Thursday, October 15, 2020

ফ কে লেখা চিঠি

 কোথাও একটা থামা দরকার বলে মনে হয়। আবার ঠিক উল্টোদিকেই মনে হয়, থামা মানেই তো ফুরিয়ে গেল। নেই মামা কানা মামা আর দুষ্টু গরু শূন্য গোয়াল কেস। ফেসবুকে,ব্লগে এসে বকম্বাজি করা শুরু যখন তখন শীতের লম্বা রাত, বরফ ঢাকা বোরিং সকাল। পেরিস্তানের  গোপন আস্তানার দরকার তো পড়েই তাই না? সেই আস্তানা থেকেই তোমার সাথে লম্বা আলাপের দিন রাত। একটা চিঠিও আমরা লিখিনি কিন্তু সেসব জুড়লে চিঠি হয় তো বটেই।  ক্রমে পেরিস্তানের সারল্য চলে গেল যেন, ডেটা আর নাম্বারে তৈরী ছায়া মানুষ হয়ে গেলাম কখন। তাই দেখছি, যা দেখাচ্ছে বা আমি দেখতে চাইছি,তাইই শুনছি যা শুনতে চাই। সাউন্ডস ইন্টারেস্টিং তাই না? কিন্তু তা না আসলে, যা শুনতে চাইনা তাও শুনতে হয় কখনো কখনো। তুমি জানো ভালো না লাগা আমাদের জন্মগত। একটা শূন্যতার আবরণ ঠিক ঘিরে থাকেই, তোমায় আলাদা করে বোঝানোর দরকার নেই। কারন আমরা জানিনা কিন্তু সে ভালো না লাগাটা এই নাম্বার আর ডেটা তো কমাতে পারলো না কই। সেদিন ভাবছিলাম, পেয়েছি অনেক নিঃসন্দেহে কিন্তু যে অনন্ত সময়ের বিনিময়ে তাকে কি একেবারেই বিনামূল্যে বলা যায়? খানিক আমাদের  সভ্যতার মতো না? আধুনিক চিকিৎসা,  সকলের না হলেও মোটামুটি সাধরণ মানুষের কাছে পড়াশোনা করার সুযোগ, বৃষ্টিতে শুকনো রাস্তা, বোতাম টিপতেই জল কিংবা আলো...দেওয়ার তো সত্যিই শেষ নেই।কিন্তু পরিবর্তে আমাদের যা দিতে হচ্ছে তাও কি কম? ধরো এই যে আমাদের এতো অবিশ্বাস, এতো ক্রোধ এতো বৈষম্য এতো ঘৃনা এত অশান্তি এও কি এর দায় না? নাকি আমরাই? আমরা আধুনিক বহিঃরঙ্গে হই আসলে সেইই সভ্যতার প্রাক মুহূর্তের লড়াই কিংবা অবিশ্বাস আমাদের মজ্জায় ঢুকে গেছে। অকারণ পশুপাখিদের মারার অভিশাপ আমাদের শেষ দিন অব্দি বইতে হবে, নিজেদের মেরে। আমার আজকাল হতাশ লাগে খুব জানো, সব জায়গায় এতো খারাপ এর অভ্যুত্থান কেন?  নাকি খারাপটা এই আমার একদা পেরিস্তান প্রোমোট করছে? কিজানি! 


অনেকদিন কথা হয়না, দেখা হয়না,  আমরা বড় বেশী ভয়ে বাঁচছি আজকাল। অবশ্য সবাই না। মুশকিল হল আমাদের চারপাশের লোকজন এমন ডিনায়াল স্টেটে চলে গেছে আদৌ আর দেখা হবে কিনা কে জানে। তবে জানো তো  ডিনায়াল স্টেটে  আমরা বরাবরই থাকি কমবেশী এবং তা আজকে থেকে না বহুযুগ থেকেই। যতখুশী খারাপ হোক আমরা তাকাবোনা, সেফ থাকবো আর ভাববো কেউ না কেউ না কেউ আমায় ঠিক রক্ষা করবে। নিজের ক্রশ নিজে বইতে ভুলে গেছি কিংবা শিখিইনি।  এই যে রোজ আমরা নেতাদের দোষ দিই, হাহাকার করি,  ইনফ্যাক্ট করছিও, তাতে তো আমাদের নিজেদের দায় কম না। গনতন্ত্রের একটা সময় তো আসতোই যখন ক্ষমতা এই ধরনের লোকেদের কাছে যেত, সেটা আটকাতে আমাদের নিজেদের কি কিছুই করার ছিলো না? আমরা সেফ থেকেছি, সেফ খেলেছি, আমাদের বাড়ির ছেলে মেয়েরা ডাক্তার জয়েছে কর্পোরেটের কী-বোর্ড পিষেছে কিন্তু প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে নামা বা ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট হওয়া কিছু হয়ে উঠতে উৎসাহ দিইনি। মনের অন্ধকার না কাটা লোকজনকে আমরা প্রার্থী তালিকায় দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম। রাজনীতি ওদের জন্যই, আমাদের না! 


তবে সব হয়তো শেষ হয়নি, হয়না। সেদিন ওষুধ আনতে যাবার সময় দেখলাম এক বুড়ো দাদুর হাতটা শক্ত করে তার নাতনী রাস্তা পার করাচ্ছে। কিছু মূল্যবোধ, আর অনেক ভালোবাসা না থাকলে হয়তো সব থেমেই যেত এতোদিনে। থামেনি কখনই যখন এসময়টাও থামবেনা। তবে মূল্য দিতে হবে আমাদের সবাইকে, এক জীবনে না অনেক অনেক জীবন ধরে। 


পুজো আসলেই অন্যবার কেমন আনন্দ হয়,  এবারে ভয়। তাও একটা চোরা আনন্দ, উত্তেজনা অপেক্ষাও আছে জানো। গ্রামে যাবো কিনা। আমাদের শিকড়ের ব্যপারটা খুবই গন্ডগোলের,  খুবই৷ কোথায় কোন তার জুড়ে আছে কে জানে। আমি তো সেই কবে থেকে গাঁ ছাড়া, তবুও গ্রামের রাস্তায় রাস্তায় হাঁটবো, সবুজ ধানের শিশিরে পা ভেজাবো ভাবলেই মনের মধ্যে চনমনে ভাব আসছে। তুমি জানো পার্টিতে কোনের দিক খুঁজে বোসেথাকা লোকটা আমি, কারেন্ট এফেয়ার্স কিংবা ক্রিকেট  নিয়ে তর্ক করতে ক্লান্ত লাগা লোকটা আমি। হাঁটতে হাঁটতে অচেনা কোনো গ্রামে অচেনা কোনো রাস্তায় নাম না জানা গাছের ছায়ায় হাঁটতে আমি বরং বেশী স্বস্তি বোধ করি, ভাঙা ঘাটের পৈঠায় বসে থাকতে শান্তি লাগে। তাই জন্যই বাড়ি যাবার জন্য এতো উচাটন।


ফেরার কথা বলতেই ফিরতে হল, নিজের কাছে ফিরতে তো হয়ই। তুমিই বা আর কতদিন পালিয়ে পালিয়ে কাটাবে, ফিরবে না?


-

2 comments: