Thursday, February 1, 2018

এ শহরে, আনাচে কানাচে

লিফটটা নীচে ছিলো, আমি ঢুকে দেখি দুটো ছেলে এক মনে টাইপ করছে মাথা নিচু করে অথচ কোনো ফ্লোরই সিলেক্ট করেনি! আমি তিন দিলাম। তাদের কোনো হেলদোল নেই, হয়ত তিনেই যাবে। তিনে নেমে দেখি তারাও নামলো, নামার পর হোয়াটস্যাপ গ্রুপে দেখি কলটা ক্যানসেল হয়ে গেছে। এই এই হোয়াটস্যাপ হয়েছে মাইরি, অফিস এর লোকজন এটাকেই অফিস বানিয়ে দিয়েছে। রিড রিসিপ্ট অফ করেছি, কাল জানলাম গ্রুপে তাতে কোনো ফরক পড়ে না। জানাই যায়, কে পড়েছে কে পড়েনি।  যন্ত্রণা মশাই।
ফের লিফটলবিতে এসে দেখি সে দু মক্কেল এক জন  উপরে যাবার আরেকজন নীচে যাবার বোতাম টিপে দাঁড়িয়ে, আবার ফোনে ব্যস্ত। বোঝো! এনারা একজন চারে যাবেন আরেকজন দুই বা একে আর চ্যাটের নেশায় ভুলেই গেছেন।

দিনের সব চেয়ে কোন সময়টা ভালো লাগে? আমার অফিসের দিনে দুপুরের সময়টা, আর ছুটির দিনে সকালবেলাটা। আলসে মানুষ কিনা আমি। আজকাল লাঞ্চ স্কিপ করি, ওই সময়টা নিজের মতো ঘুরে বেড়াই। লাঞ্চ করলে ঘোরা যায় না, কিন্তু ঘুরলে পাঁচ মিনিট দাঁড়িয়ে পেয়ারা মাখা, কি চা আর কাচের বয়ামে রাখা লম্বু বা খাস্তা বিস্কুট দিব্যি খাওয়া যায়।  নিউটাউনে আজকাল সাইকেল ভাড়া পাওয়া যায়। সাইকেল চালিয়ে প্রেম করে লোকজন মলয় বাতাসে কিংবা ব্যায়াম, আমি ধুলোভরা রাস্তায় লোক,  ভেড়ির জলে মাছরাঙা, চকচকে পিচঢালা ফাঁকা রাস্তা এই সব দেখে বেড়াই।

অফিসের বাইরে দাঁড়িয়ে বড় বড় মিষ্টি নারকেলি কুল খাচ্ছি দেখি এক মক্কেল পেল্লায় বিপদে পড়েছে। ক্লায়েন্ট এসেছে। সে সাহেব তো নানান প্রশ্ন করছে তাকে, ঝুপ্স দেখে বিমোহিত সে, হর্ণের শব্দে হাঁ, এরই মাঝে আশে পাশে সকলে মজা করে পেয়ারা মাখা খাচ্ছে আর ওই ছোকরাকে, নিঁভাজ শার্ট পেন্টুল পরে, হাতা না গুটিয়ে বিদেশী কায়দায় ইংরেজি বলতে হচ্ছে, বাইরে ফেসবুকিয় কায়দায় "দেখেছ ক্যায়সা লাট হ্যায় হাম" মুখ কিন্তু মনে মনে ফাটছে সে পস্ট বোঝা যায়।

ইউনিটেক এর মোড় পেরোতেই রাস্তা ক্রমে ফাঁকা, এক দুটো গাড়ি ধুলো ছিটিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। রবিরশ্মি নামের একটা লাল বাড়ির কম্পলেক্স, কারা থাকে? কাঁটাঝোপ, বাবলা গাছ গাছড়া পেরোলে নার্সারি। দুপুর বেলার রোদে লোক নেই তেমন। বড় সড় যে কম্পলেক্সগুলো,  কারা যেন রয়েছে। যাক এখানে তবু লোক থাকে, ইডেন কোর্টটা দেখলে মনে হয় যেন ঘন্টা হিসেবে কাটাতেই লোক আসে। একোয়াটিকার আগে একটা ঝুপড়িতে হাম হাম করে টুয়েলভ সি বাই টু এর ড্রাইভার খালাসীরা ভাত মাছের ঝোল খাচ্ছে। আমার পিঠটা ঘেমে উঠছে ক্রমে। টাইম হিসেব করে দেখলাম এবার ফিরতে হবে। চা চা করছে মনটা। এ দিকে এতোই লোক কম দুপুরে চা ওলারা চা বানায়ই না।

ফিরতি পথে সিগ্ন্যালে দাঁড়িয়ে আছি, এক বাইকওলা  আমায় জিজ্ঞেস করলো, এইসব সাইকেল আমাদের কোম্পানি থেকে দেয় কিনা। বললাম না ভাড়া নিতে হয়। বলে নিলে কি হয়?" এই সাইকেল চালানো যায়"। 
- ব্যাস খালি এমনি এমনি চালানো?
মানে অ একটা ওই পাহাড়ে উঠে কি লাভ যখন নেমেই আসতে হয়!

সন্ধ্যেবেলা চা খেতে নেমে দেখি নিটোল একটা চাঁদ উঠেছে। অফিসের এতো আলোয় কিচ্ছু দেখা যায়না। সাইকেল গুলো তখনো আছে। ফের একখান সাইকেল নিয়ে ডিএলেফটু এর পাশ দিয়ে,  খালের দাহার ধরে নেশাগ্রস্তের মতো চালালা। ভেড়ীটা দূর আছে কিন্তু এই মায়া মায়া চাঁদের আলোয় ওখানে না পৌঁছতে পারলে হবে না মনে হচ্ছে যেন।  পাহাড়ে বসে চাঁদের আলোয় জ্যোৎস্না মাখা হয়না কতকাল, ভেড়ির আলোয় হোক।

অনেক অনেক্ষণ পর ফিরে দেখি অফিস ফাঁকা, বেশীরভাগ বেরিয়ে গেছে। ম্যালা কাজ জমে আছে, ঘাড় গুঁজে কাজ শেষ করতে আর কষ্ট হলো না, চাঁদের আলোয় মাখা ভেড়ির জল তেষ্টা মিটিয়ে দিয়েছে আজ....

2 comments:

  1. Aj internet a ghurte ghurte apnar blog tar sandhan pelam.Khub valo laglo apnar lekha ta pare.Chena sahar k besh achena vabe dekhlam ei lekhatai.-Sunanda.

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

      Delete