Tuesday, August 9, 2016

ঘোরাঘুরি ( নিউ মেক্সিকো এবং অন্যান্য )(2)

পৌঁছে দেখি দিদিমা দিদিমা চেহারার একজন রিসেপশন এ বসে আছেন। চেহারার সাথে স্বভাবে মিল আছে দিব্যি। সেদিন দুঃখ প্রকাশ ছাড়া আর কথা হয়নি তার সাথে , পরের দিন ম্যাপ নিয়ে ঐ বুঝিয়ে দিলো। আমাদের যাওয়ার কথা সেদিন মেসা ভার্ডে( mesa verde ) পার্কে।  বললো পার্কের মধ্যে মামা থাকে তাই খামোখা যেন স্পিডিং টিকিট না খাই।
মেসা ভার্ডেতে আমেরিকার আদি অধিবাসীরা বাসকরতো । পাহাড়ের উপরে বা কোলে ঘরবাড়ি বানিয়ে   আমার ভারী অবাক লাগছিলো ওরা যে সময়কালটা বলছিলো সব চেয়ে উন্নতি করেছে বললো সেটা হলো ঐ ১১০০ থেকে ১৩০০ মতো সময়ে।  ঐ সময়টা ভারতবর্ষ তখন তার সংস্কৃতি , শিল্প সব কিছুতে মাথা ছাড়িয়ে লুটেরাদের কবলে পড়ে  গেছে। আর এরা তখন এই সব তৈরি করছে।






অবশ্য স্বাভাবিক। ক্লিফ প্যালেস বলে এই জায়গাটায় যে লোকজন থাকত তাদের  মেয়েদের গড় আয়ু ছিল ২৪-২৮।  আর ছেলেদের ২৮-৩২।  কারণ সিম্পল।  ঐ পাহাড়ের মাথা থেকে জল নিয়ে এসে , ভুট্টা ভেঙে কিংবা পাইন কোন ভেঙে খেয়ে বাঁচার জন্য ২০০০ ক্যালোরি মিনিমাম লাগে সেখানে ছেলেগুলোর জুটতো খুব বেশি হলে ৯০০ ক্যালোরি।  ব্যাস গল্প শেষ।  আর মেয়েগুলো তো ১৩-১৫ বছর থেকেই বাচ্ছার মা হতে শুরু করত।  তারপরে আর ২৫ এর বেশি বাঁচবে কি করে। আর্ট তো অপচয় ছাড়া হয় না।  খালি খাওয়া বেঁচে থাকার সংগ্রামে আর্ট হবে কি করে।
ওখানে একটা বাঁশের মই বেয়ে উঠতে হতো উপরে , আর সেই নিয়ে এদের আদিখ্যেতা দেখে কি বলব আর।   ৫০০ বার সাবধান করছে যার হাইটে ভয় সে যেন না আসে , জল খায় বেশি করে ইত্যাদি ইত্যাদি। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় এদের আমাদের দেশে পাঠিয়ে দিই , ট্রেনে ঝুলতে ঝুলতে যাওয়া কি লাফিয়ে বাসে চড়া এইসব কদিন করলে যদি একটু নিয়ে কমে আর কি।   রেঞ্জার মেয়েটি হাসিখুশি ভালোই ছিলো। কিন্তু সে ভারী ইয়ে মানে বললো যে আমার একজন ভলেন্টিয়ার রেঞ্জার চাই যে আমার সাথে সবার আগে উপরে উঠবে।  এবং অবশ্যই রেস্পন্সিবল এডাল্ট চাই।  আমি নিজেকে যথেষ্ট দায়িত্ববান বলেই মনে করি, না করারই বা কি। মদ খেয়ে গাড়ি চালাই না , স্পিড লিমিট +১০ এর বেশি ছাড়াই না (সে অবশ্য আপনারা বলতেই পারেন যে পুলিশের ভয়ে ) কিন্তু জিলিপির দোকান উপেক্ষা করে চলে কি আমি যাইনা , স্রেফ ভুঁড়ির কথা ভেবে।  তাছাড়া দায়িত্ব নিয়ে আমি নিজের প্লেট এর তন্দুরি শেষ করে অন্য লোকেরটা খাই , যাতে নষ্ট মস্ট না হয়।  তাই আমি তার সহায়ক রেঞ্জার হতে আগ্রহী হলাম।  কি বলব মশাই , আমায় বললে আমি এডাল্ট একজন কে চাই , তোমার সাথে যিনি  আছেন তোমার বাবা বুঝি , তা যাও বাবার সাথে দাঁড়াও, একলা এসো না।  রাগ হয় কিনা , অ্যাঁ এত বড় অপমান।  যা যা আমার দরকার নেই তোর সঙ্গী হওয়ার।


যাই বলো বাপু অদ্দিন আগে তো ভিড় ভাট্টা কম ছিলো খামোখা অত উপরে উঠে কষ্ট করার কি যে দরকার ছিলো!!

 যাই হোক এর কাছের শহর হলো ডিউরাঙ্গ। ছোট্ট ছিমছাম শহর।  পাশ দিয়ে নদী বইছে , ছু ছু ট্রেন মানে কয়লার ট্রেন যায় একটা।  নদীর ধার জলের শব্দ , ট্রেনের হুইসল মনে হয় এখানেই থেকে যেতাম যদি।  তারপরেই অবশ্য ছটপট করে প্রাণ। কফি চাই। কফি খেয়ে একটু জিরিয়ে ফের রওনা। পরের গন্তব্য আমাদের সান্টাফে। ছোট্ট স্প্যানিশ উপনিবেশের স্মৃতি। পৌঁছতে রাত হবে। সান্টাফে  নিয়ে আমার খুব আশা ভরসা ছিলো এমন না কিন্তু এমন চমৎকার লাগলো শহরটা কি বলব।  স্প্যানিশ আদলে তৈরী ঘর বাড়ি গির্জা। চমৎকার লাগে সব মিলিয়ে ঘুরে বেরাতে।তেমন ভিড় ভাট্টা নাই।  শহরটা পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখছি হটাৎ দেখি একদল মানুষ এসে নাচ গান করে জায়গাটা সরগরম করে দিলো। একটা ভুট্টা না কি যেন খেতে খেতে নাচ গান দেখতে শুনতে বেশ লাগছিলো।










বালি সাদা হয় এ জিনিস ভাবলে অবাক লাগে বইকি। আর আমরা পোঁছেছি সূর্যাস্তের ঠিক আগে আগে। ধূ ধূ সাদা বালির মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে আছি , সূর্য্য অস্ত যাচ্ছে , লাল রং ছড়াচ্ছে সাদা বালিতে।   অদ্ভুত সুন্দর একটা দৃশ্য। অনেক অনেক খন পর পার্ক বন্ধ হবার হাঁক দিতে আমরা বেরোলাম ওখান থেকে।





পরদিন সকালে আবার গেছি , কিন্তু উল্টো দিকের রাস্তায় যে এমন বিপদ  জানতো।  নিউ মেক্সিকো বর্ডার সিটি, তাইজন্য বর্ডার পেট্রোলিং পুলিশ চেক করছে সব গাড়িকে। আমরা দুজন কেউই পাসপোর্ট ক্যারি করছিলাম না এবং যেহেতু আমরা সিটিজেন না এখানকার তাই নাকি আমরা সবসময় পাসপোর্ট ক্যারি করতে বাধ্য। বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ করছে। কারণ আমাদের গাড়ি সাইড এ দাঁড়াতে বলেছে। জেলে পুরে দেবে নাকি? মোবাইলে টাওয়ার নেই. সফট কপিও ডাউনলোড করতে পারবো না।  কি রে বাবা আসে না কেন।  গাড়ির এসিও অন করার সাহস হচ্ছে না।  কারণ গাড়ির ইঞ্জিন স্টার্ট করলে যদি ভাবে পালাচ্ছি।  ভাবছি কাকে আবার কল করে বেইল নেব। অতঃপর একজন মুশকো লোক এসে গম্ভীর মুখে ড্রাইভিং লাইসেন্স ফেরত দিয়ে গেলো।  যাক এ যাত্রায় জেল এ ঢুকতে হলো না !!



ফেরার সময়টা আমিই চালালাম পুরোটা। ভারী মজা পেয়েছি।  কারণ সত্যি বলতে কি একটানা ৫৬০ মাইল ড্রাইভ আমি আগে করিনি আর সৌরভদা ভরসা করে না ছাড়লে হয়তো হতোই না।  নিউমেক্সিকো রুক্ষ প্রদেশ আর কলোরাডো সবুজ ফলে যেই নিউ মেক্সিকো পার হয়ে কলোরাডো ঢুকি যে ফিলিংটা হয় তা হলো , ট্রেন এ করে বিহার থেকে পশ্চিমবঙ্গের সীমানায় প্রবেশ করার। পাহাড় বাঁক সবুজ গাছ দেখে স্বস্তি ফেরে। না ফিরলে যে পরের বার বেরোনো যাবে না। (শেষ)

*********************************************************************************
এই লেখাটা অনেক দেরি করে দিলাম তাই দুঃখিত যারা অপেক্ষা করছিলেন/করছিলে।  নতুন লেখা আসবে( ইয়েলোস্টোন ঘুরতে গেছিলাম আর সে গপ্পো শোনানোর জন্য প্রাণ চটপট করছে ) তাই এটা শেষ করতেই হতো এবং শেষ হলো :)

4 comments:

  1. তুই Autocomplete টা বন্ধ কর আর নিজের লেখাটা আবার পড়, তাহলেই বুঝবি কি লিখেছিস। এমনি লেখাটা ভালই হয়েছে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. এহ যাচ্ছেতাই ভুল , সৌগতদা দেখিয়ে দিলো ভাগ্গিস :(

      Delete
  2. ক্রিয়াপদ বাদ দিয়ে বাক্যরচনার পরীক্ষামূলক পদ্ধতি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নীললোহিতের কয়েকটা উপন্যাসে দেখিয়েছিলেন। প্রদীপ্তর এই লেখাটা পড়ে আবার সেটা মনে পরে গেলো। খুব ভালো হয়েছে। কয়েকটা কথা। ওই পাহাড়ি গুহা দেখে অজন্তার কথা মনে হচ্ছে। অত উঁচুতে ওঠার জন্য সিঁড়ি আছে যদিও। লালচে রঙের যে বাড়িটার সামনে অনেক গুলো গাড়ি পার্ক করা আছে, বাড়িটাকে যোধপুর রেল স্টেশন বা সার্কিট হাউসের মত দেখতে (সোনার কেল্লা)। বেলুনের শেপের wall hanging গুলো দারুন দেখতে বিশেষ করে রামধনু রঙেরটা। আগে জানলে হ্যাংলার মত একটা আনতে বলতাম। :p আহা কতদিন মরুভূমি দেখিনি! হলুদপাথর জাতীয় উদ্যান -এর বিবরণটা তাড়াতাড়ি আসুক।

    ReplyDelete
    Replies
    1. অনেক অনেক ধন্যবাদ সৌগতদা। তোমার কমেন্ট পড়ে বেশ উৎসাহ পাই। পরের লেখা শুরু করব শিগগির।

      Delete