Wednesday, July 28, 2021

মায়া

 অভ্রান্তভাবে জানি আমি ঠিক কী চাই তার খোঁজ পাইনি এখনো। রোজ রোজ খাচ্ছি, ঘুমোচ্ছি, কাজ করছি যেন রোজ দিনই আসলে একই দিন বাঁচছি! আমি বলে তো না, আমার আশেপাশে অধিকাংশ মানুষকেই তো তাইই দেখি। এইই কী তবে জীবন? তবে আর অন্য প্রাণীদের থেকে আলাদা হলাম কোথায়? ওই কাটাকাটি করায়? সেদিন এক ঝিম ধরা দুপুরে বসেছিলাম নতুন তৈরী হওয়া এক আবাসনে। আমি গিয়েছিলাম একটা কাজে।লোকজন কেউ আসেনি এখনো, সব কটা ব্লকই প্রায় ফাঁকা, দু চারটে চড়াই, শালিক, ঘুঘুর আওয়াজ ভেসে আসছে ব্যস। বসে বসে অর্থহীন চিন্তা করছিলাম কিছু, বেশীরভাগ চিন্তাই যেমন হিয়, কোথাও পৌঁছয়না ওরকমই কিছু।  দেখি পায়ের আশেপাশে অনেকগুলো ডেঁয়ো পিঁপড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছুটোছুটি করে খুব কাজ করছে কিংবা এক্সপ্লোর করছে এ দুনিয়া। আমরা যেমন করি। খেলাচ্ছলে পা'টা তুললাম, একটা পিঁপড়ে থমকে দেখলো খানিক, ভাবটা, "একটু আগে এ পথে গেছে সে, দেখতে পায়নিতো। এই তো পাহাড় ছিলো, আবার এখানে একটা মস্ত গুহা তৈরী হল কখন!" অন্য একটা পিঁপড়ে একটু সাহসী, সে চলে এলো গুহার ভিতরে,ঘুরলো ফিরলো। আরো কিছু পিঁপড়ের আনাগোনা হল। ওইদিকের পায়ের আশেপাশেও অনেক কটা ঘুরছিল।তারপর যা হয় আমার গায়েও উঠলো কিছু, ঝেড়ে ফেলার তাগিদে পা'টা নেমে গেল, গুহা বন্ধ হয়ে গেল। কেউ কেউ মরলো। 

ভাবছিলাম, মানুষের জায়গা থেকে যদি ভাবি, আশপাশে যত বড় বড় পাহাড়, ভূপৃষ্ঠের অংশ দেখছি তা আসলে অন্য কোনো বিরাট জীবের অংশ মাত্র, এমনকি এই মহাকাশটাও।আমি একটা পিঁপড়ের কাছে যা,  আমার যেয়ে ওরকম বিরাট কোনো প্রাণ দাঁড়িয়ে আছে, খেলাচ্ছলে পা ফেলছে, সমুদ্র পাহাড় হয়ে যাচ্ছে কিংবা নদী বদলে যাচ্ছে। লক্ষ কোটি বছরের সময়টা তার কাছে হয়তো কয়েক মুহূর্ত,  যেমন আমার এই পায়ের নাড়াচাড়া?  


জানি এ নেহাতই অলস মনের চিন্তা ভাবনা, কোনো মানে মাথাই নেই। এক যদি ওদের ভাষা জানতে পারা যেত, বোঝা যেত কীরকম ভাবে দেখে ওরা এ পৃথিবী,  সেরা হবার লড়াই কতটা আছে ওদের, কেমন হয় ওদের মহাকাশযান,  ওদের অন্য গ্রহ মানে কি আমাদের অন্য দেশ? আমাদের অন্য নক্ষত্র মানে কি সেই বিরাট প্রানের অন্য দেশ? যাকে আমরা এই চোখে দেখতে পারছিনা,  আমাদের চেতনাতে ধারণ করতে পারছিনা! এরকমই যদি হয় সেক্ষেত্রে আরো বড় প্রাণ অন্য ছায়াপথ, পেঁয়াজের খোসার মতো লেয়ার যেন। কিংবা হয়তো আসলে যা নিষ্প্রাণ বলে বোধ করছি, সেই পাথর কিংবা গ্রহাণু কিংবা উল্কাপিন্ড প্রাণ বয়ে নিয়ে চলেছে, সেই প্রাণকে বোঝার ক্ষমতা আমাদের এই ক্ষুদ্র চেতনায় বোঝা অসম্ভব?


এলোমেলো চিন্তার এই সুবিধে কোথাও পৌঁছতে হয়না, তাই বুদবুদ ওঠে, মিলিয়ে যায়। আসলে ওই খোঁজের সন্ধানেই হয়ত, কেন,  এ সবের অর্থ কি? একটা বিশাল বাসস্থান, বিশাল গাড়ি বিলাসের চূড়ান্ত কিংবা প্রবল প্রতাপ সেসব কিছুই তো এ অনন্ত চলার অংশ নয়, হতে পারে না। তাহলে কী? একটা কোনো সুর আছে যেন আমাদের নাগালেই কিন্তু ধরার বাইরে, ধরতে পারার মতো শক্তি কই!