Wednesday, October 28, 2020

শুভ বিজয়া

 হুট করে দিনের আলোয় একটা শেয়াল দেখা সাংঘাতিক উত্তেজনার ব্যপার। ঝকঝকে রোদ, কার্তিক মাস পড়ে গেছে, অক্টোবরের শেষ, রোদের তেজ কম কিছু না। করোনার কোনো ভয়ের ছাপবে দিকে নেই তেমন। এক বুড়ি পাঁচিল বেয়ে বেড়ে ওঠা লাউশাক পাড়ছে, ক্লাবের পুজোর মাইক বাজছে,  চার পাঁচটা বাচ্ছা ছেলে মেয়ের দল সাঁই করে ছুটে গেলো। এমন সময় শেয়ালটাকে দেখা গেলো মাঠের ধারে, হিসি করতে বসেছে। ভারী ভদ্র সভ্য শিয়াল কিন্ত। কাজ মিটিয়ে আমার দিকে একবার আলগা তাকিয়ে পাশের জঙ্গুলে জায়গাটায় ঢুকে গেলো। আমি বালি মাঠের পাশ দিয়ে চড়কতলা হয়ে হাঁটা দিয়েছি। কোথায় যাচ্ছি জানিনা, এমন রোদে খুব বেশীদূর যেতে পারবোনা। এই রাস্তাটা আমার ভারী ভালো লাগে, ডাক্তারদের বাড়ির পাশ দিয়ে পুকুরটা পেরোনোর সময় দুটো কাদাখোঁচা কে ডাইনে রেখে খানিক এগোলে মন্দিরগুলো। কার পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে বানানো কে জানে। মাইকের আওয়াজটা পিছিয়ে পরে ক্রমে। আরো এগোই,  আমার এই গ্রামের রাস্তায় হাঁটলেই কেমন নেশা লাগে, মনে হয় আরো খকনিক এগোই, বাঁশঝোপ, হলুদ রঙের জারুল ফুল, এবড়োখেবড়ো আল, ধানজমি, কদম গাছের ছায়া পেরিয়ে এগিয়ে এগিয়ে যাই, ফেরার কথা না ভেবেই এগোই। তা তো আর হয় না। ফোন আসে মায়ের, "কই রে খেতে আয়"।


সুজাতা বৌদি জোর করে একবার এসো না, দুটো গরম মোচারর বড়া খেয়ে যাও না, সুজিতদাদা পটল ক্ষেতে দেখতে পেয়ে হাঁক দেয়, " পাইলট আয় আয়, পটল নিয়ে যা।" কেউ না কেউ ডাকে, কবে এলি, কেমন আছিস, দিদিরা কই, মা কই খোঁজ নেয়, বাড়িতে ডাকে, বাড়ির ছোট ছেলে এসেছে। পুরোনো বাড়ির উঠোনে কারা যেন বেগুন গাছ লাগিয়েছে,সারা বাড়িটা জঙ্গলাকীর্ণ, কোনো কোনো জানলার শিক ভেঙে গেছে, মাটির উনুন দুটো কবেই হাওয়া হয়ে গেছে। খড়ের গাদা করা সেখানে। রান্নাঘরের চালটা ভেঙে গেছে। দোতলায় যাওয়ার রাস্তাটা আগাছায় ভরা। বড় মায়া লাগছিলো বাড়িটার জন্যে, আহারে বেচারি।  পিছনের আতা গাছটা হয়তো হাত বুলিয়ে যায় দক্ষিনের ঘরের জানলাটায়, আশ্বাস দেয় পরস্পরকে তার ডালেও আতা হবে আবার, আর এই বাড়ির ঘরেও হাসি কান্নার রোল উঠবে। লোক ডাকিয়ে বাড়িটা সংস্কার করায় না কেন? 


কুবুক কুবুক করে একটা পাখি ডাকছে নতুনপুকুরের পাড়ের জামগাছটা থেকে। মিঠুদি দু ছড়া মিঠে কাঁঠালি কলা দিয়ে গেছে, মেজদাদা ডাব পাড়তে গেছে।দশমীর ঢাক বাজছে ঠাকুরদালান থেকে। দশমীর বোলটা বড় বেয়াড়া, খালি মনে করিয়ে দেয় ছায়ার পালা শেষ বাকি রাস্তা সটান হেঁটে যেতে হবে বাঁধানো রাস্তায়। যা দম নেওয়ার নিয়ে যাও হে বাকি পথটুকুর।  


শুভ বিজয়া। 



2 comments:

  1. শুভ বিজয়া, প্রদীপ্ত। খুব, খুব ভালো লাগল লেখাটা।

    ReplyDelete
    Replies
    1. তোমাকেও জানাই শুভ বিজয়া কুন্তলাদি। থ্যাংক ইউ সো মাচ।

      Delete