Saturday, November 7, 2020

কোজাগরী

 কোজাগরী, কে জাগরী...কেউ জেগে আছে কিনা দেখতে একটা মেয়ে সবার দোরে দোরে ফিরছে, এই ঘোর অমানিশায় জ্ঞান বিদ্যা শক্তি দৃঢ়তা নিয়ে কেউ জেগে আছে কিনা জানতে....এতো শক্ত শক্ত কথা অবশ্য বুঝতাম না কিছুই। লক্ষ্মীপুজো মানে হিম হিম রাতে ম্যাড়মেড়ে পুজো। ঢাক ঘন্টা কিচ্ছুর আওয়াজ হবে না,  হিম লেগে যাবার ভয়ে  জ্যোৎস্নায় ধোয়া পৃথিবী দেখা হয়নি আমার চৌহুদ্দির বাইরে। তারপর কবে থেকে কে জানে চাঁদ দেখতে পেলাম আর নেশা লেগে গেল। গোল্লামতো চাঁদটা উঠলে ঘরে থাকলেই আমার ভারী আপশোষ হয়, একটা চাঁদের আলো মাখা রাত নষ্ট হয়ে গেলো, জলের ধারে, ফাঁকা মাঠে, পাহাড়ে না হলে তো আলো মাখা যায় না। ছাদে উঠে দেখেছি হাজারটা আলোর মাঝে মন খারাপ করে চাঁদ সরে থাকে সে আলো মাখা যায়না। তাছাড়া ছাদ থেকে চাঁদের আলোয় বা বৃষ্টির জলে ভেজা আমার পোষায় না তেমন। লক্ষ্মীপুজো বলতে সবার খিচুড়ি আর নাড়ু মনে হয় কিংবা আলপনা, আমার কাছে আরেকটা চাঁদের দিন। অনেকদিন থেকে তাক করেছি কোজাগরী চাঁদের আলোয় ভিক্টোরিয়া কেমন দেখায়। সত্যিকারের পরীরা নেমে আসে কি?  কিংবা কে জেগে আছে খোঁজ নেওয়া মেয়েটা পেঁচা নিয়ে ঘুরে যায় বন্দী পরীর কাছে। পরীদের অমন দেখা যায়না সে কথা বুঝি ভুলে গেছিলাম।  তাই রেড রোড দিয়ে আর আর পার্ক সার্কাস ফ্লাইওভার দিয়ে খুব খানিক চক্কর কেটে গাছের ফাঁক দিয়ে ভিক্টোরিয়া দেখা গেলো,  কিন্তু চাঁদের আলো তেমন মাখা হলনা। সারা শহরের হাসপাতাল বাদে সব আলো বন্ধ করে রাখা উচিত মশাই পূর্নিমার রাতে। পাঁচবার পাক খাবার পর আশপাশের ভূতগুলো অব্দি সন্দেহজনক ভাবে তাকাচ্ছে দেখে পালিয়ে এক বন্ধুর বাড়ি খুব কড়া নেড়ে নেড়ে পালিয়ে এসেছি। পরে বলে দেবোখন আমার পোষা ভূতেরা করছিল।


লক্ষীপুজোর রাত পার হয়ে যায়, চাঁদ ক্ষইতে শুরু করে আর ফস করে হাওয়াটা কেমন বদলে যায়। শীতকাল অত ভালো না যে যাই বলুক। হ্যাঁ মটরশুঁটির কচুরি মেলে,  নলেন গুড়, পিঠে মোয়া কিন্তু তাও গরমকালের একটা আলাদা কেত আছে, অমন গুটিশুটি মেরে থাকে না। তাছাড়া এই হাওয়াটায় বাড়িতে বসে থাকা আরো খারাপ। এই সময়ের দুপুরবেলা হেঁটে কিংবা গাড়িতে কিংবা যাতে ইচ্ছে যেখানে সেখানে ঘুরে ঘুরে বেড়াতে হয়। নৌকায় করে অজানা কোনো গঞ্জ, ভটভটি চড়ে ধূলো খাওয়া বিকেল।


আমার যে আর এই হিসেব কিতাব করতে মন চায় না,  মনের মধ্যে কে জেগে আছো ডাক আসে বার বার...ফস করে চলে যাওয়া আর হয় না...



4 comments: