Sunday, April 23, 2017

গানের গল্প

একটু তাহলে গানের গল্প হোক? মানে আমাদের সবারই অনেক অনেক প্রিয় গান আছে এবং এসব গানগুলো পাওয়ার গল্পও আছে। কোনো কোনো গান হঠাৎ পাওয়া, কোনো কোনো গান কুড়িয়ে পাওয়া, কোনো কোনো গান আবার ভালোবেসে পাওয়া। প্রায় প্রতি গানেরই গল্প আছে কিছু, কয়েকটা গান তো এত প্রিয় তবু শোনা যায় না, অনেকটা কেমিস্ট্রি ক্লাসের সেই টকাটক করে ইকুয়েশন গুলো সলভ করা মেয়েটার মতো, তাকানো যায় আড় চোখে কথা বলা যায় না।

জন ডেনভার প্রথম শুনেছিলাম হঠাৎ। সে সময় ইংরিজি গান কিছুই শুনিনি প্রায় খান কতক এনরিকে ছাড়া। ইংরিজিতে কথা বলতে আটকাই বলে কে যেন সাজেস্ট করেছিলো ইংরিজি গান শুনতে। এক বন্ধু, খুব ভালো প্রোগ্রাম করত সে; গাঁজা, ইংরিজি গান, বিদেশী ফুটবল, সলিড প্রোগ্রামিং সেন্স সব মিলিয়ে হিরো টাইপ। মেয়েরাই বরং স্বরূপের কাছে ঘুরঘুর করত বেশী, আর ও অমিত রায় টাইপ ঔদাসিন্যে সবাইকে টেক কেয়ার করত। তাকেই একবার একলা পেয়ে মিনমিন করে বলেছিলাম, ভাই আমায় খান কতক এমন কিছু গান দিস না শুনে বুঝতে পারবো। স্বরূপ আমায় "Annie's Song", 'I know I loved you before I met you' এরকম আরো কয়েকটা গান দিয়েছিলো। যা হয়, ওষুধ এর মতো করে হলে কি আর কোনো কিছুই হয় আল্টিমেটলি, তাই সে সব গান পড়ে থাকতো আমার প্লে লিস্ট এর কোনো এক তলে, আমি ওই সব গান এলেই স্কিপ করে দিতাম।

তারপর কোনো এক চাঁদনি রাতে, জানলা দিয়ে চাঁদের আলো এসে আমার বালিশ বিছানা ভাসিয়ে দিচ্ছে। প্রথম প্রেমের বিচ্ছেদ একটা ভারী ইয়ে ব্যাপার, অল্প বয়েস থাকে বিশ্বাসের চিন্তাধারার বুনিয়াদটাও অন্যরকম থাকে। তার আফটার এফেক্টে আমি নির্ঘুম রাত পার করছি সে সময় হঠাৎ কেন কে জানে Annie's Song আমি স্কিপ করলাম না। পূর্নিমার রাতে ডেনভারের আকুল করা কাম ফিল মি এগেইন শুনে পাগলা হয়ে গেলাম প্রায়। তখনও তো ইন্টারনেট ফোনে আসেনি, পরের দিন থেকে নেট ঘেঁটে ডেনভারের বাকি আরো গান খুঁজে বের করে নামাচ্ছি, ডেনভারে বুঁদ হচ্ছি।
'প্রথমত আমি তোমাকে চাই' শুনেছিলাম ক্লাস টেনে। সব লাইন ছাপিয়ে কেন কে জানে 'বহুদূর হেঁটে এসে তোমাকে চাই' আর 'হাসি রাগ অভিমান ঝগড়া আপোষে...' এ দু লাইন মাথায় গেঁথে গেছিলো। রেডিওতে ফের দিলো যখন টুকে রাখলাম, একবারে হয়নি দু তিনবার লেগেছিলো। তারপর জাতিস্মর গানের ওই অমোঘ বিশ্বাসে বলা 'যতবার তুমি জননী হয়েছ ততবার আমি পিতা' এ গান প্রথম শোনার কোনো গল্প নেই কিন্তু লাইনটা প্রথম শোনায় গেঁথে গেছিলো।
আমাদের ইস্কুল লাইফ থেকেই রূপম, চন্দ্রবিন্দু। একলা ঘর তো আমাদের জাতীয় সঙ্গীত হয়ে গিয়েছিলো প্রায় একটা সময়ে। ফার্স্ট ইয়ারে মাথা ঝাঁকিয়ে খুব গাইতাম :)। 'এইটা তোমার গান' শুনেছিলাম একটা লোডশেডিং এর রাতেই বোধহয়। ওই যে 'জ্বরের শেষে সূর্য ধোয়া ঘর' তার সাথে খুব রিলেট করতে পেরেছিলাম, তখন প্রায়ই জ্বর হতো কিনা আর জ্বর ছেড়ে যাওয়ার রাতের পর সকালটা যে কিইই ভালো হয় যার না জ্বর হয়েছে সে জানবে কি করে।
চন্দ্রবিন্দুর যদি বলো হ্যাঁ শুনেছিলাম কবে ঠিক মনে নেই কিন্তু "সোনা কাঠির পর রূপো কাঠি, পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি" এ লাইনটা খুব প্রিয় হয়ে গেছিলো। ঠিক একদিন উড়বো এরম মনে হতো, আজকাল আর সে বিশ্বাস নেই অবশ্য।
'আমি নয়নে বসন বাঁধিয়া, মরি আঁধারে ঘুরি গো কাঁদিয়া, আমি দেখি নাই কিছু বুঝি নাই কিছু দাও হে বুঝায়ে..' এ ভক্তিগীতি আমি প্রথম পড়ি সুকুমার রায় ক্লাবে কারোর এক লেখায়। ইউটিউবে সার্চ আর তারপরে অদ্ভুত ভালোলাগায় ভরে যাওয়া। আমার এক বন্ধু ছিলো, দারুণ গান গায়, তাকে কতবার উত্যক্ত করেছি এ গানটা শোনানোর জন্য! আসলে কিছু কিছু গান আবার এমনি গলায় শুনতেই ভালো লাগে বেশী। ছোটবেলায় রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনাতো এক বন্ধু, মা সেগুলো তাদের গলায় শুনতে ভাল্লাগে।
কোন গান কার গলায় কখন ভালো লেগে যাবে তা বলা খুব মুশকিল। আমার এক বন্ধুর গলায় শোনা একটা রবীন্দসঙ্গীত এত ভালো লেগেছিলো কবীর সুমনের গলায়ও অত ভালো লাগেনি পরে।
একদিন মনটা ভারী বিক্ষিপ্ত  ছিলো।ইউটিউবে কোন একটা গান চালিয়ে অটোর সামনে বসেছিলাম, অটোপ্লে অন ছিলো। শ্রাবনী সেনের গলায়,  "মেঘ বলেছে যাবো যাবো" শুনলাম। মন ভরে যাওয়া টাইপ একটা ব্যাপার হয় না?সেরকম হয়েছিল।
'waiting for an end' এর হদিস দিয়েছিলো আরেক বন্ধু। ডেনভারের রাস্তায় হাঁটছিলাম একা একা, এ গান সময় আসে। সে দেশে বসে আর আমি বিদেশে বসে, দুজন মিলে শুনে শুনে গানটার ভুট্টিনাশ করে দিয়েছিলাম প্রায়, এরকম খাপে খাপ গান পেলে যা হয়।

যাইহোক ভালোলাগার গানের তো শেষ নেই। আপনাদের গল্পও চলুক একটু।

4 comments:

  1. Replies
    1. চলুক চলুক। কিন্তু তার জন্য তোমাদের গল্প দিতে হবে তো। নইলে চলবে কেমনে?

      Delete
  2. এইটা দারুণ ইন্টারেস্টিং পোস্ট, প্রদীপ্ত। সুমন শুনেছিলাম স্কুলে। দিনক্ষণ মনে নেই। একবার পুজোয় কলকাতায় ঠাকুর দেখতে গিয়ে বাসে বসে আছি (তখনও কলকাতায় বাসে চেপে ঠাকুর দেখা যেত, তাও আবার সপ্তমী-অষ্টমী-নবমীর সন্ধ্যেবেলায়, তবেই বোঝো কতদিন আগের কথা) আর প্যান্ডেলে বাজছে "যে মেয়েটা রোজ রাতে/বদলায় হাতে হাতে/তার অভিশাপ নিয়ে/চলাই জীবন।" চন্দ্রবিন্দুর চ শুনিয়েছিল কলেজের বন্ধুরা। "ভেসে যায় আদরের নৌকো/ভেসে যায় সোহাগের সাম্পান" আর আমিও যে সেই চন্দ্রবিন্দু (সত্যি কথা বললে, চন্দ্রিলে) ভেসে গেলাম, পাড়ে উঠতে লেগেছিল বেশ কয়েকবছর। ইংরিজি গান আমি একেবারেই শুনিনি। কারণ, কিচ্ছু কথা বুঝতে পারতাম না, আর সুরও ভয়ানক খারাপ লাগত। পরে রেডিওতে কান্ট্রি মিউজিক শোনার অভ্যেস হয়েছিল, শুধু কথা বুঝতে পারতাম বলেই।

    ReplyDelete
    Replies
    1. কত গান যে মিস হয়ে গেছে লেখার পর মনে হলো আরে এটা লেখা হলোনা তো ওটা লেখা হলো না তো। নচিকেতা স্কুল লাইফে বেশ বেশ পছন্দের ছিলো। চন্দ্রবিন্দুতে ভাসাটা কমন কিন্তু :D

      Delete