Sunday, April 23, 2017

বছর শেষ ও নববর্ষ ( একটু লেটে)

চাঁদ দেখতে হয় খোলা মাঠে, পাহাড়ের চূড়োয়,সমুদ্রের তীরে, নদীর পাড়ে। একগাদা প্যাঁ পোঁ হর্নের মাঝে, বিদ্যুতের আলোয় চাঁদ দেখা অনেকটা তন্দুরি খেতে খেতে প্রেমিকাকে চুমু খাওয়া। না পাবেন তন্দুরির স্বাদ না পাবেন চুমুর স্বাদ। তাই বিগত কয়েকটা জ্যোৎস্নায় আমি চাঁদের মুখদর্শন করছিলাম না। মানে আমি আবার ওই পেলে সবটা চাই নইলে চাইইনা এরকম কেস। তা যাই হোক পরশু দিন পূর্নিমার পরের দিন হলেও চাঁদ পাগল পাগল লুকটা রেখেই দিয়েছে। রাজারহাটে এখনো অনেক ফাঁকা ফাঁকা রাস্তা আছে, এমনকি গাছপালা ঘেরা পুকুরও আছে, খোঁজ নিয়ে রেখেছিলাম সেগুলোর। আপিস থেকে বেরোতে দশটা, চারদিক এমনিই ফাঁক। হয়ে এসেছে। আশে পাশে কেউ নেই কোত্থাও, বিচ্ছিরি আলো গুলোও নেই। একটু ভয় পাচ্ছিলাম না তা নয়, চাঁদ দেখতে গিয়ে আমি তোমায় দেখে ফেলেছি - গাইতে আমি চাইনা কোনো ছিনতাইবাজ কে দেখে। কিন্তু একবার চাঁদে ডুব দিলে অত মায়া থাকে না জিনিসের প্রতি। লালচে রঙের চাঁদ, আর এলোমেলো হাওয়া, একমনে গান গাইলে কোনো কুকুর সঙ্গত দেবে এমন ভয় নেই। আহা স্রেফ এখানেই থেকে গেলে হয় না? একটা পাহাড় নদী গাছপালা ওয়ালা ল্যান্ডস্কেপ কিনবো বেশ একদিন। কয়েকটা হরিণ ছাড়া থাকবে, খরগোশ থাকবে, কাঠবেড়ালী থাকবে, একটাও কুকুর বা বিড়াল থাকবে না, তাদের ইয়েও থাকবে না। মানুষ জন থাকবে কয়েকজন কিন্তু থুতু ফেলা প্লাস্টিক ফেলা দেখলেই ইঁট হাতে ননীচোর করে দেওয়া হবে আর তারপর একটা গাছ লাগিয়ে সেটাকে বাঁচাতে হবে, ফুল ফোটাতে বা ফল ফলাতে হবে। 
ফোনটা অফ করতে ভুলে গেছিলাম, পিএল ফোন করেছে কাল সকালেই যেন ডিজাইন ডকুমেন্টটা ফাইনাল করে পাঠাই। -_- দুনিয়াটা অসাড় মশাই নেহাত নীল ষষ্ঠির মুগের ডাল সন্দেশ সন্দেশ কোরা দিয়ে মাখা পাওয়া যাবে মাএর পাত থেকে তাই জন্যই যা একটু আধটু সাড় আসে মশাই নইলে কবেই সন্ন্যাস নিতুম।
সন্ন্যাস বলতে মনে পড়লো,সারা দুনিয়ার লোক চৈত্র সেল এর জন্য রাস্তায় বেরিয়ে এসেছে। কিছু কিনতেই হবে নইলে পয়লা বৈশাখে রসে ভেজা নিমকি আর চিত্রকূট ভরা প্যাকেট পাবেনা, সুতরাং তাদের দোষও দেওয়া যায়না। রাস্তায় এ কদিন গাড়ি রিকশা, অটো সব বন্ধ থাক, স্রেফ চৈত্র সেলের প্যাকেট হাতে লোকেরাই রাস্তায় বেরোতে পারবে এরকম নিয়ম হয়ে যাবে। 
যা বলছিলাম, সন্ন্যাস, আজ চড়কের ঝাঁপ দেখতে গেছিলাম অফিস কেটে। জয়য়য় বাঅাঅাঅাবা মহাদেবেএএএর চরওওনের সেবায়য় লাগিইইই, মহাঅাঅাদেএএব বলে গাজনের হাঁক হচ্চিলো। একজন মুসলিম পপকর্ণওয়ালা দেখি দিব্যি মন্দিরের সামনে পপকর্ণ বিক্রী করছে। মহাদেবেরে চরনের দিব্যি কোনো প্রকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রচার চালাচ্ছি না কিন্তু বউমেয়ে, বাচ্ছারা দেখি দিব্যি তার থেকে পপকর্ণ কিনে মন্দিরের সামনের চেয়ারে বসে খাচ্ছে আর পূজো দেখছে। ফেসবুক নইয়ইয়ে অত ভয় পাবার কিছু নেই এই আর কি।
তা যা দেখবো বলে আপিস কাটা, ঝাঁপ কখন হবে। আমি উত্তেজিত হয়ে উঠছি সেই ছোটবেলার মত, চেনা চা বিক্রী করে যে কাকা তাকেই একমাত্র চেনা পেয়ে চৌদ্দবার জিজ্ঞেস করছি কখন হবে কাকা ঝাঁপ? কোথায় হবে? বিরক্ত না হয়ে হাসিমুখে কাকা বলছে তুই বোসতো (অন্যদিন তুমি বলে কিন্তু সেদিন আমি ক্লায়েন্ট তার আজ ও হোস্ট), হবে রে বাবা। 
অবশেষে ঝাঁপ শুরু। একি, এতো দেখি ক্লায়েন্ট এক্সপেক্টেশন আর ক্লায়েন্ট বাজেটের তফাতের মতই তফাৎ হয়ে গেলো হ্যাঁ? হতভাগারা আধহাত উচু বাঁশের উপর থেকে লাফ দিচ্ছে, আর পাঁচ পাঁচ দশটা মুশকো লোক তাদের হাত পেতে দাঁড়িয়ে আছে তাকে ধরবে বলে!!
এমন রেগে গেলাম পরপর দুটো বাড়িয়ে দেওয়া ডাব সেবন করে শান্ত হইচি মশাই 

সক্কাল সক্কাল উঠেছি আজ। তা নববর্ষে তো খালি মুখে যেতে নেই বাজার তাই পনীরেএ পুর দেওয়া কচুরি আর ঘুগনি আর সিমুয়ের পায়েস খেয়ে বাজারে যেতে হয় । ফেরার সময় দেখি শোভাযাত্রা বেড়িয়েছে। সাদা ধুতি আর পাঞ্জাবী পরেছে বটে কিন্তু ধুতির নীচে প্যান্ট পরে রেখেছে আপতকালীন পরিস্থিতির মোকাবিলায়। একজন জলের বোতল আর মিষ্টির প্যাকেট গুঁজে নিলো ধুতি তুলে, ঘাবড়ে গেছিলাম প্রথমে তারপর প্যান্টের তাৎপর্য ব্যাখ্যা হলো।
সর্ব ধর্ম সমন্বয় এর উদ্দেশ্যে কয়েকজন শিখ দের মত পাগড়ি বেঁধে তাদের মতো করে দাড়ি রেখে, মুসলিম দের মতো ফেজ টুপি পরে, দাড়ি রেখে সেজেছে। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখি 'শিখ' ভদ্রলোক বিরস বদনে দাড়ি চুলকোচ্ছে, দাড়িতে ছারপোকা ছিলো কিনা কে জানে। আহা বচ্ছরকার দিন। এদিকে 'হিন্দু' ভদ্রলোক বলছে শালা মুসলমান সাজলেই ভালো হতো, রোদের তাত দেখ মাথা ফেটে যাচ্ছে শালা।
নতুন বছর ভালো কাটুক সবার। আমোদে, আনন্দে কাটুক। দুঃখ খারাপ লাগা গুলো মুছে যাক। 
শুভ নববর্ষ।











2 comments:

  1. থ্যাংকু থ্যাংকু, শুভ নববর্ষ :)

    ReplyDelete