Thursday, June 21, 2018

আইটি পুতুল আর মাটির পুতুল

আমাদের আপিসের সামনে বিকেলবেলা মেলা বসে যায়। চিংড়ির চপ চিকেন ভাজা থেকে লিট্টি, ভাঁড়ে চা থেকে মকাইবাড়ি চা, পরোটা কচুরি থেকে চাউমিন যা চাইবে তাই, মায় গেঞ্জি অব্দি বিক্রী হয়। তা এসবের ভীড়ে কিছু মলিন মুখের ছেলেও ঘোরাঘুরি করে, যাদের ক্রেডিট কার্ডের টার্গেট মিট হয়নি, কিংবা বিষন্ন পেয়ারাওলা যার আজ অনেক পেয়েরাই বেঁচে গেছে। এসব পেরিয়ে একটু তফাতে গেলে একটা চপ মুড়ির দোকান পরে, আইটি কুলিদের ভীড় কম এখানে, কারন চার পা বেশী হাঁটতে হয় ফলে দু পা হাঁটার জায়গায় ভীড় বেশী হয় তাদের। আর এখানে ওই ক্রেডিট কার্ড বিক্রী, সিকিউরিটি গার্ড, সাইকেলে(কেতের সাইকেল না পাতি লজঝড়ে সাইকেল) কাজ করে ফেরা লোকেদের ভীড় বেশী। তাই এখানে এখনো দুটাকার শুকনো মুড়ি ঠোঙায় দেয়, চপ পিঁয়াজির সাথে। আমি আবার একটু ভীড় দেখলে ভয় পাই, দুপুরে খেতে যাবার সময় সহকর্মীদের এই যে এইটা করে যাবো বলে কাটাই, বিকেলে চা খেতে নামার সময় কাটাতে না পারলে ওই খাদ্যমেলায় হারিয়ে যাই। আমার সারাক্ষণ কথা বলতে ভাল্লাগেনা। তাই আমি আলো কমে আসা বিকেলে পায়ে পায়ে এগিয়ে যাই, ঠোঙা করে কেমন মুড়ি নিয়ে একটা চপ দিয়ে থাবা মেরে মেরে খায় আমি মন দিয়ে দেখি, আমার গ্রামের কথা মনে পড়ে যায়। আমাদের গ্রামে সকালের জল খাবার খায় না, বলে সকালে, মুড়ি খাওয়া হয়েছে? আর ওসব শৌখিন মুড়িমাখা না, এক থাবা ঘুগনি কি আলুরদম কি একটা আলুরচপ দিয়ে এক ধামা মুড়ি খায় সব। যার মুড়ি বেশী সে জল ঢেলে নেয়, কমে ছোট হয়ে যাওয়া মুড়িতে অল্প চপ, কি তরকারি দিব্যি কুলিয়ে যায়। যেমন ভাতে তরকারি কম হলে খাওয়া হয় তেমন আর কি।

স্মৃতি ভারী অদ্ভুত না? গ্রামের কথা, মাঠের কথা এতো মনে পড়ে অথচ আমি আমার ছোড়দির জন্য পুতুল আনতে যেতাম কুমোরবাড়ি থেকে মনেই ছিলোনা। সেদিন নন্তের সাথে কথা বলতে গিয়ে মনে পড়লো। নাক বোঁচা থ্যাবড়া মাটির পুতুল। কুমোরবৌটা মাটির চাকে সরা হাঁড়ি তৈরী করতো, কোনোকোনোদিন গরুকে জাবনা দিতে যেত। আড়াই টাকা করে দাম হতো মনে হয় পুতুলগুলোর, আমার দিদি ওগুলোকে শাড়ি পরাতো আর কি কি করতো।মনে পড়ছে না, কিন্তু ওই ছবিটা দিব্যি মনে পড়ছে, আমি আর ছোড়দি গিয়ে দাঁড়িয়েছি, ওদের মাটির দোতলা বাড়ি ছিলো, সেইটাই একটা বিস্ময় ছিলো আমার কাছে, সিঁড়ির বদলে মই বেয়ে উপরে উঠে যেতে হতো, তারপর খড় চাপা ঝুড়ি থেকে বের করে আনতো। পুতুল পেয়েই আর দাঁড়াতে চাইতো না ছোড়দি আর আমি ভাবতাম ওই মাটির চাকে আমায় একটু মাটি দিতে দেবে? হাঁড়িটা শেষ হওয়া অব্দি দেখতে চাইতাম আর ছোড়দি ছটফট করতো।

সকাল বেলা লু লাগা শহরে গরমকালের ছোটবেলা এমন থাবা মারে কেন? আচ্ছা কুমোরপাড়া কি আদৌ আছে? এখনো কোনো গ্রামে এরকম সস্তার পুতুলের বায়না করে কেউ? গরমকালে সকালে লু এর বদলে আমগাছের হাওয়া দেয়? কি জানি হয়তো সেই কুমোর এখন মুদীখানা করেছে, আচ্ছা মাটির দোতলা বাড়ির সেই রহস্যময় সিঁড়িটা আর নেই না? এহে ওই সিঁড়ি দিয়ে উঠলেই গুপ্তধন এর খোঁজ পাওয়া যেত যে, সিঁড়িও নেই গুপ্তধনও...

No comments:

Post a Comment