Tuesday, January 3, 2017

ফ্রেন্ডায়নামিক্স

-"বাবান,  অ্যাইই বাবান ফের টিভির সামনে।  সারাদিন তোর কার্টুন দেখা আর ভিডিও গেম ছাড়া আর কাজ নেই না। "
-"বারে আমার তো ছুটি এখন। এখনও কি ক্লাস শুরু হয়েছে নাকি। "
- কেন এতো বই কিছু পড়া যায় না না? কেয়ারলেস মিস্টেক গুলো হয় বলে মিস বলেছেন না তোকে বই পড়তে।
এরপর যা হবার তাই, বাবান এর ভ্যাঁ, ওর মা এর মার ইত্যাদিতে পাড়া চমকিত,  টিভি বন্ধ,  অল কোয়ায়েট অন ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট। রন্টুর দিদি আর ভাগ্নে দিন দুয়েকের জন্য এসেছে, টিভি আর গেম নিয়ে মা ছেলের খন্ড যুদ্ধ লেগেই আছে। আজ কিছু বাড়াবাড়ি এই যা। রন্টু তখন ডমরুধরের আড্ডায় ডুবে ছিলো, খেয়াল করেনি। খানিকবাদে চা এর দরবার করতে গিয়ে দেখে পরিস্থিতি কিঞ্চিৎ বেশীই শান্ত। বাবান এর দাদু দিম্মা গেছে ডাক্তারের কাছে তাই বাবান আজ প্রায় একা অভিমন্যু,  ওর মা মানে মৌ একাই সপ্তরথী তুল্য আর কি বাবান এর জন্য। ভাগনের ভগ্ন হৃদয় পুনরুত্থানে যুগে যুগে মামারাই আবির্ভূত হন।  তাই রন্টু বারান্দায় গিয়ে বাবানের কাছে দাঁড়ালো। সে তখনও ফোঁপাচ্ছে।
- " আরে ধুর ব্যাটা,  তুই দেখি আমার কালকে তোর সাথে বক্সিং টুর্নামেন্টটা প্রায় কেঁচিয়ে দিলি। আমি তো আবার বাচ্ছাদের সাথে লড়ি না আমি বড়দের সাথে ছাড়া লড়িনা।"
- "আমি বড় হয়ে গেছি" - কান্না চেপে জবাব এলো।
- "তাহলে কাঁদছিস যে,  বড়রা কাঁদে নাকি।  তা তুই যে বই পত্তর মোটে পড়িস না তার ফলে তো তুই জানতেই পারছিস না সে কেঁদো বাঘ আর ডাইনোসর এর যুদ্ধ টার কথা "।
- "ধ্যাস ওরকম লড়াই আবার হয় নাকি, বাঘ আলাদা সময় এর আর ডাইনোসর আলাদা সময় এর।  মামান তুমি আমায় বড্ড ছোট ভাবো।"
- ধুর ব্যাটা,  সে তো এক এই ওয়ার্ল্ড এ দুজন দু সময়ের লোক। আমি যে ইউনিভার্স এর কথা বলছি সেটা তো প্যারালাল একটা ইউনিভার্স। সেখানে বাঘ,  ডাইনোসর,  তিমি, ইঁদুর সব্বাই থাকে। শুনবি তো বল।
- হ্যাঁ হ্যাঁ মামান বলো প্লিজ। 
- দাঁড়া এক কাপ চা নিয়ে আসি আর ওয়াইফাই টা কানেক্ট করে দিই দিদিকে ব্যাস তাইলে আমরা অন্য ঝাড়া হাত পা হয়ে অন্য ওয়ার্ল্ড এ।
চা খেতে খেতে,  রন্টু শুরু করে, সেবার বেজায় বৃষ্টি হচ্ছে জঙ্গলে।  বৃষ্টি মানে কোলকাতায় যেমন দেখিস এক ঘন্টা খুব জোর তেমন না।  জঙ্গলে বৃষ্টি মানে সে একটানা।  সাতদিন দশ দিন ধরে হয়েই চলেছে। জঙ্গলের মধ্যে ঝির ঝির করে বয়ে চলা নদী সে জল কোথায় রাখবে না বুঝতে পেরে দুকূল ছাপিয়ে দিচ্ছে। বনের পশুদের হয়েছে মুশকিল। ওরা সাঁতার জানে কিন্তু এরকম চুপ্পুর বৃষ্টি খাওয়া দাওয়া হচ্ছে না ভালো, রোদের দেখা নেই বলে মন মেজাজও ভালো নেই। কত বড় বড় পশু গেলো ভেসে। একটা বাঘ ছিলো ওই জঙ্গলে। বাঘেরা ইউজুয়ালি একাই থাকে। এ বাঘটাও একাই থাকত। তার উপর ছিলো সে বদমেজাজি। ফলে বন্ধু বান্ধব প্রায় ছিলোই না তার। কেবল একটা ছোট সাদা ইঁদুর কি করে যেন তার বন্ধু হয়ে গেছিলো। সাদা ইঁদুর আবার বেজায় ভদ্র ইঁদুর। সাত চড়ে রা কাড়ে না,  মনে বেশী দুঃখ হলে কুড়কুড় করে আরও খানিক গর্ত খুঁড়ে মাটির নিচে চলে যায়। এ দু মক্কেলের বন্ধুত্ব হবার চান্স নেই তবু হয়ে গেছিলো কিরকম করে যেন।
- ও মামান,  ইঁদুরের ভাষা আর বাঘের ভাষা কি এক নাকি, ওরা কথা বলত কি করে?
- শোন ব্যাটা,  বন্ধুত্বের একরকম ভাষা হয়, যেমন তুই যখন তুই যখন ক্লাসে গার্ডার ছুড়ে লোককে মারিস আর সেই সময় মিস আসলে তোর বন্ধু অয়ন দূর থেকে তোকে সাবধান করে দেয় তেমন। তবে এরা কথা বলত জঙ্গলের ভাষায়।
- জঙ্গলের ভাষা কি হয় মামান?
- মানুষেরা কি সব জানে বা বোঝে নাকি? এই যে জঙ্গলে কত কি ঘটে যাচ্ছে,  রাত হলে হুতুম প্যাঁচা হুতুম থুমো করে কি বলছে এসব মানুষ বোঝে না বলে ভাবে মানুষ খালি কথা বলতে পারে তাদেরই ভাষা আছে। কিন্তু তা নয় সবার আলাদা আলাদা ভাষা আছে, সে অন্য একদিন বলবখন, এখব গল্পটা শোন।
এইবারের বৃষ্টিতে জল যখন আস্তে আস্তে নিচু জমি ছেড়ে এগোচ্ছে ক্রমে আর একটু উঁচুর দিকে তখন পশু পাখীরা সব  উড়ে গেছে, বাঘ তো আগের দিনই শজারুকে চোখ রাঙিয়ে এসেছে, সেই নিয়ে কিছু বচসা হয়েছে। বাঘকে কেউ আর ডাকেনি। ইঁদুর এর বন্ধুরা অবশ্য ইঁদুরকে ডেকেছিলো কিন্তু ইঁদুর বন্ধুকে ফেলে যায়নি।  সে বাঘকে ডাকতে গেছিলো। কিন্তু এর মধ্যেই, জলের বেগ বেড়ে যায় খুব আর সেই সাথে বাঘ আর ইঁদুর দুজনেই ভেসে যায়। ইঁদুর বাঘের গোঁফ ধরে ঝুলে পড়েছিলো বলে একসাথেই ছিলো।
নদীর স্রোতে অনেক সময় ঘুর্নি হয় দেখেছিস তো?আরে মনে নেই সেবার সেই দামোদরের বান দেখাতে নিয়ে গেছিলাম,  দেখালাম, হ্যাঁ ওরকম। ওরকম একটা বড় পাকের মধ্যে দু মক্কেল গিয়ে পড়ল ভাসতে ভাসতে। তারপর সোঁ সোঁ শব্দ আর হাঁচরপাচোঁর ভেসে যাওয়া ছাড়া কিছু খেয়াল নেই তাদের।  অবেক অনেক্ষন পর তার টের পেলো স্রোত হাল্কা হয়ে এসেছে,  মৃতপ্রায় অবস্থায় তারা এক নদীর ধারে পৌঁছল।
ঝকঝকে রোদ উঠেছে।  অমন বিরাট একটা বিপর্যয় যে ঘটেছে টেরই পাওয়া যায় না। ইঁদুরের জ্ঞান এলো আগে।  সে উঠে বাঘের নাকের ফুটো দিয়ে লেজ গলিয়ে সুড়সুড়ি দিয়ে ঘুম ভাঙালো বাঘের। তাদের সেই বনটাই না?  তবে গাছপালা গুলো এমন অন্যরকম লাগছে কেন? যাই হোক বাঘ আর ইঁদুর দুজনেই এইসব ব্যাপারে খিদে পেটে মাথা ঘামায় না। ধড়ফড় করে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ালো তারা।
-কিরে সব গেলো কোথায় বলত? অ্যাইসান খিদে পেয়েছে মনে হচ্ছে তোকে দিয়েই ব্রেকফাস্ট করি, হেঁড়ে গলায় বাঘ বলে উঠলো।
-" মামান, বাঘটা কি পচা,  বন্ধুকেই খেয়ে নেবে বলছে "।
-"দূর ব্যাটা,  ইয়ার্কি করে বলেছে,  এই যে কাল আমাদের লড়াই হবে তার মানে কি আমরা সত্যি কারের শত্রু  নাকি? যাইহোক শোন তারপর।"
ইঁদুরও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে,  গাছে চেনা পাখিদের ডাক শোনা যাচ্ছে না,  চেনা বন্ধুদের কথাবার্তাও শোনা যাচ্ছে না। এক জায়গায় বসে থাকলে তো হবে না,  তাই তারা এগোলো একটু। ইঁদুরের আর কি সে তো ঘাসের বীজ, ছোট পোকা টোকা খেয়ে নিচ্চে মজাসে। ইঁদুরের পার্সোনাল ফেভারিট ব্ল্যাক ফরেস্ট কেক অবশ্য, তা যখন পাচ্ছে না যা পায় খেয়ে নিচ্ছে। খেয়াল কর বাবান,  ইঁদুরটার বুদ্ধি কেমন খাওয়া নিয়ে অত ইয়ে নেই।
- "মামান তুমি কি আমায় গল্প বলতে গিয়ে পড়ার কথা বলতে চাইছ তাহলে আমি আর শুনব না।  তাছাড়া ব্ল্যাক ফরেস্ট কেক ইঁদুর পাবে কোত্থেকে।"
- "আরে না খামোখা মামার বাড়ি এসে কেউ পড়ার গল্প করে নাকি। আমি বললাম ইঁদুরটার ভালো বুদ্ধি। আর ব্ল্যাক ফরেস্ট কেক পাবে না কেন, সেই সেবার ইঁদুরদের গ্রামের একটা স্মার্ট ছোকরা ইঁদুর গেছিলো তো শহরে,  কেকের দোকানেই থাকত তো,  দেখে শিখে নিয়েছে। নেহাত ওর ডাস্ট এলার্জি ছিলো তাই জঙ্গলে ফিরে এলো নইলে ব্ল্যাক ফরেস্ট কেক ছেড়ে আসতই না। আর শোন তুই যদি এভবে বিরক্ত করিস আমি আর বলব না গল্প।"
- আরে না না মামান, রাগ কোরোনা প্লিজ,  বলো "।
হ্যাঁ,  এদিকে বাঘের তো খিদে পেয়েছে সে তো আর এইসব ঘাসপাতা খেয়ে বাঁচতে পারবে না। মাংস চাই।  কি হবে দেখতে দেখতে দেখে একপাল হরিণ চড়ছে। ব্যাস বাঘের ব্রাঞ্চ কম্পলিট। ব্রাঞ্চ মানে জানিস তো? ব্রেকফাস্ট আর লাঞ্চ এর মাঝামাঝি খাবার আর কি। কিন্তু এরকম কেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে, জঙ্গলটা, তবে কি সবাই অন্য জায়গায় চলে গেলো?  আসলে কি হয়েছে বলত, বাঘ বাবাজি আর ইঁদুর রানী ওই যে ঘূর্ণিতে পড়েছিলো, ওটা ছিল একটা একটা ওয়ার্ম হোল।
- "মামান ওয়ার্ম হোল কি হয়"?
- বলছি।  কিন্তু আমি যখন বললাম প্যারালাল ওয়ার্ল্ডে বাঘ আর ডাইনোসর এর লড়াই হয়,  প্যারালাল ওয়ার্ল্ড কি হয় জিজ্ঞেস করলি না কেন?
- "আমি তো জানি,  তুমি সেদিন  গল্প বলছিলেনা, টাইম ট্রাভেল নিয়ে, কিন্তু ওয়ার্ম হোল কি বলোনি তো।
- আচ্ছা বলিনি? তবে শোন,  ছোট করে কেমন, নইলে বাঘটার আবার দুঃখ হবে ওদিকে। ধর তুই একদিন পেটে ব্যাথার বাহানা করে স্কুল গেলিনা,  না না আমায় লুকিয়ে লাভ নেই আমার এক্সট্রা একটা পাওয়ার আছে আমি এসব জানি, হ্যাঁ তো স্কুল গেলিনা আর সেদিন তোদের স্কুলে একটা সারপ্রাইজ ট্রিট হলো। তুই গেলি না তাই খেতে পেলিনা এবার পরের দিন স্কুল গিয়ে তোর বন্ধুর থেকে তুই জানতে পারলি ঘটনাটা। তোর কাছে একটা টাইম মেশিন থাকলে ডেফিনিটলি তুই আগেত দিন ফিরে যাবি আর স্কুল গিয়ে খেয়ে আসবি। কিন্তু তাহলে তো আজকে তোর বন্ধুর সাথে এ কথা বার্তাটাই হতোনা তাই না। তাই বিজ্ঞানীরা বলছে তুই যেই মুহূর্তে টাইম মেশিনে করে অতীতে ফিরে গেলি আর অতীতটা কোনোভাবে ট্যাম্পার করলি সাথে সাথে একটা প্যারালাল ওয়ার্ল্ড তৈরী হয়। সে দুনিয়ায় তুই স্কুল।গেছিস,  ট্রিট পেয়েছিস। আর এ দুনিয়ায় ট্রিট পাসনি।  এবার এই সব ভিন্ন যে প্যারালাল দুনিয়া চলছে তার মধ্যে চলাচল সম্ভব আর এই রাস্তাটাকেই বলছে ওয়ার্ম হোল। কোথায় যে আছে এ ওয়ার্ম হোল কেউ জানে না। আমাদের বাঘ বাবাজি আর ইঁদুর রানী সেই ঘূর্ণিতে পড়েছিলো সেই সময় ওরা একটা ওয়ার্ম হোলে পড়ে গেছিলো।
এইবার বাঘ আর ইঁদুর একটা জরুরী মিটিং এ বসল। অনেক বাকবিতণ্ডার পরেও দুজনে কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না কি হয়েছে ব্যাপারটা। সেই সময় হঠাৎ একটা রক্তজল করা হুংকার শুনতে পেলো তারা। বাঘ বনের রাজা, সে যে যথেষ্ট সাহসী সে কথা কে না জানে।  আর ইঁদুর ছোট হতে পারে তবে সাহস তারও কম না। তবুও সে ডাক শুনে দুজনেরই প্রাণপাখি খাঁচা ছাড়া হবার জোগার। তারা আগে এমন ডাক শোনেনি। সামনে তাকিয়ে দেখে বাঘের দ্বিগুণ চেহারার এক বিরাট প্রাণী এগিয়ে আসছে। ওরা তো আর আগে ডাইনোসর দেখেনি তাই বুঝতে পারলো না এটা কে তাই ডাইনোবাবু নিজেই নিজের পরিচয় দিলেন। 'আমি ডাইনো দ্য গ্রেট, যাকে বলে এ জঙ্গলের শেষকথা। কোথাকার খোকারে তুই'? বাঘ তো হেভভি খচে গেলো। হ্যাঁ তাকে খোকা বলা ইয়ার্কি পায়া,  সে রাজা বাঘ তাকে এমন করে ইয়ে করা। বাঘও রেগে মেগে উত্তর দিলো 'শোনো আমি বাঘ আমার জঙ্গলের রাজা তুমি ডাইনো না ভলক্যানো আমার জানার দরকার নেই। আওয়াজ নিচে রাখো। '
এই সময় হঠাৎ ডাইনোর নজরে ইঁদুর পড়লো। মানে পড়ার কথা না,  তাও কিরম দেখতে পেয়েছে। আর পেয়েই ডাইনোবাবুর সেকি হাসি, খ্যাক খ্যাক, খাউয়া খাউয়া, খোয়াক খো খোয়াক খো মানে যতপ্রকার বিশ্রী করে হাসা যায় হেসেছে আর কি। বাঘ আর ইঁদুর দুজনেই খুব অবাক। এই ধেড়েটার মাথায় গন্ডগোলা আছে নাকি রে। হাসি থামিয়ে ডাইনো বলল,  এই পোকাটা কে রে তোর সাথে, তোর বডিগার্ড নাকি। অপমানে ইঁদুরের নাক লাল হয়ে গেলো। মানে ইঁদুর যাকে খায় তাকে বলা মানে কি হেনস্থার কথা। বাঘ ইঁদুরের বন্ধু তো তাই বাঘ ব্যাপারটা বুঝে গেলো আর রেগে গেলো খুব। 'এই শোন মোটুরাম,  আমার বন্ধুকে আজেবাজে কথা বলার স্পর্ধা পাস কোত্থেকে তুই। চুপ করে যা আর সরি বল না হলে তোর খবর আছে। '
'খবর আছে? হ্যাঁ আমার?' ফের এক দফা খচমচ করে হেসে নিলো ডাইনো।
'শোন সাহস থাকে কাল সকালে এই নদীর ধারে আয়। আশা করি ভয় পাবি না।  লড়ে দেখাস আমার সাথে।'
' ওরে তোকে ভয় পাবো!! তুই বরং তোর বডিগার্ড পোকাকে নিয়ে আসিস। ' বলে দুমদাম করে চলে গেলো। 
ইঁদুর দুঃখ পেয়েছিলো খুব কিন্তু একই সাথে ভয়ও পেলো বাঘের জন্য। অতবড় চেহারার প্রাণীটার সাথে বাঘ লড়বে কিভাবে। হ্যাঁ বাঘ শক্তি সাহস দুটোরই তুলনা হয় না তাও। এই অজানা দেশে তো বাঘ একমাত্র বন্ধু।  তাছাড়া বাঘ বদমেজাজি হলেও বাঘকে ইঁদুর খুব ভালোবাসে, এমন চমৎকার বন্ধু তার আর নেই। ইঁদুর কিচমিচ করে সেটাই বলল বাঘকে। বাঘ বলল অত ভাবিস না যা হবে দেখা যাবে কাল।
পরেরদিন সকাল সকাল দুজনেই হাজির নদীর ধারে। ওখানে অবশ্য শুধু ওরা দুজনেই ছিলো না।  ইঁদুর এসেছে, দূর থেকে হরিনেরা এসেছে, নীলতিমি এসেছে,  ম্যাকাও পাখি এসেছে আরও অনেকে এসেছে যারা ভুল করে ওয়ার্ম হোলে ঢুকে পড়েছিল। ডাইনো বলল প্রাণের মায়া চাইলে ফিরতে পারিস কিন্তু। বাঘ বলল তোর ভয় করে তুই পালা। ডাইনো বলল 'বেশ তবে আর দেরী করা কেন। শুরু করা যাক। '
রেফারি কেউ ছিলো না। জঙ্গলের নিয়ম হলো যে বাঁঁচবে সে জিতবে। তারপর সে লড়াই শুরু হলো। বাঘের ক্ষিপ্র গতি ডাইনোর বিপুল শক্তির সামনে লড়ে যেতে দিচ্ছিলো। একসময় বাঘ এর পা পড়ে গেলো একটা গর্তে। ইঁদুর ভয়ে চোখ বুজে ফেলল। কিন্তু অবাক ব্যাপার ডাইনো হাত বাড়িয়ে বলল উঠে এসো হে আগে বেকায়দায় পেয়ে তো মারতে পারিনা। বাঘ তো অবাক। আরে এতো খারাপ লোক না। ফের বাঘ উঠে আবার লড়াই শুরু হলো এবার ওই গর্তে ডাইনোর পা ঢুকে গেলো। এবার বাঘ বলল তুমি উঠে এসো দেখি আমার হাত ধরে। এবার ডাইনোও অবাক। নীলতিমি বলল পাশ থেকে ওহে তোমরা খামোখা লড়ছ কেন? দুজনেই তো দিব্যি ভালোমানুষ দেখছি। বাঘ মুখ গোমড়া করে বলল ও আমার বন্ধুকে অপমান করেছে। ডাইনো অবাক হয়ে বলল,  অপমান করলাম কই হে আমি তো মজা করছিলাম। অ তুমি আমায় জানোনা কিনা তাই ভুল বুঝেছ। ম্যাকাও আর ফিঙেও বলল হ্যাঁ হ্যাঁ ডাইনোদাদা আমাদের অমন খারাপ নয়।
তারপর আর কি ব্যাস। মিটমাট হয়ে গেলো। ওরা ওখানেই রয়ে গেলো সবাই মিলে।
যা ব্যাটা এবার দেখতো মাংসের গন্ধ আসছে মনে হচ্ছে দুজনের জন্য দুখানা করে কষা জোগাড় হয় কিনা?

4 comments:

  1. এটা চমৎকার হয়েছে, প্রদীপ্ত। আরও গল্প চাই ডাইনো আর বাঘমামার।

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ কুন্তলাদি :)

      Delete
  2. লেখাটা পড়েই আমার "কল্পনা উত্তেজিত হইয়া উঠিল"। মেয়েকে অবিলম্বে এই লাইনে গল্প শোনাতে হচ্ছে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংকইউ ঋজুদা,এ গল্পটা ওর কেমন লাগ্লো জানিয়ো :)

      Delete