Friday, March 4, 2016

ঘোরাঘুরি - হার্শী(2)

জীবন অনেকটা বাইক চালানোর মতো। হু হা স্পিড তুলে যাচ্ছ , আচমকা গর্ত , লাও , হয় ছিটকে পড়লে নয় কোনরকমে বেঁচে গেলে।হাঁ সাবধানী বাইক ওলা কি নেই আর , প্রচুর। অচেনা রাস্তায় ৪০ এর বেশি স্পিড তুলবেই না। আমি ওই প্রথম শ্রেণীতে পড়ি। বাইক  থেকে ছিটকে পড়ি , চোট্ পাই আবার অজানা রাস্তায় গাড়ি ছোটাই। অজানা রাস্তা আমায় গাছের ছায়া , নদীর জল দেয়, এবড়ো খেবড়ো রাস্তাও দেয়না এমন নয়। এত কথা বললাম কারণ হার্শী ঘোরার বাকিটুকু বলতে বসেছি কিনা। 
যাই হোক , হার্শীতে পৌঁছে , অনেক কেক , মিষ্টি (বাড়ির তৈরী বেকড সন্দেশ) আরো অনেককিছু সাঁটিয়ে দেখি অর্ণব দা , আর অনন্যাদি দুজনেই আমার জন্যে হরেক রকম গিফট এনে রেখেছে। আহা এই বয়েসেও বড়দিনের গিফট পেতে কি যে ভালো লাগে তা কি বলব। তা এমন দাদা দিদি কি আমার পাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু পেয়েছি তো :)।  
বেকড সন্দেশ 

হু হু বাওয়া , ছবি তুলে রেখেছি,  এক আধটাও সরানোর চান্স নেই 

আমরা দুটি ভাই যিশুর গান গাই 


 দেহে মনে বল জোগার করে বেরোনো হলো, অরুনাংশু দার বন্ধুকে নিয়ে আসা হলো। তারপর বাকি কটা  দিন যা আড্ডা হলো তা তো আর না বললেও চলে। এর মাঝে একদিন নর্থ আর সাউথ এর যে সিভিল ওয়ার  হয়েছিলো , সেই গেটিসবার্গ যাওয়া হলো। একটা জিনিস দেখে ভালো লাগে , বিজয়ী এবং বিজিত দুইয়ের জন্যই স্বারক রয়েছে।কেমন উত্তর দক্ষিন ঝগড়া করার পরেও মিলেমিশে আছে, আমাদের ভারত পাকিস্থান বাংলাদেশ এর বর্ডার মুছে যদি এমন একটা যুক্তরাষ্ট্র হত বেশ হত কিন্তু। তা হওয়ার না বোধহয়।  পারস্পরিক কারনহীন ঘৃনা কি আর যাওয়ার। 



গেটিসবার্গ যাওয়ার পথেই এদেশের আদি অধিবাসী আর বর্তমান অধিবাসী দের লড়াই এর গল্পটা জানা হলো। আগে ভাসা ভাসা  জানতাম। ব্রিটিশ উপনিবেশের একদল দন্ডপ্রাপ্ত আসামী জাহাজে করে ছেড়ে যাওয়া হয়।  ঠান্ডায় খিদেতে তাদের নরখাদক করে তুললেও শেষ রক্ষা হয়নি। সেই জাহাজের কেউই বাঁচেনি। তারপর আরো দু জাহাজ লোক আসে, আরো বেশ কিছুদিন পর. তার কয়েকজন টিকে যায়।তারপর আরো এবং তারাই ক্রমে শক্তিশালী হয়ে এদেশে আদি অধিবাসীদের মেরে তারায় , লুকিয়ে পরতে বাধ্য করে।  
গেটিসবার্গের যে জায়গায় লড়াই এ  উত্তরের লোক জিতে গেছিলো ( দক্ষিন নাকি একটা সময় অবদি জিতছিলো তারপর তাদের সেনাপতি ভাবলো আরে এত মেরেই এনেছি প্রায়, চলো সোজাসুজি চার্জ করা যাক, এদিকে গরুগুলো বোঝেনি পাহাড়ের নিচে আছে ওরা , ওই ভাবে হামলা করা আর আত্যহত্যা করা একই ব্যাপার হবে) সেই জায়গায় একটা একটা স্থাপত্য আছে যেটা কেমন দূর্গ মার্কা দেখতে। তবে উপত্যকাটা সত্যি সুন্দর।ছোটো টিলা , ঢেউ খেলানো মাঠ , গাছের সারি সব মিলিয়ে চমত্কার ল্যান্ডস্কেপ।


আসলে এই হার্শী গ্রামটা বেশ সুন্দর।ছিমছাম ছোট্ট। দূরে পাহাড় আছে, ছোটো নদী আছে , আঙুরের খেত আছে। ঘোড়ার আস্তাবল আছে আবার চকোলেট  ফ্যাক্টরি এবং তার কারণে গড়ে ওঠা এই জনপদ টাতে রেসের মাঠ ও আছে।
হার্শী চকলেট ফ্যাক্টরি এর লোকজন ব্যবসা ভালো বোঝে তাই , ওখানে গিয়ে কি করে চকলেট তৈরি হয়ে তার ডেমো দেখা যায়। এমনকি একখান করে চকলেট খেতেও দেয়. কিন্তু যেখান দিয়ে বেরোয় লোকে ওই ট্যুর শেষ করে সেখানে যথারীতি গুচ্ছ ম্যাগনেট টিশার্ট ইত্যাদি হরেক মাল, যার দাম মোটেও ৫টাকা নয়। 
বোঝো!




আঙুরের ক্ষেত আর ঘোড়ার চারণভূমি পাশাপাশি। আমি আগে কখনও আঙুর ক্ষেত ও দেখিনি, ইচ্ছে ছিলো আঙুর  ছিঁড়ে মুখে ফেলার কিন্তু , ইয়ে একা কিংবা আমার বাঁদর বন্ধুকুলের সাথে যাইনি।  তাই সংযত বাচ্চা হয়ে রইলাম।

আঙুর ক্ষেত 




ইন্ডিয়ান ক্রেভের্নস বলে একটা গুহা আছে যেখানে স্ট্যালাগটাইট আর স্ট্যালাগমাইট দেখা যায়. এক ভদ্রলোক নাকি এখানে একা একা বিশ বছর কাটিয়েছিলেন।বোঝো! ওই প্রায়ন্ধকার গুহায় এদ্দিন কাটানো! কার সুখ যে কিসে থাকে কেই বা বলতে পারে।

এটা ভুট্টার মত দেখতে না?



সেই আমিশ দের গপ্পো বলেছিলাম না কোন একটা লেখায় তারা 

চাকা ব্যবহার করে বলে সভ্য সমাজের সাথে মিশবো না 


 ফেরার সময় গ্রেহাউন্ড এর বাস ধরে ফিরছিলাম। রাতের বেলা ট্রাভেল করা একটা অন্য অনুভূতি। দুপাশের গাছ গুলো ছায়া ছায়া হয়ে থাকে। দূরে মিটমিটে আলো।আকাশে আজ মেঘ বলে পুরপুরি অন্ধকার ননা। কেমন আলোর একটা আভা এখনো। পেন্সিলভেনিয়া থেকে ওয়াশিংটনডিসি এর রাস্তায় খুব বেশি শহর পরে না। একটানা গাড়ির স্রোত, ভিডিও গেমস এর মতো।
একটু একটু খিদে খিদে পাচ্ছিলো, পকেট হাতরে দেখি, ক্রিস্পি মজুদ। অনন্যাদি, রাস্তার কথাও ভোলেনি।শরতচন্দ্রকে "সেন্টিমেন্টাল " টাইপ বলে যতই খোরাক করি, সেই কবে লিখে গেছিলো " এদেশের পথে ঘাটে দিদিরা রয়েছে", আজও সমান সত্যি,শুধু দেশে না বিদেশেও।

8 comments:

  1. Sotyi Pothe ghate eto Didi pawa jai, durdanto smriticharon,ekdom chokher samne bhese uthlo,nah abar Hershey r jonyo Mon hu hu korche,sobey California theke Elam,tui abar lobh dekhachis

    ReplyDelete
  2. খুব ভালো হয়েছে, আরো এরকম লেখা চাই।

    ReplyDelete
  3. Khub bhalo laglo lekhati...Arit Das

    ReplyDelete
  4. কি ভাল যে লিখেছিস। "পথে ঘাটে দিদিরা রয়েছে..." দিয়ে অসাধারণ বিরতি....আবার অপেক্ষা পরের অংশের।

    ReplyDelete