Friday, December 23, 2016

মনখারাপের গন্ধ

মন খারাপ ব্যাপারটা খুব গোলমেলে কেন যে মন কেমন করে কেন যে করেনা কে জানে।  খেয়াল করলেন কি , মন কেমন বললাম দ্বিতীয় ক্ষেত্রে আসলে কিন্তু দুটো মোটেও এক না। বন্ধুত্ব আর প্রেমের যতটুকু তফাৎ ততটাই তফাৎ এক্ষত্রেও।  আর তাই গুলিয়ে যাওয়া সহজ।  এই যে শীতের পড়ন্ত বেলা ,আমি অফিসে বসে হিজিবিজি টাইপ করছি , কাজে ফাঁকি মারছি এসবের মধ্যেও আমার  মন পড়ে আছে একটা নদীর ধারের ঘুমন্ত গ্রাম , দাঁড়িরা ঝপাং ঝপাং দাঁড় টানছে , দূরে দূরে একপাল গরু ঘুরে বেড়াচ্ছে , একটা বৌ এক বোঝা এঁটো বাসন নিয়ে মাজতে এসেছে।  আমি কিন্তু জীবনেও এরকম দৃশ্য দেখিনি।  পড়েছি হয়ত,  দেখিনি। আমার গ্রামের বাড়ির দিকে নদীই নেই ।  শীতকালে দুপুরে মা জ্যেঠিমা জ্যেঠতুতো দিদিরামিলে  রোদ পোহাতে যেত ছাদে।  লেপ তোষক মেলা থাকত।  কয়েৎবেল মেখে খেত , আমার জন্য বরাদ্দ থাকত কমলালেবু। আমি  বই পড়তে পড়তে কমলালেবু খেতাম। বিকেলবেলা হাফপেন্টুল জুতো মোজা পরে ফুটবল খেলতে যেতাম , শীতকালে বোধহয় একটু আগেই যেতাম।শীতকালে আলু ফলত , ছুটির দিন পড়াশোনা সেরে আমি মাঠে যেতাম বড় জ্যেঠা মানে বাবুজির সাথে।  ছোট ছোট আল দিয়ে দিয়ে খাল থেকে জল এনে মাঠে দেওয়া হত।  আমি আল গুলো ফুটো করতাম , তারপর ফের বাঁধ দিতাম।  সারা হাতে পায়ে কাদা মেখে একটা বা দুটো আলু বসতাম। আলু বসানোর নিয়ম আছে , ওই যে ছোট ছোট চোখ মত , ওগুলোর এদিক ওদিক করে লাগাতে হয়। আমি যে আলুবসাতাম সেই আলু গাছটা থেকে আলু হতো  কিনা তা জানার আগ্রহে রোজ উত্যক্ত করতাম বাবুজিকে।  সর্ষে গাছের মধ্যে দিয়ে ইচ্ছে করে যাতায়াত করে গায়ে সর্ষে ফুল মাখতাম , কেউ দেখলেই বকুনি দিতো। সন্ধ্যেবেলা বাড়ির সামনে আগুন পোহানো হতো।  তারপর আলু কাটা হতো , মনে আলুর চোখ  দেখে দেখে কাটা হতো বসানো হবে বলে। বাকি আলুটা খাওয়ার জন্য ব্যবহার হতো। আলুরদম মুড়ি আর দুধ যে কি অমৃতের মতো খাবার শহুরে লোকেরা জানতেও পারবে না।  অবশ্য অমৃত ব্যাপারটাই তো তাই। শান্ত  গেরস্থালি শেষপাতে ক্ষীর কারোর কাছে অমৃত কারোর কাছে বিষ।  হ্যাঁ  যা বলছিলাম , আমাদের বাড়িতে গরু ছিল সে গরুর দুধ এর মোটা মিষ্টি সর পড়তো , আমি দুড়মুড়ি আলুরদমের সাথে ওই সরটা  মাখতাম।  ঠান্ডা কোনোদিন পড়তো কোনোদিন তার আত্মীয়  পরিজন নিয়ে আসত। মানে আমরা বলতাম আজ শীতের বাবা মা সবাই এসেছে। এই যে শীতকাল এর জন্য আমার মাঝে মাঝে মন কেমন করে, মন খারাপ না। আমার একটা যদি নদীর ধারে জায়গা থাকতো তবে আমি এই যে শীতের ভোরে লেপের আদরে থাকার মতো বুকের মধ্যে যে মনখারাপটা সেঁধিয়েছে তাকে তুড়ি মেরে বের করে ওই জায়গায় চলে যেতাম। ভালো লাগতনা হয়ত, সন্ধ্যের পর ঝিঁ ঝিঁ ডাকা ঘুমন্ত জায়গা আমার ভালো লাগবেনা এতো বলাই বাহুল্য। এত কথার কারন আর কিছুই না মন ভাল লাগছে না। কিছুতেই না,  আর্সালানের বিরিয়ানি  না,  নলেন গুড়ে আর পিঠে না,  পুরোনো বই যাই দিই মন খারাপটাকে,  সেই লস্ট চাইল্ড এর বাচ্ছাটার মতো না না করছে। এ ব্লগ যদি কেউ পড়েন এ লেখা যদি কারোর চোখে পড়ে বলতে পারেন আপনাদেরও এমন হয় কি? কেমন করে রোদ জ্বালানো যায়?

2 comments:

  1. আমার তোমার পোস্ট পড়ে মন ভালো হয়ে গেল, প্রদীপ্ত, কাজেই মন খারাপ তাড়ানোর ওষুধ দিতে পারলাম না। থ্যাংক ইউ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. এটা মন ভালোর ওষুধ তো বটেই :) থ্যানক ইউ

      Delete