Monday, October 5, 2015

এটাসেটামিক্স

দেখতে দেখতে বছর ঘুরে গেল।  আমার একলা বকার রোগ ছোটবেলার , কিন্তু ঘাড় ধরে সক্কলকে পড়ানোর রোগটার কথা বলছিলাম আরকি। গত বছর এরকমই একটা সময়ে, যখন ঠান্ডা হওয়ার ঝাপটা শুরু হয়েছে , গাছেদের একটা দল সব পাতা ঝরিয়ে বিবাগি আর একটা দল বিবাগি হওয়ার আগে যথাসম্ভব নিজেদের রাঙিয়ে নিচ্ছে হলুদ লালে (লাল হলুদ রংটা মাঠে যতই বিচ্ছিরি হোক, গাছে গাছে মন্দ না, তবে ইটা অবশ্য হলুদ সবুজ লাল ,মোটেই লাল-হলুদ না)। আহা এইসময়টা গাছেদের নিশ্চই খুব খারাপ লাগে কিন্তু আমার দারুন লাগে। একা একা বিভিন্ন রঙের গাছেদের তলায় বিছানো কার্পেটের উপর দিয়ে হেঁটে যেতে।  আর কখনো ফিসফিস করে কখনো তাদের জিগ্গেস করেছি  কিরে এত যে আমোদ আল্হাদ করছিস জানিস তো দুদিন বই নয়, কদিন পরেই সব বেমালুম ফাঁকা হয়ে যাবে।..মন খারাপ করবে না? আমার বোকামিতে তারা বোধয় মুচকি হাসে , বোধহয় ফিসফিসিয়ে বলে ওহে বেশি ডায়লগ না দিয়ে নিজেদের দিকে তাকাও, দুদিন বই নয় জেনেও যা কান্ডটা কর তার চেয়ে বরং আমাদের থেকে শিখলে পারো কেমন করে নিজেদের রঙ্গিন করে নিতে হয়! তা যাক যে কথা বলছিলাম,দূরের পাহাড়গুলো আর কদিন পরেই বরফ টুপি পরা শুরু করবে তারপরেই ঠান্ডার রাজামশাই এসে একে ফুঁয়ে সব সাদা করে দেবে। এরকম একটা সময়েই আমার এই এলোমেলো হিজিবিজি লেখার শুরু। সারা বছরে কত কি ঘটল, কখনো লিখেছি কখনো লিখিনি। 
মাঝে মাঝে আমার মনে হয় যক্ষ ঠিক একবছরের জন্য নির্বাসিত হয়েছিল বুঝি মেঘদূতম লেখার জন্যই।  ২০১১ সালে আমি প্রানপন চাইতাম কলকাতার বাইরে যেতে, যেখানে হোক, মরুভূমি মালভূমি যেখানে ইচ্ছে, খালি "এই শহর যেন আমার পিছু পিছু না আসে' । আর এখন বাড়ি ফেরার জন্য ছটপট করছি , খালি মনে হচ্ছে বাকি দিন গুলো তাড়াতাড়ি  কেটে যাক।  আসল কথা আমার পালাতে ইচ্ছে করে, কোনো জায়গায় বেশিদিন থেকে গেলেই মনে হয় আমার বুঝি শিকড় গজিয়ে যাবে, তখন পালাতে ইচ্ছে করে। 

মহালয়া আসছে, তারপরেই পূজো। পূজো নিয়ে বেশিরভাগ লোকের দুটো মত , এক হয় ৪তে দিন আড্ডা, ঠাকুর দেখা (মানে ক্যামেরায় , আজকাল তো নিজের চোখে কেউ কিছু দেখে না ) , গুছিয়ে খাওয়া আর না হলে ফেসেবুকে কমেন্ট দেব উফ, এই পুজোর কদিন লোকের আদিখ্যেতা দেখলে বিরক্ত লাগে, ইত্যাদি। আমার মত নাস্তিক মানুষের দ্বিতীয়টাই হওয়া উচিত ছিল হয়ত, কিন্তু আমি যেকোনো উত্সব চেতে পুটে উপভোগ করি, বড়দিন হোক কি দুর্গাপূজো একটু তফাতে থেকে হই হুল্লোড় দেখা আমার বেশ লাগে। একদম ছোটবেলায় পূজো ছিল একরকম, রোজ একটু একটু করে চোখের সামনে ঠাকুর তৈরী হওয়া, সব ভাই বোন , ভাগ্নে ভাগ্নি আসবে তার অপেক্ষা , নতুন পূজোবার্ষিকী আর নতুন জামার গন্ধ , ঠাকুর কেমন হলো কাদের ঠাকুর বড় তাই নিয়ে চুলচেরা মতামত! হই হই করে ৪টে দিন কেটে যেত। আর একদশীর দিন যখন সবাই চলে যেত কি মন খারাপ !! ওই ফাঁকা  ঠাকুর দালানটা পান্ডেল খোলা ফাঁকা  সদর সব কিছু যেন কিরকম হাঁ  করে আসতো।  আরো একটু বড় হয়ে পূজোর  দিনগুলো ছিলো বড় হয়েছি তার প্রমান দেবার দিন, মানে গাছ বোম বেধে আসতে পারি, ঢাক বাজাতে পারি, ক্রিকেট থেকে গান সব বিষয়ে মতামত দিতে পারি। তারপর ১১-১২ নাগাদ ওটা হয়ে গেলো বোরিং পুজো, আত্মীয়ের কেউ আসেনা, সবার পড়ার চাপ, আমার বাদে ... 
সে যাই হোক তারপর কলেজে উঠে বড় হয়ে যাওয়া পূজো, হোলনাইট ঠাকুর দেখতে পারি বন্ধুদের সাথে,  ষষ্ঠীর বোধন বা সপ্তমীর সকালের কলাবৌ চানের সাথে ঢাকের আওয়াজ এর থেকেও বেশি বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারায় আনন্দ বেশি। 
আর এখন , এখন পূজো খালি ফেসবুকেই। মহালয়ার ভোর মানে আমার ঝকঝকে বিকেল।  তাই আধঘুমে এখন আর মহালয়া শোনা বা শুনতে শুনতে নতুন গান আবিষ্কার করা (ইয়ে মানে প্রতিবার আমি মহালয়া শুনি সত্যি বলছি , তবু প্রতিবার কি করে একটা নতুন গান বা একটা নতুন অংশ আবিস্কার করি কে জানে) কিছুই হবে না।  
তাই বলে হা হুতাশ করছিনা মোটেও, যা নেই খালি সেটাই ভালো বলার মতো বুড়ো আমি এখনো হয়ে যাইনি। এইত Aspen ঘুরে এলাম, সাথে hanging  লেক। হ্যাঙ্গিং লেক এর hike  টা কিন্তু বেশ পরিশ্রম সাধ্য। ১.২ মাইল ১০০০ এলিভেশন।  তো বেশ হাঁচোর  পাঁচর করে উঠতে হয়।  উঠতে উঠছে ভাগ্গিস জিরোনোর জন্যে থামতে হয়. তা না হলে এমন রংবেরঙেরগাছের নিচে , কুলকুল করে বয়ে যাওয়া জলের শব্দ শোনার অবকাশ ঘটত নাকি।  লক্ষ্যে পৌঁছোনোটা  জরুরি তো বটেই তবে আমার কাছে পথের আকর্ষণ ও কম না। এবং সারাক্ষণ ক্যামেরার নিচে চোখ দিয়েও না, অনেকে আছে আমার একবন্ধু আছে যে পারলে রাস্তার  প্রতিটা বাঁকের ছবি তোলে , এদিকে চোখের থেকে দামী লেন্স যে হয়না আর তাই সব ছবিই যে পরবর্তী কালে একই বাঁক বলে মনে হবে সে তার মাথায় ঢোকে কে!  ছোটবেলা থেকে যারা খুব খেটে ঘুড়ি না উড়িয়ে কিংবা, পড়ার বই এর ফাঁকে গল্পের বই না পরে বড় হয়েছে তাদের জন্যে আমার মায়া হয়, ওরা এই ছায়া ঢাকা পথের মজাটাই নিতে পারেনি কখনো।  আমি যদিও একটা গ্রুপ এ  গেছিলাম,কিন্তু একটু তফাতে আলাদা  হাটছিলাম, এইসব জায়গা যেখানে শোনার অনুভবের এত জিনিস আছে মাঝে মাঝে জনসমাজ থেকে বিছিন্ন হয়ে যেতে মন্দ লাগে না। 
hanging লেক এর উপরে 

Hanging lake 

Aspen নাকি একটা গাছের নাম।  আমি অবশ্য যাবার আগে জানতাম না। Aspen জায়গাটাও বেশ।  ওখানে Maroon Bells বলে একটা জায়গা আছে,  সেখানে তিনদিক পাহাড় ঘেরা একটা লেক আছে। একটা পাহাড় ন্যাড়া , মারুন রং এর একটা পাহাড় সবুজ ঢাকা,  আর একটা হলুদ গাছ এ ভরা। সামনে ছোট্ট  লেক , সূর্যের প্রথম এল এসে ওই মারুন রঙের চূড়ায়  পরে ,  আর তারপর একটু পরে রোদ উঠে আসে যখন পাহাড়ের মাথায় ওই হলুদ পাহাড়টায় সবুজ, লাল আর হলুদ এর এক অপূর্ব ক্যানভাস তৈরি হয়ে যায়।  
Maroon Bells 


পুজোর সময় এমনিতেও সবাই ক্যামেরায় ছবি তুলতে ব্যস্ত থাকবে, আমি fb  তেই দেখে নেব। আড্ডাটা  মিস করব, ঠিক আছে পরের বার হবে না হয়। পূজোর আগাম শুভেচ্ছা রইলো সবার জন্য ।




8 comments:

  1. তোমাকেও পুজোর আগাম শুভেচ্ছা জানাই, প্রদীপ্তা। লেখা আর ছবি দুটোই চমৎকার হয়েছে।

    ReplyDelete
  2. Pujor agam subhechha
    Fall color dekhlei bhoi lage, ei aro ekta bhoyal winter elo..

    ReplyDelete
  3. Bhalo likhechis.. Kintu lal holud mathe bichhiri lage eta bolte parli..:-p Boni

    ReplyDelete
  4. Ekhono fall dekha hoini! Pujor agam subhecha roilo! Lekha besh bhalo hoche! Chaliye ja

    ReplyDelete
    Replies
    1. seki Arnab Da kano fall dekhle na kano? ...ar onek dhonyobad :)

      Delete