Wednesday, January 27, 2021

পাড়ায়

 ফট করে ধারনা বদলে গেলে গোলমাল লাগে।  এই যে মনাদা, সারাক্ষণ মুখ গোমড়া করে থাকে, দোকানে ওষুধ কিনতে গেলে পাঁচন খাওয়া মুখে ওষুধ দেয়, কথা বলেনা একটা দুটোও, মোটেও ভাল্লাগেনা। সেদিন বারান্দা থেকে দেখি পিন্টুকাকুর দোকানের পাশে এক পাগলী নাকি পাগল, জুটেছে কোত্থেকে। জামা কাপড়ে জটায় জুটায় বোঝার উপায় নেই সে কে।  জামা জুতোই আমাদের আজকাল জানার উপায় কিনা। পাগল হলেও সে ভারী সতর্ক লোক। পা টিপে টিপে দুদিক থেকে আসা অটো, বাইক, গাড়ির ফাঁক দিয়ে পার হয়ে এসেছে।  টাইম কলের মুখ খুলে বন্ধ করে নিশ্চিত হয়েছে নাহ জল নেই। ফের পা টিপে টিপে ফিরে গেল নিজের জায়গায়। হাওয়ায় খানিক যোগ বিয়োগ করে  নিজের থলে হাতড়ে জল বের করে এঁটো বাটি ধুয়ে নিলো ভারী যত্নে।  আরো অনেকক্ষন পর কিকাজে বারান্দায় গিয়ে দেখি সে তখনো ওখানেই আছে। এদিক থেকে মনাদা বেরিয়ে পাঁউরুটির দোকান থেকে একটা গোল পাঁউরুটি কিনে এনে তাকে দিয়ে গোমড়া মুখে ফের ঢুকে গেল দোকানে। বোঝো! গোমড়া লোকটার মধ্যে এমন একটা মানুষ আছে কে জানতো! 


এ পাড়াটা আসলে একটা অদ্ভুত বিটকেল পাড়া। সারা দিন প্যাঁপোঁ হর্ণ, মানুষের বোধ বুদ্ধি কম যেখানে সেখানে থুতু তার মধ্যে কেমন করে শিরাওঠা আঙুল আলতো হাতে হাত বুলিয়ে দেয় পাগলাকে দেওয়া পাঁউরুটুর মধ্যে দিয়ে! ওই যে অত

সেদিন বন্ধুদের মধ্যে আড্ডা হচ্ছিলো,  কী কথা থেকে জানি ভালো থাকা খারাপ থাকার কথা উঠলো। আগের থেকে ডিপ্রেশন বেড়েছে সেই নিয়ে কথাসূত্রেই একজন বলল যে আগে মোটেও মানুষ ভালো ছিলো এমন না হয়তো বুঝতই না কোনটা ডিপ্রেশন। আমার তা মনে হয়না, ডিপ্রেশন ছিলো হয়তো কিন্তু এখন সত্যিই বেড়েছে। ভালো না লাগাও বেড়েছে যত আমাদের অপশন বেড়েছে। আগে বেড়াতে গেলে বেড়াতে যাওয়াই শেষ কথা ছিলো, কোন হোটেল, তার কি ভিউ কি রিভিউ, গাড়িতে এসি আছে না গদি আছে কিচ্ছুর তোয়াক্কা করতাম না। এখন যেন সেরা জিনিসটা পেলেও মনে হিয় কই ও তো আমার থেকে বেটার পেলো, বেটার দেখলো। সারাক্ষন আরো পাওয়ার হতাশার থেকে তো অল্পে আরাম পাওয়া ভালো ছিলো!  মানছি সাইকেলে বসে কাঁদার থেকে মার্সিডিজে বসে কাঁদা আরামদায়ক কিন্তু কান্না পেলে তো সে আরাম খুব একটা আরাম বলে মনে হয়না। লস্ট চাইল্ডের সে বাচ্ছাটার মতো দুনিয়ার তামাম জিনিস কেবল খারাপই লাগে। আসলে অভাব অভিযোগ তখনও ছিলো তবে আমার মনে হয় কাদা মাখা পা এড়াতে গিয়ে আমরা পুরোটাই কংক্রীটে ঢেকে মাটিতে জল যাওয়ার উপায় বন্ধ করে দিয়েছি। আর্সেনিকের উপদ্রব বেড়ে গেছে।  কিন্তু তামাম জায়গা কি  ঢাকে না , ফাঁকফোকর খুঁজে নেয় ঠিক কেউ, হাত বাড়িয়ে দেয় নোংরা ধুলো ছেঁড়াখোঁড়া পিঁচুটিওঠা মানুষটার দিকে,    জল জমা হয় ফের মাটিতে।