।  সন্ত্রাসবাদী ভাবেনি এই ঢের।  শিকাগো থেকে প্লেন  এ আবুধাবি ওখান থেকে কলকাতা। শিকাগো থেকে প্লেন টেকঅফ করার সময় মিশিগান হ্রদ দেখলাম , হ্যাঁ বড় বটে।  এই যে ছবি


  তা শিকাগোর ফ্লাইটে  আমার পাশে দুই কাকু কাকিমা বসলেন।  আমার জ্যাকেট ও প্যান্টে ম্যাংগো জুস্ ঢাললেন।  আমি সবিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম আমি ম্যাচিওর্ড মানুষ হয়ে উঠেছি।  " নো ওরিজ  , আই উইল টেক কেয়ার অফ ইট আন্টি " ছাড়া কিছুই বললাম না ।  বাকি যাত্রাপথ যেমন বোরিং এক্সপেক্ট করেছিলাম তেমনই হলো খালি অনেক ভালো ভালো মেঘ , অনেক কটা মালভূমি আর খান কতক লেক দেখেছি।



আমায় আপনারা আওয়াজ দিতে পারেন কিন্তু কলকাতায় ট্যাক্সি স্টার্ট নেবার পর আমার মনে হয়েছিল একি রে বাবা কি করছে এ , রেলিং এ ধাক্কা লাগবে নাকি , আর তারপর অপরিসীম দক্ষতায় যেভাবে কাটালো আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম, এ কথা স্বীকার করতে আমি বাধ্য।
পরেরদিন এক বন্ধুর বাড়ি যাবো , তার বাড়িতে অনুষ্ঠান ছিল।  তখনই ওই ফুলের দোকানের ঘটনা ঘটলো।  আমি তো অব্বাক।  বলে কি রে , আড়াই বছরের পুরোনো খদ্দেরও  রেগুলর কাস্টমার। এ কি মহাকাশ টাইম জন্যে চলে নাকি। আর অটোর কথা তো বললামই , যেই থ্যাঙ্কু বলেছি , পরিষ্কার শুনতে পেলাম মনে মনে বলছে ব্যাটা ভাড়া না দিয়ে পালাবার ছক করছে নির্ঘাত।
 
ওলার দাদার গল্পটাও শুনিয়ে দিই তবে। " সে তো হয়েছিলো একবার , এক মন্ত্রী আমার গাড়ির সামনে বাইক রেখে চলে গেছে । হরিদ্বারের মন্ত্রী । আমি বলেছি কে রেখেছে এখানে বাইক । মন্ত্রী বলে আমি । আমি তো সোজা বলে দিয়েছি সরাও এখান থেকে । ব্যাস মন্ত্রী দিয়েছে আমায় এক চড় । আমার মাথা ফাথা গরম । এত বড় সাহস আমার গায়ে হাত তুলিস । দিয়েছি এক ঝরাকসে । ব্যাস পুলিশ , পার্টির ছেলেরা হাজির । পুলিশ কথা তথা বলে আমায় বলল , যে তুই যদি পায়ে হাত দিয়ে ক্ষমা চাস তবেই ছাড়া পাবি ।আমিও বললাম  আমার মাথা কেটে ফেললেও আমি মাথা ঝোকাব না । তারপর অন্য পার্টির আরেক নেতা এসে গেলো । আমায় বুকে নিয়ে বলল আমি অনেক দেখেছি কিন্তু এরকম ছোট বেলায় মা কা দুধ পিকে আয়া বহুত কম দেখা । ব্যাস তারপর লড়াই শুরু হয়ে গেলো । আমিও দিলাম উস্তুম খুস্তুম । তারপর থানার বড়বাবু নিজে আমায় ছেড়ে দিয়ে গেলো স্টেশনে । "
সিনেমার নাম কি দেবো বলুন তো ? বেঙ্গল কা সিঙ্ঘাম?
আচ্ছা শুভ  বিজয়া জানানোর পক্ষে কি বেশি দেরি হয়ে গেছে? তাইলে হ্যাপ্পি দিওয়ালি।  আপনাদের তুবড়ি দোতলা অব্দি উঠুক , রং মশালে বালি কম থাক , চরকি বাঁই বাঁই করে ঘুরুক।