Monday, May 15, 2017

মাঝারি সমস্যা

প্যাশন আর ডিসিপ্লিন ছাড়া বোধহয় কিছুই করে ওঠা যায়না।  আমার দুটোর একটাও নেই।  এই ব্লগ লিখতে শুরু করেছিলাম , কারণ আমার দেখার কথা বলার কথা লেখার দরকার ছিল , কারণ আমি বকবক করতে ভালোবাসি আর কিছু না।  এমনিতে আমি একটু লাজুক মানুষ ছিলাম , মানে এখনো আছি কিন্তু সে  কথা সবাই জানে না।  আসলে ছোটবেলায় আমি এতটাই একচোরা  ছিলাম কোনো বন্ধুই হতো না , আমি মশারির সাথে কথা বলতাম , গাছেদের সাথে কথা বলতাম , মিছিমিছি কৌটোতে কাগজ পুঁতে গুপ্তধন খুজতাম। কিন্তু আসলেই আমি মানুষের সাথে কথা বলতে চাইতাম।  গল্পের বই ছিল একমাত্র বন্ধু , আর আমি ভাবতাম গল্পের বই এ সবার কত বন্ধু থাকে আমার কেন নেই।  গ্রাম থেকে শহরে আসা ছোট আমি ভারী নিঃসঙ্গ বোধ করতাম।  মাঝারি মাপের স্টুডেন্ট , বেয়াড়া, কোনো এক্সট্রা ক্যারিকুলার অ্যাক্টিভিটি না পারা আমি একা হতে হতে কি করে যেন নিজেকে খানিক বদলে দিলাম।  মানে পুরোটা তো বদলায় না , আসল অামিটা আড়ালে গেলো।  ভালো খারাপ জানিনা , তবে অনেক পরে দেখা গেলো কিছু বদল ভিতর থেকেও বদলে দিয়েছে আমায়।  তবে ওই যে ছোটবেলার ওই ভাবটা আমার এখনো যায়নি , আমি এখনো একা একা হতে, ভিড়ের মাঝে থেকেও, ভালোবাসি।  তাই বোধয় ভার্চুয়াল দুনিয়া আমায় আকৃষ্ট করে বেশি।  এখানে অপছন্দে জায়গা স্কিপ করে বেরিয়ে যাওয়া যায়।
সেদিন এক বন্ধু কে কুঁই কুঁই  করে বলছিলাম আমার বড্ডো ফেসবুক নেশা হয়েছে , এ নিয়ে লিখেওছিলাম আগে।  ভেবে দেখলাম , আমার আসলে কিছু পাওয়ার নেই দেওয়ার নেই।  আমি জানিনা আমি কি চাই বা কেন চাই।  ফলে সেই সময়টা নিয়ে আমি করবোই বা কি।  আমার বন্ধু সংখ্যা খুব কম , সে হয়তো আমারই প্রকৃতির দোষ  , কিন্তু নেই যে সেটাই সত্যি।  ফলে আমি কি করি , এক দুজন যা বন্ধু পাই ঝাঁপিয়ে পড়ি , কথার চাপ , সময় দেওয়ার চাপ ইত্যাদি করে আমি তাও নষ্ট করে দিই।  ফলে হাতে রইলো পেন্সিল। এমন না ফেসবুক আমার হতাশা বাড়িয়ে দিয়েছে বেশি , বরং ফেসবুক অর্কুট আমায় অনেক কিছু দিয়েছে।  আমি আসলে শান্ত হয়ে আত্মস্থ হয়ে কিছু করতেই পারিনা। ফেসবুক আমার ঐ স্কিপ করে চলে যাওয়ার প্রবনতাটা বড় বেশী বাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু নিজেকে নিয়ে নিজের মতো করে খুশি থাকলে হয়তো এতো উচাটন হতো না , এতো ছটপটানি হতো না। 
এতো বিষন্নতাও হতো না।  কাউকে বলা যায়না এ অকারণ মন খারাপ , কারণ দুঃখবিলাস বলে মুচকি হাসি তারা হাসতেই পারে।  হয়ত তাদের পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে দেখলে ঠিকই।  চাকরি আছে , মাথার উপর সেরকম বিরাট দায়িত্ব কিছু নেই তবু ভালো থাকতে পারছিনা তা কি কারণ।
আমি আসলে এসব দিনযাপনের অর্র্থই পাইনা , মনে যারা খুব দায়িত্ব নিয়ে ফ্ল্যাট বুক করছে নিয়ম করে ইএমআই দিচ্ছে , ছেলে মেয়েকে ইস্কুল কলেজে পাঠাচ্ছে , তাদের চিন্তায় দিন যাচ্ছে তাদের জীবনের অর্থ পাইনা , আবার যারা গ্রামে প্রায় একই লেভেলের ( ইএমআই বাদ দিয়ে ) জীবন কাটায় তাদেরটাও ইন্টারেস্টিং লাগে না। এদিকে আমার মেধা ডিসিপ্লিন , প্যাশন নেই সত্যজিৎ রায় , স্টিফেন হকিং , বা ওই লেভেলের কোনো ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠার। 
মাঝারি মাপের খুব সমস্যা,  না পারে অটোর মতো গলে যেতে না পারে ট্রাকের মতো দাপিয়ে যেতে। মাঝারি হওয়ার খুব জ্বালা, সে ফুটপাতে বসে লাল মাংসের ঝোল খেতে পারে না আবার ওহ ক্যালকাটায় গিয়ে ডিনার করতে পারেনা। কিন্তু মাঝারির মধ্যেও মাঝারি হওয়া আরো সমস্যার, তার পায়ের শিকল গুলো না থাকলে সে আর সে থাকে না আবার শিকল থাকায় সে,  কিছুতেই সে হয়ে ওঠেনা। বসন্তের বাতাস বইবে আর একটা পাহাড়ের মাথায় লম্বা হয়ে শুয়ে থাকবে এ স্বপ্ন বুকে নিয়ে সে বালিশে মাথা পাতে এক বুক দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আবার ঘুম থেকে উঠেই রান্নাঘরে মাকে রাঁধতে দেখতে পেয়েই সারাদিনের পালিয়ে যাবার কথা ভাবার দম নিতে পারে। মাঝারির মাঝারি যে ফেসবুকেও খিস্তি করতে পারেনা, আবার নিজের দেওয়ালেও ফুল ফোটানোর দম থাকেনা তার। এইসব মাঝারি মাপ গুলোর খুব সমস্যা না দিতে পারে না, না দেওয়াটা হজম করতে পারে। 
আমার প্রশ্ন এটাই, এই মাঝারি মাপের মানুষ আমরা পৃথিবীর ভীড় বাড়ানো ছাড়া আর কি করি , দরকারটাই বা কি।

2 comments:

  1. এই পোস্টের সুরটা লঘু নয়, তবু আমি তোমাকে হাই ফাইভ দিতে বাধ্য হচ্ছি, প্রদীপ্ত। কারণ আমিও মাঝারি। আমারও তোমার মতো দুঃখ ছিল, কেন আমি মাঝারি। তারপর দেখলাম, সকলেই যখন মাঝারি, এমনকি আমার যাদের অমাঝারি বলে মনে হচ্ছে তারাও, (সত্যজিৎ রায় ছাড়া, উনি জিনিয়াস, বাকি সব মাঝারি) তাহলে আর খামোকা দুশ্চিন্তা করি কেন। তাছাড়া আমার ধারণা অমাঝারি হওয়াটা খুব একটা সুখের ব্যাপার নয়। মাঝারি হওয়াটাই সেফ এবং শান্তির।

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংকইউ কুন্তলাদি। মাঝারি হওয়া সেফ ও শান্তির তো বটেই কিন্তু মাঝারি বলেই যে শুধু সমস্যা আমার তা না। আমি আসলে কিছুরই মানে খুঁজে পাইনা,এ দিনযাপন এ লড়াই কিচ্ছুর না।

      Delete