Sunday, July 22, 2018

ভুটে আর ছোটকা

চল ভুটে আজ তোকে ডুব সাঁতার শেখাবো।
- সত্যি বলছ ছোটকা? 
- হ্যাঁ রে। চল না। যা ছোটবৌদির থেকে গামছা চেয়ে নিয়ে আয়। 
- কিন্তু ছোটকা আমার যে দম থাকে না, সবাই যে বলে আমি নাকি ল্যালা। ফুটবলে, ক্রিকেটে কোথাও আমায় নেয়না।
- নেয়না তো নেয়না। সাঁতার কাটা শেখাবো তোকে আজ, তারপর নিয়ে যাবো আমতলা হয়ে দক্ষিনবাড়ির মাঠে। গাছ চেনাবো, গাছেদের সাথে কথা বলা শিখিয়ে দেবো। তখন কে পরোয়া করে কে দলে নিলো না নিলো। 
- আমার যে খেলতে ইচ্ছে করে ছোটকা। কাদা মেখে, বৃষ্টিতে ভিজে খেলে পুকুরে সবার সাথে ঝাঁপাতে ইচ্ছে করে যে। 
- জানিস ভুটে তোর বয়সে, আমি ভারী দুবলা ছিলাম, তোর মতোই বা তোর চেয়েও বেশী। আসলে দুর্বল শুধু শরীরে না মনেও ছিলাম। একদিন বসে আছি জানারডাঙা পুকুরের ঘাটে। শুনশান দুপুর, কেউ কোথাও নেই। আমি খুব মন খারাপ করে বসেছিলাম, আমার পরীক্ষার রেজাল্ট ভালো হয়না, খেলতে পারিনা, ভয় পাই, কুইজ এর উত্তর মুখস্থ থাকে না, কিছুই পারিনা তাই বাড়িতে বাইরে কেউ কোথাও আমায় পোঁছে না। 
একটা কাগজের নৌকা বানিয়ে আলতো করে জলে ছেড়েছি। কাগজ দিয়ে বাকিরা কত কি পারে, আমি খালি নৌকা আর এরোপ্লেন বানাতে পারি।নৌকাটা ছেড়ে ফিস্ফিস করে নিজের মনেই বলেছি, "এই আমার পাল তোলা জাহাজ, রাজকন্যা ঘুমিয়ে আছে অনেক অনেক নীচে, নৌকাটা গিয়ে ঘুম ভাঙিয়ে দেবে"।

একটা পেন্সিল আর একটা পেন রেখেছিলাম, আমার সোনার কাঠি আর রূপোর কাঠি। তারপর পুকুরপাড়ে বসেই জানিস পৌঁছে গেলাম সাত সমুদ্দুর পাড়,ডাইনী বুড়ির সাথে লড়াই হলো। যত যা রূপকথা পড়েছিলাম, সব কটা তো বীর রাজপুত্র, আমি তো বীর ছিলাম না তাও আমার রূপকথায় আমি আমাকে জিতিয়ে দিলাম, একটা ভীতু দুর্বল ছেলেই কেমন করে যেন সব বাধা কাটিয়ে জিতে গেলো। সেদিন বুঝলি ভুটে, সেদিনই আমি জেনে গেছিলাম, আমার জন্য অন্য পৃথিবী আছে, সেদিন থেকে দুপুরে চিলছাত, ভাঙা তোরঙ্গ, নির্জন পুকুরপাড়ে আমি নিজের সাথে দেখা করতাম।

আমাদের সবার আলাদা আলাদা গল্প আছে জায়গা আছে, এ বিরাট পৃথিবীটা এরকম ল্যালা ছেলেদেরও, খালি তোকে খুঁজে নিতে হবে। চল ওঠ। সাঁতার শেখাবো, আমি তো চলে গেলাম তাই দেখা হলো না, দেখিস তো পুকুরের নীচে কোনো জাদুকরী তারের বাজনা পাস কিনা, সেই বাজনাটা শুনলেই সবার ঘুম ভেঙে যাবে।

- অমন বাজনা আছে ছোটকা? পুকুরের নীচে?
- কোথায় আছে কে জানে! খুঁজতে খুঁজতে হয়তো হীরের পাহাড় পেয়ে গেলি! 
- আমি গামছাটা নিয়ে আসি হ্যাঁ? তোমায় একটা জিনিস দেখাবো, আমি গামছা দিয়ে ঘুষোমাছ ধরতে পারি।
- আরিব্বাস! তাহলে! আমি ওসব পারিনা আবার। খামোখা মন খারাপ করছিলি দেখ। চল আজ পুকুরে রোদ ধরে আসি। 
- সে আবার কি ছোটকা?
- দেখিসনি একেকদিন রামধনু কেমন পুকুরের মাথাতেই ওঠে? জানিস তো রামধনুতে চেপে মেঘে চড়া যায়? আমি বহুবার চেষ্টা করেছি ধরতে বুঝলি, খালি পিছলে পালায়৷ চল দেখি দুজন মিলে পারি কিনা। না পেলে ডুব সাঁতার প্র‍্যাক্টিস হবে আর পেলে রাজা হয়ে যাবো! 
- পেয়ে গেলে বাড়ি ফিরবো না ছোটকা? 
- আরে দূর পাগলা, বাড়ি তো ফিরতেই হবে রে, রামধনুটার সিঁড়ি বেয়ে উঠে গল্প কুড়িয়ে নেমে আসতে হয় তো। না হলেই চিত্তির। তাছাড়া দুপুরে কচি পাঁঠার ঝোল , তাকেও তো উপেক্ষা করা যায়না। চল চল, না গেলে তো আর ফেরা যাবেনা।

No comments:

Post a Comment