Monday, May 1, 2017

*****ভূতের ছানা বিল্বপত্র *****

ভূতের ছানা বিল্বপত্র খুব বায়নাবাজ হয়ে উঠেছে। বিল্বপত্র নামটা ওর ঠাকুর্দার দেওয়া। রাগী বিটকেল এই ভূতটি ছিলেন ভূত সমাজের মাথা প্রায়। ওনার আমলেই ভুতেদের সমাজে আমূল পরিবর্তন ঘটে। বেল গাছে স্রেফ ব্রহ্মদৈত্যরা বাস করবে এ নিয়ম উনি বদলান স্রেফ একটা সহজ পদ্ধতি দিয়ে। এক বামুন ভূতকে উনি বলেছিলেন বেল গাছের নিচে এক দিন কাটাতে হবে বসে বসে। যে পারবে সেইই গাছের উপর যাবে। ওনার নাম ছিলো হাহা ভূত। আসলে এটি একটি সংক্ষিপ্ত রূপ নাম, আধুনিক তরুন ভূতেরা তার খবর না রাখলেও, প্রাচীন ভূতেরা এ নামকে বেশ মর্যাদা দেয়। যাই হোক হাহা বাবু করেছিলেন কি, এমন সময় প্রতিযোগিতা রেখেছিলেন যখন বেল পাকার সময়। আর ওই দিন ওখানে একদল মানুষদের পিক্নিক করতে আসার সময়ও ছিলো। তা যা হবার তাইই হলো। বেল পড়লো বেহ্মদৈত্যর খুলিতে ব্যাস। আর যায় কোথা বরফ দে রে বরফ দে বলে ছুটলো। যারা পিকনিক করতে এসেছিলো তাদের কাছে বরফের বাক্স ছিলো। তারা তো তখন তন্দুরি খাচ্ছে বরফ মেশানো, ড্রিংক্স এর সাথে। খুলিতে বরফ ঘষতে ঘষতে ভারী আনমনে এক চুমুক ঠান্ডা পানীয় দিয়েছে এক চুমুক। তার পর কাবাবের গন্ধ নাকে গেছে, বেভুলে দিয়েছে এক কামড়। বেহ্মদত্যির যেন নতুন ভূত জন্ম লাভ হলো। আহা আহা করে মন গেয়ে উঠলো। চুলোয় যাক বেলগাছের অধিকার। মাটনের বাটিতে ডুব দে মন বলে সারাদিন কেটে গেলো ওখানেই। অবশ্য মানুষগুলো খুব ঘাবড়ে গেছিলো, এত খাবার দাবার কোথায় নেই হয়ে যাচ্ছে রে বাবা। যাই হোক ওদিকে হাহাভূত তার কাজ করে নিয়েছে। হেলমেট পরে আগে থেকেই রেডি ছিলো। ব্যাস আর কি সে রাত থেকেই বেলগাছে ব্রহ্মদৈত্যর অধিকার শেষ হয়ে গেলো। সেই হাহা ভূতের নাতিই হলো বিল্বপত্র।
তা বিল্বপত্র বায়নার কারনটাও খুব ফেলনা না। আসলে যে সব জিনিস মানুষ জগতে নষ্ট হয়ে যায় ভূত জগতে তাদেরই এন্ট্রি হয়। মানে কোনো মোবাইল খারাপ হওয়া মানে সে মোবাইল ভূতজগতে জন্ম নেয়। তা আজকাল রোজ রোজ নতুন নতুন মডেলের মোবাইল বেরোয় আর আগেরটা স্ক্রীন ভাঙা ভূত হয়ে বা স্লো মোবাইল ভূত হয়ে জন্ম নেয় ম, ভূতেদের মহা ফুর্তি। আর মাঝে মাঝেই নেটওয়ার্ক জ্যাম হয়ে যায় মানে ওই সময় ভূতেদের ব্যবহার চলে। সোজা হিসেব। তা বিল্বপত্রের তাতেও হবে না । ভূতেরা কিন্তু স্রেফ ভয় দেখায়না, মানুষের বুদ্ধিও নষ্ট করে দেয়, এটা ওদের পার্ট অফ জব। তো বিল্বপত্র একজনের হাতে একটা ড্রোন দেখেছে এক মানুষের বুদ্ধি নষ্ট করতে গিয়ে। ড্রোন দেখে তো তার মাথা গেছে পাগলে। লোভে পড়ে বুদ্ধি নষ্ট দূরে থাক সে পারলে এক্ষুনি ছিনিয়ে নেয় ড্রোনটা। সে ড্রোনটাই চাই তার এক্ষুনি মানে এক্ষুনি। এদিকে ভূতেরা কিন্তু মানুষ এর থেকে কেড়ে নিতে পারবে না কিছু আবার ইচ্ছে করলেই কোনো জিনিস নষ্ট করে দেবে তাও হবে না। যদি মানুষটা স্বেচ্ছায় পরিত্যাগ করে কোনো জিনিস বা খারাপ হয়ে যায় তবেই তার ভূত জন্ম লাভ হয়।
ভূত সমাজে ছি ছি পড়ে গেছে। একি, মানুষের মতো বায়না করবে কেন। কোথায় মানুষকে এসব কুপরামর্শ দিয়ে ঠাকুর্দা হাহার নাম আরও ছড়িয়ে দেবে তা না এইসব। বিল্বপত্রের বাবা দেখেন ধর্মীয় দিকটা। মানে কোথায় কিরকম ভাবে ক্ষেপালে বেশ জমজমাট খুনোখুনি হবে সেইসব ট্যাকল করাই ওনার কাজ। ওনার কানে যখন ছেলের এ অধঃপাতের খবর গেলো উনি তো পারলে বিল্বপত্রকে মেরে মানুষ করে দেন এরকম অবস্থা। বিল্বপত্র থামলো বটে কিন্তু ভুললো না। 
তারপর একদিন মাথা খাটিয়ে বিল্বপত্র একদিন গেলো সেই মানুষ টার কাছে তাকে ভয় দেখিয়ে যদি আদায় করা যায় ড্রোনটা। ও হ্যাঁ ড্রোন মানে সত্যিকারের যুদ্ধে ব্যাবহার করা ড্রোন না, খেলনা ড্রোন, তবে দিব্যি ওড়ে ভোঁ ভোঁ করে। তা হঠাৎ করে ভূতের ছানা দেখে, গুটুল একটু ঘাবড়ে গেছিলো বটে। তবে সামলেও নিলো খুব জলদি, নাহলে যে একে আটকানো যাবে না তা বইতে পড়ে জানেই সে। এমন কি মনে মনে ভয় পেলেও তাও ভৌতিক র্যাডারে ধরা পড়বেই। গম্ভীর গলায় (আসলে গলার আওয়াজ ভয়েই বেরোচ্ছিল না, গম্ভীর মনে হচ্ছিলো) গুটুল বলল কে তুই, মুখোশ পরে ভয় দেখাতে এসেছিস? বিল্বপত্র খুব রেগে গেলো, হাড়হিম করা নিশ্বাসের ঝড় বইয়ে জানান দিলো সে আসলে কে। গুটুল সাহসী ছেলে না তেমন কিন্তু প্রাথমিক ধাক্কায় দাঁড়িয়ে গেছিলো বলে আর ভয় পাচ্ছিলো না, তাছাড়া ভয় পাওয়ার উপায় খুব একটা ছিলো না। বিল্বপত্র মনে মনে ভারি ধাক্কা খেলো। এক তো পুরাকাল এর মতো সে ভূত রূপে, ভয় দেখাতে এসেছে আর তাতেও বিল্বপত্রকে ভয় দেখিয়ে উঠতে পারেনি। সামান্য একটা মানুষের ছানা তারই মাথায় মাথায়, সে কিনা ভয় না পেয়ে সটান দাঁড়িয়ে?
রেগে গিয়ে বিল্বপত্র এক ঘুঁষি মারতে এলো গুটুলকে। গুটুল এমনিতে ভীতু হলেও দুষ্টু কম না, ফলে মারধর ওর কপালে লেগেই থাকে। মার খেতে খেতে মোটামুটি শক্তপোক্ত হয়ে গেছে সে। আর যে ব্যায়াম করতে হয় বলে সাত সকালে ওঠায় তার রোজ আপত্তি, সেই ব্যায়ামের ফলে তার পেশীর জোরও বেড়েছে খানিক। ফলে কংকালি ঘুঁষিতে বিল্বপত্র গুটুল কে কাত করতে পারলো না তেমন। তার এ এতদিনের ভূতজীবনে এরকম বেকায়দায় সে পড়েনি কক্ষনও, খানিক দমে গিয়ে ভাবলো একবার, চলেই যাবে কিন্তু কোনোভাবে যদি ভয় না দেখাতে পারাটা তার বাবা বিল্বদল এর কাছে পৌছয় তাইলেই চিত্তির। মিনমিন করে বিল্বপত্র বলল "শোনো, সব কিছুর একটা নিয়ম আছে। আজ যদি দেখো শোলা জলে ডুবছে তা কি খুব ভালো হবে? কিংবা দেখলে পাটিসাপটায় টম্যাটো সস দিয়ে দেওয়া হচ্ছে ভালো লাগবে কি? চিরটাকাল মানুষ, ভূতকে সমীহ করেছে, অন্তত কাঁপুনি ব্যাপার টা এনেছে তা তুমি কোন নদেরচাঁদ এলে হে সে নিয়ম এর অন্যথা করো। জানো আজ আমি ত্যাজ্যভূত হয়ে যেতে পারি স্রেফ তোমার জন্য।" শেষ কথাটা বলার সময় বিল্বপত্রর চোখে দু ফোঁটা আগুন দেখা গেলো (ভূতেদের চোখে জল আসতে নেই, খুব কষ্ট হলে এক ছটাক আগুন)। 
তা গুটুল তো এম্নিতে ভারী নরম মনের ছেলে। ঘ্যানঘ্যান প্যানপ্যান তার ভাল্লাগেনা, সে তাড়াতাড়ি বলল, "আহা অত দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই, এট্টু ভয়ইই তো তা না হয় পেয়ে নেবো খন। আমার বন্ধু বান্ধব নাই বিশেষ তুমি আমার বন্ধু হয়ে যাও। " 
বিল্বপত্র পড়লো মহা মুশকিলে, এ ছেলেটা বলে কি?এতো ভালোবেসে ভয় পাবে বলছে। ভালোবাসা!! আরে মানুষকে আবার ভালোবাসা যায় নাকি, মানুষ মানে তেঁএঁটে বদ একটা প্রাণী, যাকে ভয় টয় দেখিয়ে খানিক গুব্লেট কাজ করা যায়, আর তারপর মজা নেওয়া যায়। 
বিল্বপত্র বলল " শোনো তোমায় আমারও ভালো লেগেছে খুব, কিন্ত ভূতে মানুষে তো বন্ধুত্ব হয় না, আমি বরং আসি, তোমায় ভয় পেতে হবে না বাদ দাও। "
গুটুল বিল্বপত্র এর কংকাল টা ধরে বলল আরে বললেই যেতে দিচ্ছি নাকি তোমায়। ভূতে মানুষে বন্ধুত্ব হয়নি তো হয়নি, আমরা থোড়াই সবাইকে বলে বেড়াবো। খালি মাঝে মাঝে চলে আসবে, মজা করে খেলা যাবে, লুকিয়ে লুকিয়ে এট্টু ঘুরে আসা যাবে। আসবে তো? 
বিল্বপত্ররও তো বন্ধু তেমন নেই, না আর বলে কি করে তাছাড়া ড্রোনটাও পাওয়া যাবে। সুতরাং ফ্রম দ্যাট ডে অনওয়ার্ডস এক মানুষ ছানা ও এক ভূতের ছানার বন্ধুত্ব হয়েই গেলো। তাদের কীর্তিকলাপ এর গল্প গুলো পরে পরে শোনাবোখন।

No comments:

Post a Comment